Ajker Patrika

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গভর্নর

হাসিনা আমলে গোয়েন্দা সংস্থার বন্দুকের মুখে ব্যাংক দখল, পাচার ২ লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: ফাইল ছবি

শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে ব্যাংক খাত থেকে ২ লাখ কোটি টাকা বা ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। এমন তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান এই মনসুর বলেন, দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো দখলে নিতে সহায়তা করেছিল।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এর কয়েক দিন পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। পরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দেয়।

আহসান এইচ মনসুর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, ব্যাংকগুলো দখল করার পর সেগুলোর নিয়ন্ত্রকেরা তাদের বাছাই নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ দেওয়া এবং আমদানি চালানে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের (ওভার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এটি ব্যাংক লুটের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটেনি এবং এটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে; গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকগুলোর তৎকালীন প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটি সম্ভব হতো না।’

গভর্নর আরও বলেন, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তাঁর সহযোগীরা ব্যাংক খাত থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘ধাপে ধাপে চুরি’ করেছেন। ‘তাঁরা প্রতিদিন নিজেরা নিজেদের ঋণ দিয়েছেন’—বলেন আহসান এইচ মনসুর।

তবে সাইফুল আলম ও এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা মার্কিন আইন প্রতিষ্ঠান ‘কুইন ইমানুয়েল উরকুয়ার্ট অ্যান্ড সুলিভান’ এক বিবৃতিতে বলেছে, গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অভিযোগের ‘কোনো ভিত্তি নেই।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এস আলম গ্রুপসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত অভিযানে মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি কোনো সম্মান দেখানো হয়নি। যা এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে। (এস আলম) গ্রুপের অতীত ইতিহাস ও অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নরের অভিযোগ আমাদের কাছে বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক বলে মনে হয়।’

এ বিষয়ে জানতে উল্লেখিত গোয়েন্দা সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

শেখ হাসিনা ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে পাঁচ মেয়াদে মোট দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের গ্রেপ্তার, বিনা বিচারের কারাবন্দী রাখা ও নির্যাতন করা এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী গত আগস্টে ভারতে আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশটি পরিচালনার ভার নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার বারবার বলছে, সরকার আওয়ামী লীগ আমলে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু করবে।

এর আগে, গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে পাচার করা সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সাহায্য চেয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের প্রধান ব্যাংকগুলোর বোর্ড সদস্যদের টার্গেট করা হয়েছিল। তিনি বলেন, বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বন্দুকের নলের মুখে ব্যাংকের সব শেয়ার এস আলম গ্রুপের কাছে বিক্রি করতে এবং পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। গভর্নর বলেন, ‘একের পর এক ব্যাংকে তারা এই কাজ করেছে।’

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, জোরপূর্বক ব্যাংক অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তাঁকে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা চাপের মধ্যে রেখেছিল।

তিনি জানান, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাবিত বোর্ড সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের ব্যবহৃত হোটেল কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছিল সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আব্দুল মান্নান জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে একটি বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া হয় এবং তাঁকে এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয় পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য। তিনি বলেন, ‘তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকের চিঠিপত্র তৈরি করেছিল এবং আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

এস আলম গ্রুপ গত দশকে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে। গ্রুপের ওয়েবসাইট বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ’ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ সরকার পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য ঠিক করেছে এবং শেখ হাসিনার সরকারের সময় প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই অডিটকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, কর্তৃপক্ষ এখন এই ব্যাংকগুলোর শেয়ার ‘গুণগত মানসম্পন্ন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের’ কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এগুলোতে পুনরায় পুঁজি জোগানো সম্ভব হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের বিপদগ্রস্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা বিক্রয়ের জন্য একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করছে।

আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, সরকার দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ করবে। তাঁরা দুবাই, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য বা অন্য কোথাও থাকা ব্যাংকের তৎকালীন শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদের আইনি দখল নেওয়ার চেষ্টা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত