Ajker Patrika

সৌদি শিক্ষার্থীদের কাছে এখন আর কেন আকর্ষণীয় নয় যুক্তরাষ্ট্র

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১৫: ৩৪
সৌদি শিক্ষার্থীদের কাছে এখন আর কেন আকর্ষণীয় নয় যুক্তরাষ্ট্র

২০০৫ সালে কিং আবদুল্লাহ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম চালু হওয়ার পর থেকে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়া সৌদি আরবের শিক্ষার্থীর সংখ্যা হঠাৎই অনেক বেড়ে যায়। তবে এখন আর সৌদি আরবের শিক্ষার্থীরা আগের মতো আকৃষ্ট হচ্ছেন না মার্কিন মুল্লুকে পড়ালেখা করতে।

সৌদি আরবের শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শুরু করেন ১৯৫০-এর দশকে। ১৯৫৩ সালে বাদশা আবদুল আজিজ আল সৌদ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য মিনিস্ট্রি অব এডুকেশন প্রতিষ্ঠা করেন। মন্ত্রণালয়ের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর অন্যতম ছিল, পৃথিবীর নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে সৌদি শিক্ষার্থীদের পাঠানো।

গোড়ার দিকে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে পাঠানো হতো মিসর, লেবাননের মতো আরব দেশগুলোতে। ১৯৬০-এর দশকে তেল কারখানায় সক্রিয় উপস্থিতিসহ সৌদি আরবে মার্কিন নাগরিকদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখনই সৌদি সরকার সেখানকার শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোয় পাঠানো শুরু করে। 

সৌদি আরবের শিক্ষার্থীদের প্রথম দলটি যুক্তরাষ্ট্রে যায় ১৯৫৮ সালে। তাঁদের অনেকেই ফিরে এসে সন্তানদের তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণে উৎসাহিত করেন। পরের বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এ তথ্য জানায় আরব আমিরাতের গণমাধ্যম গালফ নিউজ।

সৌদি শিক্ষার্থীরা আগে কেন যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিতেন
সৌদি আরবের নাগরিকদের মার্কিন মুল্লুক সম্পর্কে জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিল এরামকো টেলিভিশনে পুরোনো পশ্চিমা অনুষ্ঠানগুলো প্রচারিত হোয়ার আগে পর্যন্ত। যত সময় গড়াতে লাগল, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রগুলো দেশের মানুষের সংবাদ পাওয়ার বড় মাধ্যমে পরিণত হতে লাগল। আর আমেরিকা সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে পারল সৌদি নাগরিকেরা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করা সৌদি আরবের শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার আলোকে একটি গবেষণায় এমন কিছু বিষয় উঠে এসেছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের সেখানে লেখাপড়া করতে আগ্রহী করে তোলে। এগুলোর মধ্যে আছে সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে এখানকার শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বাড়া, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন থেকে উৎসাহ পাওয়া, পড়ালেখা ও জীবনযাত্রার ব্যয় আওতার মধ্যে থাকা, পরিবেশ ও ভৌগোলিক অবস্থা অনুকূলে থাকা ইত্যাদি।

পাশাপাশি সৌদি আরবের শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে বৃত্তির ব্যবস্থা করত, তাতে পড়ালেখার ফি, জীবনযাত্রার ব্যয়, এমনকি প্রতিবছর সৌদি আরব ঘুরে যাওয়ার প্লেন ভাড়াও উঠে যেত তাতে। এটি সৌদি শিক্ষার্থীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোথাও উচ্চশিক্ষার জন্য যেতে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

সত্তরের দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করতে যাওয়া সৌদি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায় প্রথমবারের মতো। এই সংখ্যাবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে আশির দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। তখন তেলের দামে মন্দার কারণে বৃত্তির সংখ্যা কমিয়ে আনে সৌদি সরকার। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমার বড় ধাক্কাটি আসে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে সন্ত্রাসী হামলার পর। ওই সময় স্টুডেন্ট ভিসা জোগাড় প্রায় অসম্ভব হয় পড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে। 

সৌদি শিক্ষার্থীদের সেখানে ভর্তি কঠিন হয়ে পড়ায় পরের কয়েক বছর শিক্ষার্থী গমনের হার কমা অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে সংখ্যাটি নেমে আসে ৩ হাজারের আশপাশে।

২০০৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের মধ্যে একটি চুক্তির ফলাফল হিসেবে কিং আবদুল্লাহ স্কলারশিপ প্রোগ্রামের (কেএএসপি) জন্ম হয়। আর এটা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সৌদি নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার হার আবার বাড়িয়ে দেয়।

মার্কিন মুল্লুকে সৌদি শিক্ষার্থী: সর্বোচ্চ সীমা ও সংখ্যার পতন
উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চহারে বাড়তে থাকে। পরের দশকে এটি লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই সংখ্যাবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার শিক্ষার বিবেচনায় মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সৌদি আরবকে সবার ওপরে নিয়ে যায়।

তবে যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী যাওয়ার হার একপর্যায়ে আবার ধারাবাহিকভাবে কমতে শুরু করে। এর একটি কারণ, পড়ালেখা করতে যাওয়ার জন্য যে শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় তাতে কড়াকড়ি। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে, অর্থাৎ গত কয়েক বছরে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। সেটি হলো, এখানকার কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও দাদা-নানারা আবিষ্কার করছেন, একসময়ের বহুল আকাঙ্খিত দেশটিতে সামাজিক পরিবেশ বা রীতিনীতির অধঃপতন ঘটেছে, সেই সঙ্গে সেখানে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অভাব, সাংস্কৃতিক পরিবেশ ও মূল্যবোধের নিম্নমুখী অবস্থা।

সৌদি আরবের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ডিন ড. সালেহ বলেন, ‘আমি সৌভাগ্যবান যে, যুক্তরাষ্ট্রে বৃত্তিসহ সৌদি শিক্ষার্থীদের প্রথম যে দলটি পাঠানো হয়েছিল তার একজন সদস্য ছিলাম। সেখানকার যে সময় কেটেছে, তা সব সময় আনন্দের সঙ্গে স্মরণ করি। মার্কিন নাগরিকদের বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব ও সদয় আচরণকে শ্রদ্ধা করি আমি। যখন আমার সন্তানেরা বড় হয়, তাদের সেখানে পড়ালেখা করতে উৎসাহ দিয়েছি আমি।’

ড. সালেহ আরও বলেন ‘তবে এখন আপনি পাবেন সংঘাত ও গোলাগুলির একটার পর একটা খবর, শুনবেন শঙ্কিত করার মতো লিঙ্গবৈষম্য ও প্রকাশ্যে নানা অপরাধ ঘটার খবর। আর আমরা অবশ্যই অভিভাবকেরা সন্তানেরা যেখানে যাবে সেই জায়গার ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’ এখন সৌদী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি আর জাপানকে সহজ ও নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আশির দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং কঠিন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা ইরানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করছে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট বর্তমান সংঘাতকে কেবল সামরিক নয়; বরং একটি সর্বাত্মক অবরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল—তারা যদি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত, আমরাও পাল্টা জবাব দিতাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ অনেক বেশি সূক্ষ্ম। তারা আমাদের প্রতিটি দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলছে; আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

তিনি জানান, একদিকে ইরানকে বিশ্ববাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট তাঁর সাক্ষাৎকারে ২০২৫ সালের জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গও টানেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান) হামলা চালিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, জুনের সংঘাতের পর ইরান এখন সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল—উভয় দিক থেকেই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি তারা আবার হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়, তবে এবার জবাব হবে আরও কঠোর।’

পেজেশকিয়ানের এই কড়া বার্তা এমন একসময়ে এল যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ফিরিয়ে এনেছেন।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা।

সাক্ষাৎকার শেষে পেজেশকিয়ান দেশের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের অংশগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতি থাকলে বিশ্বের কোনো শক্তিই ইরানকে পরাজিত করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত