Ajker Patrika

আফগান সাংবাদিকের রুদ্ধশ্বাস পলায়ন

আফগান সাংবাদিকের রুদ্ধশ্বাস পলায়ন

২৭ বছর বয়সী রহিম রহমান একজন আফগান সাংবাদিক। কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর থেকে একটি মার্কিন সামরিক বিমানে চড়ে দেশ ছাড়েন তিনি। তালেবানের রক্তচক্ষু এড়িয়ে, বিমানবন্দরের বিশৃঙ্খলা পেরিয়ে তার আকাশে উড়ার রুদ্ধশ্বাস গল্পটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায়–

তালেবানরা যেদিন কাবুল দখল করে নেয়, জার্মান প্রবাসী বন্ধুর ফোন পেয়ে সেই দিনটি শুরু হয় রহিমের। বন্ধুটি তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব কাবুলের বিমানবন্দরে যাওয়ার তাড়া দিয়েছিল। কারণ সেদিনই একটি জার্মান বিমান নিজেদের কূটনীতিক ও তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু আফগানকে নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। রহিমের নামটিও এই তালিকায় যুক্ত করতে পেরেছিলেন জার্মানিতে থাকা বন্ধুটি। কারণ রহিম বেশ কিছুদিন ধরেই একটি জার্মান গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। আর গত এক বছর ধরেই জার্মান ভিসার জন্য আবেদন করে আসছিলেন তিনি। 

তালেবানরা কাবুলে প্রবেশ করার পর পালানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না রহিমের। কারণ তিনি ছিলেন প্রগতিশীল সাংবাদিক। বাহুতে ট্যাটু আঁকা। তালেবানের চোখে তিনি একজন অবিশ্বাসী ছাড়া আর কিছু নন। এ অবস্থায় শুধু নিজের ল্যাপটপ আর ফোনটি নিয়ে বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়েন রহিম। কিন্তু বাড়ির বাইরে পা রাখা মাত্রই একরাশ আতঙ্ক তাঁকে ঘিরে ধরে। এমন আতঙ্ক এর আগে কোনো দিনই অনুভব করেননি তিনি। 

সারা শহর যেন বদলে গিয়েছিল সেদিন। যে কোনো মুহূর্তে তালেবানের কাছে ধরা পড়ে যাবেন, সারাক্ষণ এমন ভয় কাজ করছিল রহিমের। তবে শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের গেটে পৌঁছাতে সক্ষম হন তিনি। সেখানেও ছিল আরেক ভয়। কারণ তার কাছে কোনো ভিসা ছিল না। এ অবস্থায় গেট থেকেই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হতে পারে এমন আশঙ্কাও ছিল। রহিম ভাবছিলেন, তার বাড়ি ফেরার আর কোনো উপায়ই নেই। 

শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে সক্ষম হন রহিম। ভেতরে প্রবেশ করেই যা দেখেন তাতে পুরোপুরি আশা হারিয়ে ফেলেন তিনি। কারণ সেখানে ছিল হাজার হাজার মানুষ। নারী–পুরুষের চিৎকার, শিশুদের কান্না–কাটি ছাড়া আর কোনো শব্দই কানে আসছিল না। তালেবানরা যে কোনো মুহূর্তে বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করবে–এই আতঙ্ক সবার মাঝেই। আফগানদের পাশাপাশি অনেক বিদেশিকেও হতবিহ্বল হয়ে ছোটাছুটি করতে দেখেন রহিম। হাতে টিকিট নিয়েও শেষ পর্যন্ত বিমানে উঠতে না পারার ভয়ে ছিলেন অনেকেই। আতঙ্কে উদভ্রান্ত হয়ে যাওয়া কিছু মানুষ বিমানবন্দরে দরজা জানালা এবং টিকিট কাউন্টারগুলো ভাঙচুর করছিলেন। আর বিশৃঙ্খলার এটা ছিল শুরু মাত্র। 

চারপাশের অবস্থা দেখে প্রচণ্ড ভয়ে বুক ধড়ফড় শুরু হয় রহিমেরও। তিনি বিমানবন্দরের একটি কোনায় গিয়ে জড়সড় হয়ে লুকিয়ে থাকেন। সেখান থেকেই ছোট্ট একটি জানালা দিয়ে তিনি দেখতে পান–একটি তুর্কি বিমান উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিমানটির চারপাশ ঘিরে ধরেছে অসংখ্য মানুষ। তারা সবাই বিমানের ভেতরে ঢুকতে চাইছিলেন। এমনকি অনেককে বিমানটির সিঁড়িতেও ঝুলে থাকতে দেখা যায়। বিমানটি এমনিতেই ছিল ওভারলোড। তার ওপর এর সিঁড়ির মধ্যেই হুড়োহুড়ি করছিল কয়েক শ মানুষ। তাই কিছুতেই আকাশে উড়াল দিতে পারছিল না এটি। মানুষগুলোর চিৎকার অনেক দূর থেকেই শুনতে পারছিলেন রহিম। কেউ একজন চিৎকার করছিল–‘আমরা যেতে চাই, তা না হলে আমরা মরে যাব।’ লুকিয়ে থাকার স্থানটিতে বসে রহিম এসব দেখছিল তার সুযোগের অপেক্ষা করছিল। 

রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টা কিংবা ৯টার দিকে একজন চিৎকার করে উঠল, বিমানবন্দরের ভেতরে তালেবানরা ঢুকে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষ আবারও দিগ্বিদিক ছুটোছুটি শুরু করে দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সাধ্য কারওরই ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে থেকে গুলির আওয়াজও শুনতে পেলেন রহিম। তারও মনে হলো–তালেবানরা চলে এসেছে। এ অবস্থায় তিনি আবারও জার্মানিতে থাকা বন্ধুটিকে ফোন দিলেন। সেই বন্ধুটি জানাল, জার্মান বিমান ছাড়বে পরের দিন।

এই খবরে দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলেন রহিম। কিন্তু এমন সময়ই তিনি দেখলেন মার্কিন সৈন্যদের একটি দল কিছু বিদেশিকে একটি সামরিক টার্মাকে নিয়ে যাচ্ছে। সৈন্যদের একজন বিদেশিদের উদ্দেশ্যে বলছেন, ‘এটা আমেরিকার মাটি, তালেবানরা এখানে আসবে না।’ এটা শোনা মাত্রই সেই দলটির দিকে ছুটতে শুরু করলেন রহিম। শুধু তিনিই নন, আরও অনেক মানুষই ছুটে যাচ্ছিলেন তাদের দিকে। কানে তখন গুলির আওয়াজও ভেসে আসছিল কোত্থেকে যেন। কিছু সময়ের জন্য সময়টি যেন থমকে গেছে। আর এ সময়ই রহিম শুনতে পেলেন, আমেরিকান সৈন্যরা চিৎকার করে বলছে–‘চল, সবাই’। রহিম দেখলেন, বিদেশিসহ অসংখ্য আফগান স্রোতের মতো প্রবেশ করছে বিমানটির ভেতরে। রহিম বুঝতে পারলেন, এটাই তার জীবনের সেরা সুযোগ।

প্রাণপণ চেষ্টায় তিনিও ঢুকে পড়লেন বিমানটির ভেতরে! কয়েক শ মানুষ নিমেষেই ঢুকে পড়েছে। সবাই দাঁড়িয়ে আছে। তিল পরিমাণ জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছিল মানুষগুলো। অনেকের কোলে ছিল তাদের ছোট্ট শিশু। রহিম নিশ্বাস নিতে পারছিলেন না। এমন সময়ই বিমানের এক পাইলট ঘোষণা করলেন–বিমানটি কোথাও যাবে না। কারণ এর ভেতরে ধারণক্ষমতার চেয়েও অনেক বেশি মানুষ।

একজন চিৎকার করে বলছিলেন–‘দয়া করে বাইরে যান, বাইরে যান. . ’। এ সময় কয়েকজন সেনা এগিয়ে এলেন এবং সামনের ও পেছনের দরজার কাছাকাছি থাকা বেশ কিছু মানুষকে ঠেলা–ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। কিছুটা ভেতরের দিকে থাকা রহিমকেও প্রায় বের করে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু দরজার কাছে যাওয়া মাত্রই একজন সেনা বললেন, ‘যেখানে আছ সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো’! সেখানেই ২০ মিনিট স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রহিম। বাইরে তখন বিমানের কাছ থেকে মানুষদের সরানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে সেনারা। একসময় এক সেনা নির্দেশ দিলেন, দরজার কাছে যারা দাঁড়িয়ে আছ তারা বিমানের ভেতরে চলে আসো। ভেতরে প্রবেশের পরও আরও এক ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়েছিল বিমানটি। তারপরই এটি নড়তে শুরু করল এবং আকাশে উড়ল। এটাই রহিমের জীবনের সবচেয়ে সুখকর সময়। তার চারপাশে থাকা মানুষেরা প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেই উল্লাসধ্বনি করে উঠল। হাত তালি দিচ্ছিল তারা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হিন্দু রাষ্ট্র’ সংবিধানে থাকতে হবে না, এটি সূর্যোদয়ের মতোই সত্য: আরএসএস প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে মোহন ভাগবত। ছবি: সংগৃহীত

ভারত একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ এবং এর জন্য কোনো সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। তাঁর মতে, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য এবং সূর্য পূর্বদিকে ওঠার মতোই ধ্রুব।

গতকাল রোববার (২১ ডিসেম্বর) কলকাতায় আরএসএসের শতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘১০০ ব্যাখ্যান মালা’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবিধানে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ শব্দ জোড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বা দাবি সংঘের আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহন ভাগবত বলেন, ‘সূর্য পূর্বদিকে ওঠে; আমরা জানি না কত দিন ধরে এটি ঘটছে। এর জন্য কি আমাদের সাংবিধানিক অনুমোদনের প্রয়োজন আছে? হিন্দুস্তান একটি হিন্দু রাষ্ট্র। যারা এই দেশকে মাতৃভূমি মনে করে এবং ভারতীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে, তারা সবাই এই দর্শনের অংশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ যদি কখনো সংবিধান সংশোধন করে এই শব্দটি যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা ভালো। কিন্তু তারা তা করুক বা না করুক—তাতে আমাদের কিছু যায়-আসে না। কারণ, সত্য এটাই যে আমাদের দেশ একটি হিন্দু রাষ্ট্র।’

জাতপাত নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আরএসএস প্রধান স্পষ্ট করে বলেন, ‘জন্মভিত্তিক বর্ণপ্রথা বা জাতপাত হিন্দুত্বের বৈশিষ্ট্য নয়।’

আরএসএসকে প্রায়ই মুসলিমবিরোধী হিসেবে গণ্য করা হয়। এই প্রসঙ্গে মোহন ভাগবত মানুষকে সরাসরি সংঘের শাখা বা অফিসগুলো ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছ। আপনারা যেকোনো সময় এসে দেখে যান। যদি আমাদের কার্যক্রমে মুসলিমবিরোধী কিছু খুঁজে পান, তবে আপনাদের ধারণা বজায় রাখুন। কিন্তু যদি তা না দেখেন, তবে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন।’

তিনি দাবি করেন, মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে আরএসএস হিন্দুদের সুরক্ষার কথা বলে এবং তারা কট্টর জাতীয়তাবাদী, কিন্তু তারা ‘মুসলিমবিরোধী’ নয়।

উল্লেখ্য, ভারতের সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ (Secular) শব্দটি ছিল না। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী সরকারের আনা ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে এটি যুক্ত করা হয়। অন্যদিকে, আরএসএস দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে, ভারতের সংস্কৃতি এবং জনতাত্ত্বিক কাঠামোর কারণেই এটি প্রাকৃতিকভাবে একটি হিন্দু রাষ্ট্র।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় ক্যাথলিক স্কুলের অপহৃত আরও ১৩০ শিক্ষার্থী মুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি
নাইজার রাজ্যের একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল ৩শর বেশি শিক্ষার্থী অপহরণ হয়। ছবি: এএফপি

নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্য নাইজারে একটি ক্যাথলিক বোর্ডিং স্কুল থেকে অপহৃত ১৩০ জন শিক্ষার্থীকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

এই ঘটনাকে দেশের অন্যতম ভয়াবহ এক গণ-অপহরণের ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে সবার মুক্তির পর একে ‘বিজয় এবং স্বস্তির মুহূর্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে নাইজেরিয়ার সরকার।

গত ২১ নভেম্বর পাপিরির সেন্ট মেরি’স ক্যাথলিক স্কুল থেকে ২৫০ জনেরও বেশি শিশু এবং কর্মী অপহৃত হয়। তাদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন শিশুকে চলতি মাসের শুরুর দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

অবশিষ্ট ১৩০ জন শিশু ও কর্মীকে উদ্ধারের’ বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘একজন শিক্ষার্থীও আর বন্দিদশায় নেই।’

গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র বায়ো ওনানুগা জানান, মুক্ত শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা এখন ২৩০ জন। অপহরণের পর থেকে ঠিক কতজনকে তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং কতজন বন্দিদশায় ছিল, সে বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। সরকার কীভাবে সর্বশেষ এই মুক্তি নিশ্চিত করেছে বা কোনো মুক্তিপণ দেওয়া হয়েছে কি না তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

ওনানুগা আরও জানান, আশা করা হচ্ছে, মুক্ত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার নাইজারের রাজধানী মিন্নায় পৌঁছাবে।

গত নভেম্বরে ঘটে যাওয়া এ অপহরণের ঘটনাটি উত্তর ও মধ্য নাইজেরিয়ার স্কুল এবং উপাসনালয়গুলোতে ক্রমবর্ধমান লক্ষ্যবস্তু হামলার সর্বশেষ ঘটনা। এ অপহরণের সময় ৫০ জন শিক্ষার্থী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল বলে জানায় ক্রিশ্চিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব নাইজেরিয়া।

এর আগে ১৮ নভেম্বর সেন্ট মেরি’স-এ হামলার ঠিক কয়েক দিন আগে আরও কিছু গণ-অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। কোয়ারা রাজ্যের ক্রাইস্ট অ্যাপোস্টোলিক চার্চে এক হামলায় দুজন নিহত এবং ৩৮ জন অপহৃত হন। এর আগের দিন কেব্বি রাজ্যের গভর্নমেন্ট গার্লস সেকেন্ডারি স্কুল থেকে দুজন নিহত এবং ২৫ জন মুসলিম শিক্ষার্থী অপহৃত হয়েছিল। কোয়ারা এবং কেব্বি হামলার ঘটনায় যাদের তুলে নেওয়া হয়েছিল, তারা সবাই ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে।

এই অপহরণগুলোর পেছনে কারা রয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে অধিকাংশ বিশ্লেষকের ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপরাধী চক্রগুলো এই কাজ করছে।

গত ৯ ডিসেম্বর নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেছিলেন, তাঁর সরকার আমাদের স্কুলগুলোকে নিরাপদ করতে এবং ছোটদের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে আরও নিরাপদ ও অনুকূল করতে নাইজার এবং অন্যান্য রাজ্যগুলোর সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে আরেকটি তেলবাহী ট্যাংকারকে যুক্তরাষ্ট্রের ধাওয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি
জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। ছবি: এএফপি

ভেনেজুয়েলার কাছাকাছি আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাঙ্কার ধাওয়া করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে এই অভিযান ওয়াশিংটনের।

গতকাল রোববার এই অভিযানটি পরিচালিত হয়। এর মাত্র একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশিত এক ‘ব্লকেডের’ অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় জাহাজ জব্দ করে মার্কিন কোস্ট গার্ড।

আল জাজিরাকে ওই মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ‘জাহাজটিকে “সক্রিয়ভাবে ধাওয়া” করছে আমাদের কোস্ট গার্ড। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, জাহাজটি ভেনেজুয়েলার সেই “ডার্ক ফ্লিট”-এর অংশ, যা লাতিন আমেরিকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ তেল খাতের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টা করছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, জাহাজটি ‘ভুয়া পতাকা’ ব্যবহার করছিল। একই সঙ্গে এটি একটি ‘বিচারিক জব্দাদেশ’-এর আওতাভুক্ত।

এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ট্যাঙ্কারটি নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। তবে এখন পর্যন্ত জাহাজটিতে কেউ আরোহণ করেনি। জাহাজটির গতিরোধের প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যার মধ্যে সন্দেহভাজন জাহাজের খুব কাছ দিয়ে নৌযান চালানো বা ওপর দিয়ে বিমান ওড়ানোও অন্তর্ভুক্ত।

অভিযানটি কোথায় চলছে বা কোন জাহাজের পিছু নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি ওই কর্মকর্তা।

ব্রিটিশ সামুদ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংস্থা ভ্যানগার্ড ওই জাহাজটিকে ‘বেলা ১’ হিসেবে শনাক্ত করেছে। এটি একটি বিশাল আকারের অপরিশোধিত তেলবাহী জাহাজ, যা গত বছর মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের নিষেধাজ্ঞা তালিকায় যুক্ত করা হয়। জাহাজটির সঙ্গে ইরানের যোগসূত্র রয়েছে বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি।

ট্যাংকারট্র্যাকার্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার ভেনেজুয়েলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বেলা ১ খালি ছিল।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ (PDVSA)-র অভ্যন্তরীণ নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, ২০২১ সালে ভেনেজুয়েলার তেল চীনে পরিবহনে ব্যবহৃত হয়েছিল এই জাহাজটি। একই সঙ্গে, একটি জাহাজ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ সংস্থাটি আরও জানায় যে, জাহাজটি এর আগে ইরানের অপরিশোধিত তেলও বহন করেছিল।

ভেনেজুয়েলার তেল খাতকে লক্ষ্য করে এই অভিযানটি এমন এক সময়ে পরিচালিত হচ্ছে যখন এই অঞ্চলে বৃহৎ আকারে মার্কিন সামরিক শক্তি বাড়ানো হয়েছে। এর ঘোষিত লক্ষ্য হলো মাদক পাচার মোকাবিলা করা। এছাড়াও, দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যারিবীয় সাগরে কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজগুলোর ওপর দুই ডজনেরও বেশি হামলা চালানো হয়েছে।

সমালোচকেরা এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে ভেনেজুয়েলা মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দেশটির দাবি, বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুত দখলের উদ্দেশ্যেই ওয়াশিংটন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ জব্দের ঘটনাকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা।

এ প্রসঙ্গে গতকাল হোয়াইট হাউস বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জব্দ করা প্রথম দুটি তেলের ট্যাঙ্কার কালোবাজারে পরিচালিত হচ্ছিল এবং নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশগুলোতে তেল সরবরাহ করছিল।

শনিবার জব্দ করা দ্বিতীয় জাহাজটি পানামার পতাকাবাহী ‘সেঞ্চুরিজ’ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। জাহাজটিতে প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ছিল। ভেনেজুয়েলার এই তেলগুলো চীনে নেওয়ার কথা ছিল।

প্রথম জব্দ জাহাজ ‘স্কিপার’ বর্তমানে টেক্সাস উপকূলে নোঙর করা আছে। জাহাজটিতে থাকা ১৯ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সেখানে খালাস করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধনের প্রস্তুতি চলছে।

এই জাহাজ জব্দের ঘটনায় ভেনেজুয়েলা সরকার অভিযোগ করছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের তেল চুরি করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত