Ajker Patrika

জমি দখলে পুলিশ কমিশনার

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
জমি দখলে পুলিশ কমিশনার

গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করা এবং বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধারে অসহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে এমন অভিযোগ করেছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বর্তমান কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের যোগদানের পর থেকে খাসজমি দখল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পুলিশের অসহযোগিতার কারণে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশ কমিশনারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গাজীপুর জেলার মূল্যবান খাসজমি অবৈধ দখল করছে এবং দখলে সহায়তায় লিপ্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের চিঠির ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার (জিএমপি) মোল্যা নজরুল ইসলাম গতকাল বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিঠির বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা অনেক পুরোনো বিষয়। তবে আমি সেই চিঠি এখনো দেখিনি।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান অভিযোগ করেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ টঙ্গী মৌজায় টঙ্গী হাট বা বাজারের আওতাভুক্ত শূন্য দশমিক ১৮ একর খাসজমি বিভিন্ন সময়ে দখল করে ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ মার্কেট’ নামে একটি মার্কেট বানিয়েছে। তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল দপ্তরের কানুনগো ও সার্ভেয়ারের সরেজমিন প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে চিঠিতে বলেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশ দখল করা জমির একাংশে একটি নামাজঘর এবং বাকি অংশে ৬০টি দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাড়া তুলছে পুলিশ। সেই অবৈধ মার্কেট এখন জমজমাট। ডিসি চিঠিতে উল্লেখ করেন, এ ঘটনা ‘সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী এবং প্রাতিষ্ঠানিক জবরদখলের অশুভ দৃষ্টান্ত’।

গত ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পাঠানো সেই চিঠির সঙ্গে টঙ্গী রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) আরেকটি প্রতিবেদন সংযুক্ত করে বলা হয়, গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে কাশিমপুর মৌজার খাল শ্রেণিভুক্ত প্রায় শূন্য দশমিক ৬০ একর জমি বালু ভরাট করে অবৈধ দখল করা হয়। কাশিমপুরের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ভরাট করা জমি পরিদর্শনকালে স্থানীয়ভাবে জানতে পারেন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের জবরদখলের নিমিত্তে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওই খাসজমির তিন দিকে টিনের বেড়া নির্মাণ করে অপদখল করেছেন। ওই অবৈধ দখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার পরিদর্শনকালে ঘটনাস্থলে পুলিশের পাহারা দেখতে পান।

জেলা প্রশাসক চিঠিতে বলেন, এ ধরনের অপতৎপরতা দেশের বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সরকারি সংস্থার আইন অমান্য করার একটি বাজে দৃষ্টান্ত। এ ধরনের অপকর্ম জনগণের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার পাশাপাশি ভূমিসংশ্লিষ্ট অপরাধের সঙ্গে জড়িত স্বার্থান্বেষী মহলকে উৎসাহিত করে।

জেলা প্রশাসক চিঠিতে জানান, দুটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভূমির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের জন্য অনুরোধ করা হলেও নির্ধারিত দিনে ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশ সদস্য উপস্থিত হননি।

আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনে খাসজমির অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি খাসজমিতে ইটভাটা ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা করছিলেন। অভিযানের আগে তিনি সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে লিখিতভাবে নোটিশ দেন। উচ্ছেদের আগের দিনও নোটিশটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সিটিএসবির অতিরিক্ত উপকমিশনারকে এবং গাজীপুর মহানগর পুলিশের দাপ্তরিক মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়। কিন্তু সেদিনও কোনো পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়।

মহানগর কমিশনারের বিরুদ্ধে পাঠানো চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টঙ্গীতে জেলা পরিষদের বেশ কিছু জমি উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আবার অনেকে দখল করেছে। সেসব জমি দখলমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। দখল করা জমি উচ্ছেদে পুলিশ অসহযোগিতা করছে।’

চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা প্রশাসক বিগত এক বছর জেলার ৮ দশমিক ৯৭ একর খাসজমি পুনরুদ্ধার করেছেন, যার মূল্য ১০০ কোটি টাকার বেশি। সদ্য সাবেক কমিশনারের আন্তরিকতা ও সক্রিয় সহযোগিতায় ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ করতে পারলেও বর্তমান কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ বিভাগের মৌলিক দায়িত্ব হলেও গাজীপুর মহানগর পুলিশের বর্তমান কমিশনারের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে অবৈধভাবে খাসজমি জবরদখল করা হচ্ছে।

কমিশনারের জমি দখল নিয়ে জেলা প্রশাসকের করা অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের উন্নয়ন শাখার ডিআইজি রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা বা মহানগর এলাকায় এ ধরনের মার্কেটের বিষয়ে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ সদর দপ্তর নজরে রাখে না; কিন্তু বৈধভাবে এ রকম মার্কেট করা যায়। বিষয়টা সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি বা কমিশনার দেখভাল করেন। তবে সরকারি জমি বেদখল করে কেউ কোনো কাজ করলে সেটা তো বেআইনি।’

যে মার্কেট নিয়ে অভিযোগ, গতকাল বিকেলে সেই ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ মার্কেট’ ঘুরে দেখা যায়, এটি টঙ্গী বাজার এলাকায় অবস্থিত। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলেন, মার্কেটটি বেশ পুরোনো। আগে এর নাম ছিল পুলিশ মার্কেট; পরে নাম বদলানো হয়। এখন মেট্রোপলিটন পুলিশ মার্কেট নামে সবাই চেনে।

এই মার্কেটে টিনশেডের ৫০-৬০টি ছোট-বড় দোকান আছে। দোকানগুলোতে পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মার্কেটের ভেতরেই গাজীপুর মেট্রোপলিশের ট্রাফিক দক্ষিণের একটি কার্যালয় রয়েছে। সেখানকার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা নির্ধারিত ব্যক্তির মাধ্যমে দোকানের ভাড়া তোলেন। দোকানগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ হাজার আর সর্বোচ্চ ভাড়া ২০ হাজার টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করেন। ভাড়া কম হলেও দোকান নেওয়ার সময় ৭ লাখ টাকা জামানত দিয়েছেন। তাঁর মতো সব ব্যবসায়ী জামানত দিয়েই দোকান নিয়ে ব্যবসা করছেন।

সরকারি জমি দখল করে এভাবে পুলিশের দোকান করার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পুলিশের সাবেক আইজি মুহাম্মদ নুরুল হুদা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে পুলিশ চাইলেই সরকারি খাসজমি জবরদখল করে মার্কেট করতে পারে না। যদি তদন্তে উঠে আসে, বেআইনিভাবে জবরদখল করেছে, তাহলে ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানাভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অতি লোভে তাঁতি নষ্ট: ৬০০ কোটি টাকা হারালেন নওগাঁর ৮০০ জন!

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৪
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি
বুধবার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনু। ছবি: সিআইডি

‘অতি লোভে তাঁতি নষ্ট’— প্রচলিত প্রবাদ যে হুবহু বাস্তবে ঘটতে পারে, তার প্রমাণ মিলল উত্তরাঞ্চলের জেলা নওগাঁয়। এই জেলার ৮০০ জনের বেশি মানুষকে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অন্যতম হোতা মো. নাজিম উদ্দিন তনুকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। গতকাল বুধবার সকালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় রাজধানী ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার মো. নাজিম উদ্দিন তনুর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার জগৎসিংহপুরে। প্রায় এক বছর আগে ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নওগাঁ সদর থানায় নাজিম উদ্দিনসহ কয়েকজনের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করেছিলেন এক ব্যক্তি। মামলাটি বর্তমানে সিআইডির নওগাঁ জেলা ইউনিট পরিচালনা করছে।

মামলার তদন্তে জানা যায়, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ২ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের টাকা নেয় ‘বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। এনজিওটির কার্যালয় নওগাঁ সদরের অফিসপাড়া এলাকায়। পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন তনু।

প্রথম দিকে পরিচালকদের মনোনীত কিছু গ্রাহককে এই হারে লভ্যাংশ দেয় বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশন। পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকেরা সুকৌশলে প্রচার করা শুরু করেন। তাঁদের এই ফাঁদে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে গ্রাহক হিসেবে বিনিয়োগে আগ্রহী হন। মামলার বাদী নিজেই ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা দেখা দেয়। ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সে সময় থেকে তাঁদের জমাকৃত কিংবা ঋণের অর্থ ঠিকঠাক উত্তোলন করতে পারছিলেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযাগ জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে গ্রাহকদের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেন পরিচালক তনু।

কিন্তু গত বছরের নভেম্বরে আও বন্ধু মিতালী ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে গিয়ে বাদীসহ অন্য ভুক্তভোগীরা নিজেদের অর্থ ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন টালবাহানা ও সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাহকদের অর্থ দেওয়া হবে না মর্মে জানিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর বাদী নওগাঁ সদর থানায় মামলা (মামলা নম্বর ২০, তারিখ ১২-১১-২০২৪, ধারা-৪০৬/৪২০ পেনাল কোড-১৮৬০) করেন। বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন যে ভুক্তভোগীদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল।

তবে সিআইডি জানায়, এ পর্যন্ত আট শতাধিক ভুক্তভোগী ৬০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় মো. নাজিম উদ্দিন তনুসহ মোট ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত