
শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে। সবকিছু নিয়ে শিলাজিতের সঙ্গে কথা বলেছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর।
খায়রুল বাসার নির্ঝর

বাংলাদেশ থেকে অনেক বছর পর আপনার গান বের হলো। ‘ভেঙে গেল’ গানটি তৈরি হওয়ার গল্পটা কী?
গালিব (গীতিকার গালিব সর্দার) তো আমার বহুদিনের ভক্ত। ওর বহুদিনের ইচ্ছে যে, আমাকে দিয়ে একটা গান গাওয়াবে। কিন্তু এত দিন সেটা ম্যাচিউর করেনি। এবার ব্যাপারটা কানেক্ট হয়েছে। ও যে আমার জন্মদিনে গানটা রিলিজ করবে, এটা আমার ভাবনায় ছিল না। গানটার সুর ও কথা মিলিয়ে আমিও ফিডব্যাক পাচ্ছি, সবার ভালো লেগেছে। আমারও ভালো লেগেছে বলেই গেয়েছি। ওর টিম এত সুন্দর একটা ভিডিও তৈরি করেছে, দেখে আমার সত্যিই তাক লেগে গেছে। খুবই মিনিমাল ভাবনায় গোটা জিনিসটা করা।
বাংলাদেশের শ্রোতাদের নিয়ে আপনার এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
যেহেতু বাংলাদেশের ভাষাটাই বাংলা। তাই বাংলা গানের শ্রোতা ওখানে আমাদের থেকে বেশি। আমি জানি না বাংলাদেশের লোকসংখ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যার ফারাক কতটা! কিন্তু একটা দেশের রাষ্ট্রভাষা যখন বাংলা, সেখানে অন্য রকম মর্যাদা সেই ভাষার। তাই আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষেরা আমাদের এখানকার গান আগ্রহের সঙ্গে শোনেন।
১০ বছর আগে ঢাকায় একবার এসেছিলেন। তারপর আর এখানকার শ্রোতারা আপনাকে পাননি। কোনো বিশেষ কারণ আছে?
আমি একবার বাংলাদেশে একটা রেডিওর জন্য শো করতে গেছিলাম। কিন্তু কোনো লাইভ শো করতে পারিনি। অথচ আমি খুব মুখিয়ে থাকতাম। আমার ক্যারিয়ার ৩০ বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমাকে সেভাবে কেউ লাইভ শো করার জন্য ডাকেনি। আমিও মিস করছি বাংলাদেশের মানুষকে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের শ্রোতারাও আমাকে মিস করছেন। এখানকার অনেক গায়ক-গায়িকা আছেন, যাঁরা না হলেও বাংলাদেশে দশ-পনেরোবার গেছেন। আর আমি একবারও যেতে পারছি না, সেটার তো একটা কারণ আছে। আমি ষড়যন্ত্রী বা কন্সপিরেসিতে বিশ্বাস করি না এসব ক্ষেত্রে। সুতরাং, আমি পরিষ্কার করে বুঝতে পারি, আমি অতটা জনপ্রিয় নই বাংলাদেশে।
কনসার্টের ক্ষেত্রে তো নানা ধরনের এজেন্সি কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শিলাজিতের গান মানে অন্য ধরনের উন্মাদনা। আপনি এখানে গাইতে এলে তখন আসল চিত্রটা ধরা পড়বে...
আসলে কী হয়, যেকোনো কাজ বা কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু লোক থাকে। তারাই একজন শিল্পীর দর ঠিক করে। তারা মনে করে, এই টাকার মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে। কারণ, তারা অন্য শিল্পীকে এই দরে পেয়েছে। হয়তো অন্যরা আমার থেকে কমে চলে গেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আজ না হলেও কাল বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ হবে। যদিও আমার হাতে বিরাট সময় নেই, অলরেডি সিনিয়র সিটিজেন হয়ে গেলাম। সময় যদিও কম, সময় খুব অশান্ত, তবু হয়তো কোনো দিন সুযোগ পাব। আজ গালিবের এই গানটা রিলিজ হলো, মানুষ আমার গান শুনবে। গায়ক হিসেবে আমাকে চিনবে। আরেকটু জনপ্রিয়তা আমার বাড়বে।
সেটা তো অবশ্যই। এখানকার শ্রোতারাও অপেক্ষায় আছেন আপনার গান মুখোমুখি শোনার জন্য। মার্কিন মুলুকে গান শুনিয়ে এলেন। ইউএস ট্যুরটা কেমন হলো?
আমি তো ইউএস ট্যুর নিয়ে একটু সন্দেহে ছিলাম। তার কারণ, বারবার ওরা আমাকে ডেকেছে। আজকে তো নয়। অনেক দিন ধরে ডাকছে। কিন্তু তাদের অ্যাটিটিউড সমস্যা ছিল বলে আমি কোনো দিন যেতে পারিনি। সমস্যাটা কী রকম... আমি জানি না বাংলাদেশের কী রকম মানসিকতা, তবে ভারতবর্ষে একটা মানসিকতা আছে, বিদেশ বা বিলেত গেলে, তারা অনেক কিছুই নিজের জীবনে মওকুফ করে দিতে রাজি আছে। বিদেশে যাচ্ছি, আমেরিকা যাচ্ছি শো করতে, এটা তাদের কাছে পালকের মতো। আমার কাছে তো সেটা নয়। আমার কাছে আমেরিকা গিয়ে শো করাটা এমন কিছু নয়।
আমি যেন শিল্পীর সম্মান নিয়ে ওখানে যেতে পারি। ওখানে বেড়াতে যাওয়ার প্রপোজাল নিয়ে যাব না। আমাকে এ কথাও বলা হয়েছিল, অনেক দিন আগে, ‘আরে আপনি ভাবুন না, আপনি এখানে এসে সব জিনিসপত্র দেখবেন আর কিছু পকেট মানি আর্ন করে যাবেন’। আমি যে মানুষটা, যতটুকু তোমরা চিনেছ, আমার পক্ষে কি এ প্রপোজাল নেওয়া সম্ভব?
এবার গিয়ে দেখলাম, আমার বহু শ্রোতা সেখানে রয়েছে, যারা আমাকে মিস করেছে এত দিন। আমাকে পেয়ে তারা দারুণ আনন্দিত। তাদের পেয়ে আমিও আনন্দিত। আমি চারটে শো করব বলেছিলাম, বেশি করব না, কারণ ফার্স্ট টাইম যাচ্ছি ও দেশে। আমি জানি না কোথায় কী করব, কতটা ট্রাভেল করতে হবে। আমাদের যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, আমরা যা যা চেয়েছিলাম, যেভাবে থাকতে চেয়েছি, যেভাবে যেতে চেয়েছি; সমস্তটা তাঁরা মেইনটেইন করে আমাদের নিয়ে গেছেন। ওখানকার মানুষদের থেকে ভীষণ ভালোবাসা পেয়েছি। বাংলাদেশেও যখন যাব, আগুন জ্বলবে আরও বেশি।
এখানকার ভক্তরা আপনার আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। আপনার গান ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আপনার জন্য গান তৈরি করছেন....
আমি খুব খুশি হয়েছি যে, গালিব আমার ভক্ত হিসেবে আমার জন্য গান তৈরি করেছে। ভেবেছে এবং গানটা আমি যে রকম গাই, সে রকম গানের মতো নয়। একটু অন্য ধাঁচের গান। এ গান যে দুম করে কালকে এক লাখ ভিউ হবে, তা নয়।
আমার খুব ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কোনো একটা স্টেজে গাইতে। আমার দারুণ লেগেছিল চন্দ্রবিন্দুর লাস্ট শোটা। হাজার হাজার মানুষ চন্দ্রবিন্দুর গান গাইছে, আমি দেখে এত খুশি হয়েছি, আমার মনে হচ্ছে যেন আমারই গান শুনছে।
আপনি তো ফেসবুকে শেয়ারও করেছিলেন ভিডিওটা...
হ্যাঁ, আমি শেয়ার করেছিলাম। কারণ, বাংলা গান যদি কোথাও থেকে কিছু একটা পায়, আমার মনে হয়, ওটা আমার পাওনা। আজকে যখন ইউএস ট্রিপে যাচ্ছি, এবার পূজার সময় আমরা যেমন গেছি, অন্য আরও দুটো দল, তারাও গেছে—রূপমের (রূপম ইসলাম) এবং অনুপমের (অনুপম রায়)। তিন দলেই আটজন করে মেম্বার, ইনক্লুডিং ম্যানেজার। যারা বলত, একজন দুজন মিউজিশিয়ান নিয়ে আসবেন, তার বেশি নিয়ে আসবেন না, তারা এটা বিশ্বাস করেছে যে, গানবাজনাতে এতগুলো লোককে লাগে একটা দলে। আইসোলোটেড একজন গান গাইবে আর ওখানকার একজন কেউ বাজিয়ে দেবে, এটা নয়। গানটার চরিত্র বুঝতে গেলে তাদেরকে দরকার, যাদের সঙ্গে আমার যাপন রোজের। আমেরিকায় প্রচুর বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশি, ভারতীয় সব মিলিয়েই বাংলা গানের বাজারটা বাড়ছে। তবে বাংলা গানকে বলতে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে রাখলে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ—দুটো জায়গারই তো বাংলা গান। বাংলা গানের অনুষ্ঠানে আমাদের এখানকার শিল্পীরা যত যাচ্ছে, বাংলাদেশি শিল্পীদের অত দেখতে পেলাম না। আমার বিশ্বাস, সামনের সময়ে সেটাও দেখতে পাব। যদি আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়, বাংলাদেশে, আমেরিকাতে অথবা অন্য কোনো দেশে; আমাদের দুই শিল্পীর মধ্যে দেখা হবে, কথা হবে, যোগাযোগ হবে।
কোনো দিন হয়তো জেমসের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। তিনি ইদানীং বিদেশে কনসার্ট বেশি করছেন...
উনি অনেক ওপরের স্তরের মানুষ, ভীষণ জনপ্রিয়, আমরা সেই তুলনায় কিছুই না। কিন্তু উনার গান শুনেছি। মনে হয়, উনি মেজাজে আমার মতোই। আলাপ হয়নি কখনো। আমি জানিও না উনি আমাকে চেনেন কি না। তবে আমি চিনি, জানি। খেয়াল রাখি, কারা কারা গান গাইছে, তাদের গান শুনি। পছন্দ করি। এলআরবি, আর্টসেল, আরও সব নতুন ছেলেপুলেরা গান গাইছে। অর্ণব। অনেকেই আছে।
আপনার গানের মূল শ্রোতা নব্বইয়ের দশকেও তরুণেরা ছিলেন। ২০২৫ সালে এসেও সেই তরুণ প্রজন্ম। সব প্রজন্মের ইয়াং ক্রাউডকে আকর্ষণ করার এই ম্যাজিকটা কী?
এটা একটা মজার ব্যাপার। আমি জানি না অন্যদের গানের বেলায় কেমন, তবে আমার বেলায় আমেরিকা গিয়েও খেয়াল করলাম, আমার একটা শোতে যদি এক শ লোকের সমাগম হয়, তার মধ্যে কুড়ি-পঁচিশজন আঠারো বা তার থেকে নিচের বয়সী। অথচ, সেখানকার পরবর্তী জেনারেশন বাংলা গান শোনে না বলা হয়। আমার সঙ্গে দুটো বাচ্চা ছেলে স্টেজে গান গাইল। আমার ভালো লাগল যে যাদেরকে জেন-জি বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যেও আমার গান রয়েছে। কলকাতায়ও দেখি, আঠারো থেকে চব্বিশের মধ্যে ছেলেপুলেরা আমার গান শুনছে। তাদের কাছে যে পৌঁছাতে পারছি, এটা বিরাট পাওনা। এত দূর পৌঁছাব ভাবিনি। এত দিন তো আমার রিটায়ার করে যাওয়ার কথা। আর এখনই দেখছি, যত নতুন নতুন ডিরেক্টর আসছে, তারা আমাকে নিয়ে গান গাওয়াতে চাইছে। অভিনয় করাতে চাইছে। এত দিন তারা সুযোগ পায়নি বলে আমিও সুযোগ পাইনি।
আপনার গান তো লিরিক্যালি খুবই সমৃদ্ধ। নতুন প্রজন্মের, যাঁরা খুব বেশি সাহিত্য পড়েননি, তাঁদের তো আপনার গানের সঙ্গে কানেক্ট করতে সমস্যা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণটা কী মনে হয় আপনার কাছে?
বাংলা সাহিত্য আমার মতো ছেলেও যতটুকু পড়েছে, তারা হয়তো তার থেকেও কম পড়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছে, তার কারণ বোধ হয়, ভাষা-সাহিত্য সুরের বাইরে। আমার মনে হয়, অ্যাটিটিউট ও দর্শন। যাদের সঙ্গে আমার রোজ দেখা হয়, তাদের সবার বয়স আঠারো-উনিশ-কুড়ি থেকে শুরু। তারা আমাকে পছন্দ করে। ওদের সঙ্গে মিশতে আমার ভালো লাগে। কথা বলতে ভালো লাগে। ওদের কথা শুনতে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, আমি ওদেরই, ওই জেনারেশনেরই। আমার দলটা যদি দেখো, সেখানে আমি ছাড়া সব অবিবাহিত, তারা আমার অর্ধেক বয়সী। এই ছেলেমেয়েগুলো এসে আমার সঙ্গে গান গাইছে। আমার সঙ্গে লাফাচ্ছে-ঝাপাচ্ছে। এটাই কারণ যে, আমি ওদের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারি।
আমি আমার সময়টা, যেটা কাটিয়েছি, তার কিছু আবর্জনা বা লাগেজ নিয়ে ঘুরিনি। সব বাবা তো ভুলে যায়, সে-ও কোনো দিন ছেলে ছিল। কিন্তু আমার মধ্যে সেই ছেলেটা বেঁচে আছে। যার জন্যই বোধ হয় আমি তরুণদের সঙ্গে নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে মিশতে পারি, তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে। আমাকে এখনো তারা শিলুদা বলে, যেখানে শিলু দাদু বলা উচিত ছিল।
আপনি তো তরুণদের প্রতি ক্রিটিক্যাল নন। সব সময় আশাবাদের কথা বলেছেন। ‘শ্মশানে, কফিনে বা মুদির দোকানে’ স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের কারণেই তরুণেরা বেশি পছন্দ করেন আপনাকে?
তুমি, আমি, সবাই—আমাদের জীবনের সংঘাত, সমস্যা ও অশান্তি—এগুলো তো থাকবেই। আর একটা ধারণা থাকে যে, আমরা বোধ হয় বেশি জানি। কারণ, আগে জন্মেছি বলে। এই ধারণা আমার নেই। যখন কোনো বাচ্চা একটা কাজ করে, তাকে আমি ‘ধুর ধুর তুই কী ঘোড়ার ডিম জানিস’—এসব বলি না। আমার মনে হয়, আমিও তো ওর মতো ছিলাম। এখনো আছি। এখনো আমার ভুল হয়। এখনো আমি ভুল জায়গায় পা দিই, ভুল জায়গায় হাত দিই।
এই বাচ্চাগুলোর প্রতি এটা আমার সিমপ্যাথি নয়। এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে হয়। বয়সটা আমার কাছে ফ্যাক্টর মনে হয় না। বড় হওয়ার সুবিধা নিই। সেটা অন্য কথা। বড় হওয়ার কারণে আমাকে প্রণাম করে, প্রণামটা হয়তো গ্রহণ করি। কিন্তু বয়স বেশি বলেই তোর থেকে আমি সবকিছু বেশি জানি, তা বলি না। আমার অভিজ্ঞতাগুলো, উপলদ্ধিগুলো তাদেরকে বোঝাই। বোঝাতে পারি। কিন্তু তারা এই সময়টায় এসব ভাববে না, আমি জানি। আমার যখন ১৫ বছর বয়স ছিল, তখন তো এখনকার বয়সের মতো ভাবিনি।
বাচ্চাদের ‘করিস না’ বলার থেকে ‘কর’ বলাটা ভীষণ প্রয়োজন। এটাই আমি ওদেরকে বলি।
এ রকম সমর্থন বা সহযোগিতা আপনি পাননি শুরুর সময়ে। নানা রকম সমালোচনার মধ্য দিয়ে আপনাকে আসতে হয়েছে। সে কারণেই কি নতুনদের ক্রাইসিস বেশি করে ফিল করেন?
হতে পারে। আমি এটাকে একদম না বলে দিতে পারব না। আমাদের সময়টায় শুধু আমি নই, অনেকেই ছিল, তাদেরকে ভয় দেখানো হতো। ‘এটা করিস না, এটা হবে না, এটা আমাদের দ্বারা হয় না’। সেটা শুনে হয়তো আমরা থমকে গেছি। কিন্তু পাশেই দেখতে পেয়েছি, আরেকটা লোক, সে কিন্তু আমার মতো অবস্থায় ওই উচ্চতায় পৌঁছাতে চেয়েছে এবং পেরেছে। ছোটবেলায় বলতাম, বাবা, আমি মুম্বাইতে গিয়ে হিরো হব। প্রতিবেশীকে বলতাম, কাকুদের বলতাম। আমাকে কেউ বিশ্বাস করত না। পাত্তা দিত না। আমাকে বলত—সম্ভব না, ছেড়ে দে। কিন্তু আমারই পাড়ার এঁদো গলিতে, আমার থেকেও দুরবস্থায় থাকা একটা লোক মুম্বাইয়ে গিয়ে সুপারস্টার হলো। আমাদের চোখের সামনে। বিশ্বব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে গেল। তার পাড়ার গলিতে সকাল ৯টার আগে আলো ঢুকত না। সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল মিঠুন চক্রবর্তী। আমার পাড়াতেই একটা টিনের চালের বাড়িতে, যেখানে সব কংক্রিটের বাড়ির মধ্যে একটা টিনের চালার বাড়ি ছিল, সেখানে আমার এক কাকুর বন্ধু থাকত। সে ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবলার। বেস্ট অ্যাথলেট অব হিজ টাইম। এগুলো তো আমার চোখের সামনে দেখা। তাদের থেকে ভরসা পেয়েছি।
ছেলে ধী মজুমদারও তো আপনার পথ ধরে গানে এসেছে। একসঙ্গে গানও করতে দেখা গেছে আপনাদের। ছেলেকে আপনি কী পরামর্শ দেন?
আমি যেন কোনো দিন বাবা না হয়ে যাই, এই চেষ্টাই করে গেছি ছেলের কাছে। শাসন করার এক-দুবার চেষ্টা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি তাকে বেশির ভাগ সুযোগটা দিয়েছি। শাসন তো একটু রাখতেই হয়। অনুশাসনের খুব প্রয়োজন আছে। সুযোগটা দিয়েছি, যাতে নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারে। শুধু আমার ছেলে বলে নয়, আমার কাছে ওই বয়সী, তার থেকেও কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আসে। তাদেরকেও আমি একই কথা বলি। যেটা চাইছিস, সেটা কর। পড়াশোনা করতে চাইলে জানার জন্য কর, নম্বরের জন্য করিস না। খ্যাতি হবে, নাম হবে, একটা বাড়ি করব, গাড়ি করব—ভাবিস না। বাড়ি-গাড়ি তোকে ফলো করবে। আগে মন দিয়ে যে কাজটা করতে চাইছিস, সেটা কর। কেউ কিছু বলল বলে তুই থেমে যাবি কেন! নিজের কনফিডেন্সটা আসল। আর যদি মনে হয়, যে মতটা পাচ্ছিস, সেটা সুচিন্তিত, যদি মেলে, তাহলে সেই পদ্ধতিতে যাওয়ার চেষ্টা কর।
যখন অন্যের লেখা ও সুর করা গান করেন, তখন কতটা স্বাধীনতা দেন?
আমাকে যদি কোনো লিরিসিস্ট বলে, এই গালিবই যখন লিখেছে, বলেছে, তুমি কিছু বদলাতে চাইলে, চেঞ্জ করতে চাইলে করো। আমি বলি, আমি আইডিয়া দিতে পারি, চেঞ্জ করতে পারব না। কারণ, লিখেছ তুমি। আমি তোমাকে বলে দিতে পারব, এই জায়গাটা কী রকম লাগছে। কিন্তু ডিসিশন তোমাকে নিতে হবে। নাহলে অরিজিনালিটি মার খাবে। আমি যদি একটা সেনটেন্স বলে দিই, তাহলে তো সেটা আমার হয়ে যাবে। ওটা তোমার জিনিস হতে হবে।
বীরভূমের সঙ্গে খুব নিবিড় সম্পর্ক আপনার। প্রত্যন্ত মানুষ, প্রত্যন্ত অঞ্চল, সুবিধাবঞ্চিত জনপদের প্রতি অন্য রকম টান দেখতে পাই। সেখানে কি অরিজিনালিটি খুঁজে পান বেশি?
আমি জন্মেছি একটা অজ গ্রামে। ছয় মাস আমি ওখানেই ছিলাম। তারপরে কলকাতায় আসি। আমার বাবা, আমার দাদু তখন অলরেডি কলকাতায় থাকতেন। আমার ওই ছয় মাস আঁতুড়ঘরে শুয়ে থাকা অজ্ঞান অবস্থায়, সেখানে যে সুজুনিটা দেওয়া হয়েছিল, যার ওপর আমি শুতাম, তার নিচে মাটি ছিল। সেই মাটির সঙ্গে আমার কানেকশন। খুব কঠিন কানেকশন এটা। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছি এবং আরও কিছু বন্ধুবান্ধব, সমাজ—তাদের কাছে শিখেছি, নিজে নিজেও শিখেছি কিছু জিনিস; এটা আমাকে বুঝিয়েছে যে, সবাই আমরা এক। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ট্যালেন্ট আছে। প্রতিটি মানুষ আজকে যে অবস্থায় আছে, সে কালকে সেই অবস্থায় থাকতে না-ও পারে। আজকের দিন দেখে যদি আমি তাকে বিচার করে ফেলি, সেটা ভুল হবে। আর তার কী জাত, কী ধর্ম, কী ভাষায় কথা বলে, বড় বড় লোকেরা ওদের সম্বন্ধে কী বলে গেছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ফলে মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ভালো। গ্রামে গেলে মনে হয় অনেক জায়গা। একজন একটা জায়গায় ঢুকে পড়লে, সেখানে আর কেউ ঢুকতে পারবে না, তা নয়। স্পেস প্রচুর। প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে। যাই একটু, নির্মল আকাশ, একটু কম দৃশ্যদূষণ, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আকাশ দেখতে পাচ্ছি, গাছ দেখতে পাচ্ছি। (শহরে) পোস্টার, হোর্ডিং, ব্যানার, তার মধ্যে নেতা-কাউন্সিলরদের ছবি, বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি—ভালো লাগে না। তবে এখন তো গ্রামটা প্রায় শহরের মতো। গ্রামের লোকজন আমার থেকে বেশি শহুরে। আছে হয়তো গ্রামে, কিন্তু সেখানে থাকতে চায় না।
গ্রাম থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ ভিড় করছে শহরে...
তারা বাধ্য হচ্ছে। এখানে একটা বড় রাজনীতি আছে। যদি সে রকমভাবে তুমি স্বশাসিত করতে পারতে, তাহলে তো গ্রামের লোকদের দরকার পড়ত না টাকা ইনকাম করার জন্য শহরে আসার। সে যদি গ্রামে নিজের ঘরে থেকে প্রয়োজনীয় টাকাটা ইনকাম করতে পারত, তাহলে কি শহরে আসত?
গ্রামে তো কাজের সংকট, মজুরিবৈষম্য আছেই। মর্যাদাগত জায়গা থেকে কৃষকেরা প্রচণ্ড অবহেলিত হয়ে আছে...
বাংলাদেশের কথা জানি না, আমার এখানে কৃষকদের শিক্ষিত করা হয়নি। শাসক বা সরকার যারা ছিল, তারা যদি এই ইনিশিয়েটিভটা নিত যে, সবাইকে শিক্ষিত করব। কীভাবে ভালো চাষ করা যায়, সেটা শেখাব। চাষটাকে সাবজেক্টের মধ্যে রাখব। যেখানে চাষার ছেলেরা পড়াশোনা করবে। সেটা করেনি। এক বিঘা জমিতে এক শ টিন ধান হতো আগে, এখন এসে ৭৫ টিনে ঠেকেছে। তারা যদি শিক্ষিত হয়ে সেটাকে সুন্দরভাবে করে, ওখান থেকে এক-দেড় শ টিন ধান উৎপাদন করতে পারত এবং ঠিক মূল্যে বেচতে পারত; তাহলে বাদবাকি মর্যাদা তারা এখান থেকেই তুলে নিত। যারা গোটা দেশটাকে কন্ট্রোল করে, এটুকু করার ক্ষমতা তাদের ছিল। সেটা করলেই কৃষকদের, মজুরদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ত, মর্যাদাও বাড়ত।
সামাজিক বৈষম্যের বিষয়টি বারবার এসেছে আপনার গানে। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’ এ রকম রাজনৈতিক বক্তব্যও তুলে এনেছেন...
যে গানটার কথা তুমি বললে—বেতাল বেচাল। ৯৪ সালে অ্যালবাম বের করার পরে এটা প্রথম দুই-তিন-চার বছর আমার শোতে জায়গা পেত। তারপরে নুতন গান এসেছে, ওই গান চলে গেছে। কারণ, আমি আর ওই গান গাইনি। আর ওটা বলতে ভালো লাগছে না। কিন্তু এবার আমেরিকাতে গিয়ে, অনেক গান যখন অনেক দিন পর গাইছিলাম, তখন রিয়েলাইজ করেছি যে, ৩০ বছরে পৃথিবীটা পাল্টায়নি। আজও এই কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’, কিংবা ‘রবিতে শনি, শনিতে সুখ, শেষ হলেই আবার সোম/পথ অবরোধ ধার শোধবোধ, ইলেকশনের দু-চারটে বোম/ এমনি করেই কাটবে দিন নিত্যনতুন নাগপাশে/ পুলিশে ধরবে নিরীহ গরু হঠাৎ কখন মাসের শেষে/ বাংলা মদের দোকানগুলোয় মাসের শেষেও ভিড় বেশি/ এ দিন বদল করতে গেলে বদলি হবেন লোকাল ওসি’—এটা আজকেও সত্যি। এ জন্য এখন আর এগুলো নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। এ গান করতে ইচ্ছে করে না। আমি অন্য কোনো গানের খোঁজে আছি।
কী ধরনের গান?
আমি জানি না। আমি যখন প্রথম গান শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম, অন্য রকম কিছু করব। এই ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৫-১৬ বছর হয়ে গেল আমি নিজস্ব অ্যালবাম, বেসিক অ্যালবাম বের করিনি। কারণ, আমার মনে হচ্ছে, আমি আমাকে টপকাতে পারছি না। আমি যেটা করেছি, তার বাইরে আর কিছু করতে পারছি না। সিনেমার গান, ফরমায়েশি গান বা অন্য কেউ গাওয়াচ্ছে যে গান, সেগুলো গাইছি। অগায়ক থেকে গায়ক হয়ে গেছি, প্রথম প্রথম সন্দেহ ছিল লোকের, এখন তাদের মনে হচ্ছে, শিলাজিৎকে গায়ক তো ভাবতেই হবে। কিছু করার নেই। আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আর নেই।
লোকে যা-ই বলুক, আপনি তো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আপনার ভেতরে তো কোনো ধরনের কনফিউশন ছিল না যে, আপনি কীভাবে শব্দগুলো নিয়ে আসবেন। কীভাবে গানের শরীরটা তৈরি করবেন...
উনারা আমাকে অগায়ক ভাবার আগেই আমি জানতাম, আমি অগায়ক। আমি জানতাম, ভারতবর্ষে, পশ্চিমবঙ্গে, পৃথিবীতে যেভাবে গান গাওয়া হয়, বেশির ভাগ লোক যেটাকে গান মনে করে, আমি যেভাবে করছি, সেটা ও রকম নয়। আমারটা একটু আলাদা। আমি অনেক কিছু জোড়াতালি দিচ্ছি। ‘দূরে’ শব্দকে যদি সুর করতে হয়, আমি বলছি দূ....রে (অনেকটা টেনে), আর যারা গান জানে, তারা সেটাকে বলছে... দূরে (কণ্ঠের কারুকাজ দিয়ে)। আমি জানি, ভোরবেলার পরিস্থিতিটাকে বোঝানোর জন্য এক শ মিউজিক ডিরেক্টর ভোরের রাগকে প্রিলিউড করেছেন। আমি শুরু করেছি ভোরের অ্যাম্বিয়ান্স দিয়ে। সেটাই আমার চাহিদা। অন্য কিছু শব্দ, অন্য কিছু আওয়াজ। আমার এই অন্য আওয়াজটা লোকে পছন্দ করেছে এবং এখনো আমার পেট চালাচ্ছে তারা। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে যাওয়ার পর আর তো উপায় থাকে না। যে লোকগুলো বলেছিল—ও শেষ হয়ে যাবে বেনোজলে। আর তো বলতে পারছে না। ৩০ বছর পর আর কিইবা বলবে। ৩০টা বছর কি কম? পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ও বাম ফ্রন্ট ছাড়া কোনো দেশে কোনো জায়গায় কেউ ৩০ বছর ধরে শাসন করেছে? পেরেছে? আমি শাসন হয়তো করিনি, টিকে তো আছি।
আপনি নিজেই নিজেকে অগায়ক বলেন, তাহলে গান গাইতে আসার সাহস করেছিলেন কীভাবে?
কাজটা করতে নিজের ভালো লাগছিল। সেটাকে টেস্ট করছিলাম নিজের সঙ্গে। আমি স্পোর্টসম্যান, শারীরিক কসরতে অনেক কিছু করতে পারি। আমি নাচও করতাম ভালো। পাড়ায় নাচলে লোকে অ্যাপ্রিশিয়েট করত। কিন্তু গান গাওয়া আমার চিন্তায় ছিল না কখনো। বন্ধুবান্ধবেরা গাইত। তাদের কাছে গান শুনতাম। মামাবাড়িতেও সমৃদ্ধ একটা গানের কালচার ছিল। কিন্তু আমি গাইব, ভাবিনি কখনো। কম্পোজার ভাবতাম নিজেকে। দেখলাম, আমি একটা গান লিখতে পারছি। ‘তুমি যা জিনিস গুরু, আমিই জানি, আর কেউ জানে না’—আমি কথাটা বলতে পারলাম। ওটা সুর করার সময় কোনো পাণ্ডিত্য আমাকে হেল্প করেনি, আমি যা বলতে চাইলাম, সেটাই বের হলো। ‘বাজল ছুটির ঘণ্টা’ কিংবা ‘তোর ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’—এটা বলতে চাইছি। আমি সুর-তাল কিছু বুঝিনি। ভেবেছিলাম, অন্য আরেকজন বা অন্য কেউ গান গাইবে আর আমি তৈরি করব। এ সময় এক তথাকথিত পাড়ার বন্ধু আমার উপকারটা করে। ওকে আমি নিজের গান গাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও বিভিন্ন মঞ্চে আমার গানগুলো গাওয়া শুরু করে। বলতে শুরু করে, ওগুলো ওর গান। ইট ওয়াজ বিগ থ্রেট ফর মি যে, আমার গানগুলো পপুলার হয়ে যেতে পারে অন্যের নামে। সুতরাং, আর কিছু করার নেই, যা পারি, আমাকেই গাইতে হবে। ১৯৮৪ সালে হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছি, তখন থেকে আমি নতুন শব্দ, নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলাম, নতুন ফর্ম। প্রথম অ্যালবাম রিলিজ করেছি ১৯৯৪ সালে। এই দশ বছর আমি শিখেছি।
কিন্তু তারপরও তো নিজের গানকে কখনো গান বলতেন না আপনি। সেটা কেন?
আমি আমার অ্যালবামে গান লিখতাম না। প্রতিটি অ্যালবামে শুধু লেখা থাকত ‘ভূমিকা—শিলাজিৎ’। এবার এটা গান কি না, সেটা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দিই। ‘সর্বনাশ’-এ এসে প্রথম আমি লিখলাম, শিলাজিতের ৯টা কালো গান। তত দিনে আমার আটটা অ্যালবাম বেরিয়েছে, ৯ নম্বর অ্যালবাম বেরোচ্ছে। কিছু কিছু মজা করতাম। অ্যালবামে ইচ্ছে করে বানান ভুল করতাম, যাতে লোকে জিজ্ঞেস করে, এই বানানটা ভুল কেন? তার মানে বুঝতাম, ও দেখেছে। আমার ক্যাসেটে সাইড এ, সাইড বি-এর বদলে ‘এপিঠ ওপিঠ’ লেখা থাকত। ফিসফিস অ্যালবামে যেমন প্রথম গানের লিরিক রিভার্স প্রিন্ট করে দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম, আয়না দেখুন। যে ইন্টার-অ্যাকটিভ হয়ে আয়নায় দেখবে, সে লিরিকটা দেখতে পাবে। ‘যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে’ গানের আগে এমন লো-ভলিউমে রেখেছি মেয়ের গলাটা—ভলিউম তোমাকে বাড়াতেই হবে। যেই বাড়াল, মিউজিক আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ এমন জোরে আওয়াজ হলো, আবার কমাতে হবে। ঝিন্টি গানে ইচ্ছে করে একটা মোবাইল নয়েজ রাখলাম। একটা ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে ‘সর্বনাশ’ অ্যালবাম শেষ করলাম। বললাম, ‘এই ব্রেকের আওয়াজ শুনে হয়তো অনেকে ভাববে, কেন অ্যালবামটা ব্রেক কষে শেষ হলো। যারা ভাববে, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে, আর যারা ভাববে না, তাদের আমি দেখে নেব।’ অ্যালবাম শুনে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘শিলুদা, ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে কেন শেষ হলো?’ আমি বললাম, ‘দেখা হলো তো? আমি তো বলেছিলাম, দেখা হবে।’ আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ইন্টার-অ্যাকটিভ কিছু করতে, লোকের সঙ্গে যাতে আমার যোগ তৈরি হয়। আমার জন্য যাতে একটু ডিস্টারবেন্স হয়। একটু টেনশন হয়। ভালো লাগা তৈরি হয়। আই বিলিভ, এভরি পিস অব সাউন্ড ইজ মিউজিক।
সাউন্ড নিয়েই শেষ প্রশ্নটা করব। সাউন্ড নিয়ে আপনার এক্সপেরিমেন্ট বাংলা গানে আগে দেখা যায়নি। পাখির ডাক, হকারের হাক, রেডিওর ধারাভাষ্য হয়ে ওঠে আপনার গানের অনুষঙ্গ। এগুলো গানের অংশ হতে পারে, এ ভাবনাটা কীভাবে এল?
আমি নিরালা দুপুর বলে একটা গান করেছিলাম, সেই গান যখন বেঁধেছি, আমার গ্রামের বাড়ির ছাদে গিটার স্ট্রং করছি আর একটা ঘুঘু ডেকে যাচ্ছে ক্রমাগত। তার সঙ্গে আরেকটা ঘুঘু জয়েন করেছে। দ্যাটস গিভিং মি দ্য মেলোডি, অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ পারকাশন। দ্যাটস মাই মিউজিক, দ্যাটস মিউজিক টু মি। লিমিটেশনের জন্য আমার গান আলাদা হয়েছে আরও বেশি। আমি একটা ভোরবেলার মিউজিক তৈরি করব, আমার কাছে ভোরের রাগ নেই। আমি হয়তো দশটা রাগের নাম জানি না। তাহলে আমি ভোরবেলার পরিবেশটা কীভাবে শ্রোতার কাছে পৌঁছাব? কী করে বোঝাব যে গানের শুরু একটা ভোরবেলায়? ভোরের সাউন্ড খুঁজতে শুরু করলাম। অদ্ভুত সব জিনিস মাথায় এল। দাঁত মাজছি। কিন্তু দাঁত মাজার শব্দ দিলে সেটা নয়েজের মতো লাগছে, ভিজ্যুয়ালটা বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে মানিকতলার মোড়ে তুমি দাঁড়িয়ে কাকভোরে, একটা চায়ের দোকান যদি হয়। রেডিওতে জাস্ট প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আর রেডিওতে বন্দে মাতরম শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে চায়ের কাপের খটখট। সেখান থেকে গানে ঢুকলাম। কী অদ্ভুত সমাপতন! সাউন্ডটাকে আমি ওইভাবে দেখতে পাই। তারা পড়ছে? তাহলে তারা পড়ার শব্দটা কেমন হবে? সেটা বের করার জন্য ভেতরে একটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর প্রসেস চলতে থাকে। খোঁজা চলতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে তারপর পাই।
এ রকম বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন নয়েজের মধ্যে আমার মনে হয় গান হতে পারে। হয়। হয়েছে। এটা আমি পৃথিবীতে প্রথম করিনি। আমি যেভাবে অ্যাপ্লাই করেছি, হয়তো অন্য কেউ করেনি। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কত মানুষ নতুন কিছু করার কথা ভাবছে। আমি এটা করেছি প্রথম, আর কেউ করেনি—এটা বলার আগে একটু সাবধানে। কারণ, এ পৃথিবী কোটি কোটি মানুষের। সবাই কিছু না কিছু করছে।
বাংলাদেশ থেকে অনেক বছর পর আপনার গান বের হলো। ‘ভেঙে গেল’ গানটি তৈরি হওয়ার গল্পটা কী?
গালিব (গীতিকার গালিব সর্দার) তো আমার বহুদিনের ভক্ত। ওর বহুদিনের ইচ্ছে যে, আমাকে দিয়ে একটা গান গাওয়াবে। কিন্তু এত দিন সেটা ম্যাচিউর করেনি। এবার ব্যাপারটা কানেক্ট হয়েছে। ও যে আমার জন্মদিনে গানটা রিলিজ করবে, এটা আমার ভাবনায় ছিল না। গানটার সুর ও কথা মিলিয়ে আমিও ফিডব্যাক পাচ্ছি, সবার ভালো লেগেছে। আমারও ভালো লেগেছে বলেই গেয়েছি। ওর টিম এত সুন্দর একটা ভিডিও তৈরি করেছে, দেখে আমার সত্যিই তাক লেগে গেছে। খুবই মিনিমাল ভাবনায় গোটা জিনিসটা করা।
বাংলাদেশের শ্রোতাদের নিয়ে আপনার এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
যেহেতু বাংলাদেশের ভাষাটাই বাংলা। তাই বাংলা গানের শ্রোতা ওখানে আমাদের থেকে বেশি। আমি জানি না বাংলাদেশের লোকসংখ্যা আর পশ্চিমবঙ্গের লোকসংখ্যার ফারাক কতটা! কিন্তু একটা দেশের রাষ্ট্রভাষা যখন বাংলা, সেখানে অন্য রকম মর্যাদা সেই ভাষার। তাই আমার মনে হয়, বাংলাদেশের মানুষেরা আমাদের এখানকার গান আগ্রহের সঙ্গে শোনেন।
১০ বছর আগে ঢাকায় একবার এসেছিলেন। তারপর আর এখানকার শ্রোতারা আপনাকে পাননি। কোনো বিশেষ কারণ আছে?
আমি একবার বাংলাদেশে একটা রেডিওর জন্য শো করতে গেছিলাম। কিন্তু কোনো লাইভ শো করতে পারিনি। অথচ আমি খুব মুখিয়ে থাকতাম। আমার ক্যারিয়ার ৩০ বছর হয়ে গেল। এর মধ্যে আমাকে সেভাবে কেউ লাইভ শো করার জন্য ডাকেনি। আমিও মিস করছি বাংলাদেশের মানুষকে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের শ্রোতারাও আমাকে মিস করছেন। এখানকার অনেক গায়ক-গায়িকা আছেন, যাঁরা না হলেও বাংলাদেশে দশ-পনেরোবার গেছেন। আর আমি একবারও যেতে পারছি না, সেটার তো একটা কারণ আছে। আমি ষড়যন্ত্রী বা কন্সপিরেসিতে বিশ্বাস করি না এসব ক্ষেত্রে। সুতরাং, আমি পরিষ্কার করে বুঝতে পারি, আমি অতটা জনপ্রিয় নই বাংলাদেশে।
কনসার্টের ক্ষেত্রে তো নানা ধরনের এজেন্সি কাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শিলাজিতের গান মানে অন্য ধরনের উন্মাদনা। আপনি এখানে গাইতে এলে তখন আসল চিত্রটা ধরা পড়বে...
আসলে কী হয়, যেকোনো কাজ বা কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু লোক থাকে। তারাই একজন শিল্পীর দর ঠিক করে। তারা মনে করে, এই টাকার মধ্যে উনাকে পাওয়া যাবে। কারণ, তারা অন্য শিল্পীকে এই দরে পেয়েছে। হয়তো অন্যরা আমার থেকে কমে চলে গেছেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আজ না হলেও কাল বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ হবে। যদিও আমার হাতে বিরাট সময় নেই, অলরেডি সিনিয়র সিটিজেন হয়ে গেলাম। সময় যদিও কম, সময় খুব অশান্ত, তবু হয়তো কোনো দিন সুযোগ পাব। আজ গালিবের এই গানটা রিলিজ হলো, মানুষ আমার গান শুনবে। গায়ক হিসেবে আমাকে চিনবে। আরেকটু জনপ্রিয়তা আমার বাড়বে।
সেটা তো অবশ্যই। এখানকার শ্রোতারাও অপেক্ষায় আছেন আপনার গান মুখোমুখি শোনার জন্য। মার্কিন মুলুকে গান শুনিয়ে এলেন। ইউএস ট্যুরটা কেমন হলো?
আমি তো ইউএস ট্যুর নিয়ে একটু সন্দেহে ছিলাম। তার কারণ, বারবার ওরা আমাকে ডেকেছে। আজকে তো নয়। অনেক দিন ধরে ডাকছে। কিন্তু তাদের অ্যাটিটিউড সমস্যা ছিল বলে আমি কোনো দিন যেতে পারিনি। সমস্যাটা কী রকম... আমি জানি না বাংলাদেশের কী রকম মানসিকতা, তবে ভারতবর্ষে একটা মানসিকতা আছে, বিদেশ বা বিলেত গেলে, তারা অনেক কিছুই নিজের জীবনে মওকুফ করে দিতে রাজি আছে। বিদেশে যাচ্ছি, আমেরিকা যাচ্ছি শো করতে, এটা তাদের কাছে পালকের মতো। আমার কাছে তো সেটা নয়। আমার কাছে আমেরিকা গিয়ে শো করাটা এমন কিছু নয়।
আমি যেন শিল্পীর সম্মান নিয়ে ওখানে যেতে পারি। ওখানে বেড়াতে যাওয়ার প্রপোজাল নিয়ে যাব না। আমাকে এ কথাও বলা হয়েছিল, অনেক দিন আগে, ‘আরে আপনি ভাবুন না, আপনি এখানে এসে সব জিনিসপত্র দেখবেন আর কিছু পকেট মানি আর্ন করে যাবেন’। আমি যে মানুষটা, যতটুকু তোমরা চিনেছ, আমার পক্ষে কি এ প্রপোজাল নেওয়া সম্ভব?
এবার গিয়ে দেখলাম, আমার বহু শ্রোতা সেখানে রয়েছে, যারা আমাকে মিস করেছে এত দিন। আমাকে পেয়ে তারা দারুণ আনন্দিত। তাদের পেয়ে আমিও আনন্দিত। আমি চারটে শো করব বলেছিলাম, বেশি করব না, কারণ ফার্স্ট টাইম যাচ্ছি ও দেশে। আমি জানি না কোথায় কী করব, কতটা ট্রাভেল করতে হবে। আমাদের যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, আমরা যা যা চেয়েছিলাম, যেভাবে থাকতে চেয়েছি, যেভাবে যেতে চেয়েছি; সমস্তটা তাঁরা মেইনটেইন করে আমাদের নিয়ে গেছেন। ওখানকার মানুষদের থেকে ভীষণ ভালোবাসা পেয়েছি। বাংলাদেশেও যখন যাব, আগুন জ্বলবে আরও বেশি।
এখানকার ভক্তরা আপনার আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন। আপনার গান ছড়িয়ে দিচ্ছেন, আপনার জন্য গান তৈরি করছেন....
আমি খুব খুশি হয়েছি যে, গালিব আমার ভক্ত হিসেবে আমার জন্য গান তৈরি করেছে। ভেবেছে এবং গানটা আমি যে রকম গাই, সে রকম গানের মতো নয়। একটু অন্য ধাঁচের গান। এ গান যে দুম করে কালকে এক লাখ ভিউ হবে, তা নয়।
আমার খুব ইচ্ছে করে বাংলাদেশের কোনো একটা স্টেজে গাইতে। আমার দারুণ লেগেছিল চন্দ্রবিন্দুর লাস্ট শোটা। হাজার হাজার মানুষ চন্দ্রবিন্দুর গান গাইছে, আমি দেখে এত খুশি হয়েছি, আমার মনে হচ্ছে যেন আমারই গান শুনছে।
আপনি তো ফেসবুকে শেয়ারও করেছিলেন ভিডিওটা...
হ্যাঁ, আমি শেয়ার করেছিলাম। কারণ, বাংলা গান যদি কোথাও থেকে কিছু একটা পায়, আমার মনে হয়, ওটা আমার পাওনা। আজকে যখন ইউএস ট্রিপে যাচ্ছি, এবার পূজার সময় আমরা যেমন গেছি, অন্য আরও দুটো দল, তারাও গেছে—রূপমের (রূপম ইসলাম) এবং অনুপমের (অনুপম রায়)। তিন দলেই আটজন করে মেম্বার, ইনক্লুডিং ম্যানেজার। যারা বলত, একজন দুজন মিউজিশিয়ান নিয়ে আসবেন, তার বেশি নিয়ে আসবেন না, তারা এটা বিশ্বাস করেছে যে, গানবাজনাতে এতগুলো লোককে লাগে একটা দলে। আইসোলোটেড একজন গান গাইবে আর ওখানকার একজন কেউ বাজিয়ে দেবে, এটা নয়। গানটার চরিত্র বুঝতে গেলে তাদেরকে দরকার, যাদের সঙ্গে আমার যাপন রোজের। আমেরিকায় প্রচুর বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশি, ভারতীয় সব মিলিয়েই বাংলা গানের বাজারটা বাড়ছে। তবে বাংলা গানকে বলতে শুধু পশ্চিমবঙ্গকে রাখলে হবে না। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ—দুটো জায়গারই তো বাংলা গান। বাংলা গানের অনুষ্ঠানে আমাদের এখানকার শিল্পীরা যত যাচ্ছে, বাংলাদেশি শিল্পীদের অত দেখতে পেলাম না। আমার বিশ্বাস, সামনের সময়ে সেটাও দেখতে পাব। যদি আমার সঙ্গে তাদের দেখা হয়, বাংলাদেশে, আমেরিকাতে অথবা অন্য কোনো দেশে; আমাদের দুই শিল্পীর মধ্যে দেখা হবে, কথা হবে, যোগাযোগ হবে।
কোনো দিন হয়তো জেমসের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। তিনি ইদানীং বিদেশে কনসার্ট বেশি করছেন...
উনি অনেক ওপরের স্তরের মানুষ, ভীষণ জনপ্রিয়, আমরা সেই তুলনায় কিছুই না। কিন্তু উনার গান শুনেছি। মনে হয়, উনি মেজাজে আমার মতোই। আলাপ হয়নি কখনো। আমি জানিও না উনি আমাকে চেনেন কি না। তবে আমি চিনি, জানি। খেয়াল রাখি, কারা কারা গান গাইছে, তাদের গান শুনি। পছন্দ করি। এলআরবি, আর্টসেল, আরও সব নতুন ছেলেপুলেরা গান গাইছে। অর্ণব। অনেকেই আছে।
আপনার গানের মূল শ্রোতা নব্বইয়ের দশকেও তরুণেরা ছিলেন। ২০২৫ সালে এসেও সেই তরুণ প্রজন্ম। সব প্রজন্মের ইয়াং ক্রাউডকে আকর্ষণ করার এই ম্যাজিকটা কী?
এটা একটা মজার ব্যাপার। আমি জানি না অন্যদের গানের বেলায় কেমন, তবে আমার বেলায় আমেরিকা গিয়েও খেয়াল করলাম, আমার একটা শোতে যদি এক শ লোকের সমাগম হয়, তার মধ্যে কুড়ি-পঁচিশজন আঠারো বা তার থেকে নিচের বয়সী। অথচ, সেখানকার পরবর্তী জেনারেশন বাংলা গান শোনে না বলা হয়। আমার সঙ্গে দুটো বাচ্চা ছেলে স্টেজে গান গাইল। আমার ভালো লাগল যে যাদেরকে জেন-জি বলা হচ্ছে, তাদের মধ্যেও আমার গান রয়েছে। কলকাতায়ও দেখি, আঠারো থেকে চব্বিশের মধ্যে ছেলেপুলেরা আমার গান শুনছে। তাদের কাছে যে পৌঁছাতে পারছি, এটা বিরাট পাওনা। এত দূর পৌঁছাব ভাবিনি। এত দিন তো আমার রিটায়ার করে যাওয়ার কথা। আর এখনই দেখছি, যত নতুন নতুন ডিরেক্টর আসছে, তারা আমাকে নিয়ে গান গাওয়াতে চাইছে। অভিনয় করাতে চাইছে। এত দিন তারা সুযোগ পায়নি বলে আমিও সুযোগ পাইনি।
আপনার গান তো লিরিক্যালি খুবই সমৃদ্ধ। নতুন প্রজন্মের, যাঁরা খুব বেশি সাহিত্য পড়েননি, তাঁদের তো আপনার গানের সঙ্গে কানেক্ট করতে সমস্যা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। কারণটা কী মনে হয় আপনার কাছে?
বাংলা সাহিত্য আমার মতো ছেলেও যতটুকু পড়েছে, তারা হয়তো তার থেকেও কম পড়েছে। কিন্তু আমার সঙ্গে কানেক্ট করতে পারছে, তার কারণ বোধ হয়, ভাষা-সাহিত্য সুরের বাইরে। আমার মনে হয়, অ্যাটিটিউট ও দর্শন। যাদের সঙ্গে আমার রোজ দেখা হয়, তাদের সবার বয়স আঠারো-উনিশ-কুড়ি থেকে শুরু। তারা আমাকে পছন্দ করে। ওদের সঙ্গে মিশতে আমার ভালো লাগে। কথা বলতে ভালো লাগে। ওদের কথা শুনতে ভালো লাগে। আমার মনে হয়, আমি ওদেরই, ওই জেনারেশনেরই। আমার দলটা যদি দেখো, সেখানে আমি ছাড়া সব অবিবাহিত, তারা আমার অর্ধেক বয়সী। এই ছেলেমেয়েগুলো এসে আমার সঙ্গে গান গাইছে। আমার সঙ্গে লাফাচ্ছে-ঝাপাচ্ছে। এটাই কারণ যে, আমি ওদের সঙ্গে খুব সহজে মিশতে পারি।
আমি আমার সময়টা, যেটা কাটিয়েছি, তার কিছু আবর্জনা বা লাগেজ নিয়ে ঘুরিনি। সব বাবা তো ভুলে যায়, সে-ও কোনো দিন ছেলে ছিল। কিন্তু আমার মধ্যে সেই ছেলেটা বেঁচে আছে। যার জন্যই বোধ হয় আমি তরুণদের সঙ্গে নির্দ্বিধায়, নিঃসংকোচে মিশতে পারি, তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে পারে। আমাকে এখনো তারা শিলুদা বলে, যেখানে শিলু দাদু বলা উচিত ছিল।
আপনি তো তরুণদের প্রতি ক্রিটিক্যাল নন। সব সময় আশাবাদের কথা বলেছেন। ‘শ্মশানে, কফিনে বা মুদির দোকানে’ স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। এই বক্তব্যের কারণেই তরুণেরা বেশি পছন্দ করেন আপনাকে?
তুমি, আমি, সবাই—আমাদের জীবনের সংঘাত, সমস্যা ও অশান্তি—এগুলো তো থাকবেই। আর একটা ধারণা থাকে যে, আমরা বোধ হয় বেশি জানি। কারণ, আগে জন্মেছি বলে। এই ধারণা আমার নেই। যখন কোনো বাচ্চা একটা কাজ করে, তাকে আমি ‘ধুর ধুর তুই কী ঘোড়ার ডিম জানিস’—এসব বলি না। আমার মনে হয়, আমিও তো ওর মতো ছিলাম। এখনো আছি। এখনো আমার ভুল হয়। এখনো আমি ভুল জায়গায় পা দিই, ভুল জায়গায় হাত দিই।
এই বাচ্চাগুলোর প্রতি এটা আমার সিমপ্যাথি নয়। এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে হয়। বয়সটা আমার কাছে ফ্যাক্টর মনে হয় না। বড় হওয়ার সুবিধা নিই। সেটা অন্য কথা। বড় হওয়ার কারণে আমাকে প্রণাম করে, প্রণামটা হয়তো গ্রহণ করি। কিন্তু বয়স বেশি বলেই তোর থেকে আমি সবকিছু বেশি জানি, তা বলি না। আমার অভিজ্ঞতাগুলো, উপলদ্ধিগুলো তাদেরকে বোঝাই। বোঝাতে পারি। কিন্তু তারা এই সময়টায় এসব ভাববে না, আমি জানি। আমার যখন ১৫ বছর বয়স ছিল, তখন তো এখনকার বয়সের মতো ভাবিনি।
বাচ্চাদের ‘করিস না’ বলার থেকে ‘কর’ বলাটা ভীষণ প্রয়োজন। এটাই আমি ওদেরকে বলি।
এ রকম সমর্থন বা সহযোগিতা আপনি পাননি শুরুর সময়ে। নানা রকম সমালোচনার মধ্য দিয়ে আপনাকে আসতে হয়েছে। সে কারণেই কি নতুনদের ক্রাইসিস বেশি করে ফিল করেন?
হতে পারে। আমি এটাকে একদম না বলে দিতে পারব না। আমাদের সময়টায় শুধু আমি নই, অনেকেই ছিল, তাদেরকে ভয় দেখানো হতো। ‘এটা করিস না, এটা হবে না, এটা আমাদের দ্বারা হয় না’। সেটা শুনে হয়তো আমরা থমকে গেছি। কিন্তু পাশেই দেখতে পেয়েছি, আরেকটা লোক, সে কিন্তু আমার মতো অবস্থায় ওই উচ্চতায় পৌঁছাতে চেয়েছে এবং পেরেছে। ছোটবেলায় বলতাম, বাবা, আমি মুম্বাইতে গিয়ে হিরো হব। প্রতিবেশীকে বলতাম, কাকুদের বলতাম। আমাকে কেউ বিশ্বাস করত না। পাত্তা দিত না। আমাকে বলত—সম্ভব না, ছেড়ে দে। কিন্তু আমারই পাড়ার এঁদো গলিতে, আমার থেকেও দুরবস্থায় থাকা একটা লোক মুম্বাইয়ে গিয়ে সুপারস্টার হলো। আমাদের চোখের সামনে। বিশ্বব্যাপী তার নাম ছড়িয়ে গেল। তার পাড়ার গলিতে সকাল ৯টার আগে আলো ঢুকত না। সেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল মিঠুন চক্রবর্তী। আমার পাড়াতেই একটা টিনের চালের বাড়িতে, যেখানে সব কংক্রিটের বাড়ির মধ্যে একটা টিনের চালার বাড়ি ছিল, সেখানে আমার এক কাকুর বন্ধু থাকত। সে ফার্স্ট ডিভিশন ফুটবলার। বেস্ট অ্যাথলেট অব হিজ টাইম। এগুলো তো আমার চোখের সামনে দেখা। তাদের থেকে ভরসা পেয়েছি।
ছেলে ধী মজুমদারও তো আপনার পথ ধরে গানে এসেছে। একসঙ্গে গানও করতে দেখা গেছে আপনাদের। ছেলেকে আপনি কী পরামর্শ দেন?
আমি যেন কোনো দিন বাবা না হয়ে যাই, এই চেষ্টাই করে গেছি ছেলের কাছে। শাসন করার এক-দুবার চেষ্টা করেছি, বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি তাকে বেশির ভাগ সুযোগটা দিয়েছি। শাসন তো একটু রাখতেই হয়। অনুশাসনের খুব প্রয়োজন আছে। সুযোগটা দিয়েছি, যাতে নিজের মতো করে চিন্তা করতে পারে। শুধু আমার ছেলে বলে নয়, আমার কাছে ওই বয়সী, তার থেকেও কম বয়সী ছেলেমেয়েরা আসে। তাদেরকেও আমি একই কথা বলি। যেটা চাইছিস, সেটা কর। পড়াশোনা করতে চাইলে জানার জন্য কর, নম্বরের জন্য করিস না। খ্যাতি হবে, নাম হবে, একটা বাড়ি করব, গাড়ি করব—ভাবিস না। বাড়ি-গাড়ি তোকে ফলো করবে। আগে মন দিয়ে যে কাজটা করতে চাইছিস, সেটা কর। কেউ কিছু বলল বলে তুই থেমে যাবি কেন! নিজের কনফিডেন্সটা আসল। আর যদি মনে হয়, যে মতটা পাচ্ছিস, সেটা সুচিন্তিত, যদি মেলে, তাহলে সেই পদ্ধতিতে যাওয়ার চেষ্টা কর।
যখন অন্যের লেখা ও সুর করা গান করেন, তখন কতটা স্বাধীনতা দেন?
আমাকে যদি কোনো লিরিসিস্ট বলে, এই গালিবই যখন লিখেছে, বলেছে, তুমি কিছু বদলাতে চাইলে, চেঞ্জ করতে চাইলে করো। আমি বলি, আমি আইডিয়া দিতে পারি, চেঞ্জ করতে পারব না। কারণ, লিখেছ তুমি। আমি তোমাকে বলে দিতে পারব, এই জায়গাটা কী রকম লাগছে। কিন্তু ডিসিশন তোমাকে নিতে হবে। নাহলে অরিজিনালিটি মার খাবে। আমি যদি একটা সেনটেন্স বলে দিই, তাহলে তো সেটা আমার হয়ে যাবে। ওটা তোমার জিনিস হতে হবে।
বীরভূমের সঙ্গে খুব নিবিড় সম্পর্ক আপনার। প্রত্যন্ত মানুষ, প্রত্যন্ত অঞ্চল, সুবিধাবঞ্চিত জনপদের প্রতি অন্য রকম টান দেখতে পাই। সেখানে কি অরিজিনালিটি খুঁজে পান বেশি?
আমি জন্মেছি একটা অজ গ্রামে। ছয় মাস আমি ওখানেই ছিলাম। তারপরে কলকাতায় আসি। আমার বাবা, আমার দাদু তখন অলরেডি কলকাতায় থাকতেন। আমার ওই ছয় মাস আঁতুড়ঘরে শুয়ে থাকা অজ্ঞান অবস্থায়, সেখানে যে সুজুনিটা দেওয়া হয়েছিল, যার ওপর আমি শুতাম, তার নিচে মাটি ছিল। সেই মাটির সঙ্গে আমার কানেকশন। খুব কঠিন কানেকশন এটা। আমি আমার বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিখেছি এবং আরও কিছু বন্ধুবান্ধব, সমাজ—তাদের কাছে শিখেছি, নিজে নিজেও শিখেছি কিছু জিনিস; এটা আমাকে বুঝিয়েছে যে, সবাই আমরা এক। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ট্যালেন্ট আছে। প্রতিটি মানুষ আজকে যে অবস্থায় আছে, সে কালকে সেই অবস্থায় থাকতে না-ও পারে। আজকের দিন দেখে যদি আমি তাকে বিচার করে ফেলি, সেটা ভুল হবে। আর তার কী জাত, কী ধর্ম, কী ভাষায় কথা বলে, বড় বড় লোকেরা ওদের সম্বন্ধে কী বলে গেছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
ফলে মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ভালো। গ্রামে গেলে মনে হয় অনেক জায়গা। একজন একটা জায়গায় ঢুকে পড়লে, সেখানে আর কেউ ঢুকতে পারবে না, তা নয়। স্পেস প্রচুর। প্রকৃতি আমার খুব ভালো লাগে। যাই একটু, নির্মল আকাশ, একটু কম দৃশ্যদূষণ, রাস্তা দিয়ে হাঁটছি, আকাশ দেখতে পাচ্ছি, গাছ দেখতে পাচ্ছি। (শহরে) পোস্টার, হোর্ডিং, ব্যানার, তার মধ্যে নেতা-কাউন্সিলরদের ছবি, বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি—ভালো লাগে না। তবে এখন তো গ্রামটা প্রায় শহরের মতো। গ্রামের লোকজন আমার থেকে বেশি শহুরে। আছে হয়তো গ্রামে, কিন্তু সেখানে থাকতে চায় না।
গ্রাম থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ ভিড় করছে শহরে...
তারা বাধ্য হচ্ছে। এখানে একটা বড় রাজনীতি আছে। যদি সে রকমভাবে তুমি স্বশাসিত করতে পারতে, তাহলে তো গ্রামের লোকদের দরকার পড়ত না টাকা ইনকাম করার জন্য শহরে আসার। সে যদি গ্রামে নিজের ঘরে থেকে প্রয়োজনীয় টাকাটা ইনকাম করতে পারত, তাহলে কি শহরে আসত?
গ্রামে তো কাজের সংকট, মজুরিবৈষম্য আছেই। মর্যাদাগত জায়গা থেকে কৃষকেরা প্রচণ্ড অবহেলিত হয়ে আছে...
বাংলাদেশের কথা জানি না, আমার এখানে কৃষকদের শিক্ষিত করা হয়নি। শাসক বা সরকার যারা ছিল, তারা যদি এই ইনিশিয়েটিভটা নিত যে, সবাইকে শিক্ষিত করব। কীভাবে ভালো চাষ করা যায়, সেটা শেখাব। চাষটাকে সাবজেক্টের মধ্যে রাখব। যেখানে চাষার ছেলেরা পড়াশোনা করবে। সেটা করেনি। এক বিঘা জমিতে এক শ টিন ধান হতো আগে, এখন এসে ৭৫ টিনে ঠেকেছে। তারা যদি শিক্ষিত হয়ে সেটাকে সুন্দরভাবে করে, ওখান থেকে এক-দেড় শ টিন ধান উৎপাদন করতে পারত এবং ঠিক মূল্যে বেচতে পারত; তাহলে বাদবাকি মর্যাদা তারা এখান থেকেই তুলে নিত। যারা গোটা দেশটাকে কন্ট্রোল করে, এটুকু করার ক্ষমতা তাদের ছিল। সেটা করলেই কৃষকদের, মজুরদের আত্মবিশ্বাসও বাড়ত, মর্যাদাও বাড়ত।
সামাজিক বৈষম্যের বিষয়টি বারবার এসেছে আপনার গানে। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’ এ রকম রাজনৈতিক বক্তব্যও তুলে এনেছেন...
যে গানটার কথা তুমি বললে—বেতাল বেচাল। ৯৪ সালে অ্যালবাম বের করার পরে এটা প্রথম দুই-তিন-চার বছর আমার শোতে জায়গা পেত। তারপরে নুতন গান এসেছে, ওই গান চলে গেছে। কারণ, আমি আর ওই গান গাইনি। আর ওটা বলতে ভালো লাগছে না। কিন্তু এবার আমেরিকাতে গিয়ে, অনেক গান যখন অনেক দিন পর গাইছিলাম, তখন রিয়েলাইজ করেছি যে, ৩০ বছরে পৃথিবীটা পাল্টায়নি। আজও এই কথাটা ভীষণ প্রাসঙ্গিক। ‘ভিআইপি রোড যত্নে মোড়া, আমার গলির রাস্তা খোঁড়া’, কিংবা ‘রবিতে শনি, শনিতে সুখ, শেষ হলেই আবার সোম/পথ অবরোধ ধার শোধবোধ, ইলেকশনের দু-চারটে বোম/ এমনি করেই কাটবে দিন নিত্যনতুন নাগপাশে/ পুলিশে ধরবে নিরীহ গরু হঠাৎ কখন মাসের শেষে/ বাংলা মদের দোকানগুলোয় মাসের শেষেও ভিড় বেশি/ এ দিন বদল করতে গেলে বদলি হবেন লোকাল ওসি’—এটা আজকেও সত্যি। এ জন্য এখন আর এগুলো নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। এ গান করতে ইচ্ছে করে না। আমি অন্য কোনো গানের খোঁজে আছি।
কী ধরনের গান?
আমি জানি না। আমি যখন প্রথম গান শুরু করেছিলাম, ভেবেছিলাম, অন্য রকম কিছু করব। এই ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে ১৫-১৬ বছর হয়ে গেল আমি নিজস্ব অ্যালবাম, বেসিক অ্যালবাম বের করিনি। কারণ, আমার মনে হচ্ছে, আমি আমাকে টপকাতে পারছি না। আমি যেটা করেছি, তার বাইরে আর কিছু করতে পারছি না। সিনেমার গান, ফরমায়েশি গান বা অন্য কেউ গাওয়াচ্ছে যে গান, সেগুলো গাইছি। অগায়ক থেকে গায়ক হয়ে গেছি, প্রথম প্রথম সন্দেহ ছিল লোকের, এখন তাদের মনে হচ্ছে, শিলাজিৎকে গায়ক তো ভাবতেই হবে। কিছু করার নেই। আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় আর নেই।
লোকে যা-ই বলুক, আপনি তো আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। আপনার ভেতরে তো কোনো ধরনের কনফিউশন ছিল না যে, আপনি কীভাবে শব্দগুলো নিয়ে আসবেন। কীভাবে গানের শরীরটা তৈরি করবেন...
উনারা আমাকে অগায়ক ভাবার আগেই আমি জানতাম, আমি অগায়ক। আমি জানতাম, ভারতবর্ষে, পশ্চিমবঙ্গে, পৃথিবীতে যেভাবে গান গাওয়া হয়, বেশির ভাগ লোক যেটাকে গান মনে করে, আমি যেভাবে করছি, সেটা ও রকম নয়। আমারটা একটু আলাদা। আমি অনেক কিছু জোড়াতালি দিচ্ছি। ‘দূরে’ শব্দকে যদি সুর করতে হয়, আমি বলছি দূ....রে (অনেকটা টেনে), আর যারা গান জানে, তারা সেটাকে বলছে... দূরে (কণ্ঠের কারুকাজ দিয়ে)। আমি জানি, ভোরবেলার পরিস্থিতিটাকে বোঝানোর জন্য এক শ মিউজিক ডিরেক্টর ভোরের রাগকে প্রিলিউড করেছেন। আমি শুরু করেছি ভোরের অ্যাম্বিয়ান্স দিয়ে। সেটাই আমার চাহিদা। অন্য কিছু শব্দ, অন্য কিছু আওয়াজ। আমার এই অন্য আওয়াজটা লোকে পছন্দ করেছে এবং এখনো আমার পেট চালাচ্ছে তারা। এটা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে যাওয়ার পর আর তো উপায় থাকে না। যে লোকগুলো বলেছিল—ও শেষ হয়ে যাবে বেনোজলে। আর তো বলতে পারছে না। ৩০ বছর পর আর কিইবা বলবে। ৩০টা বছর কি কম? পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম ও বাম ফ্রন্ট ছাড়া কোনো দেশে কোনো জায়গায় কেউ ৩০ বছর ধরে শাসন করেছে? পেরেছে? আমি শাসন হয়তো করিনি, টিকে তো আছি।
আপনি নিজেই নিজেকে অগায়ক বলেন, তাহলে গান গাইতে আসার সাহস করেছিলেন কীভাবে?
কাজটা করতে নিজের ভালো লাগছিল। সেটাকে টেস্ট করছিলাম নিজের সঙ্গে। আমি স্পোর্টসম্যান, শারীরিক কসরতে অনেক কিছু করতে পারি। আমি নাচও করতাম ভালো। পাড়ায় নাচলে লোকে অ্যাপ্রিশিয়েট করত। কিন্তু গান গাওয়া আমার চিন্তায় ছিল না কখনো। বন্ধুবান্ধবেরা গাইত। তাদের কাছে গান শুনতাম। মামাবাড়িতেও সমৃদ্ধ একটা গানের কালচার ছিল। কিন্তু আমি গাইব, ভাবিনি কখনো। কম্পোজার ভাবতাম নিজেকে। দেখলাম, আমি একটা গান লিখতে পারছি। ‘তুমি যা জিনিস গুরু, আমিই জানি, আর কেউ জানে না’—আমি কথাটা বলতে পারলাম। ওটা সুর করার সময় কোনো পাণ্ডিত্য আমাকে হেল্প করেনি, আমি যা বলতে চাইলাম, সেটাই বের হলো। ‘বাজল ছুটির ঘণ্টা’ কিংবা ‘তোর ঘুম পেয়েছে বাড়ি যা’—এটা বলতে চাইছি। আমি সুর-তাল কিছু বুঝিনি। ভেবেছিলাম, অন্য আরেকজন বা অন্য কেউ গান গাইবে আর আমি তৈরি করব। এ সময় এক তথাকথিত পাড়ার বন্ধু আমার উপকারটা করে। ওকে আমি নিজের গান গাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। ও বিভিন্ন মঞ্চে আমার গানগুলো গাওয়া শুরু করে। বলতে শুরু করে, ওগুলো ওর গান। ইট ওয়াজ বিগ থ্রেট ফর মি যে, আমার গানগুলো পপুলার হয়ে যেতে পারে অন্যের নামে। সুতরাং, আর কিছু করার নেই, যা পারি, আমাকেই গাইতে হবে। ১৯৮৪ সালে হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছি, তখন থেকে আমি নতুন শব্দ, নতুন কিছু খোঁজার চেষ্টা করছিলাম, নতুন ফর্ম। প্রথম অ্যালবাম রিলিজ করেছি ১৯৯৪ সালে। এই দশ বছর আমি শিখেছি।
কিন্তু তারপরও তো নিজের গানকে কখনো গান বলতেন না আপনি। সেটা কেন?
আমি আমার অ্যালবামে গান লিখতাম না। প্রতিটি অ্যালবামে শুধু লেখা থাকত ‘ভূমিকা—শিলাজিৎ’। এবার এটা গান কি না, সেটা শ্রোতাদের ওপর ছেড়ে দিই। ‘সর্বনাশ’-এ এসে প্রথম আমি লিখলাম, শিলাজিতের ৯টা কালো গান। তত দিনে আমার আটটা অ্যালবাম বেরিয়েছে, ৯ নম্বর অ্যালবাম বেরোচ্ছে। কিছু কিছু মজা করতাম। অ্যালবামে ইচ্ছে করে বানান ভুল করতাম, যাতে লোকে জিজ্ঞেস করে, এই বানানটা ভুল কেন? তার মানে বুঝতাম, ও দেখেছে। আমার ক্যাসেটে সাইড এ, সাইড বি-এর বদলে ‘এপিঠ ওপিঠ’ লেখা থাকত। ফিসফিস অ্যালবামে যেমন প্রথম গানের লিরিক রিভার্স প্রিন্ট করে দিয়েছিলাম। লিখেছিলাম, আয়না দেখুন। যে ইন্টার-অ্যাকটিভ হয়ে আয়নায় দেখবে, সে লিরিকটা দেখতে পাবে। ‘যা পাখি উড়তে দিলাম তোকে’ গানের আগে এমন লো-ভলিউমে রেখেছি মেয়ের গলাটা—ভলিউম তোমাকে বাড়াতেই হবে। যেই বাড়াল, মিউজিক আসার সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ এমন জোরে আওয়াজ হলো, আবার কমাতে হবে। ঝিন্টি গানে ইচ্ছে করে একটা মোবাইল নয়েজ রাখলাম। একটা ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে ‘সর্বনাশ’ অ্যালবাম শেষ করলাম। বললাম, ‘এই ব্রেকের আওয়াজ শুনে হয়তো অনেকে ভাববে, কেন অ্যালবামটা ব্রেক কষে শেষ হলো। যারা ভাববে, তাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে, আর যারা ভাববে না, তাদের আমি দেখে নেব।’ অ্যালবাম শুনে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘শিলুদা, ব্রেকের আওয়াজ দিয়ে কেন শেষ হলো?’ আমি বললাম, ‘দেখা হলো তো? আমি তো বলেছিলাম, দেখা হবে।’ আমি সব সময় চেষ্টা করেছি ইন্টার-অ্যাকটিভ কিছু করতে, লোকের সঙ্গে যাতে আমার যোগ তৈরি হয়। আমার জন্য যাতে একটু ডিস্টারবেন্স হয়। একটু টেনশন হয়। ভালো লাগা তৈরি হয়। আই বিলিভ, এভরি পিস অব সাউন্ড ইজ মিউজিক।
সাউন্ড নিয়েই শেষ প্রশ্নটা করব। সাউন্ড নিয়ে আপনার এক্সপেরিমেন্ট বাংলা গানে আগে দেখা যায়নি। পাখির ডাক, হকারের হাক, রেডিওর ধারাভাষ্য হয়ে ওঠে আপনার গানের অনুষঙ্গ। এগুলো গানের অংশ হতে পারে, এ ভাবনাটা কীভাবে এল?
আমি নিরালা দুপুর বলে একটা গান করেছিলাম, সেই গান যখন বেঁধেছি, আমার গ্রামের বাড়ির ছাদে গিটার স্ট্রং করছি আর একটা ঘুঘু ডেকে যাচ্ছে ক্রমাগত। তার সঙ্গে আরেকটা ঘুঘু জয়েন করেছে। দ্যাটস গিভিং মি দ্য মেলোডি, অ্যাজ ওয়েল অ্যাজ পারকাশন। দ্যাটস মাই মিউজিক, দ্যাটস মিউজিক টু মি। লিমিটেশনের জন্য আমার গান আলাদা হয়েছে আরও বেশি। আমি একটা ভোরবেলার মিউজিক তৈরি করব, আমার কাছে ভোরের রাগ নেই। আমি হয়তো দশটা রাগের নাম জানি না। তাহলে আমি ভোরবেলার পরিবেশটা কীভাবে শ্রোতার কাছে পৌঁছাব? কী করে বোঝাব যে গানের শুরু একটা ভোরবেলায়? ভোরের সাউন্ড খুঁজতে শুরু করলাম। অদ্ভুত সব জিনিস মাথায় এল। দাঁত মাজছি। কিন্তু দাঁত মাজার শব্দ দিলে সেটা নয়েজের মতো লাগছে, ভিজ্যুয়ালটা বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে মানিকতলার মোড়ে তুমি দাঁড়িয়ে কাকভোরে, একটা চায়ের দোকান যদি হয়। রেডিওতে জাস্ট প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আর রেডিওতে বন্দে মাতরম শোনা যাচ্ছে। সঙ্গে চায়ের কাপের খটখট। সেখান থেকে গানে ঢুকলাম। কী অদ্ভুত সমাপতন! সাউন্ডটাকে আমি ওইভাবে দেখতে পাই। তারা পড়ছে? তাহলে তারা পড়ার শব্দটা কেমন হবে? সেটা বের করার জন্য ভেতরে একটা ট্রায়াল অ্যান্ড এরর প্রসেস চলতে থাকে। খোঁজা চলতে থাকে। খুঁজতে খুঁজতে তারপর পাই।
এ রকম বিভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন নয়েজের মধ্যে আমার মনে হয় গান হতে পারে। হয়। হয়েছে। এটা আমি পৃথিবীতে প্রথম করিনি। আমি যেভাবে অ্যাপ্লাই করেছি, হয়তো অন্য কেউ করেনি। কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথিবীতে কত মানুষ নতুন কিছু করার কথা ভাবছে। আমি এটা করেছি প্রথম, আর কেউ করেনি—এটা বলার আগে একটু সাবধানে। কারণ, এ পৃথিবী কোটি কোটি মানুষের। সবাই কিছু না কিছু করছে।

৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন
৬ ঘণ্টা আগে
এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
৬ ঘণ্টা আগে
সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য
৬ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
কাজাখস্তানে শুটিং শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। দেশে ফিরেই ভক্তদের আমন্ত্রণে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হন নিশো। এদিন তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দম সিনেমার পরিচালক রেদওয়ান রনি ও নায়িকা পূজা চেরি। স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে দম সিনেমার প্রসঙ্গ। নির্মাতা জানালেন, কতটা কঠিন পরিস্থিতির মাঝে শুটিং করেছেন তাঁরা। একদিন পাহাড়ে শুটিং করতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিশোর। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, শুটিং হয়েছে দুর্গম এলাকায়। তবু থেমে যাননি নিশো, আহত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং চালিয়ে গেছেন।
দম সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিশো বলেন, ‘আমরা সবাই চাই গল্প, চাই পারফরম্যান্স। দম সিনেমার মতো একটি গল্পের দায়িত্ব আমার কাঁধে, এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। এটা যদি ঠিকমতো পালন করতে না পারি, তাহলে কীভাবে হবে? আমি জানি, একজন সিনিয়র হিসেবে টিমের স্পিড অনেকটাই আমার ওপর নির্ভর করে। তখন এই হাত কাটা, পা কাটা, সেখানে মেডিকেল সাপোর্ট এল কি এল না, এসব কোনো বিষয় না। এ ছাড়া আমাদের খুব টাইট শিডিউল ছিল। সেখানে ১০ মিনিটের একটা বিরতি মানে শিডিউল ফেল করা। আমি দাবি নিয়ে বলতে পারি, এই সিনেমায় টিমের সবাই যতটা কষ্ট নিয়ে কাজ করেছে, এত কষ্ট কোনো প্রোডাকশনে করতে হয়নি। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল সেখানে।’
নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজাখস্তানের শুটিং শেষ করেছে দম টিম। নিশো বলেন, ‘বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটা বেড়ে যায়। এখানে নিজেকে শুধু অভিনেতা হিসেবে ভাবিনি। ভেবেছি, আমিও নির্মাতার একটি অংশ। আমরা যে ওয়েদারে কাজ করেছি, সেখানে ২টার সময় সূর্যের আলো থাকে না। আমরা কখনোই ভাবি নাই, সানলাইট ২টার সময় চলে যায়। এত জটিলতার পরেও আমরা এক দিনও বেশি শুটিং করি নাই। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করেছি। সিনেমাসংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা আমাদের কথা রেখেছি।’
দম সিনেমার গল্প নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চান না এই অভিনেতা। শুধু জানালেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি। তিনি আশা করেন, গল্পটি সবাই উপভোগ করবে এবং সিনেমাটি দেখার পর সবাই গর্ব করবে যে এটি বাংলাদেশের সিনেমা।
কাজাখস্তানে শুটিং শেষে এবার দমের শুটিং হবে দেশে। কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার লাইট, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পীরা। নিশো, পূজা চেরির সঙ্গে এতে আরও অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। আগামী বছর রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে দম।

৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
কাজাখস্তানে শুটিং শেষ হয়েছে ৬ ডিসেম্বর। দেশে ফিরেই ভক্তদের আমন্ত্রণে নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হাজির হন নিশো। এদিন তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দম সিনেমার পরিচালক রেদওয়ান রনি ও নায়িকা পূজা চেরি। স্বাভাবিকভাবে উঠে আসে দম সিনেমার প্রসঙ্গ। নির্মাতা জানালেন, কতটা কঠিন পরিস্থিতির মাঝে শুটিং করেছেন তাঁরা। একদিন পাহাড়ে শুটিং করতে গিয়ে হাত কেটে যায় নিশোর। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ, শুটিং হয়েছে দুর্গম এলাকায়। তবু থেমে যাননি নিশো, আহত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যের শুটিং চালিয়ে গেছেন।
দম সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানিয়ে নিশো বলেন, ‘আমরা সবাই চাই গল্প, চাই পারফরম্যান্স। দম সিনেমার মতো একটি গল্পের দায়িত্ব আমার কাঁধে, এটা আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। এটা যদি ঠিকমতো পালন করতে না পারি, তাহলে কীভাবে হবে? আমি জানি, একজন সিনিয়র হিসেবে টিমের স্পিড অনেকটাই আমার ওপর নির্ভর করে। তখন এই হাত কাটা, পা কাটা, সেখানে মেডিকেল সাপোর্ট এল কি এল না, এসব কোনো বিষয় না। এ ছাড়া আমাদের খুব টাইট শিডিউল ছিল। সেখানে ১০ মিনিটের একটা বিরতি মানে শিডিউল ফেল করা। আমি দাবি নিয়ে বলতে পারি, এই সিনেমায় টিমের সবাই যতটা কষ্ট নিয়ে কাজ করেছে, এত কষ্ট কোনো প্রোডাকশনে করতে হয়নি। অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল সেখানে।’
নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে কাজাখস্তানের শুটিং শেষ করেছে দম টিম। নিশো বলেন, ‘বয়স ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বটা বেড়ে যায়। এখানে নিজেকে শুধু অভিনেতা হিসেবে ভাবিনি। ভেবেছি, আমিও নির্মাতার একটি অংশ। আমরা যে ওয়েদারে কাজ করেছি, সেখানে ২টার সময় সূর্যের আলো থাকে না। আমরা কখনোই ভাবি নাই, সানলাইট ২টার সময় চলে যায়। এত জটিলতার পরেও আমরা এক দিনও বেশি শুটিং করি নাই। নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ করেছি। সিনেমাসংশ্লিষ্টদের কাছে আমরা আমাদের কথা রেখেছি।’
দম সিনেমার গল্প নিয়ে এখনই বিস্তারিত বলতে চান না এই অভিনেতা। শুধু জানালেন, বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের গল্প নিয়ে আগে কাজ হয়নি। তিনি আশা করেন, গল্পটি সবাই উপভোগ করবে এবং সিনেমাটি দেখার পর সবাই গর্ব করবে যে এটি বাংলাদেশের সিনেমা।
কাজাখস্তানে শুটিং শেষে এবার দমের শুটিং হবে দেশে। কয়েকটা দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার লাইট, ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন অভিনয়শিল্পীরা। নিশো, পূজা চেরির সঙ্গে এতে আরও অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। আগামী বছর রোজার ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে দম।

শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে।
২৪ অক্টোবর ২০২৫
এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
৬ ঘণ্টা আগে
সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য
৬ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন আহমেদ। শুধু তা-ই নয়, সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল ফেসবুকে হামিন আহমেদ লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কিছুদিন পরেই। সংগীতস্রষ্টা, শিল্পী এবং সংগীতপ্রেমীরা জানতে চান—ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আপনার সাংস্কৃতিক ও সংগীতভিত্তিক ইশতেহার কী? বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল সংগীত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। অন্য সবকিছু নিয়ে করেছে, কিন্তু সংগীত নিয়ে নয়! আমরা জানতে চাই (সংগীত নিয়ে পরিকল্পনা)।’
আরও একটি পোস্টে হামিন তুলে ধরেন বাংলাদেশে গান শোনা মানুষের পরিসংখ্যান। সেখানে হামিন লেখেন, ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশে রেডিও, পডকাস্ট ও অন্যান্য মাধ্যমে গান শোনা লোকের সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় ২৮.৪০ শতাংশ। এআই বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫১.৯১ মিলিয়নে পৌঁছাবে; যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বলে, বাংলাদেশে সংগীতের বিরোধিতাকারী দল/প্রার্থীদের ভোট দেব না, তাহলে কী হবে বলে আপনার মনে হয়? এই ক্ষমতা উপলব্ধি করুন।’
বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতির দায়িত্বে থাকা হামিন আহমেদের এই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের অনেক সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, ব্যান্ড সদস্য ও সংগীতপ্রেমীরা পোস্টটি শেয়ার করে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় হামিন আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে অনেক দিন ধরে সহশিল্পীদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমরা খেয়াল করলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সবকিছু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হলেও মিউজিক বা আর্ট কালচার নিয়ে কখনোই কিছু বলা হয় না। অথচ এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় না। কেন মিউজিশিয়ানরাই বারবার সাফার করবে। এক পক্ষ বলবে বন্ধ করে দেব, আরেক পক্ষ বলবে চালু রাখব। তারা কী চাইছে, সেটা স্পষ্ট করা দরকার। সবাই তো মিউজিশিয়ানদের কাছেও ভোট চাইবে। বাংলাদেশে ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ গান গাওয়া ও শোনার সঙ্গে জড়িত। কেউ যদি মিউজিক বন্ধ করে দিতে চায়, তাকে তো এই মানুষগুলো ভোট দেবে না। কারণ, কারও পক্ষ থেকে মিউজিক নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।’
হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের যে সময়, সেটা যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্যোগপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও চক্রান্তমূলক। বিভিন্ন শো ক্যানসেল হচ্ছে, আবার শোনা যাচ্ছে, গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। আমরা জানতে চাই, যে দলগুলো নির্বাচনে যাচ্ছে, আমাদের জন্য তাদের স্ট্র্যাটেজি কী? আর্ট কালচার নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী? সংস্কৃতি কীভাবে এগোবে, এই বিষয়ে কী ভাবছে তারা? এখনো এ বিষয়ে ঘোষণা আসেনি কোনো দলের পক্ষ থেকে। আমরা সেটাই স্পষ্ট জানতে চাইছি।’

এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন আহমেদ। শুধু তা-ই নয়, সংগীত ও সংস্কৃতি নিয়ে ইতিবাচক পরিকল্পনা না থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট না দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল ফেসবুকে হামিন আহমেদ লেখেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কিছুদিন পরেই। সংগীতস্রষ্টা, শিল্পী এবং সংগীতপ্রেমীরা জানতে চান—ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আপনার সাংস্কৃতিক ও সংগীতভিত্তিক ইশতেহার কী? বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক দল সংগীত নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। অন্য সবকিছু নিয়ে করেছে, কিন্তু সংগীত নিয়ে নয়! আমরা জানতে চাই (সংগীত নিয়ে পরিকল্পনা)।’
আরও একটি পোস্টে হামিন তুলে ধরেন বাংলাদেশে গান শোনা মানুষের পরিসংখ্যান। সেখানে হামিন লেখেন, ‘২০২৫ সালে বাংলাদেশে রেডিও, পডকাস্ট ও অন্যান্য মাধ্যমে গান শোনা লোকের সংখ্যা জনসংখ্যার প্রায় ২৮.৪০ শতাংশ। এআই বলছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫১.৯১ মিলিয়নে পৌঁছাবে; যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ যদি বলে, বাংলাদেশে সংগীতের বিরোধিতাকারী দল/প্রার্থীদের ভোট দেব না, তাহলে কী হবে বলে আপনার মনে হয়? এই ক্ষমতা উপলব্ধি করুন।’
বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশনের (বামবা) সভাপতির দায়িত্বে থাকা হামিন আহমেদের এই পোস্ট ইতিমধ্যে ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের অনেক সংগীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, ব্যান্ড সদস্য ও সংগীতপ্রেমীরা পোস্টটি শেয়ার করে নিজেদের সমর্থন জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কথা হয় হামিন আহমেদের সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে অনেক দিন ধরে সহশিল্পীদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। আমরা খেয়াল করলাম, রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সবকিছু আলাদাভাবে উপস্থাপন করা হলেও মিউজিক বা আর্ট কালচার নিয়ে কখনোই কিছু বলা হয় না। অথচ এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান-বাজনা হয় না। কেন মিউজিশিয়ানরাই বারবার সাফার করবে। এক পক্ষ বলবে বন্ধ করে দেব, আরেক পক্ষ বলবে চালু রাখব। তারা কী চাইছে, সেটা স্পষ্ট করা দরকার। সবাই তো মিউজিশিয়ানদের কাছেও ভোট চাইবে। বাংলাদেশে ২ থেকে ৩ কোটি মানুষ গান গাওয়া ও শোনার সঙ্গে জড়িত। কেউ যদি মিউজিক বন্ধ করে দিতে চায়, তাকে তো এই মানুষগুলো ভোট দেবে না। কারণ, কারও পক্ষ থেকে মিউজিক নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।’
হামিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের যে সময়, সেটা যেকোনো সময়ের চেয়ে দুর্যোগপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর ও চক্রান্তমূলক। বিভিন্ন শো ক্যানসেল হচ্ছে, আবার শোনা যাচ্ছে, গান-বাজনা বন্ধ করতে হবে ইত্যাদি। এখনই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি না। আমরা জানতে চাই, যে দলগুলো নির্বাচনে যাচ্ছে, আমাদের জন্য তাদের স্ট্র্যাটেজি কী? আর্ট কালচার নিয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কী? সংস্কৃতি কীভাবে এগোবে, এই বিষয়ে কী ভাবছে তারা? এখনো এ বিষয়ে ঘোষণা আসেনি কোনো দলের পক্ষ থেকে। আমরা সেটাই স্পষ্ট জানতে চাইছি।’

শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে।
২৪ অক্টোবর ২০২৫
৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
৬ ঘণ্টা আগে
সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য
৬ ঘণ্টা আগেবিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা

বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
সুমী গেয়েছেন ‘রোদ্দুর কোলাহল’ ও ‘কোনো এক বিকেলে’ শিরোনামের দুটি গান। রোদ্দুর কোলাহল গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক। কোনো এক বিকেলের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন সাব্বির জামান। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গোপ গেয়েছেন ‘বিজয় রাঙানো সুখ’ শিরোনামের গান। এটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক; সাব্বির জামান গেয়েছেন নিজের সুর ও সংগীতায়োজনে ‘ভালোবাসি তোমায়’ শিরোনামের গান। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে গানগুলোর মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে।
গানগুলো নিয়ে সুমী শারমীন বলেন, ‘প্রতিটি গানেই জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। গানগুলো নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। চারটি গানেরই সুর শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাবে—এতটুকু আমি নিশ্চিত বলতে পারি।’
প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘বিজয় রাঙানো সুখ গানটির কথা যেমন চমৎকার, গানের সুরও সহজ-সরল। সাধারণত এই ধরনের গান আমার গাওয়া হয় না। কিন্তু এই গান গেয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’
সাব্বির জামান বলেন, ‘সুমী আপার গানের কথাগুলো সাবলীল ও গভীরতায় পূর্ণ। তাঁর লেখনীর গুণেই সুর করাটা সহজ হয়ে যায়। এই গানগুলোর সুর সত্যিই মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।’
প্রিয়াঙ্কা গোপের গাওয়া গানটি প্রকাশিত হবে এনিগমা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে এবং সাব্বিরের গানটি আলফা আই ইউটিউব চ্যানেলে। সুমী শারমীনের গাওয়া গান দুটিও প্রকাশিত হবে ইউটিউবে, চ্যানেলের নাম শিগগির শ্রোতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
সুমী গেয়েছেন ‘রোদ্দুর কোলাহল’ ও ‘কোনো এক বিকেলে’ শিরোনামের দুটি গান। রোদ্দুর কোলাহল গানটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক। কোনো এক বিকেলের সুর ও সংগীতায়োজন করেছেন সাব্বির জামান। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গোপ গেয়েছেন ‘বিজয় রাঙানো সুখ’ শিরোনামের গান। এটির সুর ও সংগীত আয়োজন করেছেন শান সায়েক; সাব্বির জামান গেয়েছেন নিজের সুর ও সংগীতায়োজনে ‘ভালোবাসি তোমায়’ শিরোনামের গান। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন লোকেশনে গানগুলোর মিউজিক ভিডিওর শুটিং হয়েছে।
গানগুলো নিয়ে সুমী শারমীন বলেন, ‘প্রতিটি গানেই জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। গানগুলো নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। চারটি গানেরই সুর শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাবে—এতটুকু আমি নিশ্চিত বলতে পারি।’
প্রিয়াঙ্কা গোপ বলেন, ‘বিজয় রাঙানো সুখ গানটির কথা যেমন চমৎকার, গানের সুরও সহজ-সরল। সাধারণত এই ধরনের গান আমার গাওয়া হয় না। কিন্তু এই গান গেয়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।’
সাব্বির জামান বলেন, ‘সুমী আপার গানের কথাগুলো সাবলীল ও গভীরতায় পূর্ণ। তাঁর লেখনীর গুণেই সুর করাটা সহজ হয়ে যায়। এই গানগুলোর সুর সত্যিই মনে গেঁথে যাওয়ার মতো।’
প্রিয়াঙ্কা গোপের গাওয়া গানটি প্রকাশিত হবে এনিগমা টিভি ইউটিউব চ্যানেলে এবং সাব্বিরের গানটি আলফা আই ইউটিউব চ্যানেলে। সুমী শারমীনের গাওয়া গান দুটিও প্রকাশিত হবে ইউটিউবে, চ্যানেলের নাম শিগগির শ্রোতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।

শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে।
২৪ অক্টোবর ২০২৫
৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন
৬ ঘণ্টা আগে
এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন
৬ ঘণ্টা আগে
সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য
৬ ঘণ্টা আগেবিনোদন ডেস্ক

সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য নিজেদের নিখুঁত দেখানোর প্রতি মগ্ন হয়ে পড়েছে। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করে।’
শুধু প্লাস্টিক সার্জারি নয়, ওজন কমানোর জন্য অনেকে নানা রকম ওষুধ সেবন করেন। এটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে কেট উইন্সলেট বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে, তার আত্মসম্মান নির্ধারিত হবে শুধুই তার চেহারা দিয়ে, তাহলে সেটা ভয়ানক। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছে। বোটক্স ও ফিলারের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। এসব তাদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। নিজেদের শরীর ও চেহারা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিন্তু আসলে এসব ওষুধ যে তাদের কতটা ক্ষতি করছে, সে ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি প্রচণ্ড অবহেলা করছে তারা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
কেট উইন্সলেট জানান, বার্ধক্য রোধের জন্য তিনি কখনো এসব উপায় অবলম্বনের চিন্তাও করেননি। অভিনেত্রী জানান, শুধু তিনি নন, হেলেন মিরেন, টনি কোলেট, আন্দ্রেয়া রাইজবোরো, সিগর্নি ওয়েভার—সবাই হলিউডের প্লাস্টিক সার্জারির প্রবণতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। কেট উইন্সলেট বলেন, ‘যখন হাতে-মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়, সেটা দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। এটাই তো জীবন। বয়স অনুযায়ী চেহারা বদলায়। আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী নারী যারা, তাদের অনেকের বয়স ৭০ বছরের বেশি। এখনকার অনেক নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, এটা আমাকে হতাশ করে।’
কৃত্রিমতায় কোনো সৌন্দর্য নেই, নকলের আশ্রয় না নিয়ে সব সময় যেটা বাস্তব, সেটাই প্রকাশ করতে হবে—নতুন অভিনেত্রীদের প্রতি এটাই পরামর্শ কেট উইন্সলেটের।

সৌন্দর্য ধরে রাখতে অনেকে এখন প্লাস্টিক সার্জারির আশ্রয় নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা বেড়েছে হলিউডের নতুন অভিনেত্রীদের মধ্যে। বিষয়টির সমালোচনা করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী কেট উইন্সলেট। সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেট বলেছেন, ‘এ প্রজন্মের অভিনেত্রীরা ইনস্টাগ্রামে আরও বেশি লাইক পাওয়ার জন্য নিজেদের নিখুঁত দেখানোর প্রতি মগ্ন হয়ে পড়েছে। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করে।’
শুধু প্লাস্টিক সার্জারি নয়, ওজন কমানোর জন্য অনেকে নানা রকম ওষুধ সেবন করেন। এটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে কেট উইন্সলেট বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে, তার আত্মসম্মান নির্ধারিত হবে শুধুই তার চেহারা দিয়ে, তাহলে সেটা ভয়ানক। অনেকে ওজন কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছে। বোটক্স ও ফিলারের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করছে। এসব তাদের কাছে নেশার মতো হয়ে গেছে। নিজেদের শরীর ও চেহারা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছে না। কিন্তু আসলে এসব ওষুধ যে তাদের কতটা ক্ষতি করছে, সে ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি প্রচণ্ড অবহেলা করছে তারা। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।’
কেট উইন্সলেট জানান, বার্ধক্য রোধের জন্য তিনি কখনো এসব উপায় অবলম্বনের চিন্তাও করেননি। অভিনেত্রী জানান, শুধু তিনি নন, হেলেন মিরেন, টনি কোলেট, আন্দ্রেয়া রাইজবোরো, সিগর্নি ওয়েভার—সবাই হলিউডের প্লাস্টিক সার্জারির প্রবণতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। কেট উইন্সলেট বলেন, ‘যখন হাতে-মুখে বয়সের ছাপ পড়ে যায়, সেটা দেখতে আমার খুবই ভালো লাগে। এটাই তো জীবন। বয়স অনুযায়ী চেহারা বদলায়। আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী নারী যারা, তাদের অনেকের বয়স ৭০ বছরের বেশি। এখনকার অনেক নারীর সৌন্দর্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, এটা আমাকে হতাশ করে।’
কৃত্রিমতায় কোনো সৌন্দর্য নেই, নকলের আশ্রয় না নিয়ে সব সময় যেটা বাস্তব, সেটাই প্রকাশ করতে হবে—নতুন অভিনেত্রীদের প্রতি এটাই পরামর্শ কেট উইন্সলেটের।

শিলাজিৎ মজুমদার বাংলা গানের এক রহস্যময় চরিত্র। তাঁর গান আর দশজনের মতো নয়। একেবারেই আলাদা। ভাষা, শব্দ আর সুর নিয়ে তাঁর এক্সপেরিমেন্ট শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয়। অভিনয়েও তিনি মুগ্ধ করে চলেছেন দর্শকদের। পশ্চিমবঙ্গের এই জনপ্রিয় গায়ক সম্প্রতি কণ্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশের গানে।
২৪ অক্টোবর ২০২৫
৮ ডিসেম্বর ছিল অভিনেতা আফরান নিশোর জন্মদিন। প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর ভক্তরা দিনটি উদ্যাপন করলেন বিশেষ আয়োজনে। তবে ‘দম’ সিনেমার শুটিংয়ে কাজাখস্তানে থাকায় অনেকে ধরে নিয়েছিলেন, এই আয়োজনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না নিশো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে চমকে দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন উদ্যাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন
৬ ঘণ্টা আগে
এই সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। এরপর বেজে উঠবে নির্বাচনী ঘণ্টা। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের পরিকল্পনা জানাচ্ছে, যা প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী ইশতেহার হিসেবে। এমন সময়ে সংগীত নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা জানতে চাইলেন মাইলস ব্যান্ডের প্রধান সংগীতশিল্পী হামিন
৬ ঘণ্টা আগে
বিজয়ের মাসে নতুন চার গান নিয়ে আসছেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুমী শারমীন। চারটি গানই লিখেছেন সুমী, দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, বাকি দুটি গান গেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গোপ ও সাব্বির জামান। গানগুলো সুর করেছেন শান সায়েক ও সাব্বির জামান।
৬ ঘণ্টা আগে