Ajker Patrika

ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে ২০২৩

ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হতে যাচ্ছে ২০২৩

বৈশ্বিক উষ্ণতা অতিক্রম করে গেছে গড় তাপমাত্রার সীমা। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, ২০২৩ সালের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দিনের তাপমাত্রাই সেটাকে ছাড়িয়ে গেছে বলে বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় এই পর্যায়ের নিচে বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে আটকে রাখার বিষয়টি এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। পরের বছরটি আরও বেশি গরম হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।

সেপ্টেম্বরের তাপমাত্রার রেকর্ডে বিশ্বব্যাপী চলতি বছরের ‘তাপমাত্রা চরমভাবাপন্ন’ বলে প্রমাণ মিলেছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের সর্বশেষ এই তথ্য তুলে ধরে ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের ড. মেলিসা ল্যাজেনবি বলেছেন, ‘এই লক্ষণ দেখাচ্ছে যে, আমরা এমন এক জায়গায় চলে গেছি যেখানে আগে কখনো যাইনি।’

২০১৫ সালে বৈশ্বিক নেতারা প্যারিসে সমবেত হয়ে সম্মত হয়েছিলেন যে, এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রার দীর্ঘমেয়াদি বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশ খানিকটা নিচে রাখা হবে। সে সঙ্গে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণের ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন তাঁরা। বর্তমান গড় তাপমাত্রা এবং ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্রাক-শিল্প যুগে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার পার্থক্যকে বিবেচনা করেই বানানো হয় এই সীমা।

প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন মানে একদিন কিংবা এক সপ্তাহের জন্য তাপমাত্রার রেকর্ড বৃদ্ধি নয় বরং, ২০-৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে প্রকাশ করে। দীর্ঘ মেয়াদে গড় উষ্ণতার পরিসংখ্যান বর্তমানে ১.১ থেকে রয়েছে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝখানে। কিন্তু আলাদা আলাদা দিনের ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রার বৃদ্ধি প্রায়ই ছাড়িয়ে যাচ্ছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা।

আধুনিক যুগে এমনটা ঘটেছিল একবারই, ২০১৫ সালে। সেবারই বৈশ্বিক নেতারা নড়েচড়ে বসে স্বাক্ষর করেন চুক্তি। তখন থেকে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও এই সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে বেশ কবারই। ২০১৬ সালে এল নিনোর শক্তিশালী প্রভাবে বিশ্ব প্রত্যক্ষ করে জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রার সীমা সে বছর অতিক্রান্ত হয় ৭৫ দিন।

২০২৩ সালে তাপমাত্রার সীমা অতিক্রমের রেকর্ড। ছবি: বিবিসিকিন্তু কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বিবিসি দেখায় যে, ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৮৬ দিনের তাপমাত্রা ছিল প্রাক-শিল্প যুগের গড় তাপমাত্রার চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। বছর শেষ হওয়ার অনেক আগেই ২০২৩ ভেঙে দিয়েছে ২০১৬ সালের রেকর্ড।

১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সীমা কতদিন ভেঙেছে তার সঠিক সংখ্যার ব্যাপারে কিছু অনিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ, সারা বিশ্বের তাপমাত্রা পরিমাপের ক্ষেত্রে সংখ্যাগত কিছু অসংগতি থাকতে পারে। তবে ২০২৩ যে এরই মধ্যে ২০১৬ সালকে পেছনে ফেলে দিয়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ আছে কমই। ড. মেলিসা ল্যাজেনবি বলেছেন, ‘আমরা প্রায়ই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অরিক্রম করে যাচ্ছি। আর এমনটা দীর্ঘ সময় জুড়েই হচ্ছে বলে বিষয়টি উদ্বেগজনক।’

তাপমাত্রার এই অসঙ্গতির কারণ হিসেবে আবার এল নিনো প্রভাবের কথা জানা গিয়েছে কয়েক দিন আগে। তবে ২০১৬ সালের চেয়ে এই প্রভাব এখন অনেকটাই কম। তবে এল নিনোর কারণে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগর থেকে তাপ নিঃসরিত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সঙ্গে এই বাড়তি তাপমাত্রা যোগ হওয়ায় ২০২৩ হচ্ছে প্রথম বছর যখন জুন এবং অক্টোবরের মধ্যে রেকর্ড করা হয়েছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রমের ঘটনা।

ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক এড হকিন্স বলেন, ‘উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মে এই প্রথম আমরা এমন ঘটনা দেখতে পাচ্ছি। এটা অস্বাভাবিক ও হতাশাজনক। আমি জানি, আমাদের অস্ট্রেলিয়ান সহকর্মীরা আসছে গ্রীষ্ম নিয়ে চিন্তিত। ভয়াবহ দাবানল, বিশেষ করে এল নিনোর কারণে পরিণতি কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে তাঁরা বিশেষভাবে চিন্তিত।’

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে দিনগুলোতে তাপমাত্রার পার্থক্য ছাড়িয়ে গেছে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা, তা প্রাক-শিল্প যুগের গড় তাপমাত্রা থেকে ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস অনুসারে, সামগ্রিকভাবে সেপ্টেম্বরের গড় তাপমাত্রা ছিল প্রাক-শিল্প যুগের চেয়ে ১.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ সকালে তাপমাত্রা ১৬.৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আকাশ আজ বুধবার ভোর থেকে ছিল হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে হাড়কাঁপানো শীত পড়েনি।

আজ সারা দিন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত