Ajker Patrika

তুমি কে? নিজেকে কী ভাব—পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ ইমরান-সমর্থকদের কড়া প্রতিক্রিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ১০
ইমরান খানের ভক্তরা তাঁর দীর্ঘ ক্রীড়া জীবনের ও রাজনৈতিক নানা অর্জন তুলে ধরে পোস্ট দেন। ছবি: পিটিআই
ইমরান খানের ভক্তরা তাঁর দীর্ঘ ক্রীড়া জীবনের ও রাজনৈতিক নানা অর্জন তুলে ধরে পোস্ট দেন। ছবি: পিটিআই

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে ঘিরে সমর্থকদের উত্তাপ বেড়েছে। তাঁকে নিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আইএসপিআর ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ইমরান খানকে ‘মানসিক রোগী’ ও ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ আখ্যা দিয়েছেন। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন পিটিআই নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাবেক এই বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের ভক্তরা। ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে তাঁরা নানা ধরনের ভিডিও-মন্টাজ, পুরোনো অর্জনের তালিকা, রাজনৈতিক বক্তব্য ও মিছিলের দৃশ্য শেয়ার করে এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সের শুরুতেই আহমেদ শরীফ চৌধুরী ‘ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’র কথা উল্লেখ করেন, যা সেনাবাহিনীর জন্য মোকাবিলা করা প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।

ইমরান খানের নাম উল্লেখ না করে আইএসপিআর ডিজি বলেন, ‘এই হুমকি আসে এক বিভ্রমগ্রস্ত মানুষের বিভ্রমপূর্ণ মানসিকতা থেকে, যিনি নিজের অহংকারের কাছে বন্দী। তিনি মনে করেন তাঁর ইচ্ছাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের ইচ্ছার চেয়ে বড়। তাঁর অহং, তাঁর ইচ্ছা আর হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তিনি মনে করেন তাঁকে ছাড়া দুনিয়া টিকে থাকতে পারবে না। তুমি কে? নিজেকে কী ভাব তুমি?’

ডিজি আইএসপিআর আরও বলেন, ‘আমার কাছ থেকে এটা শোনা হয়তো কিছুটা অস্বাভাবিক লাগতে পারে, কিন্তু ওই ব্যক্তিটি যে বয়ান দিচ্ছে, তা এখন আর রাজনীতি নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় হয়ে গেছে।’

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে সব বলা, সব দ্বিধা ও সন্দেহ দূর করা এবং প্রয়োজনীয় কথাগুলো প্রকাশ করা সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখার জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। আমাদের বুঝতে হবে এই বয়ান কীভাবে কাজ করছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এটি কীভাবে বাইরের শক্তির গভীর যোগসাজশে কাজ করছে।’

ইমরান খানের ‘রাষ্ট্রবিরোধী বর্ণনা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার’ মোকাবিলায় সামরিক বাহিনী কঠোর হবে বলে জানান আইএসপিআর প্রধান। এরপরই সামাজিকমাধ্যমে ইমরান খানের সমর্থকদের প্রবল সাড়া দেখা যায়।

ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী—স্মৃতিচারণায় ভরল টাইমলাইন

খানের ভক্তরা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ও ক্রীড়া জীবনের নানা অর্জন তুলে ধরে পোস্ট দিতে থাকেন। অভিনেত্রী মাহিরা খান ও ফাওয়াদ খানের ইমরান খানের নেতৃত্বগুণের প্রশংসামূলক বক্তব্যের পুরোনো ক্লিপ জুড়ে তৈরি করা মন্টাজ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর ক্রীড়া জীবনের প্রধান মাইলফলকগুলো

  • ১৯৮৩ সালে প্রাইড অব পারফরম্যান্স
  • ১৯৯২ সালে হিলাল-ই-ইমতিয়াজ
  • একই বছরে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক
  • ২০১০ সালে আইসিসি হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্তি

এই পোস্টগুলোতে সমর্থকরা দাবি করছেন, ‘এমন একজন জাতীয় আইকনকে রাষ্ট্রবিরোধী চ্যালেঞ্জ বলা হচ্ছে— এটা দেশের জন্যই লজ্জাজনক।’

র‍্যালির দৃশ্য, রাজনৈতিক স্লোগান ও জিন্নাহর উদ্ধৃতি

ইমরান খানকে সমর্থন জানাতে অনেকেই সাম্প্রতিক পিটিআই সমর্থকদের র‍্যালির ভিডিও পোস্ট করেছেন। এসব পোস্টে জিন্নাহর নাগরিক–সামরিক সম্পর্কতত্ত্ব থেকে উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে বেসামরিক নেতৃত্বের প্রাধান্যের পক্ষে দাবিও দেখা গেছে। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘ইমরান খান কেবল খেলার মাঠেই নয়, রাজনীতিতেও দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা মুছে দেওয়া যাবে না।’

সামরিক বাহিনীর প্রতি পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঐতিহাসিকর বার্তাটিও অনেকে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ভুলে যেও না, সশস্ত্র বাহিনী জনগণের চাকর। তোমরা জাতীয় নীতি তৈরি কর না, আমরা বেসামরিকরাই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই। আর তোমাদের দায়িত্ব হলো অর্পিত দায়িত্বপালন করা।’

তিন বছর ধরে কারাবন্দী—তবু জনপ্রিয়তা অটুট

২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ইমরান খান ২০২৩ সাল থেকে কারাবন্দী। তবু অনলাইনে যে প্রবল সমর্থন ছড়িয়ে পড়েছে, তা তাঁর রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং স্মারক-ইমেজ কতটা প্রভাবশালী রয়ে গেছে!’

বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, আইএসপিআর ডিজির মন্তব্য খানের সমর্থকদের আরও সংগঠিত করে তুলেছে। তাঁদের মতে, পরিস্থিতির রাজনৈতিক উত্তাপ দেখে মনে হচ্ছে, আগামী দিনগুলোতে অনলাইনে এই বিরোধ-বিতর্ক আরও তীব্র হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ