Ajker Patrika

বছরজুড়ে নতুন নতুন রূপে ফিরে এসেছে করোনা

ইয়াসিন আরাফাত, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৪০
বছরজুড়ে নতুন নতুন রূপে ফিরে এসেছে করোনা

২০২১ সালের শুরুটা হয়েছিল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রত্যয় নিয়ে। ওই সময়টায় মানুষের মনে আশা জাগিয়ে একের পর এক বাজারে আসছিল করোনার টিকা। শুরু হয়ে গিয়েছিল টিকার প্রয়োগও। নতুন নতুন ধরন চিহ্নিত হলেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলমান ছিল। আর বছরের শেষটায় আবার নতুন করে লড়াই শুরুর মনোবল সঞ্চয় করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। কারণ ‘ওমিক্রন’। 

২০১৯ সালের শেষের দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। ২০২০ সালে এটি বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়। ওই বছরই বিজ্ঞানীরা এর টিকা আবিষ্কারের কাজে লেগে পড়েন। তাতে সফলও হন। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ‘প্রথম দেশ’ হিসেবে যুক্তরাজ্যে ফাইজার–বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনার টিকার প্রয়োগ শুরু হয়। তবে টিকা মিললেও বিশ্ব করোনা থেকে এখনো মুক্ত হয়নি। 

গত বছরের শেষ ও চলতি বছরের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া করোনার নতুন ধরন বিটা ও যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনার নতুন ধরন আলফা বিশ্বজুড়ে দাপট দেখাতে থাকে। এসব নতুন ধরনের কারণে প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় করোনার বুস্টার ডোজের। ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নাসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশিত হতে থাকে। 

ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে কড়াকড়িএর মধ্যেই ভারতে তীব্রভাবে সংক্রমণ শুরু হয় করোনার নতুন এক ধরনের। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে এর নাম রাখা হয় ডেলটা। ধরনটি প্রথম শনাক্ত হয় ভারতেই। গত বছরের অক্টোবরে ভারতে এর ধরন শনাক্ত হয়। গত মে মাসে করোনার ডেলটা ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে ডব্লিউএইচও। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, করোনাভাইরাসের আলফা থেকে ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ডেলটা ভেরিয়েন্ট।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়, ভারতে করোনা সংক্রমণের এই বিস্ফোরণ মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। কারণ, সংক্রমণ যখন কমছিল, তখন বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। ভারতে ভয়াবহ করোনা সংকটের জন্য বড় ধরনের ধর্মীয় জমায়েত, নির্বাচনী সভা-সমাবেশ, খেলাধুলার আয়োজনসহ অধিকাংশ জনসমাগম স্থান চালু করে দেওয়ার মতো বিষয়কে দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা। 

গত ৮ মে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেটের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়, নরেন্দ্র মোদির সরকারই ভারতে করোনা বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। বহুবার সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার কুম্ভমেলা পালন এবং ভোটের জন্য রাজনৈতিক প্রচারণা চালাতে দিয়েছে, যা ‘সুপার স্প্রেডারের’ কাজ করেছে। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, মোদি সমালোচকদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করেছেন। খোলামনে আলোচনা করতে চাননি, কারও পরামর্শও নেননি। এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।

গত বছরের ১৮ জুন দেশটিতে দৈনিক করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১১ হাজার। এর দুই মাসের মাথায় দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। 

আফ্রিকায় এখনো সরবরাহ হয়নি পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকা

ভারতে সংক্রমণের প্রথম ঢেউ চরম পর্যায়ে পৌঁছায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তখন দেশটিতে দিনে ৯০ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংক্রমণ কমে দৈনিক শনাক্ত ২০ হাজারের নিচে নামে। চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে ভারত মহামারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে যায়। দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক জরিপকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারি শুরুর পর এখন পর্যন্ত ভারতে এক দিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয় গত ৬ মে। এদিন দেশটিতে ৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনো দেশে এক দিনে এত রোগী শনাক্ত হয়নি। 

দেশ-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আবার কঠোর বিধিনিষেধের পথে হাঁটে ভারত সরকার। পাশাপাশি ১ মে থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিককে টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নেয় ভারত। ভারতে টিকার চাহিদা বেড়ে গেলে দেশটি থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা বাংলাদেশ পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ সরকার গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য সেরামের সঙ্গে চুক্তি করে। টিকা পেতে সেরামকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাংলাদেশের ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দুই কিস্তিতে মাত্র ৭০ লাখ ও ভারত সরকার উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়। 

ভারত থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ হলে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া বন্ধ হওয়ার শঙ্কাও ছিল বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এরপরই সরকার চীনের কাছ থেকে করোনা টিকা কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। চীন থেকে ১০ কোটির বেশি টিকা কিনেছে বাংলাদেশ সরকার। ভারতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর চলতি অক্টোবরে বাংলাদেশকে দীর্ঘ বিরতির পর ১০ লাখ ডোজ টিকা দেয় ভারত। এ ছাড়া জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার ও মডার্নার টিকা পায় বাংলাদেশ।

গ্লোব বায়োটেকের তৈরি বঙ্গভ্যাক্স টিকা

বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিল (বিএমআরসি)। দেশি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড এ টিকা উৎপাদনের চেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির লড়াইয়ে রয়েছে। এর আগে বানরের দেহে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘ভালো’ ফল পাওয়ার কথা জানিয়েছিল তারা। তবে প্রায় দেড় বছর চেষ্টার পরও এখনো টিকা বাজারে আনতে পারেনি গ্লোব বায়োটেক।

এদিকে বাংলাদেশ যখন টিকা জোগাড়ে ব্যস্ত, তখন বিশ্বের পশ্চিমা দেশগুলো ব্যস্ত বুস্টার ডোজের জন্য টিকা সংগ্রহে। আর ওই সব দেশের টিকা মজুতের কারণে দরিদ্র দেশগুলোর টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে করোনা টিকার বৈষম্য কমাতে আগামী বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুস্টার ডোজ প্রয়োগ না করার জন্য আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ মানুষ টিকার একটি ডোজ পেয়েছেন। যেখানে ধনী দেশগুলোর ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ একটি ডোজ পেয়েছেন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার কমপক্ষে এক ডোজ পেয়েছেন।

ইউরোপে টিকার প্রয়োগের হার ভালো হলেও সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ আবার দেখা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে লকডাউন জারি না হলেও টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের জন্য জার্মানিতে লকডাউন জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

ডেল্টা সংক্রমণে ভারতে বেড়েছিল করোনায় মৃত্যু

এর মধ্যেই গত ২৪ নভেম্বর করোনার নতুন এক ধরনের কথা জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। নতুন এই ধরনের নাম দেওয়া হয় ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে জানিয়েছে, ডেলটার চেয়ে দ্রুত ছড়ায় ওমিক্রন। তবে এ-ও অভয় দিচ্ছে, এই ধরনে মৃত্যুর হার তেমন নয়। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে।  

কোভিড টিকার অপ্রতুলতা এবং টিকা নিতে মানুষের মধ্যে দ্বিধার কারণে ওমিক্রনের মতো ধরন তৈরি হচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। এ ছাড়া করোনার টিকার ট্রায়াল চলার সময়ই ধনী দেশগুলো আগাম ক্রয়াদেশ দিয়ে রাখছে। তারা প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টিকা সংগ্রহ করছে। এতে বিপাকে পড়ছে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো। এই আচরণকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনৈতিক বলে আখ্যায়িত করেছে।

নভেল করোনাভাইরাসের নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরির সাফল্য এলেও নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে এসব টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় কাটছে না। এর মধ্যে আরও নতুন করোনাভাইরাসের মহামারি দুয়ারে কড়া নাড়ছে বলে সতর্ক করছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে এমন একটি টিকার সন্ধান চলছে, যা এই নতুন করোনাভাইরাসের সব ধরনের ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে মানুষকে আজীবন না হলেও অন্তত দীর্ঘ সময় সুরক্ষা দেবে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিউক–নাসের ভাইরোলজিস্ট ওয়াং লিনফা এই গবেষণায় বেশ এগিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি এমন টিকা উদ্ভাবন করতে চাইছেন, যা সব ধরনের করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে। এমন আশাবাদে ভর করেই নতুন বছরকে বরণ করতে চলেছে বিশ্ববাসী। 

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, এএফপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প: এশিয়ায় উসকে দেবে সমুদ্রতলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন প্রকল্প নতুন গতি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন আপত্তি দূর হওয়ায় এই উদ্যোগ এখন এশিয়ার নিরাপত্তাকাঠামো পাল্টে দিতে পারে এবং পানির নিচে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে।

উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলায় বহুদিন ধরে পরমাণুচালিত সাবমেরিনের অভিজাত ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছে সিউল। ট্রাম্পের সম্মতি পাওয়ায় দুই দেশের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় জ্বালানির প্রবেশাধিকার মিলেছে, যা এত দিন ছিল বড় বাধা।

তবে বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমাণ এই কর্মসূচি চীনকে বিরক্ত করতে পারে এবং জাপানকেও একই ধরনের সক্ষমতা অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিন ক্যাপ্টেন চোই ইল বলেন, সাবমেরিন অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণাত্মক অস্ত্র। তাই এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য।

সিউলের যুক্তি, উত্তর কোরিয়ার পানির নিচে থাকা হুমকি, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পরমাণুচালিত সাবমেরিন অপরিহার্য।

দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য বারবার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না তারা।

গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক থেকে পাওয়া এই চুক্তিকে ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নমনীয়তা বাড়াবে।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, তারাও একই ধরনের সক্ষমতা বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখায়, কিম জং-উন একটি তথাকথিত পরমাণুচালিত সাবমেরিন পরিদর্শন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার কর্মসূচি কতটা এগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু বিশ্লেষকের সন্দেহ, পিয়ংইয়ং হয়তো রাশিয়ার সহায়তা পাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে, তবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত