Ajker Patrika

বিমার ৪৩৭৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৩২ কোম্পানি

  • ৫ কোম্পানির কাছে পাওনা ৮০ ভাগ টাকা।
  • শেষ ৩ মাসে গ্রাহকের পাওনা বেড়েছে ১ হাজার কোটি।
  • বিমার টাকা না দেওয়ার শীর্ষে আ.লীগসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও নেতাদের কোম্পানি।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৩: ১২
বিমার ৪৩৭৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৩২ কোম্পানি

বিমা করেছেন, কিস্তি দিয়েছেন নিয়মিত, কিন্তু টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহক—দেশের জীবনবিমা খাতে এ রকম ঘটনা যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৩২টি জীবনবিমা কোম্পানির কাছে গ্রাহকের আটকে থাকা টাকার পরিমাণ অন্তত ৪ হাজার ৩৭৫ কোটি। বিমার টাকা আদায়ে প্রতিদিনই এসব কোম্পানির অফিসে ধরনা দিচ্ছেন গ্রাহক। অনেকে চার-পাঁচ বছর ঘুরেও টাকা আদায় করতে পারছেন না।

বিমা মেয়াদ শেষ হওয়ার ১০ বছর পেরিয়ে গেলে এখন পর্যন্ত টাকা পাচ্ছেন না বাগেরহাটের আশিকুর রহমান আশিক। মোরেলগঞ্জ থেকে রাজধানীর বিজয়নগরে বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রধান কার্যালয়ে বিমার টাকা চাইতে আসা আশিক বলেন, ‘এজেন্ট ও কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছিলেন ৫০ হাজার টাকার বিমা করলে ১ লাখ টাকা পাব। লাভ তো পেলামই না, মামলা করার পরও মূল টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’ তিনি জানান, ২০০৫ সালে করা বিমার মেয়াদ শেষ হয় ২০১০ সালে। এরপর থেকেই বিমা দাবি নিয়ে তিনি ঘুরছেন বায়রা লাইফের স্থানীয় ও প্রধান কার্যালয়ে। টাকার জন্য এ নিয়ে ২১ বার রাজধানীতে এসেছেন তিনি। বায়রা লাইফ টাকা না দেওয়ায় আইডিআরএ, এমনকি আদালত পর্যন্ত গেছেন; কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি।

আশিকের মতোই বিমার টাকার জন্য ৯ বছর ধরে ঘুরছেন কুড়িগ্রামের রিকশাচালক সুজন খন্দকার। আর চার বছর ধরে সব ধরনের চেষ্টা করেও বিমার টাকা পাননি বগুড়ার মুহতাদিয়া বানু।

বিমা আইন ২০১০ অনুসারে, পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের কাছে সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বিমা দাবি নিষ্পত্তি করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ বিমা কোম্পানি এ নিয়ম মানছে না।

আইডিআরএর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিমা কোম্পানিতে গ্রাহকদের বকেয়া বিমা দাবি ছিল প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

এরপরের তিন মাসেই তা থেকে বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লোপাট ও স্বজনপ্রীতির কারণে অর্থ সংকটে পড়ে গ্রাহকের টাকা নিয়ে গড়িমসি করছে কোম্পানিগুলো।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সময়মতো বিমার টাকা পরিশোধ না করা বিমা খাতের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। ফলে মানুষ বিমা খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আর এ কারণে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

আইডিআরএর সর্বশেষ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জীবনবিমা খাতে গ্রাহকের অপরিশোধিত অর্থের ৮০ ভাগই আটকে রেখেছে ৫টি বিমা কোম্পানি। বিমা দাবি পরিশোধে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইনস্যুরেন্স। বিকল্পধারার সাবেক মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নানের এই প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহকদের পাওনা ৫৯৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। কোম্পানিটি বিমা দাবির ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশই পরিশোধ করেনি। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁরা বলেন, ‘যা বলার আইডিআরএকে বলেছি।’

৯৫ দশমিক ৫১ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ না করায় গ্রাহকের টাকা আটকে রাখার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এস আলম গ্রুপের পদ্মা ইসলামী লাইফ। প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকের পাওনা ২৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া ফারইস্ট ইসলামী লাইফ গ্রাহকের ২ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা আটকে রেখেছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট বিমা দাবির ৯৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। ফারইস্ট ইসলামী লাইফে এস আলমের পাশাপাশি ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের।

বিষয়টি নিয়ে জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত সিইও শহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গত ১০-১২ বছরে কোম্পানির প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা লুট হয়েছে। ফলে হাতে নগদ টাকা নেই। গ্রাহকের টাকা পরিশোধে গুলশান ও ফেনীতে সম্পদ বিক্রির পরিকল্পনা রয়েছে।’

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আবুল বাসারের বায়রা লাইফে গ্রাহকের বিমা দাবির ৯২ দশমিক ৫৮ শতাংশই বকেয়া, যা টাকার অঙ্কে ৮৩ কোটি। এ ছাড়া ৮২ দশমিক ৩২ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ না করে পঞ্চম স্থানে রয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইভ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকের বকেয়ার পরিমাণ ২০১ কোটি টাকা।

বায়রা লাইফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মামুন খান বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে বড় অংশের দাবি পরিশোধ করতে পারব। মালিবাগে কোম্পানির জমি বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে।’

৭৩ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করেনি সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পারিবারিক কোম্পানি সানলাইফ ইনস্যুরেন্স। এ ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেডিসেন্ট জসিম উদ্দিনের মালিকানাধীন কোম্পানি বেঙ্গল ইসলামী লাইফ ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ, প্রয়াত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার ডায়মন্ড লাইফ ৩৩ শতাংশ এবং সরকারি জীবনবিমা কোম্পানি ১৪ শতাংশ দাবি পরিশোধ করেনি।

একইভাবে এস আলম গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স ১০ শতাংশ এবং আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোরশেদ আলমের ন্যাশনাল লাইফ গ্রাহকদের ৮ শতাংশ বিমা দাবি পরিশোধ করেনি।

প্রাইম ইসলামী লাইফের সিইও সামসুল আলম বলেন, ‘৩০৬ কোটি টাকা দাবির কথাটি সঠিক নয়, বকেয়া বিমা দাবির পরিমাণ ৩৮ কোটি টাকা। তিনি আরও বলেন, কোম্পানির ফ্ল্যাট-প্লট রয়েছে, তা বিক্রি করে বিমার টাকা দেওয়া শুরু করেছি।’

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এক দশক আগেও দেশের জিডিপিতে বিমা খাতের অবদান ছিল প্রায় ১ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ০.৪৫ শতাংশে। অর্থাৎ বিমা খাত বিস্তারের বিপরীতে আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। আস্থা হারানোর প্রধান সমস্যা বিমা দাবি পরিশোধ না করা। অনিষ্পন্ন দাবির অঙ্ক বাড়ায়, আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগজনক।

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের সিইও জালালুল আজিম বলেন, বিমা দাবির টাকা ফেরত না পাওয়ার কারণে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে। ফলে খাতটি দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারছে না।

তবে সংকটের মধ্যেও কিছু কোম্পানি আছে, যারা ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত বিমা দাবি পরিশোধ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, সোনালী লাইফ, মার্কেন্টাইল, সন্ধানী, মেঘনা ও রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান আসলাম আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েকটি কোম্পানির অনিয়ম পুরো বিমা খাতের ওপর প্রভাব ফেলছে। আমরা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বসে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাসিনা শেখ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিমা কোম্পানিগুলোর দাবি পরিশোধে আইডিআরএকে আরও কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে তাদের ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করে দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এসএমই মেলায় ১৬ কোটি টাকার অর্ডার পেলেন উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আট দিনব্যাপী ১২তম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন উদ্যোক্তারা। পণ্য বিক্রির পাশাপাশি ১৬ কোটি টাকার পণ্যের অর্ডার পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। আজ রোববার আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান।

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুমী এ আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এর আগে ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় ৩ হাজার উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য বিক্রি করেছেন। ১১টি পণ্য মেলায় অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের ৫৭ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং প্রায় ৯৩ কোটি টাকার অর্ডার পেয়েছেন।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণকারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ স্টলের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ‘জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার–২০২৫’ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও চেক তুলে দেওয়া হয়।

শতভাগ দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। ৭ ডিসেম্বর মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করেছে প্রায় সাড়ে তিন শ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বেশি ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া হস্ত ও কারুশিল্পের ৫৪টি, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য খাতের ৪০টি; পাটজাত পণ্যের ৩৫টি; কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ২৮টি; শতরঞ্জি, বাঁশ, বেত, হোগলা, সুপারিখোল ও কাঠের ১৫টি; খাদ্যপণ্যের ১৪টি; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের ১৩টি; জুয়েলারি শিল্পের ৯টি; প্রসাধন খাতের সাতটি; তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাতের পাঁচটি; হারবাল–ভেষজশিল্পের পাঁচটি; প্লাস্টিক পণ্যের পাঁচটি; ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের তিনটি, ফার্নিচার খাতের তিনটি এবং অন্যান্য খাতের ১১টি স্টল।

মেলায় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সেবা প্রদানকারী শিল্প মন্ত্রণালয়ের আটটি দপ্তর-সংস্থাসহ সরকারের প্রায় ১৫টি সংস্থা, প্রায় ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

মেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ অর্থায়ন, পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও পণ্যের হালাল সনদ প্রাপ্তি, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ট্রেড মার্ক ও জি আই স্বীকৃতি, স্কিলস ইকোসিস্টেম বিষয়ে ছয়টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আপেল, মাল্টা, কমলাসহ তাজা ফলের শুল্ক কমানোর সুপারিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন রমজান মাস সামনে রেখে তাজা ফলের ওপর শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। খেজুরের মতোই এবার আপেল, কমলা, আঙুর, মেস্তারিন, নাশপাতি ইত্যাদি তাজা ফলকে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া এক চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপণ্য বিবেচনায় এমন সুপারিশ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, দেশের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করা তাজা ফলের মাধ্যমে পূরণ হয়। গত কয়েক বছরে ডলারের মূল্য, শুল্ক বৃদ্ধিসহ নানা কারণে আমদানি করা ফলের দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে আপেল, কমলা, মেস্তারিন, আঙুর ও নাশপাতি আমদানিতে মোট শুল্ক রয়েছে ১২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আনার আমদানিতে মোট শুল্ক-কর রয়েছে ১২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আপেল, মাল্টা, আনার ইত্যাদি ফলের স্থানীয় উৎপাদন নেই; তাই এই উচ্চহারে শুল্ক-কর রাখার প্রয়োজনীয়তা সীমিত।

অন্যদিকে উচ্চহারে শুল্ক-কর আরোপের ফলে বৈধ পথে আমদানি কমে তা অবৈধ পথে আমদানিকে উৎসাহিত করতে পারে। এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিমাত্রায় বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়তে পারে। উচ্চ শুল্ক-করের ফলে তাজা ফলের আমদানি কমার ধারা অব্যাহত থাকলে শুধু ভোক্তাসাধারণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে না; ভবিষ্যতে রাজস্ব আহরণও কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

তাজা ফলকে ‘বিলাস পণ্য’ হিসেবে বিবেচনা করে এর ওপর ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্য আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী খাদ্যপণ্য হিসেবে তাজা ফল ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ বিধায় এর ওপর আরোপিত অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার বা যৌক্তিক করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনে ভোটার ও রাজনীতিবিদের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে: দেবপ্রিয়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৯
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ‘দেশে শুধু ভোটাররাই নন, রাজনীতিবিদেরাও এখন বিপন্নতার মধ্যে রয়েছেন।’

বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

আজ রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিপিডির ফেলো।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বিপন্ন জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায় বা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কথা উঠে আসে। তবে এর সঙ্গে বড় একটি বিষয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তা। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদেরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কি না এবং নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার তাঁদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কি না, এ নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।’

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গে সিপিডির এই ফেলো বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার পর এখন নিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্-নির্বাচনী সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জনগণের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব আলোচনার ভিত্তিতে একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি খুব জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কি না, এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।’

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমানে সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট গোষ্ঠী প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার ফলে সৃষ্টি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে গড়ে উঠেছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও একটি অলিগার্কিক ব্যবস্থা, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে বর্তমান উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে যে গতি তৈরি হয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সিপিডি ফেলো বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ সব সময় পর্যাপ্ত ছিল না। আর শুধু পরিকল্পনার মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়; এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের ধারাবাহিক অংশগ্রহণ।’

তাঁর মতে, সংস্কার শুধু পরিকল্পনা বা উদ্দীপনার বিষয় নয়। সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সচেতনভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেতাদের হাতে উপহারের ফ্রিজ-টিভি হস্তান্তর করল ওয়ালটন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত
ওয়ালটন পণ্য কিনে ফ্রিজ-টিভি উপহার পাওয়া কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে ওয়ালটনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ছবি: বিজ্ঞপইত

ইলেকট্রনিকস পণ্য ক্রয়ে গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে দেশব্যাপী চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন। ক্যাম্পেইনের ২৩তম সিজনে ওয়ালটন ফ্রিজ, এসি, টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা বিএলডিসি ফ্যান কিনে গ্রাহকেরা পাচ্ছেন সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সাইড বাই সাইড ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ফ্রি ও নিশ্চিত উপহার। গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই ক্যাম্পেইনে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতার হাতে উপহারের পণ্য তুলে দিচ্ছে ওয়ালটন।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওয়ালটন প্লাজা থেকে ফ্রিজ কিনে সাইড বাই সাইড ফ্রিজ ও টিভি ফ্রি পাওয়া পণ্য ছয় ক্রেতার হাতে তুলে দিয়েছে ওয়ালটন। তাঁরা হলেন— মুন্সিগঞ্জের গোলাম রাব্বানি সিফাত ও গৃহিণী আফসানা আক্তার, নারায়ণগঞ্জের আজমির খান, রূপগঞ্জের সবুর হোসাইন এবং সিদ্ধিরগঞ্জের তারিকুল ইসলাম ও আসমা জাহান বিথী।

গত বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের হাতে উপহার পাওয়া পণ্য তুলে দেন চিত্রনায়ক ও ওয়ালটনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আমিন খান। সে সময় আরও ছিলেন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের প্রধান মো. ফিরোজ আলম প্রমুখ।

বিজয়ী ক্রেতাদের মধ্যে গোলাম রাব্বানি সিফাত, আফসানা, আজমির খান ও আসমা জাহান বিথী ফ্রিজ কিনে উপহার পেয়েছেন ওয়ালটনের অত্যাধুনিক সিক্সএনাইন মডেলের সাইড বাই সাইড স্মার্ট ফ্রিজ। অন্যদিকে তারিকুল ইসলাম ফ্রিজ কিনে ফ্রি পেয়েছেন ২১৩ লিটারের ফ্রিজ এবং সবুর হোসাইন ফ্রিজ কিনে পেয়েছেন ওয়ালটনের ৪৩ ইঞ্চি স্মার্ট টেলিভিশন।

উপহারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. রায়হান বলেন, ‘ওয়ালটন ক্রেতাদের সব সময় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং সম্মান করে। সারা দেশে প্রতিদিন অসংখ্য ক্রেতা ওয়ালটন পণ্য কিনে নানান উপহার পাচ্ছেন যা তাদের যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের মাঝে কয়েকজনের হাতে করপোরেট অফিসে অনুষ্ঠান করে প্রাপ্য পণ্য বুঝিয়ে দিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গ্রাহকদের জন্য আমাদের এ ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সাধারণ ক্রেতাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উপহারের পণ্য তুলে দেওয়ায় ওয়ালটনকে ধন্যবাদ জানান বিজয়ীরা।

কর্মকর্তারা জানান, সিজন-২৩ এর আওতায় ক্রেতারা দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম কিংবা অনলাইনে ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন ও বিএলডিসি ফ্যান কেনার পর পণ্যটির ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। এরপর ক্রেতাদের মোবাইলে ওয়ালটন থেকে উপহার পাওয়ার এসএমএস পাঠানো হচ্ছে।

পাশাপাশি ওয়ালটনের ক্রেতাদের জন্য তৈরি ‘আমার আওয়াজ’ মোবাইল অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ক্রেতাদের জন্যও এবারের ক্যাম্পেইনে বাড়তি সুবিধা রয়েছে। ২০২৬ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ওয়ালটন পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের জন্য এই বিশেষ সুবিধা থাকছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত