Ajker Patrika

প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি 

আশিকুর রহমান সমী 
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৩৭
প্রাণিবৈচিত্র্য রক্ষায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি 

বাংলাদেশের আয়তন খুব বেশি না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। ইন্দোচায়না ও ইন্দোবার্মা নামক জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থানের কারণে এই প্রাচুর্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবসৃষ্ট কারণে এ দেশের বিভিন্ন বন্যপ্রাণী আজ হুমকির মুখে। 

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৫ সালে দেওয়া তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া হুমকির মুখে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী। তবে আমাদের প্রাণিবৈচিত্র্যের অনেক তথ্য এখনো আমাদের অজানা, বিশেষ করে অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের বেলায় এটি বেশি খাটে। ফলে জানার আগেই হারানোর পথে আছে কোনো কোনো প্রজাতি। 

বন্যপ্রাণীর জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সংকটগুলোর একটি আবাসস্থল নষ্ট হওয়া। প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন ধ্বংস করে গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা। তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাসস্থলের গুণগত মান। 

প্রজাতিভেদে প্রাণীদের বেঁচে থাকার চাহিদা, পরিবেশ, বাস্তুসংস্থানে খাপ খাওয়ানোর ধরন ভিন্ন। আর প্রতিবেশব্যবস্থার এই ভিন্নতা তৈরি করেছে জীববৈচিত্র্য। এই বৈচিত্র্যময়তায় এক প্রাণী আরেক প্রাণীর সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই বাস্তুতন্ত্র বিভিন্ন জৈব নিয়ামক নিয়ে গঠিত। এর কোনো একটিতে পরিবর্তন হলে আক্রান্ত হয় ওই পরিবেশকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা প্রাণীরা এবং পুরো বাস্তুতন্ত্র। 

আজ থেকে বছর দশেক আগেও চারপাশে যে জীববৈচিত্র্যের সমাহার ছিল, তা কি আজ আছে? বাড়ির পাশেও যে ঘন জঙ্গল ছিল, সেই জঙ্গল কি এখনো সবুজ? কিংবা ওই জঙ্গলকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা লতাগুল্মেরই বা কী অবস্থা? কিংবা জলাশয়গুলো, জলজ উদ্ভিদ, সবকিছু ঠিক আছে তো? 

প্রকৃতির এক অনন্য উপাদান ফড়িং। তারা জলাশয়ের সুস্থতা নির্দেশক প্রাণী। একটি পরিবেশ কতটা সুস্থ তা বোঝা যায় ফড়িংয়ের উপস্থিতি দেখে। মশাসহ ক্ষতিকর প্রাণী খেয়ে ফড়িং আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি এই শিকারি পতঙ্গ খায় ফসলের পোকা। যদি বলা হয় সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে কেন এত মশার প্রাদুর্ভাব, তাহলে বলতে হবে, ফড়িংয়ের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়া এতে ভূমিকা রেখেছে। 

নিজের করা এক গবেষণা থেকে জেনেছি, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের দিকে ঢাকা শহরে ৫০ প্রজাতির বেশি ফড়িং দেখা যেত। পাশাপাশি এসব ফড়িংয়ের সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। কিন্তু ক্রমাগত জলজ পরিবেশের দূষণ, জলাশয় ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে ফড়িং আজ হুমকির মুখে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, এই ফড়িংয়ের এখন টিকে থাকা প্রজাতির সংখ্যা ৩৭। এদের সংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ, যা মশাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়িয়েছে। ফলে বাড়ছে মশাবাহিত রোগ। সময় এখন জলাভূমিগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণের। না হলে ক্রমাগতই আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের ফড়িংদের। 

প্রজাপতি প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি হলেও দিনে দিনে এর সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে। প্রজাপতিবিদ শাওন চৌধুরীর গবেষণা অনুযায়ী পাঁচ বছর আগেও ঢাকা শহরে ১৩৭ প্রজাতির প্রজাপতি পাওয়া যেত। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই সংখ্যা এখন ৫০-৬০-এ এসে দাঁড়িয়েছে। শহর সবুজে ঘেরা পরিবেশ হারানোয় বিপদে আছে এখানে বাস করা পাখিরা। ছবি: লেখকবিজ্ঞানীরা মনে করেন এদের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রজাপতির দেশীয় পোষক উদ্ভিদের সংখ্যা কমে যাওয়া। বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এসব পোষক উদ্ভিদের সংখ্যা কমার বড় কারণ। এ ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন, পরিবেশদূষণ, কলকারখানার বিস্তার, বনভূমি উজাড় করে কৃষি সম্প্রসারণ, যানবাহনে অধিক চাপ, অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে প্রজাপতি সংখ্যা আজ হুমকির মুখে।

বিজ্ঞানীদের মতে, বেশ কিছু প্রজাপতি যেমন স্পটেড ব্ল্যাক ক্রো, কমন রেভেন, লেজার ব্যাটউইং, হোয়াইট টাইগারের মতো প্রজাপতির বিস্তৃতি দেশব্যাপী কমে গেছে। 

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা না করতে পারলে আমরা হারাব অসংখ্য প্রজাপতি, যা হুমকিস্বরূপ হবে আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে। 

ব্যাঙ প্রকৃতির এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। পরিবেশ, প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি, অর্থনীতিতে রয়েছে এই প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক মো. মাহাবুব আলম তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, একটি ব্যাঙ জীবনে ৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। কিন্তু এ দেশের জলাশয় ও জলজ পরিবেশ ক্রমশ ধ্বংসের পথে। প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশের গুণাগুণ হারিয়ে এখন দূষিত। পাশাপাশি ক্রমশ ভরাট হচ্ছে জলাশয়। জলাভূমি দূষণ, নগরায়ণ, ফসলের খেতে কীটনাশকের অধিক প্রয়োগসহ বিভিন্ন কারণে আবাসস্থলের সংকটে উভচর প্রাণীরা। এতে ক্রমেই কমছে কৃষকের নীরব বন্ধু এই প্রাণীর সংখ্যা। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মোখলেছুর রহমান, মো. ফজলে রাব্বিসহ একটি গবেষণা দলের গবেষণায় বাংলাদেশে কাইট্রিড নামক ছত্রাক এবং রানা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কাইট্রিডের উপস্থিতির গবেষণাপত্রটি ইকো হেলথ নামক আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই ছত্রাকঘটিত রোগের কারণে বিলুপ্তির সম্মুখীন হতে পারে আমাদের পরিবেশের পরম বন্ধু ব্যাঙ। 

অতি প্রাচীনকাল থেকে এ দেশের মানুষের মধ্যে আছে সরীসৃপজাতীয় প্রাণী, বিশেষ করে সাপের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাস, যা এখনো কাটেনি। দিন যত যাচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে মানুষ হাত বাড়াচ্ছে বনের দিকে। খাদ্যচাহিদা পূরণে অধিক ফসলের জন্য নতুন জমি, নতুন আবাসস্থল, স্থাপনা—সবকিছুই হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে। এতে তৈরি হচ্ছে মানুষ-সরীসৃপ সংঘাত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারা পড়ছে সাপ, কিছু ক্ষেত্রে মানুষ। মানুষের আবস্থলের আশপাশে ছয় প্রজাতির বিষধর সাপের বসবাস। কিন্তু মানুষ অজ্ঞতার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মারা পড়ে নির্বিষ সাপও। মারা যাচ্ছে পরিবেশের বন্ধু গুইসাপও। 

সম্প্রতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান এবং তার গবেষণা দলের গবেষণায় দেখা যায় ২০১৮-১৯ সালে আমাদের উত্তরবঙ্গে সাপ নিয়ে মানুষের ধারণায়ও এ তথ্য বের হয়ে আসে। ‘স্টুডেন্ট পারসেপশন অন স্নেইক ইন নর্থ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাটি ‘এশিয়ান জার্নাল অব এথনোবায়োলজি’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে। এতে জানা গেছে, ৫২ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ ক্ষতিকর প্রাণী, ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, সাপ মানুষকে আক্রমণ করে, ৯২ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজ এলাকায় সাপ মারতে দেখেছে, ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজেরাই সাপ মেরেছে আর ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সাপ মারার মাধ্যমে আনন্দ পায়। 

গবেষণা চলাকালে শিক্ষার্থীরা সাপ সম্পর্কে নানা ভ্রান্ত ধারণা উল্লেখ করে। তাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপের মণি আছে। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় সাপুড়ের বীনের তালে সাপ নাচে। সাপ দুধ খায় কি না—এই প্রশ্নে ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ দুধ খায়। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে, সাপ কোনো ধরনের তরল খাদ্য গ্রহণে অক্ষম। আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো, ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে সাপ প্রতিশোধ নিতে পারে। পাশাপাশি ওঝার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের থেকে। তাহলে এটা স্পষ্ট, শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেই বাংলাদেশে সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি হচ্ছে না। তাহলে বোঝাই যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ সাপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থেকে দূরে। 

প্রায়ই আসে তক্ষক বা কচ্ছপের পাচার ও আটকের সংবাদ। মানুষের ভ্রান্ত ধারণার কারণে তক্ষক প্রাণীটি এখন বিপন্ন। আর কচ্ছপের সংখ্যা তো কমতে কমতে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে এ দেশের ৩০ প্রজাতির মধ্যে ২২ প্রজাতির কচ্ছপ এখন বিপদাপন্ন প্রাণীর তালিকায়। 

গ্রাম হোক বা শহর, বর্তমানে ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে গাছপালার সংখ্যা। বুনো যে দেশজ গাছপালা ছিল, যে গাছগুলোর ফল বুনো পাখিরা খেত কিংবা আশ্রয়স্থল ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন হারিয়ে গেছে এবং যা অবশিষ্ট আছে, তা-ও বিলুপ্তির মুখে। সরাসরি অর্থনৈতিক অবদান না থাকায় নতুন করে গাছগুলো আর রোপিত হচ্ছে না। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গাছগুলোকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা পাখি। শহর এলাকায় এর মাত্রা মারাত্মক। 

বন্যপ্রাণীর মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য জায়গাজুড়ে অবস্থান করছে জলচর পাখি। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও অর্থনীতিতে এদের ভূমিকা অনন্য। কিন্তু তবু এসব পাখি সারা বছর, বিশেষ করে শীত মৌসুমে অবৈধভাবে শিকার হচ্ছে মানুষের হাতে। ফলে ক্রমেই কমে যাচ্ছে এসব পাখির সংখ্যা। বিশেষভাবে পরিযায়ী হাঁস, বগা-বগলা, শামুকখোল বা বড় বকজাতীয় পাখি শিকার হচ্ছে নিয়মিত। ফাঁদ, বিষটোপ ও বন্দুক ব্যবহার করে মারা হচ্ছে এসব পাখি। 

নিজের এক গবেষণা থেকেই জানতে পেরেছি, বাংলাদেশের গঙ্গা অববাহিকায় প্রত্যন্ত এলাকার পাখিরা ভালো নেই। অবৈধ শিকার, অনিয়মতান্ত্রিক পর্যটন, জলাশয় বা প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট, পাখি চোরাচালানে পাখিরা আজ বিপন্ন। পাখির গুরুত্ব এখনো সাধারণ মানুষের দুয়ারে তেমনভাবে পৌঁছায়নি। ফলে এখনো বিভিন্ন পাখিকে ক্ষতিকর মনে করে হত্যা করে মানুষ। ২০২৩ সালে যেমন ফসলের খেতের পাশের বাবুই পাখিদের ধরে হত্যা করা হয়েছিল। কারণ মানুষ ভেবেছিল এসব পাখিরা তাদের ফসলের একটা বড় অংশ খেয়ে ফেলে। অথচ তারা জানেনই না যে এসব পাখি তাদের ফসলকে ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে রক্ষা করে। ঠিক তেমনি হত্যার শিকার হচ্ছে জলাশয়ের আশপাশের বা জলাশয়ের মধ্যে থাকা পাখিরা। পাশাপাশি আবাসস্থলের গুণগত মান নষ্ট হওয়া, আবাসস্থলের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়া, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কারণে আজ পাখিরা বিপন্ন। 

বাংলাদেশের নগরগুলোতে আজ পাখিরা সব থেকে বেশি বিপন্ন। কারণ শহর হারাচ্ছে সবুজে ঘেরা পরিবেশ। আর পাখিরা হারাচ্ছে আবাসস্থল। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এ রকম কিছু তথ্য পেয়েছি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান এবং আমার নিজের গবেষণায়। ঢাকা শহরের পাখিরা আজ চরম হুমকির মুখে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের চারপাশের পাখিরা। যেখানে একসময় পাখির প্রজাতি সংখ্যা ছিল ১৩০ আজ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী নেমে এসেছে ৭৭-এ। 

এ দেশে একসময় মিঠাপানির শুশুকের দেখা খুব সহজে পাওয়া গেলেও এখন আর সহজে দেখা যায় না। জলাশয়গুলো ক্রমেই দূষিত হচ্ছে। আর নষ্ট হচ্ছে জলজ পরিবেশে। এখনো কোথাও কোথাও শুশুক ধরে বিক্রি হয়। আর বড় বড় নদীতে মাছের জালে আটকা পড়ে শুশুক। গত কয়েক বছরে সমুদ্রের পাড়ে মৃত তিমি বা ডলফিন ভেসে আসতে দেখা গেছে। কিন্তু এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা এখনো সম্ভব হয়নি।গবেষণায় দেখা গেছে একটি ব্যাঙ জীবনে ৫ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। ছবি: লেখকডাঙার সর্ববৃহৎ প্রাণী হাতির আবাস ছিল একসময় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম বিভাগের বড় বনগুলোতে। কিন্তু কালক্রমে এখন বইয়ের পাতায় ছবি হওয়ার অপেক্ষায়। গত দুই বছরে মৃত্যু হয়েছে ৩৪টি হাতির। যদিও মৃত্যু বললে ভুল হবে, আসলে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে এ দেশের মহাবিপন্ন এই প্রাণীকে। যদি গত পাঁচ বছরের হিসাব করা হয়, সংখ্যাটি ৭০-এর বেশি। আর ২০১৬ সালের আইইউসিএনের তথ্যমতে, হাতির সংখ্যা ২৬৮। এরপর এখন কতটি হাতি টিকে আছে তার সঠিক সংখ্যা অজানা। 

বর্তমানে শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও চট্টগ্রাম বিভাগের বনাঞ্চলে ও সীমান্তবর্তী এলাকায় দেখা মেলে বুনো হাতির। কিন্তু মানুষ বন উজাড় করছে, হাতির চলাচলের পথে কাটাতাঁর দিচ্ছে, পানির উৎস নষ্ট করছে, হাতির খাদ্যের উৎস নষ্ট করে ফসলের খেত তৈরি করছে, কিন্তু দোষটা দিচ্ছে হাতির ওপর। হাতিকে বৈদ্যুতিক শকসহ বিভিন্ন পন্থায় করা হচ্ছে হত্যা। হাতি-মানুষের এই দ্বন্দ্বে মারা যাচ্ছে অনেক হাতি। এভাবে আর কিছুকাল পরেই হয়তো প্রাণীটির জায়গা হবে শুধু জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, সাফারি পার্ক আর বইয়ে পাতায়। 

এমন একটি সপ্তাহ নেই যেখানে দু-একটি মেছো বিড়ালের মৃত্যুর খবর বা উদ্ধারের খবর না আসে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে এবং গণমাধ্যমে কিছু খবর সামনে এলেও বেশির ভাগ অজানা। অনেক ক্ষেত্রে নিশাচর এই প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায়। এ দেশের কোনো মহাসড়কই বন্যপ্রাণী পারাপারের উপযোগী করে গড়ে উঠছে না। ফলে প্রাণ যাচ্ছে উপকারী বন্যপ্রাণীর। সম্প্রতি একটি মর্মর বিড়াল সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে চট্টগ্রামে। অথচ এই প্রাণীকে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে মাত্র কয়েকবার দেখা গেছে এর আগে। 

এ ছাড়া এই প্রাণীগুলোর প্রতি মানুষের রয়েছে অহেতুক ভয়। যেমন—মেছো বিড়াল, চিতা বিড়ালকে বাঘের বাচ্চা মনে করা। আছে নানান ভুল ধারণা, যেমন—শিয়ালের চামড়ার বা মাংসের ঔষধি গুণ আছে, বিন্টুরং মৃত মানুষের কবর খুঁড়ে লাশ খায়। এ কারণে বছর দুয়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বিন্টুরং পিটিয়ে মারা হয়। এ ছাড়া মেছো বিড়ালকে বাঘ মনে করে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। মারা হচ্ছে চিতা বিড়ালকেও। বন্যায় শিয়ালের গর্ত পানিতে ডোবে। এ সময় প্রাণীগুলো আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের চারপাশে চলে আসে। আর মানুষ অমানবিকভাবে হত্যা করছে প্রাণীদের। 

২০২২ সালে প্রকাশিত আমার একটি গবেষণা অনুযায়ী কোভিড ১৯ মহামারি সময়ে ১২ প্রজাতির মাংসাশী স্তন্যপায়ীর মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে সব থেকে বেশি ছিল মেছো বিড়াল। ঘটনাগুলো বেশি ঘটেছে গ্রামীণ এলাকায়। 

শহর অঞ্চলের আশপাশে সাধারণত রেসার্স বানর, যশোরের হনুমানের বসবাস। কিন্তু নগরায়ণের ফলে কমেছে তাদের আবাসস্থল, দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক খাদ্যের সংকট। তাই উপায় না পেয়ে প্রাণীগুলো ক্ষুধা মেটাতে হানা দিচ্ছে মানব বসতিতে। যদিও মানুষই প্রাণীগুলোর আবাসস্থানে গড়ে তুলছে নিজেদের বাড়ি-ঘর। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হলো কাঁকড়াভুক বানর। বাকিরাও রয়েছে নানা সমস্যায় জর্জরিত। 

বিগত সময়ে বনখেকোদের অত্যাচারে বাংলাদেশের সব বনের অবস্থা শোচনীয়। বন থেকে উজাড় হয়েছে অসংখ্য বৃক্ষ, যার ফলে অস্তিত্বের সংকটে দেশের বন্যপ্রাণী। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে আবাসস্থল। জলাভূমিগুলোয় জলজ প্রতিবেশ ব্যবস্থাপনা আজ হুমকির মুখে। 

বর্তমান সরকারের কাছে সবার প্রত্যাশা তারা জনগণের আশার আলোর প্রতিফলন ঘটাবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও। ঠিক তেমনি আমাদেরও দায়িত্বশীল নাগরিকের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করতে হবে। 

লেখক: বন্যপ্রাণী গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৮
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রৌদ্রোজ্জ্বল ঢাকায় আজ শুক্রবার সকালে হালকা কুয়াশার দেখা মিলেছে। তবে হাড়কাঁপানো শীত না পড়লেও বইছে মিষ্টি হিমেল বাতাস। আজ সারা দিন রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে আকাশ পরিষ্কার থাকবে, আবহাওয়াও থাকবে শুষ্ক।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও আশপাশ এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশ। এদিন দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৮ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৬
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
নরসিংদীতে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের মাটিতে গতকাল ফাটলের নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টা। সূর্যের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে ওঠেনি, ঠিক তখনই ভূমিকম্পে আবারও কেঁপে উঠল রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা।

আর এই ভূকম্পনেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ঢাকার নগরজীবন থেকে শুরু করে সারা দেশের মানুষ। আতঙ্কিত হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কারণ, এক-দুবার নয়, মাত্র ১৪ দিনে বাংলাদেশে একাধিকবার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, গাজীপুরের মতো ঢাকার আশপাশের অঞ্চল ছিল বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি হয় গত ২১ নভেম্বর। ওই দিন ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারা দেশ কেঁপে উঠেছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশেই উৎপত্তিস্থল ছিল পাঁচটি ভূমিকম্পের। এর প্রথমটি ছিল ২১ নভেম্বরের ঠিক দুই মাস আগে ২১ সেপ্টেম্বর। এদিন ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তি হয় সিলেটের ছাতকে।

এরপরের ভূমিকম্প ছিল ২১ নভেম্বর, মাত্রা ৫ দশমিক ৭। পরদিন ২২ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জ। এর ৫ দিন পর, ২৭ নভেম্বর বিকেল সোয়া ৪টায় ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, উৎপত্তিস্থল ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের টঙ্গীর ঢালাদিয়া এলাকা।

কতবার ভূকম্পন হলো

তবে বারবার ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই নয়, সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমার, ভারত, নেপাল, এমনকি চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প হয়েছে। এর কোনোটিই ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।

গত সোমবার ১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মিয়ানমারের ফালামে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র থেকে উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ছিল ৪৩১ কিলোমিটার। ওই ভূমিকম্প বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৫৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৯।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, টেকটোনিক প্লেটে বাংলাদেশের যে অবস্থান, তাতে দুটো প্লেটের সংযোগস্থল রয়েছে, পশ্চিমে ইন্ডিয়ান প্লেট আর পূর্ব দিকে বার্মা প্লেট। আর বাংলাদেশের উত্তর দিকে আছে ইউরেশিয়ান প্লেট।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর পুরান ঢাকায় বংশাল এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনের ক্ষতির আশঙ্কা। ছবি: সংগৃহীত

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বার্মা প্লেটের নিচে, অর্থাৎ চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। আর এই তলিয়ে যাওয়ার কারণে একটা সাবডাকশন জোনের তৈরি হয়েছে।

হুমায়ুন আখতার আরও বলেন, ‘এই জোনের ব্যাপ্তি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত। পুরো চট্টগ্রাম অঞ্চল এর মধ্যে পড়েছে। এখানে বিভিন্ন সেগমেন্ট আছে। আমাদের এই সেগমেন্টে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা হয়ে আছে। এটা বের হতেই হবে।’ তাঁর মতে, ‘এখানে প্লেট লকড হয়ে ছিল। এর অতি সামান্য ক্ষুদ্রাংশ খুলল বলেই শুক্রবারের ভূমিকম্প হয়েছে। এটিই ধারণা দেয় যে সামনে বড় ভূমিকম্প আমাদের দ্বারপ্রান্তে আছে।’

আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

তবে ভূমিকম্প নিয়ে উৎকণ্ঠিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদ ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন যেসব ভূকম্পন, সেগুলো হলো ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের ‘আফটার শক’।

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের হনশু দ্বীপের টোহুকু অঞ্চলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প এবং এর জেরে সৃষ্ট সুনামির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর কেবল ৬ মাত্রারই ৪৫০ বার আফটার শক হয়েছিল জাপানে। আরও অসংখ্যবার ছোট ছোট আফটার শক হয়েছিল তখন।

ভূকম্পনবিদ্যার গবেষক মমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ২১ নভেম্বরের পর একাধিকবার আফটার শক হচ্ছে। এই আফটার শক বহুদিন ধরে হতে পারে, কমপক্ষে আরও তিন মাস হতে পারে। ২ মাত্রার নিচের ভূকম্পনগুলো আমাদের (বাংলাদেশে) সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ভারত উপমহাদেশের তিন প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো বিশ্বের দূষিত শহর তালিকায় শুরুর দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই এ তালিকায় শীর্ষে ছিল ভারতের দিল্লি। আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিকে পেছনে ফেলে এ শীর্ষ দূষিত শহর হলো ঢাকা।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান ১ম। আজ সকাল ১০টার রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ২৯৬, যা খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

ঢাকার যেসব এলাকায় বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি— পল্লবী দক্ষিণ, কল্যাণপুর, বেজ এজওয়াটার আউটডোর, ইস্টার্ন হাউজিং ও গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

ঢাকার নিম্নমানের বাতাসের প্রধান কারণ হলো পিএম ২.৫ বা সূক্ষ্ম কণা। এই অতিক্ষুদ্র কণাগুলো, যাদের ব্যাস ২.৫ মাইক্রোমিটারের চেয়েও কম, ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করে রক্তপ্রবাহে মিশে যেতে পারে। এর ফলে হাঁপানি (অ্যাজমা) বৃদ্ধি, ব্রঙ্কাইটিস এবং হৃদ্‌রোগের মতো শ্বাসযন্ত্র ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।

বাতাসের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

দূষিত বায়ুর শহর তালিকায় শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর ও কাতারের দোহা। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৭৮, ২৩৩, ১৯৯ ও ১৮৯।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৫
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার ভোরবেলা ঢাকায় পড়েছিল হালকা কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল ছিল ১৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আজ সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে এসব কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮১ শতাংশ।

এ ছাড়া আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে। দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ দুপুর পর্যন্ত ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১১ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ২৭ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত