ইশতিয়াক হাসান

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।
ইশতিয়াক হাসান

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

সাঙ্গু নদী ধরে চলেছে নৌকা। আন্ধারমানিকের কাছে হঠাৎ নদীর পাশে ঝোপের মধ্যে দেখা গেল অতিদুর্লভ, বিষধর একটি সাপ। শরীরের বেশির ভাগ সবুজ, তবে চোখ আর লেজ লাল। পোপস পিট ভাইপার। সরীসৃপটিকে শান্তিতে থাকতে দিয়ে কিছুটা এগোনোর পর নৌকার ওপরে তাকাতেই আঁতকে উঠলেন। পাহাড়ের ঢালে নদীর দিকে হেলে পড়া এক গাছের ডালে পেঁচিয়ে আছে বিশালাকায় একটা গোলবাহার অজগর বা রেটিকুলেটেড পাইথন। পেটটা ভুলে আছে বেঢপভাবে। কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শিকার ধরে খেয়েছে।
রোমাঞ্চকর এই অভিজ্ঞতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খানের। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন-পাহাড়ে রোমাঞ্চের নেশায়, ঝরনা দেখতে ঘুরে বেড়ান অনেক তরুণই। তবে দুই যুগ ধরে এই শিক্ষক পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়ানোর বড় কারণ বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান, অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। আর তাঁর সেই রোমাঞ্চকর অভিযানের কাহিনি ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাণবৈচিত্র্যের সন্ধানে’ নামে দুই মলাটের মধ্যে বন্দী করেছে প্রথমা প্রকাশন। বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪৫০ টাকা। প্রচ্ছদ করেছেন মাহবুব রহমান।
কখনো রাঙামাটির দুর্গম কাসালং সংরক্ষিত অরণ্যে কিংবা কাপ্তাইয়ের সীতা পাহাড়, রাম পাহাড়, কখনো আবার বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরী বা কিরস তংয়ের গহিন অরণ্যে চষে বেড়িয়েছেন। পাহাড়ি দুরারোহ পথে ১০-১২ ঘণ্টা হাঁটতে হয়েছে বড় কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই। দেশের জন্য নতুন এমন বেশ কয়েকটি প্রাণীও আবিষ্কার করেছেন পাহাড়ের গহিনের এসব রোমাঞ্চকর অভিযানের সময়। ২০০৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করে বর্ণনা করেছেন লেখক। পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওনা অরণ্য-পাহাড় আর বন্যপ্রাণীর চমৎকার কিছু ছবি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন রাঙামাটির কাসালং রিজার্ভ ফরেস্ট। ১ হাজার ৬৪৫ বর্গকিলোমিটারে বনটির বর্তমানে ৪০০ বর্গকিলোমিটার ভালো বন অবশিষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন লেখক মনিরুল খান। কাসালং বনে লেখক গিয়েছেন মোটমাট চারবার। আর এই বনে রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন ‘কাসালংয়ের অজানা অরণ্যে’ অধ্যায়টিতে। এর মধ্যে বনের গভীরে ঢুকতে পেরেছেন দুবার। প্রথম এখানকার গহিন অরণ্যে প্রবেশ করতে পারেন মনিরুল খান ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। ঢাকা থেকে সঙ্গে ছিল তাঁর ছাত্র আশিকুর রহমান। পরে অবশ্য মাসালং থেকে গাইড হিসেবে যোগ দেন আরও দুজন।
জলপথে যাওয়া সহজ হলেও সেবার কাসালংয়ের অরণ্যে তাঁদের যাত্রাটা হয় পায়ে হেঁটে। লেখকের বর্ণনায় দেখি মান্দিরছড়ার পরে ঘন বনের শুরু। দুর্গম যাত্রায় কখনো পাহাড় বেয়ে উঠতে হয়, কখনো আবার চলতে হয় ছড়া ধরে। এভাবে চলতে চলতেই তাঁরা পৌঁছান লালু-কালু এলাকার পূর্ব দিকে। এখান থেকে পশ্চিমে দেখতে পাচ্ছিলেন এই এলাকার সবচেয়ে বড় ও গভীর বনানীর পাহাড় ভুলংতলি। বইটি পড়ার সময় মনে হবে আপনিও গহিন কোনো অরণ্যপথে হাঁটছেন লেখকদের ছোট দলটির একজন সদস্য হয়ে। গাইডদের বাঁশ কেটে তৈরি করা চোঙে মাছ আর পাহাড়ি কন্দ যোগ করে রান্না করে বুনো স্বাদের সেই তরকারির স্বাদ পাচ্ছেন। পথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে দেখা হলে যখন তাঁরা বলে দুই বছর আগে (২০০৯) নাবা এলাকায় বাঘ দেখেছে, তখন শিহরিত হবেন আপনিও।
সেই ভ্রমণে ফিরতি যাত্রা ছিল বেশ মজার। মাসালং নদীর একটি শাখায় বাঁশের চালি ভাসিয়ে আনা হচ্ছিল। এতে উঠে তাঁরা চলে আসেন মাসালং বাজারে।
পরের সফরটি এক দশক পরে, ২০২১ সালে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বে পাহাড়ের খণ্ড বনগুলো করিডরের মাধ্যমে জোড়া লাগানোর বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু করে বন বিভাগ। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় আইইউসিএনকে। এ সমীক্ষার অংশ হিসেবেই অন্য গবেষক, বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যান মনিরুল খান। চারটি নৌকায় চেপে, সঙ্গে প্রয়োজনীয় চাল-ডাল নিয়ে কাসালং নদী ধরে মাসালং বাজার থেকে রওনা দেন তাঁরা। একপর্যায়ে লালু পৌঁছান তারা। লেখকের ভাষায়, এখান থেকেই গহিন বনের শুরু, যেটা উজানের দিকে চলে গেছে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত।
লেখক বলেছেন, কাসালংয়ের গহিন বনে কোনো পাড়া নেই। তবে মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার জন্য ছাউনি আছে। নৌকা থেকে নেমে গহিন এক ছড়া ধরে যাওয়ার সময় আপনিও মনে মনে সঙ্গী হয়ে যাবেন অভিযাত্রীদের। আচমকা আপনার দেখা হয়ে যাবে ভালুকের সঙ্গে চেহারার মিল আছে এমন একধরনের গাছ খাটাশ, বিন্টুরং বা বাঁশ ভালুকের। ছড়া থেকে ফিরে এসে লেখক আরও দুজনের সঙ্গে রাত কাটিয়েছিলেন একটি নৌকায়। রাতে প্রবল বৃষ্টিতে দেখা গেল নৌকা জলে ভরে যাচ্ছে। তাঁরা লেগে গেলেন পানি সেচতে। এমনই নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হয় এই ভ্রমণে। ফেরার পথে আবিষ্কার করে বসেন বাংলাদেশের জন্য ময়নার এক নতুন প্রজাতি গোল্ডেন ক্রেস্টেড বা সোনাঝুঁটি ময়না।
মজার ঘটনা, কাসালংয়ের গহিন অরণ্যে যেতে হলে সাজেক যাওয়ার পথেই নামতে হবে আপনাকে। আর এই অধ্যায়টিতে সাজেক ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন। পুরোনো সেই বুনো সাজেক আর এখনকার কংক্রিটের অট্টালিকায় ভরা সাজেক দুটোর তুলনা করতে গিয়ে লেখককে অনেকটাই দিশেহারা মনে হয়েছে। তিনি আফসোস করেন, এখন সাজেকে সবাই সুখী, তবে দুঃখী শুধু সেই হারিয়ে যাওয়া নির্মল সবুজ পাহাড়, কংক্রিট আর আবর্জনায় ঢাকা পড়ছে যেটি।
‘বন্য হাতির মুখোমুখি’ অধ্যায়ে আবার হাতির মুখোমুখি হয়ে যাওয়ার একাধিক রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ২০০২ সালে যেমন রাঙিপাড়ায় গিয়েছিলেন। তিন দিকে জলবেষ্টিত একটি পাহাড়ে উঠেছিলেন। ভেতরে ঢোকার পথ কেবল একটি। ঝোপ-জঙ্গলে ঠাসা পাহাড়টিতে হঠাৎ হাতির কাছে চলে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা বারো আনা। একপর্যায়ে হাতির ডাল ভাঙার শব্দ শুনলেন। একটু পরেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে দেখা পেলেন বিশালদেহী ঐরাবতদের—একটি-দুটি নয়, সাতটি। একপর্যায়ে আবিষ্কার করলেন, লতা-পাতা খেতে খেতে তাদের বেরোনোর পথটাই আটকে দাঁড়িয়েছে হাতির পাল। একপর্যায়ে হাতিগুলো বনের ভেতরে ঢুকে গেল, তাদের শব্দও থেমে গেল।
একটু অপেক্ষা করে যাওয়া নিরাপদ মনে করে সরু পথটা ধরে একজনের পেছনে আরেকজন লাইন ধরে এগোলেন। এই জায়গায় পথ ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়েছে। বাঁক ঘুরেই আঁতকে উঠলেন। ঠিক সামনে পাঁচ মিটার দূরে পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে প্রকাণ্ড এক হাতি। হাতিটা বিরক্ত হয়ে জোরে একটা শ্বাস নিতেই অন্য হাতিদের শব্দে জেগে উঠল বনানী। তাঁরা ঘুরে দিলেন দৌড়। পেছনে জঙ্গল ভেঙে ছুটে আসছে হাতির পাল। তারপর কী ঘটল জানার জন্য বইটি পড়তে হবে আপনাকে।
বান্দরবানের দুর্গমে মিয়ানমার সীমান্তে সাঙ্গু-মাতামুহুরী বন। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে বড় মোদকের দিকের এক অভিযানের কাহিনি পড়ে বনটির প্রতি আগ্রহ চূড়ায় গিয়ে ঠেকে মনিরুল খানের। এনায়েত মাওলাদের অভিযানটি ছিল ১৯৫৭ সালের। মনিরুল খান ২০০৫ সালে প্রথম যান সাঙ্গুর গহিনে। তারপর ২০০৮ ও ২০২১ সালে সাঙ্গু-মাতামুহুরীর দিকে আবার অভিযানে যান। আর পাঠক যেন লেখকের সঙ্গে চলে যাবেন অন্য এক পৃথিবীতে। ওই যে লেখার শুরুতে সাঙ্গু নদীর ধারে গোলবাহার অজগর দেখার যে বর্ণনা দিয়েছিলাম, সেটা কিন্তু প্রথমবার সাঙ্গু রিজার্ভ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে এই ভ্রমণ রোমাঞ্চ ও বনপ্রেমী পাঠকদের মন কেড়ে নেবে।
কখনো নদীর দুই পাড়ের ঘন পাহাড়ি বন, উঁচু ট্রি-ফার্ন ও লতানো বাঁশসহ নানা উদ্ভিদ লেখকের সঙ্গে আপনাকেও যেন হারানো পৃথিবীর কথা মনে করিয়ে দেবে। একপর্যায়ে চমকে গিয়ে আবিষ্কার করবেন লেখকও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে গাইডের সঙ্গে উচ্চিংড়া নামে একধরনের পোকার ভাজি ও কুমড়াপাতা সিদ্ধ দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। সাঙ্গু নদীর উজানে শেষ গ্রামটি পেরিয়ে লেখকের সঙ্গে রওনা দেবেন লিক্রি পাহাড়ের গহিন অরণ্যের দিকে, যেখানে বন্যপ্রাণীদের আড্ডাখানা। চন্দইপাড়ার গ্রামপ্রধান যখন বলবেন ওই পাহাড়ে আগের বছর (২০০৪) রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও কালো চিতার মুখোমুখি হয়েছেন, তখন রোমাঞ্চে গা কাঁটা দেবে আপনার। তারপর লিক্রি পাহাড় ও ইয়ামবং পাহাড় পেরিয়ে দশ-এগারো ঘণ্টার এক যাত্রা করেন লেখক এবং তাঁর সঙ্গীরা পাহাড়ের অন্য পাশে অর্থাৎ আলীকদমের দিকে পৌঁছাতে।
বইটির অন্যান্য অধ্যায়গুলো কম রোমাঞ্চকর নয়। কখনো লেখক বন্যপ্রাণী সন্ধানে চলে যান দেশে সবচেয়ে উঁচু পর্বতগুলো যেমন সাকা হাকং, কেওক্রাডং কিংবা তাজিংডংয়ের দিকে। কখনো আবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার-ভারতের সীমানা চিহ্নিত করা তিন মাথা পিলার এলাকায়। কখনো আবার লেখকের সঙ্গে দুঃখ ভারাক্রান্ত হবে আপনার মন। যেমন কেওক্রাডং পাহাড় পেরিয়ে জাদিপাই ঝরনায় যাওয়ার আগে জাদিপাই গ্রামে গিয়ে দেখেন ছোট্ট এক মেয়ে শিশুর মৃতদেহ কফিনে ভরার প্রস্তুতি চলছে। বেশ কিছুদিন ম্যালেরিয়ায় ভুগে মৃত্যু হয়েছে মেয়েটির।
কখনো কখনো লেখকের সঙ্গে দেশের জন্য নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের আনন্দ পাবেন। ক্যাপিটাল হিল পেরিয়ে একটি বনে গাছের ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতে দেখেন খুব ছোট এক ধরনের কাঠবিড়ালিকে। সাধারণত দেখা যাওয়া বাদামি কাঠবিড়ালির অর্ধেক, নাম হিমালয়ান স্ট্রাইপড স্কুইরেল। বাংলাদেশ এই কাঠবিড়ালি দেখা যাওয়ার এটাই প্রথম রেকর্ড।
এ ছাড়া ‘কিরস তং যেন হারানো পৃথিবী’তে কিরস তং বনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তুলনা করেছেন স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের বিখ্যাত বই লস্ট ওয়ার্ল্ডের সেই হারানো পৃথিবীর সঙ্গে। চিম্বুক পাহাড়শ্রেণীর মাঝামাঝি অবস্থিত কিরস তংয়ের শত শত বছরের পুরোনো বনের আবহ পেয়ে মুগ্ধ হয়েছেন লেখক। বারবার ছুটে গিয়েছেন সেখানে। তবে মানুষের লোভের কারণে আদিম এই অরণ্য আর কত দিন টিকে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এখানে ২০১৯ সালে চিতা বাঘের তাজা পায়ের ছাপ পান লেখক। বনটি তাঁর এত প্রিয় যে অধ্যায়ের শেষ করেন এভাবে, যত দিন আমি টিকে আছি এই ধরনীতে, তত দিন বারবার ফিরে যাব কিরস তংয়ের কোলে।
এ ছাড়াও অন্যান্য অধ্যায়গুলোতে কখনো মনিরুল খানকে দেখা যায় দেও হাঁসের খোঁজে পাবলাখালী-রাঙিপাড়ার পাহাড়ের চষে বেড়াতে, কখনো ফ্রান্সিস বুকাননের পথ ধরে রাঙামাটির কাপ্তাই কিংবা বরকলের গহিন অরণ্যে চলে যেতে। স্কটিশ জরিপকারী বুকানন এসব এলাকা ভ্রমণ করেছিলেন সোয়া দুই শ বছর আগে, ১৭৮৩ সালে। আবার বগা লেকের পাশে অ্যালেংথং পাহাড়ে বাদুড়ের গুহায় ভ্রমণ কিংবা রাইংক্ষিয়ং রিজার্ভ ফরেস্টে তাঁর রোমাঞ্চকর অভিযানও মুগ্ধ করবে পাঠককে।
বইটি পড়তে পড়তে বন্যপ্রাণীপ্রেমীরা কখনো চমকিত হবেন লেখকের সঙ্গে নিকট অতীতে পাহাড়ি বনে বাঘ দেখা যাওয়ার খবর শুনে। কখনো আবার মন কেঁদে উঠবে বাঘ-হরিণ কিংবা অন্য কোনো বিপন্ন বন্যপ্রাণী শিকারের খবর শুনে, অরণ্য ধ্বংসের বৃত্তান্ত পড়ে।
সবকিছু মিলিয়ে তাই বলা যায় শুধুমাত্র বন্যপ্রাণীপ্রেমী নয় পাহাড়ে-জঙ্গল-ঝরনা যাদের পছন্দ সেসব অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদেরও ভালো লাগবে বইটি। আর যেসব পাহাড়-অরণ্যপ্রেমী নানা ব্যস্ততায় সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণে যেতে পারছেন না তাঁরাও কয়েকটা ঘণ্টার জন্য হারিয়ে যেতে পারবেন রাঙামাটি-বান্দরবানের গহিনে, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগে
সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১৭ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
১ দিন আগে
আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে।
এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর শুক্রবার অপরিবর্তিত থাকতে পারে তাপমাত্রা।
টানা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার বোরো বীজতলাসহ ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে বোরো বীজতলা তৈরির মৌসুম চললেও কম তাপমাত্রা ও সূর্যের আলো না থাকায় অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।
গত রোববারের মতো গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। এদিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীতে আগের দুই দিনের মতো গতকালও সারা দিনে সূর্যের দেখা পায়নি মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে শিশির। এতে ভয়ানক কষ্টের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।
ঘন কুয়াশা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন।
সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলি জমিসহ বোরো বীজতলায়। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সৃষ্ট ‘কোল্ড ইনজুরি’-তে নাবি বীজতলার চারা পচে যাচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে চারার সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলা, যশোরের শার্শা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, রংপুর জেলার আট উপজেলা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন।
ঘন কুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শিশির বৃষ্টির মতো ঝরছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি, সেগুলোর চারা হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
মান্দার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে তৈরি করা বীজতলায় সবে চারা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে সূর্যের আলো না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। পরিস্থিতি এভাবে চললে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে, এতে বাড়তি খরচ পড়বে।’
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে রোপণের সময় চারার সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সড়কে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে হাটবাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানচালকেরা।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় চলছে। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। চলতি মাসেই এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সোমবার বহির্বিভাগে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ৩৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে।
এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। তবে আগামীকাল বুধবার ও পরদিন বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। আর শুক্রবার অপরিবর্তিত থাকতে পারে তাপমাত্রা।
টানা তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এবার বোরো বীজতলাসহ ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে বোরো বীজতলা তৈরির মৌসুম চললেও কম তাপমাত্রা ও সূর্যের আলো না থাকায় অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা চেষ্টা চালালেও কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না।
গত রোববারের মতো গতকালও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়। এদিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীতে আগের দুই দিনের মতো গতকালও সারা দিনে সূর্যের দেখা পায়নি মানুষ। গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর মধ্যে সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে ঝরতে থাকে শিশির। এতে ভয়ানক কষ্টের মধ্যে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষ।
ঘন কুয়াশা আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর সদরঘাট থেকে চাঁদপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন।
সারা দেশে গ্রামাঞ্চলে শীতের প্রভাব পড়েছে ফসলি জমিসহ বোরো বীজতলায়। কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সৃষ্ট ‘কোল্ড ইনজুরি’-তে নাবি বীজতলার চারা পচে যাচ্ছে। এতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদে চারার সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
নওগাঁর মান্দা উপজেলা, যশোরের শার্শা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, রংপুর জেলার আট উপজেলা, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা বোরো বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন।
ঘন কুয়াশা ও হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শিশির বৃষ্টির মতো ঝরছে। নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কোল্ড ইনজুরি থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। যেসব বীজতলা ঢেকে রাখা হয়নি, সেগুলোর চারা হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে গেছে।
মান্দার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে তৈরি করা বীজতলায় সবে চারা উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে সূর্যের আলো না থাকায় দুশ্চিন্তায় আছি। পরিস্থিতি এভাবে চললে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে, এতে বাড়তি খরচ পড়বে।’
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিরূপ আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে রোপণের সময় চারার সংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকদের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের অধিকাংশ সময় সড়কে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। এতে হাটবাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে। বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও চার্জার ভ্যানচালকেরা।
নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় চলছে। সামনের দিনগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। চলতি মাসেই এ অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সোমবার বহির্বিভাগে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ৩৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১৭ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
১ দিন আগে
আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মাঘ মাস আসতে এখনো অনেক বাকি। আজ সোমবার কেবল ১৪ পৌষ। তবে এখনই হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে দেশজুড়ে। আজ সকাল ৬টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রাতে সারা দেশেই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
আজ সকাল ৯টা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকালে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭ এবং খুলনা ও বরিশালে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুয়াশার কারণে দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
এ ছাড়া সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

মাঘ মাস আসতে এখনো অনেক বাকি। আজ সোমবার কেবল ১৪ পৌষ। তবে এখনই হাড়কাঁপানো শীত পড়েছে দেশজুড়ে। আজ সকাল ৬টায় দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ রাতে সারা দেশেই তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
আজ সকাল ৯টা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকালে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৪, রংপুরে ১৩, ময়মনসিংহে ১৩ দশমিক ৬, সিলেটে ১৪ দশমিক ৫, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৭ এবং খুলনা ও বরিশালে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুয়াশার কারণে দেশজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্ন হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
এ ছাড়া সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
১ দিন আগে
আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ঢাকায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
আজ সকাল ৭টায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আজ সূর্যাস্ত ৫টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৪০ মিনিটে।

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগে
সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১৭ ঘণ্টা আগে
আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত।
১ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তিও। তবে কয়েক দিন পরই নতুন বছরের শুরুতে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, গতকাল সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা মানে রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবারসহ আগামী চার দিন সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদর অব্যাহত থাকতে পারে।
লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়।
কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকালও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দেরিতে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয়নি।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, ‘ভোরে রানওয়ের দৃশ্যমানতা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। তবে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফ্লাইট অপারেশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে’।
বাগেরহাটে বৃদ্ধের মৃত্যু
বাগেরহাটের চিতলমারীতে শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে বৈদ্যনাথ মণ্ডল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। বৈদ্যনাথ চিতলমারী উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের মুকুন্দলাল মণ্ডলের ছেলে।
এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিনে মোট ৫৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
উত্তরে জীবন বিপর্যস্ত
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কুয়াশার জন্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বরাবরই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সে অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, গত দুই দিনে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ও গতকাল দুপুর ১২টার আগে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। এটি চলতি মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন।’

আবহাওয়া দপ্তরের ভাষায় ‘শৈত্যপ্রবাহ’ না চললেও গতকাল রোববার টানা তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশ তীব্র শীতে কাবু ছিল। বরং ঠান্ডার কামড়ের জোর আরও কিছুটা বেড়েছে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের অনেক এলাকাতেই ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিনে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। চলতে পারে ঘন কুয়াশার ভোগান্তিও। তবে কয়েক দিন পরই নতুন বছরের শুরুতে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আক্তারুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, গতকাল সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামা মানে রীতিমতো হাড়কাঁপানো শীত।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বাড়তি অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করায় শীতের প্রকোপ বেড়েছে। গতকাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ সোমবারসহ আগামী চার দিন সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদর অব্যাহত থাকতে পারে।
লঞ্চ চলাচল সাময়িক বন্ধ
ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাতে চাঁদপুর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির এক বিজ্ঞপ্তিতে যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানানো হয়।
কুয়াশার কারণে সড়ক ও নৌযোগাযোগের পাশাপাশি বিমান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার প্রভাবে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গতকালও ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত একাধিক আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দেরিতে অবতরণ ও উড্ডয়ন করে। তবে কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ফ্লাইট অন্যত্র পাঠানো হয়নি।
বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালকের মুখপাত্র মো. মাসুদুল হাসান মাসুদ গতকাল দুপুরের দিকে বলেন, ‘ভোরে রানওয়ের দৃশ্যমানতা কম থাকায় ফ্লাইট অপারেশনে সাময়িক বিঘ্ন ঘটে। তবে সকাল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। ফ্লাইট অপারেশন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে’।
বাগেরহাটে বৃদ্ধের মৃত্যু
বাগেরহাটের চিতলমারীতে শীতের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে বৈদ্যনাথ মণ্ডল (৭৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। বৈদ্যনাথ চিতলমারী উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের মুকুন্দলাল মণ্ডলের ছেলে।
এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠান্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়ে গত চার দিনে মোট ৫৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা এসব রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
উত্তরে জীবন বিপর্যস্ত
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। কুয়াশার জন্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। হিমালয়ের পাদদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বরাবরই উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সে অঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে তিস্তার চরাঞ্চলের ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হোসেন জানান, গত দুই দিনে এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন ১৩ এবং সর্বোচ্চ ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে শনিবার ও গতকাল দুপুর ১২টার আগে বিমানবন্দরে কোনো ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। জেলার তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, এটি চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
তাড়াশ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার সকাল ৬টা থেকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে স্থির ছিল। এটি চলতি মৌসুমে এখানকার সর্বনিম্ন।’

দুই যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-অরণ্য, নদী-ঝিরিতে চষে বেড়িয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণীর খোঁজ করা আর এদের বাসস্থান অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ। তাঁর এসব রোমাঞ্চকর অভিযান কাহিনির বিবরন স্থান পেয়েছে ‘পার্বত্য
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় তিন দিন ধরে সূর্যের যেন দেখা নেই। কনকনে শীতে কাবু মানুষ। আর ঘন কুয়াশায় সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যোগাযোগ বেশ ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগে
সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে দেশের অনেক জায়গায় শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
১৭ ঘণ্টা আগে
রাজধানী ঢাকায় শীত যেন আরও জেঁকে বসেছে। গতকাল রোববার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে, আজ সোমবার একই সময়ে সেটি কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮।
১ দিন আগে