Ajker Patrika

ছয় হাজার টাকায় শুরু `পদ্মপুরাণ'

মন্টি বৈষ্ণব
আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১০: ২৯
ছয় হাজার টাকায় শুরু `পদ্মপুরাণ'

সিলেট বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মণিপুরী নারীদের হাতে বোনা মণিপুরী শাড়ির কথা। বাংলাদেশের গর্ব মণিপুরী শাড়িকে দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে পরিচিত করার স্বপ্ন জেব উন নাহার যূঁথীর। এ স্বপ্ন নিয়ে মণিপুরী শাড়ি নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা থেকে অনলাইনে শুরু করেন কেনাকাটার প্ল্যাটফর্ম ‘পদ্মপুরাণ’। 

যূঁথীর জন্ম, বেড়ে ওঠা, স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি সব সিলেটেই। দেশীয় ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর টান ছিল সেই ছোটবেলা থেকেই। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্মে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পড়ালেখার শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেনাকাটার প্ল্যাটফর্মগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হন। এই আকর্ষণ থেকেই নিজের একটি ব্যবসায়িক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির ইচ্ছার জন্ম। তাই বেশ কয়েকটি চাকরিতে যুক্ত হলেও আর চাকরিজীবী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা স্থায়ী হয়নি। শুরু করেন ‘পদ্মপুরাণ’। 

ছোটবেলা থেকে স্বাধীনভাবে থাকতে পছন্দ করতেন যূঁথী। আর এই চিন্তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পর তাঁর জীবন-ভাবনায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। এই সময়টা ছিল কোনো না কোনো পেশায় যুক্ত হওয়ার সময়। ঠিক সে সময়টাতে তিনি ভাবলেন, এই ১০ টা-৫টা রুটিন তাঁর জন্য নয়। তাই স্বাধীন পেশা নির্বাচন করতে গিয়েই অনলাইন ব্যবসায় নিজেকে যুক্ত করেন। সিলেটের মানুষ হওয়ায় মণিপুরী শাড়ি দিয়েই শুরু করেন কাজ। 

 ‘পদ্মপুরাণ’-এর স্বত্বাধিকারী যূঁথীর শুরুর গল্পে তাকাতে হলে ফিরতে হবে ২০১৬ সালে। নিজেই জানালেন, ‘পদ্মপুরাণের জন্ম ২০১৬ সালে। শুরুর সেই সময়ে আমি একদমই বিক্রির চিন্তা বা চেষ্টা—কিছুই করিনি। সময় নিয়ে অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের পেজ ও ছবি দেখতাম। নিজে নিজে ছবি তোলার চেষ্টা করতাম। পদ্মপুরাণের নিয়মিত বিক্রি শুরু হয় ২০১৭ সাল থেকে। মাত্র ছয় হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করি।’ 

যেহেতু মণিপুরী শাড়ির দাম একটু বেশি, তাই শুরুতে চ্যালেঞ্জটাও বেশি ছিল। কিন্তু থেমে থাকেননি যূঁথি। এর মধ্যেই ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে গুজরাট মহারাজা সায়াজিরাও ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যান। ভারতে থাকার সময় তাঁর প্রতিষ্ঠানের কাজে সহায়তার হাত বাড়ান পরিবারের লোকেরাই। বললেন, ‘২০১৮-১৯ সালে পদ্মপুরাণের যাবতীয় কাজ করেছেন আমার মা, আর ভাই। শাড়ি আনা, ছবি তোলা, ঠিকানা অনুযায়ী সেগুলো পাঠানোর ব্যবস্থা—এ কাজগুলো করতেন তাঁরা। ২০২০ সালে ফিরে আমি আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করি। মণিপুরী শাড়ি, গামছা, ওড়না, শাল, মাফলার নিয়ে প্রচুর কাজ করেছি। ইদানীং মণিপুরী শাড়িতে একটু আনকমন কম্বিনেশন নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয়, আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, এমন একটা পেশা নিতে পেরেছি, যা আমার প্যাশন। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ তাদের পেশাকে পছন্দ করতে পারে না।’ 

হাতে আঁকা শাড়ি বেশ সাড়া ফেলেছেযূঁথী মণিপুরী শাড়ি, ওড়নাসহ মণিপুরী অন্যান্য পণ্য, পেইন্টের শাড়ি, ড্রেস, ব্লাউজপিস, দেশীয় তাঁত শাড়ি, গৃহ সজ্জাসামগ্রী, টিপ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছেন। মণিপুরী শাড়ির পাশাপাশি খাদি কাপড়ের কামিজ পিস নিয়েও কাজ করেছেন। এ ছাড়া কাজ করেছেন টাঙ্গাইলের সুতি ও সফট কাতান নিয়ে। পেইন্টিংয়ের প্রতি দুর্বলতার কারণে ২০২০ সাল থেকে শুরু করেন ফ্যাব্রিক পেইন্টিংয়ের কাজ। 

এই সময়ে দেশে উদ্যোক্তার সংখ্যা বেড়েছে। বেড়েছে অনলাইনে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যাও। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের ব্যবসায় যুক্ত হওয়া অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এই পেশাটা মানুষের মনে কিছুটা হলেও একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। যারা এই পেশায় এসেছেন বা আসতে চান তাঁদের বিষয়ে যূঁথী বলেন, ‘আপনার ক্রিয়েটিভিটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করুন, তাহলেই মৌলিক কাজ বের হয়ে আসবে। অমুক ওই জিনিস বিক্রি করছে, তাই আমাকেও করতে হবে—এ রকম ধারণা মাথায় না আনাই ভালো। কারণ, প্রত্যকের ক্রেতা-শ্রেণি আলাদা। বিক্রির স্ট্র্যাটেজি আলাদা। তাই আগে বাজার ও পণ্য সম্পর্কে জানাটা বেশি জরুরি। তবে, এখন সবাই যেভাবে অনলাইন পেশায় আসছেন, তাতে সত্যি কথা বলতে পেশাদারি কতটা রাখতে পারছেন—এটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। তবে এই পেশার প্রতি সম্মান বাড়ছে, এটা দেখতে ভালো লাগে।’ 

 ‘পদ্মপুরাণ’ গুটিসুটি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে সারা দেশ ছাড়িয়ে এখন বাইরের কয়েকটা দেশেও পৌঁছে গেছে। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে নিয়মিত যাচ্ছে পদ্মপুরাণের পণ্য। আগামী মাস থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে দুজন আঁকিয়ে যুক্ত হবেন। মূল কাজে এখন আছেন দুজন সহকারী। আর আরেকটু গুছিয়ে উঠতে পারলে একটা বড় স্টুডিও নেওয়ার স্বপ্ন আছে যূঁথীর। যূঁথীর স্বপ্ন দেশীয় ফ্যাশনের প্রতি সবার সচেতনতা তৈরি করা। 

কাজের অনুপ্রেরণার বিষয়ে যূঁথী বলেন, ‘আমার কাজের জন্য প্রতি মুহূর্তে অনুপ্রেরণা দেয় আমার ভাই। তারপর মা ও কাছের বন্ধুরা। তবে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার ক্রেতারা। জানি না এমন ভাগ্য কারও হয় কি না। আমার ক্রেতারা আমাকে পরিবারের একজন করে নিয়েছেন। যে ভালোবাসা ক্রেতাদের কাছ থেকে পেয়েছি, তার জন্য যেকোনো বাধাই তুচ্ছ। এখন পদ্মপুরাণের সব ক্রেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষী নিয়ে আমার বিশাল পরিবার।’ 

পদ্মপুরাণের পসরায় এখন টিপসহ নানা পণ্য যুক্ত হয়েছেগত দেড় বছর মহামারি করোনায় থমকে ছিল অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজ। এই সময়ে আর্থিক সংকটে পড়েছেন অনেকেই। করোনাকালে কেমন ছিল ‘পদ্মপুরাণ’? যূঁথী বলেন, ‘করোনাকালে প্রথম লকডাউনের সময় কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু তাঁতি, বিশেষ করে আমার সাপ্লায়ার যিনি ছিলেন, তিনি সব সময় বলতেন—“আপনি যদি না নেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব? ” ওই সময় আমার সহকারী ছেলেটার সংসারের সবাই বেকার হয়ে পড়ে। আমিও কাজ বন্ধ রাখায় ছেলেটার রোজগারও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এসব দিক বিবেচনা করে আবার চালু করি কাজ। আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু সম্ভব এই মানুষগুলোর জন্য কাজ চালিয়ে গেছি।’ 

তা ছাড়া করোনাকালে হোম ডেলিভারি দিয়েছেন যূঁথী। বললেন, ‘সিলেটে এসএ পরিবহন ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস হিসেবে বেশ ভালো। কোভিডের প্রথমদিকে সুন্দরবনের হোম ডেলিভারি বন্ধ ছিল। শুধু এসএ পরিবহনে হোম ডেলিভারি হতো; চার্জ বেশি লাগত। সে সময় ২৫০,৩০০ এমনকি ৪০০ টাকা দিয়েও পার্সেল পাঠাতে হয়েছে। তবুও যেন ক্রেতারা নিরাপদে বাসায় বসেই পণ্য পান, এ জন্য এই ক্ষতিটা স্বীকার করে নিয়েছি। এখন পর্যন্ত এভাবেই হোম ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছি।’ 

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে মানুষ। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে সবাইকে। যুঁথীর স্বপ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার সব সময় স্বপ্ন ছিল এমন একটা পেশা নির্বাচন করব, যেখানে আমার চিন্তার ছাপ থাকবে। যেখানে আমি কখনো ক্লান্ত হব না। নিয়মিত পণ্যের পাশাপাশি অনেক ডিজাইনের টিপ বানিয়েছি। কিছু পেইন্টিংও বিক্রি করেছি। এটা ছিল আমার কাছে পুরস্কার পাওয়ার মতো আনন্দের। আজ এখানে দাঁড়িয়ে মনে হয় আমার সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি। সকালে চোখ মেলার পর থেকে মাঝরাত, কখনো কখনো শেষ রাত পর্যন্ত কাজ করি, তবুও নেশা যায় না। কখনো কাজ থেকে মন সরে যায় না। সত্যিই কেউ যদি নিজের স্বপ্নের সঙ্গে হাঁটে, তাহলে সাফল্য আসবেই।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত