Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য চুক্তি, ‘ঐতিহাসিক’ নাকি ‘প্রতারণা’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টার্মার। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

শুল্ক নিয়ে নতুন চুক্তি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে। এই চুক্তির অংশ হিসেবে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্রিটিশ গাড়ির ওপর আমদানি কর হ্রাস করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামও শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নতুন শুল্ক ঘোষণা করেছিলেন এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই ঘোষণা যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।

তবে বেশির ভাগ ব্রিটিশ পণ্যের ওপর এখনো ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক বহাল থাকবে। যদিও দুই দেশের নেতারা একে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন বলে অভিহিত করছেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি বাস্তবে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কের শর্তে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনবে না। বরং এটি মূলত ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি আরোপের আগে দুই দেশের মধ্যে যে অবস্থা ছিল সেখানেই ফিরে যাওয়া হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি এবং উভয় দেশের ঘোষণায় বিস্তারিত তথ্যও ছিল কম। যদিও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক চুক্তি ব্রিটিশ ব্যবসা এবং শ্রমিকদের জন্য সুরক্ষা দিয়েছে, গাড়ি নির্মাণ ও ইস্পাতসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে হাজার হাজার চাকরি রক্ষা করেছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প একে চমৎকার একটি চুক্তি বলে উল্লেখ করেন এবং এর গুরুত্ব নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, এটি একটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের চুক্তি, যেটি আমরা আরও বড় করব।

কী আছে চুক্তিতে?

ব্রিটিশ গাড়ির ওপর গত মাসে যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে রাজি হয়েছেন তিনি। তবে, বছরে কেবল ১ লাখ গাড়ি এই ১০ শতাংশ শুল্কের আওতায় রপ্তানি করা যাবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার এবং রোলস রয়েসের মতো বিলাসবহুল গাড়ি প্রস্তুতকারকদের জন্য এটি স্বস্তির খবর। কারণ, যুক্তরাজ্য মূলত এই গাড়িগুলোই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।

বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস বিবিসিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারানোর শঙ্কায় ছিলেন। যদি এই চুক্তিতে পৌঁছানো না যেত তাহলে তাঁদের শঙ্কাই সত্যি হতো। তাই এই চুক্তি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ট্রাম্প যে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর এ বছরের শুরুতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছিলেন, সেই শুল্কও কমিয়ে আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আগের মতো একটি কোটা ব্যবস্থা আবার চালু করা হবে।

এ ছাড়া, গরুর মাংস আমদানি-রপ্তানিতে কোনো শুল্ক থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে। বছরে ১৩ হাজার টন গরুর মাংস রপ্তানি করতে পারবে দুই দেশ। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে যুক্তরাজ্যে তাদের গরুর মাংস বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে, যা আগে ২০ শতাংশ শুল্কের আওতায় ছিল এবং সর্বোচ্চ ১ হাজার টনে সীমাবদ্ধ ছিল।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এই চুক্তি সামগ্রিকভাবে রপ্তানির জন্য ৫০০ কোটি ডলারের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যার মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের ইথানল এবং ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অন্যান্য কৃষিপণ্যও রয়েছে।

চুক্তি নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রতিক্রিয়া

এই চুক্তি নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ প্রশংসা করছেন, কেউ সমালোচনা করছেন।

ইউকে স্টিলের মহাপরিচালক গ্যারেথ স্টেস এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি ইস্পাত খাতের জন্য বড় ধরনের স্বস্তি এনেছে। তবে অন্যান্য ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কিছুটা অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন ব্রিটিশ-আমেরিকান বিজনেসের প্রধান নির্বাহী ডানকান এডওয়ার্ডস বলেন, ‘আমি খুশি হওয়ার চেষ্টা করছি, কিন্তু একটু কষ্ট হচ্ছে! এই চুক্তি ব্রিটিশ বাণিজ্যকে হয়তো গতকালের চেয়ে ভালো দিকে নেবে, কিন্তু আরও কিছুদিন আগে আমরা যতটা ভালো ছিলাম, তত ভালো কি হলো?’

বিরোধী দলগুলো সংসদে এই চুক্তির বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ উপস্থাপনের দাবি তুলেছে। কনজারভেটিভ পার্টির নেতা কেমি ব্যাডেনক এই চুক্তির সমালোচনা করে বলেন, এটি এমন এক চুক্তি, যেখানে যুক্তরাজ্য শুল্ক কমাচ্ছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাড়াচ্ছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ঐতিহাসিক চুক্তি নয়, বরং যুক্তরাজ্যকে ঠকানো হয়েছে।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা সংসদে এই চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে ভোটাভুটি চাচ্ছেন। তাঁদের ভাষ্য—এটি বাস্তবায়নের আগে যদি এমপিদের মতামত না নেওয়া হয়, তবে তা জনগণের প্রতি অবজ্ঞা করা হবে।

এড ডেভি বলেন, যে কোনো বাণিজ্যচুক্তির ক্ষেত্রে—বিশেষ করে ট্রাম্পের মতো একজন ব্যক্তি যা ওপর আস্থা রাখা যায় না তাঁর সঙ্গে—সবকিছু নির্ভর করে চুক্তির খুঁটিনাটির ওপর। তিনি আরও বলেন, একটি বিষয় স্পষ্ট, ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক এখনো যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতগুলোকে আঘাত করছে। হুমকির মুখে পড়ছে দেশের হাজার হাজার মানুষের জীবিকা।

এদিকে রিফর্ম ইউকে দলের নেতা ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ নাইজেল ফারাজ বলেন, এই চুক্তি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তিনি বলেন, কিছুটা হলেও তো এগোলাম আমরা। আরও বিস্তারিত কাজের হয়তো প্রয়োজন আছে। তবে সামগ্রিকভাবে একে স্বাগত জানাতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২৪
রিজার্ভ চুরি: ৯১ বারের মতো পেছাল তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৯১ বারের মতো পিছিয়েছে। নতুন তারিখ আগামী ১৩ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন।

আজ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রতিবেদন দাখিল না করায় আদালত নতুন তারিখ ধার্য করেন।

২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনের একটি ব্যাংকে পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরে কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করেছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। কিন্তু নয় বছরেও রিজার্ভে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেয়ারবাজারে তথ্যের স্বচ্ছতায় এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: বিআইসিএম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক কর্মশালা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক কর্মশালা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার পুঁজিবাজারে তথ্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ।

আজ সোমবার বিআইসিএমের মাল্টিপারপাস হলে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের জন্য আয়োজিত ‘এআই অ্যাসেনসিয়াল ফর ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিএমজেএফ ও বিআইসিএম। সেশনটি সঞ্চালনা করেন বিআইসিএমের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু আলী। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) নাজমুছ সালেহীন।

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ওয়াজিদ হাসান শাহ বলেন, ‘সম্প্রতি পুঁজিবাজারে পাঁচটি তালিকাভুক্ত ব্যাংক একীভূত করা হয়েছে এবং আরও নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসান হতে যাচ্ছে। এআই ব্যবহারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা সম্ভব। শুধু এসব কোম্পানিই নয়, পুঁজিবাজার-সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য বিশ্লেষণে এআই ভবিষ্যতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’

সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেন, বর্তমান সময়ে এআই খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শেয়ারবাজারের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি বিবেচনা করে সিএমজেএফের সদস্যদের জন্য এআইয়ের ওপর এ প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়েছে। এটি সদস্যদের পেশাগত দক্ষতা আরও বৃদ্ধি করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সিএমজেএফ সাধারণ সম্পাদক আবু আলী বলেন, সিএমজেএফের সদস্যদের পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে আজ বিআইসিএমের সঙ্গে যৌথভাবে এ প্রশিক্ষণটি আয়োজন করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বিআইসিএমের প্রভাষক ইমরান মাহমুদ ও গৌরব রায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবার চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই প্রথম চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতীকী ছবি
এই প্রথম চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতীকী ছবি

চীনের বার্ষিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত এই প্রথম এক ট্রিলিয়ন বা ১০০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্ক ছাড়িয়ে গেল। এর পেছনে রয়েছে গত নভেম্বরে রপ্তানির ক্ষেত্রে আগের মাসের মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠা। তবে এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক তলানিতে নেমে আসতে থাকলেও সেটা সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে খুব একটা প্রভাব ফেলেনি।

চীন সরকার আজ সোমবার এই বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছে জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া। সরকারি তথ্যে দেখা গেছে, বছরের প্রথম এগারো মাসে চিনের মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ আমদানি কমেছে দশমিক ৬ শতাংশ। এর ফলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ০৭ ট্রিলিয়ন ডলারে। ট্রেড ডেটা মনিটরের হিসেব অনুযায়ী, এই সংখ্যা এরই মধ্যে গত বছরের রেকর্ড ৯৯২ বিলিয়ন ডলারকে ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ডলারের মানদণ্ডে নভেম্বরে বাইরে পাঠানো পণ্য চালানের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যার মূল চালিকাশক্তি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে চীনা পণ্যের চাহিদা। এই পরিসংখ্যান অক্টোবরের ১ দশমিক ১ শতাংশ সংকোচনের সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো। রয়টার্স জরিপের ভিত্তিতে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, চীনা রপ্তানি আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বাস্তবে তার দ্বিগুণেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মোট ডলার-মূল্যের আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, যা রয়টার্সের দেওয়া পূর্বাভাস ৪ শতাংশ বৃদ্ধির চেয়ে কম।

বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান নমুরার ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ লু টিং এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাসিক তথ্য খুবই পরিবর্তনশীল। যেমন, অক্টোবরের সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম এবং সেপ্টেম্বরের সংখ্যা ছিল অস্বাভাবিকভাবে বেশি। তবে, এই একক মাসের ওঠা-নামা নিয়ে বেশি কাটাছেঁড়া করা ঠিক হবে না।’

সরকারি তথ্য বলছে, নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমেছে, যা টানা অষ্টম মাসিক পতন এবং অক্টোবরের ২৫ শতাংশ পতনের চেয়েও বেশি। গত অক্টোবরের শেষে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় সাক্ষাৎ করে বাণিজ্য যুদ্ধ বিরতি বাড়াতে সম্মত হলেও মার্কিন বাজারে চীনা পণ্য রপ্তানি ধারাবাহিকভাবেই কমছে। এই দুই নেতা ২৪ নভেম্বরের ফোনালাপে আবারও ঐক্যের কথাটি নিশ্চিত করেন, যার মাধ্যমে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার একটি সদিচ্ছার ইঙ্গিত মেলে।

সারা বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্থির সম্পর্ক বজায় থাকা সত্ত্বেও, চিনের অর্থনীতির জন্য সামগ্রিক রপ্তানি একটি প্রধান বৃদ্ধির উপাদান হিসেবে টিকে আছে। কারণ, আবাসন সম্পত্তি খাতে মন্দা অব্যাহত থাকায় ঘরোয়া ব্যয় এখনো পর্যন্ত কমে রয়েছে।

নমুরার লু টিং আরও জানালেন, ‘সব মিলিয়ে, চিনের রপ্তানি বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে ভালোভাবেই ধরে রেখেছে। এই স্থিতিশীলতাই আমাদের আগামী বছরের মোট রপ্তানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রায় ৪ শতাংশে স্থির করার ভিত্তি তৈরি করেছে। এটি সামান্য মন্থরতা দেখালেও, ৪ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধির হার বৈশ্বিক বাণিজ্যের গড় বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি থাকবে।’

লু বললেন যে ২০২৬ সালে চিনের রপ্তানি বৃদ্ধি দেশটির উৎপাদন ক্ষেত্রে অতুলনীয় শক্তির ওপরই নির্ভর করবে, কিন্তু কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপের পক্ষ থেকেও আরোপিত বাণিজ্য বাধার কারণে এই বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমে আসতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন: কোটিপতি হিসাব বাড়ছেই

  • জুন প্রান্তিকে বৃদ্ধি ৫,৯৭৪টি।
  • সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেড়েছে ৭৩৪টি।
  • হিসাবে জমা কমেছে ৫৯,২০৯ কোটি।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

দেশের আর্থিক খাত চাপের মধ্যে থাকলেও ব্যাংকগুলোতে কোটিপতি গ্রাহকের হিসাব সংখ্যা বাড়ছেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, এক প্রান্তিক থেকে আরেক প্রান্তিকে এই গ্রাহকের হিসাব ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ-জুনে কোটিপতি গ্রাহক বেড়েছিল ৫ হাজার ৯৭৪টি। এরপর ইসলামি ধারার পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হওয়া, আমানত তোলার হিড়িক এবং আস্থার ঘাটতির পরিবেশ তৈরি হলেও এই বৃদ্ধির ধারা থেমে যায়নি। গতি কিছুটা কমলেও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও ব্যাংক খাতে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বেড়েছে আরও ৭৩৪টি।

তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে মোট কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭০টি। এর আগে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত থাকা হিসাবধারী ১ লাখ ২১ হাজার ৩৬২টি, যা জুন প্রান্তিকে দাঁড়ায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৩৬টি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক খাতের এ হিসাবই বলে দিচ্ছে, দেশে বড় রকমের আয় বৈষম্য তৈরি হচ্ছে; যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। বৈষম্য না কমলে অর্থনীতির গতি বাধাগ্রস্ত হবে।

এদিকে কোটিপতি গ্রাহকের সংখ্যা বাড়লেও আগের তুলনায় কমেছে ওই সব হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জুন শেষে কোটি টাকার হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে এসব হিসাবে জমা কমেছে ৫৯ হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট হিসাব সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৬৭১টি। সেপ্টেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৭০০টি। অর্থাৎ

তিন মাসে ব্যাংক খাতের মোট হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৯টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের আয় বাড়ছে। ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। এসবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তো কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। এমন প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত