Ajker Patrika

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, যেসব সাবধানতা জরুরি

আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ১৮: ৪২
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা, যেসব সাবধানতা জরুরি

ঘূর্ণিঝড় মোখা তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোখায়। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এরই মধ্যে ৪ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিপথ নিয়ে যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এটি ১৪ মে রোববার প্রথম প্রহরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আশ্রয়কেন্দ্র ও মেডিকেল টিমের পাশাপাশি উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হচ্ছে

ঘূর্ণিঝড় শুরুর আগে এবং পরে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। সবাই ব্যক্তিগতভাবে এই সতর্কতাগুলো মেনে চলছে, অনেক ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়: 

ঘূর্ণিঝড়ের আগে করণীয়

  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেখে আতঙ্কিত হবেন না। মূল ধারার নিউজ পোর্টাল, টিভি অথবা এফএম রেডিওর খবর শুনুন। 
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। ডায়রিয়া, জ্বরের জন্য স্যালাইন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহে রাখুন। সম্ভব হলে ফার্স্ট এইড বক্স সঙ্গে রাখুন। 
  • রেলিংয়ের ওপর ফুলের টব, কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে রাখুন। যাতে ওপর থেকে নিচে পড়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়। খোলা জায়গায় কনস্ট্রাকশনের জিনিস রাখবেন না। বাসার পাশে নির্মাণাধীন ভবন থাকলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। 
  • চার্জার লাইট, টর্চ লাইট ও পাওয়ার ব্যাংকে চার্জ ফুল রাখুন। ফ্লোরে মাল্টিপ্লাগ রাখবেন না। কারণ পানি উঠলে বিপদ ঘটতে পারে। 
  • বাসা টিনশেড বা নিচতলায় হলে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পানিরোধক বাক্সে টেপ এবং পলিথিন পেঁচিয়ে কোমরের সঙ্গে বেঁধে রাখুন। 
  • বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার সময় চুলার আগুন নিভিয়ে যাবেন। 
  • অতিপ্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্যসামগ্রী যেমন—ডাল, চাল, দেশলাই, শুকনা কাঠ, পানি, ফিটকিরি, চিনি, নিয়মিত ব্যবহৃত ওষুধ, বইপত্র, ব্যান্ডেজ, তুলা, ওরস্যালাইন ইত্যাদি পানি নিরোধক পলিথিন ব্যাগে ভরে গর্তে রেখে ঢাকনা দিয়ে পুঁতে রাখুন। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনা খাবার সংগ্রহে রাখুন। 
  • নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের মেইন সুইচ বন্ধ রাখলে ভালো হয়। 
  • ঘূর্ণিঝড়ের আগাম সতর্কবার্তা সম্পর্কে নিজে খোঁজ রাখুন এবং অন্যকে সচেতন করুন। 
  • নিজে নিরাপদ আশ্রয়ে যাবেন এবং অন্যকে যেতে উদ্বুদ্ধ করুন। 
  • গরু-ছাগল নিকটস্থ উঁচু বাঁধে অথবা উঁচু স্থানে রাখুন। কোনো অবস্থায়ই গোয়ালঘরে বেঁধে রাখবেন না। কোনো উঁচু জায়গা না থাকলে ছেড়ে দিন। তারা নিজেরাই বাঁচার চেষ্টা করবে। 
  • ঝড়ের পূর্বাভাস পাওয়ার পর টিউবওয়েলের মাথা খুলে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে এবং টিউবওয়েলের খোলা মুখ পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে আটকে রাখতে হবে, যাতে ময়লা বা লবণাক্ত পানি টিউবওয়েলের মধ্যে প্রবেশ না করতে পারে। 

ঘূর্ণিঝড়ের সময় করণীয়

  • রাস্তায় থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়ে গেলে কাছাকাছি শপিং মল, মসজিদ, স্কুল বা যেকোনো পাকা ভবনে আশ্রয় নিন। কোনোভাবেই খোলা আকাশের নিচে থাকা যাবে না। 
  • জ্যামে পড়লে গাড়ির পাশে জায়গা রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন যেন বিপদের মুহূর্তে সহজে দরজা খুলে বেরোতে পারেন। 
  • বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মেইন লাইন অফ রাখুন। 
  • দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন যাতে বাইরে থেকে ময়লা বা ভারী কিছু উড়ে এসে আঘাত করতে না পারে। 
  • টিনশেড বাসা বা নিচু জায়গায় বাড়ি হলে যদি নিরাপদ মনে না হয়, নিরাপদ কোথাও আশ্রয় নিন। 
  • খবরের জন্য ফেসবুক বা ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি না করে ফোনে রেডিও শুনুন। কারণ ডেটা কানেকশন চালু রাখলে দ্রুত ব্যাটারি ফুরাবে, নেটওয়ার্কও বেশি ব্যস্ত থাকবে। 
  • কোনোভাবেই ট্যাপের পানি সরাসরি পান করবেন না। ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করুন। 
  • খুব বেশি জরুরি না হলে রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। কেননা গাছ বা বিদ্যুতের পিলার উপড়ে পড়তে পারে বা ভারী কিছু তীব্র গতিতে উড়ে এসে আঘাত করার মতো দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়া এ সময় প্রচুর বজ্রপাতও হয়। আবার বৈদ্যুতিক শক খাওয়ারও ভয় আছে। 
  • সংকেত অনুযায়ী জনসাধারণকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সহায়তা করুন। 
  • আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে সাধ্যমতো সহায়তা করুন। এ কারণে সবারই প্রাথমিক চিকিৎসার ধারণা থাকা উচিত। 
  • ফোনে কথা বলে নেটওয়ার্ক ব্যস্ত না রেখে এসএমএসের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করুন। 
  • উদ্ধারকাজে সহায়তা করুন। 

ঘূর্ণিঝড়ের পরে করণীয়

  • ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে এমন কোনো বাড়িতে আশ্রয় নেবেন না। 
  • ছিঁড়ে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে হাত দেবেন না। 
  • ক্ষতিগ্রস্তদের সাধ্য অনুযায়ী সহায়তা দিন। 
  • আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। 
  • রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলুন, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে। 
  • আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করুন। সাধ্যমতো মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিন। 
  • খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে কেউ আটকে পড়েছেন কি না খুঁজে দেখুন। 
  • ত্রাণের আশায় বসে না থেকে নিজেই উদ্যোগ নিন। অন্যদের সহযোগিতা নিন। 
  • ঝড় একটু কমলেই ঘর থেকে বের হবেন না। পরে আরও প্রবল বেগে অন্যদিক থেকে ঝড় আসার আশঙ্কা বেশি থাকে। 
  • পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করুন। বৃষ্টির পানি ধরে রাখুন। 
  • নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের আলাদা করে যত্ন নিন, তাঁদের ত্রাণের ব্যবস্থা করুন সবার আগে। 
  • দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসবজির মতো ফসল চাষের উদ্যোগ নিন। যাতে খুব কম সময়ের মধ্যে খাবারের সংকট কেটে যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে কাঁপছে সারা দেশ ভোগাচ্ছে ঘন কুয়াশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুয়াশা ও কনকনে শীতে কাবু উত্তরাঞ্চল। গতকাল গাইবান্ধায় খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা যায় অনেককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের পাশের ব্যস্ত সড়কের ধারে জবুথবু হয়ে বসে আছেন নাছিমা। কোলে তাঁর ছোট্ট নবজাতক। পাতলা একটি কম্বল আর পুরোনো কাঁথা জোড়া দিয়ে কোনো-রকমে নিজের ও নবজাতকের শরীর ঢেকে রেখেছেন। কনকনে বাতাসে নবজাতকের ঠোঁট নীলচে হয়ে এসেছে।

নাছিমা বলেন, ‘শীতটা খুব কষ্ট দিতাছে। কাল থেইকা রাতে ঠিকমতো ঘুমাইতে পারি না। বাচ্চাডারে নিয়া বেশি ভয় লাগতাছে। ঠান্ডা লাগলে কী করুম, সেই চিন্তাই মাথায় ঘোরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে অসুস্থতার ঝুঁকি। অনেকে বলছেন, জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (৫ দিন) পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আগামী কয়েক দিন সারা দেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা; পাশাপাশি থাকবে কুয়াশার প্রকোপ।

ফেরি চলাচল বন্ধ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশা বাড়তে থাকে। সোয়া ৭টার সময় নদী পথ অস্পষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে নৌ দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কুয়াশা কেটে গেলে ফেরি চলাচল শুরু হবে।’

জনজীবন বিপর্যস্ত

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলা পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পঞ্চগড়ের সড়ক ও জনপথ। কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

গতকাল সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ। ঘন কুয়াশার কারণে ভোর থেকে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, উত্তরের জেলা গাইবান্ধা ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের শিশুচিকিৎসক সোহেল বলেন, ‘শীতের মধ্যে বাড়ির শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। ঠান্ডা ও বাসি খাবার পরিহার করতে হবে।’

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, গতকাল সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে; যা মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

জেলার বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডায় দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে।

যশোর প্রতিনিধি জানান, জেলায় চলতি মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এদিনের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কয়েক দিন ধরে কুয়াশা ও উত্তরের বাতাসে বাড়িয়ে দিচ্ছে শীতের অনুভূতি।

যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী বলেন, ‘শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। বাসায় মনে হচ্ছে, গায়ে সুই ফোটাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতের প্রকোপ বাড়ছে: ৭ জেলায় ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ, থাকবে কত দিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৪
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশজুড়ে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। দেশের সাতটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহের কবলে সাত জেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি দেশের কোথাও কোথাও আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় দিনের বেলায়ও হাড়কাঁপানো ঠান্ডার অনুভূতি বজায় থাকবে।

ঘন কুয়াশার সতর্কতা পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোনো কোনো এলাকায় এই কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সম্ভাবনায় আগামী কয়েক দিন সারা দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে, তবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে। সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে ২৯ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভাগীয় শহরগুলোর তাপমাত্রা গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি, চট্টগ্রামে ১৫ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ১০ দশমিক ৪, রংপুরে ১১ দশমিক ২, খুলনায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি, বরিশালে ১২ দশমিক ৪ এবং সিলেটে ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা জানান, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

আগামী পাঁচ দিন আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা, সতর্ক থাকতে পারেন যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শীতজুড়ে ঢাকার বাতাসের দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে ঢাকা।

আইকিউএয়ারের সকাল ৮টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স স্কোর ২২৫। যা নির্দেশ করে, ঢাকার বাতাসের অবস্থা খুব অস্বাস্থ্যকর।

ঢাকার বেশকিছু স্থানের বাতাসের অবস্থা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর থেকে খুব অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে রয়েছে— দক্ষিণ পল্লবী (২৮৩), ইস্টার্ন হাউজিং (২৬০), বেজ এজওয়াটার আউটডোর (২৫১), কল্যাণপুর (২৫০) ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (২২২)।

তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা (২২৫, খুব অস্বাস্থ্যকর), তৃতীয় স্থানে ভারতের দিল্লি (১৯১, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর), চতুর্থ স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি (১৯০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর) এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে কুয়েতের কুয়েত সিটি (১৮০, সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর)।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশিমাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বাতাসের মূল ক্ষতিকারক উপাদান হলো ক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম ২.৫। এটি এতই সূক্ষ্ম যে তা ফুসফুসে, এমনকি রক্তপ্রবাহেও প্রবেশ করতে পারে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতিবছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘলা ঢাকার আকাশ, কুয়াশার দেখা মিলতে পারে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সকাল থেকে ঢাকার আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখা গেছে। সূর্যের দেখা মেলেনি এই সকালেও। কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে দেখা যায়, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয়েছে ৭৬ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাসে জানা যায়, আজ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকতে পারে।

অধিদপ্তর আরও বলছে, আজ দিনের তাপমাত্রায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে না।

এছাড়া বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, এ সময় উত্তর/উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

এদিকে গতকাল বুধবার ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত