Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ে যাবে যেই খাদে

ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ে যাবে যেই খাদে

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্যান্য দেশের বাণিজ্য ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব কেমন হবে? এটি ১৯৮০ সালে শুরু হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য উদারীকরণ যুগের অবসান ঘটাবে নাকি সবকিছু উল্টে দিবে?

ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের মডেল অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপের কারণে বিশ্বের অসংখ্য দেশের বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক ক্ষতি পূরণ করতে একে অপরের সঙ্গে আরও বেশি বাণিজ্য করবে। এতে বিশ্বায়ন চলমান থাকলেও সেটি আর যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে হবে না।

এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে ব্লুমবার্গ উইকএন্ড ব্লুমবার্গ ইকোনমিকসের প্রধান বাণিজ্য ও জলবায়ু অর্থনীতিবিদ মায়েভা কাউসিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তাঁদের অভিমত, যুক্তরাষ্ট্রে সকল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ ১৯৪০-এর দশকে ফিরে যাওয়ার সমান। ট্রাম্প চীনের ওপর ৬০ শতাংশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গড় আমদানি শুল্কহার প্রায় ৩ শতাংশ। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের আগে এটি ১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০ সালের স্মুট-হাওলি শুল্ক আইনে গড় শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশে পৌঁছেছিল। তবে এই বৃদ্ধির আগে তৎকালীন শুল্কহার ১৪ শতাংশ ছিল। সেখানে ট্রাম্পের শুল্কহার ৩ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশে বৃদ্ধি আরও বড় ধাক্কা হবে।

এর প্রভাব সম্পর্কে ঐতিহাসিক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হওয়ায় ব্লুমবার্গ বিশ্ব অর্থনীতির ‘কম্পিউটেবল জেনারেল ইকুইলিব্রিয়াম মডেল’ ব্যবহার করেছে। মডেল অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের আমদানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে ও চীনের পণ্য আমদানি প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রায় কোনো বাণিজ্যই থাকবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির কী হবে?

চীন বা অন্যান্য দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ নীতিতে না গেলেও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে বিদেশি পণ্যর দাম বাড়বে ও যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। অন্য দেশগুলো পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে মার্কিন রপ্তানি প্রায় ৬০ শতাংশ কমে যাবে। আমদানি ও রপ্তানি একসঙ্গে কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিও একই থেকে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কিছু খাত কি লাভবান হবে?

আমদানির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করা খাতগুলোর জন্য শুল্ক আরোপ লাভজনক হতে পারে। ব্লুমবার্গের মডেলে দেখা যায়, দেশটির খনিজ সম্পদ ও টেক্সটাইল খাত উপকৃত হতে পারে।

বিশ্বের অন্য দেশগুলো কী লাভবান হবে?

বিশ্বে বাণিজ্যিক পণ্যের ২০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে আসে বা সেখান থেকে যায়। শুল্ক আরোপের প্রভাবে তা ৯ শতাংশে নেমে আসবে। অন্য দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের শূন্যতা পূরণ করবে ও পণ্য আমদানি বাড়াবে। অন্যান্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে পণ্য বাণিজ্য ৫ শতাংশ বাড়তে পারে, আর মোট বিশ্ব বাণিজ্য প্রায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। কেননা যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ববাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলেও বাকি বিশ্বের তুলনায় এখনো অনেকটা ছোট (মেক্সিকো ও কানাডা বিশেষ ব্যতিক্রম)।

চীনের রপ্তানি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কীভাবে টিকিয়ে রাখবে?

চীন বর্তমানে আমদানির তুলনায় অনেক বেশি রপ্তানি করে। এর একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়। এই বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে চীনের রপ্তানি বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত আয় অব্যাহত থাকবে কী?

চীনের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও উৎপাদন সক্ষমতা পুনর্গঠনের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধে দেশটি বেশ ভালোভাবে সামাল দিয়েছিল। চীন সম্ভবত নতুন বাজার খুঁজে পাবে। তবে রাজনৈতিকভাবে এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা ও প্রতিযোগিতা নিয়ে। এই চ্যালেঞ্জ ব্লুমবার্গের মডেল পুরোপুরি মূল্যায়ন করতে পারেনি।

যদি শুধু চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ এবং অন্যদের ওপর না করা হয়, তখন কি হবে? সে ক্ষেত্রে ‘সংযোগকারী’ অর্থনীতির মাধ্যমে সরবরাহ শৃঙ্খল পুনর্গঠিত হতে পারে। মার্কিন আমদানি শুল্কের কারণে আগামী ১০ বছরে বিশ্ব বাণিজ্য কমে গেলে অন্য দেশগুলোও পাল্টা আমদানি শুল্ক আরোপ করতে পারে। ফলে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য আরও কমে যেতে পারে।

বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও উৎপাদনশীলতার ওপর শুল্কের প্রভাব কী হবে?

ব্লুমবার্গের মডেল অনুযায়ী, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। তাই প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিলে ভবিষ্যতে কিছু দেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এটি মেক্সিকোর জন্য বড় সমস্যা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে, টেক্সটাইল বা খনিশিল্প উৎপাদনে গুরুত্ব দিলে আরও বেশি সম্পদ এই খাতগুলোতে ব্যয় করতে হবে। এতে উচ্চ উৎপাদনশীল খাতগুলোতে কম সম্পদ ব্যয় করতে হবে।

পাঠকদের কোন বিষয়ে নজর রাখা উচিত?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ব্লুমবার্গের মডেল বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য প্রবাহ কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কীভাবে তা দ্রুত সমন্বয় করা হচ্ছে সেটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চীনের প্রোডিউসার প্রাইস ইনডেক্সে (পিপিআই) কম চাহিদা মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে কিনা ও মন্দাভাব দেখা দিচ্ছে কিনা তাও দেখতে হবে। এটি এমন পরিস্থিতি হতে পারে যে, চীন রপ্তানির জন্য যথেষ্ট বাজার না পেলে কারখানাতেই পণ্যের মূল্য কমাতে বাধ্য হবে, এর প্রভাব চীনের শ্রমিকদের মজুরির ওপরও পড়বে।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির দিকেও নজর রাখতে হবে, যাতে ট্যারিফরা ভোক্তাদের কাছে বেশি দামি পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়।

মার্কিন আমদানি শুল্ক আরোপের সমর্থকদের ধারণা, এই বিষয়ে প্রচলিত অর্থনীতির ভুল ব্যাখ্যা রয়েছে। এমন কোনো অর্থনৈতিক প্রশ্ন রয়েছে কী, যা ট্যারিফের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে?

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, সমন্বয় কত দ্রুত ঘটে। আমরা জানি যে, আমদানি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে কোম্পানিগুলো অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নতুন উপায় খুঁজে বের করতে পারে। তবে শুল্ক অনেক বেশি এবং সব ধরনের পণ্যের ওপর আরোপ করা হলে দেখতে হবে তাঁরা কত দ্রুত সামঞ্জস্য ঘটাতে পারবে?

ব্লুমবার্গ থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত