Ajker Patrika

কেনিয়ায় চা-বাগান নিয়ে স্থানীয় ও বিদেশি এস্টেটগুলোর দ্বন্দ্ব, ক্ষতির মুখে শিল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৪৯
২০২৩ সালে বাগানে ঢুকে চা পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে স্থানীয়রা। ছবি: এনএমজি
২০২৩ সালে বাগানে ঢুকে চা পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে স্থানীয়রা। ছবি: এনএমজি

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চা উৎপাদক দেশ কেনিয়া। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের নান্দি কাউন্টির সিতোই এস্টেটের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে চা-শিল্প। ১৯৪৮ সালে এই নান্দিতে জমি অধিগ্রহণ করে চা-বাগান গড়ে তোলে ব্রিটিশ মালিকানাধীন চা উৎপাদনকারী কোম্পানি ইস্টার্ন প্রোডিউস কেনিয়া (ইপিকে)। বহু দশক ধরে নান্দিসহ কেনিয়ার অনেক অঞ্চলে চা-বাগান পরিচালনা করছে তারা।

লন্ডনের ক্যামেলিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন এই কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে স্থানীয় একটি সম্প্রদায়ের। দ্বন্দ্বের কারণ উপহারের জমি।

১৯৮৬ সালে উপহার হিসেবে ইস্টার্ন প্রোডিউস কেনিয়া (ইপিকে) কিমাসাস সম্প্রদায়কে কিছু জমি উপহার দিয়েছিল। এখন ইপিকে দাবি করছে, তারা ২০২ একর জমি দিয়েছিল। এদিকে কিমাসাস কৃষক সমবায় সমিতির দাবি, তাদের ৫৫০ একর জমি উপহার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের দখলে আছে ৩৫০ একর।

চা-বাগানের মাঝে এই ৩৫০ একর জমিতে কিমাসাসের শ-খানেক স্থানীয় বাসিন্দার বাস। সেখানে কাদামাটি ও জংধরা টিনের ছাউনির কুটিরে বসবাস তাদের। চা-পাতা তুলে আর গবাদি পশু চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা।

ইপিকে বলছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে কেনিয়ার আইন মেনে চা-বাগান পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের অসন্তোষ, জমি দখল ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা এ পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। স্থানীয়দের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে অভিযোগ করে তারা।

ইপিকের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিমাসাসের চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল বিউয়ট বলেন, ‘১৯০৫ সালের দিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকেরা এই জায়গা দখলে নেওয়ার আগে তাঁর দাদা এখানে বাস করতেন। বিরোধপূর্ণ ৩৫০ একর জমি ফেরত পাওয়া মানে হবে একটি ঐতিহাসিক অন্যায়কে সংশোধন করা।’

বিওট, তাঁর বাবা ও দাদা—তিন পুরুষই ইপিকের কর্মী ছিলেন। চা-বাগানে দাঁড়িয়ে বিওট বলতে থাকেন, ‘এই এত বছরে কিছুই হয়নি। এখনই সময়, এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

এই বিরোধের পেছনে রয়েছে কেনিয়ার বিভিন্ন চা-বাগানে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা। কেনিয়ার চা উৎপাদকদের সমিতি (কেটিজিএ) এক বিবৃতিতে জানায়, গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার মালিকানাধীন ব্রাউন্স প্ল্যান্টেশনের একটি খামারে হামলা চালানো হয় এবং শতাধিক ইউক্যালিপটাস গাছ উপড়ে ফেলা হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অপরাধী দলগুলো সিতোইতে এসব জমি দখল আক্রমণের পেছনে রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব অস্থিরতার কারণে প্রতি মাসে ২ লাখ ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইপিকে। কেনিয়ার রপ্তানি আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশ জুড়ে থাকা এই চা-শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে। ৫ মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস বিপদে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঔপনিবেশিক যুগের জমি দখলের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার প্রতি একটি বিস্তৃত হতাশার প্রতিফলন এসব হামলা।

আইনজীবী জোয়েল কিমুটাই বোসেক স্থানীয় সম্প্রদায়ের পক্ষে চা কোম্পানি এবং যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে মামলায় সফল হননি। তিনি বলেন, ‘আমি আইনি ব্যবস্থায় এগোতে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। আমার মনে হয় নতুন বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও আক্রমণাত্মক হবে।’

২০২১ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, উপনিবেশিক যুগে ১৮৯৫-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা কেনিয়ায় বিশাল পরিমাণ জমি দখল করে, যার বেশির ভাগই চা-বাগানে পরিণত হয়।

এই ঔপনিবেশিক সমস্যার সমাধানে ২০১০ সালের দিকে সচেতন হয়ে ওঠে কেনিয়া। গড়ে তোলা হয় জাতীয় জমি কমিশন। কমিশনের সাবেক প্রধান স্যামুয়েল টোরোরেই বলছিলেন, “কমিশনের সীমিত ক্ষমতার কারণে এর কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে। আর চা কোম্পানিগুলো এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যেকার ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ তো ছিলই। ”

কেনিয়ার ২০১০ সালের সংবিধান অনুযায়ী, চা কোম্পানিগুলোর পূর্বের ৯৯৯ বছরের জমির ইজারা মেয়াদ কমিয়ে ৯৯ বছরে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সরকার জমির মালিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণের জন্য পর্যাপ্ত জমি বা আর্থিক সুবিধা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেন।

২০২৩ সাল পর্যন্ত কেনিয়ায় ব্রিটেনের জেমস ফিনলে কোম্পানির চা-বাগান ছিল। এই কোম্পানিতে ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন গাই চেম্বার্স। তিনি বলেন, ‘এই উত্তেজনার মূল কারণ হলো বড় বড় চা-বাগানের মালিকানা রয়েছে বিদেশিদের হাতে—যেসব জমি একসময় স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল।’

এই অস্থিরতা প্রসঙ্গে কেনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কোম্পানিগুলো দাবি করছে, তারা কেনিয়ার আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিছু রাজনীতিবিদ এই ঐতিহাসিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাদের জমির মালিকানা খর্ব করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থও এগিয়ে নিচ্ছে।

তবে এতকিছুর পরও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাগুলো খুব একটা সফল হয়নি। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এসব জমির ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন, কারণ এতে সময়সীমা এবং সরকারি রক্ষা প্রথা (ইমিউনিটি) ইত্যাদি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চেম্বার্স পরিচালিত প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম এবং কেরিচো জেলার চা-চাষি সম্প্রদায় গত বছর সিভিসি ক্যাপিটাল-মালিকানাধীন লিপটনের এস্টেটগুলোর জন্য যৌথভাবে দরপত্র দিয়েছিল এমন একটি পরিকল্পনার অধীনে যা আগামী দুই দশকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে হস্তান্তর করত।

শেষ পর্যন্ত লিপটন কোম্পানি তাদের এস্টেট ব্রাউন্স কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। লিপটনের একজন মুখপাত্র জানান, তারা এমন একজন ক্রেতাকে বেছে নিয়েছে, যিনি এই শিল্পের মানোন্নয়নে সহায়তা করতে পারবেন। তবে ব্রাউন্স কোম্পানি মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে কেনিয়ার জাতীয় ভূমি কমিশন ব্রিটিশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল কেরিচো অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। তবে ব্রিটিশ সরকার এই আহ্বানের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি।

মন্তব্য চাওয়া হলে ব্রিটেনের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস জানায়, ‘আমরা নান্দি অঞ্চলের চা-খামারগুলোতে হামলায় উদ্বিগ্ন এবং আমরা কেনিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

তবে ইপিকে দাবি করছে, চলমান বিরোধটি কোনো ঐতিহাসিক জমি-অবিচার নিয়ে নয়, বরং এটি ‘স্বেচ্ছায় দান ও গ্রহণের’ ভিত্তিতে দেওয়া একটি উপহার নিয়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে কেনিয়ার জাতীয় ভূমি কমিশন জানায়, কিমাসাস সম্প্রদায় পুরো ৫৫০ একর জমির মালিক। ইপিকে এই দাবিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে বলে, কিমাসাস যেসব প্রমাণ দিয়েছে, সেগুলো জাল।

২০২৩ সালের ৩ আগস্ট আদালত মামলার শুনানি চলাকালে প্রায় ২০০ মানুষ ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে ঢুকে পড়ে এবং চা-পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে, যাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। পরদিন আদালত একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের জমি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সে সময় অধিকাংশ লোক চলে গেলেও পরে আবার অনেকে ফিরে আসে। এমনকি ইপিকের গাড়ি ও কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।

কোম্পানিটি জানায়, পুলিশ ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেনি। আর পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করলে তা চলমান দেওয়ানি মামলায় হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইপিকের জেনারেল ম্যানেজার পিটার গোইন বলেন, ‘যদি আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে নিই—যেখানে তরুণ প্রজন্ম বলতে শুরু করে যে তাদের যথেষ্ট নেই, তারা আরও চায়—তাহলে এটা একটা বিপজ্জনক নজির হয়ে দাঁড়াবে, যা যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে।’

পুলিশ বা প্রসিকিউটরের অফিস মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

অন্যদিকে কিমাসাস সম্প্রদায়ের নেতা বিউয়ট বলেন, তাদের পক্ষ থেকে জমি দখল করা যুক্তিসংগত, কারণ এ বিষয়ে এখনো আদালতের কোনো চূড়ান্ত রায় আসেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জান্তার কাছে এবার মায়ের বেঁচে থাকার প্রমাণ চাইলেন সু চি পুত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ কিম অ্যারিসের। ছবি: এএফপি
মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে সন্দেহ কিম অ্যারিসের। ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের বন্দী সাবেক নেত্রী ও নোবেলজয়ী অং সান সু চি জীবিত ও সুস্থ আছেন—এমন দাবির পক্ষে প্রমাণ দিতে দেশটির সামরিক জান্তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তাঁর ছেলে কিম অ্যারিস। এর আগে দুই বছরের বেশি সময় ধরে মায়ের কোনো ছবি, কণ্ঠ বা সরাসরি খোঁজ না পাওয়ায় সম্প্রতি তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মায়ের বেঁচে থাকা নিয়ে কিম অ্যারিসের সাম্প্রতিক উদ্বেগের পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার একটি বিরল বিবৃতিতে জানায়—অং সান সু চি সুস্থ আছেন। তবে মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ‘মিয়ানমার ডিজিটাল নিউজ’-এ প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে সু চির স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য, ছবি বা চিকিৎসা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এতে অ্যারিসের উদ্বেগ আরও বেড়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

রয়টার্সকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় কিম অ্যারিস বলেন, সামরিক বাহিনী সু চির সুস্থতার দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দিচ্ছে না। এমনকি তাঁর কাছে পরিবার, চিকিৎসক বা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদেরও প্রবেশাধিকার নেই। অ্যারিস বলেন, ‘তিনি যদি সত্যিই সুস্থ থাকেন, তাহলে সেটি প্রমাণ করা তাদের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়।’

জাপানে অবস্থানকালে অ্যারিস তাঁর মায়ের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি করেন এবং সামরিক সরকারের পরিকল্পিত নির্বাচনকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। সমালোচকদের মতে, এই নির্বাচন জান্তার ক্ষমতা বৈধ করার কৌশল। মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্দেহের বিষয়ে অ্যারিস জানান, দীর্ঘদিনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় তাঁর আশঙ্কা চরমে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, তিনি হয়তো মারা গিয়েও থাকতে পারেন।’

অ্যারিসের দাবি, দুই বছরের বেশি সময় ধরে সু চিকে কেউ দেখেনি, এমনকি তাঁর আইনজীবীদেরও সঙ্গেও যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী। এরপর দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বর্তমানে সু চি ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন—যা আগে ৩৩ বছর ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নির্বাচন জালিয়াতি, রাষ্ট্রদ্রোহ, করোনা বিধি ভঙ্গ, অবৈধ যোগাযোগ সরঞ্জাম রাখা এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাপক সমালোচিত।

জান্তা দাবি করেছে, অ্যারিসের বক্তব্য ‘মনগড়া’ এবং আসন্ন নির্বাচনে বিঘ্ন ঘটানোই এর উদ্দেশ্য। তবে বুধবার অ্যারিস স্পষ্ট করে জানান, মিয়ানমারের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ তাঁর উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেন, ‘বছরের পর বছর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা, গোপনীয়তা ও নীরবতায় যে কোনো সন্তানেরই ভয় বাড়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার দৃশ্যপটে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, পাকিস্তানে গৃহদাহের শঙ্কা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

গত কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সেনাপ্রধান হয়ে উঠেছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। সম্প্রতি তিনি দেশটির তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে ক্ষমতা পাওয়ার পরই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছেন আসিম মুনির। গাজায় স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনীতে সেনা পাঠাতে ইসলামাবাদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ওয়াশিংটন। বিশ্লেষকদের মতে, এমন সিদ্ধান্ত পাকিস্তানে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আসিম মুনির ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আবারও বৈঠক করতে পারেন। ছয় মাসে এটি হবে তাঁদের তৃতীয় বৈঠক। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকের মূল আলোচ্য হবে গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনী।

ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা পরিকল্পনায় মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি বাহিনীকে গাজা পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তদারকির দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অনেক দেশই এই মিশনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সতর্ক। কারণ, গাজায় ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব নিতে হলে তারা সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে নিজ নিজ দেশে ফিলিস্তিনপন্থী জনমতের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।

এর মধ্যে আসিম মুনির ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস কাটিয়ে ওয়াশিংটন-ইসলামাবাদ সম্পর্ক মেরামতই ছিল এই যোগাযোগের লক্ষ্য। গত জুনে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন আসিম মুনির। এটি পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম একান্ত সাক্ষাৎ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীর অংশ না হলে আসিম মুনিরের ওপর ক্ষেপে যেতে পারেন ট্রাম্প। কিন্তু পাকিস্তান এটা চায় না, কারণ, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সহায়তা পেতে ট্রাম্পের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

পরমাণু শক্তিধর একমাত্র মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী অত্যন্ত অভিজ্ঞ। পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্রোহ দমন করেছে। বর্তমানে তারা আফগানিস্তানভিত্তিক ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান জারি রেখেছে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও লেখক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সক্ষমতার বিষয়টি অনেকেই জানে। ফলে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে—আসিম মুনিরের ওপর এমন চাপও রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আসিম মুনির ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, জর্ডান, মিসর ও কাতারের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। আয়েশা সিদ্দিকার মতে, এসব বৈঠক মূলত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনী নিয়ে পরামর্শের অংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয় রয়টার্সের প্রশ্নে সাড়া দেয়নি। হোয়াইট হাউসও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গত মাসে বলেন, শান্তিরক্ষায় সেনা পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ ‘পাকিস্তানের কাজ নয়’।

তবে পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো—যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজায় সেনা পাঠালে দেশটির ইসলামপন্থী দলগুলোর বিক্ষোভ আবার মাথাচাড়া দিতে পারে। এসব দল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কট্টর বিরোধী এবং এরা সংখ্যায় এত বেশি যে, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামানোর সক্ষমতা রাখে।

গত অক্টোবরে কট্টরপন্থী (ধর্মভিত্তিক) রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানকে (টিএলপি) আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান সরকার। টিএলপি অত্যন্ত শক্তিশালী ও সহিংস (ইসরায়েলবিরোধী) দল হিসেবে পরিচিত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টিএলপি আলোচনায় আসে দেশের ধর্ম অবমাননা আইনের (ব্লাসফেমি আইন) পক্ষে প্রচার চালিয়ে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, অক্টোবরে সহিংসতার অভিযোগে দলটির শীর্ষ নেতাসহ দেড় হাজারের বেশি কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ওই সময় তাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। তবে দলটি নিষিদ্ধ হলেও তাদের আদর্শ সমাজে এখনো রয়ে গেছে। পাকিস্তান যদি গাজায় হামাসবিরোধী কোনো কার্যকলাপে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, তবে টিএলপির আরও অনেক কট্টরপন্থী (ধর্মভিত্তিক) রাজনৈতিক দল ক্ষুব্ধ হয়ে যাবে।

এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দলও আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলটির সমর্থকেরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিলেন এবং তাঁদের জনসমর্থন ব্যাপক।

সিঙ্গাপুরের এস রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ সহযোগী ফেলো আবদুল বাসিত বলেন, গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। পাকিস্তানের মানুষ বলবে—‘আসিম মুনির ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছেন।’ এমনটা অবশ্যই ঘটবে, বরং এমন কিছু ঘটবে না, এভাবে ভাবাই চরম বোকামি।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে আসিম মুনিরকে পাকিস্তানের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) বা প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এখন দেশটির স্থলবাহিনীর পাশাপাশি নৌ ও বিমানবাহিনীরও প্রধান হন। তাঁর মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আজীবনের জন্য তাঁর ফিল্ড মার্শাল পদবি বহাল থাকবে। সংবিধানের ২৭তম (নতুন) সংশোধনী অনুযায়ী, যেকোনো ফৌজদারি মামলায়ও তিনি আজীবন দায়মুক্তি ভোগ করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিকাব বিতর্ক: মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমাজবাদী পার্টির নেত্রীর থানায় অভিযোগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি এক অনুষ্ঠানে মুসলিম নারী চিকিৎসকের মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সমাজবাদী পার্টির নেত্রী সুমাইয়া রানা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে লখনৌয়ের কাইজারবাগ থানায় এই অভিযোগ দাখিল করেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গেছে।

অভিযোগে দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা (এফআইআর) রুজু এবং কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সুমাইয়া রানা।

সংবাদ সংস্থা এএনআইকে সুমাইয়া রানা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা যায় তিনি এক নারীর নিকাব টান দিয়ে নামিয়ে দিয়েছেন।

রানা আরও বলেন, ‘সাংবিধানিক পদে থাকা একজন ব্যক্তি যদি এভাবে আচরণ করেন, তাহলে তা তাঁর অধীনস্থদেরও একই ধরনের কাজ করতে উৎসাহিত করে।’

উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পাটনায় এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে সনদপত্র তুলে দিচ্ছেন ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমার।

সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় নিকাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক নিকাব না সরালে নীতীশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তাঁর নিকাব নিচের দিকে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতীশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এ সময় উত্তর প্রদেশ সরকারের মন্ত্রী সঞ্জয় নিষাদ এক সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে কথা বললে বিতর্ক আরও বেড়ে যায়। তাঁর মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘ভারত সংবাদ’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে নিষাদ বলেন, সঠিক ব্যক্তির হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে কি না যাচাই করতে নীতীশ কুমার ওই নারীর নিকাব সরিয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি শরীরের অন্য কোনো অংশে স্পর্শ করতেন, তাহলে ঘটনাটি কীভাবে দেখা হতো।

সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী নিষাদকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘নিকাব টেনে নেওয়া হয়নি, সরানো হয়েছে। যাচাই করার জন্যই এটি করা হয়েছে, যাতে সঠিক ব্যক্তিকেই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। এ নিয়ে মানুষের হৈচৈ করা উচিত নয়। তিনিও তো একজন মানুষ। তাঁর পেছনে লেগে থাকা ঠিক নয়। শুধু নিকাব ছুঁয়েছেন বলেই এত কিছু হয়ে গেল। অন্য কোথাও ছুঁলে তাহলে কী হতো?

থানায় করা অভিযোগে বলা হয়, তিনি হাসতে হাসতে ‘নির্লজ্জ’ মন্তব্য করেছেন। তাঁর বলার ভঙ্গি ও কুটিল হাসি তাঁর ‘ঘৃণ্য, অযৌক্তিক ও নারীবিদ্বেষী মানসিকতা’ প্রকাশ করে।

নিষাদের মন্তব্য নিয়ে সুমাইয়া রানা বলেন, ‘তিনি (নিষাদ) বলেছেন, “বোরকা সরানো নিয়ে এত বিতর্ক কেন? তার হাত তো কেবল ওই নারীর মুখ স্পর্শ করেছে মাত্র। যদি তার (নীতীশ কুমারের) হাত অন্য কোথাও স্পর্শ করত, তবে কী হতো? ” মূলত এই বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই আমি অভিযোগ দায়ের করেছি।’

রানার সাথে থাকা আইনজীবী মিশাম জাইদি বলেন, এই ঘটনা এবং পরবর্তী মন্তব্যগুলো গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধের আওতায় পড়ে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এতে এক নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি সঞ্জয় নিষাদের বক্তব্য ধর্মীয় অনুভূতিতে উসকানি দেওয়ার শামিল।

মিশাম জাইদি আরও বলেন, এটি দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারার স্পষ্ট লঙ্ঘন। কারণ, জেনেশুনে এমন কাজ করা হয়েছে, যা দাঙ্গা উসকে দিতে পারে, অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে পারে।

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নিকাব ধরে টানাটানি করার জন্য তার (নীতীশ কুমার) বিরুদ্ধে সরাসরি ৩৫৪ ধারা প্রয়োগ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্ক ‘মাদকসেবী’, ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক’: হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস। ছবি: এএফপি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস। ছবি: এএফপি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলয় নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করে খবরের শিরোনামে হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ সুজি ওয়াইলস। ভ্যানিটি ফেয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শীর্ষ ধনী ও ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক সদস্য ইলন মাস্ককে ‘মাদকসেবী’ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে ‘ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

সুজি সাক্ষাৎকারে বলেন, টেসলা ইনকর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক প্রকাশ্যে কেটামিন (এক ধরনের মাদক) ব্যবহার করেন। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে একজন ‘ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক’ (কনস্পিরেসি থিওরিস্ট) এবং বাজেট প্রধান রাস ভটকে একজন ‘কট্টর ডানপন্থী উগ্রবাদী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ ছাড়াও, জেফরি এপস্টাইন সংক্রান্ত ফাইলগুলো ব্যবস্থাপনার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির ভূমিকার সমালোচনা করেছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্যের প্রভাব কেমন হতে পারে ধারণা করে গতকাল মঙ্গলবারই বিষয়টিকে হালকা করার জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে হোয়াইট হাউস। এসব মন্তব্য যেন গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গ্রহণ করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে হোয়াইট হাউস।

এরপর সুজি ওয়াইলস একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করা হয়েছে।’ একে একটি ‘কপটভাবে সাজানো মানহানিকর প্রতিবেদন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

ওয়াইলসের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্পের কাছে সুজির চেয়ে বড় বা বিশ্বস্ত কোনো উপদেষ্টা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লেভিট লেখেন, ‘পুরো প্রশাসন তাঁর (সুজি ওয়াইলস) অবিচল নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞ এবং সবাই সম্পূর্ণভাবে তাঁর পাশে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

তবে এই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারটি ট্রাম্প ও তাঁর নীতিগুলো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে মাস্কের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বও উসকে দিয়েছে বলা যায়।

মাস্কের সম্পর্কে ওয়াইলস এর আগেও বেশ আলোচিত বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সে সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেমতো চলে। ইলনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই হলো আসল চ্যালেঞ্জ।’

অ্যাডলফ হিটলার, জোসেফ স্ট্যালিন এবং মাও সেতুংয়ের আমলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর জন্য সরকারি খাতের কর্মীরা দায়ী—মাস্কের এমন একটি বিতর্কিত পোস্ট শেয়ার করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ওয়াইলস বলেন, ‘আমার মনে হয়, সে যখন এসব লেখে তখন সে মাইক্রোডোজিং (সামান্য পরিমাণে মাদক গ্রহণ) অবস্থায় থাকে।’

তবে ওয়াইলস এটিও স্বীকার করেছেন, মাস্কের মাদক সেবনের বিষয়ে তাঁর কাছে সরাসরি কোনো তথ্য বা প্রমাণ নেই।

এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেননি মাস্ক এবং টেসলার মুখপাত্ররা। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে মাস্কের বিরুদ্ধে কেটামিনসহ অন্যান্য মাদক সেবনের অভিযোগ তোলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, কয়েক বছর আগে চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি কেটামিন নিয়েছিলেন, কিন্তু এরপর আর কখনো তা গ্রহণ করেননি।

মাস্ক ট্রাম্পের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওজিই)-এর প্রধান ছিলেন। এই বিভাগের লক্ষ্য ছিল ফেডারেল সরকারের আকার ও পরিধি কমিয়ে আনা। এই প্রক্রিয়ার শুরুতে তিনি ‘ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (ইউএসএআইডি) বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেন।

ওয়াইলস জানান, মাস্ক যখন ট্রাম্পের পছন্দের কিছু কর্মসূচিও বন্ধ করে দেন, তখন তিনি ‘প্রথমে হতভম্ব’ হয়ে গিয়েছিলেন এবং মাস্কের মুখোমুখি হয়েছিলেন।

ওয়াইলস ভ্যানিটি ফেয়ারকে বলেন, ‘ইলনের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আপনাকে কাজটা দ্রুত শেষ করতে হবে। আর এই ধরনের মনোভাব থাকলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবেই। তবে কোনো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই মনে করবে না যে, ইউএসএআইডির প্রক্রিয়াগুলো সঠিক ছিল। কেউই না।’

জেডি ভ্যান্স সম্পর্কেও খুব খোলাখুলি কথা বলেছেন ওয়াইলস। তিনি বলেন, ‘যিনি একসময় ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে প্রেসিডেন্টের ‘মাগা’ (MAGA) আদর্শকে আলিঙ্গন করে হোয়াইট হাউসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে (ভাইস প্রেসিডেন্ট) নিজেকে উন্নীত করেছেন।

ওয়াইলস আরও বলেন, ‘তাঁর (ভ্যান্স) এই ভোলবদল (ট্রাম্পের পক্ষে আসা) ঘটেছিল যখন তিনি সিনেট নির্বাচনের জন্য লড়ছিলেন। আর আমার মনে হয়, তার এই পরিবর্তনটা ছিল কিছুটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

ট্রাম্পের সমর্থনে নিজের অবস্থান পরিবর্তন নিয়ে ভ্যান্স ভ্যানিটি ফেয়ারকে বলেছিলেন, ‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমি তাঁকে পছন্দ করছি, আমার মনে হয়েছিল তিনি অনেক ভালো কাজ করছেন এবং আমি ভেবেছিলাম, দেশ রক্ষার জন্য তিনিই মূলত সঠিক ব্যক্তি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত