Ajker Patrika

নির্বিচারে ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, বেক্সিমকো বিক্রির উদ্যোগের কড়া সমালোচনা আবদুল আউয়াল মিন্টুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯: ০৬
: ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনভারসেশন ইউথ ইআরএফ মেম্বার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। ছবি: সংগৃহীত
: ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনভারসেশন ইউথ ইআরএফ মেম্বার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। ছবি: সংগৃহীত

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়, যাতে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিভিন্ন শিল্পমালিকের হিসাব জব্দ করা এবং সরকার কর্তৃক বেক্সিমকো বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি, ভুট্টা, ডাল এমন কিছু পণ্য ছাড়া বাজারে আসলে সিন্ডিকেট বলতে তেমন কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ব্যবসায়ীদের ওপর অতি মুনাফার দোষারোপ এবং ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার অভিযানকেও তিনি অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেন। একশ্রেণির দুর্নীতিবাজ নিজেদের দোষ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দিতেই সিন্ডিকেটের স্লোগান দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ সোমবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘কনভারসেশন ইউথ ইআরএফ মেম্বার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বিগত সরকারের সময় রিজার্ভসহ অর্থনীতি বিভিন্ন বিষয়ে ভুল তথ্য দিয়ে অর্থনীতিতে চিটিংবাজি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বেক্সিমকো গ্রুপ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘কারা বিক্রি করবে, কেন করবে? ব্যবসায়ী হিসেবে আমি চাই না সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিক যাতে উৎপাদন ব্যাহত হয় ও শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়ে। বেক্সিমকোতে ৮৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তারা তো কোনো দোষ করেনি। কিংবা প্রতিষ্ঠানও কোনো দোষ করেনি। যদি কোম্পানির মালিক বা কর্মকর্তারা দোষ করে থাকে, তবে তাদের ধরে শাস্তি দিন, আইনের আওতায় নিয়ে আসেন।’

এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার বিষয়ে তিনি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘দুই বছরে আমাকে ১৭ হাজার পৃষ্ঠা নথিপত্র দিতে হয়েছে দুদকে। অথচ তারা যে সাত দিন সময় দিয়েছিল আমার আয়–ব্যয়ের হিসাব দিতে, আমি জেলে বসে থেকেও সময়মতো দিয়েছি। বাড়তি কোনো সময়ও চাইনি। তার পরও বিগত সরকার আমার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দিয়েছিল। ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করলে একজন উদ্যোক্তা তার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে পারে না, উৎপাদন ব্যাহত হয়। অন্যায়ভাবে (ব্যাংক হিসাব) ফ্রিজ করাটা আমি নিজেও পছন্দ করি না।’

‘অর্থনীতি: অতীত ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক লিখিত বক্তব্যে সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বিদেশি ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ঋণ গ্রহণ, মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ, বিদেশি ঋণে রিজার্ভ ভারী করা, রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দেখানোসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন তিনি।

এ ছাড়া রাজনীতির সঙ্গে অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা ও উত্তরণে অগ্রগতি, বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যৌক্তিকতা, সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য করণীয় তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্বল শাসনব্যবস্থা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্মিলিত প্রয়াসে উৎপাদন প্রক্রিয়া ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বাধা দূর করতে হবে। অন্যথায় দেশ মানবসৃষ্ট এক ভয়াবহ দুর্যোগের নির্মম প্রলয় নৃত্য দেখবে।

একনায়কতন্ত্র, স্বেচ্ছাচারী শাসন, দলীয়করণ, দলীয় লোকদের তোষণ-পোষণকে বিগত সরকার রাষ্ট্রীয় রীতি–নীতিতে পরিণত করেছিল। জনগণের কল্যাণে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণের মাধ্যমে নিজেদের কবজায় নিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিল। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে আইন করে এমন লুটপাটকে বৈধ করার নজির নেই।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৩০ জন এখনো দারিদ্র্য, কষ্ট, শঙ্কা, রোগ ও অপুষ্টিতে ভোগে। জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪০ ভাগ বেকার নয়তো অর্ধবেকার। প্রতিবছর আরও ২০ লাখ নাগরিক কর্মক্ষম হয়ে কর্মবাজারে প্রবেশ করছে। তাদের অধিকাংশের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামনে রয়েছে—একদিকে বেকারত্ব থেকে সৃষ্ট হতাশা, অন্যদিকে সমাজ সৃষ্ট রাজনৈতিক সংঘর্ষের শঙ্কাপূর্ণ পরিস্থিতি। সমাজের প্রতিটি গোষ্ঠী যেন নিজেদের বিরুদ্ধে নিজেরাই এক অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত।

একইভাবে মেগা প্রজেক্টে হোক কিংবা খেলাপি ঋণ মাফ হোক, ব্যাংক বা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করা হোক, সব আইন-কানুন-নীতিই তখন আত্মস্বার্থ সন্ধানী দুর্নীতিবাজদের সহায়তায় প্রণীত হতো।

তিনি মনে করেন, সুশীল সমাজ ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখা একান্তভাবে বাঞ্ছনীয়। এ জন্য প্রথম কাজ হবে রাজনৈতিক সংস্কারে হাত দেওয়া। একদলীয় দিনবদলের সনদ বা রূপকল্প বাস্তবায়ন বাদ দিয়ে সম্মিলিত প্রয়াসে নতুন রূপকল্প রচনায় সময় এখন। একই সঙ্গে একটি নির্বাচিত সরকার যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।

এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে ঋণখেলাপি আছে, ২ লাখ ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এটা আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। কারণ, উৎপাদনশীল খাতের সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান হয়নি। এখনো সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা ঠিকমতো কাজ করছে না। ব্যাংকের সমস্যা আছে, সে কারণে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক নিত্যনতুন সার্কুলার জারি করছে, তাতে খেলাপি ঋণ কমার কোনো সুযোগ আমি দেখছি না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পাওয়ার পর দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং এ জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে। এখন আমরা কার কাছে যেয়ে কী বলব?’

মূল্যস্ফীতির জন্য ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কতটা দায়ী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুই-তিনটা ইস্যুতে সিন্ডিকেট হতে পারে। তা হলো ভোজ্যতেল, চিনি, ভুট্টা ও গম। এগুলো বিপুল পরিমাণে আমদানি করতে হয়, এতে ১০ মিলিয়ন, ২০ মিলিয়ন ডলারের এলসি খুলতে হয়। তাই ছোট ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে পারেন না। কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এগুলো আমদানি করে, তারাই ব্যাংকে সবচেয়ে বড় বড় ঋণখেলাপি।’

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘টিসিবি ট্রাকের পেছনে দিন দিন মানুষের লাইন লম্বা হচ্ছে। আগে গরিব মানুষ টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন করে পণ্য নিত। গত চার সপ্তাহে এই লাইন ২০% বড় হয়েছে। এখন মধ্যবিত্তরাও লাইনে দাঁড়াচ্ছে। আর কিছুদিন পর হয়তো আমাদেরও টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইনে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাইভেট সেক্টর ক্রেডিট গ্রোথ ছিল গড়ে ১৩-১৪%, সেটা এখন কমে হয়েছে ৮%। এটা খুবই বিপজ্জনক এবং ভবিষ্যতের জন্য একটা বিপদসংকেত। এ থেকে স্পষ্ট যে দেশে কোনো বিনিয়োগই হচ্ছে না। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান কীভাবে হবে?’

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা মন–কষাকষি চলছে। এর কারণ, ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ভুলে গিয়ে শুধু একটি দলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে। এখন সেই সরকার আর ক্ষমতায় নেই, এটা ভারতের জন্য মেনে নেওয়া কষ্টকর। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নীতি হচ্ছে—আগে আপনি (ভারত) ৫ আগস্টের নীতিগত স্বীকৃতি ঠিকমতো দেন এরপর আমরা ভবিষ্যতের দিকে আগাই। আমিও মনে করি, এটা যথাযথ চিন্তাধারা।’

ভারতকে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হওয়া উচিত। তবে একই সঙ্গে আত্মসম্মান যেন বজায় থাকে।’

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, ‘শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করায় অর্থনীতির অন্য ভিত্তিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সুদহার বাড়িয়ে টাকার সরবরাহ কমালে ঋণপত্র খোলার পরিমাণ কমে যাবে। এতে পণ্যের সরবরাহ কমবে। অর্থাৎ মুদ্রা সরবরাহ কমাতে গিয়ে পণ্যের সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেওয়া হবে। আর পণ্য সরবরাহের ঘাটতি থেকে তৈরি মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। সুতরাং, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার পাশাপাশি দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।’

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি কখনো দরবেশ হব না। যদি আমি তাই হতে চাইতাম, তাহলে আমার জীবনে অনেক সুযোগ ছিল। দরবেশ সাহেব থেকে আরও বেশি ক্ষমতাবান ছিলাম একসময়। এটা অনেকে সাক্ষী দেবে। তখন দরবেশ সাহেবরা কিছুই ছিল না। তখনো ওই ক্ষমতা অপব্যবহার করে আমি উপকৃত হই নাই, ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত