Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা বানাব

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অধ্যাপক ড. ইয়াহ্ইয়া আখতারকে। এর আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেছিলেন। তাঁর নতুন দায়িত্ব গ্রহণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইলিয়াস শান্ত।

ইলিয়াস শান্ত
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩৬

প্রশ্ন: ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আপনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অবস্থা কেমন দেখছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছে বলেই আপনারা আজ আমাকে এখানে দেখছেন। কারণ, আমার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। ফলে দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে আমার এ পদে আসার কথা ছিল না। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়কে মরুভূমির মতো দেখেছি। একাডেমিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বড় বড় প্রশাসনিক পদের কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলে দেব। সে কারণে প্রক্টর-প্রভোস্টসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিংয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।

প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের এ সংগ্রামকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান হয়েছিল বলেই বিগত যে কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায় ছিল, তার অবসান হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো বৈধ উপায়ে এ সরকারের পতনের সম্ভাবনা বা পথ ছিল না। এমনকি দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ অপছন্দ করলেও বিগত সরকারের পতনের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কারণ, তারা সাংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই দরজা বন্ধ করে ফেলেছিল। আমরা শিক্ষার্থীদের স্যালুট জানাই, তারা এটা অনুধাবন করতে পেরেছে। তারা তাদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে বাধার সেই প্রাচীর ভেঙে দিয়েছে। যুগে যুগে যখন জাতীয় সংকট তৈরি হয়েছে, শিক্ষার্থীরাই ত্রাণকর্তা হিসেবে এ জাতিকে রক্ষা করেছে।

প্রশ্ন: প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পর চবিতে কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: অচল ক্যাম্পাস এখন সচল হয়েছে, এটি সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র কয়েক মাস হয়েছে, তাই এখনই চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময় আসেনি। তবে আমরা এই সময়ের মধ্যে যেসব কাজ করেছি, এটাকে অর্জন বলব না। এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। হল ও ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার পর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শুরু করেছেন। ক্যাম্পাসে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ‘মব জাস্টিস’ নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আপনাকে জানাতে চাই, চবিতে একসময় জোবাইক সেবা চালু ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে জোবাইকের ম্যানেজমেন্টের লোকজন পালিয়ে যান। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর সম্প্রতি তাঁদের সঙ্গে আবার যোগাযোগ হয়েছে। আমরা আবার জোবাইক চালু করব। ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান চবিতে জোবাইক সেবা দেবে। এটার কার্যক্রম শিগগির চালু হবে। এ ছাড়া আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর রেলের শিডিউল বাড়ানো হয়েছে। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হচ্ছে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি উৎকর্ষপূর্ণ একাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত রাজনৈতিক চর্চা হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হারিয়ে যাওয়া শিক্ষার পরিবেশ আমরা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমাদের শিক্ষার মান অনেকটা ধসে পড়েছে। আমি একে হার্ভার্ড কিংবা এমআইটির মতো হয়তো করতে পারব না, তবে দেশের প্রথম সারির একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যেখানে পড়াশোনার উন্নত পরিবেশ থাকবে; পাশাপাশি মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত থাকবে। এ কাজে অনেক বাধা আছে। তবে সেসব বাধা আমাদের অতিক্রম করেই সফল হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সবগুলো এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। উল্লেখযোগ্য কিছু বলতে বললে বলব, প্রতিটি আবাসিক হলে ওয়াশিং মেশিন দেব। এটাতে শিক্ষার্থীরা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে জামাকাপড় ধুতে পারবে। লাইব্রেরিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সময় নিয়ে পড়ালেখা করে। লাইব্রেরির আশপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। সে জন্য আমরা চিন্তা করেছি, ভেন্ডিং মেশিন বসাব। এ মেশিন থেকে নিয়ে শিক্ষার্থীরা চা-কপি, স্ন্যাকস খেতে পারবে।

আমি নিয়োগ পাওয়ার পর ইউজিসির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণ করেছে। তাঁরা আমাদের দুটি নির্মাণাধীন হলের কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন। একটা বঙ্গবন্ধু হল, অন্যটি অতীশ দীপঙ্কর হল। পরিদর্শন শেষে আমার সঙ্গে ইউজিসি প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতে আমি তাঁদের বলেছি, আমি আপনাদের কাজে সন্তুষ্ট নই। তাঁরা এর কারণ জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনাদের যে টাকা ছাড়ের প্রক্রিয়া, এটা খুবই লেনদি প্রসেস। আমি মিলিটারি স্টাইলে কাজ করতে চাই। আপনাদের টাকা ছাড়ের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে আমার কাজে বাধা হয়। তখন তাঁরা আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, আমি কী চাই? আমি বলেছি, আমার জন্য কিছু লাগবে না, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পারলে কিছু করেন। আমার একজন শিক্ষার্থীকে বই কিনতে হলে ১৩ মাইল দূরে আন্দরকিল্লায় যেতে হয়। আমার শিক্ষককে বই কিনতে হলে ১৪ মাইল দূরে বাতিঘরে যেতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে আমরা একটা অন-ক্যাম্পাস বুকস্টোর ও স্যুভেনির শপ করতে চাই। এটা বিগত উপাচার্যদের আমি বলেছি। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। পরে তারা (ইউজিসি) এ প্রকল্পের জন্য মোটা অঙ্কের বাজেট দিয়েছে। আমি শুনেছি, আমাদের এ প্রজেক্ট ইউজিসিতে প্রশংসিত হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ টাকার ছাড় পাব। আমাদের জায়গার অভাব নেই। টাকা পেলে এ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারব।

প্রশ্ন: শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট নিয়েছে। গত ডিসেম্বরে আপনারাও একই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ডোপ টেস্টের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ভালো। তবে কিছু শিক্ষার্থীকে মাদকাসক্ত অবস্থায় আমরা হলে পেয়েছি। তাদের মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীও ছিল। এ পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগের জায়গা থেকে ডোপ টেস্টের উদ্যোগ হাতে নিই। আমাদের মেডিকেলে এ কার্যক্রম শুরু করেছি। নির্ভরযোগ্য আমেরিকান কিট দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগ প্রায় শেষের পথে। এখন দু-একটি হল হয়তো বাকি রয়েছে। আবাসিক হলে যারা থাকবে, তাদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছি। এরপর আমরা পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তাকর্মীদের ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসব। আমরা মনে করি, সাফলাইন চেইনে হাত দিতে পারব না। আমরা ডিমান্ড দুর্বল করে দেব। এ উদ্যোগের মাধ্যমে কী বার্তা দিচ্ছি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ডোপ টেস্ট কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সাড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত খুব কম শিক্ষার্থীকে ডোপ টেস্টে পজিটিভ পেয়েছি। পজিটিভ পাওয়া গেলেও শতভাগ নিশ্চিত নই যে ওই শিক্ষার্থী মাদক নিয়েছে। পজিটিভ শিক্ষার্থী শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোনো ওষুধ খাচ্ছে কি না, সেটাও আমরা পরীক্ষা করব। ওষুধের মধ্যে অ্যালকোহল রয়েছে কি না, সেটা দেখার বিষয়। এরপর যদি কোনো শিক্ষার্থীর নিশ্চিত মাদক-সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলেও তাকে জেলে পাঠাব না। তখন আমরা এমন শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং সেন্টারে রাখব। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস তৈরি করা; শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া নয়। শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি আছে বলে আমরা মনে করি না। সর্বোপরি আমরা তাদেরকে সংশোধনের দিকে নিয়ে যেতে চাই। এটা তো আমরা মাদকের ডিমান্ড দুর্বল করে দিলাম। সাফলাইন চেইন ভেঙে দিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তারা আমাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

প্রশ্ন: শতভাগ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য নিয়ে চবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন হীরকজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। শতভাগ আবাসন নিশ্চিতের সে লক্ষ্য কতটুকু নিশ্চিত করা গেছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমরা শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে পরিনি, এটা সত্য। আমাদের বর্তমানে ২৮-২৯ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৭-৮ হাজার আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। অন্য শিক্ষার্থীরা কটেজে থাকে, অনেকে শহর থেকে আসে। যারা আবাসন সুবিধার বাইরে রয়েছে, তাদের নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা তাদের জন্য কাজ করতে চাই।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট নিরসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বর্তমানে দুটি হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। দ্রুততম সময়ে এ হল দুটি উদ্বোধন করতে পারব বলে শিক্ষার্থীদের আমি আশ্বাস দিয়েছি। এতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবে। এ ছাড়া শামসুন নাহারের নামে পুরোনো একটি হল পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। দায়িত্ব গ্রহণ করার পর আমরা এর সংস্কারকাজ শুরু করেছি। এই সংস্কারকাজ সম্পন্ন হলে আরও ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা হবে। এ ছাড়া ইউজিসিতে আরও দু-তিনটি হলের চাহিদা দিয়েছি। এ চাহিদা কার্যকর হলে আমাদের বড় অংশের শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করতে আরও অনেক হলের প্রয়োজন রয়েছে।

আবাসন সংকট নিরসনে আমাদের বিকল্প চিন্তা রয়েছে। ধরুন, একটা হলে ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এই ৫০০ শিক্ষার্থীর সিঙ্গেল বেডে আমরা দ্বিতল খাটের চিন্তাভাবনা করছি। পরীক্ষা করে দেখব। এটা কার্যকর করা গেলে ১ হাজার শিক্ষার্থী না হলেও অন্তত ৯০০ শিক্ষার্থীকে আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ ধরনের খাটগুলো আমরা দেখেছি। এ বিষয়ে আমাদের প্রকৌশলীদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে। এটা প্রথমে যেকোনো একটি হলে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে দেখব। এক হলে সফল হলে বাকি হলগুলোতে পর্যায়ক্রমে এটা কার্যকর করা হবে।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত সময়ে সেটা নিশ্চিত হয়নি। এখন আবাসিক হলগুলোর পরিস্থিতি কী?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আগে দখলদারত্বের পরিবেশ ছিল। মেধার ভিত্তিতে কোনো আবাসন বণ্টনের ব্যবস্থা ছিল না। দখলদারত্বের পাশাপাশি হলগুলো ছিল টর্চার সেল, টাকা না দিয়ে খাওয়া, গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি—আমরা এসব নেতিবাচক সংস্কৃতি আপনাদের সহায়তায় জাদুঘরে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এখন হলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নতুন নীতিমালার মাধ্যমে আমরা হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দিয়েছি। ভবিষ্যতে শুধু মেধাকে গুরুত্ব দেব না, আবাসন বণ্টনের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী আর্থিক সচ্ছলতাসহ আরও কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় আমলে নেব।

প্রশ্ন: আবাসিক হলগুলোতে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। খাবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায়। কীভাবে খাবারের মান উন্নত করা যায়?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আবাসিক হলে আমরা শিক্ষার্থীদের পাঁচ তারকা হোটেলের মানের খাবার সরবরাহ করতে পারব না। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। আপনি ঠিকই বলেছেন, খাবারে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জিনিস পাওয়া যায় বলে আমরাও অভিযোগ পাই। এ জন্য আমি নিজে একটা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। সেটা হলো হলগুলোতে ‘সাডেন ভিজিট’। শুধু ক্যানটিনে নয়, সাডেন ভিজিট কর্মসূচি আমি একাডেমিক ক্ষেত্রেও করে থাকি। সাডেন ভিজিটে আমার চোখে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে সেটা মার্জিতভাবে নোটিশ করি। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ক্যানটিনে গিয়ে তাদের সঙ্গে খেতে বসি। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাঁদের দায়িত্বের প্রতি দায়বদ্ধ হচ্ছেন। পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। হলের খাবারের মানোন্নয়নে আমাদের আরও পদক্ষেপ রয়েছে। আশা করছি, খাবারের মান দিন দিন উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: চীনের সহায়তায় চবিতে নির্মিত হতে যাচ্ছে ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। এ স্টেশন কীভাবে কাজ করবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতটা সুফল পাবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এই প্রজেক্ট আমাদের এক ওশানোগ্রাফারের। আমি এখানে এসে প্রজেক্টি সম্পর্কে জানতে পারি। পরে তিনি আমাকে জানালেন, আমার এ প্রজেক্টে আপনাকে চীনে যেতে হবে। আমি যেহেতু সোশ্যাল সায়েন্সের মানুষ, তাই শুরুতে আমি এ প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছি। আমরা চীনের সেকেন্ড ইনস্টিটিউটে গিয়ে এ প্রজেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়েছি। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দেখেন বঙ্গোপসাগরে আমাদের বিশাল এলাকার মালিকানা রয়েছে। চবিতে এ প্রজেক্টের কাজ সফলভাবে চালু করতে পারলে এ স্টেশন থেকে বঙ্গোপসাগরের সফল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এখান থেকে আমরা ফিশিং জোন চিহ্নিত করতে পারব। আমাদের সমুদ্র গবেষণা বিরাট অবদান রাখবে। ওশানোগ্রাফিতে আমাদের যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাঁদের কাজের বড় একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে। এ স্টেশনের কাজ সফলভাবে শেষ হলে মহাশূন্যে পাঠানো চীনের স্যাটেলাইট থেকে সেকেন্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমন্বয় করে ডেটা সংগ্রহ করতে পারব। আবহাওয়ার বার্তাও আমরা এ স্টেশন থেকে সংগ্রহ করে সরবরাহ করতে পারব। সম্প্রতি চীনের একটি গবেষক দল আমাদের এখানে এসে স্টেশনের স্থান পরিদর্শন করে গেছে। ইতিমধ্যে স্টেশনের স্থানের মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে।

প্রশ্ন: কবে নাগাদ স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজ শুরু হবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যে এ স্টেশন নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রশ্ন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দলীয় রাজনীতি নিয়ে কী ভাবছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিয়ে আমরা শুরু থেকে সচেতন। ফলে এখন পর্যন্ত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর ছাত্রনেতারা আমার সঙ্গে দেখা করে কিছু দাবি জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, তাঁদের সব দাবি পূরণ করা সম্ভব। তবে ক্যাম্পাসকে নেতা তৈরির কারখানা নয়, দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। যদি প্রশ্ন করেন, তাহলে দলীয় রাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে কি না—এর জবাবে আমি বলব বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাজনীতি করে, চবি শিক্ষার্থীরাও সেভাবে রাজনীতি সচেতন হবে। তবে দলীয় প্রভাব বিস্তারের নামে ক্যাম্পাসে সহিংসতা, গণরুম-গেস্টরুমের রাজনীতি আমাদের অপছন্দ। আমরা এমন সংস্কৃতিকে সব সময় নিরুৎসাহিত করি।

প্রশ্ন: প্রায় ৩৪ বছর ধরে চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। চাকসু নিয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: চাকসু নিয়ে আমাদের পদক্ষেপ খুবই ইতিবাচক। আমরা চাকসু নির্বাচন দেব। সে কারণে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছি। এই কমিটি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কমিটি আমাদের জানাবে, চাকসু নির্বাচন এবং হল সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, কখন হবে, কতটা গ্রহণযোগ্য হবে—এসব বিষয়। এর বাইরে চাকসু নিয়ে আপাতত আর কিছু বলতে চাই না।

প্রশ্ন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। দেশের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আপনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। চবিতে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয়। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে কাজের ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার শিক্ষাজীবন ও উজ্জ্বল কর্মজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমি তুচ্ছ, বর্ণহীন একজন শিক্ষক। উপাচার্য হওয়ার আগে আশপাশের দু-চারজন ছাড়া ক্যাম্পাসের আর কেউ আমাকে চিনতেন না। কর্মজীবনের ৪০টি বছর আমি এখানে কাটিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে আমার বিচরণ শ্রেণিকক্ষকেন্দ্রিক, শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ছিল। আমি তাদের যত্নের সঙ্গে পড়িয়েছি। ফলে শিক্ষার্থীরা আমাকে স্মরণ করে। এখনো দেশ-বিদেশ থেকে ফোন করে খোঁজখবর নেয়। আরেকটা কথা বলবে, দু-একটা বই আমি লিখেছি। এ ছাড়া মনে হয়, আমার নিজের কোনো বিশেষ কৃতিত্ব নেই।

ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার
ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার

প্রশ্ন: শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনি একজন গবেষকও। সমসাময়িক রাজনীতি, দুর্নীতি, ধর্ম, নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে আপনার গবেষণার আগ্রহ। আপনার গবেষণাকর্ম কীভাবে জনকল্যাণে ভূমিকা রাখছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: ছাত্র-জনতার বিপ্লবে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছে। এ অর্জনে আমাদের লেখালেখি, গবেষণার পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। দেখেন, আমরা তো রাস্তায় নেমে আন্দোলন করিনি, আমরা আমাদের লেখনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের পক্ষে লিখেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মধ্যেও আমাদের লেখনী চলেছে।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: রাতারাতি আমরা একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে হার্ভার্ড-এমআইটির মতো প্রতিষ্ঠান বানাতে পারব না। প্রথমে আমাদের শিক্ষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে শুধু গবেষণা নয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষার্থীদের কী অবদান রয়েছে, অবকাঠামো—এসব বিবেচনায় নেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে যেন আমরা সমানতালে এগিয়ে যেতে পারি, সে জন্য কাজ চলছে।

এ ক্ষেত্রে আপনাকে বলব, আমরা শিক্ষকদের থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি না। আমাদের কিছু শিক্ষক অনেক আর্টিকেল লেখেন। কিন্তু সেটা অনলাইনে পাওয়া যায় না, তাঁরা সেটা অনলাইনে প্রকাশ করেন না। তাঁরা যদি নিজেদের আর্টিকেল অনলাইনে নিয়মিত প্রকাশ করতেন, তাহলে আমরা সামগ্রিক একটা স্কোর পেতাম। কিন্তু তাঁদের এ অসহযোগিতার ফলে আমরা স্কোর হারাচ্ছি। তবে আশাহত হচ্ছি না। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে আমাদের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। ভবিষ্যতে আমাদের র‍্যাঙ্কিংয়ে আরও উন্নতি হবে।

প্রশ্ন: বিগত প্রশাসনের অধীনে নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ছিল। এখন কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: পেছনে কী হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবছি না। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়োগনীতি পুনর্বিন্যস্ত করেছি। গত ৪ জানুয়ারি নতুন নিয়োগ নীতিমালা পাস হয়েছে। আগে শুধু ভাইভার নাটক করে এখানে শিক্ষক নিয়োগ হতো। আগে থেকে নাটক ঠিক করা থাকত, পরে রিহার্সেল দেওয়া হতো। এখন আমরা ওই রাস্তা থেকে সরে এসেছি। নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে লিখিত পরীক্ষা নেব, প্রেজেন্টেশন নেব, এরপর ভাইভা নেব। এ নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ না হওয়ার সুযোগ নেই। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বলি, আগে একটা ভাইভা দিয়ে এখানে অনেকে শিক্ষক হয়ে যেতেন। দেখেন, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হতেও এখন প্রিলি-ভাইভা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। আর এখানে একটা ভাইভা দিয়ে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে যেতেন। আমি ভিসি থাকতে সেটা হতে দেব না।

প্রশ্ন: বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কী গবেষণা প্রকল্প চলমান? বিগত সময়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানতে চাই।

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: আমাদের যেসব ফ্যাকাল্টি রয়েছে, তার মধ্যে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওশানোগ্রাফি, ফরেস্ট্রি, সয়েল সায়েন্স, ন্যানোটেকনোলজি ও ফিশারিজে দুর্দান্ত গবেষণাকর্ম চলছে। এসব ফ্যাকাল্টির কিছু শিক্ষক পৃথক পৃথকভাবে চমৎকার গবেষণার কাজে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। আমার পর্যবেক্ষণে আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্সও অন্য ফ্যাকাল্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো করছে। আমাদের রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন সেল রয়েছে। তাদের উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্মের জন্য সংশ্লিষ্টদের পুরস্কৃত করেন।

প্রশ্ন: বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও গণিতবিদ এমেরিটাস অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের নামে চবিতে একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। এ কেন্দ্রটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। গবেষণাকেন্দ্রটি আরও সক্রিয় করা যায় কীভাবে?

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: এ গবেষণাকেন্দ্রের উদ্যোগে একটি গবেষণা মেলা করা হয়। এ মেলায় আমাদের সব শিক্ষকের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করা হয়। এ মেলায় সব শিক্ষকের পাশাপাশি ইয়াং ফ্যাকাল্টিরাও অংশ নেন। এ ছাড়া এ গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলো আমরা এখন প্রকাশ্যে বলছি না। অধ্যাপক ড. জামাল নজরুল ইসলামের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। অধ্যাপক জামাল নজরুল আর ড. ইউনূস—দুজনই তো আমাদের রত্ন। ইউনূসের সঙ্গে জামাল নজরুলের নোবেল পাওয়া উচিত ছিল। এ গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে আমাদের বিশেষ যে পরিকল্পনা রয়েছে, তার সঙ্গে এটাকে আরও কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেটা করা হবে।

ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার
ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার

প্রশ্ন: ড. জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে চবির নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সে জন্য শিক্ষার্থীরা জামাল নজরুলের স্মরণে তাঁর নামানুসারে বৃত্তি চালুর দাবি জানিয়েছেন...

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: বৃত্তি চালু করা, তাঁকে নিয়ে আরও কী কী কাজ করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ রয়েছে। আমরা কাজ করব।

প্রশ্ন: প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারবার। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন...

অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার: সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সমাবর্তন আয়োজন সামনে রেখে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সম্প্রতি দেখা করেছি। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আমাদের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা তাঁকে জানিয়েছি, ‘আমাদের সিন্ডিকেটে সর্বসম্মত একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে আমরা আপনাকে সম্মানের সঙ্গে চবি ক্যাম্পাসে নিয়ে যেতে চাই।’ চবির পরবর্তী সমাবর্তনে আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডিগ্রি দেব। আগামী বর্ষা শুরু হওয়ার আগে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিনা মূল্যের বই: মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ফের বদল, সব বই ছাপা শেষ হয়নি

  • বাদ শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু উপাধি, ৭ মার্চের ভাষণও নেই।
  • স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আরও লেখা বইয়ে সংযোজন করা হয়েছে।
  • প্রাথমিকের সব বই সরবরাহ শেষ।
রাহুল শর্মা, ঢাকা
বিনা মূল্যের বই: মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ফের বদল, সব বই ছাপা শেষ হয়নি

মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসনির্ভর ঘটনায় আবার বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বই থেকে বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নিবন্ধটি। তাঁর নামের সঙ্গের বঙ্গবন্ধু উপাধি বাদ পড়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে স্বৈরাচারসহ একাধিক বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি বইয়ে থাকছে না শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে প্রাথমিক স্তরের সব পাঠ্যবই সরবরাহ হলেও মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণির সব বই ছাপা এখনো শেষ হয়নি। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের কথা নিশ্চিত করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছোটখাটো কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছর পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা, কবিতা অথবা কার্টুন। প্রতিটি বইয়ের পেছনের কভারে দেওয়া হয় গ্রাফিতি। ইতিহাসনির্ভর অনেক বিষয়েও পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয় পেছনের কভার থেকে শেখ হাসিনার বাণী। শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখাও বাদ পড়ে।

এনসিটিবির সূত্র বলছে, মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগের বঙ্গবন্ধু উপাধি বাদ দিয়ে নাম লেখা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান। অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বইয়েও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের (সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) নাম যুক্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের পাশে স্বৈরাচারসহ একাধিক বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতিহাসনির্ভর আরও কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির ওপর একটি লেখা যুক্ত করা হয়েছে।

মাধ্যমিকের সব পাঠ্যবই ছাপা হয়নি

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা এখনো শেষ হয়নি। ছাপা হলেও সরবরাহ বাকি ৪২ শতাংশ পাঠ্যবই। অবশ্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সংকট নেই। এই স্তরে শতভাগ পাঠ্যবই মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।

সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে।

আগামী বছরের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২১ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৩০০টি এবং প্রাথমিক স্তরের (ইবতেদায়ি ছাড়া) জন্য ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪টি বই।

এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মতো এবারও সব শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই ছাড়াই শিক্ষাবর্ষ শুরু করবে। এবার বেশি বেকায়দায় পড়বে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। বই ছাপা ও সরবরাহের গতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী জানুয়ারির মধ্যেও সব বই মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো কঠিন হবে।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বই ছাপা ও বাঁধাই শেষ হয়েছে। তবে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শনসহ (পিডিআই) আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাধ্যমিকের ৩৯ শতাংশের কিছু বেশি পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করা হয়নি।

সূত্র বলছে, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির ৯০ দশমিক ৬৫ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সপ্তম শ্রেণির ৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অষ্টম শ্রেণির ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা হলেও সরবরাহ করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা হলেও সরবরাহ করা হয়েছে ৭৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

অবশ্য শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে। গত রোববার এনসিটিবি কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হবে। এর আগেই প্রায় শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: ‎ছাত্রনেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দিল কমিশন

জবি প্রতিনিধি‎
আজ সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎আগামীকাল মঙ্গলবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন। আগের দিন আজ সোমবার রাতে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।   ‎

‎আজ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক প্রার্থী। ‎

‎নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘অনেকেই (রাজনৈতিক দলের) আবেদন করেছেন। তাঁরা পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকতে চান। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।’ এর আগে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের নেতাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।

তবে হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন এল—জানতে চাইলে এ প্রশ্নের উত্তর দেয়নি নির্বাচন কমিশনার। তারা বলে, এখনো সময় আছে। কেউ চাইলে আবেদন করতে পারেন।

কোন কোন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন আবেদন করেছে—জানতে চাইলে কমিশন উত্তর দেয়নি। তবে সূত্র জানায়, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির প্যানেলের শতাধিক নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে ঢোকার এই পাস কার্ডের আবেদন করেছেন। ‎

‎এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক ফেরদৌস শেখ বলেন, ‘আমরা জানতাম ভোটার নয় এমন কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পর্যবেক্ষক হিসেবে রানিং শিক্ষার্থীরা থাকলেই হয়। কিন্ত হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত আমাদের জানানো হয়নি।’ ‎

‎স্বতন্ত্র আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী সানি বলেন, ‘রাজনৈতিক বা ছাত্রনেতাদের কাউকে ঢুকতে দিলে এটা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে শিক্ষার্থীরা প্রভাবিত হতে পারে ও নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ বিঘ্নিত হবে। আমরা চাই, শিক্ষার্থী নয়—এমন কোনো ব্যক্তি যেন না ঢোকে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎জকসু নির্বাচন: ৬টি মেশিনে ভোট গণনা, ফলাফল দেখা যাবে লাইভে

জবি প্রতিনিধি‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ১২
আজ সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন কমিশন এক সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করবেন। পরে সব কেন্দ্রের ফলাফল সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করবে। ভোট গণনার জন্য ছয়টি মেশিন ব্যবহার করা হবে এবং ফলাফল লাইভে দেখানো হবে বলে জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫-এর নির্বাচন কমিশন।

‎‎আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন কমিশনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান।

‎‎এ সময় ড. মোস্তফা হাসান আরও জানান, নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় একটি স্বচ্ছ, সুশৃঙ্খল, গ্রহণযোগ্য এবং ঐতিহাসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

‎মোস্তফা হাসান জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। তবে বেলা ৩টার মধ্যে যাঁরা ভোটকেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বেষ্টনীর ভেতরে প্রবেশ করবেন, তাঁরা সবাই ভোট দিতে পারবেন। ‎

‎নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জকসু নির্বাচনে ৩৯টি ভোটকেন্দ্রে ১৬ হাজার ৬৪৯ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ‎

‎ভোট গ্রহণ শেষে প্রতিটি কেন্দ্রে পৃথকভাবে ভোট গণনা করা হবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এ ছাড়া নিজ কেন্দ্র ছাড়া কোনো প্রার্থী অন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি ভোট দেওয়া শেষে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নিজ কেন্দ্রেও পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানান তিনি। ‎

‎নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা কার্যকর থাকবে বলে জানান তিনি। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও প্রতিটি ভোটকেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি ডিজিটাল বোর্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভোট গণনা লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‎

মোস্তফা হাসান আরও জানান, যেসব ভোটারের আইডি কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তাঁরা ভোটার তালিকায় প্রবেশ করে কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে মোবাইলে অথবা প্রিন্ট কপি হিসেবে ভোটার আইডি সংগ্রহ করে ভোট দিতে পারবেন। ভোটার তালিকা হবে ছবিযুক্ত।

‎নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটকেন্দ্রে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করা হবে। সকালে বিভাগভিত্তিক ব্যালট পেপার সরবরাহ করা হবে। যে শিক্ষার্থী যে বিভাগের ভোটার, তিনি সেই বিভাগেই ভোট দেবেন। ব্যালট পেপারে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা কোড। ‎

‎সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, নির্বাচনের আগে আজ ‘মক টেস্ট’ সম্পন্ন করা হয়েছে, যেখানে প্রায় ৩০ জন প্রার্থী অংশ নেন। অতিরিক্ত কোনো ব্যালট ছাপানো হয়নি। ভোট দেওয়া শেষে ভোটারদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হবে। শুধু প্রার্থী ও বৈধ কার্ডধারীরাই ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবেন। ‎

‎সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতেমা কাকলী, অধ্যাপক ড. জুলফিকার মাহমুদ ও ড. মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন এবং পিআরআইপি পরিচালক ড. মুহাম্মদ আনওয়ারুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎জকসু নির্বাচন: ‎শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য রুট প্ল্যান ঘোষণা

জবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

‎আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে রুট প্ল্যান ও সময়সূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ‎

‎আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিমের নির্দেশক্রমে পরিবহন প্রশাসক ড. তারেক বিন আতিকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ‎

‎বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায়, ভোটগ্রহণ ও নির্বাচনের সব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল হতে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে রুট প্ল্যান ও সময়সূচি নির্ধারণ করা হলো। ‎

‎ (ক) শাহবাগ থেকে ছেড়ে আসবে জবি ক্যাম্পাসে অর্নিবান-২, উল্কা-৪, ধূমকেতু, কালিগঙ্গা, তুরাগ, উত্তরণ-২। ‎

‎ (খ) জবি (ক্যাম্পাস) থেকে ছেড়ে যাবে শাহবাগ, গোমতী, রজতরেখা, উত্তরণ-২, নোঙ্গর, উল্কা-৪ সহ আরো একটি বাস। ‎

‎ (গ) যাত্রাবাড়ী থেকে ছেড়ে আসবে জবি ক্যাম্পাসে, বিজয়-১, ঐতিহ্য, বিজয়-২ ‎

‎ (ঘ) জবি (ক্যাম্পাস) থেকে ছেড়ে যাবে যাত্রাবাড়ী পদ্মা, আড়িয়াল, দ্বিতল বাসসহ আরও ২টি বাস। ‎

‎বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনিক চলমান সব রুটের শাটল ট্রিপ ও দুপুরের ট্রিপ যথারীতি চলাচল করবে।

‎এর আগে, আগামীকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে জকসুর ভোটগ্রহণ। কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ৩৮টি এবং হল সংসদের জন্য ১টি ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১টি করে ভোটগ্রহণ বুথ থাকবে এবং ভোটগ্রহণ শেষে মেশিনের মাধ্যমে ভোট গণনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত