Ajker Patrika

বাজেটে চরের কৃষকের জন্য চাই আলাদা বরাদ্দ

শাইখ সিরাজ
বাজেটে চরের কৃষকের জন্য চাই আলাদা বরাদ্দ

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ৪০ বছর বাংলাদেশের কৃষি নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয়েছে, এই সময়ে এসে কৃষি দারুণ অগ্রসর হয়েছে। কিন্তু মূল স্রোত থেকে অনেক পিছিয়ে আছেন আমাদের চরের কৃষকেরা। তাঁদের মূল স্রোতের সঙ্গে একীভূত করতে না পারলে টেকসই উন্নয়নযাত্রা সফল হবে না।

অসংখ্য নদ-নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার বড় একটি অংশ চরভূমি হিসেবে পরিচিত। যার বেশির ভাগই মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে অল্প কিছুসংখ্যক চর এখন মূলভূমির সঙ্গেও যুক্ত। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ চরভূমি। দেশের প্রায় ৩২টি জেলার ১০০ উপজেলার অংশবিশেষ জুড়ে বিস্তৃত এই চরাঞ্চল। মূলভূমির সঙ্গে যুক্ত চর, দ্বীপচর, উপকূলীয় চর, অস্থায়ী চর—সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস এখন এসব চর এলাকায়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ-ঝুঁকির দেশ হিসেবে পরিগণিত। তীব্র নদীভাঙন, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করে চরের মানুষ বেঁচে থাকে। প্রতিবছর গড়ে ৫০ হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়ে। নদীবাহিত এ দেশের চরাঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠী এই দুর্যোগের প্রথম ও প্রধান শিকার।

মনে পড়ছে ২০০৪ সালের নভেম্বরে গিয়েছিলাম সিরাজগঞ্জের কাওয়াখোলার চরে। যমুনা পাড়ি দিয়ে অনেকটাই ভেতরে। যেতে যেতে যমুনার শাখা নদীগুলোর ভাঙন লক্ষ করছিলাম। উঁচু উঁচু বালুর পাড়গুলো যেভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তাতে হাজারো মানুষের বাড়িঘর, জমিজিরাত, সাজানো সংসার নিমেষেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। ট্রলার থামিয়ে দক্ষিণ কাওয়াখোলার চরে নামলাম। নদীভাঙনের প্রবণতা সেখানে তখন অনেক বেশি ছিল। পুরুষেরা ঘরবাড়ি খুলে নেওয়ার কাজে ব্যস্ত। প্রতিবেদনের জন্য তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েও ব্যর্থ হলাম। দম ফেলার ফুরসত নেই। খানিকটা এগিয়ে যেতেই লক্ষ করলাম, এক গৃহিণী তখনো পাকসাক করে যাচ্ছেন। দুটো চিত্রই বিপরীতমুখী। তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নদীর ভাঙন তো আপনাদের উঠোনে চলে এসেছে, আপনি এখনো খাবার পাকাচ্ছেন?’

এমন এক অদ্ভুত উত্তর দিলেন তিনি, যার জন্য আমি বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না। বললেন, ‘এ তো পত্তেকদিনই ভাঙে, যেমন পত্তেকদিনই খাবার খাওয়া লাগে।দূরে গিয়ে আবার ঘর বানব, আবার ভাঙব, আবার ঘর তুইলব, এই যমুনার সাথে যুদ্ধ কইরা টিকা আছি।’

আমি কাছে গিয়ে বসতে চাইলে আমাকে নিজের পিঁড়িটি এগিয়ে দিলেন। বসতে বিব্রত হলাম। ভাঙন এতই কাছাকাছি, যেকোনো মুহূর্তে তাঁর পাকের ঘরটুকুকে গ্রাস করবে। কিন্তু তিনি এত স্বাভাবিক আচরণ করছেন, দেখে বিস্মিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। ইতস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চাচি, এযাবৎ কয়বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছেন?’

উত্তরে বললেন, ‘গুনি নাইরে বাপ! ৬০-৭০ বার তো অইবই।’

পাশে ঘরের বেড়া খুলছিলেন তাঁর স্বামী। বলে উঠলেন, ‘কী কও! ১০০ বার তো অইবই ঘর ভাঙছে।’

এমন সময় উঠোনে দুজন পুরুষ এসে পৌঁছালেন, ঘরের মালসামাল নেওয়ার জন্য।

গৃহিণী তাঁদের বললেন, ‘সবাই খাইয়া নেও, মালসামাল সব পরে নিয়াম এক লগে।’

আমাদের উদ্দেশ করে বললেন, ‘আইসেন, আমাগরে সাথে বইয়েন।’

আমি তখন সাক্ষাৎকার ধারণ করছি। আমাদের সেই সময়ের চ্যানেল আইয়ের বার্তা সম্পাদক শাহ আলমগীর পাশে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। সেবার আলমগীরের খুব ইচ্ছা হয়েছিল আমার সঙ্গে আউটডোর ট্যুর করার।

আমাদের এই কার্যকলাপ, চরের মানুষদের জীবনের চিত্র কোনোটার সঙ্গেই আলমগীর পরিচিত ছিলেন না। সাক্ষাৎকার শেষে বিস্ময়ভরে আলমগীর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ কী দেখলাম, কী শুনলাম সিরাজ ভাই? একটা পরিবার নদীর ভাঙনে পড়ে ১০০ বার!’

২০০৪ সালের ধারণ করা প্রতিবেদন এটি। সেই থেকে চরের উন্নয়নের জন্য আমার অনুষ্ঠানে জোর তাগিদ দিতে শুরু করলাম।

কি কাছের, কি দূরের—কোনো চরেই বিন্দুমাত্র নাগরিক সুবিধা নেই। শিক্ষা আর স্বাস্থ্যব্যবস্থার কথা অনেক চরের মানুষ শোনেইনি। অসুস্থ হলে দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়েই মৃত্যু ঘটে অনেকের। হাড় জিরজিরে পুষ্টিহীন জনসংখ্যা, খাদ্যাভাব যাদের নিত্যসঙ্গী। সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, কোনো বিভাগের অস্তিত্ব নেই যেখানে, দুর্গম বলে এনজিওরাও যায় না। বালুকাময় চরগুলোতে দু-চারটা বাদাম আর সামান্য আলুই তাদের সম্বল। নতুন ফসলের, নতুন প্রযুক্তির বিন্দুমাত্র ছোঁয়াও লাগেনি।

ধু ধু মরুভূমির মতো লাগে দেখতে। হাঁটতে হাঁটতে কাওয়াখোলা গঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছালাম। পাশের জমিতে কয়েকজন কৃষক কাজ করছেন। তাঁদের দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করছেন?’

‘কিচ্ছুই অয় না, সামান্য বাদাম লাগাইছি, তুলতে আছি।’

আরও কাছে গেলাম, সদ্য তোলা বাদামের কয়টা গাছ হাতে নিয়ে শিকড়ের সঙ্গে ঝুলে থাকা গুটিকয়েক বাদাম দেখে প্রশ্ন করলাম, ‘এত কম কেন?’

বললেন, ‘ও বালো (ভালো) বীজ নাই, তাই অয়-টয় না।’

একটা বাদাম ভেঙে তার ভেতরের বীজ বের করে বললাম, ‘আপনারাও কাছে আসেন, দেখেন মাত্র ছোট ছোট দুটো বিচি। এখনকার বাদাম অনেক বড় হয়।

একটার ভেতরে বড় বড় তিন-চারটা দানাও থাকে। সেগুলোর চাষ করতে পারেন না?’

বললেন, ‘আপনারা তো কৃষি অফিসার, আমাগোরে ভালো বীজ দেন, আমরাও করমু।’

জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনাদের এখানে কৃষি অফিস আছে? কৃষি বিভাগের লোকজন আসে?’

একজন বলে উঠলেন, ‘ও নামও হুনি নাই কোনো দিন!’

কাজ শেষ করে যখন সিরাজগঞ্জের দিকে ফিরলাম, তখন পড়ন্ত বিকেল। সবাই মোটামুটি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। আলমগীরকে সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি ফেরদৌস রবিন জিজ্ঞেস করলেন, ‘বস, কেমন লাগল ট্যুর?’ আলমগীর অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে উত্তর দিলেন, ‘মানুষের জীবনের এই দিকটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। এ আমার জন্য বড় একটা অভিজ্ঞতা।’

ক্যামেরাম্যান শহিদুল্লাহ টিটন মাঝে মাঝে নদীর দৃশ্য ধারণ করছেন। সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ডোবার পথে। ট্রলারের শব্দ ছাড়া নেই কোনো কোলাহল। পাশ দিয়ে চলে যাওয়া যাত্রীবোঝাই ট্রলারের শব্দে তন্দ্রা কাটে। আমরা ছয়জন যে যার মতো চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি, চরের মানুষগুলোর জীবন এতটাই সঙিন! আর আমি মনে মনে পণ করছি, চর নিয়ে আমার কাজ করা এই শুরু। এখন থেকে আমার অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনার, লেখালেখি, সব জায়গাতেই চরের উন্নতির জন্য কথা বলব।

সেই থেকে চেষ্টা করে আসছি চরের কৃষকের কথা তুলে ধরার। এ ছাড়া চরের মানুষের সার্বিক মানোন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ফলে চরের মানুষের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ধু ধু বালুর চরে এখন উন্নতমানের ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, বাদামসহ নানা রকমের তরকারির চাষ হচ্ছে, যার সু-প্রভাব দেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। চর এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার আরও অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। সেই লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে চরের মানুষের মানোন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা প্রদানের জন্য খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা এবং তা বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর আমার ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’-এর আয়োজনে চরের কৃষকদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা ছিল। এ ক্ষেত্রে আমাদের গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করেছে উন্নয়ন সংস্থা এমফরসি (মেকিং মার্কেটস ওয়ার্ক ফর দ্য চর)। কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটে কৃষকদের যে দাবিগুলো উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো: 

১. চরের মানুষের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন করা যেতে পারে (যেমন চর বোর্ড বা ফাউন্ডেশন)। চরের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে একটি যুগোপযোগী জাতীয় চর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে পার্বত্য এলাকাবহির্ভূত ১৬ উপজেলাকে হাওর, দ্বীপ ও চর উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করে, গেজেট জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে চরাঞ্চলের মাত্র তিনটি উপজেলা সরকারি বিশেষ সুযোগ-সুবিধার আওতায় এসেছে। চরাঞ্চলের ইউনিয়নগুলো প্রশাসনিক ইউনিট বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী তালিকা প্রণয়ন করা হলে তা অধিক কার্যকর হবে।

২. চরের কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড বিতরণে বিশেষ কোটা সংরক্ষণ করা যেতে পারে। চরে কৃষি প্রযুক্তির প্রসার ও আধুনিকীকরণে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান ও প্রকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৩. চরাঞ্চলের জন্য উন্নত ও সহনশীল বীজ উৎপাদন, কৃষক পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণসহ কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ, বাজারজাতকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিপণন ও সংরক্ষণ (হিমাগার ও শস্যগুদাম ঋণ) ব্যবস্থাকরণ প্রয়োজন।

৪. দুর্যোগসহনশীল জীবিকায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. দুর্গম চরে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর (নারীকে অগ্রাধিকার দিয়ে) অধিক কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন ধরনের সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।

৬. চরের খাস বা পতিত জমি স্বল্প-দীর্ঘ মেয়াদের ভিত্তিতে স্থানীয় চরবাসীর মাঝে বন্দোবস্ত দেওয়া যেতে পারে। চরের সাধারণ সম্পদ (চরের বালু, জমি, গাছ) ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।

৭. চরের প্রযুক্তিগত সেবা বৃদ্ধি এবং এবিষয়ক দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প গঠন করতে হবে।

৮. দুর্গম চরাঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে জোন বা এলাকাভিত্তিক আধুনিক বিশেষায়িত ক্লিনিক স্থাপন বা ইউনিয়নভিত্তিক স্বাস্থ্য অবকাঠামোতে পর্যাপ্ত লোকবল ও বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

৯. চরের নারী ও শিশুদের পুষ্টির অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে।

১০. চরের শিশুদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও প্রবীণদের বিনোদনের ব্যবস্থা এবং তাঁদের অভিজ্ঞতাপ্রসূত জ্ঞান কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া।

বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে চরের মানুষদের মূলস্রোতে আনতে পারলেই বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ। 

লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত