Ajker Patrika

এনবিআর ভেঙে হচ্ছে করনীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, জুলাই থেকে চালু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘আয়কর আইন, ২০২৩: সংস্কার ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘আয়কর আইন, ২০২৩: সংস্কার ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রম ভেঙে করনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথক করা হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকেই এর কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।

আজ বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘আয়কর আইন, ২০২৩: সংস্কার ও প্রেক্ষিত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এ তথ্য জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস ট্যাক্সেশন ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকী।

এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, টক অব দ্য কান্ট্রি ট্যাক্স পলিসি এবং কর ব্যবস্থাপনা আলাদা হচ্ছে। এটা এত দিন অনুমান ছিল। এটা বাস্তবে রূপ পাচ্ছে।

আবদুর রহমান বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাকে গতকালও ডেকেছেন এবং বলেছেন ঈদের আগেই পাশ হবে। আর আগামী পয়লা জুলাই থেকেই এটা অপারেশনে যাবে। উনি এটা চাচ্ছেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা অপারেশনে যাই।

বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এর যে কাঠামো, সফটওয়্যার, সেটা তৈরি করার জন্য যথেষ্ট সময় লাগে। সেটা যদি আমরা দৌড়ে করতে পারি, তাহলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। আমরা সেদিকে আগাচ্ছি।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের নীতিগত সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল। এখন আমরা আইনের একটা খসড়া করেছি। আইনটাও আমরা অচিরেই উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে এবং জারি হবে। সেখানে বিশদভাবে আমরা যে জিনিসটা চাচ্ছি, বা সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে, সেটা হলো রাজস্ব নীতি একটা বিভাগ হবে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, যেটা আমাদের প্রধান কাজ, আইন প্রয়োগ করা, সেটার জন্য আলাদা একটা বিভাগ হবে। এই দুটো বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কিছু সমন্বয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কিছু বাইরের লোকও থাকবে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের জন্য।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাঁরা অভিজ্ঞ, তাঁরাই এই কাজগুলো করবেন। তার সঙ্গে অন্যান্য লোকও থাকবেন। এভাবে আমরা এটাকে ডিজাইন করেছি। এটা হলে আমরা যাঁরা রাজস্ব ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা আইনে যা আছে, তা প্রয়োগের দিকে মনোযোগী হতে পারব।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম, যা ৩ দশমিক ২ শতাংশ। এর অন্যতম কারণ, আমাদের অনেক বেশি কর অব্যাহতি দিতে হয়। যার কারণে আমাদের করব্যয় অনেক বেশি।’

তিনি আরও বলেন, প্রত্যক্ষ করের গড় হার ১০ শতাংশ অনুমানের ভিত্তিতে আমাদের জিডিপির প্রায় ৭০ শতাংশ প্রত্যক্ষ করের আওতার বাইরে। আমাদের অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আধিক্য বেশি, যা জিডিপির প্রায় ৩৭ শতাংশ। আয়কর আহরণে উৎসে করের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি।

কর কমিশনার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ মামুন বলেন, এসব অসংগতি দূর করার জন্য চারটি ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। এগুলো হলো প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর আয়কর বিভাগ বিনির্মাণের সংস্কার, আইন ও বিধি সংস্কার এবং সকল অংশীজনের দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার প্রয়োজন।

আয়কর আইনের অসংগতির বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কারণ চিহ্নিত করলেও একবারে সমস্যার সমাধান করতে পারব না। কারণ, সমস্যার সমাধান করলে আমাদের যে পরিমাণ রাজস্ব কমবে, তা কাভার করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ‘যে কথাটি উঠে এসেছে কর-জিডিপির হার অত্যন্ত কম, এটা সত্য কথা। আমাদের জিডিপির হিসাব কষা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। যেহেতু আমরা সরকারি কাজ করি। সরকারের একটা বিভাগের তথ্যের সত্যতা নিয়ে আরেকটা বিভাগের প্রশ্ন উত্থাপন করা ঠিক নয়। আমি নিজে সেগুলো নিয়ে কাজ করিনি। তাই বলতে চাই না। তবে অনেকেই বলেন, জিডিপির হিসাব অতিরঞ্জিত থাকতে পারে। যতই বাড়িয়ে বলা হোক, তারপরও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত যেটা, সেটা নিয়ে খুশি হওয়ার সুযোগ নেই।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের দেশের জনগণের অনেক চাহিদা। আমাদের জনবহুল দেশে অবকাঠামো নির্মাণের চাহিদা, সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্যে যে পরিমাণ ব্যয় করার কথা, সেই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ আমরা করতে পারছি না। এই সত্যটা স্বীকার করে নিতে হবে।’

কর অব্যাহতিকে রাজস্ব কম আহরণের বড় কারণ উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কর অব্যাহতির সংস্কৃতিটা চর্চা করছি। এখান থেকে আমাদের ধীরে ধীরে বের হতে হবে।’

কর অব্যাহতি দেওয়ার কারণ ছিল জানিয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের নিজেদের তেমন কোনো পুঁজি তৈরি হয়নি। স্বাভাবিকভাবে আমরা বিদেশি পুঁজি আকৃষ্ট করার জন্য নানা রকমভাবে প্রণোদনা দিয়েছি। আমাদের ধারণা ছিল, কর অব্যাহতি দিলেই অনেক পুঁজি বাংলাদেশে চলে আসবে।’

ব্যবসায়ীরা প্রকৃতপক্ষে কর দিতে ভয় পান না বলে প্রশংসাও করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সে (ব্যবসায়ী) যদি ব্যবসা করে, মুনাফা হয়, তার কিছু অংশ সরকারকে দেবে, সেটা হিসাব করেই ব্যবসায় নামে।’

বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বড় না হওয়ার কারণ তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের এফডিআইয়ের যে ফ্লো, তা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক দেশের সঙ্গে তুলনাযোগ্য নয়। এর কারণ, এখানে সুশাসনের অভাব। এখানে গুরুত্ব দিতে হবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা যদি বলি কর দিতে হবে না। উল্টো আমরা সরকারি কোষাগার থেকে প্রণোদনা দেব, তারপরও এখানে বিনিয়োগ আসবে কি না সন্দেহ। কারণ, তাদের যে ধরনের সেবা প্রয়োজন, সেটা ঠিকমতো দিতে পারি না। এটাই হলো মূল বিষয়। আইনের শাসন একেবারেই অনুপস্থিত। আমাদের যা আইনকানুন আছে, তা প্রয়োগ করতে আমরা অত্যন্ত দুর্বল। সেটা অনিশ্চিত, প্রত্যেক জায়গায়। উন্নত, সভ্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এই জায়গায়।’

দেশের করজাল একেবারেই ছোট নয় জানিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশের যাঁরা করদাতা নন, তাঁরাও কর দেন। গৃহিণী, ছাত্রছাত্রী, তাঁরাও কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখেন। তাঁদের মুনাফা থেকেও আমরা কর নিয়ে নিই। তাঁরা আমাদের নেটের বাইরের কথা। এটা আয়করের কথা। আর যদি পরোক্ষ করের কথা বলি, তাহলে এখনো বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যা আদায় করে, তার দুই-তৃতীয়াংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। তার মানে এখনো গরিব মানুষেরা বাংলাদেশে কর দেয়। এটাই সত্য।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ৫৩ বছর ধরে ঘাটতি বাজেট করছি। আমাদের প্রচুর ঋণ হয়েছে। সেই ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করা জাতি হিসেবে ইতিমধ্যে আমাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর জীবন দিতে চাই, তাহলে রাজস্ব বাড়িয়ে আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে।’

রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য আইনের প্রয়োগের ওপর জোর দেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা বৈষম্যহীনভাবে, সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারি। যার যতটুকু আয়, ততটুকু আদায় করতে পারতাম, তাহলে আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ত। এই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এখানে ফোকাস করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) জি এম আবুল কালাম কায়কোবাদ বলেন, ব্যবসার পরিধি অনুযায়ী উৎসে কর নির্ধারণ করা হয়। সব ব্যবসার আয় ও মুনাফা একরকম নয়। মুনাফার ভিত্তিতে আমরা উৎসে কর বিভিন্নরকম করেছি। এগুলোর পুনর্বিবেচনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের ই-রিটার্ন দাখিলে এনবিআরের হেল্প ডেস্ক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের সুবিধার্থে ছুটির দিনে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে এনবিআর।

এনবিআর জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণেচ্ছুক প্রার্থীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সহজীকরণে এনবিআরের উদ্যোগে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের সহযোগিতায় ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটস্থ কার্যালয়ে ‘হেল্পডেস্ক’ চালু করা হয়েছে।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এ ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের হেল্পডেস্ক থেকে আগামী শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অনলাইনে রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত সেবা প্রদান করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আকাশপথে পণ্য পরিবহনে অফডক চান ব্যবসায়ীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ১০
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিকস: আজকের পত্রিকা

আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থার দুর্বলতা নতুন করে সামনে এনেছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। ওই ঘটনায় কয়েক দিনের জন্য কার্গো কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই প্রেক্ষাপটে আকাশপথে পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন, দ্রুত ও সংকটসহনীয় করতে বিমানবন্দরের বাইরে অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো ব্যবস্থা চালুর দাবি জোরালো হয়েছে। সেই সঙ্গে দ্রুত এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, অফডকভিত্তিক এয়ার কার্গো অপারেশন চালু না হলে যেকোনো সংকটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

অফডক হলো বন্দর বা বিমানবন্দরের মূল এলাকার বাইরে অবস্থিত এমন নির্ধারিত স্থাপনা, যেখানে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের খালাস, সংরক্ষণ, পরীক্ষা ও হ্যান্ডলিং করা হয়। সহজভাবে বলা যায়, বন্দরের ভেতরে সব কাজ না করে বন্দরের বাইরে আলাদা জায়গায় কার্গোর কাজ করা, এটাই অফডক।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মতো আকাশপথেও অফডক ব্যবস্থা চালু করা যায় বলে মনে করেন নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সেবা মূলত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা খুবই সীমিত। অনেক সময় পণ্য খালাসে অতিরিক্ত দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এতে রপ্তানি ও আমদানি উভয় ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েন।

অফডক চালু হলে এ ধরনের জটিলতা থাকবে না জানিয়ে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এতে পণ্য খালাস দ্রুত হবে এবং সামগ্রিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও সহজ ও গতিশীল হবে।

অফডক দরকার কেন

সংশ্লিষ্টরা জানান, অফডক ব্যবস্থা চালু হলে বেসরকারি উদ্যোগে একাধিক অপারেটর থাকবে। ফলে কার্গো আমদানি-রপ্তানি পরিবহনে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, স্ক্যানিং চার্জসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সেবার মানও বাড়বে।

তথ্যমতে, বর্তমানে আকাশপথে প্রতি কেজি পণ্য রপ্তানিতে প্রায় ২৬ টাকা সার্ভিস চার্জ নেয় বিমান বাংলাদেশ ও সিভিল এভিয়েশন। একই সেবা পেতে ব্যাংককে প্রতি কেজিতে ৬.৪২ টাকা, কলকাতায় ৪.৮৮ টাকা এবং দিল্লিতে ৬.১০ টাকা দিতে হয়। এতে করে আকাশপথে পণ্য পরিবহন খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দেশে এয়ার কার্গো অপারেশনে অফডক পদ্ধতি চালু হলে অধিকতর কার্গো নিরাপত্তার সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। ইলেকট্রনিক কার্গো ট্র্যাকিং সিস্টেম (ইসিটিএস) চালু হবে। ফলে সহজে কার্গোর অবস্থান জানা যাবে। দ্রুত পণ্য খালাসে সুবিধা পাবে এবং জট কমবে। ওষুধের কাঁচামাল, জরুরি গার্মেন্টস পণ্যের নমুনাসহ আনুষঙ্গিক পণ্য সহজে পরিবহন করা যাবে। এতে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।

ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা এর সুফল ভোগ করতে পারবেন। বিশ্বের অনেক দেশে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে। যেমন সিঙ্গাপুর, দুবাই, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, জাপান, ভারত, হংকং, ইউএসএ। সেখানে এই ব্যবস্থার ফলে কার্গো পরিবহনে সময়ের সাশ্রয় ও পণ্য খালাসে জটিলতা নেই বললেই চলে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে অফডক ব্যবস্থা চালু আছে এবং তা সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। একই ধরনের ব্যবস্থা ঢাকার বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় চালু করা গেলে আকাশপথে পণ্য পরিবহন আরও সহজ হবে।

এদিকে এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন চেয়ে ২৩ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি বলছে, ঢাকা বিমানবন্দর এবং এর আশপাশে অফডক সুবিধা চালু হলে আমদানি প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং রপ্তানির গতি বাড়বে। তবে অফডকের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কম খরচে ভালো সেবা নিশ্চিত করতে স্পষ্ট শর্ত থাকা প্রয়োজন।

বিজিএমইএ আরও জানিয়েছে, বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিমানবন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। তাই অফডক ব্যবস্থায় বিমানের সঙ্গে সমন্বয় ও চুক্তির বিষয়টি নীতিমালায় স্পষ্ট থাকা জরুরি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, অফডক চালু হলে ডিএইচএল বা ফেডেক্সের মতো কুরিয়ার কোম্পানিগুলো বন্ড লাইসেন্স নিয়ে এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করার পরে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে সরাসরি ডেলিভারি করতে পারবে। তখন আর বিমানের ওপর নির্ভর করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে।

১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে ‘এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস ডেলিভারি’ বিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ—বিডা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে এয়ার কার্গো কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কাস্টমস ও মূল্য সংযোজন কর বিভাগ থেকে ‘এয়ার কার্গো অপারেটরস স্টেশন (এসিওএস) স্থাপন, ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, তদারকি ও কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২৫ ’-এর খসড়াও প্রণয়ন করা হয়েছে।

এয়ার কার্গো অপারেটর’স স্টেশন নীতিমালা চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে আইআরডি সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়ন করতে চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি তাদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের জন্য অ্যান্টি মানি লন্ডারিং (এএমএল) ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ (সিএফটি) সংক্রান্ত এক সচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করেছে। গত ২১ ডিসেম্বর ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

এএমএল ও সিএফটি কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকা এবং প্রাসঙ্গিক নিয়ন্ত্রক নির্দেশনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। কর্মশালায় আলোচিত প্রধান বিষয় ছিল—ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং মানি লন্ডারিং তদারকিতে পরিচালনা পর্ষদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কর্তৃক বিভিন্ন সময় সিস্টেম চেক পরিদর্শন থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। দেশের সাম্প্রতিক মানি লন্ডারিং পরিস্থিতি এবং রিপোর্টিং সংস্থা হিসেবে ব্যাংকের করণীয়।

কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক রেজওয়ানুর রহমান ও যুগ্ম পরিচালক জুয়াইরিয়া হক।

এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. এবতাদুল ইসলাম, কাজী মো. মাহবুব কাশেম এফসিএ, মো. গোলাম মোস্তফা ও মুহাম্মদ মনজুরুল হক উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই সচেতনতামূলক সেশনে অংশ নেন।

আইএফআইসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএসআরএম স্টিলসের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ০৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম স্টিলস লিমিটেডের ২৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশিকা অনুযায়ী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করেছেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান আলী হোসেন আকবরআলী এফসিএ সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী এবং পরিচালকমণ্ডলীর প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য কোম্পানির পরিচালক পুনর্নিয়োগ এবং নিরীক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেন।

কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসেন পরিচালকমণ্ডলীর বিবরণী উপস্থাপন করেন এবং কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের অবহিত করেন।

বিপুলসংখ্যক শেয়ারহোল্ডার নিজ নিজ বিও (BO) আইডি ব্যবহার করে ওয়েব লিংকের মাধ্যমে এই ভার্চুয়াল সভায় সরাসরি অংশ নেন। নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের উত্তর দেন কোম্পানি সচিব।

শেয়ারহোল্ডাররা তাঁদের মন্তব্যে কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালকমণ্ডলীর প্রতি গভীর আস্থা ও নির্ভরতার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

সভায় কোম্পানির পরিচালকবৃন্দ, কোম্পানি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোম্পানির ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঢাকায় স্কুলের ফুটবল টিমে গোলকিপার ছিলেন জাইমা রহমান

ভোটের পথে মিলতে যাচ্ছে জামায়াত ও এনসিপি

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত