Ajker Patrika

দুর্গম দ্বীপে ভারতের ‘হংকং প্রজেক্ট’, ঝুঁকিতে আদিবাসীদের জীবন

ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে প্রস্তাবিত বন্দরের থ্রি ডি মডেল দেখানো হয়েছে। ছবি: ইন্ডিয়ান শিপিং মিনিস্ট্রি
ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে প্রস্তাবিত বন্দরের থ্রি ডি মডেল দেখানো হয়েছে। ছবি: ইন্ডিয়ান শিপিং মিনিস্ট্রি

‘অরণ্য আমাদের সুপারমার্কেট। আমরা এই দ্বীপপুঞ্জের অরণ্য থেকে প্রায় সবকিছু পাই। এর ওপরই বেঁচে আছি আমরা।’ বলেন অ্যানিস জাস্টিন।

এই নৃবিজ্ঞানী ভারতের পূর্ব উপকূলের অদূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বড় হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এই অঞ্চলটি ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হলো অঞ্চলটির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এক অনন্য দ্বীপগুচ্ছ, যা আন্দামান দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।

এখন মি. জাস্টিন উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন, ভারত গ্রেট নিকোবর দ্বীপে একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের ‘হংকং-এর মতো’ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। দ্বীপটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম বৃহৎ এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা। ৭২ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পটি ১৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোতাশ্রয়, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি বিমানবন্দর এবং একটি নতুন শহর। ভারত মহাসাগর এবং সুয়েজ খালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটের সঙ্গে এলাকাটিকে সংযুক্ত করার জন্য পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জাহাজ চলাচলের পথগুলোর একটি মালাক্কা প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত এলাকায় হাতে নেওয়া কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পর্যটন বাড়ানোর সুযোগ করে দেবে। সরকারের ধারণা অনুযায়ী, প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর লাগবে এবং তখন এই দ্বীপে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বসবাস করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলির অংশ।

কিন্তু এটি দ্বীপবাসীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই মানুষেরা তাদের জমি, সংস্কৃতি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন পদ্ধতি হারানোর ভয় পাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই প্রকল্প তাদের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং ঝুঁকিতে থাকা কিছু জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, যার মধ্যে পাঁচটি গোষ্ঠীকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এদের মধ্যে রয়েছে জারাওয়া, নর্থ সেন্টিনেলিজ, গ্রেট আন্দামানিজ, ওংগে এবং শোম্পেন। জারাওয়া এবং নর্থ সেন্টিনেলিজরা বাইরের জগতের সঙ্গে সংস্পর্শহীন থাকলেও, গ্রেট নিকোবর দ্বীপের শোম্পেন গোষ্ঠী বাইরের চাপের কারণে তাদের জীবনধারা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর ৪০০-র মতো সদস্য টিকে আছে এখন।

শোম্পেন জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই গভীর অরণ্যে বসবাস করে এবং তাদের জীবিকাও অরণ্যনির্ভর। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, কারণ এদের খুব কমসংখ্যকই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

‘তাদের জন্য এটা বড় ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতের কারণ হবে,’ বলেন মি. জাস্টিন, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করছেন।

‘বাইরের পৃথিবীর যেটিকে আমরা উন্নয়ন বলি, সেটি তাদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রয়েছে।’ বলেন তিনি।

এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকল্পের কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

৯২১ বর্গকিলোমিটার (৩৫৫ দশমিক ৬ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গ্রেট নিকোবর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল চিরসবুজ বনে আচ্ছাদিত, যা এক হাজার ৮০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী এবং ৮০০ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় এবং অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

গ্রেট নিকোবর দ্বীপে শোম্পেন জনজাতির সদস্যরা একটি নদীর মধ্য দিয়ে হাঁটছে। ছবি: আর্কিওলজিকেল সার্ভে অব ইন্ডিয়া
গ্রেট নিকোবর দ্বীপে শোম্পেন জনজাতির সদস্যরা একটি নদীর মধ্য দিয়ে হাঁটছে। ছবি: আর্কিওলজিকেল সার্ভে অব ইন্ডিয়া

পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, প্রকল্পটির জন্য দ্বীপের মোট এলাকার মাত্র ১৩০ বর্গকিলোমিটার বা ১৪ শতাংশ পরিষ্কার করা হবে, কিন্তু তবুও এতে প্রায় ৯ লাখ ৬৪,০০০ গাছ কাটতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

‘সরকার সব সময় দাবি করে যে অরণ্যের কেবল একটি অংশ পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু আপনি যে পরিকাঠামো তৈরি করছেন, তা আরও দূষণ সৃষ্টি করবে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করবে।’ বলেন পরিবেশবিদ মাধব গাড়গিল।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।

তবে পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব গত আগস্টে বলেছিলেন, এই প্রকল্পে ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে বিরক্ত বা স্থানান্তর করবে না’ এবং ‘কঠোর পরিবেশগত মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা’ গ্রহণের পরই এটি অনুমোদন পেয়েছে।

তবুও, সবাই এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নয়।

এ বছরের শুরুর দিকে, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ৩৯ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছিলেন যে এই উন্নয়ন প্রকল্প শোম্পেন জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘মৃত্যুদণ্ড’ হয়ে উঠতে পারে, কারণ এটি তাদের বাসস্থান ধ্বংস করবে।

এই আশঙ্কা মি. জাস্টিনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শোম্পেন জনগোষ্ঠীর শিল্পবিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জ্ঞান বা উপায় নেই।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই জনগোষ্ঠীও হয়তো নিকোবারিজদের মতো ভাগ্যের শিকার হতে পারে। নিকোবারিজরা দ্বীপের সবচেয়ে বড় জনজাতি এবং ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের ভয়াবহ সুনামির সময় তাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে তারা বাস্তুচ্যুত হয়।

বছরের পর বছর ধরে সরকার তাদের অন্য অঞ্চলে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছে, তবে সেটিও একটি মূল্য দিয়ে এসেছে।

‘এখানকার বেশির ভাগ নিকোবারিজ এখন শ্রমিক এবং তাদের পূর্বপুরুষের জমির বদলে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছে,’ বলেন মি. জাস্টিন, ‘তাদের আর ফসল চাষ বা প্রাণী পালনের কোনো জায়গা নেই।’

এই প্রকল্পটি শোম্পেন জনগোষ্ঠীকে রোগের ঝুঁকিতেও ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ছবি: এএফপি
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ছবি: এএফপি

সংরক্ষণ সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ক্যালাম রাসেল বলেন, ‘বাইরের সংস্পর্শহীন জনগোষ্ঠীর ফ্লু বা হাম জাতীয় রোগের প্রতি খুব কম বা কোনো প্রতিরোধক্ষমতাই থাকে না, যা তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। সাধারণত সংস্পর্শের পরে তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ হারিয়ে যায়।’

এই প্রকল্পটি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গ্যালাথিয়া উপসাগরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অঞ্চলটি শত শত বছর ধরে বিশালাকার লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপের বাসা বাঁধার স্থান।

সামাজিক পরিবেশবিদ ড. মণীশ চান্ডি বলছেন, প্রকল্পটি নোনা পানির কুমির, দ্বীপের গুইসাপ, মাছ এবং পাখিদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব প্রজাতির বাসা বাঁধা ও প্রজননস্থল পরিবর্তন করা হবে না।

তবে ড. চান্ডি উল্লেখ করেছেন, এই এলাকায় আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে, যারা বড় সংখ্যায় এখানে বাসা বাঁধে। তিনি বলেন, ‘সরকার এমন স্থানে প্রবাল স্থানান্তরের প্রস্তাব করছে, যেখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। তবে অন্য প্রজাতিদের কী করা হবে?’

যদিও প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর সময় লাগবে। তবে এটি পরিবেশ এবং দ্বীপের আদিবাসী জনগণের জীবনের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের অপূরণীয় পরিবর্তন করে দেওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় অধিবাসীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফের বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত দিল্লি, ঢাকার বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতের মৌসুমে বাতাস থাকে শুষ্ক। বেড়ে যায় ধূলিকণার পরিমাণ। আর এ কারণে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে। আজ রোববার ঢাকার বায়ুমানের অবনতি হয়ে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় আছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তালিকায় দেখা যায়, বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২১৬, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক স্কোর ৪২৪, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো আফগানিস্তানের কাবুল (২৪৩), ভারতের কলকাতা (২১৪) ও পাকিস্তানের লাহোর (২০২)।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

শীতকালীন আবহাওয়ার ধরন, যানবাহন ও শিল্প থেকে অনিয়ন্ত্রিত নির্গমন, চলমান নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলো এবং আশপাশের ইটভাটাগুলো এই দূষণ সংকটের জন্য দায়ী।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাপমাত্রা কমবে কি না জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকায় আজ রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, যা গতকাল একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৫।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তীব্র শীতে বিপর্যস্ত দেশ কষ্টে খেটে খাওয়া মানুষ

  • গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে
  • শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ
  • গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পানের পরামর্শ চিকিৎসকদের
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪০
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাজের অপেক্ষায় বসে আছেন কয়েকজন শ্রমজীবী। ছবি: আজকের পত্রিকা

পৌষের প্রথম সপ্তাহে শীতের কামড় তেমন না থাকলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে সারা দেশে ঘন কুয়াশার সঙ্গে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তীব্র শীতে সারা দেশের জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম, মধ্যাঞ্চল থেকে রাজধানীসহ সবখানেই শীতের দাপট। বিশেষ করে দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীসহ নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। এ জেলার তাপমাত্রা নেমে আসে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

চলতি সপ্তাহের শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি সতর্কতা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের মধ্যে গত দুই দিন তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ফলে শীত ও কুয়াশার এই পরিস্থিতি আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে।’

এর আগে গত শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে।

তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের বেশির ভাগকেই খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়। যশোর শহরের বিভিন্ন শ্রমবাজারে প্রতিদিন যেখানে

৩০০-৪০০ মানুষ কাজের আশায় জড়ো হন, কাজকর্ম কম থাকায় সেখানে এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেকেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিক ও দিনমজুররা জানান, বেশি শীতের কারণে লোকজন ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ তেমন হাতে নেওয়া হচ্ছে না। এতে তাঁদের কাজ কমে গেছে। কিন্তু আয় কমলেও সংসারের ব্যয় তো কমছে না। এ চিত্র বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়।

বগুড়ায় গতকাল শনিবার মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে লোকজনের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘বগুড়ায় কয়েক দিন ধরেই শীতের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকেই জেলাজুড়ে ব্যাপক কুয়াশা এবং হিমেল বাতাস বয়ে গেছে। জেলায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়। এটিই এখন পর্যন্ত এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিন শীতের এমন তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।’

উত্তরের শেষ প্রান্ত, হিমালয়ের ঘেঁষা জেলা লালমনিরহাটে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। চরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় রুটিরুজি কমে গরিব মানুষ কষ্টে আছেন। সন্ধ্যার আগেই কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পুরো এলাকা।

লালমনিরহাটের সীমান্তে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সুবল চন্দ্র বলেন, রাজারহাট ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী চার বা পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

লালমনিরহাটের প্রধান সড়কে ভারী কুয়াশায় যানবাহন চলাচল খুব কমে গেছে। ট্রাকচালক জামাল উদ্দিন বলেন, দিনে হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়ি চালালেও সন্ধ্যার পরে কিছুই দেখা যায় না। ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও জ্বালানি খরচ আর সময় অনেক বেশি লাগছে।

তিস্তার চরাঞ্চলের গোবর্ধন গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ‘চরাঞ্চলে কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া অনেক বেশি। রাতে বিছানাও বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এক-দুইটা পাতলা কম্বলে শরীর গরম হচ্ছে না। ফলে রাতেও ঘুমাতে পারছি না।’

মধ্য উত্তরের জেলা গাইবান্ধার আশপাশের এলাকাগুলোতে শীত ও কুয়াশার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। শীত থেকে বাঁচতে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোনো কাপড়ের দোকানগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বেড়েছে।

কুয়াশার প্রভাব আকাশ, নৌ ও সড়কপথে

ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে নৌ এবং আকাশপথেও। রাজধানী ঢাকায়ও কুয়াশার তীব্রতা বেড়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়াশার কারণে গতকাল সকালে আটটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করতে না পারায় তাদের বিকল্প বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ রুটে ঘন কুয়াশার কারণে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বাড়তি সতর্কতার জন্য সাড়ে ১৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখী হাজারো মানুষ। পরে গতকাল শনিবার সকালে ফের চালু করা হয় ফেরি। ঘন কুয়াশায় জামালপুরে যমুনা নদীতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা আটকে থাকার পর বর-কনেসহ ৪৭ যাত্রীকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে।

বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

শীতের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। চিকিৎসকেরা যথাযথ গরম কাপড় ব্যবহার ও কুসুম গরম পানি পান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

বিভিন্ন জেলার প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানালেও জানা গেছে, অনেক এলাকায় তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিশেষ করে শিশুদের গরম কাপড় ও কম্বলের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ ভোগাচ্ছে ঘন কুয়াশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৮
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশের ব্যস্ত সড়কের ধারে জবুথবু হয়ে বসে আছেন নাছিমা। কোলে তাঁর ছোট্ট নবজাতক। পাতলা একটি কম্বল আর পুরোনো কাঁথা জোড়া দিয়ে কোনো-রকমে নিজের ও নবজাতকের শরীর ঢেকে রেখেছেন। কনকনে বাতাসে নবজাতকের ঠোঁট নীলচে হয়ে এসেছে।

নাছিমা বলেন, ‘শীতটা খুব কষ্ট দিতাছে। কাল থেইকা রাতে ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি না। বাচ্চাডারে নিয়া বেশি ভয় লাগতাছে। ঠান্ডা লাগলে কী করুম, সেই চিন্তাই মাথায় ঘোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে অসুস্থতার ঝুঁকি। অনেকে বলছেন, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা; পাশাপাশি থাকবে কুয়াশার প্রকোপ।

ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা বাড়তে থাকে। সোয়া ৭টার সময় নদী পথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।’

জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

গতকাল সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা গাইবান্ধা ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশুচিকিৎসক সোহেল বলেন, ‘শীতের মধ্যে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে; যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

জেলার বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডায় দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে।

যশোর প্রতিনিধি জানান, জেলায় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এদিনের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন ধরে কুয়াশা ও উত্তরের বাতাসে বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী বলেন, ‘শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। বাসায় মনে হচ্ছে, গায়ে সুই ফোটাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত