Ajker Patrika

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে জেনে নিন

মো. সৈয়দুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে জেনে নিন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি শেষ হয়েছে বিষয়ের পছন্দক্রম নির্ধারণের সুযোগও। অল্পদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বিষয় মনোনয়নের ফল প্রকাশিত হবে। এরপরই শুরু হবে ভর্তি কার্যক্রম। তবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার আগে বেশ কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। এতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হবে।

মেধাক্রম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী তাঁর পূরণ করা পছন্দক্রমের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক একটি বিষয়ের জন্য মনোনীত হবেন। এটি যদি তাঁর পছন্দক্রমের প্রথম বিষয় হয়, তবে আর কোনো মাইগ্রেশন বা বিষয় পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না। এ ক্ষেত্রে তাঁকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। 

পছন্দের বিষয় না পেলে
যেসব শিক্ষার্থী পছন্দমতো বিষয় পাবেন না, তাঁদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাধারণত কয়েকটি ধাপে বিষয় মনোনয়নের কাজটি সম্পন্ন করে থাকে। প্রতিটি ধাপেই শিক্ষার্থীদের বিষয় পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথমবার শিক্ষার্থী যে বিষয়েই মনোনীত হবেন, তাঁকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে মাইগ্রেশন চালু করতে হবে এবং এই ফি প্রদানের রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।

পরে নির্দিষ্ট সময়ে শিক্ষার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হবে। তখন এই আগাম পরিশোধের রসিদ ও উচ্চমাধ্যমিক/সমমান এবং মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার মূল ট্রান্সক্রিপ্ট বা মার্কশিট, ছবি, উচ্চমাধ্যমিকে অধ্যয়নরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্রসহ সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করে সেগুলো জমা দিতে হবে। ফি প্রদান এবং সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ—এই দুটি কাজের যেকোনোটি সম্পন্ন না করা হলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে আগ্রহী নয় বলে গণ্য হবেন। তখন তাঁর মনোনীত বিষয় প্রত্যাহার করে এ বিষয়ের আসনটি অন্য শিক্ষার্থীকে পরবর্তী মনোনয়নে বরাদ্দ করা হবে। পরবর্তী কোনো ধাপের বিষয় মনোনয়নে উক্ত শিক্ষার্থী আর বিবেচিত হবেন না। তাই এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

হাতে যখন অনেক অপশন
অনেক শিক্ষার্থী একই সঙ্গে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান। তখন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দ্বিধায় ভোগেন যে তাঁরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নিজ পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্নাতক পাস করার পর কী করতে চান, তাঁর স্বপ্ন কী, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তাই পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট শিক্ষার্থীকে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান আসবে, সেখানেই পড়া উচিত। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় নয়, তাঁর জ্ঞানের গভীরতা দিয়েই পরবর্তী সময়ে বিচার করা হবে সবক্ষেত্রে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয় আসতে পারে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে না দেখে বরং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কোনো সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জানা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

পড়াশোনার খরচ যেমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় বিভাগভেদে ৮ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা খরচ হয়। এরপর বছরে আরও ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। তা ছাড়া হলগুলোতে আলাদা কিছু খরচ আছে, যদিও তা সামান্য। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে হল থেকে। এ জন্য আগে থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল মার্কশিট, অ্যাডমিট ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড ১০-১৫টি সেট ফটোকপি রাখতে হবে। এ ছাড়া অভিভাবকের আয়ের সনদ (সত্যায়িতসহ), প্রত্যয়নপত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার মূল প্রবেশপত্র ফটোকপিসহ সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। সাধারণত হলগুলোতে সিট বরাদ্দের আবেদনের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ভর্তির ৩ থেকে ৪ মাস পর। এর আগপর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণরুম বা নিজ উদ্যোগে থাকার ব্যবস্থা করতে হয়। অনেকে এগুলোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন না। তাই এসব বিষয় আগে থেকেই জেনে নিতে হবে এবং এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলে বিভাগভেদে সপ্তাহে ৩-৫ দিন। ক্লাসে দলীয় কাজ, প্রেজেন্টেশন ও অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। এগুলো সামলানোর জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এখনই পাওয়ার পয়েন্টের কাজ শিখে ফেলা এবং যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর এবং সুদীর্ঘ ইতিহাসের অংশ হওয়া প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছেই একটি স্বপ্ন। সে স্বপ্নকে বাস্তবের সীমানায় এনে সবার আরও এগিয়ে যেতে হবে। তারাই সফল, যারা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে হবে। মনোযোগ দিতে হবে গবেষণামূলক কাজে। সর্বোপরি নিজেকে একজন দক্ষ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই পূর্ণতা পাবে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৩
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা

যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শোক পালনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকে উপজীব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক সেমিনার ও অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

আজ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ সকল হল/হোস্টেল এবং আবাসিক এলাকার মসজিদে খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনায় কোরআনখানি, দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হবে।

আগামীকাল বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জকসু নির্বাচন স্থগিতে দোটানায় শিক্ষার্থীরা

  জবি প্রতিনিধি
জকসু নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জকসু নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু হওয়ায় দোটানায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভোট দিতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে উপস্থিত হলেও এখন তাঁরা ভোটের অপেক্ষায় থাকবেন নাকি ক্যাম্পাস ত্যাগ করবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন।

সকালে নির্বাচন স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, নির্বাচন হোক বা স্থগিতই থাকুক, যে সিদ্ধান্ত আসুক না কেন তা দ্রুত ও স্পষ্টভাবে আসা উচিত।

‎এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আলামিন বলেন বলেন, এত দূর থেকে আসলাম শুধুমাত্র ভোট দিতে। কিন্তু হঠাৎ শুনলাম নির্বাচন হবে না। আবার শুনছি আজকেই হবে যেকোনো মূল্যে। নির্বাচন আজ হবে কিনা এটা নিয়ে সংশয়ে আছি।

‎অনিক নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন আজ হবে না। এদিকে সবাই আবার আন্দোলন করছে নির্বাচন আজকেই দেওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখা যাক। কিন্তু যেটিই হোক সিদ্ধান্ত দ্রুত আসা উচিত। ‎

জকসু নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জকসু নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎এর আগে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জকসু নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। আজ সকাল সোয়া ৯টায় নির্বাচন স্থগিতের এ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুবরণের খবরে স্থগিত হয়েছে এ নির্বাচন। ‎

‎প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিসি ভবন ঘেরাও করে নির্বাচন আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎জকসু নির্বাচন স্থগিত, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জবি প্রতিনিধি, ঢাকা
‎জকসু নির্বাচন স্থগিত, প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ‎আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মিটিং শেষে এ তথ্য জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম।

নির্বাচন স্থগিতের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সকাল ৯টার পরই এ বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপাচার্য ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। ‎

জকসু-২

‎এর আগে ৮টা ৩০ মিনিটে ভোট গ্রহণ শুরুর নির্দেশনা থাকলেও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়।

এ সময় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানায় প্রশাসন। জরুরি সিন্ডিকেট সভায় জকসু নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিনা মূল্যের বই: মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ফের বদল, সব বই ছাপা শেষ হয়নি

  • বাদ শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু উপাধি, ৭ মার্চের ভাষণও নেই।
  • স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে আরও লেখা বইয়ে সংযোজন করা হয়েছে।
  • প্রাথমিকের সব বই সরবরাহ শেষ।
রাহুল শর্মা, ঢাকা
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৮
বিনা মূল্যের বই: মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ফের বদল, সব বই ছাপা শেষ হয়নি

মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসনির্ভর ঘটনায় আবার বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির সাহিত্য কণিকা বই থেকে বাদ পড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ নিবন্ধটি। তাঁর নামের সঙ্গের বঙ্গবন্ধু উপাধি বাদ পড়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের সঙ্গে স্বৈরাচারসহ একাধিক বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি বইয়ে থাকছে না শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে প্রাথমিক স্তরের সব পাঠ্যবই সরবরাহ হলেও মাধ্যমিক স্তরের সব শ্রেণির সব বই ছাপা এখনো শেষ হয়নি। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বই সরবরাহ করা হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকে কিছু বিষয়ে পরিবর্তনের কথা নিশ্চিত করেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মাহবুবুল হক পাটওয়ারী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছোটখাটো কিছু বিষয় সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছর পাঠ্যবইয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। মাধ্যমিকের প্রতিটি শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত করা হয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা, কবিতা অথবা কার্টুন। প্রতিটি বইয়ের পেছনের কভারে দেওয়া হয় গ্রাফিতি। ইতিহাসনির্ভর অনেক বিষয়েও পরিবর্তন আনা হয়েছিল। পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হয় পেছনের কভার থেকে শেখ হাসিনার বাণী। শেখ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখাও বাদ পড়ে।

এনসিটিবির সূত্র বলছে, মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবইয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগের বঙ্গবন্ধু উপাধি বাদ দিয়ে নাম লেখা হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমান। অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বইয়েও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের (সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) নাম যুক্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামের পাশে স্বৈরাচারসহ একাধিক বিশেষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইতিহাসনির্ভর আরও কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের গ্রাফিতির ওপর একটি লেখা যুক্ত করা হয়েছে।

মাধ্যমিকের সব পাঠ্যবই ছাপা হয়নি

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপা এখনো শেষ হয়নি। ছাপা হলেও সরবরাহ বাকি ৪২ শতাংশ পাঠ্যবই। অবশ্য প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই নিয়ে কোনো সংকট নেই। এই স্তরে শতভাগ পাঠ্যবই মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।

সরকার ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে নতুন পাঠ্যবই দিচ্ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হচ্ছে।

আগামী বছরের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২১ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৩০০টি এবং প্রাথমিক স্তরের (ইবতেদায়ি ছাড়া) জন্য ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৪টি বই।

এনসিটিবির কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মতো এবারও সব শ্রেণির সব শিক্ষার্থী সব পাঠ্যবই ছাড়াই শিক্ষাবর্ষ শুরু করবে। এবার বেশি বেকায়দায় পড়বে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। বই ছাপা ও সরবরাহের গতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী জানুয়ারির মধ্যেও সব বই মাঠপর্যায়ে পৌঁছানো কঠিন হবে।

এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের ৭৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বই ছাপা ও বাঁধাই শেষ হয়েছে। তবে সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শনসহ (পিডিআই) আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে মাধ্যমিকের মোট বইয়ের ৬০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ মাধ্যমিকের ৩৯ শতাংশের কিছু বেশি পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করা হয়নি।

সূত্র বলছে, ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণির ৯০ দশমিক ৬৫ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে। সরবরাহ করা হয়েছে ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সপ্তম শ্রেণির ৭৮ দশমিক ৩১ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অষ্টম শ্রেণির ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা হলেও সরবরাহ করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া নবম-দশম শ্রেণির ৮৮ দশমিক ৭০ শতাংশ পাঠ্যবই ছাপা হলেও সরবরাহ করা হয়েছে ৭৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

অবশ্য শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার (সি আর আবরার) বলেছেন, আগামী জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের আগেই শতভাগ নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে। গত রোববার এনসিটিবি কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিক্ষা কার্যক্রম আগামী বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হবে। এর আগেই প্রায় শতভাগ বই পৌঁছে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত