Ajker Patrika

অস্ট্রেলিয়ায় জোকোভিচ কাণ্ডে রাজনীতিতে চাপানউতর

অস্ট্রেলিয়ায় জোকোভিচ কাণ্ডে রাজনীতিতে চাপানউতর

পুরুষ টেনিসে বিশ্বে এক নম্বর তারকা নোভাক জোকোভিচ। তাঁকে ঘিরে চলমান বিপত্তি থেকে সহজে বের হতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া সরকার। জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ান ওপেন শিরোপা জয়ের জন্য আসছেন, এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বলতে গেলে মরিসন সরকার ব্যাকফুটে রয়েছে। 

কারণ টিকাবিরোধী হিসেবে জোকোভিচের নাম এর আগেই ‘বিখ্যাত’ হয়ে গেছে। এরপরও তিনি অস্ট্রেলিয়া ঢুকতে পেরেছেন। তাঁকে আটকও করা হয়। এরপর একটি আদালত তাঁর পক্ষেই রায় দেন। তা সত্ত্বেও জোকোভিচের ভিসা বাতিল করার সিদ্ধান্তের কী ব্যাখ্যা হতে পারে? কারণটা পরিষ্কার—সামনে নির্বাচন। অস্ট্রেলিয়ান ভোটারদের সামনে এ ছাড়া আর মুখ বাঁচানোর উপায় ছিল না মরিসনের। 

মনে হচ্ছে, ভোটের আগে মুখরক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতাসীনেরা যেকোনো কূটনৈতিক বিপর্যয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জাতিকে বিব্রত করা এবং জোকোভিচের লাখ লাখ সমর্থকের ক্রোধ সহ্য করতে প্রস্তুত। 

জোকোভিচকে ঘিরে ঘটনাগুলো খেয়াল করলে সহজেই বোঝা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল সরকার একটা অবস্থান ভোটারদের দেখানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে—কেউ-ই নিয়মের ঊর্ধ্বে নয়। এমনকি পুরুষ টেনিসে বিশ্বের এক নম্বর তারকা হলেও নয়। 

পাবলিককে কথায় কথায় আইন দেখানো, আইনের শাসন নিয়ে মুখে খই ফোটানোর কাজটা খুব সহজ। এই নীতি বাস্তবায়ন রাজনীতিকদের কাছে খুব জটিল জিনিস হলেও সাধারণ জনগণের কাছে অতি সহজ-সরল। অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিকেরা সেই রূপটাই দেখিয়েছেন। জোকোভিচের ঘটনাটি নিয়ে তাঁরা ত্যানা প্যাঁচিয়েছেন। 

অথচ জোকোভিচ আসার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, কোনো খেলোয়াড় মেলবোর্নে পৌঁছানোর পর যদি দেখা যায় তাঁর নথিপত্র ঠিকঠাক নেই তাহলে ‘পরের ফ্লাইটেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। পরের দিন ৬ জানুয়ারি জোকোভিচের ভিসা বাতিলের পর মরিসন ওই বক্তব্যেরই পুনরুক্তি করে বলেন, ‘নিয়ম নিয়মই’। 

এরপর জোকোভিচ সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। মরিসন তখন বলেন, এখন এটা আদালতের এখতিয়ারের বিষয়। 

কিন্তু হঠাৎ করেই সরকারের অবস্থান খুবই নড়বড়ে হতে শুরু করে। ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে করোনা বিধিনিষেধের সঙ্গে আইনি জটিলতাগুলো নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে সময় চাওয়া হলে একজন বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেন। টিকা না নিয়েও জোকোভিচ অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে প্রথম ফ্লাইটে কীভাবে চড়তে পারলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন আইনের ত্রুটি নিয়েও অনেকে কথা বলতে থাকেন। 

বিচারক অ্যান্টনি কেলি যখন জোকোভিচের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন—মেলবোর্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য ত্রুটির কথা উল্লেখ করে সরকারকে জোকোভিচের ভিসা ফিরিয়ে দিয়ে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক—তখনই কিন্তু পুরো বিষয়টি মিটে যেতে পারত। কিন্তু তা হয়নি। 

অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন মন্ত্রী অ্যালেক্স হকের কাছে ভিসা বাতিল করা এবং জোকোভিচকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্বাহী ক্ষমতা ছিল এবং তিনি সেই ক্ষমতা দেখালেন। 

আদালতের আদেশের পরও মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে কেন এ কাজটা করলেন? পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, পুরোটাই রাজনৈতিক। নোংরা রাজনীতি থেকে মুক্তি নেই! 

এখানে সরকারের সামনে দুটি বিষয় বিবেচনা করার আছে। 

প্রথমত, মরিসন প্রশাসনকে এই ঘটনা দারুণভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়ানদের কাছে তো বটেই প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের কাছে, এমন একটা বার্তা যাচ্ছে যে, রাজনীতিবিদেরা এমন একটা নিয়ম প্রয়োগ করছেন যা তাঁরা নিজেরাই ঠিকঠাক বোঝেন না! তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন না বলেও মনে হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারের সমন্বয়হীনতাই এখানে স্পষ্ট হচ্ছে। 

শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, শুরুতে সরকারের একটি স্তর—ভিক্টোরিয়া রাজ্য— টেনিস অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। কেন্দ্র সরকারের কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলছিলেন। টুর্নামেন্ট আয়োজকেরা অভিযোগ করছিলেন যে, তাঁরা এই ভজঘটের মধ্যে পড়ে গেছেন। 

দ্বিতীয়ত, কোভিডে কড়াকড়ি আর টেনিসে ছাড়— দেশজুড়ে ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। যখন অস্ট্রেলিয়ার দুটি সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য, নিউ সাউথ ওয়েলস এবং ভিক্টোরিয়ায় কয়েক সপ্তাহ ধরে কয়েক হাজার কোভিড আক্রান্ত শনাক্ত হচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো হিমশিম খাচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। অবশ্য ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় এখানে সংক্রমণ হার কম। যেখানে শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়া কঠোর কোভিড নিয়ম আরোপ করেছে। মাঝে মাঝে একক রোগী শনাক্তের পরই পুরো শহর বা রাজ্য লকডাউনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। 

এমন পরিস্থিতিতে টেনিস নিয়ে সরকারের এমন লেজেগোবরে অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ানরা নিজেদের উপেক্ষিত, পরিত্যক্ত বোধ করছেন। তাঁরা বলছেন, সরকার যা যা বলেছে আমরা সব করেছি। তাঁরা টিকা পেয়েছেন। অনেকে বুস্টারও পাচ্ছে। এরপরও ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। জনগণের এখন দিশেহারা অবস্থা। আর কী কী করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে! নতুন করে আর কঠোর লকডাউন আহ্বান করার মতো অবস্থায় কেউ নেই। 

জনগণের এই অবস্থার মধ্যে এমন একজন টেনিস তারকাকে নিয়ে হইচই চলছে যিনি গর্বের সঙ্গেই নিজেকে টিকাবিরোধী বলে প্রচার করেন! যিনি এরই মধ্যে কোভিড পজিটিভ থাকাকালীন আইসোলেশনের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন এবং ভ্রমণ ভিসার নথিপত্রে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। 

কোনো সন্দেহ নেই, এই বিতর্কের ফেরে স্কট মরিসন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ; পারস্পরিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা; সমন্বয়হীনতা, কোন আইন কার জন্য প্রযোজ্য তা নিয়ে অস্পষ্টতা ও অস্বচ্ছতা; একজন টিকাবিরোধী বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ যিনি কোভিড নিয়ম ভঙ্গ করেছেন—সব মিলিয়ে সরকারে একটি এলোমেলো ছবি মেলে ধরেছে। রাজনীতিকেরা এখন মরিয়া হয়ে সেই ছবিটা ঠিক করার চেষ্টা করছেন। 

এখন একটা বিষয় আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আদালতের রায় মেনে জোকোভিচের ভিসা বাতিল না করলে সরকারকে আরও অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত