Ajker Patrika

এইচ–১বি ভিসা ফি বৃদ্ধি: ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০ অঙ্গরাজ্যের মামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৬
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প এইচ–১বি ভিসার ফি বাড়ানোয় তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছে ২০ মার্কিন অঙ্গরাজ্য। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন দেশটিতে বিদেশি দক্ষ শ্রমশক্তি নিয়োগ দেওয়ার ভিসা এইচ–১ বি’র ফি বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করেছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে ২০টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বনটা গত শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, এইচ–১বি ভিসা আবেদনের ফি বাড়িয়ে ১ লাখ মার্কিন ডলার করায় ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে ক্যালিফোর্নিয়া ও আরও উনিশটি রাজ্য মামলা করছে।

বনটা দাবি করেন, দক্ষ কর্মীদের জন্য নির্ধারিত এই ভিসার জন্য ফি বৃদ্ধি বেআইনি। কারণ, এটি কংগ্রেসে অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং এই কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদের মূল উদ্দেশ্যকে ক্ষুণ্ন করছে। মামলার সঙ্গে যুক্ত সকল রাজ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেলরা ডেমোক্র্যাট দলের।

সান ফ্রান্সিসকোতে একটি সংবাদ সম্মেলনে বনটা সাফ বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্টের প্রশাসন অভিবাসন আইনকে নতুন করে লিখতে পারে না। কোনো প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের মতো সরকারকে উপেক্ষা করতে পারেন না, সংবিধান বা আইনকেও এড়িয়ে যেতে পারেন না।’

এই ভিসার সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী হলো বড় টেক কোম্পানিগুলো, যারা দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়ে আসে। ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন ক্যাম্পেইনের রিপাবলিকান সমর্থকেরা অভিযোগ করছেন, কোম্পানিগুলো সস্তা শ্রমের জন্য আমেরিকানদের পাশ কাটিয়ে এই কর্মসূচির অপব্যবহার করছে। কিন্তু বনটা যুক্তি দেন, এই ফি আরোপের ফলে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য খাতেও শ্রমিকের ঘাটতি আরও বাড়বে। এতে চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, নার্স ও সরকারি সেবাকর্মীর মতো পদগুলো পূরণ করা আরও কঠিন হবে।

তিনি এও সতর্ক করেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে এক নির্বাহী ঘোষণায় যে ১ লাখ ডলারের ফি ধার্য করেছেন, তা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোমের ইচ্ছানুযায়ী বেছে বেছে প্রয়োগ করা হতে পারে। দক্ষ অভিবাসন এবং বিশেষ করে এইচ–১বি ভিসা এর আগেও ট্রাম্পের জনতুষ্টিমূলক সমর্থক আর বিশ্বজুড়ে প্রতিভা আকর্ষণে চিন্তিত সিলিকন ভ্যালির মিত্রদের মধ্যে মতভেদের কারণ হয়েছিল।

এই নীতি ঘোষণার পর এবং প্রোগ্রামটি ব্যবহারকারী প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার পর প্রেসিডেন্ট তাঁর অবস্থানে খানিকটা নমনীয় হয়েছেন বলেই মনে হয়। গত মাসে ফক্স নিউজের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহামের সঙ্গে এইচ–১বি ভিসা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এই দাবি অস্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট প্রতিভাবান মানুষ রয়েছে; তিনি তখন বলেছিলেন যে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কর্মীর প্রয়োজন এখনো আছে।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেইলর রজার্স গত শুক্রবার প্রশাসনের পদক্ষেপের পক্ষ নিয়ে বলেন, এটি কেবল আইনসম্মতই নয়, বরং এটি ‘এইচ–১বি প্রোগ্রামের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে একটি জরুরি, প্রাথমিক, ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপ।’

মামলার জবাবে এক বিবৃতিতে রজার্স বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান কর্মীদের প্রথম স্থানে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এবং এইচ–১বি ভিসার ওপর তাঁর এই সাধারণ পদক্ষেপ সে কাজটাই করছে। এটি কোম্পানিগুলোকে সিস্টেমের অপব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করবে এবং আমেরিকানদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া থেকে বিরত রাখবে, আবার যে সকল নিয়োগকর্তার বিদেশ থেকে সেরা প্রতিভা আনার প্রয়োজন, তাঁদের কাছে নিশ্চয়তাও দেবে।’

বনটা শুক্রবার এইচ–১বি প্রক্রিয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো সংস্কারের সুপারিশ করেননি, যদিও তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন যে যেকোনো প্রোগ্রাম বা নীতির মতোই এরও ‘সম্ভবত উন্নতির সুযোগ রয়েছে।’ চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউএস চেম্বার অব কমার্স একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় গোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে এই নতুন ফি-এর বিরুদ্ধে আলাদা একটি মামলা দায়ের করেছিল। তাদের আপত্তি ছিল যে প্রশাসন এইচ–১বি প্রোগ্রাম পরিচালনাকারী আইনের বিধানগুলো অগ্রাহ্য করেছে। এ ছাড়া, ভিন্ন ভিন্ন খাতের শ্রমিক সংগঠনসহ আরও বড় একটি গোষ্ঠী থেকেও আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নতুন মামলা ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হবে এবং এর নেতৃত্ব দেবেন বনটা ও বে স্টেটের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল। এই নিয়ে বনটা চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ৪৯ বারের মতো আদালতে গেলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...