Ajker Patrika

‘ইউক্রেনে রাশিয়া জিতলে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে হবে তিনগুণ’

স্টারমার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ
স্টারমার সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। ছবি: দ্য টেলিগ্রাফ

রাশিয়া যদি ইউক্রেনে জয়ী হয়, তাহলে ‘কোল্ড ওয়ার’ সময়ে যুক্তরাজ্যের যে প্রতিরক্ষা ব্যয় হয়েছিল, তার তিনগুণ বাড়াতে হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভসকে সতর্ক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১৯৪৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত বিশ্বের তৎকালীন দুই সুপারপাওয়ার—যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া)—এর মধ্যে রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে ‘কোল্ড ওয়ার’ বা শীতল যুদ্ধ নাম দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন ব্রিটেনের সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি করে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা না করলে ভবিষ্যতে ব্যয় অনেক বেশি হয়ে যাবে। ল্যামি জানান, অর্থ বিভাগের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ের চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোর প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতা অর্জন করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করা যায়।

ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক প্যানেলে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইউরোপ এটি করতে পারে—অবশ্যই পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই—পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা, আমাদের ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে—কীভাবে বলবো—বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমাদের মধ্যে এটি স্পষ্ট, যদি ইউক্রেন ব্যর্থ হয়, তাহলে খরচ বহুগুণ বেড়ে যাবে।’

ল্যামি বলেন, ‘শীতল যুদ্ধের সময় আমরা গড়ে জিডিপির সাত শতাংশ বা তার বেশি প্রতিরক্ষায় ব্যয় করতাম। তাই এখন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা না করে ভবিষ্যতে টাকা বাঁচানো যাবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা এই যুদ্ধের প্রভাব স্পষ্ট দৃশ্যমান।’

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ডেভিড ল্যামির মন্তব্যগুলো মন্ত্রিসভার মধ্যে একটি চলমান লড়াইয়ের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে দ্রুত প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

তবে ল্যামি বলেন, জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ হবে প্রতিরক্ষা বাজেট, এ বিষয়ে সরকার ‘সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। তবে এই লক্ষ্য কবে অর্জিত হবে তা তিনি বলেননি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মন্ত্রীরা কয়েক মাসের মধ্যে একটি পথনির্দেশনা উপস্থাপন করবেন।

ইউরোপের দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয় পাঁচ শতাংশে বাড়াতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সরাতে চায়।

গতকাল শনিবার ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, ন্যাটোর পরবর্তী সম্মেলনে জুনে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ ‘তিন শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি’ করার নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করার কথা ভাবছে।

র‍্যাচেল রিভস আগামী মাসে বড় ধরনের ব্যয় সংকোচনের ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। এই সময় প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিলেন ডেভিড ল্যামি। এ বছর যুক্তরাজ্য সামরিক খাতে ৫ হাজার ৬৯০ কোটি পাউন্ড এবং পরবর্তী বছরে ৫ হাজার ৯৮০ কোটি পাউন্ড ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে, যা মোট জাতীয় সম্পদের ২ দশমিক ৩ শতাংশের সমান।

পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যয় সাত শতাংশের উপরে ছিল এবং আশির দশকে এটি চার শতাংশের উপরে ছিল। এটি ২০১৭ সালে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশে নামে। সাত শতাংশে ফিরে যাওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যকে প্রতিবছর ১৭০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেশি ব্যয় করতে হবে।

ল্যামি বলেন, ইউরোপের মোট জিডিপি থেকে প্রতিরক্ষায় বর্তমান ব্যয় মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ। ইউরোপকে ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে, যাতে রাশিয়ার আগ্রাসন রোধ করা যায়। পুতিনকে মোকাবিলা করতে এটা অবশ্যই করতে হবে।

ল্যামি বলেন, ‘আমরা জানি, এটি শুধু ইউক্রেনের জন্য নয়, ইউরোপের জন্যও ফ্রন্টলাইন। যখন আমরা একটি আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারব, তখনও রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধ হবে না। তাই এটি ইউরোপের অস্তিত্বের প্রশ্ন।’

পুতিনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে আলোচনার পর ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সরাসরি বলেছেন, ইউরোপীয় নিরাপত্তা আর ‘হোয়াইট হাউসের প্রধান মনোযোগ’ নয়।

এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার পূর্ববর্তী সেনাবাহিনীর প্রধান লর্ড ড্যানাট বলেন, যদি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার প্রতিরক্ষা ব্যয় না বাড়ান, তবে তাঁকে ‘ইতিহাসের ভাগাড়ে’ ঠেলে দেওয়া হবে। আর ব্রিটেনের সেনাবাহিনী বর্তমানে এতটাই ‘দুর্বল’ অবস্থায় আছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি হলে ইউক্রেনে শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালনার ক্ষমতাও এটির নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতেও বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করে।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালায় এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেয়। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তর চেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত