জাহীদ রেজা নূর

দ্বিতীয় পর্ব
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
বাংলা ভাষা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে, হাসপাতালেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে—এতটা ভয়ংকর কিছু ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ভাষা বহন করছে যারা, তাদের ভাষা-শরীরে যে অসুখ এসে জুটেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। শহুরে শিক্ষিত মানুষ তাদের মুখের ভাষা নিয়ে দ্বিধান্বিত। যে সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সত্যিই উঁচুদরের খুব বেশি কিছু হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের খেটে খাওয়া মানুষ এখনো ইংরেজির নাগাল পায়নি বলেই তারা আরও অনেক দিন বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে হয়।
কেন একটা ভাষা মরে যায়, সে কথা কমবেশি সবাই জানে। কোনো ভাষার ওপর যখন অন্য ভাষার প্রভাব পড়ে, সেই অন্য ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ হয় মানুষ, তখন নিজের ভাষা ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়। আমরা যে জীবনযাপন করছি, তাতে ভাষাকে নান্দনিক করে তোলার প্রয়োজন পড়ে না। যখন মানুষ সেই ভাষায় কিছু বলে, তখনই তো ‘কী বলব’, সেটা প্রধান হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন ভাষায় কথা বলা সহজ, তখন কেন নিজের ভাষার শব্দভান্ডার স্ফীত করার প্রক্রিয়ায় জড়াবে মানুষ? নিজের ভাষাকে সম্মান করলে সমাজে একটা স্থান হবে—এ রকম পরিবেশ কি আদৌ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে?
দুই. একটা কেক এসেছিল বাড়িতে। কেকের ওপর লেখা, ‘আবার দেখা হবে’। কেকটা কাটার আগে একজন বললেন, ‘ফের মিলেঙ্গে’ এবং কারও কারও কাছে মনে হলো, ‘ফের মিলেঙ্গে’ কথাটা খুব যায় এই পরিবেশের সঙ্গে। তাহলে ‘আবার দেখা হবে’ কি তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলল?
এখন তো সবাই ‘মিস’ করে। কারও জন্য কারও মন হাহাকার করে ওঠে না। ‘মিস ইউ’ বললেই সব সমস্যা মিটে যায়। তাহলে কি ‘ফের মিলেঙ্গে’ কিংবা ‘মিস ইউ’ বললে ভাষা কলুষিত হয়ে যায়? একেবারেই না। মানুষ কথা বলে যোগাযোগের জন্য। ভাষা শুধু সেই যোগাযোগকে নিবিড় করে। যে যেই ভাষায় অভ্যস্ত, সে সেই ভাষাকেই যোগাযোগের মাধ্যম করে নেয়। এখানে শুধু একটা প্রশ্নই উঠে আসতে পারে—নিজের ভাষায় কেন নিজেকে প্রকাশ করা যাচ্ছে না?
এর একটা কারণ হতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধবদের আলোচনায় ব্যাখ্যামূলক কথা খুব কম থাকছে। দু-এক শব্দে উত্তর দেওয়া যায়, কিংবা উত্তর দিতে হলে ভাবার প্রয়োজন হয় না, যান্ত্রিকভাবে তৈরি থাকা উত্তরটাই উঠে আসে ঠোঁটের কিনারে, এমন হলে ভাষাকে আর বেড়ে উঠতে হয় না। যেটুকু বেড়ে উঠেছে, সেটুকুতেই থেমে থাকা যায়। কারণ, নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা তখন অন্য কোনো ভাষা। নিজের ভাষা নয়।
তিন. কোনো কোনো ভাষায় কথা বলার লোকই নেই। এমন অনেক ভাষা আছে, যে ভাষায় কথা বলার জন্য বেঁচে আছে কেবল একজন মানুষ। তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁর ভাষাটা বেঁচে থাকবে পৃথিবীতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সে ভাষার মৃত্যু হবে। আমরা তো দেখেছি আগে, শক্তিশালী ভাষার চাপে কীভাবে মরে যায় কিংবা অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে জায়গা করে নেয় দুর্বল ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে ইংরেজি ভাষা এসে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে স্থানীয় ভাষাগুলোকে, সেই বেদনাময় ইতিহাস নিশ্চয় নতুন করে বলতে হবে না। মেক্সিকোকে কীভাবে গ্রাস করে নিল স্প্যানিশ ভাষা—সে গল্পও কি কম বেদনার?
তরুণেরা যদি নিজের ভাষায় কথা না বলে, তাহলে ভাষার ধমনি শুকিয়ে যায়, ভাষা তখন মরে যায়। আচ্ছা, প্রাচীন লাতিন, স্লাভ বা গ্রিকের মতো ভাষাগুলোর এখনকার অবস্থা কী? তাদের প্রতাপের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি আমরা। গ্রিক ভাষা নিয়ে তো বলাই যায়, প্রাকৃত থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলায় রূপান্তরের মতোই প্রাচীন গ্রিক থেকে জন্ম নিয়েছে আধুনিক গ্রিক ভাষা।
প্রাচীন বই-পত্তরের দিকে চোখ রাখলে এখন খুব কম গ্রিক নাগরিকই সেটা পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে। আর লাতিন? সে তো পরিবর্তিত হতে হতে ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, রোমিনিয়ানসহ আরও কয়েকটি ভাষার জন্ম দিয়েছে। ইংরেজরাও এখন নিশ্চয় চসারের ভাষায় লেখে না, পড়ে না। প্রাচীন রুশ ভাষা থেকেই তো জন্ম নিয়েছে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয় ভাষা।
ভাষা-বিলুপ্তির একটা কারণ তো জেনোসাইড। আর এই জেনোসাইডের জন্য মূলত দায়ী উপনিবেশবাদ। এ ব্যাপারেও নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু এক ভাষাভাষী মানুষ অন্য ভাষাভাষী মানুষের ভাষাকে একেবারে বিলুপ্ত করে দিতে পারে, এর চেয়ে বড় নৃশংসতা আর কী হতে পারে? ঊনবিংশ শতকে তাসমানিয়ার ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেল ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের দ্বারা। আফ্রিকার বহু জাতিকেই তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ আমাদের সংস্কৃতি, ভাষাকে উচ্ছেদ করতে পারেনি বটে, আমরাই ধীরে ধীরে ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।
চার. সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়তাম, তখন আমার দুই সিরিয়ান বন্ধু ছিল। ফরিদ আর আলী। ওরা জাতিগতভাবে কুর্দি। সে সময় জেনেছিলাম, তুরস্কে কুর্দরা নিজেদের ভাষায় কিছু ছাপাতে পারে না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভাষা শিক্ষা দিতে পারে না। ফলে নিজেদের মধ্যে কুর্দি ভাষায় কথা বললেও পড়াশোনা চালাতে হয় তুর্কি ভাষায়। ফরিদ আর আলীকেও সিরিয়ায় মূলত পড়াশোনা করতে হয়েছে আরবি ভাষায়। উচ্চশিক্ষায় কুর্দি ভাষার মর্যাদা নেই।
নিজের ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু সেই নতুন ভাষা যখন নিজের ভাষাকে একেবারেই অচল করে দেয়, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। ভাষা সচল না থাকলে তা মানুষের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকেও ভুলিয়ে দেয়। এবার একটি অন্য রকম খবরের সঙ্গে পরিচিত হই। পৃথিবীতে কতগুলো ভাষা আছে, তা নিয়ে একটা গবেষণা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় বলা হয়েছিল ৬ হাজার
৭০৩টি জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১১ সালে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এক হাজার জীবিত ভাষা ছিল, ২২৫টি ভাষা ছিল ইউরোপে,
২ হাজার ১১টি ভাষা আফ্রিকায় আর ২ হাজার ১৬৫টি ভাষা ছিল এশিয়ায়। অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ছিল ১ হাজার
৩২০টি ভাষা। তবে অস্ট্রেলিয়ার হিসাবটা একটু অনির্দিষ্ট ছিল, কারণ সেখানে এমন কিছু ভাষা আছে, যা একই ভাষার উপভাষা কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
এখন অনেক গবেষকই মনে করেন, পৃথিবীতে বর্তমানে ৫ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি ভাষা জীবিত রয়েছে। গবেষকেরা এটাও মনে করেন, এক শ বছর পর এই ভাষাগুলোর মধ্যে অনেক ভাষারই আর অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ কেউ বলছেন, ভাষা কমে একেবারে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। যে ভাষাগুলো মরে যাবে, সেই ভাষাভাষী মানুষদের বেশির ভাগই তখন কথা বলবে ইংরেজি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, চীনা, রুশ, ইন্দোনেশিয়ান, আরব, সুয়াহিলি আর হিন্দি ভাষায়। ভাষাতাত্ত্বিকদের একটা দল মনে করে, এক শ বছর পর ৮০ শতাংশ ভাষাই আর থাকবে না।
উত্তর আমেরিকায় যে শত শত ভাষা ছিল, তার বেশির ভাগই মরে গেছে। এখন পর্যন্ত টিকে আছে মাত্র ১৯৪টি ভাষা। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি ভাষায় বড়রা আর ছোটরা কথা বলে। ৩৪টি ভাষায় কথা বলে বড়রা আর ছোটদের ছোট্ট একটা অংশ। আর ৭৩টি ভাষায় কথা বলে শুধু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। যে ভাষাগুলোয় শিশুরা কথা বলে না, তারা যে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এই ভাষাগুলোয় কথা বলে, তারা কেন্দ্র থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করে যে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হলে যে ভাষাটা সবাই জানে, সেই ভাষাটাই শিখে ফেলে। ফলে নিজের ভাষাটা গোল্লায় যায়।
পাঁচ. এত কথা বলার পর বলতে হচ্ছে, এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার হাল কী, সে প্রশ্ন এলে কী জবাব দেব? এখন ভাষা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নতুন যে বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে, সেদিকে চোখ রাখা যাক। নিজের ভাষাকে যথেষ্ট সম্মান দেবে বলেও যদি মনে করে কেউ, সে কি টেলিভিশন, রেডিও দেখতে, শুনতে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে নিজের বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে? এই সব মাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সর্বত্র যাওয়া সম্ভব এবং সেটা ইংরেজির মাধ্যমেই সহজ। ইংরেজিকে ফ্যাশনের অন্তর্গত করে নিলে আধুনিক বা অত্যাধুনিক হওয়া যায়, নিজের সমাজ বা সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও বিকশিত হওয়ার পথে কেউ বাদ সাধবে না। আর একজন তরুণ যখন নিজের সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকেই জীবনের রসদ জোগাড় করে নিতে পারে, তখন নিজের ভাষাও আর নিজের ভাষা থাকে না। তা হারিয়ে যেতে থাকে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ও লুপ্ত হতে থাকে।
শিকড়বিহীন হয়ে যায় অস্তিত্ব। এও একধরনের পরাজয়। এই পরাজয়ের সঙ্গী হয় ঐতিহ্য, প্রচলিত কিংবদন্তি, লোকায়ত উৎসব, কবিতা, গান, বাগ্মিতা, ঐতিহ্যগত কৌতুকবোধ ইত্যাদি। অন্য ভাষায় এই অর্জনগুলোকে প্রকাশ করা দুরূহ। ভাষার মাধ্যমে জাতির যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়, সেটাও লুপ্ত হয়ে যায়। ভাষা যত কমে আসবে, মানুষের প্রজ্ঞাও তত কমে আসবে। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা যেটাই হোক না কেন, নিজের ভাষা ধরে রাখা খুব দরকার। মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষার হাল নিয়ে আরও কিছু বলার আছে। সামনে সেটাই বলা হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

দ্বিতীয় পর্ব
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
বাংলা ভাষা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে, হাসপাতালেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে—এতটা ভয়ংকর কিছু ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ভাষা বহন করছে যারা, তাদের ভাষা-শরীরে যে অসুখ এসে জুটেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। শহুরে শিক্ষিত মানুষ তাদের মুখের ভাষা নিয়ে দ্বিধান্বিত। যে সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সত্যিই উঁচুদরের খুব বেশি কিছু হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের খেটে খাওয়া মানুষ এখনো ইংরেজির নাগাল পায়নি বলেই তারা আরও অনেক দিন বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে হয়।
কেন একটা ভাষা মরে যায়, সে কথা কমবেশি সবাই জানে। কোনো ভাষার ওপর যখন অন্য ভাষার প্রভাব পড়ে, সেই অন্য ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ হয় মানুষ, তখন নিজের ভাষা ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়। আমরা যে জীবনযাপন করছি, তাতে ভাষাকে নান্দনিক করে তোলার প্রয়োজন পড়ে না। যখন মানুষ সেই ভাষায় কিছু বলে, তখনই তো ‘কী বলব’, সেটা প্রধান হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন ভাষায় কথা বলা সহজ, তখন কেন নিজের ভাষার শব্দভান্ডার স্ফীত করার প্রক্রিয়ায় জড়াবে মানুষ? নিজের ভাষাকে সম্মান করলে সমাজে একটা স্থান হবে—এ রকম পরিবেশ কি আদৌ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে?
দুই. একটা কেক এসেছিল বাড়িতে। কেকের ওপর লেখা, ‘আবার দেখা হবে’। কেকটা কাটার আগে একজন বললেন, ‘ফের মিলেঙ্গে’ এবং কারও কারও কাছে মনে হলো, ‘ফের মিলেঙ্গে’ কথাটা খুব যায় এই পরিবেশের সঙ্গে। তাহলে ‘আবার দেখা হবে’ কি তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলল?
এখন তো সবাই ‘মিস’ করে। কারও জন্য কারও মন হাহাকার করে ওঠে না। ‘মিস ইউ’ বললেই সব সমস্যা মিটে যায়। তাহলে কি ‘ফের মিলেঙ্গে’ কিংবা ‘মিস ইউ’ বললে ভাষা কলুষিত হয়ে যায়? একেবারেই না। মানুষ কথা বলে যোগাযোগের জন্য। ভাষা শুধু সেই যোগাযোগকে নিবিড় করে। যে যেই ভাষায় অভ্যস্ত, সে সেই ভাষাকেই যোগাযোগের মাধ্যম করে নেয়। এখানে শুধু একটা প্রশ্নই উঠে আসতে পারে—নিজের ভাষায় কেন নিজেকে প্রকাশ করা যাচ্ছে না?
এর একটা কারণ হতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধবদের আলোচনায় ব্যাখ্যামূলক কথা খুব কম থাকছে। দু-এক শব্দে উত্তর দেওয়া যায়, কিংবা উত্তর দিতে হলে ভাবার প্রয়োজন হয় না, যান্ত্রিকভাবে তৈরি থাকা উত্তরটাই উঠে আসে ঠোঁটের কিনারে, এমন হলে ভাষাকে আর বেড়ে উঠতে হয় না। যেটুকু বেড়ে উঠেছে, সেটুকুতেই থেমে থাকা যায়। কারণ, নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা তখন অন্য কোনো ভাষা। নিজের ভাষা নয়।
তিন. কোনো কোনো ভাষায় কথা বলার লোকই নেই। এমন অনেক ভাষা আছে, যে ভাষায় কথা বলার জন্য বেঁচে আছে কেবল একজন মানুষ। তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁর ভাষাটা বেঁচে থাকবে পৃথিবীতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সে ভাষার মৃত্যু হবে। আমরা তো দেখেছি আগে, শক্তিশালী ভাষার চাপে কীভাবে মরে যায় কিংবা অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে জায়গা করে নেয় দুর্বল ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে ইংরেজি ভাষা এসে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে স্থানীয় ভাষাগুলোকে, সেই বেদনাময় ইতিহাস নিশ্চয় নতুন করে বলতে হবে না। মেক্সিকোকে কীভাবে গ্রাস করে নিল স্প্যানিশ ভাষা—সে গল্পও কি কম বেদনার?
তরুণেরা যদি নিজের ভাষায় কথা না বলে, তাহলে ভাষার ধমনি শুকিয়ে যায়, ভাষা তখন মরে যায়। আচ্ছা, প্রাচীন লাতিন, স্লাভ বা গ্রিকের মতো ভাষাগুলোর এখনকার অবস্থা কী? তাদের প্রতাপের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি আমরা। গ্রিক ভাষা নিয়ে তো বলাই যায়, প্রাকৃত থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলায় রূপান্তরের মতোই প্রাচীন গ্রিক থেকে জন্ম নিয়েছে আধুনিক গ্রিক ভাষা।
প্রাচীন বই-পত্তরের দিকে চোখ রাখলে এখন খুব কম গ্রিক নাগরিকই সেটা পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে। আর লাতিন? সে তো পরিবর্তিত হতে হতে ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, রোমিনিয়ানসহ আরও কয়েকটি ভাষার জন্ম দিয়েছে। ইংরেজরাও এখন নিশ্চয় চসারের ভাষায় লেখে না, পড়ে না। প্রাচীন রুশ ভাষা থেকেই তো জন্ম নিয়েছে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয় ভাষা।
ভাষা-বিলুপ্তির একটা কারণ তো জেনোসাইড। আর এই জেনোসাইডের জন্য মূলত দায়ী উপনিবেশবাদ। এ ব্যাপারেও নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু এক ভাষাভাষী মানুষ অন্য ভাষাভাষী মানুষের ভাষাকে একেবারে বিলুপ্ত করে দিতে পারে, এর চেয়ে বড় নৃশংসতা আর কী হতে পারে? ঊনবিংশ শতকে তাসমানিয়ার ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেল ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের দ্বারা। আফ্রিকার বহু জাতিকেই তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ আমাদের সংস্কৃতি, ভাষাকে উচ্ছেদ করতে পারেনি বটে, আমরাই ধীরে ধীরে ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।
চার. সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়তাম, তখন আমার দুই সিরিয়ান বন্ধু ছিল। ফরিদ আর আলী। ওরা জাতিগতভাবে কুর্দি। সে সময় জেনেছিলাম, তুরস্কে কুর্দরা নিজেদের ভাষায় কিছু ছাপাতে পারে না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভাষা শিক্ষা দিতে পারে না। ফলে নিজেদের মধ্যে কুর্দি ভাষায় কথা বললেও পড়াশোনা চালাতে হয় তুর্কি ভাষায়। ফরিদ আর আলীকেও সিরিয়ায় মূলত পড়াশোনা করতে হয়েছে আরবি ভাষায়। উচ্চশিক্ষায় কুর্দি ভাষার মর্যাদা নেই।
নিজের ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু সেই নতুন ভাষা যখন নিজের ভাষাকে একেবারেই অচল করে দেয়, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। ভাষা সচল না থাকলে তা মানুষের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকেও ভুলিয়ে দেয়। এবার একটি অন্য রকম খবরের সঙ্গে পরিচিত হই। পৃথিবীতে কতগুলো ভাষা আছে, তা নিয়ে একটা গবেষণা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় বলা হয়েছিল ৬ হাজার
৭০৩টি জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১১ সালে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এক হাজার জীবিত ভাষা ছিল, ২২৫টি ভাষা ছিল ইউরোপে,
২ হাজার ১১টি ভাষা আফ্রিকায় আর ২ হাজার ১৬৫টি ভাষা ছিল এশিয়ায়। অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ছিল ১ হাজার
৩২০টি ভাষা। তবে অস্ট্রেলিয়ার হিসাবটা একটু অনির্দিষ্ট ছিল, কারণ সেখানে এমন কিছু ভাষা আছে, যা একই ভাষার উপভাষা কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
এখন অনেক গবেষকই মনে করেন, পৃথিবীতে বর্তমানে ৫ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি ভাষা জীবিত রয়েছে। গবেষকেরা এটাও মনে করেন, এক শ বছর পর এই ভাষাগুলোর মধ্যে অনেক ভাষারই আর অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ কেউ বলছেন, ভাষা কমে একেবারে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। যে ভাষাগুলো মরে যাবে, সেই ভাষাভাষী মানুষদের বেশির ভাগই তখন কথা বলবে ইংরেজি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, চীনা, রুশ, ইন্দোনেশিয়ান, আরব, সুয়াহিলি আর হিন্দি ভাষায়। ভাষাতাত্ত্বিকদের একটা দল মনে করে, এক শ বছর পর ৮০ শতাংশ ভাষাই আর থাকবে না।
উত্তর আমেরিকায় যে শত শত ভাষা ছিল, তার বেশির ভাগই মরে গেছে। এখন পর্যন্ত টিকে আছে মাত্র ১৯৪টি ভাষা। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি ভাষায় বড়রা আর ছোটরা কথা বলে। ৩৪টি ভাষায় কথা বলে বড়রা আর ছোটদের ছোট্ট একটা অংশ। আর ৭৩টি ভাষায় কথা বলে শুধু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। যে ভাষাগুলোয় শিশুরা কথা বলে না, তারা যে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এই ভাষাগুলোয় কথা বলে, তারা কেন্দ্র থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করে যে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হলে যে ভাষাটা সবাই জানে, সেই ভাষাটাই শিখে ফেলে। ফলে নিজের ভাষাটা গোল্লায় যায়।
পাঁচ. এত কথা বলার পর বলতে হচ্ছে, এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার হাল কী, সে প্রশ্ন এলে কী জবাব দেব? এখন ভাষা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নতুন যে বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে, সেদিকে চোখ রাখা যাক। নিজের ভাষাকে যথেষ্ট সম্মান দেবে বলেও যদি মনে করে কেউ, সে কি টেলিভিশন, রেডিও দেখতে, শুনতে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে নিজের বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে? এই সব মাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সর্বত্র যাওয়া সম্ভব এবং সেটা ইংরেজির মাধ্যমেই সহজ। ইংরেজিকে ফ্যাশনের অন্তর্গত করে নিলে আধুনিক বা অত্যাধুনিক হওয়া যায়, নিজের সমাজ বা সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও বিকশিত হওয়ার পথে কেউ বাদ সাধবে না। আর একজন তরুণ যখন নিজের সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকেই জীবনের রসদ জোগাড় করে নিতে পারে, তখন নিজের ভাষাও আর নিজের ভাষা থাকে না। তা হারিয়ে যেতে থাকে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ও লুপ্ত হতে থাকে।
শিকড়বিহীন হয়ে যায় অস্তিত্ব। এও একধরনের পরাজয়। এই পরাজয়ের সঙ্গী হয় ঐতিহ্য, প্রচলিত কিংবদন্তি, লোকায়ত উৎসব, কবিতা, গান, বাগ্মিতা, ঐতিহ্যগত কৌতুকবোধ ইত্যাদি। অন্য ভাষায় এই অর্জনগুলোকে প্রকাশ করা দুরূহ। ভাষার মাধ্যমে জাতির যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়, সেটাও লুপ্ত হয়ে যায়। ভাষা যত কমে আসবে, মানুষের প্রজ্ঞাও তত কমে আসবে। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা যেটাই হোক না কেন, নিজের ভাষা ধরে রাখা খুব দরকার। মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষার হাল নিয়ে আরও কিছু বলার আছে। সামনে সেটাই বলা হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

দ্বিতীয় পর্ব
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
বাংলা ভাষা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে, হাসপাতালেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে—এতটা ভয়ংকর কিছু ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ভাষা বহন করছে যারা, তাদের ভাষা-শরীরে যে অসুখ এসে জুটেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। শহুরে শিক্ষিত মানুষ তাদের মুখের ভাষা নিয়ে দ্বিধান্বিত। যে সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সত্যিই উঁচুদরের খুব বেশি কিছু হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের খেটে খাওয়া মানুষ এখনো ইংরেজির নাগাল পায়নি বলেই তারা আরও অনেক দিন বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে হয়।
কেন একটা ভাষা মরে যায়, সে কথা কমবেশি সবাই জানে। কোনো ভাষার ওপর যখন অন্য ভাষার প্রভাব পড়ে, সেই অন্য ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ হয় মানুষ, তখন নিজের ভাষা ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়। আমরা যে জীবনযাপন করছি, তাতে ভাষাকে নান্দনিক করে তোলার প্রয়োজন পড়ে না। যখন মানুষ সেই ভাষায় কিছু বলে, তখনই তো ‘কী বলব’, সেটা প্রধান হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন ভাষায় কথা বলা সহজ, তখন কেন নিজের ভাষার শব্দভান্ডার স্ফীত করার প্রক্রিয়ায় জড়াবে মানুষ? নিজের ভাষাকে সম্মান করলে সমাজে একটা স্থান হবে—এ রকম পরিবেশ কি আদৌ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে?
দুই. একটা কেক এসেছিল বাড়িতে। কেকের ওপর লেখা, ‘আবার দেখা হবে’। কেকটা কাটার আগে একজন বললেন, ‘ফের মিলেঙ্গে’ এবং কারও কারও কাছে মনে হলো, ‘ফের মিলেঙ্গে’ কথাটা খুব যায় এই পরিবেশের সঙ্গে। তাহলে ‘আবার দেখা হবে’ কি তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলল?
এখন তো সবাই ‘মিস’ করে। কারও জন্য কারও মন হাহাকার করে ওঠে না। ‘মিস ইউ’ বললেই সব সমস্যা মিটে যায়। তাহলে কি ‘ফের মিলেঙ্গে’ কিংবা ‘মিস ইউ’ বললে ভাষা কলুষিত হয়ে যায়? একেবারেই না। মানুষ কথা বলে যোগাযোগের জন্য। ভাষা শুধু সেই যোগাযোগকে নিবিড় করে। যে যেই ভাষায় অভ্যস্ত, সে সেই ভাষাকেই যোগাযোগের মাধ্যম করে নেয়। এখানে শুধু একটা প্রশ্নই উঠে আসতে পারে—নিজের ভাষায় কেন নিজেকে প্রকাশ করা যাচ্ছে না?
এর একটা কারণ হতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধবদের আলোচনায় ব্যাখ্যামূলক কথা খুব কম থাকছে। দু-এক শব্দে উত্তর দেওয়া যায়, কিংবা উত্তর দিতে হলে ভাবার প্রয়োজন হয় না, যান্ত্রিকভাবে তৈরি থাকা উত্তরটাই উঠে আসে ঠোঁটের কিনারে, এমন হলে ভাষাকে আর বেড়ে উঠতে হয় না। যেটুকু বেড়ে উঠেছে, সেটুকুতেই থেমে থাকা যায়। কারণ, নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা তখন অন্য কোনো ভাষা। নিজের ভাষা নয়।
তিন. কোনো কোনো ভাষায় কথা বলার লোকই নেই। এমন অনেক ভাষা আছে, যে ভাষায় কথা বলার জন্য বেঁচে আছে কেবল একজন মানুষ। তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁর ভাষাটা বেঁচে থাকবে পৃথিবীতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সে ভাষার মৃত্যু হবে। আমরা তো দেখেছি আগে, শক্তিশালী ভাষার চাপে কীভাবে মরে যায় কিংবা অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে জায়গা করে নেয় দুর্বল ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে ইংরেজি ভাষা এসে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে স্থানীয় ভাষাগুলোকে, সেই বেদনাময় ইতিহাস নিশ্চয় নতুন করে বলতে হবে না। মেক্সিকোকে কীভাবে গ্রাস করে নিল স্প্যানিশ ভাষা—সে গল্পও কি কম বেদনার?
তরুণেরা যদি নিজের ভাষায় কথা না বলে, তাহলে ভাষার ধমনি শুকিয়ে যায়, ভাষা তখন মরে যায়। আচ্ছা, প্রাচীন লাতিন, স্লাভ বা গ্রিকের মতো ভাষাগুলোর এখনকার অবস্থা কী? তাদের প্রতাপের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি আমরা। গ্রিক ভাষা নিয়ে তো বলাই যায়, প্রাকৃত থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলায় রূপান্তরের মতোই প্রাচীন গ্রিক থেকে জন্ম নিয়েছে আধুনিক গ্রিক ভাষা।
প্রাচীন বই-পত্তরের দিকে চোখ রাখলে এখন খুব কম গ্রিক নাগরিকই সেটা পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে। আর লাতিন? সে তো পরিবর্তিত হতে হতে ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, রোমিনিয়ানসহ আরও কয়েকটি ভাষার জন্ম দিয়েছে। ইংরেজরাও এখন নিশ্চয় চসারের ভাষায় লেখে না, পড়ে না। প্রাচীন রুশ ভাষা থেকেই তো জন্ম নিয়েছে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয় ভাষা।
ভাষা-বিলুপ্তির একটা কারণ তো জেনোসাইড। আর এই জেনোসাইডের জন্য মূলত দায়ী উপনিবেশবাদ। এ ব্যাপারেও নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু এক ভাষাভাষী মানুষ অন্য ভাষাভাষী মানুষের ভাষাকে একেবারে বিলুপ্ত করে দিতে পারে, এর চেয়ে বড় নৃশংসতা আর কী হতে পারে? ঊনবিংশ শতকে তাসমানিয়ার ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেল ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের দ্বারা। আফ্রিকার বহু জাতিকেই তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ আমাদের সংস্কৃতি, ভাষাকে উচ্ছেদ করতে পারেনি বটে, আমরাই ধীরে ধীরে ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।
চার. সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়তাম, তখন আমার দুই সিরিয়ান বন্ধু ছিল। ফরিদ আর আলী। ওরা জাতিগতভাবে কুর্দি। সে সময় জেনেছিলাম, তুরস্কে কুর্দরা নিজেদের ভাষায় কিছু ছাপাতে পারে না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভাষা শিক্ষা দিতে পারে না। ফলে নিজেদের মধ্যে কুর্দি ভাষায় কথা বললেও পড়াশোনা চালাতে হয় তুর্কি ভাষায়। ফরিদ আর আলীকেও সিরিয়ায় মূলত পড়াশোনা করতে হয়েছে আরবি ভাষায়। উচ্চশিক্ষায় কুর্দি ভাষার মর্যাদা নেই।
নিজের ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু সেই নতুন ভাষা যখন নিজের ভাষাকে একেবারেই অচল করে দেয়, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। ভাষা সচল না থাকলে তা মানুষের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকেও ভুলিয়ে দেয়। এবার একটি অন্য রকম খবরের সঙ্গে পরিচিত হই। পৃথিবীতে কতগুলো ভাষা আছে, তা নিয়ে একটা গবেষণা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় বলা হয়েছিল ৬ হাজার
৭০৩টি জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১১ সালে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এক হাজার জীবিত ভাষা ছিল, ২২৫টি ভাষা ছিল ইউরোপে,
২ হাজার ১১টি ভাষা আফ্রিকায় আর ২ হাজার ১৬৫টি ভাষা ছিল এশিয়ায়। অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ছিল ১ হাজার
৩২০টি ভাষা। তবে অস্ট্রেলিয়ার হিসাবটা একটু অনির্দিষ্ট ছিল, কারণ সেখানে এমন কিছু ভাষা আছে, যা একই ভাষার উপভাষা কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
এখন অনেক গবেষকই মনে করেন, পৃথিবীতে বর্তমানে ৫ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি ভাষা জীবিত রয়েছে। গবেষকেরা এটাও মনে করেন, এক শ বছর পর এই ভাষাগুলোর মধ্যে অনেক ভাষারই আর অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ কেউ বলছেন, ভাষা কমে একেবারে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। যে ভাষাগুলো মরে যাবে, সেই ভাষাভাষী মানুষদের বেশির ভাগই তখন কথা বলবে ইংরেজি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, চীনা, রুশ, ইন্দোনেশিয়ান, আরব, সুয়াহিলি আর হিন্দি ভাষায়। ভাষাতাত্ত্বিকদের একটা দল মনে করে, এক শ বছর পর ৮০ শতাংশ ভাষাই আর থাকবে না।
উত্তর আমেরিকায় যে শত শত ভাষা ছিল, তার বেশির ভাগই মরে গেছে। এখন পর্যন্ত টিকে আছে মাত্র ১৯৪টি ভাষা। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি ভাষায় বড়রা আর ছোটরা কথা বলে। ৩৪টি ভাষায় কথা বলে বড়রা আর ছোটদের ছোট্ট একটা অংশ। আর ৭৩টি ভাষায় কথা বলে শুধু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। যে ভাষাগুলোয় শিশুরা কথা বলে না, তারা যে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এই ভাষাগুলোয় কথা বলে, তারা কেন্দ্র থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করে যে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হলে যে ভাষাটা সবাই জানে, সেই ভাষাটাই শিখে ফেলে। ফলে নিজের ভাষাটা গোল্লায় যায়।
পাঁচ. এত কথা বলার পর বলতে হচ্ছে, এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার হাল কী, সে প্রশ্ন এলে কী জবাব দেব? এখন ভাষা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নতুন যে বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে, সেদিকে চোখ রাখা যাক। নিজের ভাষাকে যথেষ্ট সম্মান দেবে বলেও যদি মনে করে কেউ, সে কি টেলিভিশন, রেডিও দেখতে, শুনতে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে নিজের বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে? এই সব মাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সর্বত্র যাওয়া সম্ভব এবং সেটা ইংরেজির মাধ্যমেই সহজ। ইংরেজিকে ফ্যাশনের অন্তর্গত করে নিলে আধুনিক বা অত্যাধুনিক হওয়া যায়, নিজের সমাজ বা সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও বিকশিত হওয়ার পথে কেউ বাদ সাধবে না। আর একজন তরুণ যখন নিজের সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকেই জীবনের রসদ জোগাড় করে নিতে পারে, তখন নিজের ভাষাও আর নিজের ভাষা থাকে না। তা হারিয়ে যেতে থাকে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ও লুপ্ত হতে থাকে।
শিকড়বিহীন হয়ে যায় অস্তিত্ব। এও একধরনের পরাজয়। এই পরাজয়ের সঙ্গী হয় ঐতিহ্য, প্রচলিত কিংবদন্তি, লোকায়ত উৎসব, কবিতা, গান, বাগ্মিতা, ঐতিহ্যগত কৌতুকবোধ ইত্যাদি। অন্য ভাষায় এই অর্জনগুলোকে প্রকাশ করা দুরূহ। ভাষার মাধ্যমে জাতির যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়, সেটাও লুপ্ত হয়ে যায়। ভাষা যত কমে আসবে, মানুষের প্রজ্ঞাও তত কমে আসবে। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা যেটাই হোক না কেন, নিজের ভাষা ধরে রাখা খুব দরকার। মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষার হাল নিয়ে আরও কিছু বলার আছে। সামনে সেটাই বলা হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

দ্বিতীয় পর্ব
বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
বাংলা ভাষা মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে, হাসপাতালেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে—এতটা ভয়ংকর কিছু ভাবার কারণ নেই। কিন্তু ভাষা বহন করছে যারা, তাদের ভাষা-শরীরে যে অসুখ এসে জুটেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। শহুরে শিক্ষিত মানুষ তাদের মুখের ভাষা নিয়ে দ্বিধান্বিত। যে সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সত্যিই উঁচুদরের খুব বেশি কিছু হচ্ছে কি না, তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেশের খেটে খাওয়া মানুষ এখনো ইংরেজির নাগাল পায়নি বলেই তারা আরও অনেক দিন বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবে বলে মনে হয়।
কেন একটা ভাষা মরে যায়, সে কথা কমবেশি সবাই জানে। কোনো ভাষার ওপর যখন অন্য ভাষার প্রভাব পড়ে, সেই অন্য ভাষায় কথা বলতে স্বচ্ছন্দ হয় মানুষ, তখন নিজের ভাষা ধীরে ধীরে দূরে চলে যায়। আমরা যে জীবনযাপন করছি, তাতে ভাষাকে নান্দনিক করে তোলার প্রয়োজন পড়ে না। যখন মানুষ সেই ভাষায় কিছু বলে, তখনই তো ‘কী বলব’, সেটা প্রধান হয়ে ওঠে। কিন্তু যখন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য ভিন্ন ভাষায় কথা বলা সহজ, তখন কেন নিজের ভাষার শব্দভান্ডার স্ফীত করার প্রক্রিয়ায় জড়াবে মানুষ? নিজের ভাষাকে সম্মান করলে সমাজে একটা স্থান হবে—এ রকম পরিবেশ কি আদৌ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে?
দুই. একটা কেক এসেছিল বাড়িতে। কেকের ওপর লেখা, ‘আবার দেখা হবে’। কেকটা কাটার আগে একজন বললেন, ‘ফের মিলেঙ্গে’ এবং কারও কারও কাছে মনে হলো, ‘ফের মিলেঙ্গে’ কথাটা খুব যায় এই পরিবেশের সঙ্গে। তাহলে ‘আবার দেখা হবে’ কি তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলল?
এখন তো সবাই ‘মিস’ করে। কারও জন্য কারও মন হাহাকার করে ওঠে না। ‘মিস ইউ’ বললেই সব সমস্যা মিটে যায়। তাহলে কি ‘ফের মিলেঙ্গে’ কিংবা ‘মিস ইউ’ বললে ভাষা কলুষিত হয়ে যায়? একেবারেই না। মানুষ কথা বলে যোগাযোগের জন্য। ভাষা শুধু সেই যোগাযোগকে নিবিড় করে। যে যেই ভাষায় অভ্যস্ত, সে সেই ভাষাকেই যোগাযোগের মাধ্যম করে নেয়। এখানে শুধু একটা প্রশ্নই উঠে আসতে পারে—নিজের ভাষায় কেন নিজেকে প্রকাশ করা যাচ্ছে না?
এর একটা কারণ হতে পারে, ইদানীং বন্ধুবান্ধবদের আলোচনায় ব্যাখ্যামূলক কথা খুব কম থাকছে। দু-এক শব্দে উত্তর দেওয়া যায়, কিংবা উত্তর দিতে হলে ভাবার প্রয়োজন হয় না, যান্ত্রিকভাবে তৈরি থাকা উত্তরটাই উঠে আসে ঠোঁটের কিনারে, এমন হলে ভাষাকে আর বেড়ে উঠতে হয় না। যেটুকু বেড়ে উঠেছে, সেটুকুতেই থেমে থাকা যায়। কারণ, নিজেকে প্রকাশ করার ভাষা তখন অন্য কোনো ভাষা। নিজের ভাষা নয়।
তিন. কোনো কোনো ভাষায় কথা বলার লোকই নেই। এমন অনেক ভাষা আছে, যে ভাষায় কথা বলার জন্য বেঁচে আছে কেবল একজন মানুষ। তিনি যত দিন বেঁচে থাকবেন, তত দিন তাঁর ভাষাটা বেঁচে থাকবে পৃথিবীতে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই সে ভাষার মৃত্যু হবে। আমরা তো দেখেছি আগে, শক্তিশালী ভাষার চাপে কীভাবে মরে যায় কিংবা অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে জায়গা করে নেয় দুর্বল ভাষা। যুক্তরাষ্ট্রে কীভাবে ইংরেজি ভাষা এসে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছে স্থানীয় ভাষাগুলোকে, সেই বেদনাময় ইতিহাস নিশ্চয় নতুন করে বলতে হবে না। মেক্সিকোকে কীভাবে গ্রাস করে নিল স্প্যানিশ ভাষা—সে গল্পও কি কম বেদনার?
তরুণেরা যদি নিজের ভাষায় কথা না বলে, তাহলে ভাষার ধমনি শুকিয়ে যায়, ভাষা তখন মরে যায়। আচ্ছা, প্রাচীন লাতিন, স্লাভ বা গ্রিকের মতো ভাষাগুলোর এখনকার অবস্থা কী? তাদের প্রতাপের কথা নিশ্চয়ই ভুলে যাইনি আমরা। গ্রিক ভাষা নিয়ে তো বলাই যায়, প্রাকৃত থেকে ক্রমান্বয়ে বাংলায় রূপান্তরের মতোই প্রাচীন গ্রিক থেকে জন্ম নিয়েছে আধুনিক গ্রিক ভাষা।
প্রাচীন বই-পত্তরের দিকে চোখ রাখলে এখন খুব কম গ্রিক নাগরিকই সেটা পড়তে পারবে, বুঝতে পারবে। আর লাতিন? সে তো পরিবর্তিত হতে হতে ইতালিয়ান, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, রোমিনিয়ানসহ আরও কয়েকটি ভাষার জন্ম দিয়েছে। ইংরেজরাও এখন নিশ্চয় চসারের ভাষায় লেখে না, পড়ে না। প্রাচীন রুশ ভাষা থেকেই তো জন্ম নিয়েছে রুশ, বেলারুশ ও ইউক্রেনীয় ভাষা।
ভাষা-বিলুপ্তির একটা কারণ তো জেনোসাইড। আর এই জেনোসাইডের জন্য মূলত দায়ী উপনিবেশবাদ। এ ব্যাপারেও নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু এক ভাষাভাষী মানুষ অন্য ভাষাভাষী মানুষের ভাষাকে একেবারে বিলুপ্ত করে দিতে পারে, এর চেয়ে বড় নৃশংসতা আর কী হতে পারে? ঊনবিংশ শতকে তাসমানিয়ার ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেল ইউরোপীয় উপনিবেশকারীদের দ্বারা। আফ্রিকার বহু জাতিকেই তাদের ভাষা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ আমাদের সংস্কৃতি, ভাষাকে উচ্ছেদ করতে পারেনি বটে, আমরাই ধীরে ধীরে ইংরেজির কাছে আত্মসমর্পণ করেছি।
চার. সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়তাম, তখন আমার দুই সিরিয়ান বন্ধু ছিল। ফরিদ আর আলী। ওরা জাতিগতভাবে কুর্দি। সে সময় জেনেছিলাম, তুরস্কে কুর্দরা নিজেদের ভাষায় কিছু ছাপাতে পারে না, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেদের ভাষা শিক্ষা দিতে পারে না। ফলে নিজেদের মধ্যে কুর্দি ভাষায় কথা বললেও পড়াশোনা চালাতে হয় তুর্কি ভাষায়। ফরিদ আর আলীকেও সিরিয়ায় মূলত পড়াশোনা করতে হয়েছে আরবি ভাষায়। উচ্চশিক্ষায় কুর্দি ভাষার মর্যাদা নেই।
নিজের ভাষার পাশাপাশি অন্য ভাষা শেখায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু সেই নতুন ভাষা যখন নিজের ভাষাকে একেবারেই অচল করে দেয়, তখন তা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। ভাষা সচল না থাকলে তা মানুষের ইতিহাস আর সংস্কৃতিকেও ভুলিয়ে দেয়। এবার একটি অন্য রকম খবরের সঙ্গে পরিচিত হই। পৃথিবীতে কতগুলো ভাষা আছে, তা নিয়ে একটা গবেষণা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় বলা হয়েছিল ৬ হাজার
৭০৩টি জীবিত ভাষা রয়েছে। ২০১১ সালে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এক হাজার জীবিত ভাষা ছিল, ২২৫টি ভাষা ছিল ইউরোপে,
২ হাজার ১১টি ভাষা আফ্রিকায় আর ২ হাজার ১৬৫টি ভাষা ছিল এশিয়ায়। অস্ট্রেলিয়াসহ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে ছিল ১ হাজার
৩২০টি ভাষা। তবে অস্ট্রেলিয়ার হিসাবটা একটু অনির্দিষ্ট ছিল, কারণ সেখানে এমন কিছু ভাষা আছে, যা একই ভাষার উপভাষা কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে।
এখন অনেক গবেষকই মনে করেন, পৃথিবীতে বর্তমানে ৫ হাজারের চেয়ে কিছু বেশি ভাষা জীবিত রয়েছে। গবেষকেরা এটাও মনে করেন, এক শ বছর পর এই ভাষাগুলোর মধ্যে অনেক ভাষারই আর অস্তিত্ব থাকবে না। কেউ কেউ বলছেন, ভাষা কমে একেবারে অর্ধেক হয়ে যেতে পারে। যে ভাষাগুলো মরে যাবে, সেই ভাষাভাষী মানুষদের বেশির ভাগই তখন কথা বলবে ইংরেজি, পর্তুগিজ, স্প্যানিশ, চীনা, রুশ, ইন্দোনেশিয়ান, আরব, সুয়াহিলি আর হিন্দি ভাষায়। ভাষাতাত্ত্বিকদের একটা দল মনে করে, এক শ বছর পর ৮০ শতাংশ ভাষাই আর থাকবে না।
উত্তর আমেরিকায় যে শত শত ভাষা ছিল, তার বেশির ভাগই মরে গেছে। এখন পর্যন্ত টিকে আছে মাত্র ১৯৪টি ভাষা। এর মধ্যে মাত্র ৩৩টি ভাষায় বড়রা আর ছোটরা কথা বলে। ৩৪টি ভাষায় কথা বলে বড়রা আর ছোটদের ছোট্ট একটা অংশ। আর ৭৩টি ভাষায় কথা বলে শুধু পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষ। যে ভাষাগুলোয় শিশুরা কথা বলে না, তারা যে অদূর ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। যারা এই ভাষাগুলোয় কথা বলে, তারা কেন্দ্র থেকে এত বেশি দূরে অবস্থান করে যে অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে হলে যে ভাষাটা সবাই জানে, সেই ভাষাটাই শিখে ফেলে। ফলে নিজের ভাষাটা গোল্লায় যায়।
পাঁচ. এত কথা বলার পর বলতে হচ্ছে, এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার হাল কী, সে প্রশ্ন এলে কী জবাব দেব? এখন ভাষা হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে নতুন যে বিষয়গুলো যুক্ত হয়েছে, সেদিকে চোখ রাখা যাক। নিজের ভাষাকে যথেষ্ট সম্মান দেবে বলেও যদি মনে করে কেউ, সে কি টেলিভিশন, রেডিও দেখতে, শুনতে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে নিজের বাংলা ভাষার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারবে? এই সব মাধ্যম দিয়ে বিশ্বের সর্বত্র যাওয়া সম্ভব এবং সেটা ইংরেজির মাধ্যমেই সহজ। ইংরেজিকে ফ্যাশনের অন্তর্গত করে নিলে আধুনিক বা অত্যাধুনিক হওয়া যায়, নিজের সমাজ বা সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলেও বিকশিত হওয়ার পথে কেউ বাদ সাধবে না। আর একজন তরুণ যখন নিজের সংস্কৃতিকে অগ্রাহ্য করে ভিন্ন সংস্কৃতি থেকেই জীবনের রসদ জোগাড় করে নিতে পারে, তখন নিজের ভাষাও আর নিজের ভাষা থাকে না। তা হারিয়ে যেতে থাকে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয়ও লুপ্ত হতে থাকে।
শিকড়বিহীন হয়ে যায় অস্তিত্ব। এও একধরনের পরাজয়। এই পরাজয়ের সঙ্গী হয় ঐতিহ্য, প্রচলিত কিংবদন্তি, লোকায়ত উৎসব, কবিতা, গান, বাগ্মিতা, ঐতিহ্যগত কৌতুকবোধ ইত্যাদি। অন্য ভাষায় এই অর্জনগুলোকে প্রকাশ করা দুরূহ। ভাষার মাধ্যমে জাতির যে ইতিহাস তুলে ধরা হয়, সেটাও লুপ্ত হয়ে যায়। ভাষা যত কমে আসবে, মানুষের প্রজ্ঞাও তত কমে আসবে। তাই রাষ্ট্রীয় ভাষা যেটাই হোক না কেন, নিজের ভাষা ধরে রাখা খুব দরকার। মনে হচ্ছে, বাংলা ভাষার হাল নিয়ে আরও কিছু বলার আছে। সামনে সেটাই বলা হবে।
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নিয়ে যে আলোচনা হয়, তাতে এই ভাষায় নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি কি পারছি না, সে আলোচনা হয় কম। আমরা অকারণেই প্রমিত-অপ্রমিত ভাষা নিয়ে বেশি বাক্যব্যয় করি। মূলত সেটা বাংলা ভাষার মূল সংকট নয়।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫