Ajker Patrika

অর্থনীতি টেনে তোলাই চ্যালেঞ্জ

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
অর্থনীতি টেনে তোলাই চ্যালেঞ্জ

দেশের অর্থনীতি প্রায় ভঙ্গুর। ঋণখেলাপিতে বিপর্যস্ত ব্যাংক খাত। ডলার-সংকটে রিজার্ভ কমতে কমতে তলানিতে। পাহাড়সম বিদেশি ঋণ। রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ভাটার টান। গতিহীন রাজস্ব আয়। জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক দামে মূল্যস্ফীতিও লাগামহীন। ছাত্র-জনতার আকস্মিক গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৫ বছরের শাসনামল শেষে এমনই ফোকলা অর্থনীতি সামলানোর ভার এসে পড়েছে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন ড. ইউনূস সরকারের ওপর। আন্দোলন, জ্বালাও-পোড়াওয়ের পর এখন মন্দা অর্থনীতিকে টেনে তোলার চ্যালেঞ্জই বড় হয়ে আসছে সামনে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনীতিকে ঠিক জায়গায় আনতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে হবে। তা না হলে অর্থনীতিতে আরও খারাপের ঝুঁকি রয়েছে। অবশ্য উদ্যোক্তারা তড়িঘড়ি না করে নতুন সরকারকে সময় দেওয়ার পক্ষে। 

সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে জানা যায়, একসময় ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে উঠে যাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবহারযোগ্য নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্ত এটা ধরে রাখতে পারেনি। সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসেই রিজার্ভ কমেছে ১৩০ কোটি ডলার। দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন গভর্নরের অন্যতম চ্যালেঞ্জই হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়িয়ে আমদানি সহজলভ্য করা, যাতে বিনিয়োগ বাড়ে, উৎপাদন খাত চাঙা হয় ও মানুষের কর্মসংস্থানে গতি আসে।

ডলার বাড়ানোর বড় খাত রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাটার টান চলছে। দেশে ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স আসে জুলাইয়ে। জুনের তুলনায় গত মাসে ৬৩ কোটি ডলার বা প্রায় ২৫ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে। এখন নতুন সরকারের বড় দায়িত্ব হয়ে পড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহকে স্বাভাবিক করে রিজার্ভের মজুত বাড়ানো। 

সাম্প্রতিক সহিংস রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইমেজ সংকট তৈরি হওয়ার কারণে কয়েক মাস ধরেই পোশাকের ক্রয়াদেশ কমছে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই পোশাক রপ্তানিতে ইমেজ সংকট পুনরুদ্ধারসহ নতুন বাজারের প্রসার ঘটানোই হবে চ্যালেঞ্জ।

নিট পোশাক খাতের উদ্যোক্তা ও বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। কারণ, অর্থনীতিতে এতগুলো সংকট সহসাই তাঁরা সমাধান করতে পারবেন, এমন আশা করা ঠিক হবে না। আমার প্রত্যাশা হলো, সরকার যেন ধীরেসুস্থে কাজগুলো করে। গত এক মাসে আমাদের ইমেজের ক্ষতি হয়েছে। এটা মেরামত করতে হবে।’

আগের সরকার গত ১৫ বছরে বিদেশি ঋণ করেছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি। দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া সুদে-আসলে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার পাহাড়সমান সরকারি ঋণ নতুন সরকারের ঘাড়ে এসে পড়ছে। এই ঋণ অন্তর্বর্তী সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

গত ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি হরিলুটের শিকার হয়েছে ব্যাংক খাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা ছিল। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর অপর চ্যালেঞ্জই হলো এই খাতে সুশাসন ফেরানো। 

আগের সরকারের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ ছিল জিনিসপত্রের লাগামহীন দামের বিষয়টি। বছরজুড়ে প্রায় ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ অনেকটাই পিষ্ট। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, এমন অবস্থায় মানুষের চাওয়া পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা। 

কয়েক বছর ধরে অর্থনীতির গতিহীনতার জন্য সরকারের রাজস্ব আদায়েও গতি ছিল না। ফলে প্রতিবছরই উচ্চ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বড় ঘাটতি পড়ে। সর্বশেষ বিদায়ী অর্থবছরেও কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি আগের সরকার। ফলে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি পড়ে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থনীতিতে যেভাবে সংকট বাড়ছে, সে সময়ে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় না বাড়লে দায়দেনার পরিমাণ আরও বাড়বে। তখন নতুন সরকারকেও দেশ পরিচালনা ও বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দেশি-বিদেশি উৎসের কাছে হাত পাততে হবে। 

নতুন সরকারের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে সংঘাত ও সহিংসতা বন্ধ করে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সবার মধ্যে আস্থা ফেরানো। এরপর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা। কারণ, সরকার যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে আমাদের কপালে কিন্তু আরও খারাপ আছে। আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে গেছে। ব্যবসায় আক্রমণ ও দখলদারি আছে। নতুনরা সক্রিয় হচ্ছে। এগুলো কত দ্রুত থামানো যাবে, সেটা দেখতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিটিআরসির সামনের সড়ক অবরোধ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রক্রিয়ার সংস্কার, বাজারে একচেটিয়া সিন্ডিকেট বিলোপ এবং সবার জন্য মোবাইল ফোন আমদানির উন্মুক্ত সুযোগ সৃষ্টির দাবিতে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা।

আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’ (এমবিসিবি)-এর ব্যানারে ব্যবসায়ীরা বিটিআরসি ভবনের সামনে জড়ো হন। এই অবরোধের ফলে সড়কের একপাশের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে, যার জেরে ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

বিক্ষোভকারী মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, তাঁরা কোনোভাবেই এনইআইআর ব্যবস্থা চালুর বিরোধী নন। তবে এই ব্যবস্থার সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। তাঁদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

এনইআইআর সংস্কার: দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার ৭০ শতাংশের বেশি মার্কেট শেয়ার যাদের হাতে, শুধু তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সব ব্যবসায়ীর সঙ্গে বসে আলোচনা করে এনইআইআর চালু করা।

ন্যায্য করনীতি: মুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে ন্যায্য করনীতি প্রণয়ন।

সিন্ডিকেট বিলোপ: একচেটিয়া সিন্ডিকেট প্রথা বিলোপ করে বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করেন, এই প্রক্রিয়ার কিছু সংস্কার, ন্যায্য করনীতি প্রণয়ন, একচেটিয়া সিন্ডিকেট বিলোপ এবং মুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে তাঁদের কিছু দাবি ও প্রস্তাব রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে তাঁরা তাঁদের ব্যাখ্যা জানাতে চেয়েছেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিশাল সংখ্যক ব্যবসায়ীর কথা না শুনেই একতরফা এনইআইআর চালু করতে যাচ্ছে।

রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় বিটিআরসির সামনে সড়ক অবরোধ করেন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এমবিসিবির সহসভাপতি শামীম মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা নিয়মের মধ্যে থেকেই ব্যবসা করতে চাই। আমাদের বঞ্চিত করে একটি গোষ্ঠীর হাতে সম্পূর্ণ ব্যবসা তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে, আমরা এর অবসান চাই। যদি আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তবে আমাদের আন্দোলন আরও কঠোর হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রণোদনায় বাড়ছে তুলা চাষ

জাহিদ হাসান, যশোর 
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২০
তুলা চাষ এখন অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এতে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। যশোরের ঝিকরগাছার রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তুলা চাষ এখন অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় এতে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের। যশোরের ঝিকরগাছার রঘুনাথপুর গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে পোশাকশিল্প এখনো রপ্তানি আয়ের প্রধান ভিত্তি; অথচ সেই শিল্পের কাঁচামাল তুলার প্রায় ২ শতাংশ উৎপাদিত হয় দেশে। বছরে ৮৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা থাকলেও উৎপাদিত হয় মাত্র ২ লাখ বেল, ফলে বাকি চাহিদা আমদানির ওপরই নির্ভরশীল। এই আমদানি চাপ কমাতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে সরকার তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সারা দেশে ১৩টি জোনে চাষ সম্প্রসারণ, আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ, কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রণোদনা নিশ্চিত করার কার্যক্রম জোরদার করেছে। কৃষিজমি কমলেও তুলা চাষের জমি, উৎপাদন ও চাষির সংখ্যা যে বাড়ছে, তা এসব উদ্যোগের বাস্তব অগ্রগতি ফুটিয়ে তোলে।

কৃষকেরা বলছেন, তুলা চাষ এখন অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে লাভজনক। প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে ১৪ থেকে ১৮ হাজার টাকা, কিন্তু লাভ হয় তিন-চার গুণ। বড় সুবিধা হলো, তুলা খেতেই বিক্রি হয়ে যায়। পাশাপাশি তুলার সঙ্গে আন্তফসল হিসেবে বেগুন, মুলা, হলুদসহ নানা শাকসবজি চাষ করে মৌসুমে অতিরিক্ত আয় করা যায়। এসব ফসল সারির ফাঁকে বেড়ে ওঠায় আলাদা জমি বা অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়োজন হয় না, বরং এক মৌসুমে দ্বিগুণ আয়ের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে তুলা চাষে কৃষকের আগ্রহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়ছে।

বর্তমানে দেশে চর কটন, হিল কটন, আপল্যান্ড কটন এবং বরেন্দ্র অঞ্চলে উপযোগী ড্রাউট কটন—এই চার ধরনের তুলার চাষ হচ্ছে। প্রতিটি অঞ্চলের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী জাত উন্নয়ন, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় রয়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন ব্যাহত না করে ২০৪০ সালের মধ্যে তুলা চাষের পরিমাণ ২ লাখ হেক্টরে উন্নীত করা, চাষির সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখে তোলা এবং বছরে ১৫ লাখ ৮০ হাজার বেল উৎপাদন অর্জন করা।

এই জাতীয় পরিকল্পনার সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্র যশোর জোন; যেখানে যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা মিলিয়ে এই মৌসুমে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। শুধু এ জোনেই ১৩ হাজার কৃষক তুলা চাষে যুক্ত, আর ২ হাজার ৬০০ কৃষকের কাছে পৌঁছেছে প্রণোদনার বীজ, সার, কীটনাশক ও প্রশিক্ষণ। চলতি মৌসুমে সারা দেশে ১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সরকারনির্ধারিত মণপ্রতি চার হাজার টাকা দাম নিয়ে কৃষকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ঝিকরগাছার তুলাচাষি শহিদুল ইসলাম মনে করেন, দীর্ঘ চাষচক্র বিবেচনায় দাম আরও বাড়ানো দরকার।

যশোর জোনের তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, এই অঞ্চলে চাষির সংখ্যা ১৫ হাজারে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে এবং ফলনও দ্রুত বাড়ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমীন বলেন, সারা দেশে বর্তমানে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা চাষ হচ্ছে। এতে যুক্ত আছেন ৭৪ হাজার কৃষক, আর প্রণোদনা পেয়েছেন ২১ হাজার। উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার বেল; পরের মৌসুমে তা ৫০ হাজার হেক্টরে আড়াই লাখ বেলে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

তুলাবীজ থেকে ভোজ্যতেল এবং অয়েল কেক উৎপাদনের মাধ্যমে শিল্প খাতেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সরকারি কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক এ এস এম গোলাম হাফিজ মনে করেন, তুলা চাষের জন্য আলাদা ঋণব্যবস্থা চালু হলে উৎপাদন ও আবাদ—দুটোই দ্রুত বাড়বে। সরকারের বর্তমান উদ্যোগ এবং কৃষকের বাড়তি আগ্রহ ভবিষ্যতে দেশের তুলা উৎপাদনকে আমদানিনির্ভরতা কমানোর বাস্তব সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লভ্যাংশ নেবেন না ৩৯ কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
লভ্যাংশ নেবেন না ৩৯ কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক

২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৯টি কোম্পানি শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তা, পরিচালকদের বড় বিনিয়োগ থাকলেও এবারের লভ্যাংশ থেকে তাঁরা নিজেদের অংশ নেবেন না।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারে আস্থা ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।

তবে অনেকেই মনে করেন, কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পরিচালকেরা লভ্যাংশ না নেওয়ার পেছনে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি জড়িত থাকতে পারে।

বিনিয়োগকারী ও বাজারসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, উদ্যোক্তা, পরিচালকেরা তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে নানা সুবিধা ভোগ করেন। গৃহস্থালি খরচ, বাজার, কর্মচারী বা বুয়ার বেতনসহ বিভিন্ন ব্যয় প্রতিষ্ঠান বহন করে থাকে। ফলে লভ্যাংশ না নেওয়ার বিষয়টি তাঁদের জন্য বড় ত্যাগ নয়; অন্য সুবিধা থেকেই তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।

ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, বাধ্যবাধকতা না থাকলে অনেক কোম্পানি হয়তো নগদ লভ্যাংশই দিত না। শুধু বোনাস দিয়ে ক্যাটাগরি বজায় রাখার চেষ্টা করত।

বর্তমানে লভ্যাংশ ঘোষণায় নগদ দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। কৃত্রিমভাবে মুনাফা বাড়িয়ে বোনাস শেয়ার দেওয়া গেলেও নগদ দেওয়ার সুযোগ কম। এ কারণে সক্ষমতার অভাব থাকা অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এক কোম্পানির সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেক কোম্পানির মালিকপক্ষ নিজেরাই শেয়ারের ব্যবসা করেন। বাস্তবে মুনাফা কম হলেও আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় তা বেশি দেখান। ফলে হিসাব অনুযায়ী লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা দেখা গেলেও বাস্তবে তা থাকে না। তাই উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বাদ দিয়ে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেওয়া হয়।

শীর্ষ পাঁচের কে কত লভ্যাংশ দেবে

সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ওরিয়ন ইনফিউশন। ১ টাকা ৭১ পয়সা ইপিএসের বিপরীতে কোম্পানি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দেবে ২০ শতাংশ বা ২ টাকা। অর্থাৎ ইপিএসের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেবে। বাকি টাকা রিজার্ভ থেকে দেওয়া হবে।

সোনালি লাইফের ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৭৩ পয়সা। কোম্পানি লভ্যাংশ দেবে ১৫ শতাংশ বা ১ টাকা ৫০ পয়সা।

নাভানা ফার্মা মুনাফার বড় একটা অংশ কোম্পানিতে রেখে দিতে চায়। কোম্পানির ইপিএস হয়েছে সাড়ে ৪ টাকা; কিন্তু লভ্যাংশ দেবে ১৪ শতাংশ বা ১ টাকা ৪০ পয়সা করে।

ফাইন ফুডসও মুনাফার বড় একটা অংশ রিজার্ভে রাখতে চায়। ৪ টাকা ১৮ পয়সা ইপিএসের বিপরীতে লভ্যাংশ দেবে ১৪ শতাংশ বা ১ টাকা ৪০ পয়সা।

এমকে ফুটওয়্যার ১ টাকা ৮৩ পয়সার বিপরীতে ১২ শতাংশ বা ১ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দেবে। এ ছাড়া ৩৪টি কোম্পানি কেবল শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, লভ্যাংশ ঘোষণার এখতিয়ার কোম্পানির নিজের। আইনের বরখেলাপ না হলে এবং বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাম কমাতে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামীকাল রোববার থেকে আমদানিকারকেরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে আমদানির অনুমতিপত্র (আইপি) নিতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত তিন দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে খুচরা ও পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২৫-৩০ টাকা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

আজ শনিবার অনলাইনে এক জরুরি বৈঠক করে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে দুই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে কৃষিসচিব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংকে আইপি দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।

এই উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ বৈঠকের পর আমাদের আইপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মোট ৫০ জন আমদানিকারককে আইপি দেওয়া হবে। প্রতিজন ৩০ টন করে আমদানি করতে পারবে। সাধারণত আমদানি করতে তিন মাস সময় পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা রোববার সকাল ১০টায় সার্ভার খুলে দেব। তারপর ৫০ জন হলে আবার সার্ভার বন্ধ করে দেব। অনেকটা ট্রেনের টিকিটের মতো। আমাদের কাছে সাড়ে তিন হাজার আবেদন ছিল। যা আমরা ফেরত দিয়েছিলাম। মূলত তাদের মধ্য থেকেই এই আবেদন নেওয়া হবে।’

গত নভেম্বরের শুরুতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ে। ওই সময় এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৮০-৯০ টাকার পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় ওঠে।

তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করার কথা জানিয়েছিল। এরপর কিছুটা কমে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষি মন্ত্রণালয়ের আপত্তির মুখে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত