Ajker Patrika

গাজায় মার্কিন শান্তি প্রস্তাবে আরব-ইউরোপসহ সবাই একমত, কী আছে ট্রাম্পের ২০ দফায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৪৩
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বামে) ২৯ সেপ্টেম্বর, ওয়াশিংটন, ডিসির হোয়াইট হাউসের স্টেট ডাইনিং রুমে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু (বামে) ২৯ সেপ্টেম্বর, ওয়াশিংটন, ডিসির হোয়াইট হাউসের স্টেট ডাইনিং রুমে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংঘাত অবসানের জন্য একটি বিশদ ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা (রোডম্যাপ) জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকের পরপরই এটি প্রকাশিত হয়। ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সোমবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি টানার ‘খুব কাছাকাছি’ পৌঁছে গেছেন তিনি। ট্রাম্প হামাসকে সতর্ক করে বলেছেন, তারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য তিনি ‘সবুজ সংকেত’ দেবেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে আরব নেতাদের কাছে এই পরিকল্পনার প্রাথমিক খসড়া (তখন ২১ দফা) প্রথম শেয়ার করা হয়েছিল। সোমবার একজন শীর্ষ কাতারি ও শীর্ষ মিসরীয় কর্মকর্তা পরিবর্তিত ২০ দফা পরিকল্পনাটি হামাসের আলোচকদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।

ট্রাম্পের প্রকাশিত এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, উভয় পক্ষ সম্মত হলেই যুদ্ধ ‘অবিলম্বে শেষ হবে’। তবে জিম্মি মুক্তি ও সেনা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট শর্ত ও সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন:

সময়সীমা পরিবর্তন: প্রাথমিক খসড়ায় জিম্মি মুক্তির সময়সীমা ৪৮ ঘণ্টা থাকলেও চূড়ান্ত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের জনসমক্ষে চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জীবিত ও প্রয়াত সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।

সেনা প্রত্যাহার: জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী ‘সম্মত স্থানে প্রত্যাহার করে নেবে’। এই সময়ে বিমান হামলা, গোলাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।

বন্দিবিনিময়: জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ গত ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পরে আটক ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে। মৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে প্রতিটির জন্য ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।

গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন ও নিরাপত্তাকাঠামো

প্রস্তাবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ও সুরক্ষার জন্য দুটি প্রধান স্তর ও একটি নতুন নিরাপত্তাব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে:

টেকনোক্র্যাটিক কমিটি: গাজায় দৈনন্দিন পরিষেবা পরিচালনার জন্য একটি ‘টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটি’ গঠিত হবে। এই কমিটিতে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

বোর্ড অব পিস: এই প্রশাসনিক কমিটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’-এর তত্ত্বাবধানে কাজ করবে, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সংস্থা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের ‘সংস্কার কর্মসূচি’ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত গাজা পুনর্গঠন ও অর্থায়নের কাঠামো নির্ধারণ করবে।

এদিকে হোয়াইট হাউসে নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানালেও গাজার ভবিষ্যৎ শাসন নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, গাজাকে এমন একটি শান্তিপূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) কারও দ্বারাই পরিচালিত হবে না।

আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) তৈরি করবে, যা গাজায় দ্রুত মোতায়েন করা হবে। এই বাহিনী ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে এবং এ বিষয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এটিই গাজার দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান হবে।

ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা ‘দখল বা সংযুক্ত করবে না’। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও স্থিতিশীলতা আনলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে নিরাপত্তার জন্য একটি ‘নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি’ থাকবে।

মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক দিক

মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি: হামাস চুক্তি প্রত্যাখ্যান করলেও ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় মানবিক সহায়তার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে, যার বিতরণে জাতিসংঘ ও রেড ক্রিসেন্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বাধ্যতামূলক বিতাড়ন নয়: এই পরিকল্পনা স্পষ্ট করে যে, ‘কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না’ এবং যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তারা স্বাধীনভাবে যেতে ও ফিরে আসতে পারবে। এই অবস্থান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্ববর্তী জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাবের বিপরীতে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গাজাকে পুনর্গঠিত করতে এবং চাঙা করতে একটি ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ তৈরি করা হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের সফল আধুনিক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের প্যানেল দ্বারা পরিচালিত হবে।

হামাস সদস্যদের ভাগ্য: যে সমস্ত হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও অস্ত্র সমর্পণের প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে যারা গাজা ছেড়ে যেতে ইচ্ছুক, তাদের ‘গ্রহণকারী দেশে’ নিরাপদ যাত্রার ব্যবস্থা করা হবে।

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা: এই মার্কিন পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি স্বীকার করা হয়েছে, যা ‘ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে কি না, তা বলা হয়নি।

হামাস যদি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে এবং দখলকৃত অঞ্চলগুলো পর্যায়ক্রমে অন্তর্বর্তী নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবে এবং বর্ধিত মানবিক সহায়তা চালু থাকবে।

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার ২০ দফা:

১. গাজা হবে একটি চরমপন্থামুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।

২. গাজার জনগণের উপকারের জন্য গাজা পুনর্গঠন করা হবে, যাদের যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

৩. যদি উভয় পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তাহলে যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত লাইনে প্রত্যাহার করে নেবে। এই সময়ে আকাশ ও আর্টিলারি বোমাবর্ষণসহ সমস্ত সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে এবং সম্পূর্ণ ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।

৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

৫. একবার সমস্ত জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পরে আটক ১ হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ওই সময়ে আটক সব নারী ও শিশু অন্তর্ভুক্ত থাকবে। প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির দেহাবশেষ মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ১৫ জন প্রয়াত গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে।

৬. একবার সমস্ত জিম্মি ফিরিয়ে দেওয়া হলে যেসব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং তাদের অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করার প্রতিশ্রুতি দেবে, তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে। যেসব হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাদের গ্রহণকারী দেশগুলোতে নিরাপদে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

৭. এই চুক্তি গৃহীত হওয়ার পরে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো হবে। ন্যূনতম সহায়তার পরিমাণ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, যার মধ্যে অবকাঠামোর পুনর্বাসন (পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন), হাসপাতাল ও বেকারির পুনর্বাসন এবং ধ্বংসাবশেষ অপসারণ ও রাস্তা খোলার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

৮. গাজা উপত্যকায় বিতরণ এবং ত্রাণ সহায়তার প্রবেশ জাতিসংঘ এবং তার সংস্থাগুলো এবং রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্য কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উভয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই অগ্রসর হবে, যা কোনো পক্ষের সঙ্গেই কোনোভাবে যুক্ত নয়। রাফা ক্রসিং উভয় দিকে খোলার বিষয়টি ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫-এর চুক্তির অধীনে বাস্তবায়িত একই ব্যবস্থার অধীন হবে।

৯. গাজা একটি টেকনোক্র্যাটিক, রাজনীতিমুক্ত ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনের অধীনে পরিচালিত হবে, যা গাজার জনগণের জন্য জনসেবা এবং পৌরসভার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবে। এই কমিটি যোগ্য ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা গঠিত হবে, এবং এটি একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা, ‘বোর্ড অব পিস’,-এর তত্ত্বাবধানে থাকবে, যার নেতৃত্বে এবং সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। অন্যান্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানের নাম ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও অন্তর্ভুক্ত। এই সংস্থাটি গাজার পুনর্গঠনের জন্য কাঠামো তৈরি করবে এবং অর্থায়ন পরিচালনা করবে যতক্ষণ না ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) তাদের সংস্কার কর্মসূচি সম্পন্ন করে এবং যতক্ষণ না তারা নিরাপদে ও কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে পারে। এই সংস্থাটি আধুনিক ও দক্ষ শাসন ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড আহ্বান করবে যা গাজার জনগণের সেবা করে এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সহায়ক।

১০. গাজাকে পুনর্গঠন ও চাঙা করার জন্য একটি ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যের কিছু সমৃদ্ধ আধুনিক চিত্তাকর্ষক শহর গঠনে সহায়তা করা বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেলকে ঐক্যবদ্ধ করে এটি করা হবে।

১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার সহ একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে।

১২. কাউকে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না, এবং যারা যেতে ইচ্ছুক তারা স্বাধীনভাবে তা করতে পারবে এবং ফিরতেও পারবে। আমরা জনগণকে থাকতে উৎসাহিত করব এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেব।

১৩. হামাস এবং অন্য দলগুলো প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ বা কোনো প্রকারেই গাজার শাসনে কোনো ভূমিকা না রাখতে সম্মত হবে। সমস্ত সামরিক, সন্ত্রাসী, এবং আক্রমণাত্মক অবকাঠামো, যার মধ্যে সুড়ঙ্গ এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধাগুলো অন্তর্ভুক্ত, ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে না। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে গাজার নিরস্ত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া থাকবে। নতুন গাজা একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তুলতে এবং তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।

১৪. আঞ্চলিক অংশীদারদের দ্বারা একটি গ্যারান্টি প্রদান করা হবে যে হামাস এবং অন্য দলগুলো তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে এবং নতুন গাজা তার প্রতিবেশী বা তার জনগণের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।

১৫. গাজায় অবিলম্বে মোতায়েন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইসএফ) তৈরি করবে। আইএসএফ গাজায় যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা দেবে, এবং এই ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এই বাহিনীটি হবে দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইসএফ নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার সঙ্গে সঙ্গে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিরস্ত্রীকরণের সঙ্গে যুক্ত মানদণ্ড, মাইলফলক এবং সময়সীমার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করবে। কার্যত, আইডিএফ দখলকৃত গাজার ভূখণ্ডকে আইএসএফ-এর কাছে ক্রমান্বয়ে হস্তান্তর করবে, যতক্ষণ না তারা গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, তবে একটি নিরাপত্তা পরিধির উপস্থিতি থাকবে যা গাজা কোনো পুনরুত্থিত সন্ত্রাসী হুমকি থেকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকবে।

১৭. হামাস এই প্রস্তাবে বিলম্ব করলে বা প্রত্যাখ্যান করলে, ওপরের বিষয়গুলো, বর্ধিত সহায়তা কার্যক্রম-সহ, আইডিএফ থেকে আইএসএফ-এর কাছে হস্তান্তর করা সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চলগুলোতে এগিয়ে চলবে।

১৮. শান্তি থেকে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যেতে পারে তার ওপর জোর দিয়ে ফিলিস্তিনি এবং ইসরায়েলিদের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার চেষ্টা করার জন্য সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মূল্যের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত হবে।

১৯. গাজার পুনর্গঠন অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং যখন পিএ সংস্কার কর্মসূচি বিশ্বস্ততার সঙ্গে পরিচালিত হবে, তখন ফিলিস্তিনি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের একটি বিশ্বাসযোগ্য পথের জন্য শর্তাবলি তৈরি হতে পারে, যাকে আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে স্বীকৃতি দিই।

২০. শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তে সম্মত হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ চলবে।

গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশগুলোর জোরালো সমর্থন

আটটি আরব বা মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ভূমিকা এবং তার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানায়’। দেশগুলো ‘চুক্তিটি চূড়ান্ত করা এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং দলগুলির সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলকভাবে যুক্ত হতে তাদের প্রস্তুতি নিশ্চিত করেছে’।

এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে: মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তান। এর মধ্যে সৌদি আরব ও কাতার সংঘাতের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বে জনসংখ্যায় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া গাজায় ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বাহিনীর অংশ হিসেবে সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তান এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ট্রাম্পের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ট্রাম্পের ‘আন্তরিক ও দৃঢ় প্রচেষ্টাকে’ স্বাগত জানিয়ে দ্রুত সমর্থন জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ও গাজাবাসীর প্রতিক্রিয়া

হামাস আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলেও, গাজায় হামাসের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ এই পরিকল্পনাকে ‘ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আগ্রাসনের একটি রেসিপি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘যা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি, তা যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

গাজার সাধারণ বাসিন্দারাও পরিকল্পনাটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং এটিকে জিম্মি মুক্তির একটি কৌশল বলে মনে করছেন।

ইউরোপীয় মিত্র ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ইউরোপীয় শক্তিগুলোও হামাসকে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্য: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কার্যালয় ট্রাম্পের ‘যুদ্ধ শেষ করা, জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’ এই পরিকল্পনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে প্রশংসা করেছেন।

ফ্রান্স: প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ট্রাম্পের ‘গাজা যুদ্ধ অবসানের প্রতিশ্রুতিকে’ স্বাগত জানিয়ে হামাসকে ‘অবিলম্বে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং এই পরিকল্পনা অনুসরণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

অন্যান্য ইইউ সদস্য: ইইউ প্রধান আন্তোনিও কস্তা সব পক্ষকে ‘শান্তির একটি প্রকৃত সুযোগ দিতে এই মুহূর্তটি কাজে লাগানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন। জার্মানি এই পরিকল্পনাকে ‘ভয়াবহ সংঘাতের অবসানের একটি অনন্য সুযোগ’ এবং ইতালি ‘এই সুযোগটি কাজে লাগানোর’ জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

স্পেন: এমনকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও শান্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকেই ‘একমাত্র সম্ভব’ পথ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান

ভারত: ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্রাম্পের ‘ব্যাপক পরিকল্পনা ঘোষণার’ প্রশংসা করে এটিকে ‘ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের পাশাপাশি বৃহত্তর পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের একটি কার্যকর পথ’ বলে অভিহিত করেছেন।

অস্ট্রেলিয়া: প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ পরিকল্পনাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসকে ‘অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভেনেজুয়েলায় ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। দেশটিতে থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ভুলভাবে আটক হওয়া, আটক অবস্থায় নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, স্থানীয় আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ, অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই দেশটিতে ভ্রমণ না করতে এবং সেখানে অবস্থান না করতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও আইনগত স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়তে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই সতর্কবার্তা এল এমন এক সময়, যার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাণঘাতী হামলায় অন্তত ৪ জন নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত হয়েছেন বলে ইউএস সাউদার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়।

সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এই নৌযানটি একটি ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনের’ সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, নৌকাটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর পথে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল। এক্সে দেওয়া পোস্টে সাউদার্ন কমান্ড জানায়, নৌকায় থাকা চার পুরুষ ‘মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বহু ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতির নৌকাটি আচমকা একটি প্রবল বিস্ফোরণে আঘাত পেয়ে আগুনে ঘিরে যায়।

ঘটনাটি অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত মাদকবিরোধী সামরিক অভিযানের অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অভিযান নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে, কারণ এতে নিহতের সংখ্যা এখন ৮৫–এর বেশি ছাড়িয়েছে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার জেরে একযোগে ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি বাতিল করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে মার্কিন সতর্কবার্তার প্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলার কারাকাসগামী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করেছিল এই এয়ারলাইনগুলো। পরে ভেনেজুয়েলা তাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২৭ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ হওয়া এয়ারলাইনগুলো হলো—আইবেরিয়া, টিএপি পর্তুগাল, গোল, লাতাম, অ্যাভিয়াঙ্কা এবং টার্কিশ এয়ারলাইনস। ভেনেজুয়েলার এই সিদ্ধান্তে হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু ছোট ছোট এয়ারলাইন এখনো দেশটিতে যাতায়াত করছে।

সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ঘিরে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই অভিযান মাদকবিরোধী তৎপরতার অংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এত বড় সামরিক উপস্থিতি সাধারণত দেখা যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ক্ষমতাধর আসিম মুনির, হলেন পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড়ো ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসাবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত-দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনী প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭ তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে, একটি মাত্র অফিসের অধীনে সশস্ত্রবাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসাবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিনবাহিনী সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফ-এর হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭ তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএ-এর ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (১) এখন জানাচ্ছে যে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন […], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফ-এর বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপ-ধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফ-এরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭ তম সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসি-এর মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনঃ নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

ফলস্বরূপ, ২৭ তম সংশোধনীর অধীনে এই পুনর্গঠনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে, পিএএ-এর সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি প্রেসিডেন্টকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সিওএএসসহ-সিডিএফ-কে আরও পাঁচ বছরের জন্য পুনঃ নিয়োগ বা তাঁর মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে। এর ফলে তিনি ২০৩৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্তও পদে থাকতে পারেন।

এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা ব্যাপক জল্পনা বাড়িয়েছিল। বিশেষ করে, যখন ২৭ নভেম্বর জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জা অবসর নেওয়ার পর সিজেসিএসসি পদটি বিলুপ্ত হয়। ফিল্ড মার্শাল মুনির-এর আসল তিন বছরের সেনাপ্রধানের মেয়াদ (গত বছরের সংশোধনীর আগে) ২৯ নভেম্বরে শেষ হয়, কিন্তু সেদিনও কোনো বিজ্ঞপ্তি না আসায় আরও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, সরকার হয়তো আসন্ন চার-তারকা পদের নিয়োগ নিয়ে দর-কষাকষির জন্য এই নিয়োগ আটকে রেখেছিল।

রাজনৈতিক মহল থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের নতুন কমান্ডার (সিএনএসসি), ভাইস চিফ অব দ্য আর্মি স্টাফ (ভিসিওএএস) এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আইএসআই প্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দরদাম করতেই এই দেরি। সেনাবাহিনী আগেই স্পষ্ট করেছিল যে, কোনো ভিসিওএএস নিয়োগ করা হচ্ছে না। তবে সংশোধিত আইন অনুযায়ী, সিএনএসসি এবং যেকোনো ভিসিওএএস-এর নিয়োগ সিডিএফ-এর সুপারিশের সঙ্গে যুক্ত।

সরকারি কর্মকর্তারা বারবার সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো উত্তেজনার কথা অস্বীকার করেছেন, জানিয়েছেন যে প্রক্রিয়াগত প্রয়োজনীয়তা ও প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সূচি সময়রেখা নির্ধারণ করেছে। তবুও, ২৭ তম সংশোধনী যেভাবে তাড়াহুড়ো করে সংসদে পাশ করানো হয়েছিল, তার পরে এমন নীরবতাকে অনেকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেছেন। এই সংশোধনী কেন্দ্রীয় সরকারকে সিডিএফ-এর কার্যাবলি নির্ধারণের ক্ষমতাও দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বহু-ডোমেন ইন্টিগ্রেশন, পুনর্গঠন এবং সার্ভিসগুলোর মধ্যে যৌথতা বাড়ানো।

এদিকে, আইনসচিব আজম নাজির তারার জানিয়েছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সিডিএফ-এর জন্য একটি নতুন অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত করছে এবং এর খসড়া একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সিডিএফ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোনো মতপার্থক্যের ধারণা তিনি নাকচ করে দেন, জোর দিয়ে বলেন যে প্রধানমন্ত্রীর দেশের বাইরে থাকার কারণেই এই বিলম্ব। কর্মকর্তারা বলছেন, এই অর্গানোগ্রামেই সিডিএফ, সার্ভিস চিফ ও নতুন প্রতিষ্ঠিত কৌশলগত কমান্ডের মধ্যে কমান্ডের প্রবাহ কেমন হবে, তা উল্লেখ করা থাকবে।

সিডিএফ-এর নিয়োগ অনুমোদনের পাশাপাশি, প্রেসিডেন্ট জারদারি বিমানবাহিনীর নেতৃত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শও অনুমোদন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ভবন জানিয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমদ বাবর সিধুর জন্য ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন।’

এই মেয়াদ বৃদ্ধিটি আগামী বছরের মার্চে তাঁর বর্তমান পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্যকর হবে, যা তাঁকে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত পদে বহাল রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জ্বালানি কিনতে পারলে, ভারত কেন পারবে না—প্রশ্ন পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ২৮
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে তাঁকে আলিঙ্গন করে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর পরই পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে পারে, তবে ভারত কেন তা পারবে না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিন ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে এই মন্তব্য মন্তব্য করেন। এই সফরের সময় উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে রাশিয়াকে এড়িয়ে চলতে চাপ দিচ্ছে, ঠিক তখন চার বছরে পুতিনের এই প্রথম ভারত সফরের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমানের বিক্রি বাড়ানো, এবং জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাইরেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারিত করা।

নয়াদিল্লি এবং মস্কোর মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং বহু দশক ধরে রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহের উৎস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত সমুদ্রপথে আসা রাশিয়ার তেলের শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন বলছে যে ভারতের সস্তায় রুশ তেল কেনা মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সাহায্য করছে, তখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্ক এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার ফলে এই মাসে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে চলেছে।

পুতিন ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো তার নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে। সেটিও তো জ্বালানি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের জ্বালানি কেনার অধিকার থাকে, তবে ভারতের কেন একই সুযোগ থাকবে না? এই প্রশ্নটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা প্রয়োজন, এবং আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

ভারত বলেছে যে ট্রাম্পের শুল্ক অন্যায্য এবং অযৌক্তিক এবং মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পর্যন্ত কোটি কোটি ডলারের রাশিয়ান জ্বালানি ও পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতীয় তেলের ক্রয় কমেছে কি না জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘এই বছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণে কিছুটা হ্রাস দেখা গেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটা কেবল একটি সামান্য সমন্বয়। সামগ্রিকভাবে, আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আগের মতোই আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং অপরিশোধিত তেল... রাশিয়ার তেলের বাণিজ্য ভারতে মসৃণভাবে চলছে।’

ভারত ও রাশিয়ার ট্রাম্প এবং তাঁর শুল্কের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত জানতে চাইলে পুতিন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কিছু উপদেষ্টা আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের শুল্কনীতি বাস্তবায়ন চূড়ান্তভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য উপকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি যে শেষ পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সকল নিয়ম লঙ্ঘন সংশোধন করা হবে।’

এর কয়েক ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের রানওয়েতে লালগালিচার ওপর তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং তারপর প্রধানমন্ত্রী মোদি আয়োজিত একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের জন্য একই গাড়িতে চলে যান।

পুতিনের এই সফরে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী এবং একটি বড় রাশিয়ান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে উপস্থিত ছিল। শুক্রবার দুই নেতা শীর্ষ বৈঠক করবেন, যেখানে একাধিক চুক্তি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত