Ajker Patrika

অভিভাবকদের চাপে সহকর্মীর আত্মহত্যা, কোরিয়াজুড়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিক্ষোভ

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১: ০৪
অভিভাবকদের চাপে সহকর্মীর আত্মহত্যা, কোরিয়াজুড়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিক্ষোভ

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের আত্মহত্যার ঘটনায় দেশটির শিক্ষক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দেশটিতে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, শিক্ষকেরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মা–বাবারা প্রায়ই বিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁদের কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টা করেন। শিক্ষকদের হয়রানি করেন। দিনে রাতে যেকোনো সময়, এমনকি ছুটির দিনেও তাঁরা ফোন করে অবিরাম অভিযোগ করতে থাকেন। 

শিক্ষক লি মিন–সো গত ৫ জুন তাঁর ডায়েরিতে লেখেন, শ্রেণিকক্ষে ঢুকতেই তাঁর মধ্যে ভয় ঢুকে যায়। ‘আমার বুক ভারী হয়ে আসছে। আমার মনে হচ্ছে আমি কোথাও পড়ে যাব। আমি কোথায় আছি তাও জানি না!’ 

গত ৩ জুলাই ডায়েরিতে তিনি লেখেন, কাজের চাপে তাঁর উন্মাদ হওয়ার অবস্থা। চাকরি ছেড়ে দিতে চান। 

এর দুই সপ্তাহ পরে সহকর্মীরা শ্রেণিকক্ষের আলমারি থেকে ২৩ বছর বয়সী এ শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা। বিবিসি ভুক্তভোগীর পরিবারের অনুরোধে তাঁর নাম গোপন রেখেছে। 

এ মর্মান্তিক ঘটনায় দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে প্রাথমিকের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। 

মিন–সোর শূন্য অ্যাপার্টমেন্টে এখন শুধু অ্যাকুয়ারিয়ামে যত্ন করে রাখা গোল্ডফিশই থাকে। তাঁর এলোমেলো বিছানার পাশে জমে আছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবির স্তূপ। সেসব ছবিতে শিক্ষার্থীরা লিখে রেখেছে তারা মিন–সোকে কতটা ভালোবাসে! এর নিচেই পড়ে আছে হতাশার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি ডায়েরি। 

মিন–সোর শূন্য ঘর গোছানোর ছুতোয় চোখের পানি লুকোচ্ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই পার্ক দু ইয়ং। তিনি বলেন, ‘এক বছরের বেশি সময় মিন–সো শিক্ষকতা করেছেন। মায়ের দেখাদেখি এ পেশায় আসা তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল। বাচ্চাদের খুব পছন্দ করতেন।’ 

মিন–সোর মৃত্যুর পর পুলিশ এ আত্মহত্যার জন্য সাম্প্রতিক কোনো বিচ্ছেদকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এরপর পার্ক নিজেই গোয়েন্দার ভূমিকা নিয়ে মিন–সোর ডায়েরি, মেসেজ ও কাজের নথি খুঁজে বের করেন। 

সে কাগজপত্রগুলো থেকে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে মিন–সোকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অযথা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছিলেন। সম্প্রতি তাঁর এক শিক্ষার্থী পেনসিল দিয়ে আরেক শিক্ষার্থীর মাথায় আঘাত করে। এ নিয়ে তিনি অভিভাবকদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। 

ছয় সপ্তাহ ধরে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষক সিউলে বিক্ষোভ করছেন। তাঁরা বলছেন, তাঁরা শিশু নির্যাতনকারী হিসেবে অভিহিত হওয়ার ভয়ে এতটাই ভীত যে শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা শেখাতে বা তাদের মারামারির মধ্যে হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না। 

শিক্ষকেরা অভিভাবকদের বিরুদ্ধে শিশু কল্যাণ আইনের অপব্যবহার করার অভিযোগ করেছেন। ২০১৪ সালে পাস হওয়া এ আইন অনুসারে, কোনো শিক্ষক শিশু নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনি বরখাস্ত হবেন। 

কোনো আক্রমণাত্মক শিশুকে বাধা দিলে সে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ আনা হতে পারে। শিশুকে মুখে বাধা দিলেও তা হবে মানসিক নির্যাতন। এসব অভিযোগের ফলে শিক্ষকদের তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুত করা হতে পারে। 

এরকম একটি ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, এক অভিভাবক তাঁর সন্তানকে প্রতিদিন সকালে ফোনকল করে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শিক্ষক সে অনুরোধ ফিরিয়ে দিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। এমনকি সহপাঠীর চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়ায় শিক্ষক এক শিক্ষার্থীর পুরস্কারের স্টিকার তুলে ফেলার ঘটনাতেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। 

বিক্ষোভে ২৮ বছর বয়সী এক শিক্ষক কিম জিন–সিও বলেন, তাঁরও আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় এসেছিল এবং নিজেকে সামলাতে তিনি তিন মাসের ছুটি নিয়েছিলেন। তিনি এক অবাধ্য শিক্ষার্থীকে বাথরুমে ৫ মিনিট সময় নিয়ে শান্ত হয়ে আসতে বলেন। আরেক ঘটনায়, তিনি এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তাঁর বাবা–মায়ের কাছে মারামারির অভিযোগ দেন। দুই ঘটনাতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। 

কিম বলেন, তিনি এতোটাই কোণঠাসা বোধ করছেন যে, তাঁর মনে হয়, তিনি আর নিরাপদে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা অত্যন্ত অসহায় বোধ করি। যারা সরাসরি ভুক্তভোগী তাঁরা মানসিকভাবে বদলে গেছেন, আর যারা ভুক্তভোগী নন তাঁরা অন্যদের ভুগতে দেখেছেন।’ 

দক্ষিণ কোরিয়ায় এমন অভিযোগের সংস্কৃতির পেছনে ভয়ানক প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজও কিছুটা দায়ী। শিশুরা ছোটকাল থেকেই সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে, যাতে ভবিষ্যতে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। স্কুলের বাইরে অভিভাবকেরা সন্তানকে অতিরিক্ত–পাঠ্যক্রম এমন ব্যয়বহুল স্কুলে পাঠান। স্কুলের পরে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তারা সেখানেই থাকে। 

আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় দম্পতিরা যেখানে ৫–৬টি সন্তান নিতেন, এখনকার দম্পতিরা সেখানে মাত্র একটি সন্তান নেন। ফলে সেই সন্তানের ওপর তাঁদের প্রত্যাশাও থাকে অনেক বেশি। 

অধ্যাপক কিম বং–জে সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশনে ভবিষ্যৎ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেন। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান অসমতাও এ পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী। 

কোরিয়ার সংস্কৃতিতে শিক্ষকদের সম্মান করার কঠোর নীতি রয়েছে। কিন্তু দেশটির রকেট গতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে অনেক অভিভাবকই এখন উচ্চশিক্ষিত। এই অভিভাবকেরা শিক্ষকদের অবজ্ঞার চোখে দেখেন। 

শিক্ষক কেওন বলেন, তাঁর ১০ বছরের শিক্ষকতায় তিনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কারণে বিষণ্নতা ও হতাশা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ অসুস্থতার ছুটি নিয়েছিলেন। 

চার বছর আগেও অবাধ্য শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষের পেছনে বা বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু কয়েক বছর থেকে অভিভাবকেরা শিশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করা শুরু করেছেন। শিক্ষক কেওন সম্প্রতি একটি তুলনামূলক দরিদ্র এলাকার স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘ধনী এলাকার অভিভাবকদের আচার–ব্যবহার বেশি আপত্তিকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত