Ajker Patrika

দুর্ভিক্ষ নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রীর এত উদ্বেগ?

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১১: ০৩
দুর্ভিক্ষ নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রীর এত উদ্বেগ?

প্রধানমন্ত্রী এ জন্যই বারবার সতর্ক করছেন যে সবাই যেন ধান-চাল, শাকসবজি উৎপাদনে মনোযোগী হয়। এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। সবাই যদি নিজ নিজ খালি জায়গায় ধান-চাল, শাকসবজি, ফলমূলের আবাদ করে, তাহলে আমদানিনির্ভরতা কমবে।

দুর্ভিক্ষ আসছে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উদ্বেগের সঙ্গেই এ রকম কথা বলছেন। তিনি সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে এসেছেন। ভ্রমণের সময় বিশ্বের বহু নেতা ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরাই নাকি তাঁকে আসছে ২০২৩ সালে মন্দা ও দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এডিবি, আঙ্কটাডসহ বিশ্বখ্যাত গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও দাতাসংস্থাগুলোর পূর্বাভাস তুলে ধরেও খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা বলছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন বারবার একই রকম সতর্কতামূলক বার্তা দিচ্ছেন? তাঁর বক্তব্য কতটা উদ্বেগের? আসলেই কি দুর্ভিক্ষ আসছে? খাদ্যসংকট কতটা তীব্র হবে? বিশ্বমন্দা হলে বা খাদ্যসংকট হলে তা বাংলাদেশকেই বা কতটা ভোগাবে? এসব প্রশ্নের জবাব কী?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য এবং উদ্বেগের বিষয়টি একটু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করে দেখা যেতে পারে যে আসলেই বাংলাদেশ কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে। আদৌ ঝুঁকি আছে কি না? আমার মনে হয়, তিনি বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্যপণ্যের ঘাটতি, জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, অস্বাভাবিকভাবে ডলারের দর বাড়ার ফলে দেশে যে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন; এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে এর প্রভাব কেমন হতে পারে, তারও একটা হোমওয়ার্ক করেছেন।

তারই আলোকে তিনি বারবার মানুষকে সতর্ক করছেন এবং সময় থাকতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। আমি মনে করি, এটা খুবই ইতিবাচক যে প্রধানমন্ত্রী এটা নিয়ে আগেভাগেই ভেবেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব সংকটের আভাসের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা আগাম সতর্ক হতে দেখেছি। সবশেষ যদি কোভিড-১৯ আঘাত করার সময়টাতে ফিরে যাই আমরা দেখব, কোভিডের আঘাতের ফলে অর্থনীতি যাতে বসে না যায়, সে জন্য তিনি ত্বরিত পদক্ষেপ নিয়ে কয়েক লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। তৈরি পোশাক রপ্তানিসহ শিল্পোৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, কৃষি উৎপাদন যাতে স্বাভাবিক থাকে, সে জন্য বেশ কিছু সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ফলে আমরা দেখেছি, কোভিডের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বাংলাদেশ ততটা আক্রান্ত হয়নি। ফসল উৎপাদন স্বাভাবিক থাকায় খাদ্যসংকট হয়নি।

তবে করোনা কিছুটা সহনীয় হয়ে আসার পর বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহব্যবস্থায় ব্যাপক টান পড়ে। দেশে দেশে চাহিদা বাড়তে থাকায় পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়ে। এতে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনব্যবস্থা ব্যয়বহুল হতে থাকে। এতে আকস্মিকই ঘি ঢালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর নেতিবাচক ধাক্কা লাগে। বাংলাদেশও এর নিরপরাধ শিকারে পরিণত হয়। মাত্র ১৩ মাসে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উঠে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে আসে ৩৬ বিলিয়ন ডলারে। এটা ক্রমেই কমছে। বলা যায় পুরো ঝুঁকিতে রিজার্ভ।

ডলার আয়ের সবচেয়ে বড় খাত রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। গত মাসে দুটোই কমেছে। কমার ধারা বন্ধ হচ্ছে না; বরং বেগবান হচ্ছে দিন দিন। কারণ, নানান কড়াকড়িতে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে আনা গেলেও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে দায় শোধের হার বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলারের দরও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকায় কম আমদানি করেও বেশি ডলার খরচ করতে হচ্ছে।

এখন ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দার আঁচ লাগতে শুরু করেছে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোতে। মূল্যস্ফীতির পারদ নামাতে দেশে দেশে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। এতে ঋণ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধি কমে আসছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এরই মধ্যে নীতি সুদ বাড়তে থাকায়, সামনে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস জানিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির গতি স্থবির হলে, মন্দা গভীর হলে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতিই বেশি আক্রান্ত হবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ওপরে ধাক্কা আসবে। দেশগুলোর অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বাংলাদেশের প্রবাসীদের আয় কমবে, অনেকে মজুরি হারাবে। ফলে তা রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ আরও সংকুচিত হবে। তখন রিজার্ভ তো বাড়বেই না; বরং আরও কমবে।

একদিকে রিজার্ভে টান পড়বে, অন্যদিকে বিশ্ববাজার থেকে বেশি ডলার খরচ করে জ্বালানি তেলসহ খাদ্যপণ্য আমদানি করতে গেলে, এর দায় শোধ করতে গিয়ে রিজার্ভ আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। তখন রপ্তানি কমলে, প্রবাসী আয় ঠিকমতো না এলে, শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হলে, সেবা খাতে স্থবিরতা দেখা দিলে, বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে—এর পুরো আঘাত পড়বে মানুষের আয় ও কর্মসংস্থানে। এমনিতেই সীমিত আয়ের মানুষ উচ্চমূল্যস্ফীতির চড়া মাশুল গুনতে গুনতে বিপন্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে মন্দা আর দুর্ভিক্ষের প্রভাব পড়লে, তখন সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কেমন জটিল আকার ধারণ করবে, এটা সহজেই অনুমেয়। 
বিশ্ববাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে রিজার্ভ যাতে আরও নাজুক পরিস্থিতির দিকে না যায়, অর্থনীতি যাতে সচল থাকে, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের গতিধারা যাতে স্বাভাবিক থাকে, এরই মধ্যে নেওয়া বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ যাতে যথাসময়ে মজুত ডলার দিয়ে পরিশোধ করা যায়—এসব কারণেই প্রধানমন্ত্রী সতর্কতামূলক বার্তা জারি রেখেছেন। দুর্ভিক্ষ আর মন্দার ধাক্কা এলেও যাতে করোনা মোকাবিলার মতো তা সামলে ওঠা যায়, এ জন্যই তিনি সবাইকে খরচ কমানো, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো এবং সঞ্চয়ী হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন।

সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ধান, সবজি, মাছ, মাংস, খাদ্য উৎপাদনে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে–এটা আমরা জানি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ধানের কাঙ্ক্ষিত ফলন হয়নি। শুল্ক কমিয়েও চাল আমদানি করা যাচ্ছে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বোরোতে ১৩ লাখ ও আউশে সাড়ে ৬ লাখ টন কম উৎপাদন হয়েছে এবং আমনে প্রায় ১০ লাখ টন উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, সাড়ে ৬ লাখ টন বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংগ্রহ করা গেছে পৌনে ৩ লাখ টনের মতো। তার মানে ধান-চালের উৎপাদন ও মজুত পরিস্থিতি খুব স্বস্তিদায়ক অবস্থায় নেই। এরই মধ্যে সরকার নিজেও কয়েক লাখ টন চাল আমদানির কার্যাদেশ দিয়েছে। বেসরকারি খাতেও এরই মধ্যে ১০ লাখ টন আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। অথচ সবশেষ ১ লাখ টনের মতো আমদানি হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ জন্যই বারবার সতর্ক করছেন যে সবাই যেন ধান-চাল, শাকসবজি উৎপাদনে মনোযোগী হয়। এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। সবাই যদি নিজ নিজ খালি জায়গায় ধান-চাল, শাকসবজি, ফলমূলের আবাদ করে, তাহলে আমদানিনির্ভরতা কমবে। মানুষ নিজের চাহিদা নিজের উৎপাদিত ফসল দিয়েই পূরণ করতে পারবে।

ফলে আমদানির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। এতে দুটি লাভ হবে। প্রথমত, বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করে ডলার খরচ করতে হবে না। অন্যদিকে, আমদানি কমে যাওয়ার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা যাবে; যা দিয়ে জ্বালানি তেল, অপরিহার্য শিল্পের কাঁচামালসহ আপৎকালীন জরুরি আমদানি দায় এবং বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ করা যাবে।

এরই মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ও ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভোজ্যতেলের উৎপাদন বাড়িয়ে এর আমদানি অর্ধেক কমিয়ে আনতে চায়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমবে। এরই মধ্যে পেঁয়াজের স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর ফলে আমদানিনির্ভরতা কমেছে। মাছের উৎপাদন সন্তোষজনক।

শাকসবজি, পোলট্রি, দেশি ফলমূলও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উৎপাদন হচ্ছে। এটাকে বেগবান করলে এ খাতে স্বয়ম্ভরতা আসবে, তাতে আমদানিতে খরচের প্রয়োজন হবে না।

সুতরাং, বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মন্দা ও দুর্ভিক্ষের আভাস দিয়েছেন, আমি মনে করি এটা যথার্থ।

এখন দরকার প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতামূলক বার্তাটি গ্রহণ করে আগাম প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া; বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও বিশ্বখ্যাত গবেষণা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের আলোকে সরকারের দপ্তরগুলোর এখনই হোমওয়ার্ক করা দরকার। কীভাবে কৃষি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানিনির্ভরতা কমানো যায়, তার কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রয়োজনে কৃষককে সার ও কৃষি উপকরণে ভর্তুকি দেওয়া, কৃষিঋণ সহজ করা, প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া, এসএমই শিল্পকে আরও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, ব্যবসা ও শিল্প খাত যাতে বসে না যায়, অর্থনীতিতে চাহিদা ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা, মানুষের আয় যাতে সংকুচিত না হয়, সে জন্য বেসরকারি খাতকে চাঙা রাখার কর্মসূচি নেওয়া, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতিশীল করে কাজের ক্ষেত্র উন্মুক্ত রাখা, অভ্যন্তরীণ ব্যয় মেটাতে সরকারের আয় বাড়ানোর পথ সুগম করা, বিশেষ করে কর ফাঁকি কমিয়ে, সক্ষম করদাতাদের করজালের মধ্যে এনে রাজস্ব আয় বেগবান করাসহ মোটাদাগে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করণীয়, এখনই এসবের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।

না হলে প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তার সুফল মিলবে না। পরিণামে সবাইকে সামনে বিশ্বমন্দা ও দুর্ভিক্ষের জন্য চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।

লেখক: ফারুক মেহেদী, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত