Ajker Patrika

জাপান, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

রেজাউর রহিম, ঢাকা 
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৪১
জাপান, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

উন্নত দেশ জাপান, কানাডা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং দেশগুলোতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধিতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সম্পাদন করছে সরকার। এই দেশগুলোর সঙ্গে এফটিএ সম্পাদনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দ্বিপক্ষীয় এফটিএ দ্রুত সম্পাদন করতে এরই মধ্যে জাপান, কানাডা ও সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের সঙ্গে একমত হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালের প্রথম দিকেই এই দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ সই হবে।

এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে বেশ আগে থেকেই জাপান, কানাডা ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বাংলাদেশের এফটিএ সম্পাদনের আলোচনা চলছিল। সম্প্রতি এই দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই দেশগুলোর সঙ্গে আগামী বছরের প্রথম দিকেই এফটিএ চুক্তি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। চুক্তি সম্পন্ন হলে এসব দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি অনেকাংশে দূর হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র জাপান গুরুত্বপূর্ণ সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়ার পরই বৈদেশিক বিনিয়োগের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ জাপান। পাশাপাশি জাপান বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রপ্তানি বাজারও। এ ছাড়া মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পেও জাপান বাংলাদেশকে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। আর নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রায় ১ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশে শ্রম তুলামূলক সস্তা হওয়ায় অনেক জাপানি বিনিয়োগকারী তাদের বৈদেশিক শাখা চীন, ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশে স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ জাপানে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র, চামড়াজাত পণ্য ও চিংড়ি রপ্তানি করে। অন্যদিকে জাপান থেকে বাংলাদেশ মোটর গাড়ি, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানি করে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান।

এদিকে স্বাধীনতার পর থেকেই সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী। দেশটিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের বাজার রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের কৃষি খাত, ফুড প্রসেসিং, আইটি, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। আর উত্তর আমেরিকার সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ কানাডা থেকে বাংলাদেশ মূলত খাদ্যশস্য গম, তেলবীজ ও ডাল আমদানি করে। দেশটি থেকে ২০২০ সালে ১১২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিভিন্ন খাদ্যশস্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আর কানাডায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন চামড়াজাত পণ্য ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়। তবে উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই হলে এই দেশগুলোতে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্য প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। এত রপ্তানি বাড়বে, যা বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে বড় ভূমিকা রাখবে।

এই দেশগুলো ছাড়াও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্য কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ সম্পাদনের জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। দেশগুলো হলো—দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট মারকোসুরভুক্ত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে। এ ছাড়া থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, চীন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিশ্বের ১৯৮টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। এর মধ্যে ৭১টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। মূলত বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া আরও ৪৩টি দেশের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করছে সরকার। পরে এসব দেশের সঙ্গে এফটিএ বা পিটিএ করা যায় কি না, সেই সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ শাখাকে শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

  • ৩৩ মাস অব্যবহৃত পড়ে ছিল ফান্ডের অর্থ
  • অভিযুক্ত কর্মকর্তা আগাম স্বেচ্ছা অবসরে
  • দায়িত্বে অবহেলায় জরিমানা ১ লাখ টাকা
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের গ্র্যাচুইটি ফান্ড: কর্মকর্তার অবহেলায় ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি

দেশের একমাত্র গাড়ি প্রস্তুত ও সংযোজনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি ফান্ড ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘ ৩৩ মাসের অবহেলায় অন্তত ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অথচ এই ক্ষতির দায়ে তদারকি কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সামান্য দণ্ডে দায় নিষ্পত্তির ঘটনা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশ্ন ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

ফান্ড দেখভালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললেও তিনি শর্তসাপেক্ষে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে দায়িত্বমুক্ত হয়েছেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর অবসর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তিনি গত ৩১ আগস্ট থেকে আগাম অবসরে যান। ২১ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) কাছে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করেন এবং তাঁর অবসর মঞ্জুর করা হয়।

এ বিষয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, আমি প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্টের সদস্য নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফান্ডের দেখভাল করেছি। ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর ভুলবশত তা রিনিউ করা হয়নি। দোষটা আসলে ব্যাংকের, বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। সে কারণে আমরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

জসিম উদ্দিন আরও বলেন, গ্র্যাচুইটি ফান্ড পরিচালনার পূর্ণ দায় ট্রাস্টি বোর্ডের সাত সদস্যের। তারপরও আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে, আমি তা মোকাবিলা করেছি এবং ১ লাখ টাকা জরিমানাও গুনেছি। এটি অনিচ্ছাকৃত একটি ভুল।

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রে জানা যায়, কর্মচারীদের জন্য গঠিত ‘প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এমপ্লয়িজ গ্র্যাচুইটি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর ২ কোটি টাকা ২০১২ সালের ২৪ জুলাই জনতা ব্যাংকের শেখ মুজিব রোড (আগ্রাবাদ) শাখায় ডাবল বেনিফিট স্কিমে জমা রাখা হয়। ছয় বছর মেয়াদি এ স্কিমে সুদের হার ছিল ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই সুদে-আসলে টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩৩ মাস ওই অর্থ একইভাবে ব্যাংকে পড়ে থাকে। এ সময়ে না প্রগতি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়, না ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ফান্ডের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। এতে সম্ভাব্য মুনাফা হারিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয় ৯৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

ঘটনাটি ধরা পড়ার পর ফান্ড তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। ২০২৩ সালের ১ মার্চ দেওয়া তাঁর ব্যাখ্যা কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। পরবর্তী সময়ে ১১ এপ্রিল প্রগতির তিন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় প্রশাসনিক প্রধান মো. নুর হোসেন। সদস্য হিসেবে ছিলেন সহপ্রধান হিসাবরক্ষক গোলাম রাব্বি মোহাম্মদ সাদাত হোসেন এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার।

তদন্ত কমিটির সুপারিশে জনতা ব্যাংকের কাছে ৩৩ মাসের মুনাফা দাবি করা হয়। দেনদরবারের পর ব্যাংক সঞ্চয়ী বেনিফিটের আওতায় ২৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। জসিম উদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার ১ লাখ টাকা যোগ করে মোট উদ্ধার হয় ২৯ লাখ টাকা। ফলে এখনো অনাদায়ী থেকে যায় ৬৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬১০ টাকা।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ব্যবস্থাপক মো. সানাউল্লাহ বলেন, ডাবল বেনিফিট স্কিমের মেয়াদ শেষে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নবায়ন হয় না। এ কারণে ওই সময়ের বেনিফিট পাওয়ার সুযোগ ছিল না। ২৮ লাখ টাকা পরিশোধের বিষয়ে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁর আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপকের সময়কার সিদ্ধান্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিসিআইয়ের সাধারণ সভা: ভ্যাট ও করকাঠামো যুক্তিসংগত করার দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে ভ্যাট ও করকাঠামোকে আরও যুক্তিসংগত করার দাবি তুলেছে দেশীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে যুক্ত উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। পাশাপাশি, সকল শিল্প এলাকায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকে নিরবচ্ছিন্ন ও টেকসই করতে আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে উৎপাদন কার্যক্রম বাধাহীনভাবে চলতে পারে।

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় তাঁরা বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, শিল্পের প্রতিযোগিতা বজায় রাখা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া অত্যাবশ্যক।

সভায় বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশের উৎপাদনশীল শিল্পকে শক্তিশালী রাখতে সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখা, সুষ্ঠু উৎপাদন ও কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মসৃণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। আয়বৈষম্য কমানো এবং টেকসই এমএসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য সরকার, শিক্ষাবিদ ও শিল্পের যৌথ উদ্যোগ অপরিহার্য। বিসিআই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে শিল্পের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে, যাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, শিল্প প্রতিযোগিতামূলক থাকে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।

সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভ্যাট ও করকাঠামো সহজ, উদ্যোক্তাবান্ধব ও উৎপাদন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে লক্ষ্য করেই তৈরি হওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, পণ্য টেস্টিং এবং সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উদ্যোক্তাবান্ধব করা, নতুন উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপের সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এসব পদক্ষেপ দেশীয় শিল্পে নতুন বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে, উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতা ধরে রাখবে।

সভায় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করা হয় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এবং সাবেক সভাপতি এ টি এম ওয়াজিউল্লাহর জন্য। এক মিনিট নীরবতা পালন করে তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। সভা পরিচালনা করেন বিসিআই সেক্রেটারি জেনারেল ড. মো. হেলাল উদ্দিন। সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী, বিগত ৩৮তম সাধারণ সভার কার্যবিবরণী অনুমোদন করা হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বিসিআই কার্যক্রম ও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য অডিটেড হিসাব অনুমোদন এবং নতুন অডিটর নিয়োগের বিষয়ও অনুমোদিত হয়। সভায় অংশ নেন বিসিআই সদস্য ও সাবেক নেতা শাহেদুল ইসলামসহ অন্য সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৫
ব্যাংকিং খাতে সঞ্চিতির সংকট: সুরক্ষা ঝুঁকিতে গ্রাহকের আমানত

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের যে আশঙ্কাজনক উত্থান ঘটেছে, তার সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব পড়ছে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায়। নিরাপত্তা সঞ্চিতির (প্রভিশন) বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার সুরক্ষাকাঠামোই কার্যত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ঘাটতি অব্যাহত থাকলে ব্যাংকিং খাতের সংকট কেবল সংখ্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং এর প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়বে সাধারণ গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষার ওপর, যা দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকির বার্তা দিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ২৪টি ব্যাংকে প্রয়োজনীয় সঞ্চিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। বিপরীতে এসব ব্যাংক রাখতে পেরেছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। এতে সম্মিলিত সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা।

এক বছর আগের সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা (২ লাখ ৯৩ হাজার ৮২৩ কোটি)। ব্যাংকিং খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, এই প্রবণতা স্বাভাবিক কোনো আর্থিক চক্রের ফল নয়; এটি দীর্ঘদিন ধরে আড়াল করে রাখা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রকৃত চিত্র সামনে আসার পরিণতি।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পালাবদলের পর ব্যাংকিং খাতে পুনর্গঠিত, পুনঃ তফসিলকৃত, অবলোপনকৃত ও আদালতে আটকে থাকা ঋণসহ মোট ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। বর্তমানে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের মোট অঙ্ক প্রায় সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা এবং মন্দমানের কুঋণ ৫ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি মানে সরাসরি আমানতকারীর ঝুঁকি। তাঁর মতে, গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রভিশন রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ব্যাংক এমন অবস্থায় আছে, তারা ন্যূনতম সঞ্চিতিও গড়ে তুলতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে সময়মতো প্রভিশন না রাখতে পারলে সেই ব্যাংকের ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ হওয়া উচিত।

ব্যাংকিং বিধি অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণির ঋণের বিপরীতে শূন্য দশমিক ৫ থেকে ৫ শতাংশ, নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা লোকসান শ্রেণির খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা, কম আমানত প্রবৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আর্থিক সংকটে ব্যাংকগুলোর সেই সক্ষমতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের দ্রুত বৃদ্ধিই প্রভিশন ঘাটতির মূল কারণ। সরকারের পালাবদলের পর এসব ঝুঁকি প্রকাশ্যে আসায় ব্যাংকিং খাতের ভেতরের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ডাইনামিক প্রভিশনিং চালুর পরিকল্পনা নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, এই ডাইনামিক প্রভিশনিং চালু হলে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়বে, মূলধনের চাপ কমবে এবং কুঋণ হ্রাস পেলে প্রভিশন ঘাটতিও কমে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেবিএস হোল্ডিংসের ফ্ল্যাট কিনলে বিশেষ ছাড় পাবেন প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
প্রাইম ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

প্রাইম ব্যাংক পিএলসি দেশের শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।

সম্প্রতি জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই অংশীদারত্বের আওতায় প্রাইম ব্যাংকের গ্রাহকেরা জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেড থেকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা পাবেন, যা তাঁদের দেশের প্রিমিয়াম রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ আরও সহজলভ্য করবে।

চুক্তিতে প্রাইম ব্যাংকের পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব ব্রাঞ্চ ডিস্ট্রিবিউশন মামুর আহমেদ এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের পক্ষে ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুল হক।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেটস জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল এবং জেবিএস হোল্ডিংস লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) মো. বেলায়েত হোসেনসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের লাইফস্টাইলভিত্তিক মানসম্পন্ন সেবা ও আর্থিক সমাধান প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, যা গ্রাহকদের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাগেরহাটের চারটি আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

ধর্ষণের অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর, থানায় মামলা

বন্ধু ট্রাম্পকে খুশি করতে মোদির ‘শান্তি’ বিল পাস, বিরোধীদের সমালোচনা

দিপুকে হত্যার পর ঝুলিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

জুলাইকে দক্ষিণপন্থী ভাবাদর্শ বানাতে উঠেপড়ে লেগেছে নব্য ফ্যাসিবাদী শক্তি: উদীচী

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত