Ajker Patrika

পুতিনের ওপর খেপেছেন ট্রাম্প, ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: বিবিসি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: বিবিসি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ গতকাল রোববার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, যদি তিনি মনে করেন যে, মস্কো ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে তাঁর প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে, তাহলে রাশিয়ার তেলের ওপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক আরোপ করবেন।

মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, গত সপ্তাহে পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমালোচনা করার পর তিনি খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি আপসমূলক অবস্থান নিয়েছেন। এই বিষয়টি পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, তিনি মস্কোর তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। তবে পুতিন সম্পর্কে তাঁর এই কঠোর মন্তব্য যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তার ক্রমবর্ধমান হতাশারই প্রতিফলন।

ট্রাম্প বলেন, ‘যদি রাশিয়া এবং আমি ইউক্রেনের রক্তপাত বন্ধ করার বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারি এবং যদি আমি মনে করি যে, এটি রাশিয়ার দোষ...তাহলে আমি রাশিয়ার থেকে আসা তেলেওপরপর, সব ধরনের তেলের ওপর দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর মানে হলো, যদি আপনি রাশিয়া থেকে তেল কেনেন, তাহলে আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করতে পারবেন না। সব তেলের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকবে, সব তেলের ওপর ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পয়েন্টের শুল্ক থাকবে।’

পরে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প আবারও বলেন, তিনি পুতিনের ওপর হতাশ। তবে যোগ করেন, ‘আমি মনে করি, আমরা ধাপে ধাপে অগ্রগতি করছি।’ এ সময় ট্রাম্প জানান, তিনি এক মাসের মধ্যে এই নতুন বাণিজ্য ব্যবস্থা আরোপ করতে পারেন।

অবশ্য এই বিষয়ে মস্কো থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। রাশিয়া অসংখ্য পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধকে ‘অবৈধ’ এবং রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পশ্চিমের অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বলে অভিহিত করেছে।

ফ্লোরিডার পাম বিচে অবকাশ যাপনকালে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প জানান, তিনি এ সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করছেন। ক্রেমলিন গত সপ্তাহে ভিডিও ফুটেজে জানায়, গত কয়েক মাসে দুই নেতার দুটি জনসমক্ষে ঘোষিত টেলিফোন কথোপকথন ছাড়াও আরও বেশি যোগাযোগ থাকতে পারে।

ট্রাম্প ইউক্রেনের যুদ্ধকে ‘হাস্যকর’ যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন এবং তা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ বন্ধে তিনি সামান্যই অগ্রগতি লাভ করেছেন।

এদিকে, গত শুক্রবার পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অধীনে রাখা যেতে পারে যাতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে। ট্রাম্প নিজেও ইউক্রেনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন এবং জেলেনস্কিকে ‘স্বৈরাচার’ বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, পুতিন জানেন তিনি (ট্রাম্প) তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। তবে ট্রাম্প যোগ করেছেন, তাঁর (পুতিনের) সঙ্গে তাঁর ‘খুব ভালো সম্পর্ক’ রয়েছে এবং ‘যদি তিনি (পুতিন) সঠিক কাজটি করেন তবে রাগ দ্রুত কমে যায়...।’

এর আগে, গত শনিবার ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাবের আকস্মিকভাবে ফ্লোরিডা সফর করেন। স্টাবের দপ্তর রোববার জানিয়েছে, তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা দরকার এবং তিনি ২০ এপ্রিলের কথা উল্লেখ করেছেন। কারণ, সেদিন ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার ৩ মাস পূর্ণ হবে।

অপরদিকে, মার্কিন কর্মকর্তারা আলাদাভাবে কিয়েভকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এই চুক্তির সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বছরের পর বছর ধরে ইউক্রেনের সব প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে আয় পাবে। জেলেনস্কি বলেছেন, মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে বিস্তারিত বলার আগে কিয়েভের আইনজীবীদের খসড়াটি পর্যালোচনা করা দরকার।

এই বিষয়ে, নিজের রাষ্ট্রীয় বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি ‘বিরল মৃত্তিকা চুক্তি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছেন...যদি তিনি চুক্তিটি পুনরায় আলোচনা করতে চান, তবে তাঁর বড় সমস্যা হবে।’ ট্রাম্প সাংবাদিকদের আরও বলেন, ইউক্রেন কখনই ন্যাটোর অংশ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনে এক সন্তান নীতির প্রবক্তার মৃত্যু, শ্রদ্ধার চেয়ে সমালোচনাই বেশি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৬
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউন (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

চীনে বিতর্কিত এক সন্তান নীতির প্রবক্তা পেং পেইইউনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেদনের বদলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নীতিটি ঘিরে তীব্র সমালোচনা দেখা গেছে। গত রোববার বেইজিংয়ে ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে পেংয়ের মৃত্যুতে চীনাদের প্রতিক্রিয়া অনেকটা নেতিবাচক।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কাজে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান ছিলেন তিনি।

তবে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রো ব্লগিং ওয়েবসাইট ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’

এনডিটিভি জানিয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চীনে দম্পতিদের কেবল একটি সন্তান নেওয়ার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, তা কার্যকর করতে স্থানীয় কর্মকর্তারা অনেক ক্ষেত্রে নারীদের গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণ করতে বাধ্য করতেন।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় বেইজিং এই এক সন্তান নীতি চালু করেছিল।

এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে পড়ে এবং গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো জনসংখ্যা পড়তির দিকে ছিল।

ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’

গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে ১৩৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সামনের বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।

জনসংখ্যার নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং জোর দিয়েছিলেন গ্রামীণ এলাকায়। একসময় চীনের গ্রামগুলোতে বড় পরিবার গড়ে তোলা দম্পতিদের প্রধান লক্ষ্য ছিল, যাতে বৃদ্ধ বয়সে সন্তানেরা তাঁদের দেখাশোনা করতে পারে। এ ছাড়া বংশ রক্ষার জন্য ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক বেশি থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটত।

ওয়েইবোতে একজন লিখেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’

২০১০-এর দশকে এসে পেং প্রকাশ্যে তাঁর অবস্থান বদলান এবং বলেন, এক সন্তান নীতি শিথিল করা উচিত। বর্তমানে বেইজিং কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে শিশু পরিচর্যা ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি ও করছাড়ের মতো উদ্যোগ নিচ্ছে।

জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটিতে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ায় বিষ্ণুমূর্তি গুঁড়িয়ে দিল থাই সেনারা, ভারতের তীব্র নিন্দা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৫
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কম্বোডিয়ায় হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতের জেরে থাই সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধপূর্ণ এলাকায় সম্প্রতি নির্মিত একটি হিন্দু দেবতার মূর্তি ধ্বংসের খবর আমাদের নজরে এসেছে। এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হিন্দু ও বৌদ্ধ দেবতারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র এবং এটি আমাদের অভিন্ন সভ্যতার ঐতিহ্যের অংশ। এই ধরনের কাজ সারা বিশ্বের অনুসারীদের মনে আঘাত দেয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ব্যাকহো লোডার দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তিটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কম্বোডিয়ার প্রেহ বিহারের মুখপাত্র লিম চানপানহা জানান, ২০১৪ সালে নির্মিত মূর্তিটি থাইল্যান্ড সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মিটার ভেতরে কম্বোডিয়ার সীমানায় ছিল। তিনি এই ঘটনাকে প্রাচীন ও পবিত্র স্থাপত্যের ওপর আঘাত হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত জুলাই মাস থেকে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি হলেও চলতি মাসে পুনরায় সংঘাত শুরু হয়েছে। নয়াদিল্লি মনে করে, কূটনৈতিক সংলাপের মাধ্যমেই জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পদের বিনাশ রোধ করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন /৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গুদামে রাখার পরিকল্পনা ট্রাম্পের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত
কোস্টগার্ডের জাহাজ ভিগোরাসে আটক অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আটক ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ঠিকাদার খুঁজছে। এই পরিকল্পনায় বিশাল সব শিল্প গুদাম বা ওয়্যারহাউস সংস্কার করে একসঙ্গে ৮০ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের হাতে আসা এক খসড়া প্রস্তাবনার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে।

বর্তমানে আটককৃতদের দেশের যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে আইসিই (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এখন সেই পদ্ধতি বদলে একটি সুশৃঙ্খল ‘ফিডার সিস্টেম’ বা সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় যাতে দ্রুত দেশান্তর (ডিপোর্টেশন) নিশ্চিত করা যায়।

নথিতে বলা হয়েছে, নতুন গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রথমে কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রসেসিং সাইটে রাখা হবে। এরপর তাদের ৭টি বিশাল গুদামের কোনো একটিতে পাঠানো হবে, যার প্রতিটিতে ৫ থেকে ১০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা থাকবে। সেখান থেকেই মূলত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হবে।

বিশাল এই গুদামগুলো ভার্জিনিয়া, টেক্সাস, লুইজিয়ানা, অ্যারিজোনা, জর্জিয়া এবং মিজৌরির প্রধান লজিস্টিক হাবগুলোর কাছাকাছি স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ১৬টি ছোট গুদামে দেড় হাজার করে মানুষ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র বিভাগ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন জানিয়েছেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারছেন না এবং গুদাম পরিকল্পনা নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেও রাজি হননি। তবে এর আগে এনবিসি এবং ব্লুমবার্গ নিউজ গুদামগুলোকে আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে আইসিই-এর অভ্যন্তরীণ আলোচনার খবর দিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লাখ লাখ অভিবাসীকে আটক ও বিতাড়ন অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হলো এই গুদাম পরিকল্পনা। এ বছর কংগ্রেস অভিবাসীদের আটকে রাখার জন্য ৪৫ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। সেই অর্থ ব্যবহার করে প্রশাসন পরিত্যক্ত কারাগার সচল করেছে, সামরিক ঘাঁটির অংশ বিশেষ সংস্কার করেছে এবং রিপাবলিকান গভর্নরদের সঙ্গে মিলে দুর্গম এলাকায় অভিবাসীদের জন্য তাঁবু শিবির তৈরি করেছে।

বর্ডার জার টম হোমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানিয়েছেন, চলতি বছর প্রশাসন ৫ লাখ ৭৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। আইসিই-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড এম লিয়নস গত এপ্রিলে এক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমাদের এটাকে ব্যবসার মতো পরিচালনা করতে শিখতে হবে।’ প্রশাসনের লক্ষ্য হলো আমাজন যেভাবে তাদের প্যাকেজ পৌঁছে দেয়, ঠিক সেভাবেই অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানো।

তবে রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুদামে বিপুলসংখ্যক মানুষকে রাখা লজিস্টিক সমস্যা তৈরি করবে। এসব স্থাপনা মূলত মালামাল রাখার জন্য তৈরি, মানুষের বসবাসের জন্য নয়। সেখানে বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা বা সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকে। এ ছাড়া আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হওয়ায় হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা সেখানে নাও থাকতে পারে।

নিউ অরলিন্সের একজন অধিকারকর্মী তানিয়া উলফ বলেন, ‘এটি অমানবিক। মানুষকে পশুর মতো বিবেচনা করা হচ্ছে।’ আইসিই অবশ্য বলছে, তারা এই কাঠামোতে অনেক পরিবর্তন আনবে। সেখানে গোসলখানা, টয়লেট, রান্নাঘর, ডাইনিং এরিয়া, মেডিকেল ইউনিট এবং বিনোদন কেন্দ্রসহ প্রশাসনিক অফিস তৈরি করা হবে। কোনো কোনো কেন্দ্রে পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন ব্যবস্থাও থাকবে।

পরিকল্পিত গুদামগুলোর বেশির ভাগই রিপাবলিকান শাসিত এলাকায় হলেও দুটি বড় গুদাম ডেমোক্র্যাট শাসিত ভার্জিনিয়ার স্ট্যাফোর্ড এবং মিজৌরির ক্যানসাস সিটিতে করার কথা রয়েছে। আইসিই-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের শুরুতে আটক অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজারেরও বেশি, যা এযাবৎকালের রেকর্ড। তাদের মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের সাজা বা অভিযোগ নেই।

অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বলছেন, এত বড় স্থাপনা পরিচালনা করা কঠিন হবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী ও চিকিৎসা কর্মী পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যেমন, ফোর্ট ব্লিস সাইটে বর্তমানে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা কর্মীর মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সাবেক আইসিই চিফ অব স্টাফ জেসন হাউজারের মতে, ‘গুদাম হয়তো অনেক পাওয়া যাবে, কিন্তু সেগুলো নিরাপদে চালানোর সক্ষমতা সব সময়ই জনবলের ওপর নির্ভর করে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত