Ajker Patrika

প্লাস্টিক ধ্বংসকারী এনজাইম আবিষ্কার, পোশাকের বর্জ্য নিয়ে আর ভাবনা নয়

আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ২৮
প্লাস্টিক ধ্বংসকারী এনজাইম আবিষ্কার, পোশাকের বর্জ্য নিয়ে আর ভাবনা নয়

গবেষক সিন্তাবি সুলেমান জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে কাজ শুরু করেন ২০১০ সালে। সহকর্মীদের কাজ ছিল বিভিন্ন ধরনের এনজাইম খুঁজে বের করা। আর তিনি সেগুলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতেন অথবা রূপান্তর করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি পার্কে পচতে থাকা পাতার মধ্যে একটি এনজাইম পেয়েছিলেন তাঁরা। এনজাইমটির নাম এলসিসি—লিফ–ব্রাঞ্চ কম্পোস্ট কিউটিনেজ। 

একধরনের অণুজীব এই এলসিসি এনজাইম নিঃসরণ করে। পাতার মোমজাতীয় প্রলেপকে বিশ্লেষিত করতে সাহায্য করে এই এনজাইম। প্লাস্টিক পচাতেও এই এনজাইম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে আশা করছেন সুলেমান।

এক বিকেলে সুলেমান তাঁর হেডফোনের প্লাস্টিকের কিছু অংশ কেটে পানিতে এলসিসির কিছু নমুনার সঙ্গে রেখে দেন। পরদিন সকালে দেখেন প্লাস্টিকটির অনেকখানিই বদলে গেছে। 

সুলেমান বলেন, ‘প্লাস্টিকের ওই অংশে বেশ কয়েকটি ফুটো ছিল বা কিছু অংশ ক্ষয়ে গিয়েছিল। আমি তা দেখে চমকে যাই।’ ওই প্লাস্টিক ছিল পিইটি পলিমার। 

প্রকৃতিতে সব জায়গাতেই পলিমার পাওয়া যায়। এর সবচেয়ে পরিচিত একটি উদাহরণ হলো সেলুলোজ। এটি গাছ ও উদ্ভিদের গাঠনিক উপাদান। 

অণুজীবের মধ্যেকার এনজাইম রূপান্তরিত হয়ে এসব পলিমারের রাসায়নিক বন্ধন ছিন্ন করতে পারে। এর কারণে অণুজীবগুলো জৈব পদার্থকে জৈবিকভাবে বিশ্লেষিত করতে পারে। 

তবে এ ধরনের এনজাইম প্লাস্টিকের সংস্পর্শে এসেছে মাত্র কয়েক দশক আগে। এ কারণে পলিমার জাতীয় পদার্থ বিশ্লেষিত করার মতো রূপান্তর না ঘটার কারণে এসব পলিমার দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অক্ষত অবস্থায় থাকে। দুই দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এনজাইমের বিবর্তনে সহায়তা করার জন্য নতুন এক উপায়ের খোঁজ পেয়েছেন।

ফ্রান্সে টুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আলাইন মার্টি ও তাঁর সহকর্মীরা এ বিষয়ের ওপর কাজ করছেন। 

গত আট বছরে তাঁরা এলসিসির গাঠনিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে একে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘পিইটি বিশেষজ্ঞে’ পরিণত করেন। এলসিসির বর্তমান নাম এলসিসিআইসিসিজি। 

এনজাইমটি এখন এতটাই কার্যকর যে এটি পিইটি পলিমারকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে মনোমারে পরিণত করতে পারে। এ মনোমার দিয়ে নতুন প্লাস্টিক তৈরি সম্ভব। অধ্যাপক মার্টি এটিকে মুক্তার মালা ছিন্ন করার মতো ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক ধরনের এনজাইম ব্যবহার করছি, যাকে বলা যেতে পারে আণবিক কাঁচি। আমরা মুক্তার মধ্যেকার সংযোগ ছিন্ন করে প্রতিটি মুক্তা আলাদা করতে পারি। মুক্তাগুলোকে বিশুদ্ধ করার পর আমরা আবার এ মুক্তা ব্যবহার করতে পারি।’ 

আলাইন মার্টি বর্তমানে জৈব-রসায়নভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কার্বিওসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। এ প্রতিষ্ঠানের মধ্য ফ্রান্সের ক্লেরমন্ট–ফেরান্ডে একটি ডেমোনস্ট্রেশন প্ল্যান্ট আছে। এটি অ্যালকোহল তৈরির একটি ক্ষুদ্র ভাটির মতো। 

সবচেয়ে বড় যন্ত্রটি পলিস্টারসমৃদ্ধ কাপড়কে প্রক্রিয়াজাত করে। পলিস্টার একধরনের পিইটি প্লাস্টিক। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক কাপড়ের সুতা তৈরিতেই এ প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বে ব্যবহার শেষে এ ধরনের কাপড় পুড়িয়ে ফেলা হয় বা ভাগাড়ে পাঠানো হয়। 

তবে ক্লেরমন্ট-ফেরান্ডের বিশাল এ যন্ত্রের মাধ্যমে কাপড়গুলোর একটি পরিণতি দেওয়া সম্ভব। বোতাম ও সিকুয়েন্স খুলে ফেলে এগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর এগুলোকে আরও এক যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্যালেটে পরিণত করা হয়। প্লাস্টিকের বোতলের টুকরোও সে একই যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যায় এবং একই আকার দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় পদার্থটির পৃষ্ঠতল সম্প্রসারিত হয় এবং প্লাস্টিকের মধ্যকার আণবিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে। 

কার্যক্রম বাড়াতে এবার ২০২৫ সাল নাগাদ ফ্রান্সের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে কারখানা নির্মাণ করতে যাচ্ছে কোম্পানিটি। এর মাধ্যমে এক বছরে ৫০ হাজার টন পিইটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করা যাবে, যা ৩০ কোটি টি–শার্ট বা দুই শ কোটি প্লাস্টিক বোতলের সমান। 

কার্বিওসের উদ্দেশ্য পুনর্ব্যবহারের বস্তু তৈরি নয়। তবে কোম্পানিটি অন্য কোম্পানিকে এ প্রক্রিয়ার লাইসেন্স দিতে পারে। অর্থাৎ প্রক্রিয়াটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোম্পানিটি নেসলে, ল’রিয়েল ও পেপসিকোর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে বিরল প্রজাতির সজারু উদ্ধার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৯
সজারুটিকে উদ্ধার করেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সজারুটিকে উদ্ধার করেছেন বন বিভাগের কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের কিত্তিনিয়াপাড়া এলাকা থেকে বিরল প্রজাতির একটি সজারু উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। আজ বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে খবর পেয়ে পঞ্চগড় বন বিভাগের কর্মীরা সজারুটিকে উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া ইকোপার্কে নিয়ে যান। আপাতত নিরাপদ হেফাজতে সেখানে রাখা হয়েছে প্রাণীটিকে।

সজারুটির দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় ফুট এবং ওজন আনুমানিক ৮ কেজি। প্রাণীটি এই এলাকার বনজঙ্গলে আগে দেখা মিললেও এখন বিলুপ্তপ্রায় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকালে সজারুটি একটি খেত পার হয়ে সুপারির বাগানের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন সেটিকে দেখতে পেয়ে ধরার চেষ্টা করলে সজারুটি পাশের একটি পুকুরে নেমে পড়ে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁশের তৈরি একটি খাঁচা ব্যবহার করে পুকুর থেকে সজারুটিকে আটক করেন এবং বন বিভাগকে খবর দেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে সজারুটিকে একনজরে দেখতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ ভিড় করেন। সজারুটি নিয়ে এলাকাজুড়ে কৌতূহল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পঞ্চগড় সদর বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে সজারুটিকে উদ্ধার করি। প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তার স্বার্থে তেঁতুলিয়া ইকোপার্কে রাখা হয়েছে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় সকালে তাপমাত্রা ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০০
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সকাল থেকে আজ ঢাকার আকাশে কিছুটা রোদের দেখা মিলেছে। তবে শীত আগের দিনের মতোই পড়েছে।

বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ একই সময়ে সেটি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪১ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের দাপট আজও থাকবে, পড়বে ঘন কুয়াশা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
তাপমাত্রা খুব বেশি কমলেও আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। দেখা মেলেনি সূর্যের আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

সারা দেশসহ রাজধানী ঢাকায় আজও রয়েছে শীতের দাপট। হাড়কাঁপানো এই শীতের সঙ্গে পড়েছে ঘন কুয়াশা। দেখা নেই সূর্যের। আজ মঙ্গলবার সারা দিন এমন আবহাওয়াই থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।

গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯।

আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া প্রধানত থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪১ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আজ শীত আরও বাড়বে, কাটছে না কুয়াশার চাদর

  • তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে না ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে।
  • কুয়াশায় ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ।
  • ঠান্ডা-কুয়াশায় বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪১
দেশজুড়ে বইছে তীব্র শীত। কনকনে ঠান্ডায় কাবু সাধারণ মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় আগুন পোহাচ্ছেন মাঝিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
দেশজুড়ে বইছে তীব্র শীত। কনকনে ঠান্ডায় কাবু সাধারণ মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় আগুন পোহাচ্ছেন মাঝিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে।

এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর শুক্রবার অপরিবর্তিত থাকতে পারে তাপমাত্রা।

টানা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার বোরো বীজতলাসহ ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে বোরো বীজতলা তৈরির মৌসুম চললেও কম তাপমাত্রা ও সূর্যের আলো না থাকায় অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।

গত রোববারের মতো গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। এদিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীতে আগের দুই দিনের মতো গতকালও সারা দিনে সূর্যের দেখা পায়নি মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে শিশির। এতে ভয়ানক কষ্টের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।

ঘন কুয়াশা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন।

সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলি জমিসহ বোরো বীজতলায়। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সৃষ্ট ‘কোল্ড ইনজুরি’-তে নাবি বীজতলার চারা পচে যাচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে চারার সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

নওগাঁর মান্দা উপজেলা, যশোরের শার্শা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, রংপুর জেলার আট উপজেলা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন।

ঘন কুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শিশির বৃষ্টির মতো ঝরছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি, সেগুলোর চারা হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে।

মান্দার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে তৈরি করা বীজতলায় সবে চারা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে সূর্যের আলো না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। পরিস্থিতি এভাবে চললে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে, এতে বাড়তি খরচ পড়বে।’

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে রোপণের সময় চারার সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সড়কে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে হাটবাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানচালকেরা।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় চলছে। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। চলতি মাসেই এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সোমবার বহির্বিভাগে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ৩৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত