Ajker Patrika

হালাল বন্ডের বাজারে অনাস্থা

  • সম্ভাবনাময় আর্থিক পণ্য, কিন্তু মূলধারার বিনিয়োগে নেই
  • সচেতনতা বাড়াতে দরকার সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ
  • সুকুকের ধারণা ছড়িয়ে দিতে পাঠ্যক্রমেই অন্তর্ভুক্তি জরুরি
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১৩: ৫০
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশে শরিয়াহভিত্তিক বিনিয়োগ পণ্য ‘সুকুক’ চালু হয়েছিল ইসলামি আর্থিক মূল্যবোধকে মাথায় রেখে। এটি এমন একটি পণ্য, যেখানে সুদ নেই, দুর্নীতি নেই আর ঝুঁকিও তুলনামূলক কম। অনেকে একে ‘হালাল বন্ড’ বলেও চেনেন। বিশ্বের বহু দেশে যেখানে ইতিমধ্যেই সুকুক বড় বাজার তৈরি করেছে, সেখানে একেবারেই ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। গত পাঁচ বছরে এর আকার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২ হাজার ৩০০ কোটি টাকায়। এর মধ্যে করপোরেট পর্যায়ে এসেছে মাত্র ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যদিও এসব সুকুকে বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৪.৬৫ থেকে ১০.৪০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা।

সুকুক, একটি সম্ভাবনাময় আর্থিক পণ্য, দেশের মূলধারার বিনিয়োগে জায়গা পাচ্ছে না। এর পেছনে মূলত বাজারে অজ্ঞতা ও উদাসীনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব এবং নিয়ন্ত্রকদের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুকুকের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল। তবে অনাস্থা, অনিয়ম ও ধারণাগত দুর্ভাবনা এই পণ্যের সম্ভাবনা থামিয়ে রেখেছে।

সুকুক হলো শরিয়াহভিত্তিক একটি বিনিয়োগ পণ্য, যেখানে সুদের পরিবর্তে প্রকৃত সম্পদে অংশীদারির ভিত্তিতে মুনাফা দেওয়া হয়। মালয়েশিয়া বা আমিরাতের মতো দেশে এটি প্রকল্পে মালিকানা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো এটি মূলত প্রকল্প সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তৈরি একটি বন্ড হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ খুবই সীমিত।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটস (বিআইসিএম)-এর সহকারী অধ্যাপক এস এম কালবীন ছালিমা এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো পণ্যই জনপ্রিয় হতে পারে না। সুকুক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ জরুরি।

বিশ্বে যেখানে বন্ড মার্কেটের আকার ১৩৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, সেখানে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক সুকুকের বাজার রয়েছে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অথচ বাংলাদেশে পুরো বন্ড মার্কেটের (ট্রেজারি ও করপোরেট) আকারই হচ্ছে মাত্র ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ কোটি বা ২.১৯৬ ট্রিলিয়ন টাকা। সেই তুলনায় সুকুকের অংশ এমনই নগণ্য যে পুরো বাজারে এর অবস্থান প্রায় অদৃশ্য।

সরকার ২০২০ সালে প্রথমবার সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে ‘সেভ ওয়াটার সাপ্লাই টু দ্য হোল কান্ট্রি’ প্রকল্পে ৮ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করে, যা ৫ বছর মেয়াদি এবং ৪.৬৯ শতাংশ মুনাফা প্রদান করেছে। পরবর্তী সময়ে ‘নিড বেইজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট অব গভর্নমেন্ট প্রাইমারি স্কুল’ এবং ‘আইআরআইডিপি-৩’ প্রকল্পে যথাক্রমে ৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়। সবচেয়ে উচ্চ মুনাফার প্রকল্প ছিল ‘সিডব্লিউএসপি সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট প্রজেক্ট’, যেখানে ১০.৪০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। তবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা এখনো ২ শতাংশের নিচে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও মূলত বাধ্যবাধকতার কারণে অংশ নিচ্ছেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে করপোরেট সুকুকের যাত্রা শুরু হয় বেক্সিমকোর ‘গ্রিন সুকুক আল ইসতিসনা’র মাধ্যমে, যার মাধ্যমে তারা বাজার থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে এবং ৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেয়। পরে বঙ্গ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস লিমিটেড (বিবিএমএল) ৩০০ কোটি টাকার সুকুক ইস্যু করে, যেখানে মুনাফার হার ছিল ৮ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সুকুক ইস্যুর জন্য আবেদন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প’, যার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ১০ বছর মেয়াদি ১ হাজার কোটি টাকার ‘আইসিবি ফার্স্ট মুদারাবা সুকুক’ ইস্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছে, আর দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডও ৫০০ কোটি টাকার সুকুক ইস্যু করতে যাচ্ছে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুকুক শরিয়াহসম্মত পণ্য এবং বাংলাদেশের ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো এতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। ইসলামিক অর্থনীতির বিস্তারে এটি হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে সুকুক জনপ্রিয় করতে হলে রিটেইল পর্যায়ে এটি আরও সহজবোধ্য ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের জন্য সুদমুক্ত আয়ের আকর্ষণ থাকলেও সুকুক সম্পর্কে সঠিক বার্তা এখনো তাদের কাছে পৌঁছায়নি। বিআইসিএমের মতে, সুকুকের ধারণা ছড়িয়ে দিতে শিক্ষা পাঠ্যক্রমেই এর অন্তর্ভুক্তি জরুরি।

সুকুকের টেকসই বিকাশে দরকার একটি স্বাধীন, জবাবদিহিমূলক এবং শরিয়াহ-পরিপালন নিশ্চিতকারী নিয়ন্ত্রক কাঠামো। অতীতে পক্ষপাতদুষ্ট ইস্যুগুলোর কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। তাই বন্ডের বিকল্প হিসেবে সুকুককে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ‘এসআরআই’, ‘রিটেইল’, ‘ব্লু’ ও ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল’ সুকুকের মতো উদ্ভাবনী মডেল চালু করতে হবে।

সুকুক বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র প্রসঙ্গে বলা যায়, পেনশন ফান্ড, সভরেন ওয়েলথ ফান্ড, ফান্ড ম্যানেজার, কমার্শিয়াল ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারী—সবার জন্যই এটি উপযোগী। কারণ এই বিনিয়োগ শরিয়াহ সুপারভাইজারি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত, ঝুঁকিমুক্ত এবং সামাজিক কল্যাণমুখী খাতে ব্যয় হয়।

এখন প্রশ্ন একটাই—এত সম্ভাবনা, এত মুনাফা, এত শুদ্ধতা থাকার পরও কেন এই খাত আজও প্রান্তিক, অবহেলিত, অবিশ্বাসে ঢাকা? উত্তর খুঁজতে গেলে বারবার ফিরে যেতে হয় পরিচালনার স্বচ্ছতা, নিয়ন্ত্রণকাঠামোর জবাবদিহি এবং রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার জায়গাটিতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত