Ajker Patrika

চা চিনি, চা খাই

ড. তৈফুর রহমান
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১: ৫৯
চা চিনি, চা খাই

গ্রামের বাড়ি থেকে বাবা আর ছেলে তাদের ধনী আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছে ঢাকায়। টেবিলে নাশতা দিয়ে গেছে। ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বাজান, গেলাসে কী দিয়া গেল?’ বাবা উত্তর দিলেন, ‘চা।’ ছেলে লজ্জায় অবনত হয়ে বলল, ‘আপনি চান, আমার শরম লাগে।’

সেই দিন আর নেই। আমরা সবাই চা চিনি, চিনি দিয়ে চা খাই, দুধ দিয়ে খাই, আদা দিয়ে খাই, লেবু দিয়ে খাই, কিছু না দিয়ে খাই।

কিন্তু আপনি বা আমি কেউই প্রথম চা পানকারী ব্যক্তি নই। জনশ্রুতি আছে, বাঙালির মধ্যে প্রথম চা পানকারী ব্যক্তিটি হচ্ছেন অতীশ দীপঙ্কর। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে তুষারাবৃত হিমালয় পাড়ি দিয়ে তিনি যখন তিব্বতে পৌঁছালেন–তখন এই কিংবদন্তির পণ্ডিতকে নাকি চা দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন মঠের ভিক্ষুরা। কিন্তু তিব্বতে না হয় বৃষ্টি, না আছে চা উৎপাদনের মতো উপযোগী মাটি বা আবহাওয়া। তাহলে সেই সময় তিব্বতে চা আসল কোথা থেকে?

জানা যায়, ৬৮১ সালে চীনা রাজকুমারী ওয়েন চেং এর সঙ্গে বিয়ে হয় তিব্বতি রাজা সাংতাং গাম্বোর। রাজকুমারী বাপের বাড়ি থেকে রেশমি পোশাক, গয়না, দাসী ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন এক পেটি চা। তিব্বতিরা সেই জিনিস ঘন দুধের সঙ্গে খেয়ে তো মুগ্ধ! প্রবল শীতে গা গরম তো হয়ই, মঠের শিক্ষার্থীরা রাত জেগে বৌদ্ধ শাস্ত্র পড়ার সময় আর ঘুমিয়ে পড়ে না! সেই ঘন চায়ের ক্বাথই অতীশ দীপঙ্কর খেয়েছিলেন বলে ধারণা করা যায়।

এ গল্প থেকে এমন ধারণা করা যেতেই পারে যে, বাংলা-বিহার-ওডিশায় এর আগে আর কেউ কোনো দিন চা পান করিনি। কারণ এ অঞ্চলে এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটির আগমন হয়নি। কথাটি সর্বাংশে সঠিক নয়।

এ কথা সত্য যে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় পানীয় হিসেবে চায়ের প্রসার হয়েছে মাত্র শ খানিক বছর আগে ইংরেজদের হাত ধরেই। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এ অঞ্চলে চায়ের অনেক আগে এসেছে কফি। আরব আর পারস্যের বণিকেরা সেই সিন্দাবাদের গল্পের সময়কালের আগে থেকেই জাহাজে করে আসত আজকের মুম্বাই, সুরাট আর কালিকট বন্দরে। তারাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল কফি। ১৬৩৮ সালে জার্মান পর্যটক আলবার্ট ম্যান্ডেলসলো সুরাটে এসে ইউরোপীয় বণিক এবং ভারতীয় সম্ভ্রান্তদের কফি খেতে দেখেন, দিল্লির চাঁদনি চকে তখন রীতিমতো কফিহাউস ছিল। তখন দিল্লির সিংহাসনে সম্রাট শাহজাহান এবং তাজমহল নির্মাণ তখনো শেষ হয়নি। 

১৫০০ সালের পর প্রায় এক শতাব্দী দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনে একচ্ছত্র বাণিজ্য করেছে পর্তুগিজেরা। এর পরে ১৬০০ সাল থেকে ভারতবর্ষ, ইন্দোচীন আর চীনের দিকে পিল পিল করে আসতে শুরু করে ইংরেজ, ওলন্দাজ এবং এর পরে ফরাসিরা। ভারতের মসলা, সুতি এবং মসলিন আর চীনের রেশমি বস্ত্র, চীনামাটির বাসনপত্র তখন ইউরোপে চাহিদার শীর্ষে থাকা বাণিজ্য পণ্য। এর লোভে জীবনপণ করে ইউরোপীয়রা জাহাজে ভাসতে ভাসতে আমাদের বন্দরে বন্দরে হামলে পড়ল। তখনো তারা চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তেমন করে জমিয়ে বাণিজ্য শুরু করতে পারেনি। আজকের ম্যাকাওতে পর্তুগিজেরা আর হংকংয়ে ইংরেজ ও ওলন্দাজেরা চীনের বণিকদের সঙ্গে লেনদেন করত। যদিও পর্তুগিজেরা চীনা বন্দরে প্রথম বাণিজ্য শুরু করে। কিন্তু চায়ের প্রথম চালান ইউরোপে নিয়ে যায় ওলন্দাজেরা—সময়টা ১৬১০ সাল। 

ইংরেজ, ফরাসি, জার্মানদের বলতে গেলে চা খাওয়া শেখায় ওলন্দাজেরা। ইংল্যান্ডে চা আসে ১৬৪৫ সালে। ১৬৫৬ সালে লন্ডনে প্রথম চায়ের নিলাম হয়। এতে বোঝা যায় তত দিনে চা একটা বাণিজ্য পণ্যের মর্যাদা পেয়ে গেছে বিলেতে। ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগিজ রাজকুমারী ক্যাথরিনকে বিয়ে করেন। ক্যাথরিনকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয় বিরাট একটা বাক্স ভরা চীন দেশের চা। ধারণা করা হয়, এই রাজকুমারীর চা-প্রীতির কারণেই ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদ থেকে ধীরে ধীরে এই পানীয়ের ফ্যাশন ধনী এবং সম্ভ্রান্ত মহলে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

এই বস্তু সাধারণ জনতা কিনতে বা খেতে পারত না এর চড়া দামের জন্যই শুধু নয়। চা পানের সরঞ্জাম, যেমন কেটলি, কাপ, বাহারি টেবিল, চিনি সবই তখন ছিল দুর্মূল্য। তবে সব সম্ভ্রান্তই যে ঠিকঠাক মতো চা পান শিখতে পেরেছিল, তা বলা যাবে না। সেই সময়ে ডিউক অফ মনমাউথের বিধবা স্ত্রী তাঁর স্কটিশ আত্মীয়স্বজনকে এক পাউন্ড চা পাঠালেন। তাঁরা চা পেয়ে খুব খুশি। চা পাতা ভালো মতো পানিতে জ্বাল দিয়ে, কালচে সবুজ পানি সুন্দর করে ছেঁকে ফেলে দিয়ে, সেদ্ধ পালং শাকের মতো কচকচ করে সেদ্ধ চা পাতা সবাই মিলে তৃপ্তি করে খেয়েছিলেন বলে শোনা যায়!

১৭২১ সালের মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনে চা-বাণিজ্যের একচেটিয়া ব্যবসার সনদ পায়। তারা সিন্দুক ভরে রৌপ্য মুদ্রা নিয়ে এসে জাহাজ বোঝাই করে চা নিয়ে যেত ইংল্যান্ড এবং ইউরোপের বাজারে। এইভাবে কয়েক বছর চলার পরে ইংরেজদের টনক নড়ল। বস্তা বস্তা রৌপ্য মুদ্রা যে নিয়ে যাচ্ছে তাতে তাদের তারল্য সংকট শুরু হলো বলে! কারণ ইংরেজরা এমন কিছু বানাতে পারত না বা উৎপাদন করত না যার চাহিদা ভারতবর্ষ বা চীনে আছে। তাহলে উপায়? 

লাল আলখাল্লা পরা মিং রাজ কর্মকর্তা জু ঝি ডিং। চতুর ইংরেজ দেখল, চীনের মানুষের আফিমের প্রতি একটা নেশা আছে। তখন বাংলায় ভালো আফিম চাষ হতো। তত দিনে বাংলাতেও ইংরেজ রাজ গেঁড়ে বসেছে। তারা বুদ্ধি করল, অতি সস্তা দরে, মেরে ধরে বাংলার চাষিদের দিয়ে আফিম উৎপাদন করিয়ে নিয়ে সেই আফিম বিক্রি করবে চীনে। তার বদলে জাহাজ বোঝাই করে নিয়ে আসবে চা। নগদ লেনদেনের কোনো দরকারই নেই। এমন মোক্ষম সমাধান পেয়ে ইংরেজের চা বাণিজ্য ফুলে ফেঁপে উঠল। কিন্তু চীনের জনগণ এমনভাবে আফিমে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে দেখে চীন সম্রাট গেলেন ক্ষেপে। তারা ইংরেজের আফিম বাণিজ্যে বাঁধ সাধল। তাতে বাঁধল যুদ্ধ—সময়টা ১৮৩৯ থেকে ১৮৪২ সাল। যুদ্ধের ডামাডোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চীনের চা বাণিজ্যে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। ওদিকে ইংরেজেদের চা পানের অভ্যাস বনেদি বাড়ির ড্রয়িংরুমের সীমানা পেরিয়ে সাধারণের হেঁশেলে গিয়ে হাজির হচ্ছে। চায়ের চাহিদাও বেড়ে গেছে বহু গুণ। 

আফিম যুদ্ধের আগেই ইংরেজ বুঝে গিয়েছিল, ইউরোপে চায়ের যে পরিমাণ চাহিদা তা চীনের ছোট ছোট চা বাগানিদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া আফিম বিক্রি করে বেশি দিন বাণিজ্য চালানো যাবে না। এদিকে ওলন্দাজেরা জাভাতে চা উৎপাদনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালু করেছে, আমেরিকা স্বাধীনতা পেয়ে তারাও চায়ের সন্ধানে প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্র পথে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে তৎপর হয়ে উঠেছে। এই অবস্থায় চায়ের বিকল্প একটা উৎপাদন ক্ষেত্র ইংরেজদের জন্য ফরজ হয়ে উঠল। 

১৮২৩ সালে দুর্গম আসামে বদলি হলেন রবার্ট ব্রুস নামের এক স্কটিশ মেজর। তিনি দেখলেন, স্থানীয় লোকজন একধরনের গাছের পাতা চিবিয়ে খায় পানের মতো করে। তিনি ভালো করে খেয়াল করে বুঝলেন, এই গাছ একধরনের চা-গুল্ম। তখন তাঁর আনন্দ আর ধরে না! কিন্তু আসামে প্রাকৃতিক ভাবে চা গাছ হয়, বাজার ধরতে হলে দরকার বাণিজ্যিক চাষবাদ এবং প্রক্রিয়াকরণ। সে জন্য তারা চীন থেকে অভিজ্ঞ চাষি ও প্রক্রিয়াজাতকারী ভাড়া করে নিয়ে এলেন, সঙ্গে বাঙালি এবং অন্যান্য অঞ্চলের মজুরি-শ্রমিকদের শিক্ষা চলতে থাকল। 

শুরুতে উদ্দেশ্য ছিল আসামে চা উৎপাদন করে তা ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়া। আসামে চা উৎপাদন পুরোদমে শুরু হওয়ার কয়েক দশকের ভেতরেই চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেল হুহু করে। কাড়ি কাড়ি পাউন্ড কামাই করতে লাগল আসাম টি-গার্ডেন। ১৯০০ সালের শুরুতে ইংরেজ সাহেবদের হঠাৎ বোধোদয় হলো, আসামের চা সাতসমুদ্র তেরো নদীর ওপারে নিয়ে বাণিজ্য হচ্ছে ভালো কথা। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের দেশ ভারতবর্ষই তো বিরাট বাজার হতে পারে চায়ের! যেই ভাবা সেই কাজ। 

১৯০২ সালে ইন্ডিয়া টি অ্যাসোসিয়েশন জরিপ করে দেখল, চা পানীয় হিসেবে জনপ্রিয় করতে হলে আগে ভারতীয়দের বোঝাতে হবে এ এক দারুণ গুণের পানীয়। তার পরে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে দেখাতে হবে কীভাবে চা বানাতে হয়, কীভাবে আয়েশ করে চা পান করতে হয়। তারা ছোট ছোট দলকে এক একজন সুপারিনটেনডেন্টের তত্ত্বাবধানে দিয়ে একটু অবস্থাসম্পন্নদের বাড়িতে বাড়িতে পাঠাতে শুরু করল। তারা প্রায় প্রতিদিন স্টোভ, কেটলি, ছাঁকনি, কাপ পিরিচ নিয়ে হাজির হতে থাকল মানুষজনের বাড়িতে। বিনি পয়সায় যখন পাওয়া যাচ্ছে তখন প্রাথমিক আপত্তি বেশি দিন টিকল না। রেল স্টেশনে চায়ের ক্যানটিন চালু হলো। এমনকি হাতে করে চা ফেরিও শুরু হলো। তার পরে ‘আশীর্বাদ’ হিসেবে আসল প্রথম মহাযুদ্ধ। কলকারখানায় উৎপাদনের সঙ্গে কাজের সময় বেড়ে গেল। কারখানার ক্যানটিনে ক্যানটিনে নামমাত্র মূল্যে সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায় বিতরণ শুরু হলো, শরীরও চাঙা করা পানীয় চা। 

এর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি চীনের চা-কে। বাংলা, বিহার, ওডিশা, উত্তর ভারত, দক্ষিণ ভারত সবখানে চায়ের সঙ্গে বাধা পড়ে গেলাম আমরা। আর পড়ল চা উৎপাদনকারী মজুরেরা। 

অবাক চা পান
চীনে রাজ কর্মচারী বা কর্মকর্তা হওয়ার জন্য আজ থেকে প্রায় হাজার বছর আগে থেকেই কঠিন পরীক্ষা চালু ছিল। মিং রাজ বংশের শুরুর দিকে (১৩৮৫) তরুণ জু ঝি ডিং’র অফিসার হওয়ার খায়েশ। তিনি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি থেকে রওনা দিলেন। ফুজিয়ান প্রদেশের উইশান পার্বত্য অঞ্চলে এসে অসুস্থ হয়ে পথের ধরে পড়ে রইলেন জু ঝি ডিং। এক ভিক্ষু তাঁকে দেখে মন্দিরে নিয়ে গেলেন। সেখানে তাঁকে আশ্রয়ের সঙ্গে দেওয়া হলো বিশেষ এক ধরনের চা। সেই চা পান করে জু ঝি ডিং ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে গেলেন। সময় মতো পরীক্ষা দিয়ে শুধু উত্তীর্ণই হলেন না, সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি নিযুক্ত হলেন সম্রাটের খাস কর্মকর্তা হিসেবে। 

সেই সময় চাকরির এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সবাইকে একটা করে লাল আলখাল্লা দেওয়া হতো। জু ঝি ডিং সেই আলখাল্লা গায়ে দিয়ে ঈশান পর্বতে হাজির হলেন। যে চা খেয়ে আজ তাঁর এত উন্নতি, সেই চা গাছের গায়ে সেই আলখাল্লা জড়িয়ে দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। পরে একবার সম্রাটের মা অসুস্থ হলে যখন সব কবিরাজ বৈদ্য ফেল মেরে গেলেন, তখন জু ঝি সম্রাটকে বললেন, তাঁর সন্ধানে এমন চা আছে যা পান করলে রাজমাতা নির্ঘাত সুস্থ হবেন। দ্রুত সেই চা আনা হলো রাজপ্রাসাদে। সম্রাটের মা সুস্থও হয়ে উঠলেন। এমনই ধন্বন্তরি সেই চা, এমনই তার কেরামতি! সম্রাট আদেশ দিলেন, ‘এটি যে সে চা নয়, এই চায়ের গাছে ইচ্ছে করলেই আর হাত দেওয়া যাবে না, এই চা গাছ এখন থেকে সংরক্ষিত’। সেই থেকে সেই বিশেষ চায়ের কথা সবখানে রাষ্ট্র হয়ে গেল। সবাই ধন্য ধন্য করে তার নাম রাখল ডা হং পাও চা। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘লাল আলখাল্লার চা’। 

এখনো পর্বতের গায়ে এক দুর্গম অংশে মাত্র ছয়টি মাতৃ গাছ টিকে আছে শত শত বছর ধরে। 

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন ১৯৭২ সালে মাও যে দং বা মাও সেতুং এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে চীনের প্রধান তাঁকে ২০০ গ্রাম ‘লাল আলখাল্লার চা’ উপহার দেন বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে।

২০০৫ সালে শেষ বারের মতো সেই মাতৃ গাছ থেকে মাত্র ২০ গ্রাম চা সংগ্রহ করে নিলামে তোরা হয়। দাম ওঠে ত্রিশ হাজার ডলার অর্থাৎ প্রায় ২৮ লাখ টাকা! 

চীনারা আর সবার মতো চা শুধু পানীয় হিসেবে নয়, খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। তবে তা শাক পাতার মতো করে নয়। খানিকটা ভিন্ন উপায়ে। আমাদের দেশে যেমন রাস্তাঘাট-স্টেশন-লঞ্চে গরম ডিম বিক্রি হয়, চীনেও আছে তেমন ব্যবস্থা। 

চা-ডিম। ডিম-চায়ের রেসিপি
প্রথম ডিম পানিতে সেদ্ধ করে নিন। মোটামুটি ভালো সেদ্ধ হলে ডিমটি শক্ত কিছুর ওপর আস্তে আস্তে ঠুকে খোসায় চিড় ধরান। কিন্তু ছাড়িয়ে নেবেন না। খোসাওয়ালা ডিম পানিতে নিয়ে সেখানে চা, দারুচিনি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর স্টার এনিস দিন। দিনভর জ্বাল দিয়ে শক্ত করে ফেলার পরে খোসা ছড়িয়ে মুখে দিলেই আপনি পাবেন চীনের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ডিম চায়ের স্বাদ। 

তথ্যসূত্র
1.Tea War: A history of capitalism in China and India by Andrew B. Liu (Yale University Press 2020) 
2. Curry: A tale of cooks and conquerors by Lizzie Cullingham (Vintage books, 2006) 
3. Tea: A Global History by Helen Saberi (Reaktion books, 2010) 

লেখক: প্রযুক্তিবিদ, ইনফিনিয়াম ইউকে লিমিটেড, অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত