ড. এম আবদুল আলীম

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল কাদীর, আবদুল কাদির, আবুল ফজল প্রমুখ চিন্তাবিদ।
বস্তুত বাঙালি মুসলমান-সমাজে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আচার-বিশ্বাস-সংস্কার, ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং পশ্চাৎপদতার মূলোৎপাটন করে তার পরিবর্তে যুক্তিবাদ, ইহজাগতিকতা, মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা তথা রেনেসাঁর আলোয় তাদের আলোকিত করাই ছিল এই আন্দোলনের ধারক-বাহকদের প্রধান লক্ষ্য।
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছিল: ‘আমরা চক্ষু বুজিয়া পরের কথা শুনিতে চাই না বা শুনিয়াই মানিয়া লইতে চাই না; আমরা চাই চোখ মেলিয়া দেখিতে, সত্যকে জীবনে প্রকৃতভাবে অনুভব করিতে। আমরা কল্পনা ও ভক্তির মোহ আবরণে সত্যকে ঢাকিয়া রাখিতে চাই না। আমরা চাই জ্ঞান-শিক্ষা দ্বারা অসার সংস্কারকে ভস্মীভূত করিতে এবং সনাতন সত্যকে কুহেলিকা মুক্ত করিয়া ভাস্বর ও দীপ্তিমান করিতে।
আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাই না, আমরা চাই বর্তমান মুসলমান সমাজের বদ্ধ কুসংস্কার এবং বহুকাল সঞ্চিত আবর্জনা দূর করিতে।’ আলোচনা, বক্তৃতা, লেখনী সঞ্চালন এবং শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা এই চিন্তার বিস্তার ঘটান। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রেরণা ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.), শেখ সাদী, রোমা রলাঁ, রামমোহন রায়, ডিরোজিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্যেটে, মোস্তফা কামাল পাশা, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাঙালি সমাজে ভক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানবতা এসবের স্ফুরণ প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ করা গেলেও ইউরোপীয় রেনেসাঁপুষ্ট ভাবধারার উন্মেষ ঘটে উনিশ শতকে এবং সেটা হয় প্রধানত কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে। রাজা রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লুই বিভিয়ান ডিরোজিও, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ ছিলেন এই রেনেসাঁসের আলোক সারথি। তাঁরা ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন প্রভৃতির প্রভাবে বাঙালি-সমাজে নবচিন্তার প্রতিফলন ঘটান। তবে এই আলো প্রধানভাবে বাংলার হিন্দুসমাজের উচ্চকোটীতে পড়ে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থাকে এর বাইরে; বিশেষ করে বাংলার মুসলমান-সমাজে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন যুগের বাস্তবতা মেনে ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ মনে করে তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে আধুনিক জ্ঞান-বুদ্ধি এবং বিত্ত ও চিত্তবৈভবে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন মুসলমান-সমাজ ইংরেজকে শত্রু মনে করে তাদের সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। সেই পরিবর্তনকে আত্মস্থ করেই একঝাঁক বাস্তববাদী মুসলমান চিন্তাবিদ যখন এগিয়ে আসেন, তখনই ধীরে ধীরে মুসলমানেরা সম্মোহন কাটিয়ে সমকালীন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ-চলা শুরু করে।
সেই বাস্তবতায় গত শতাব্দীর বিশের দশকে ঢাকায় শুরু হয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। এই আন্দোলনের ভাবযোগী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন: ‘বুদ্ধির মুক্তি, অর্থাৎ বিচার-বুদ্ধিকে অন্ধ সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তিদান, বাংলা মুসলমান-সমাজে (হয়তোবা ভারতের মুসলমান সমাজে) এ ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার।...দৃশ্যত এর প্রেরণা এসেছিল মুস্তফা কামালের উদ্যম থেকে, কিন্তু তারও চাইতে গূঢ়তর যোগ এর ছিল বাংলার বা ভারতের একালের জাগরণের সঙ্গে আর সেই সূত্রে মানুষের প্রায় সর্বকালের উদার জাগরণ-প্রয়াসের সঙ্গে।’
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ যখন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার মূলোৎপাটনে এবং মুসলমান-সমাজের চিন্তার দৈন্য ঘোচাতে একের পর এক লেখা প্রকাশ করতে থাকে, তখন ঢাকার পিছিয়ে থাকা রক্ষণশীল মুসলমানদের টনক নড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, কাজী আবদুল ওদুদের ‘সম্মোহিত মুসলমান’, আবুল হুসেনের ‘নিষেধের বিড়ম্বনা’, ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রকাশের পর যেন মৌচাকে ঢিল ছোড়ার দশা হয়।
আবুল হুসেনের ‘আদেশের নিগ্রহ’ (আশ্বিন, ১৩৩৬) প্রবন্ধটি প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং তাতে বলা হয়, ‘আলোচ্য প্রবন্ধে এছলাম ধর্মের উপর যেরূপ আক্রমণ চালানো হইয়াছে, তাহাতে আর্যসমাজী ও খৃষ্টান মিশনারীরা তাঁহার নিকট হার মানিতে বাধ্য হইবে।’ আবুল হুসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ত্যাগ করে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রবন্ধ পড়ে ঢাকার ধর্মান্ধ মুসলমানেরা বিক্ষুব্ধ হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আহসান মঞ্জিলে বিচার-সভা বসানো হয়। সভায় আবুল হুসেনের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করা হয় যে তিনি ‘ক্ষমাপত্র’ লিখতে বাধ্য হন; যাতে বলা হয়, ‘ঐ প্রবন্ধের (আদেশের নিগ্রহ) ভাষা মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দের মনে যে বিশেষ আঘাত দিয়াছে, সে জন্য আমি অপরাধী।’
এই অপমানজনক ঘটনার পরদিন তিনি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকে না বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কার্যক্রম, শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে এর সভ্যগণ তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন। মাতৃভাষা-বিতর্ক, শিক্ষা-সম্প্রসারণ, আর্থিক দৈন্য লাঘব, সমাজ-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁরা ক্ষুরধার বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন, যা চলমান থাকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মুসলমান-সমাজের সার্বিক জাগরণ ও কল্যাণ সাধন। তখন মুসলমান-সমাজে বড় সংকট ছিল আত্মপরিচয়ের সংকট; আগে বাঙালি, না মুসলমান—এই দ্বন্দ্বে তারা দোলাচলে ভুগেছে। বিষয়টি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র কর্ণধারদের গভীরভাবে ভাবিত করে।
তাই ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র প্রথম অধিবেশনেই বলা হয়, ‘একটা বিষম আন্দোলন শুনতে পাই যে বাংলাদেশে মুসলমানদের মাতৃভাষা কী?’ এ প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয় ওই অধিবেশনে। তাতে মূল সভাপতির অভিভাষণে খান বাহাদুর তসদ্দক আহমদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলা ভাষাই বাঙালি মুসলমানের একমাত্র মাতৃভাষা। এ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
আত্মপরিচয় সংকটের পাশাপাশি তাঁদের নজরে আসে মুসলমানদের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার দিকটিও। তাঁরা ঘোষণা দেন, মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারে সহায়তা করা ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র অন্যতম কর্তব্য। তাঁদের বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে মুসলমানদের আর্থিক দুর্গতি।
এর লাঘবে তাই তাঁরা চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, ‘আর্থিক দুর্গতি দূর করতে হ’লে আজ আমাদিগকে সত্যিকার সৃজনমূলক আন্দোলনে হাত দিতে হবে, গ্রামে গ্রামে শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে গ্রামবাসীকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে হবে, তাদের জীবনের অলসতাকে দূর করে তাদেরকে কর্মী করে গড়ে তুলতে হবে, এক কথায় তাদের অন্তরে জীবনের স্বাদ পৌঁছিয়ে দিয়ে তাদেরকে জগৎ ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ক’রে তুলতে হবে।’
এ ছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরাধীনতা মুক্তি এবং হিন্দু-মুসলিম মিলনের দিকেও দৃষ্টিসম্পাত করা হয়। এভাবে তাঁরা মুক্তবুদ্ধি ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমাজের অগ্রগতির পথ বাতলে দিয়ে এক দশক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের দীপ্তি ছড়িয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র পথ-চলার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রতিভূগণ সেই বিশ-তিরিশের দশকে বাঙালি মুসলমান-সমাজে যে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, তার আলো সময়-সময় উজ্জ্বলরূপে সমাজের অন্ধকার কুঠুরিতে পড়লেও, বর্তমানে তা যেন একেবারে ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ফলে ধর্মান্ধতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অবক্ষয়। মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ এসব আজ অপসৃত, ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত সমাজে কেবল যেন পশুত্বেরই জয়জয়কার! এ থেকে উত্তরণে ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে’র ধারার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে, শিখার সেই আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।
লেখক: অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল কাদীর, আবদুল কাদির, আবুল ফজল প্রমুখ চিন্তাবিদ।
বস্তুত বাঙালি মুসলমান-সমাজে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আচার-বিশ্বাস-সংস্কার, ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং পশ্চাৎপদতার মূলোৎপাটন করে তার পরিবর্তে যুক্তিবাদ, ইহজাগতিকতা, মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা তথা রেনেসাঁর আলোয় তাদের আলোকিত করাই ছিল এই আন্দোলনের ধারক-বাহকদের প্রধান লক্ষ্য।
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছিল: ‘আমরা চক্ষু বুজিয়া পরের কথা শুনিতে চাই না বা শুনিয়াই মানিয়া লইতে চাই না; আমরা চাই চোখ মেলিয়া দেখিতে, সত্যকে জীবনে প্রকৃতভাবে অনুভব করিতে। আমরা কল্পনা ও ভক্তির মোহ আবরণে সত্যকে ঢাকিয়া রাখিতে চাই না। আমরা চাই জ্ঞান-শিক্ষা দ্বারা অসার সংস্কারকে ভস্মীভূত করিতে এবং সনাতন সত্যকে কুহেলিকা মুক্ত করিয়া ভাস্বর ও দীপ্তিমান করিতে।
আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাই না, আমরা চাই বর্তমান মুসলমান সমাজের বদ্ধ কুসংস্কার এবং বহুকাল সঞ্চিত আবর্জনা দূর করিতে।’ আলোচনা, বক্তৃতা, লেখনী সঞ্চালন এবং শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা এই চিন্তার বিস্তার ঘটান। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রেরণা ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.), শেখ সাদী, রোমা রলাঁ, রামমোহন রায়, ডিরোজিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্যেটে, মোস্তফা কামাল পাশা, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাঙালি সমাজে ভক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানবতা এসবের স্ফুরণ প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ করা গেলেও ইউরোপীয় রেনেসাঁপুষ্ট ভাবধারার উন্মেষ ঘটে উনিশ শতকে এবং সেটা হয় প্রধানত কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে। রাজা রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লুই বিভিয়ান ডিরোজিও, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ ছিলেন এই রেনেসাঁসের আলোক সারথি। তাঁরা ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন প্রভৃতির প্রভাবে বাঙালি-সমাজে নবচিন্তার প্রতিফলন ঘটান। তবে এই আলো প্রধানভাবে বাংলার হিন্দুসমাজের উচ্চকোটীতে পড়ে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থাকে এর বাইরে; বিশেষ করে বাংলার মুসলমান-সমাজে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন যুগের বাস্তবতা মেনে ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ মনে করে তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে আধুনিক জ্ঞান-বুদ্ধি এবং বিত্ত ও চিত্তবৈভবে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন মুসলমান-সমাজ ইংরেজকে শত্রু মনে করে তাদের সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। সেই পরিবর্তনকে আত্মস্থ করেই একঝাঁক বাস্তববাদী মুসলমান চিন্তাবিদ যখন এগিয়ে আসেন, তখনই ধীরে ধীরে মুসলমানেরা সম্মোহন কাটিয়ে সমকালীন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ-চলা শুরু করে।
সেই বাস্তবতায় গত শতাব্দীর বিশের দশকে ঢাকায় শুরু হয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। এই আন্দোলনের ভাবযোগী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন: ‘বুদ্ধির মুক্তি, অর্থাৎ বিচার-বুদ্ধিকে অন্ধ সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তিদান, বাংলা মুসলমান-সমাজে (হয়তোবা ভারতের মুসলমান সমাজে) এ ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার।...দৃশ্যত এর প্রেরণা এসেছিল মুস্তফা কামালের উদ্যম থেকে, কিন্তু তারও চাইতে গূঢ়তর যোগ এর ছিল বাংলার বা ভারতের একালের জাগরণের সঙ্গে আর সেই সূত্রে মানুষের প্রায় সর্বকালের উদার জাগরণ-প্রয়াসের সঙ্গে।’
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ যখন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার মূলোৎপাটনে এবং মুসলমান-সমাজের চিন্তার দৈন্য ঘোচাতে একের পর এক লেখা প্রকাশ করতে থাকে, তখন ঢাকার পিছিয়ে থাকা রক্ষণশীল মুসলমানদের টনক নড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, কাজী আবদুল ওদুদের ‘সম্মোহিত মুসলমান’, আবুল হুসেনের ‘নিষেধের বিড়ম্বনা’, ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রকাশের পর যেন মৌচাকে ঢিল ছোড়ার দশা হয়।
আবুল হুসেনের ‘আদেশের নিগ্রহ’ (আশ্বিন, ১৩৩৬) প্রবন্ধটি প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং তাতে বলা হয়, ‘আলোচ্য প্রবন্ধে এছলাম ধর্মের উপর যেরূপ আক্রমণ চালানো হইয়াছে, তাহাতে আর্যসমাজী ও খৃষ্টান মিশনারীরা তাঁহার নিকট হার মানিতে বাধ্য হইবে।’ আবুল হুসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ত্যাগ করে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রবন্ধ পড়ে ঢাকার ধর্মান্ধ মুসলমানেরা বিক্ষুব্ধ হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আহসান মঞ্জিলে বিচার-সভা বসানো হয়। সভায় আবুল হুসেনের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করা হয় যে তিনি ‘ক্ষমাপত্র’ লিখতে বাধ্য হন; যাতে বলা হয়, ‘ঐ প্রবন্ধের (আদেশের নিগ্রহ) ভাষা মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দের মনে যে বিশেষ আঘাত দিয়াছে, সে জন্য আমি অপরাধী।’
এই অপমানজনক ঘটনার পরদিন তিনি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকে না বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কার্যক্রম, শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে এর সভ্যগণ তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন। মাতৃভাষা-বিতর্ক, শিক্ষা-সম্প্রসারণ, আর্থিক দৈন্য লাঘব, সমাজ-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁরা ক্ষুরধার বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন, যা চলমান থাকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মুসলমান-সমাজের সার্বিক জাগরণ ও কল্যাণ সাধন। তখন মুসলমান-সমাজে বড় সংকট ছিল আত্মপরিচয়ের সংকট; আগে বাঙালি, না মুসলমান—এই দ্বন্দ্বে তারা দোলাচলে ভুগেছে। বিষয়টি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র কর্ণধারদের গভীরভাবে ভাবিত করে।
তাই ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র প্রথম অধিবেশনেই বলা হয়, ‘একটা বিষম আন্দোলন শুনতে পাই যে বাংলাদেশে মুসলমানদের মাতৃভাষা কী?’ এ প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয় ওই অধিবেশনে। তাতে মূল সভাপতির অভিভাষণে খান বাহাদুর তসদ্দক আহমদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলা ভাষাই বাঙালি মুসলমানের একমাত্র মাতৃভাষা। এ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
আত্মপরিচয় সংকটের পাশাপাশি তাঁদের নজরে আসে মুসলমানদের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার দিকটিও। তাঁরা ঘোষণা দেন, মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারে সহায়তা করা ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র অন্যতম কর্তব্য। তাঁদের বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে মুসলমানদের আর্থিক দুর্গতি।
এর লাঘবে তাই তাঁরা চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, ‘আর্থিক দুর্গতি দূর করতে হ’লে আজ আমাদিগকে সত্যিকার সৃজনমূলক আন্দোলনে হাত দিতে হবে, গ্রামে গ্রামে শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে গ্রামবাসীকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে হবে, তাদের জীবনের অলসতাকে দূর করে তাদেরকে কর্মী করে গড়ে তুলতে হবে, এক কথায় তাদের অন্তরে জীবনের স্বাদ পৌঁছিয়ে দিয়ে তাদেরকে জগৎ ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ক’রে তুলতে হবে।’
এ ছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরাধীনতা মুক্তি এবং হিন্দু-মুসলিম মিলনের দিকেও দৃষ্টিসম্পাত করা হয়। এভাবে তাঁরা মুক্তবুদ্ধি ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমাজের অগ্রগতির পথ বাতলে দিয়ে এক দশক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের দীপ্তি ছড়িয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র পথ-চলার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রতিভূগণ সেই বিশ-তিরিশের দশকে বাঙালি মুসলমান-সমাজে যে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, তার আলো সময়-সময় উজ্জ্বলরূপে সমাজের অন্ধকার কুঠুরিতে পড়লেও, বর্তমানে তা যেন একেবারে ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ফলে ধর্মান্ধতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অবক্ষয়। মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ এসব আজ অপসৃত, ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত সমাজে কেবল যেন পশুত্বেরই জয়জয়কার! এ থেকে উত্তরণে ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে’র ধারার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে, শিখার সেই আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।
লেখক: অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ড. এম আবদুল আলীম

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল কাদীর, আবদুল কাদির, আবুল ফজল প্রমুখ চিন্তাবিদ।
বস্তুত বাঙালি মুসলমান-সমাজে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আচার-বিশ্বাস-সংস্কার, ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং পশ্চাৎপদতার মূলোৎপাটন করে তার পরিবর্তে যুক্তিবাদ, ইহজাগতিকতা, মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা তথা রেনেসাঁর আলোয় তাদের আলোকিত করাই ছিল এই আন্দোলনের ধারক-বাহকদের প্রধান লক্ষ্য।
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছিল: ‘আমরা চক্ষু বুজিয়া পরের কথা শুনিতে চাই না বা শুনিয়াই মানিয়া লইতে চাই না; আমরা চাই চোখ মেলিয়া দেখিতে, সত্যকে জীবনে প্রকৃতভাবে অনুভব করিতে। আমরা কল্পনা ও ভক্তির মোহ আবরণে সত্যকে ঢাকিয়া রাখিতে চাই না। আমরা চাই জ্ঞান-শিক্ষা দ্বারা অসার সংস্কারকে ভস্মীভূত করিতে এবং সনাতন সত্যকে কুহেলিকা মুক্ত করিয়া ভাস্বর ও দীপ্তিমান করিতে।
আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাই না, আমরা চাই বর্তমান মুসলমান সমাজের বদ্ধ কুসংস্কার এবং বহুকাল সঞ্চিত আবর্জনা দূর করিতে।’ আলোচনা, বক্তৃতা, লেখনী সঞ্চালন এবং শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা এই চিন্তার বিস্তার ঘটান। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রেরণা ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.), শেখ সাদী, রোমা রলাঁ, রামমোহন রায়, ডিরোজিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্যেটে, মোস্তফা কামাল পাশা, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাঙালি সমাজে ভক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানবতা এসবের স্ফুরণ প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ করা গেলেও ইউরোপীয় রেনেসাঁপুষ্ট ভাবধারার উন্মেষ ঘটে উনিশ শতকে এবং সেটা হয় প্রধানত কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে। রাজা রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লুই বিভিয়ান ডিরোজিও, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ ছিলেন এই রেনেসাঁসের আলোক সারথি। তাঁরা ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন প্রভৃতির প্রভাবে বাঙালি-সমাজে নবচিন্তার প্রতিফলন ঘটান। তবে এই আলো প্রধানভাবে বাংলার হিন্দুসমাজের উচ্চকোটীতে পড়ে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থাকে এর বাইরে; বিশেষ করে বাংলার মুসলমান-সমাজে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন যুগের বাস্তবতা মেনে ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ মনে করে তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে আধুনিক জ্ঞান-বুদ্ধি এবং বিত্ত ও চিত্তবৈভবে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন মুসলমান-সমাজ ইংরেজকে শত্রু মনে করে তাদের সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। সেই পরিবর্তনকে আত্মস্থ করেই একঝাঁক বাস্তববাদী মুসলমান চিন্তাবিদ যখন এগিয়ে আসেন, তখনই ধীরে ধীরে মুসলমানেরা সম্মোহন কাটিয়ে সমকালীন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ-চলা শুরু করে।
সেই বাস্তবতায় গত শতাব্দীর বিশের দশকে ঢাকায় শুরু হয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। এই আন্দোলনের ভাবযোগী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন: ‘বুদ্ধির মুক্তি, অর্থাৎ বিচার-বুদ্ধিকে অন্ধ সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তিদান, বাংলা মুসলমান-সমাজে (হয়তোবা ভারতের মুসলমান সমাজে) এ ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার।...দৃশ্যত এর প্রেরণা এসেছিল মুস্তফা কামালের উদ্যম থেকে, কিন্তু তারও চাইতে গূঢ়তর যোগ এর ছিল বাংলার বা ভারতের একালের জাগরণের সঙ্গে আর সেই সূত্রে মানুষের প্রায় সর্বকালের উদার জাগরণ-প্রয়াসের সঙ্গে।’
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ যখন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার মূলোৎপাটনে এবং মুসলমান-সমাজের চিন্তার দৈন্য ঘোচাতে একের পর এক লেখা প্রকাশ করতে থাকে, তখন ঢাকার পিছিয়ে থাকা রক্ষণশীল মুসলমানদের টনক নড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, কাজী আবদুল ওদুদের ‘সম্মোহিত মুসলমান’, আবুল হুসেনের ‘নিষেধের বিড়ম্বনা’, ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রকাশের পর যেন মৌচাকে ঢিল ছোড়ার দশা হয়।
আবুল হুসেনের ‘আদেশের নিগ্রহ’ (আশ্বিন, ১৩৩৬) প্রবন্ধটি প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং তাতে বলা হয়, ‘আলোচ্য প্রবন্ধে এছলাম ধর্মের উপর যেরূপ আক্রমণ চালানো হইয়াছে, তাহাতে আর্যসমাজী ও খৃষ্টান মিশনারীরা তাঁহার নিকট হার মানিতে বাধ্য হইবে।’ আবুল হুসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ত্যাগ করে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রবন্ধ পড়ে ঢাকার ধর্মান্ধ মুসলমানেরা বিক্ষুব্ধ হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আহসান মঞ্জিলে বিচার-সভা বসানো হয়। সভায় আবুল হুসেনের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করা হয় যে তিনি ‘ক্ষমাপত্র’ লিখতে বাধ্য হন; যাতে বলা হয়, ‘ঐ প্রবন্ধের (আদেশের নিগ্রহ) ভাষা মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দের মনে যে বিশেষ আঘাত দিয়াছে, সে জন্য আমি অপরাধী।’
এই অপমানজনক ঘটনার পরদিন তিনি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকে না বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কার্যক্রম, শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে এর সভ্যগণ তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন। মাতৃভাষা-বিতর্ক, শিক্ষা-সম্প্রসারণ, আর্থিক দৈন্য লাঘব, সমাজ-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁরা ক্ষুরধার বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন, যা চলমান থাকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মুসলমান-সমাজের সার্বিক জাগরণ ও কল্যাণ সাধন। তখন মুসলমান-সমাজে বড় সংকট ছিল আত্মপরিচয়ের সংকট; আগে বাঙালি, না মুসলমান—এই দ্বন্দ্বে তারা দোলাচলে ভুগেছে। বিষয়টি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র কর্ণধারদের গভীরভাবে ভাবিত করে।
তাই ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র প্রথম অধিবেশনেই বলা হয়, ‘একটা বিষম আন্দোলন শুনতে পাই যে বাংলাদেশে মুসলমানদের মাতৃভাষা কী?’ এ প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয় ওই অধিবেশনে। তাতে মূল সভাপতির অভিভাষণে খান বাহাদুর তসদ্দক আহমদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলা ভাষাই বাঙালি মুসলমানের একমাত্র মাতৃভাষা। এ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
আত্মপরিচয় সংকটের পাশাপাশি তাঁদের নজরে আসে মুসলমানদের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার দিকটিও। তাঁরা ঘোষণা দেন, মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারে সহায়তা করা ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র অন্যতম কর্তব্য। তাঁদের বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে মুসলমানদের আর্থিক দুর্গতি।
এর লাঘবে তাই তাঁরা চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, ‘আর্থিক দুর্গতি দূর করতে হ’লে আজ আমাদিগকে সত্যিকার সৃজনমূলক আন্দোলনে হাত দিতে হবে, গ্রামে গ্রামে শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে গ্রামবাসীকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে হবে, তাদের জীবনের অলসতাকে দূর করে তাদেরকে কর্মী করে গড়ে তুলতে হবে, এক কথায় তাদের অন্তরে জীবনের স্বাদ পৌঁছিয়ে দিয়ে তাদেরকে জগৎ ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ক’রে তুলতে হবে।’
এ ছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরাধীনতা মুক্তি এবং হিন্দু-মুসলিম মিলনের দিকেও দৃষ্টিসম্পাত করা হয়। এভাবে তাঁরা মুক্তবুদ্ধি ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমাজের অগ্রগতির পথ বাতলে দিয়ে এক দশক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের দীপ্তি ছড়িয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র পথ-চলার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রতিভূগণ সেই বিশ-তিরিশের দশকে বাঙালি মুসলমান-সমাজে যে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, তার আলো সময়-সময় উজ্জ্বলরূপে সমাজের অন্ধকার কুঠুরিতে পড়লেও, বর্তমানে তা যেন একেবারে ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ফলে ধর্মান্ধতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অবক্ষয়। মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ এসব আজ অপসৃত, ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত সমাজে কেবল যেন পশুত্বেরই জয়জয়কার! এ থেকে উত্তরণে ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে’র ধারার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে, শিখার সেই আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।
লেখক: অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল কাদীর, আবদুল কাদির, আবুল ফজল প্রমুখ চিন্তাবিদ।
বস্তুত বাঙালি মুসলমান-সমাজে যুগ যুগ ধরে গড়ে ওঠা আচার-বিশ্বাস-সংস্কার, ধর্মান্ধতা, অশিক্ষা এবং পশ্চাৎপদতার মূলোৎপাটন করে তার পরিবর্তে যুক্তিবাদ, ইহজাগতিকতা, মানবতা, বিজ্ঞানমনস্কতা তথা রেনেসাঁর আলোয় তাদের আলোকিত করাই ছিল এই আন্দোলনের ধারক-বাহকদের প্রধান লক্ষ্য।
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছিল: ‘আমরা চক্ষু বুজিয়া পরের কথা শুনিতে চাই না বা শুনিয়াই মানিয়া লইতে চাই না; আমরা চাই চোখ মেলিয়া দেখিতে, সত্যকে জীবনে প্রকৃতভাবে অনুভব করিতে। আমরা কল্পনা ও ভক্তির মোহ আবরণে সত্যকে ঢাকিয়া রাখিতে চাই না। আমরা চাই জ্ঞান-শিক্ষা দ্বারা অসার সংস্কারকে ভস্মীভূত করিতে এবং সনাতন সত্যকে কুহেলিকা মুক্ত করিয়া ভাস্বর ও দীপ্তিমান করিতে।
আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিতে চাই না, আমরা চাই বর্তমান মুসলমান সমাজের বদ্ধ কুসংস্কার এবং বহুকাল সঞ্চিত আবর্জনা দূর করিতে।’ আলোচনা, বক্তৃতা, লেখনী সঞ্চালন এবং শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে তাঁরা এই চিন্তার বিস্তার ঘটান। এ ক্ষেত্রে তাঁদের প্রেরণা ছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.), শেখ সাদী, রোমা রলাঁ, রামমোহন রায়, ডিরোজিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গ্যেটে, মোস্তফা কামাল পাশা, প্রমথ চৌধুরী, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
বাঙালি সমাজে ভক্তিবাদ, আধ্যাত্মিকতা, মানবতা এসবের স্ফুরণ প্রাচীনকাল থেকেই লক্ষ করা গেলেও ইউরোপীয় রেনেসাঁপুষ্ট ভাবধারার উন্মেষ ঘটে উনিশ শতকে এবং সেটা হয় প্রধানত কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে। রাজা রামমোহন রায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, লুই বিভিয়ান ডিরোজিও, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ ছিলেন এই রেনেসাঁসের আলোক সারথি। তাঁরা ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন প্রভৃতির প্রভাবে বাঙালি-সমাজে নবচিন্তার প্রতিফলন ঘটান। তবে এই আলো প্রধানভাবে বাংলার হিন্দুসমাজের উচ্চকোটীতে পড়ে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী থাকে এর বাইরে; বিশেষ করে বাংলার মুসলমান-সমাজে এর প্রভাব পড়েনি বললেই চলে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন যুগের বাস্তবতা মেনে ইংরেজ শাসনকে আশীর্বাদ মনে করে তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে আধুনিক জ্ঞান-বুদ্ধি এবং বিত্ত ও চিত্তবৈভবে এগিয়ে যেতে থাকে, তখন মুসলমান-সমাজ ইংরেজকে শত্রু মনে করে তাদের সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে দীর্ঘ সময় লাগে। সেই পরিবর্তনকে আত্মস্থ করেই একঝাঁক বাস্তববাদী মুসলমান চিন্তাবিদ যখন এগিয়ে আসেন, তখনই ধীরে ধীরে মুসলমানেরা সম্মোহন কাটিয়ে সমকালীন জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ-চলা শুরু করে।
সেই বাস্তবতায় গত শতাব্দীর বিশের দশকে ঢাকায় শুরু হয় ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’। এই আন্দোলনের ভাবযোগী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন: ‘বুদ্ধির মুক্তি, অর্থাৎ বিচার-বুদ্ধিকে অন্ধ সংস্কার ও শাস্ত্রানুগত্য থেকে মুক্তিদান, বাংলা মুসলমান-সমাজে (হয়তোবা ভারতের মুসলমান সমাজে) এ ছিল এক অভূতপূর্ব ব্যাপার।...দৃশ্যত এর প্রেরণা এসেছিল মুস্তফা কামালের উদ্যম থেকে, কিন্তু তারও চাইতে গূঢ়তর যোগ এর ছিল বাংলার বা ভারতের একালের জাগরণের সঙ্গে আর সেই সূত্রে মানুষের প্রায় সর্বকালের উদার জাগরণ-প্রয়াসের সঙ্গে।’
‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজ’ যখন ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার মূলোৎপাটনে এবং মুসলমান-সমাজের চিন্তার দৈন্য ঘোচাতে একের পর এক লেখা প্রকাশ করতে থাকে, তখন ঢাকার পিছিয়ে থাকা রক্ষণশীল মুসলমানদের টনক নড়ে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়, কাজী আবদুল ওদুদের ‘সম্মোহিত মুসলমান’, আবুল হুসেনের ‘নিষেধের বিড়ম্বনা’, ‘আদেশের নিগ্রহ’ প্রকাশের পর যেন মৌচাকে ঢিল ছোড়ার দশা হয়।
আবুল হুসেনের ‘আদেশের নিগ্রহ’ (আশ্বিন, ১৩৩৬) প্রবন্ধটি প্রকাশের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকায় কঠোর সমালোচনা করা হয় এবং তাতে বলা হয়, ‘আলোচ্য প্রবন্ধে এছলাম ধর্মের উপর যেরূপ আক্রমণ চালানো হইয়াছে, তাহাতে আর্যসমাজী ও খৃষ্টান মিশনারীরা তাঁহার নিকট হার মানিতে বাধ্য হইবে।’ আবুল হুসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ত্যাগ করে ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। তাঁর প্রবন্ধ পড়ে ঢাকার ধর্মান্ধ মুসলমানেরা বিক্ষুব্ধ হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯২৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আহসান মঞ্জিলে বিচার-সভা বসানো হয়। সভায় আবুল হুসেনের ওপর এমন চাপ প্রয়োগ করা হয় যে তিনি ‘ক্ষমাপত্র’ লিখতে বাধ্য হন; যাতে বলা হয়, ‘ঐ প্রবন্ধের (আদেশের নিগ্রহ) ভাষা মুসলমান ভ্রাতৃবৃন্দের মনে যে বিশেষ আঘাত দিয়াছে, সে জন্য আমি অপরাধী।’
এই অপমানজনক ঘটনার পরদিন তিনি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র সম্পাদক পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকে না বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের কার্যক্রম, শিখা নামের পত্রিকার মাধ্যমে এর সভ্যগণ তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে থাকেন। মাতৃভাষা-বিতর্ক, শিক্ষা-সম্প্রসারণ, আর্থিক দৈন্য লাঘব, সমাজ-রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁরা ক্ষুরধার বক্তব্য প্রচার করতে থাকেন, যা চলমান থাকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মুসলমান-সমাজের সার্বিক জাগরণ ও কল্যাণ সাধন। তখন মুসলমান-সমাজে বড় সংকট ছিল আত্মপরিচয়ের সংকট; আগে বাঙালি, না মুসলমান—এই দ্বন্দ্বে তারা দোলাচলে ভুগেছে। বিষয়টি ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র কর্ণধারদের গভীরভাবে ভাবিত করে।
তাই ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র প্রথম অধিবেশনেই বলা হয়, ‘একটা বিষম আন্দোলন শুনতে পাই যে বাংলাদেশে মুসলমানদের মাতৃভাষা কী?’ এ প্রশ্নের উত্তরও খোঁজা হয় ওই অধিবেশনে। তাতে মূল সভাপতির অভিভাষণে খান বাহাদুর তসদ্দক আহমদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, বাংলা ভাষাই বাঙালি মুসলমানের একমাত্র মাতৃভাষা। এ বিষয়ে একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
আত্মপরিচয় সংকটের পাশাপাশি তাঁদের নজরে আসে মুসলমানদের শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার দিকটিও। তাঁরা ঘোষণা দেন, মুসলিম সমাজে শিক্ষাবিস্তারে সহায়তা করা ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র অন্যতম কর্তব্য। তাঁদের বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করে মুসলমানদের আর্থিক দুর্গতি।
এর লাঘবে তাই তাঁরা চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন। তাঁরা বলেন, ‘আর্থিক দুর্গতি দূর করতে হ’লে আজ আমাদিগকে সত্যিকার সৃজনমূলক আন্দোলনে হাত দিতে হবে, গ্রামে গ্রামে শিল্প বাণিজ্য প্রতিষ্ঠা করে গ্রামবাসীকে সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে হবে, তাদের জীবনের অলসতাকে দূর করে তাদেরকে কর্মী করে গড়ে তুলতে হবে, এক কথায় তাদের অন্তরে জীবনের স্বাদ পৌঁছিয়ে দিয়ে তাদেরকে জগৎ ও জীবনের প্রতি শ্রদ্ধান্বিত ক’রে তুলতে হবে।’
এ ছাড়া সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে মুসলমানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। পরাধীনতা মুক্তি এবং হিন্দু-মুসলিম মিলনের দিকেও দৃষ্টিসম্পাত করা হয়। এভাবে তাঁরা মুক্তবুদ্ধি ও সামগ্রিক দৃষ্টিতে সমাজের অগ্রগতির পথ বাতলে দিয়ে এক দশক বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের দীপ্তি ছড়িয়ে ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র পথ-চলার আনুষ্ঠানিক ইতি ঘটে।
বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের প্রতিভূগণ সেই বিশ-তিরিশের দশকে বাঙালি মুসলমান-সমাজে যে দ্যুতি ছড়িয়েছিলেন, তার আলো সময়-সময় উজ্জ্বলরূপে সমাজের অন্ধকার কুঠুরিতে পড়লেও, বর্তমানে তা যেন একেবারে ক্ষীণ হয়ে গেছে।
ফলে ধর্মান্ধতা যেমন বেড়েছে, তেমনি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ অবক্ষয়। মনুষ্যত্ব, বিবেকবোধ এসব আজ অপসৃত, ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত সমাজে কেবল যেন পশুত্বেরই জয়জয়কার! এ থেকে উত্তরণে ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনে’র ধারার পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে, শিখার সেই আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে।
লেখক: অধ্যাপক, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী
০৩ অক্টোবর ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী
০৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী
০৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ এই অমোঘ মন্ত্র বুকে ধারণ করে ১৯২৬ সালে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেছিল বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন। ‘মুসলিম সাহিত্য-সমাজে’র ব্যানারে এই আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন আবুল হুসেন, কাজী
০৩ অক্টোবর ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫