Ajker Patrika

দেশীয় শিল্পের জন্য একগুচ্ছ কর অব্যাহতি সুবিধা

আপডেট : ০৩ জুন ২০২১, ১৭: ৪২
দেশীয় শিল্পের জন্য একগুচ্ছ কর অব্যাহতি সুবিধা

ঢাকা: করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়;

রপ্তানিমুখী শিল্প বহুমুখীকরণ এবং তার পশ্চাদ শিল্পে প্রণোদনা; স্বাস্থ্য, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স এবং আইসিটি খাতের বিকাশ ও উন্নয়ন, ‘Ease of doing business’ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন; এবং স্থানীয় শিল্পের বিকাশ ও প্রতিরক্ষণে শুল্কহার যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব (মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর) আহরণ বৃদ্ধি– এসব বিষয় বিবেচনায় ২০২১–২২ অর্থবছরের বাজেটে আমদানি পর্যায়ের শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর সংক্রান্ত কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিদ্যমান ছয় স্তর বিশিষ্ট আমদানি শুল্ক কাঠামো (০%, ১%, ৫%, ১০%, ১৫% এবং ২৫%), সর্বোচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপিত রয়েছে এমন পণ্যের ওপর আবশ্যিকভাবে বিদ্যমান রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ এবং ১২ (বার) স্তর বিশিষ্ট সম্পূরক শুল্কহার (১০%, ২০%, ৩০%, ৪৫%, ৬০%, 100%, 150%, ২০০%, ২৫০%, ৩০০%, ৩৫০% এবং ৫০০%) আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরেও অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং আরো কিছু শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

কৃষিখাত
বাংলাদেশ এখনও কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষি আমাদের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত। কৃষিখাতের প্রধান উপকরণসমূহ, বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখা, দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রধান প্রধান খাদ্যদ্রব্যের ওপর বিদ্যমান শূন্য শতাংশ শুল্কহার অপরিবর্তিত রাখা এবং অন্যান্য নিত্যসামগ্রী আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ক-করভার স্থিতাবস্থায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দেশীয় চাষীদের প্রতিরক্ষণে গাজর ও মাশরুম আমদানিতে শুল্কহার বৃদ্ধিকরণ এবং গাজর, মাশরুম, কাঁচামরিচ, টমেটো, কমলা ও ক্যাপসিকাম এর ন্যূণতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণ করার প্রস্তাব।

কৃষি আধুনিকায়নের লক্ষ্যে কৃষি উপকরণ আমদানিতে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন সুসংহত করতে সুরক্ষা প্রদান করার প্রস্তাব।

দীর্ঘদিন যাবৎ দেশে খাবার লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড) আমদানি নিষিদ্ধ থাকলেও শিল্প লবণ (সোডিয়াম সালফেট/ডাইসোডিয়াম সালফেট) আমদানির সুযোগ রয়েছে। খাবার লবণের সঙ্গে শিল্প লবণের দামের তারতম্য অনেক বেশি হওয়ায় অপঘোষণার মাধ্যমে খাবার লবণ আমদানির প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

তাছাড়া, খাবার লবণের সঙ্গে শিল্প লবণ মিশিয়ে বাজারজাত করার অভিযোগও শোনা যায় যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের লবণ চাষী ও লবণ মিলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লবণ চাষিদের প্রতিরক্ষণ, আমদানিকৃত শিল্প লবণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে শিল্প লবণ (সোডিয়াম সালফেট/ডাইসোডিয়াম সালফেটের) আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

শিল্প খাত
বর্তমানে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে কর্মসংস্থান সৃজন ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে শিল্প খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, যথাযথ প্রতিরক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যমান শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং রপ্তানিমুখি শিল্পের বহুমুখি প্রসারের কৌশল অবলম্বনে শিল্প খাতের বিভিন্ন উপখাতের জন্য শুল্ক-কর হ্রাস/বৃদ্ধির নিম্নরূপ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২১–২২ অর্থবছরের বাজেটে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিরক্ষণে শিল্প কর্তৃক তৈরিকৃত কয়েকটি পণ্য (ফিনিশড প্রোডাক্ট) আমদানিতে প্রযোজ্য শুল্ককর বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের যন্ত্রপাতি বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে ১ শতাংশ হারে আমদানির সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বহুল ব্যবহৃত পেপারকাপ প্রস্তুতকারী শিল্পের সুরক্ষায় ওই শিল্পের প্রধান দুটি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান ও তৈরি পণ্যের ন্যূনতম শুল্কায়নযোগ্য মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া, বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন শঙ্খ শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এই শিল্পের কিছু কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

রপ্তানিমুখী শিল্প
টেক্সটাইল শিল্পকে সুরক্ষিতকরণে ফটোসেনসিটিভ রোটারি স্ক্রিন, টেমপারেচার সেন্সর এবং লোডেড পিসিবি বোর্ড রেয়াতি সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রপ্তানি বহুমুখীকরণে সম্ভাবনাময় পাদুকা শিল্পের প্রসারে এই শিল্পের দুটি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

ইস্পাতজাত বিবিধ শিল্প খাত
দেশীয় এলপি গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। আয়রন ওয়্যার শিল্পের প্রতিরক্ষণে তৈরি পণ্য আমদানিতে ৩ শতাংশ হারে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি–৩%) আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ফায়ার রেসিস্ট্যান্ট ডোর প্রস্তুতকারী শিল্পের সুরক্ষায় এই শিল্পের প্রধান কাঁচামাল (কোল্ড রোলড অব আইরন/স্টিল) আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়াও, ক্যাবল ও ইন্টারনেট ক্যাবল উৎপাদনকারী শিল্পের বিকাশে এই শিল্পের কাঁচামাল যথাক্রমে– প্লাস্টিক ফ্রেমওয়ার্ক ও কোটেড ক্যালিসয়াম কার্বোনেট আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইলেকট্রনিক্স শিল্প
ইলেকট্রনিক্স শিল্পের অনুষঙ্গ হিসেবে স্থানীয় রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের কম্প্রেসার উৎপাদনকারী শিল্পের সুরক্ষায় এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণ; ওয়াশিং মেশিন উৎপাদনকারী শিল্পের সুরক্ষায় এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি এবং টেলিভিশন প্রস্তুতকারী শিল্পের বিকাশে এই শিল্পে প্রয়োজনীয় কতিপয় কাঁচামালের ওপর রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অ্যাব্রেসিড পেপার শিল্প
শিরিষ কাগজ উৎপাদনকারী শিল্পের প্রতিরক্ষণে এই শিল্পের চারটি কাঁচামাল (আর্টিফিশিয়াল কোরানডাম, অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড, কোটেড/ইমপ্রেগন্যান্ট পেপার এবং পেপার বোর্ড,  কোটেড টেক্সটাইল ফেব্রিক্স) আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এলইডি লাইট উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী শিল্প
এলইডি লাইট উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী শিল্পের বিকাশে এই শিল্পের যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার হ্রাসের মাধ্যমে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জিপসাম বোর্ড ও পার্টিক্যাল বোর্ড প্রস্তুতকারী শিল্প
আমদানি বিকল্প দেশীয় জিপসাম বোর্ড ও পার্টিক্যাল বোর্ড প্রস্তুতকারী শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তিনটি কাঁচামাল (প্লেট/শিট/ফিল্ম/ফয়েল/ভিনাইল ক্লোরাইডের পলিমার ফিতা, সেলফ অ্যাডেসিভ টেপ, ফ্লুটিং পেপার) আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

লুব ব্লেন্ডিং শিল্প
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক রিসাইক্যালড লুব বেইজ অয়েল ও লুব্রিকেটিং অয়েল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কহার বৃদ্ধিকরণ, রাজস্ব ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে লব্রিকেটিং অয়েল–এর সঙ্গে প্যারাফিনের শুল্কহার যৌক্তিকীকরণ এবং লুব ব্লেন্ডিং শিল্পের সুরক্ষায় এর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত অ্যাডিটিভের শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইসিটি খাত
দেশীয় কম্পিউটার/ল্যাপটপ ও আইসিটি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষণে কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও আইসিটি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইএমইডির নভেম্বর মাসের প্রতিবেদন

এডিপি বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা

  • পাঁচ মাসেই ব্যয় কমেছে ৬ হাজার কোটি।
  • শুধু নভেম্বরে ব্যয় কমেছে ৪ হাজার কোটি।
  • সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট।
  • নির্বাচন ইস্যুতে প্রকল্পের গতি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এডিপি বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আশঙ্কাজনকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন প্রত্যাশার তুলনায় অনেক পিছিয়ে, তেমনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সমন্বয় ঘাটতি, প্রশাসনিক টানাপোড়েন ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বড় হলেও বাস্তব অগ্রগতি একেবারেই হতাশাজনক।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের মাত্র ১১.৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় ছিল ৩৪ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় পিছিয়ে আছে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প যেন এগোচ্ছেই না। সরকারি তহবিল, বৈদেশিক সহায়তা ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন—প্রকল্প বাস্তবায়নে উন্নয়ন ব্যয়ের এ তিন উৎসের প্রতিটিতেই যেন মন্থরতা লক্ষণীয়।

শুধু অর্থবছরের সার্বিক পরিস্থিতিই নয়, এডিপির মাসওয়ারি অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বর মাসের তথ্য আরও চিন্তার। এই এক মাসে বাস্তবায়ন হয়েছে ৮ হাজার ১৬৫ কোটি টাকার মতো, যেখানে আগের বছরের নভেম্বরেই ব্যয় ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এক মাসেই ব্যয় কমে গেছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতির হার মাত্র ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধীরগতি কোনো স্বাভাবিক মৌসুমি প্রবণতা নয়; বরং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ভেতরে জমে থাকা নানা অচলাবস্থার ফল।

প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব, টেন্ডারপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়া, দক্ষ ঠিকাদারের অভাব, মাঠপর্যায়ে প্রকৌশল বিভাগগুলোর সংকোচন—এসব মিলেই উন্নয়ন ব্যয় জমে থাকছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে তৈরি হওয়া মন্থরতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধা। আইএমইডি কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়ে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো একধরনের অচল অবস্থায় ছিল, যার ধাক্কা এখনো পুরোপুরি কাটেনি।

মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ব্যয়ে বৈষম্যও স্পষ্ট। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও সংসদবিষয়ক সচিবালয় মন্ত্রণালয় পাঁচ মাসে এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। কিছু বিভাগ অগ্রগতি দেখালেও, তা সমগ্র চিত্র বদলে দেওয়ার মতো নয়। বিপরীতে খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ১৩২.৭৮ শতাংশ ব্যয় করেছে, যা বরাদ্দের চেয়েও বেশি ব্যয়—এটি চলমান প্রকল্পগুলোর প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আইএমইডির মতে, প্রকৃত ব্যয় ও আর্থিক প্রতিবেদনের মধ্যকার এ ধরনের ব্যবধান ভবিষ্যতে প্রকল্প মূল্যায়নকে আরও জটিল করে তুলবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলছেন, ‘বাস্তবায়নের হার স্পষ্টতই কম। শুধু সংখ্যা নয়, কেন এই অবস্থা, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, সামনের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন থাকায় ব্যবস্থাপনায় আরও ধীরতা দেখা দিতে পারে। ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মুস্তফা কে মুজেরী এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্থবছরের শুরুতে সাধারণত কিছুটা ধীরতা দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। নির্বাচনকালীন প্রশাসন সাধারণত ঝুঁকিনির্ভর হয় না, ফলে প্রকল্পের গতি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

সব মিলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রশাসনিক দ্বিধা এবং মাঠপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণহীনতা মিলিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন যে পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, তা দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন খুব কঠিন—এমনটি ধারণা করা হচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের ভেতরেও।

চলতি অর্থবছরে এডিপি বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম পাঁচ মাসে যে গতি দেখা গেছে, তাতে বছরের শেষে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন আদৌ সম্ভব হবে কি না, সে প্রশ্ন এখন আরও তীব্র হয়ে উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডলারের বিপরীতে রুপির আরও দরপতন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতীয় রুপি ও মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহিত
ভারতীয় রুপি ও মার্কিন ডলার। ছবি: সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান আরও ২৩ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ০১-এ পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে এখন পর্যন্ত এটিই রুপির সর্বনিম্ন দর। ধারাবাহিক বিদেশি তহবিলের প্রস্থান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় স্থবিরতা এবং স্থায়ী ডলার ক্রয়কে এই পতনের মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দিনের শুরুতে রুপি ৩৬ পয়সা কমে ৯১ দশমিক ১৪-এ পৌঁছায়, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন, পরে সামান্য পুনরুদ্ধার হয়। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে এবং ডলারের শক্তি কিছুটা কমেছে, তারপরও রুপির পতন অব্যাহত রয়েছে।

গত ১০টি লেনদেনের দিনে রুপি ৯০ থেকে ৯১-এর মধ্যে ওঠানামা করেছে। শুধু গত পাঁচ দিনে রুপির মান ডলারের তুলনায় ১ শতাংশ কমেছে। মুদ্রা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম চলতি মাসে ৯২ ছাড়িয়ে যাবে।  

আজ মঙ্গলবার আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা রুপি ৯০ দশমিক ৮৭ থেকে লেনদেন শুরু হয়। পরে ৯০ দশমিক ৭৬ থেকে ৯১ দশমিক ১৪-এর মধ্যে ওঠানামা করে। শেষে ৯১ দশমিক ০১-এ বন্ধ হয়। গত সোমবার রুপি ৯০ দশমিক ৭৮-এ বন্ধ হয়েছিল, যা আগের দিনের তুলনায় ২৯ পয়সা কম।

ফিনরেক্স ট্রেজারি অ্যাডভাইজার্সের হেড অব ট্রেজারি অনিল কুমার বানসালি বলেন, ‘ডলারের ক্রয় অব্যাহত থাকায় রুপি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের নতুন বাণিজ্য প্রস্তাব মেনে না নেওয়ায় চুক্তি স্থগিত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের আবেদন করল পেপ্যাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৬
যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের আবেদন করল পেপ্যাল

ডিজিটাল পেমেন্ট কোম্পানি পেপ্যাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এটি পেপ্যাল ব্যাংক তৈরি করার জন্য ইউটাহ ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে আবেদন জমা দিয়েছে।

পেপ্যালের প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স ক্রিস বলেন, ‘পুঁজির নিরাপত্তা ছোট ব্যবসাগুলোর বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা। পেপ্যাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা ছোট ব্যবসার উন্নয়ন এবং মার্কিন অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব।’

১৯৯৮ সালে ইলন মাস্ক ও পিটার থিয়েল পেপ্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ৪ লাখ ২০ হাজারের বেশি গ্রাহককে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে। মার্কিন ব্যাংকিং লাইসেন্স পাওয়ার পর কোম্পানি তৃতীয় পক্ষের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে গ্রাহকের আমানতকে ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশনে বিমার আওতায় আনতে পারবে।

পেপ্যালের আবেদন এসেছে এমন সময়ে, যখন একাধিক ক্রিপ্টো কোম্পানি এবং নিওব্যাংক এই বছরে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি সুবিধা নিয়ে নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং খাতে প্রবেশের সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করছে। এ বছরের মধ্যে নুবাঙ্ক, কয়েনবেসসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চার্টারের জন্য আবেদন করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনার দাম ভরিতে ১৪৭০ টাকা বাড়ল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের বাজারে সোনার দাম আরও বাড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭০ টাকা। এতে এক ভরি সোনার দাম ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ৩ হাজার ৪৪২ টাকা এবং ১২ ডিসেম্বর ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম বাড়ানো হয় ১ হাজার ৫০ টাকা। এই দাম বাড়ানোর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে এখন আবার দাম বাড়ানো হলো।

এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৬৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ৪১১ টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৭ হাজার ২১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ১ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ১ হাজার ৬৩ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা।

বিষয়:

দামসোনা
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন ভারতীয় নারী, গ্রিন কার্ড সাক্ষাৎকারে গিয়ে আটক

পাকিস্তানি বলে গুঞ্জন—বন্ডাই বিচের হামলাকারীরা আসলে ভারতীয়

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

বিজয় দিবসে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা

মুজিব বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়া ২৫ মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্র্যাকডাউন: জামায়াত নেতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত