Ajker Patrika

দুর্গম দ্বীপে ভারতের ‘হংকং প্রজেক্ট’, ঝুঁকিতে আদিবাসীদের জীবন

ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে প্রস্তাবিত বন্দরের থ্রি ডি মডেল দেখানো হয়েছে। ছবি: ইন্ডিয়ান শিপিং মিনিস্ট্রি
ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশটে প্রস্তাবিত বন্দরের থ্রি ডি মডেল দেখানো হয়েছে। ছবি: ইন্ডিয়ান শিপিং মিনিস্ট্রি

‘অরণ্য আমাদের সুপারমার্কেট। আমরা এই দ্বীপপুঞ্জের অরণ্য থেকে প্রায় সবকিছু পাই। এর ওপরই বেঁচে আছি আমরা।’ বলেন অ্যানিস জাস্টিন।

এই নৃবিজ্ঞানী ভারতের পূর্ব উপকূলের অদূরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বড় হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এই অঞ্চলটি ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে মাত্র ৩৮টি জনবসতিপূর্ণ। নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হলো অঞ্চলটির দক্ষিণ অংশে অবস্থিত এক অনন্য দ্বীপগুচ্ছ, যা আন্দামান দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।

এখন মি. জাস্টিন উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন, ভারত গ্রেট নিকোবর দ্বীপে একটি বহু-বিলিয়ন ডলারের ‘হংকং-এর মতো’ উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে। দ্বীপটি নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম বৃহৎ এবং বিচ্ছিন্ন এলাকা। ৭২ হাজার কোটি রুপির এই প্রকল্পটি ১৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ট্রান্সশিপমেন্ট পোতাশ্রয়, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, একটি বিমানবন্দর এবং একটি নতুন শহর। ভারত মহাসাগর এবং সুয়েজ খালের গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক বাণিজ্য রুটের সঙ্গে এলাকাটিকে সংযুক্ত করার জন্য পরিকল্পনাটি নেওয়া হয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ত জাহাজ চলাচলের পথগুলোর একটি মালাক্কা প্রণালির কাছাকাছি অবস্থিত এলাকায় হাতে নেওয়া কার্যক্রম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং পর্যটন বাড়ানোর সুযোগ করে দেবে। সরকারের ধারণা অনুযায়ী, প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর লাগবে এবং তখন এই দ্বীপে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বসবাস করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই বহু-বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলা করতে ভারতের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলির অংশ।

কিন্তু এটি দ্বীপবাসীদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই মানুষেরা তাদের জমি, সংস্কৃতি এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন পদ্ধতি হারানোর ভয় পাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এই প্রকল্প তাদের অস্তিত্বকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন এবং ঝুঁকিতে থাকা কিছু জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল, যার মধ্যে পাঁচটি গোষ্ঠীকে ‘বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।

এদের মধ্যে রয়েছে জারাওয়া, নর্থ সেন্টিনেলিজ, গ্রেট আন্দামানিজ, ওংগে এবং শোম্পেন। জারাওয়া এবং নর্থ সেন্টিনেলিজরা বাইরের জগতের সঙ্গে সংস্পর্শহীন থাকলেও, গ্রেট নিকোবর দ্বীপের শোম্পেন গোষ্ঠী বাইরের চাপের কারণে তাদের জীবনধারা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যাযাবর জনগোষ্ঠীর ৪০০-র মতো সদস্য টিকে আছে এখন।

শোম্পেন জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই গভীর অরণ্যে বসবাস করে এবং তাদের জীবিকাও অরণ্যনির্ভর। তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায়নি, কারণ এদের খুব কমসংখ্যকই বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

‘তাদের জন্য এটা বড় ক্ষতি এবং মানসিক আঘাতের কারণ হবে,’ বলেন মি. জাস্টিন, যিনি ১৯৮৫ সাল থেকে দ্বীপটি নিয়ে গবেষণা করছেন।

‘বাইরের পৃথিবীর যেটিকে আমরা উন্নয়ন বলি, সেটি তাদের কাছে আকর্ষণীয় নয়। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা রয়েছে।’ বলেন তিনি।

এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, এই প্রকল্পের কারণে পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

৯২১ বর্গকিলোমিটার (৩৫৫ দশমিক ৬ বর্গমাইল) এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গ্রেট নিকোবর দ্বীপের প্রায় ৮০ শতাংশ অঞ্চল চিরসবুজ বনে আচ্ছাদিত, যা এক হাজার ৮০০ প্রজাতির বেশি প্রাণী এবং ৮০০ টিরও বেশি উদ্ভিদ প্রজাতির বাসস্থান। এদের মধ্যে অনেকেই স্থানীয় এবং অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।

গ্রেট নিকোবর দ্বীপে শোম্পেন জনজাতির সদস্যরা একটি নদীর মধ্য দিয়ে হাঁটছে। ছবি: আর্কিওলজিকেল সার্ভে অব ইন্ডিয়া
গ্রেট নিকোবর দ্বীপে শোম্পেন জনজাতির সদস্যরা একটি নদীর মধ্য দিয়ে হাঁটছে। ছবি: আর্কিওলজিকেল সার্ভে অব ইন্ডিয়া

পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, প্রকল্পটির জন্য দ্বীপের মোট এলাকার মাত্র ১৩০ বর্গকিলোমিটার বা ১৪ শতাংশ পরিষ্কার করা হবে, কিন্তু তবুও এতে প্রায় ৯ লাখ ৬৪,০০০ গাছ কাটতে হবে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।

‘সরকার সব সময় দাবি করে যে অরণ্যের কেবল একটি অংশ পরিষ্কার করা হবে। কিন্তু আপনি যে পরিকাঠামো তৈরি করছেন, তা আরও দূষণ সৃষ্টি করবে, যা পুরো বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করবে।’ বলেন পরিবেশবিদ মাধব গাড়গিল।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নের কোনো উত্তর দেয়নি।

তবে পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব গত আগস্টে বলেছিলেন, এই প্রকল্পে ‘কোনো জনগোষ্ঠীকে বিরক্ত বা স্থানান্তর করবে না’ এবং ‘কঠোর পরিবেশগত মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা’ গ্রহণের পরই এটি অনুমোদন পেয়েছে।

তবুও, সবাই এই আশ্বাসে সন্তুষ্ট নয়।

এ বছরের শুরুর দিকে, সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ৩৯ জন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে বলেছিলেন যে এই উন্নয়ন প্রকল্প শোম্পেন জনগোষ্ঠীর জন্য একটি ‘মৃত্যুদণ্ড’ হয়ে উঠতে পারে, কারণ এটি তাদের বাসস্থান ধ্বংস করবে।

এই আশঙ্কা মি. জাস্টিনকেও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, ‘শোম্পেন জনগোষ্ঠীর শিল্পবিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জ্ঞান বা উপায় নেই।’

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই জনগোষ্ঠীও হয়তো নিকোবারিজদের মতো ভাগ্যের শিকার হতে পারে। নিকোবারিজরা দ্বীপের সবচেয়ে বড় জনজাতি এবং ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের ভয়াবহ সুনামির সময় তাদের গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়, যার ফলে তারা বাস্তুচ্যুত হয়।

বছরের পর বছর ধরে সরকার তাদের অন্য অঞ্চলে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করেছে, তবে সেটিও একটি মূল্য দিয়ে এসেছে।

‘এখানকার বেশির ভাগ নিকোবারিজ এখন শ্রমিক এবং তাদের পূর্বপুরুষের জমির বদলে একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাস করছে,’ বলেন মি. জাস্টিন, ‘তাদের আর ফসল চাষ বা প্রাণী পালনের কোনো জায়গা নেই।’

এই প্রকল্পটি শোম্পেন জনগোষ্ঠীকে রোগের ঝুঁকিতেও ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ছবি: এএফপি
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ৮৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ছবি: এএফপি

সংরক্ষণ সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তা ক্যালাম রাসেল বলেন, ‘বাইরের সংস্পর্শহীন জনগোষ্ঠীর ফ্লু বা হাম জাতীয় রোগের প্রতি খুব কম বা কোনো প্রতিরোধক্ষমতাই থাকে না, যা তাদের ধ্বংস করে দিতে পারে। সাধারণত সংস্পর্শের পরে তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ হারিয়ে যায়।’

এই প্রকল্পটি দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত গ্যালাথিয়া উপসাগরে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। অঞ্চলটি শত শত বছর ধরে বিশালাকার লেদারব্যাক সামুদ্রিক কচ্ছপের বাসা বাঁধার স্থান।

সামাজিক পরিবেশবিদ ড. মণীশ চান্ডি বলছেন, প্রকল্পটি নোনা পানির কুমির, দ্বীপের গুইসাপ, মাছ এবং পাখিদের ওপরও প্রভাব ফেলবে।

সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব প্রজাতির বাসা বাঁধা ও প্রজননস্থল পরিবর্তন করা হবে না।

তবে ড. চান্ডি উল্লেখ করেছেন, এই এলাকায় আরও অনেক প্রজাতি রয়েছে, যারা বড় সংখ্যায় এখানে বাসা বাঁধে। তিনি বলেন, ‘সরকার এমন স্থানে প্রবাল স্থানান্তরের প্রস্তাব করছে, যেখানে তারা প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় না। তবে অন্য প্রজাতিদের কী করা হবে?’

যদিও প্রকল্পটি শেষ হতে ৩০ বছর সময় লাগবে। তবে এটি পরিবেশ এবং দ্বীপের আদিবাসী জনগণের জীবনের সূক্ষ্ম ভারসাম্যের অপূরণীয় পরিবর্তন করে দেওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় অধিবাসীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজ ঢাকার আবহাওয়া কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৬ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন: দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণে বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

  • ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও
  • অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে কোটি কোটি মানুষ
  • ক্ষতি হচ্ছে জিডিপির ১০ শতাংশের সমপরিমাণ
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ (আইজিপি-এইচএফ) অঞ্চলের প্রায় ১০০ কোটি মানুষ নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে শ্বাস নিচ্ছে। এতে বছরে এই অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। বায়ুদূষণের ফলে অঞ্চলটির অর্থনীতিতে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১০ শতাংশের সমপরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। এই দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও।

বিশ্বব্যাংকের ‘এ ব্রেথ অব চেঞ্জ: সলিউশনস ফর ক্লিনার এয়ার ইন দ্য ইন্দো-গেঞ্জেটিক প্লেইনস অ্যান্ড হিমালয়ান ফুটহিলস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির ঢাকা অফিস থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইজিপি-এইচএফ অঞ্চলে বায়ুদূষণ এখনো অন্যতম বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সমন্বিত ও বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিলে দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এতে একই সঙ্গে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুটোরই উন্নতি হবে।

গাঙ্গেয় সমভূমি ও হিমালয়ের পাদদেশ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও ভুটানের অংশবিশেষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের বায়ুদূষণের প্রধান পাঁচটি উৎস রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রান্না ও ঘর গরম করার কাজে লাকড়িজাতীয় কঠিন বস্তু ব্যবহার, শিল্পকারখানায় জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) ও বায়োম্যাসের ফিল্টার ছাড়া অদক্ষ ব্যবহার, অনুন্নত প্রযুক্তির ইঞ্জিনের যানবাহন চালানো, কৃষকদের খেতের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানো এবং রাসায়নিক সার ও গোবরের অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং গৃহস্থালি ও কারখানার বর্জ্য পোড়ানো।

দূষণ কমাতে কয়েকটি তুলনামূলকভাবে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য কৌশলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে। এগুলো হলো–বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না, শিল্পকারখানার বয়লার, ফার্নেস ও ইটভাটার আধুনিকায়ন, নন-মোটরাইজড ও বৈদ্যুতিক পরিবহনব্যবস্থার প্রসার, কৃষিবর্জ্য ও পশুবর্জ্যের উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য পৃথক্‌করণ ও পুনর্ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

প্রতিবেদনে নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার কৌশলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. দূষণের উৎসেই নির্গমন কমানোর ব্যবস্থা। ২. স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করে শিশু ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া। ৩. কার্যকর আইন, বাজারভিত্তিক প্রণোদনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা।

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ পরিবেশ অর্থনীতিবিদ মার্টিন হেগার বলেন, ‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করার সমাধানগুলো বাস্তবসম্মত ও কার্যকর। নীতিনির্ধারকদের জন্য এটি একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ দেয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার পরিবার, কৃষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারে আর্থিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক সুযোগ তৈরি করে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে ‘চারটি আই’ (ইংরেজি আদ্যক্ষর)—তথ্য, প্রণোদনা, প্রতিষ্ঠান এবং অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, পরিচ্ছন্ন বিকল্পে বিনিয়োগে প্রণোদনা, কার্যকর প্রতিষ্ঠান এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামো গড়ে তোলাই এই রূপান্তরের মূল চাবিকাঠি।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিবেশবিষয়ক প্র্যাকটিস ম্যানেজার অ্যান জিনেট গ্লাউবার বলেন, স্থানীয় থেকে আঞ্চলিক পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া নির্মল বায়ু অর্জন সম্ভব নয়। সরকারগুলো একসঙ্গে কাজ করলেই কেবল দূষণ কমানো, লাখো মানুষের জীবন রক্ষা এবং সবার জন্য নিরাপদ বায়ু নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার বাতাস সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, আজও দূষণে শীর্ষে দিল্লি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০২
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বেশ কিছুদিন ধরে দিল্লির বাতাসের অবস্থা দুর্যোগপূর্ণ। আজ বৃহস্পতিবার দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরটি। অন্যদিকে ঢাকার বায়ুমান আজ সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ১৯০। যা নির্দেশ করে ঢাকার বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশ কিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— কল্যাণপুর (২৬০), দক্ষিণ পল্লবী (২৫৬), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (১৯৬), গোড়ান (১৯৬) ও বেচারাম দেউরি (১৯০)।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দিল্লি। শহরটির একিউআই স্কোর ৩১০। যা এই শহরের বাতাসকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর (২৭০, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সারাজেভ (২২৭, খুব অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (২০১, খুব অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে মিসরের কায়রো (১৯৪, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বেড়েছে ঢাকার তাপমাত্রা, জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পৌষ মাসের তৃতীয় দিন আজ। শীতের মৌসুম চলে এলেও রাজধানী ঢাকায় বাড়ছে তাপমাত্রা। আজ বৃহস্পতিবার সকালের আবহাওয়া বুলেটিনে দেখা যায়, গতকালের তুলনায় আজ সকালে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। তবে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৫ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৬ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

আমি লজ্জিত, নিজেকে মাটিতে পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে—ফেসবুকে প্রেস সচিব

তাহলে কি বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার সম্পাদকের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ

গণমাধ্যমে হামলা ও ময়মনসিংহে নৃশংসতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না, সরকারের বিবৃতি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত