Ajker Patrika

নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন উদ্দীপনায় একসঙ্গে এগিয়ে চলা

আব্দুর রাজ্জাক খান
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ১২
নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন উদ্দীপনায় একসঙ্গে এগিয়ে চলা

নতুন বছর, নতুন সম্ভাবনা! ক্যাম্পাসের প্রতিটি দিন নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন উদ্যোগ ও নতুন উদ্দীপনায় পূর্ণ। ২০২৫ সাল আমাদের জন্য এক অনন্য যাত্রা হতে চলেছে, যেখানে আমরা শুধু পড়াশোনা বা ক্যাম্পাসের কার্যক্রমের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখব না, বরং বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তন, শিক্ষার প্রসার এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে নিজেদের যুক্ত করব। এই বছরের ক্যাম্পাস ভাবনা আমাদের ছাত্রজীবনের প্রতিটি অধ্যায়কে নতুন করে চিন্তা করতে এবং একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতে প্রেরণা দেবে। আসুন, একসঙ্গে উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরস্পরকে সমর্থন করে আমাদের ক্যাম্পাসকে আরও শক্তিশালী, সম্মানজনক এবং সহায়ক করে তুলি।

সচেতনতাই হোক সম্ভাবনা

নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনা ও লক্ষ্য। ২০২৫ সাল কেবল একটি বছর নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেদের দক্ষ, উদ্যমী এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ করে তোলার এক সোপান। একাডেমিক সাফল্যের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য হওয়া উচিত বাস্তব জীবনে শিক্ষার প্রয়োগ ও দক্ষতা বিকাশ। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে স্বপ্নপূরণের পাশাপাশি আমরা হতে পারি জাতির পরিবর্তনের মূল চালিকা শক্তি। ব্যক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ভুলে গেলে চলবে না। দূষণ, বৈষম্য ও পরিবেশগত সমস্যার সমাধানে সচেতনতা ও উদ্যোগ জরুরি। শিক্ষা, উদ্ভাবন ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে নতুন বছরে এগিয়ে যাই নতুন সম্ভাবনার পথে।

মোতালেব হোসাইন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

নতুন বছর হোক নতুন সাফল্যের প্রতীক

নতুন বছর ২০২৫ আমাদের জীবনে নতুন সূচনার প্রতীক। এই বছরে প্রকৃতি যেন শীতল হাওয়া, সবুজ প্রান্তর ও সতেজ বৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের মনে প্রশান্তি আনে। আমি চাই, নতুন বছর আমাদের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি দিক, সমাজে ন্যায্যতা ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হোক। সবাই যেন কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে লক্ষ্য পূরণ করে। পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হয়ে পৃথিবীকে সবুজ ও নিরাপদ করে তুলি। সাত কলেজের সমস্যাগুলো সমাধান করে উচ্চশিক্ষার উন্নত সুযোগ নিশ্চিত হোক। নতুন বছর হোক নতুন আশা, প্রেরণা ও সাফল্যের প্রতীক।

নাবিলা রহমান চৈতী

ইডেন মহিলা কলেজ।

নতুন বছর হোক পরিবর্তনের নতুন শুরু

নতুন বছর মানে নতুন স্বপ্ন, নতুন পরিকল্পনা। ২০২৫ সাল আমার জীবনের বিশেষ একটি অধ্যায়। একদিকে শেষ বর্ষের পড়াশোনা, অন্যদিকে ক্যারিয়ার গঠনের চ্যালেঞ্জ। থিসিস সম্পন্ন করা এবং সাংবাদিকতার মূলনীতি বাস্তবে প্রয়োগের পাশাপাশি ডিজিটাল সাংবাদিকতার আধুনিক দিকগুলো শিখতে চাই।

ব্যক্তিগতভাবে, ক্যাম্পাসে ছাত্র অধিকার ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে ক্লাবের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করেছি। প্রতিকূলতা আমাকে শেখায় থেমে না থেকে নতুন পথ খুঁজে নিতে। তাই ২০২৫ সালকে দেখছি স্বপ্ন, দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সমন্বয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় হিসেবে।

আল হাসান আকুন্ঞ্জী

নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, খুলনা।

ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলাই অঙ্গীকার

২০২৫ সাল আমার অনার্সের শেষ বছর এবং বার পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। এ বছর সময় ব্যবস্থাপনা, সৃজনশীলতা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করব। প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা, ব্যায়াম ও সৃজনশীল কাজে সময় দেব। একাডেমিক সাফল্য, বার পরীক্ষায় প্রস্তুতি এবং বিতর্ক ও কবিতার মাধ্যমে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি। ক্যাম্পাসে সৃজনশীল কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চাই। নতুন সম্ভাবনা ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে চলাই আমার অঙ্গীকার।

তামান্না আক্তার

আর. পি. সাহা বিশ্ববিদ্যালয়।

২০২৫ হোক এগিয়ে যাওয়ার বছর

নতুন বছর মানেই নতুন সম্ভাবনার দ্বার। ২০২৫ সালকে আমি স্বপ্নপূরণের অধ্যায় হিসেবে দেখি। একাডেমিক জীবনে মনোযোগী হয়ে গবেষণায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ক্লাব কার্যক্রমে নেতৃত্বের গুণাবলি শাণিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। শারীরিক সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য ধ্যান ও ইতিবাচক চিন্তার চর্চা শুরু করেছি। নোবিপ্রবির উন্নয়নে কিছু প্রস্তাব: ক্লাসরুম ও ল্যাব-সংকটের দ্রুত সমাধান, শিক্ষক ও হল-সংকট মোকাবিলা, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, মানসম্পন্ন ক্যাফেটেরিয়া ও আধুনিক টিএসসি নির্মাণ। এসব উদ্যোগ ক্যাম্পাসকে আরও সুন্দর ও কার্যকর করে তুলবে। ২০২৫ হোক এগিয়ে যাওয়ার বছর।

খায়রুল আমান শাওন

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে

নতুন বছর, নতুন স্বপ্ন। প্রতিটি সূর্যোদয়ের সঙ্গে আসে নতুন আশা। ২০২৫ সাল এনেছে সম্ভাবনা ও লক্ষ্য। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের একাডেমিক ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের ভারসাম্য তৈরি করা প্রয়োজন। শুধু ভালো ফলের পেছনে না ছুটে মানসিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা বিকাশের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। কো-কারিকুলার ও এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ আমাদের আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব ও সৃজনশীলতা বাড়ায়। ২০২৩ সালে উপলব্ধি করেছি, শুধু ক্লাস আর আড্ডায় সীমাবদ্ধ থাকলে বড় সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। বিভিন্ন ক্লাব কার্যক্রম, সাংগঠনিক কাজ ও প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজের অদেখা ক্ষমতাগুলো আবিষ্কার করেছি। নতুন বছরে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাও গুরুত্বপূর্ণ। পরিচ্ছন্নতা, পথশিশুদের শিক্ষা, বনায়ন, পরিবেশ রক্ষা ও ট্রাফিক সচেতনতার মতো উদ্যোগ নিতে পারি। এগুলো আমাদের দায়িত্ববোধ বাড়িয়ে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আত্ম-উন্নয়ন ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ই পারে আমাদের জীবনকে অনন্য করে তুলতে।

ফারহান ইবতেশাম জয়

ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়।

সমাজের প্রতি অবদান রাখতে চাই

নতুন বছর আসে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা পুরোনো গ্লানি ভুলে সফলতার গল্প লিখতে চাই। ফার্স্ট ইয়ারে (স্নাতক) ভর্তি হয়ে আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখি। নিয়মিত পড়াশোনা ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে আত্মবিকাশে সচেষ্ট থাকতে চাই। ক্যাম্পাসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস আমার পরিকল্পনায় রয়েছে। পাশাপাশি অসহায় শিশুদের সহায়তা ও রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের প্রতি অবদান রাখতে চাই। প্রতিদিনের সফলতা দিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে চাই।

মো. শাওন আহম্মেদ

সরকারি তিতুমীর কলেজ।

আসুন, সবাই মিলে একটি সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলি

ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের মেধা, সৃজনশীলতা ও নেতৃত্ব বিকাশের কেন্দ্র। তবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা ও সুযোগের অভাবে অনেকে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারে না। এক বছর আগে একটি দুর্ঘটনার কারণে আমি দীর্ঘদিন শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিলাম। তবে পরিবারের উৎসাহ ও সহপাঠীর সহযোগিতায় আমি সাংবাদিক সমিতি ও বিতর্ক ক্লাবে যোগ দিতে সক্ষম হই। প্রথম রচনা প্রতিযোগিতায় স্থান অর্জন আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। এই অভিজ্ঞতা শিখিয়েছে, ইচ্ছাশক্তি ও সহযোগিতার মাধ্যমে সব বাধা পেরোনো সম্ভব। আসুন, ২০২৫-এ আমরা সবাই মিলে একটি সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও পরিবেশবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলি।

শায়লা আক্তার মীম

সরকারি তিতুমীর কলেজ।

বৈষম্যের ঠাঁই এই বাংলায় নাই

২০২৫-এর যাত্রা শুরু হোক বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলার স্বপ্ন নিয়ে। শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে, রাস্তায় থাকা মানুষের খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করে, রেশন সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যমে শ্রমশক্তি বাড়ানো হোক। নারীর নিরাপত্তা ও সমান সুযোগের পথ প্রশস্ত করা, আস্থা জাগানো আইনি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বাক্‌স্বাধীনতার সঠিক চর্চা নিশ্চিত করা হোক। কৃষি থাকুক কৃষকের হাতে, শিক্ষা হোক প্রয়োগভিত্তিক ও আগ্রহনির্ভর। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রেখে গড়ে তুলি একটি শক্তিশালী, স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ।

তানিয়া আক্তার

গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

নতুন বছরটি সমাজের জন্য আশার আলো হয়ে উঠুক

নতুন বছরে সমাজ পরিবর্তনের জন্য আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা হলো শিক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করা। আমি বিশ্বাস করি, একটি সুস্থ ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের জন্য শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য আমি পরিকল্পনা করেছি, গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে বিনা মূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মৌলিক দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন করা। এ ছাড়া আমি নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্যোগ নিতে চাই। সমাজে লৈঙ্গিক বৈষম্য দূর করতে নারী ও কন্যাশিশুদের জন্য সৃজনশীল কর্মশালা আয়োজন করব এবং পরিবেশের উন্নয়নে বৃক্ষরোপণ ও পুনর্ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু করব। আমার লক্ষ্য হলো, মানুষের মাঝে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে সমাজকে একটি উন্নত, ন্যায়সংগত এবং টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নতুন বছরটি সমাজের জন্য আশার আলো হয়ে উঠুক।

শ্রেয়া ঘোষ

আমেরিকার হবার্ট অ্যান্ড উইলিয়াম স্মিথ কলেজ।

স্বপ্ন, সম্ভাবনা এবং নতুন সূর্যোদয়

২০২৫ সাল আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে একটি নতুন সম্ভাবনার সূচনা। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর আমরা এমন একটি দেশ হতে চাই, যেটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ এখন একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, যেখানে প্রযুক্তি, শিক্ষা এবং নারীর ক্ষমতায়ন দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে প্রত্যেক শিশু স্বপ্ন দেখবে, প্রত্যেক তরুণ সুযোগ পাবে এবং প্রত্যেক নাগরিক গর্বিত হবে তার দেশের উন্নতির অংশ হতে পেরে। এ বছর আমরা পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন, নারী নেতৃত্ব এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে জোর দেব। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম তাদের মেধা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে দেশকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশ হতে পারে টেকসই উন্নয়নের পথিকৃৎ, যেখানে প্রতিটি প্রকল্প হবে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত, শক্তিশালী এবং সুখী দেশ—যেখানে সবাই সুখী থাকবে এবং দেশের প্রতি গর্বিত হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে এই নতুন বছরে আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করি।

মো. সামিউল ইসলাম প্রমি

বিএসএমআর মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি।

নতুন বছরের পরিকল্পনা ও লক্ষ্য

নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন, নতুন পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার নতুন সুযোগ। এই বছরকে আমার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে দেখতে চাই। একাডেমিক লক্ষ্য হিসেবে আমার প্রথম উদ্দেশ্য হলো পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দেওয়া। এই বছর আমি পরীক্ষায় ভালো ফল করার পাশাপাশি একাডেমিক গবেষণার কাজেও যুক্ত হতে চাই। ব্যক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে চাই, যা আমার দক্ষতা এবং ব্যক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।

জান্নাতুন আরাবী জেরিন

এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে কারণে সন্তানদের ‘আবৃত্তি’ শেখাবেন

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
যে কারণে সন্তানদের ‘আবৃত্তি’ শেখাবেন

আবৃত্তি কেবল একটি শিল্পমাধ্যম নয়; এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ ও চারিত্রিক গঠনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, যেখানে শিশুরা পাঠ্যবইয়ের গণ্ডির বাইরে নিজেদের সৃজনশীলতা ও অন্তর্নিহিত প্রতিভা বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না, সেখানে আবৃত্তিচর্চা তাদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। শুদ্ধ উচ্চারণের অনুশীলন, আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা এবং ভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ সৃষ্টির মাধ্যমে আবৃত্তি শিশুদের সার্বিক ব্যক্তিত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবৃত্তির এই প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রিন্সিপাল ডেমোনস্ট্রেটর আরিফ হাসান। গ্রন্থনা করেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

আবৃত্তির মূল ভিত্তি হলো শুদ্ধ ও প্রমিত উচ্চারণ। একটি কবিতার সঠিক ভাব ও ছন্দ বজায় রেখে পাঠ করতে হলে স্বর, বর্ণ ও শব্দের যথাযথ উচ্চারণ অপরিহার্য। ছোটবেলা থেকে আবৃত্তিচর্চা করলে শিশুরা ধীরে ধীরে আঞ্চলিকতার প্রভাব কাটিয়ে প্রমিত বাচনভঙ্গির অধিকারী হয়। এটি কেবল বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রেও সহায়ক এবং শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও জড়তা দূরীকরণ

জনসমক্ষে নির্ভয়ে ও সুন্দরভাবে কথা বলার সক্ষমতা একজন সফল মানুষের অন্যতম প্রধান গুণ। আবৃত্তি শিশুদের মনের ভেতরের ভয় ও জড়তা কাটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। মঞ্চে বা সবার সামনে আবৃত্তি পরিবেশন করার মাধ্যমে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। নিজেদের ভাব প্রকাশের এই চর্চা লাজুকতা দূর করে এবং ব্যক্তিত্বকে করে তোলে আরও দৃঢ় ও সাবলীল।

শব্দভান্ডার সমৃদ্ধি

কবিতা বা ছড়া আবৃত্তির মাধ্যমে শিশুরা নতুন নতুন শব্দ, বাক্যগঠন ও সাহিত্যের বৈচিত্র্যময় দিক সম্পর্কে জানতে পারে। এর ফলে তাদের শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং ভাষার প্রতি জন্ম নেয় গভীর অনুরাগ। কবিতার ভাব, ছন্দ ও অলংকার অনুধাবনের মধ্য দিয়ে তাদের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের বিকাশ

একটি কবিতা মুখস্থ করে তা যথাযথ আবেগ ও ভাবসহ উপস্থাপন করা স্মৃতিশক্তির জন্য একটি কার্যকর অনুশীলন। আবৃত্তিচর্চার জন্য কবিতার বিষয়বস্তু মনোযোগ দিয়ে বুঝতে হয়, যা শিশুদের একাগ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই অনুশীলন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং শেখার ক্ষমতা জোরদার করে।

মানবিক মূল্যবোধের চর্চা

সাহিত্য; বিশেষ করে কবিতা—মানবজীবন, দেশপ্রেম, মানবতা ও প্রকৃতিপ্রেমের গভীর বার্তা বহন করে। আবৃত্তির মাধ্যমে শিশুরা এসব মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং সেগুলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ভালো কবিতার ভাবধারা শিশুদের কোমল মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং নৈতিক বিকাশে সহায়তা করে।

আবৃত্তি ও মেডিকেল সায়েন্স

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা আবৃত্তিকে একধরনের থেরাপি হিসেবেও উল্লেখ করেন। তাঁদের মতে, আবৃত্তি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ বৃদ্ধি

আবৃত্তির জন্য কবিতা বোঝা, মনে রাখা এবং সঠিক আবেগসহ উপস্থাপন করা প্রয়োজন হয়। এ প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের ভাষা প্রক্রিয়াকরণ ও স্মৃতিসংশ্লিষ্ট অংশ সক্রিয় হয়। ফলে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সামগ্রিক সংজ্ঞানাত্মক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।

স্নায়বিক সংযোগ শক্তিশালীকরণ

নিয়মিত কবিতা মুখস্থ করা ও আবৃত্তি করার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়বিক সংযোগ আরও দৃঢ় হয়, যা তথ্য প্রক্রিয়াকরণের গতি বাড়াতে সাহায্য করে।

ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্সের ঝুঁকি হ্রাস

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মুখস্থ করার অনুশীলন যেমন কবিতা বা ধর্মীয় স্তোত্র আবৃত্তি মস্তিষ্কের সক্ষমতা বাড়ায় এবং বার্ধক্যের স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়

আবৃত্তির সময় সুর, ছন্দ ও শ্বাসপ্রশ্বাসের একটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার হয়, যা ধ্যান বা মেডিটেশনের মতো প্রভাব ফেলে। এতে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয় এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের মাত্রা কমতে সাহায্য করে।

কবিতা মানুষের গভীর অনুভূতি ও আবেগকে প্রকাশ করে। আবৃত্তির মাধ্যমে সেই আবেগ প্রকাশ বা অনুভব করার সুযোগ তৈরি হয়, যা মানসিক চাপ কমিয়ে স্থিতিশীলতা বাড়ায়। মনোরোগ চিকিৎসায় ‘পোয়েট্রি থেরাপি’ বা ‘গ্রন্থ চিকিৎসা’ একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবৃত্তির সময় মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিনের মতো ‘সুখের হরমোন’ নিঃসৃত হতে পারে, যা মন ভালো রাখতে সহায়তা করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন: কাল ভোট, নিরাপত্তা জোরদার

  • ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।
  • ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি।
  • মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন।
  • কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রার্থী ১৮৭।
সোহানুর রহমান, জবি
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জকসু নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।

সর্বশেষ ১৯৮৭ সালে জগন্নাথ কলেজে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর এটিই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১৬ হাজার ৪৪৫ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৮ হাজার ৪৭৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১৭০ জন। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট প্রার্থী ১৮৭ জন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। ৩৯ কেন্দ্রের ১৭৮ বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ব্যালট পেপার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলাকালে প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ টিম দায়িত্ব পালন করবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী আজ থেকে ক্যাম্পাস ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সক্রিয় থাকবে। কমিশন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যেকোনো সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠোর অবস্থানে থাকবে।’

নির্বাচনকে ঘিরে গতকাল শেষ দিনের মতো প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা। দিনভর ক্যাম্পাসে প্রার্থীদের গণসংযোগ, মতবিনিময় ও ভোটারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লক্ষ করা গেছে।

ছাত্রশিবির-সমর্থিত অদম্য জবিয়ান ঐক্য প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটি ফেয়ার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ভোট গণনায় যেন বিলম্ব না হয়, সেই দাবিও থাকবে। সব মিলিয়ে আশা করি, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্যাম্পাসে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে।’

ছাত্রদল-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও এই ধারা অব্যাহত থাকত। এখন আমাদের প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। আশা করি, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থেকে এবং কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবে।’

জাতীয় ছাত্রশক্তি-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমরা হতাশ। তাদের প্রতিটি কার্যক্রম বিতর্কিত, তাই কোনো আশা রাখছি না। তবে শিক্ষার্থীদের থেকে আমাদের একটাই আশা, ক্যাম্পাসের জন্য যারা কাজ করবে, সে রকম প্রতিনিধি বাছাই করতে তারা ভোটকেন্দ্রে এসে নিরাপদে ভোট দিতে পারুক।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট-সমর্থিত মওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, ‘প্রচারণার মধ্য দিয়ে আমরা অনেক ভালো সাড়া পেয়েছি এবং শিক্ষার্থীদের থেকে আশাবাদী। তবে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে কিছু সংশয় আছে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’

লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লাবণী আক্তার কবিতা বলেন, ‘আশা করি, নির্বাচিত প্রার্থীরা দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’

নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে প্রবেশসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি জানান, ‘কেবল অনুমোদিত ব্যক্তি, ভোটার, শিক্ষক এবং নির্বাচনের কাজে বিশেষভাবে অনুমোদিত ব্যক্তিরাই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এ জন্য নির্ধারিত পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক। পরিচয়পত্র সংগ্রহের বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর বুটেক্সে প্রথম সমাবর্তন

শেফাক মাহমুদ, বুটেক্স
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) অনুষ্ঠিত হলো সমাবর্তন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জুংগাই ওয়াং। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।

সমাবর্তনে মোট ৪,১২৬ জন শিক্ষার্থীকে গ্র্যাজুয়েশন ও পোস্টগ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ৬০ জন মাস্টার্স, ১৯৪ জন এমবিএ এবং বুটেক্স অধিভুক্ত কলেজসমূহ থেকে ১,২৫০ জন গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৪১ জন শিক্ষার্থীকে গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, "আজকের এই সমাবর্তন শুধু বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নয়, দেশের বস্ত্রশিল্পের গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পরিপক্কতার সাক্ষী হচ্ছি, যা অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছে। এটি কেবল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; বরং ভবিষ্যতের আরও অসংখ্য তরুণকে অনুপ্রাণিত করবে।"

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, "আমাদের বৈদেশিক আয়ের বড় অংশ আসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল পণ্য থেকে। এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ সরবরাহে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছে। তাই মনে রাখতে হবে—দেশ ও জাতি আজ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। চলার পথ সহজ নয়; সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মনে রেখো, তোমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও কাজের প্রভাব শুধু নিজেই নয়, পরিবার, সমাজ এবং দেশের ওপরও পড়বে।"

হংকং পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ার অধ্যাপক ড. জুংগাই ওয়াং বলেন, “প্রাচীনকাল থেকে এশীয় এই উপমহাদেশ বস্ত্রশিল্পে বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ঢাকার মসলিন ছিল বিশ্বের সর্বোৎকৃষ্ট তুলা বস্ত্র—যার কোমলতা ও মান আজও অতুলনীয়। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আজও বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাত বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। দেশের ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড হিসেবে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের প্রতি জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। টেক্সটাইল ও অ্যাপারেলের প্রতি আগ্রহ ও নিষ্ঠা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে এবং দেশসেবার সুযোগ তৈরি করবে। এই সমাবর্তন শুধু একটি ডিগ্রি অর্জনের অনুষ্ঠান নয়—এটি আরও বড় একটি উত্তরাধিকার বহনের আনুষ্ঠানিক সূচনা।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, "মোট ৪,১২৬ জন গ্র্যাজুয়েট আজ তাদের ডিগ্রি গ্রহণ করছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সকল গ্র্যাজুয়েট দেশ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন। আমাদের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দেশের টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে অবদান রেখে আসছে। এর পাশাপাশি ২৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখেছেন। আজকের এই সমাবর্তন শুধু একটি অর্জন নয়, বরং দায়িত্ব ও অঙ্গীকারের সূচনা। সততা, অধ্যবসায় এবং শিক্ষার ধারাবাহিক চর্চাকে জীবন ও কর্মের মূলমন্ত্র হিসেবে ধারণ করে নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সমাজ, দেশ ও মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানাই।"

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্য জানুয়ারির আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই পৌঁছাবে: শিক্ষা উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত অনুষ্ঠান। ছবি: আজকের পত্রিকা

আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার)।

রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে আজ রোববার আয়োজিত ‘নতুন পাঠ্যবইয়ের সফট কপি অনলাইনে আপলোডকরণ উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন বা পিডিএফ কপি প্রকাশ করা হয়।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হবে। তার আগেই অলমোস্ট হান্ড্রেড পার্সেন্ট (প্রায় শতভাগ) বই পৌঁছে যাবে।

আগামী বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সবাই সব বিষয়ের নতুন পাঠ্যবই হাতে পাবে না বলে সম্প্রতি কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়।

এর সমালোচনা করে সি আর আবরার বলেন, ‘এখানে পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে রিপোর্ট (প্রতিবেদন) হয়েছে, যথার্থ রিপোর্ট হয়েছে। আবার কিছু কিছু রিপোর্ট আমি বলব, সেগুলো খুব যে একটা সৎ উদ্দেশ্যে হয়েছিল, সেটা না।’

নতুন বই নিয়ে অভিযোগের জবাব শিক্ষা প্রশাসন কাজের মাধ্যমে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন রকমের স্বার্থগোষ্ঠী এখানে কাজ করেছে এবং আমরা এখানে সেগুলো সয়েছি। এগুলো আমরা কোশ্চেন করিনি, কনটেস্ট করিনি। আমরা মনে করেছি, শেষ বিচারে আমরা কতটুকু নির্ভুল ও মানসম্পন্ন বই দিতে পারব, দ্যাট উইল বি আলটিমেট টেস্ট।’

বই ছাপানোর সময় বেশি লাগার কারণও অনুষ্ঠানে ব্যাখ্যা করেন সি আর আবরার।

বিভিন্ন প্রেসে অভিযান চালিয়ে ‘মানহীন’ বই ধ্বংস করা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্যে যেন কোনো ভুল না থাকে, এ জন্য রিটেন্ডার করতে হয়েছে। বিভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা ছিল, সেগুলো আমাদের নিরসন করতে হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত