ড. মইনুল ইসলাম

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই চারজন হলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আরও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পারফরম্যান্সও প্রশ্নবোধক।
তাঁদের নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির তাণ্ডব সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কারও কারও গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আমদানি এলসি খোলা জোরেশোরে শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী তা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, শুধু হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি-প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি-প্রক্রিয়া আবার চাঙা হওয়া। ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা। রিজার্ভের পতনের ধারাকে আমি ২০২২ সালের এপ্রিলে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ইঙ্গিত করে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করেছিলেন। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে আসলে কারা ‘অর্বাচীন’। ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা মোতাবেক ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই ঘোষণা গ্রহণযোগ্য মনে করে না। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ‘রিফাইন্যান্সিং স্কিমের’ অধীনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে, সেটাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে আইএমএফ। সাম্প্রতিক সফরকালে আরও কয়েকটি ব্যাপারে আইএমএফের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। তার মানে, বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্টোবরের শেষে ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। এ রকম পতনের ধারা বিপজ্জনক।
আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এর জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজি পাচার-প্রক্রিয়া। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, গত চার মাসে কেউ এই সুবিধা নেয়নি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’-এর প্রস্তাব করেছেন, সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সঙ্গে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)।
সরকার স্বীকার না করলেও ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৫ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজি পাচার দমন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজন মনে করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ নেতৃত্ব পরিবর্তনেও দ্বিধা করা চলবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কয়েকজন আমলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ একনেকে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দ্বিধায় ভুগছেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে! দেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছে যে বর্তমান অর্থমন্ত্রী চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ নন। অতএব, অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বের পরিবর্তনে কালক্ষেপণ সংকটকে শুধুই দীর্ঘায়িত করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকেও বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অদক্ষ আখ্যায়িত করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একসময়ের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর তুলনায় টিপু মুনশির পারফরম্যান্স একেবারেই অনুজ্জ্বল বলা চলে; বিশেষ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনকে সঠিকভাবে ব্যবহারে টিপু মুনশির ব্যর্থতাকে অক্ষম্য বললে ভুল হবে না। একেক সময় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট একেক আইটেমকে টার্গেট করে পরিকল্পিত যোগসাজশের মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজিতে মেতে উঠছে, মন্ত্রী এহেন যোগসাজশকে কঠোরভাবে দমন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি গেড়ে বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, ডলারের বৈদেশিক মানের বেলাগাম বৃদ্ধি এবং টাকার বৈদেশিক মানের দ্রুত অবচয়নের অভিঘাতে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন এই বৈশ্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারকে ম্যানিপুলেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে সজাগ থাকা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং জোরদার রাখা। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মাঝে মাঝে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপদে পড়েন, ক্ষমতাসীন মহলকেও বিব্রত করেন। সম্প্রতি ভারতের প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি কূটনীতির নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেছেন। শেখ হাসিনা যে এই মন্তব্যের জন্য তাঁর ওপর রুষ্ট হয়েছেন, সেটা বোঝা গেছে তাঁর ভারত সফরের টিম থেকে ড. মোমেনকে বাদ দেওয়ার ঘটনায়। ড. মোমেন ভবিষ্যতে আরও সাবধান থাকবেন, আশা করি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও তাঁর কার্যকলাপ ও উচ্চারণে প্রায়ই প্রতিমন্ত্রীসুলভ আচরণের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন।
যেহেতু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ড. তৌফিক-ই-এলাহী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী বক্তব্যগুলো তাঁর কাছ থেকেই আসার কথা।
(সম্প্রতি তিনিও দিনে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলে সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছেন)! ওই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্বভার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন, তাই প্রকৃত নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাও তাঁর ওপর ন্যস্ত রয়েছে বোঝা যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে যে তীব্র বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির সংকট শুরু হয়েছে, তার জন্য আমদানি করা এলএনজিনির্ভর সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে বলা যায়, নসরুল হামিদ জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতো টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। চলমান সংকট সফলভাবে মোকাবিলার জন্য এই দায়িত্বে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করাই সমীচীন মনে করি।

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই চারজন হলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আরও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পারফরম্যান্সও প্রশ্নবোধক।
তাঁদের নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির তাণ্ডব সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কারও কারও গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আমদানি এলসি খোলা জোরেশোরে শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী তা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, শুধু হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি-প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি-প্রক্রিয়া আবার চাঙা হওয়া। ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা। রিজার্ভের পতনের ধারাকে আমি ২০২২ সালের এপ্রিলে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ইঙ্গিত করে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করেছিলেন। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে আসলে কারা ‘অর্বাচীন’। ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা মোতাবেক ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই ঘোষণা গ্রহণযোগ্য মনে করে না। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ‘রিফাইন্যান্সিং স্কিমের’ অধীনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে, সেটাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে আইএমএফ। সাম্প্রতিক সফরকালে আরও কয়েকটি ব্যাপারে আইএমএফের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। তার মানে, বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্টোবরের শেষে ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। এ রকম পতনের ধারা বিপজ্জনক।
আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এর জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজি পাচার-প্রক্রিয়া। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, গত চার মাসে কেউ এই সুবিধা নেয়নি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’-এর প্রস্তাব করেছেন, সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সঙ্গে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)।
সরকার স্বীকার না করলেও ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৫ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজি পাচার দমন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজন মনে করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ নেতৃত্ব পরিবর্তনেও দ্বিধা করা চলবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কয়েকজন আমলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ একনেকে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দ্বিধায় ভুগছেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে! দেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছে যে বর্তমান অর্থমন্ত্রী চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ নন। অতএব, অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বের পরিবর্তনে কালক্ষেপণ সংকটকে শুধুই দীর্ঘায়িত করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকেও বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অদক্ষ আখ্যায়িত করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একসময়ের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর তুলনায় টিপু মুনশির পারফরম্যান্স একেবারেই অনুজ্জ্বল বলা চলে; বিশেষ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনকে সঠিকভাবে ব্যবহারে টিপু মুনশির ব্যর্থতাকে অক্ষম্য বললে ভুল হবে না। একেক সময় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট একেক আইটেমকে টার্গেট করে পরিকল্পিত যোগসাজশের মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজিতে মেতে উঠছে, মন্ত্রী এহেন যোগসাজশকে কঠোরভাবে দমন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি গেড়ে বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, ডলারের বৈদেশিক মানের বেলাগাম বৃদ্ধি এবং টাকার বৈদেশিক মানের দ্রুত অবচয়নের অভিঘাতে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন এই বৈশ্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারকে ম্যানিপুলেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে সজাগ থাকা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং জোরদার রাখা। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মাঝে মাঝে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপদে পড়েন, ক্ষমতাসীন মহলকেও বিব্রত করেন। সম্প্রতি ভারতের প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি কূটনীতির নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেছেন। শেখ হাসিনা যে এই মন্তব্যের জন্য তাঁর ওপর রুষ্ট হয়েছেন, সেটা বোঝা গেছে তাঁর ভারত সফরের টিম থেকে ড. মোমেনকে বাদ দেওয়ার ঘটনায়। ড. মোমেন ভবিষ্যতে আরও সাবধান থাকবেন, আশা করি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও তাঁর কার্যকলাপ ও উচ্চারণে প্রায়ই প্রতিমন্ত্রীসুলভ আচরণের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন।
যেহেতু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ড. তৌফিক-ই-এলাহী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী বক্তব্যগুলো তাঁর কাছ থেকেই আসার কথা।
(সম্প্রতি তিনিও দিনে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলে সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছেন)! ওই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্বভার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন, তাই প্রকৃত নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাও তাঁর ওপর ন্যস্ত রয়েছে বোঝা যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে যে তীব্র বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির সংকট শুরু হয়েছে, তার জন্য আমদানি করা এলএনজিনির্ভর সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে বলা যায়, নসরুল হামিদ জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতো টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। চলমান সংকট সফলভাবে মোকাবিলার জন্য এই দায়িত্বে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করাই সমীচীন মনে করি।
ড. মইনুল ইসলাম

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই চারজন হলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আরও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পারফরম্যান্সও প্রশ্নবোধক।
তাঁদের নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির তাণ্ডব সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কারও কারও গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আমদানি এলসি খোলা জোরেশোরে শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী তা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, শুধু হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি-প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি-প্রক্রিয়া আবার চাঙা হওয়া। ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা। রিজার্ভের পতনের ধারাকে আমি ২০২২ সালের এপ্রিলে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ইঙ্গিত করে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করেছিলেন। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে আসলে কারা ‘অর্বাচীন’। ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা মোতাবেক ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই ঘোষণা গ্রহণযোগ্য মনে করে না। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ‘রিফাইন্যান্সিং স্কিমের’ অধীনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে, সেটাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে আইএমএফ। সাম্প্রতিক সফরকালে আরও কয়েকটি ব্যাপারে আইএমএফের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। তার মানে, বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্টোবরের শেষে ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। এ রকম পতনের ধারা বিপজ্জনক।
আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এর জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজি পাচার-প্রক্রিয়া। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, গত চার মাসে কেউ এই সুবিধা নেয়নি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’-এর প্রস্তাব করেছেন, সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সঙ্গে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)।
সরকার স্বীকার না করলেও ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৫ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজি পাচার দমন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজন মনে করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ নেতৃত্ব পরিবর্তনেও দ্বিধা করা চলবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কয়েকজন আমলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ একনেকে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দ্বিধায় ভুগছেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে! দেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছে যে বর্তমান অর্থমন্ত্রী চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ নন। অতএব, অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বের পরিবর্তনে কালক্ষেপণ সংকটকে শুধুই দীর্ঘায়িত করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকেও বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অদক্ষ আখ্যায়িত করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একসময়ের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর তুলনায় টিপু মুনশির পারফরম্যান্স একেবারেই অনুজ্জ্বল বলা চলে; বিশেষ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনকে সঠিকভাবে ব্যবহারে টিপু মুনশির ব্যর্থতাকে অক্ষম্য বললে ভুল হবে না। একেক সময় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট একেক আইটেমকে টার্গেট করে পরিকল্পিত যোগসাজশের মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজিতে মেতে উঠছে, মন্ত্রী এহেন যোগসাজশকে কঠোরভাবে দমন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি গেড়ে বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, ডলারের বৈদেশিক মানের বেলাগাম বৃদ্ধি এবং টাকার বৈদেশিক মানের দ্রুত অবচয়নের অভিঘাতে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন এই বৈশ্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারকে ম্যানিপুলেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে সজাগ থাকা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং জোরদার রাখা। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মাঝে মাঝে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপদে পড়েন, ক্ষমতাসীন মহলকেও বিব্রত করেন। সম্প্রতি ভারতের প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি কূটনীতির নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেছেন। শেখ হাসিনা যে এই মন্তব্যের জন্য তাঁর ওপর রুষ্ট হয়েছেন, সেটা বোঝা গেছে তাঁর ভারত সফরের টিম থেকে ড. মোমেনকে বাদ দেওয়ার ঘটনায়। ড. মোমেন ভবিষ্যতে আরও সাবধান থাকবেন, আশা করি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও তাঁর কার্যকলাপ ও উচ্চারণে প্রায়ই প্রতিমন্ত্রীসুলভ আচরণের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন।
যেহেতু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ড. তৌফিক-ই-এলাহী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী বক্তব্যগুলো তাঁর কাছ থেকেই আসার কথা।
(সম্প্রতি তিনিও দিনে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলে সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছেন)! ওই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্বভার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন, তাই প্রকৃত নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাও তাঁর ওপর ন্যস্ত রয়েছে বোঝা যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে যে তীব্র বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির সংকট শুরু হয়েছে, তার জন্য আমদানি করা এলএনজিনির্ভর সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে বলা যায়, নসরুল হামিদ জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতো টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। চলমান সংকট সফলভাবে মোকাবিলার জন্য এই দায়িত্বে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করাই সমীচীন মনে করি।

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই চারজন হলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আরও কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পারফরম্যান্সও প্রশ্নবোধক।
তাঁদের নাম উল্লেখ না করেও বলা যায়, অবিলম্বে মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনা এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির তাণ্ডব সাধারণ জনগণের জীবনকে বিপর্যস্ত করছে। বৈশ্বিক সংকটের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কারও কারও গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে অর্থনীতির বেহাল অবস্থা হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্ট থেকে আমদানি এলসি খোলা জোরেশোরে শুরু হলেও অর্থমন্ত্রী তা ধর্তব্যের মধ্যেই আনেননি। আমদানি নিয়ন্ত্রণের কোনো রকম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, শুধু হুন্ডি-প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বর্তমানে বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আমদানির ওভার ইনভয়েসিং, রপ্তানির আন্ডার ইনভয়েসিং এবং রপ্তানি আয় দেশে ফেরত না আনার মতো মূল সমস্যাগুলো যোগ করলে দেখা যাবে প্রতিবছর কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। এর মানে বাংলাদেশ থেকে বছরে কমপক্ষে ১৫-১৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি এখন বিদেশে পাচার হয়ে যায়, যার অর্ধেকের মতো পাচার হচ্ছে হুন্ডি-প্রক্রিয়ার বেলাগাম বিস্তারের মাধ্যমে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২০২০-২১ অর্থবছরের ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৫ শতাংশ কমে ২১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যার প্রধান কারণ ওই বছর হুন্ডি-প্রক্রিয়া আবার চাঙা হওয়া। ফলে ২০২১ সালের আগস্ট মাস থেকে শুরু হয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারা। রিজার্ভের পতনের ধারাকে আমি ২০২২ সালের এপ্রিলে বিপজ্জনক আখ্যায়িত করায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ইঙ্গিত করে ‘অর্বাচীন’ বলে গালমন্দ করেছিলেন। এখন প্রমাণিত হয়ে গেছে আসলে কারা ‘অর্বাচীন’। ২০২২ সালের অক্টোবরে রিজার্ভ কমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণা মোতাবেক ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এই ঘোষণা গ্রহণযোগ্য মনে করে না। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল বা এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের আদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক যে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ‘রিফাইন্যান্সিং স্কিমের’ অধীনে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের প্রভাবশালী রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দিয়েছে, সেটাকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে আইএমএফ। সাম্প্রতিক সফরকালে আরও কয়েকটি ব্যাপারে আইএমএফের পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ টিম। তার মানে, বাংলাদেশের প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অক্টোবরের শেষে ২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের পাওনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে। এ রকম পতনের ধারা বিপজ্জনক।
আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যে টালমাটাল অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে, এর জন্য প্রধানত দায়ী পুঁজি পাচার-প্রক্রিয়া। তাই পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত আনতে চাইলে মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে তা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে, গত চার মাসে কেউ এই সুবিধা নেয়নি। (বর্তমান বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য যে ‘টোটকা দাওয়াই’-এর প্রস্তাব করেছেন, সেগুলোকে আমি দেশের জনগণের সঙ্গে ‘মশকরা’ আখ্যায়িত করেছি। আমি বলেছি, তিনি পুরো ব্যাপারটাকে লঘু করার জন্য এই প্রহসনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। বছরের শেষে দেখা যাবে ফলাফল শূন্য)।
সরকার স্বীকার না করলেও ওয়াকিবহাল মহল ঠিকই বুঝতে পেরেছে যে গত এক বছরে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার বৈদেশিক মান প্রায় ২৫ শতাংশ অবচয়নের শিকার হয়েছে। এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর তুলনায় এই অবচয়ন সর্বোচ্চ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনের ধারাকে থামাতে না পারলে ডলারের কার্ব মার্কেটের দামের উল্লম্ফন এবং টাকার বৈদেশিক মানের এই দ্রুত অবচয়নকে থামানো যাবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন পুঁজি পাচারের বিরুদ্ধে সরকারের বিশ্বাসযোগ্য কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সময় থাকতে কঠোরভাবে পুঁজি পাচার দমন করতে হবে। এমনকি প্রয়োজন মনে করলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ নেতৃত্ব পরিবর্তনেও দ্বিধা করা চলবে না।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে ‘অ্যাবসেন্ট ফিন্যান্স মিনিস্টার’ আখ্যায়িত করেছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে কয়েকজন আমলা দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ একনেকে অর্থমন্ত্রী প্রায়ই উপস্থিত থাকেন না। অর্থনীতির বর্তমান সংকট সম্পর্কেও অর্থমন্ত্রী তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দ্বিধায় ভুগছেন তাঁর অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে! দেশের জনগণের মধ্যে একটা সাধারণ ধারণা গড়ে উঠেছে যে বর্তমান অর্থমন্ত্রী চলমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট দক্ষ নন। অতএব, অবিলম্বে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বের পরিবর্তনে কালক্ষেপণ সংকটকে শুধুই দীর্ঘায়িত করবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকেও বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অদক্ষ আখ্যায়িত করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। একসময়ের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাজার ব্যবস্থাপনায় অনেক বেশি সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর তুলনায় টিপু মুনশির পারফরম্যান্স একেবারেই অনুজ্জ্বল বলা চলে; বিশেষ করে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশনকে সঠিকভাবে ব্যবহারে টিপু মুনশির ব্যর্থতাকে অক্ষম্য বললে ভুল হবে না। একেক সময় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট একেক আইটেমকে টার্গেট করে পরিকল্পিত যোগসাজশের মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজিতে মেতে উঠছে, মন্ত্রী এহেন যোগসাজশকে কঠোরভাবে দমন করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি গেড়ে বসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে, ডলারের বৈদেশিক মানের বেলাগাম বৃদ্ধি এবং টাকার বৈদেশিক মানের দ্রুত অবচয়নের অভিঘাতে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যেন এই বৈশ্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন আমদানি করা পণ্যের বাজারকে ম্যানিপুলেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোরভাবে সজাগ থাকা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং জোরদার রাখা। বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মাঝে মাঝে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপদে পড়েন, ক্ষমতাসীন মহলকেও বিব্রত করেন। সম্প্রতি ভারতের প্রতি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি কূটনীতির নিয়মকানুন লঙ্ঘন করেছেন। শেখ হাসিনা যে এই মন্তব্যের জন্য তাঁর ওপর রুষ্ট হয়েছেন, সেটা বোঝা গেছে তাঁর ভারত সফরের টিম থেকে ড. মোমেনকে বাদ দেওয়ার ঘটনায়। ড. মোমেন ভবিষ্যতে আরও সাবধান থাকবেন, আশা করি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও তাঁর কার্যকলাপ ও উচ্চারণে প্রায়ই প্রতিমন্ত্রীসুলভ আচরণের সীমা লঙ্ঘন করে থাকেন।
যেহেতু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ড. তৌফিক-ই-এলাহী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন, তাই মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী বক্তব্যগুলো তাঁর কাছ থেকেই আসার কথা।
(সম্প্রতি তিনিও দিনে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলে সবার কাছে হাস্যাস্পদ হয়েছেন)! ওই মন্ত্রণালয়টির দায়িত্বভার যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন, তাই প্রকৃত নীতিনির্ধারণের ক্ষমতাও তাঁর ওপর ন্যস্ত রয়েছে বোঝা যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেশে যে তীব্র বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানির সংকট শুরু হয়েছে, তার জন্য আমদানি করা এলএনজিনির্ভর সরকারের ভুল নীতিকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সব মিলিয়ে বলা যায়, নসরুল হামিদ জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের মতো টেকনিক্যাল বিষয়াদি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী একটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। চলমান সংকট সফলভাবে মোকাবিলার জন্য এই দায়িত্বে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের কাউকে মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করাই সমীচীন মনে করি।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
০৫ নভেম্বর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
০৫ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
০৫ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

পুঁজি পাচারকে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকারে নিয়ে আসতেই হবে। সরকারকে মেনে নিতেই হবে যে পুঁজি পাচার বর্তমান পর্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কি আদৌ তা করছেন?
০৫ নভেম্বর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫