Ajker Patrika

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গভর্নর

হাসিনা আমলে গোয়েন্দা সংস্থার বন্দুকের মুখে ব্যাংক দখল, পাচার ২ লাখ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। ছবি: ফাইল ছবি

শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে ব্যাংক খাত থেকে ২ লাখ কোটি টাকা বা ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার করেছে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। এই ব্যবসায়িক গোষ্ঠী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত। এমন তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আহসান এই মনসুর বলেন, দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এসব ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলো দখলে নিতে সহায়তা করেছিল।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। এর কয়েক দিন পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। পরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে আহসান এইচ মনসুরকে নিয়োগ দেয়।

আহসান এইচ মনসুর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটিকে জানান, ব্যাংকগুলো দখল করার পর সেগুলোর নিয়ন্ত্রকেরা তাদের বাছাই নতুন শেয়ারহোল্ডারদের ঋণ দেওয়া এবং আমদানি চালানে অতিরিক্ত ব্যয় নির্ধারণের (ওভার ইনভয়েসিং) মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এটি ব্যাংক লুটের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা অন্য কোথাও ঘটেনি এবং এটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে; গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাংকগুলোর তৎকালীন প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটি সম্ভব হতো না।’

গভর্নর আরও বলেন, এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তাঁর সহযোগীরা ব্যাংক খাত থেকে অন্তত ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ‘ধাপে ধাপে চুরি’ করেছেন। ‘তাঁরা প্রতিদিন নিজেরা নিজেদের ঋণ দিয়েছেন’—বলেন আহসান এইচ মনসুর।

তবে সাইফুল আলম ও এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা মার্কিন আইন প্রতিষ্ঠান ‘কুইন ইমানুয়েল উরকুয়ার্ট অ্যান্ড সুলিভান’ এক বিবৃতিতে বলেছে, গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের অভিযোগের ‘কোনো ভিত্তি নেই।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এস আলম গ্রুপসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত অভিযানে মৌলিক নীতিগুলোর প্রতি কোনো সম্মান দেখানো হয়নি। যা এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমিয়ে দিয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়েছে। (এস আলম) গ্রুপের অতীত ইতিহাস ও অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নরের অভিযোগ আমাদের কাছে বিস্ময়কর এবং অযৌক্তিক বলে মনে হয়।’

এ বিষয়ে জানতে উল্লেখিত গোয়েন্দা সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

শেখ হাসিনা ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে পাঁচ মেয়াদে মোট দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের গ্রেপ্তার, বিনা বিচারের কারাবন্দী রাখা ও নির্যাতন করা এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রী গত আগস্টে ভারতে আশ্রয় নেন। শেখ হাসিনার পতনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশটি পরিচালনার ভার নেয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার বারবার বলছে, সরকার আওয়ামী লীগ আমলে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সবকিছু করবে।

এর আগে, গত মাসে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, তিনি শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে পাচার করা সম্পদের তদন্তে যুক্তরাজ্যের সাহায্য চেয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশের প্রধান ব্যাংকগুলোর বোর্ড সদস্যদের টার্গেট করা হয়েছিল। তিনি বলেন, বোর্ড সদস্যদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বন্দুকের নলের মুখে ব্যাংকের সব শেয়ার এস আলম গ্রুপের কাছে বিক্রি করতে এবং পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। গভর্নর বলেন, ‘একের পর এক ব্যাংকে তারা এই কাজ করেছে।’

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানান, জোরপূর্বক ব্যাংক অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে তাঁকে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা চাপের মধ্যে রেখেছিল।

তিনি জানান, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাবিত বোর্ড সদস্যদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের ব্যবহৃত হোটেল কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছিল সরকারি সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আব্দুল মান্নান জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে একটি বোর্ড মিটিংয়ে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া হয় এবং তাঁকে এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে আটকে রাখা হয় পদত্যাগে বাধ্য করার জন্য। তিনি বলেন, ‘তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংকের চিঠিপত্র তৈরি করেছিল এবং আমাকে একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

এস আলম গ্রুপ গত দশকে ব্যাংকিং খাতে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ে। গ্রুপের ওয়েবসাইট বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকসহ সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ’ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ সরকার পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য ঠিক করেছে এবং শেখ হাসিনার সরকারের সময় প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নিরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এই অডিটকে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আদালতে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতে চাই।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকগুলোর শেয়ার বিক্রি স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, কর্তৃপক্ষ এখন এই ব্যাংকগুলোর শেয়ার ‘গুণগত মানসম্পন্ন জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের’ কাছে বিক্রি করার পরিকল্পনা করছে, যাতে এগুলোতে পুনরায় পুঁজি জোগানো সম্ভব হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংকের বিপদগ্রস্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা বিক্রয়ের জন্য একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও করছে।

আহসান এইচ মনসুর আরও জানান, সরকার দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক আইনজীবী নিয়োগ করবে। তাঁরা দুবাই, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য বা অন্য কোথাও থাকা ব্যাংকের তৎকালীন শেয়ারহোল্ডারদের সম্পদের আইনি দখল নেওয়ার চেষ্টা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৩
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়ল আরও এক মাস

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা দ্বিতীয় দফায় আরও এক মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করদাতারা কোনো জরিমানা ছাড়াই আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এর আগে দুই দফা সময় বাড়িয়ে শেষ সময় নির্ধারিত ছিল ৩১ ডিসেম্বর।

আজ রোববার এনবিআরের সচিব মো. একরামুল হক স্বাক্ষরিত এক জরুরি আদেশে এই সময়সীমা বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। এনবিআর সূত্র বলছে, মূলত করদাতাদের সুবিধার্থে এবং অনলাইন সিস্টেমে চাপ সামলাতে এই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেহেতু চলতি বছর থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তাই অনেক নতুন ব্যবহারকারী কারিগরি সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। সেই জটিলতা নিরসনেই এই বাড়তি সময় দেওয়া হলো।

সময় বাড়ানোর আগে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো অনলাইন ব্যবস্থাকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করেছি। এটি একটি বড় ধরনের সংস্কার। আমরা চাই না কোনো করদাতা পদ্ধতিগত কারণে ঝামেলার মুখে পড়ুক। সরকার করদাতাদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা চিন্তা করেই এই সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দেবেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী বিলম্ব জরিমানা আরোপ হতে পারে।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ডিজিটাল কর ব্যবস্থার প্রতি জনগণের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। এ পর্যন্ত ২৬ লাখের বেশি করদাতা সফলভাবে তাঁদের ই-রিটার্ন জমা দিয়েছেন। গত আগস্ট থেকে সরকারি কর্মকর্তা, বড় কোম্পানি এবং নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির করদাতার জন্য অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার পর থেকেই ই-রিটার্ন পোর্টালে ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

ডিজিটাল পদ্ধতিতে করদাতারা ঘরে বসেই যেকোনো সময় রিটার্ন সাবমিট করতে পারবেন। রিটার্ন দাখিলের পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (Acknowledgment) এবং ট্যাক্স সার্টিফিকেট ডাউনলোড করা যাবে। বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কর পরিশোধের সুযোগ রয়েছে।

যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা আইনি জটিলতা এড়াতে করদাতাদের সহায়তার জন্য এনবিআর একটি কল সেন্টারও চালু রেখেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ফুটি কার্পাসে নতুন সম্ভাবনা

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর)  
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলার ঐতিহ্য মসলিনের প্রধান কাঁচামাল ফুটি কার্পাস তুলাগাছে ফুল ফুটেছে। গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় বিশ্বজুড়ে বাংলার গর্ব ছিল মসলিন। এর অতুলনীয় সূক্ষ্মতা, মসৃণতা ও আরামদায়ক বৈশিষ্ট্যের কারণে রাজা-বাদশাহ থেকে ইউরোপীয় অভিজাত শ্রেণির কাছে মসলিন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মসলিনের প্রাণ ফুটি কার্পাস তুলা ইংরেজ শাসনামলে ঔপনিবেশিক বাণিজ্যনীতির বলি হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়। দীর্ঘ বছর পর সে হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্র।

ফুটি কার্পাসের পুনর্জাগরণকে ঘিরে গবেষক, ঐতিহ্য অনুরাগী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্দীপনা। এটি শুধু একটি বিপন্ন উদ্ভিদের পুনরুদ্ধার নয়; বরং বাংলার হারানো শিল্প-ঐতিহ্য ও সম্ভাব্য উচ্চমূল্যের টেক্সটাইল খাত পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা।

শ্রীপুর তুলা গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এবং গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে। গবেষণার মূল লক্ষ্য—ফুটি কার্পাস তুলা কীভাবে বাণিজ্যিকভাবে চাষযোগ্য করা যায়, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে সাধারণ মানুষের নাগালে আনা যায় এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মসলিনকে আবার পরিচিত করা যায়। গবেষকদের প্রত্যাশা, সঠিক নীতিগত সহায়তা ও বিনিয়োগ পেলে আগামী দিনে মসলিন আবার বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করবে।

সম্প্রতি তুলা গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা যায়, সারি সারি ফুটি কার্পাস তুলাগাছ। প্রায় সব গাছেই প্রচুর ফুল এসেছে, যেগুলোর অনেক ফলেও পরিণত হয়েছে। গবেষকদের তথ্যমতে, পুনরুদ্ধার করা ফুটি কার্পাস গাছের উচ্চতা ১৩ থেকে ১৪ ফুট পর্যন্ত। বীজের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি হলেও আঁশ সূক্ষ্ম ও স্বল্প, যা মসলিন তৈরির জন্য উপযোগী।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ফুটি কার্পাসের অস্তিত্বের সূত্র প্রথম পাওয়া যায় দৃক গ্যালারি ও জাতীয় জাদুঘরের সংগ্রহে। সাংস্কৃতিককর্মী সাইফুল ইসলাম এর খোঁজ পান। কার্পাস তুলা থেকেই ‘কাপাসিয়া’ নামের উৎপত্তি।

ব্রিটিশ আলবার্ট মিউজিয়ামে সংরক্ষিত মোগল আমলের মসলিন শাড়ির অংশবিশেষ পরীক্ষা করে গবেষকেরা নিশ্চিত হয়েছেন, সে সময়ে ফুটি কার্পাস থেকেই এসব বস্ত্র তৈরি হতো। ইতিহাস বলছে, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই তুলার চাষ হতো এবং ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে মসলিন রপ্তানি করা হতো।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল আমিন বলেন, ‘ফুটি কার্পাস শুধু একটি তুলা নয়, এটি বাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক। ইংরেজ শাসনামলে নিজস্ব শিল্প রক্ষার জন্য ব্রিটিশরা পরিকল্পিতভাবে মসলিনশিল্প ধ্বংস করেছিল। আমরা এখন সে হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
১ জানুয়ারি কার্যকর: দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল বাড়ল ৫ শতাংশ

দেশের সব স্থলবন্দরের মাশুল ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সব ধরনের সেবা, কর ও টোলহারের ক্ষেত্রে এই বর্ধিত মাশুল প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বলেছে, এই মাশুলই বন্দরের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতিবছরের মতো এবারও মাশুল বাড়ানো হয়েছে, যা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। তবে অন্যান্য বন্দরের তুলনায় মাশুল বেশি হওয়ায় বেনাপোল স্থলবন্দরের জন্য বর্ধিত মাশুলের আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরে যাত্রীদের জন্য ২০২৫ সালের মাশুল ছিল ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির মাশুল নতুন বছরে ১৮৪ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের তুলনায় প্রায় ৯ টাকা বেশি। মোটর কার, জিপ ও পিকআপের জন্য এখন নতুন মাশুল ১১০ টাকা ৮২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেলের জন্য ৩৬ টাকা ৯৫ পয়সা।

বেনাপোল বন্দরে ট্রাক ও লরির জন্য ওজন মাপার যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ৮৮ টাকা ৬৫ পয়সা দিতে হবে। কাগজপত্র প্রক্রিয়ার মাশুল এখন ১৯৫ টাকা ০৭ পয়সা। কোনো যানবাহন যদি রাতভর বন্দরে থাকে, তবে মাশুল ১১১ টাকা ৪৯ পয়সা। গুদামে পণ্য রাখার মাশুলও পণ্যের সময় অনুযায়ী বাড়ানো হয়েছে।

বেনাপোল ছাড়াও অন্যান্য স্থলবন্দরে মাশুল ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য বন্দরে যাত্রীদের মাশুল ২০২৫ সালে ৪৯ টাকা ৭৯ পয়সা ছিল, যা ২০২৬ সালে বেড়ে ৫২ টাকা ২৭ পয়সা হয়েছে। আমদানি করা বাস, ট্রাক ও লরির জন্য নতুন মাশুল ১৫৯ টাকা ২২ পয়সা, মোটর কার ও জিপের জন্য ৯৫ টাকা ৫২ পয়সা এবং মোটরসাইকেল, স্কুটার ও থ্রি-হুইলারের জন্য ৪৭ টাকা ৮৩ পয়সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর: ফসল ব্যবস্থাপনায় উত্তরের চার জেলায় কৃষির নতুন প্রকল্প

  • ২৫২ কোটির প্রকল্পে বিতরণ হবে ৩,১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি
  • উৎপাদন ৫% বৃদ্ধি ও শস্য নিবিড়তা ২৪১ শতাংশে উন্নীত হবে
  • ২০০টি পেঁয়াজ ও ৩টি সবজির সংরক্ষণাগার স্থাপন
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি খাতে টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের ২৫২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। চার বছরের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য প্রকল্পের আওতাধীন চার জেলায় আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানো এবং কৃষিকে আরও লাভজনক পেশায় রূপান্তর করা।

বগুড়া কৃষি অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন নামের এই প্রকল্প ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়িত হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে এবং পুরো ব্যয়ভার বহন করবে সরকার। আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনা, পানিসাশ্রয়ী প্রযুক্তি এবং কৃষকের দক্ষতা উন্নয়ন—এসবের সমন্বয়ে প্রকল্পের কাঠামো তৈরি হয়েছে।

ডিএই মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন বলেন, যমুনা-করতোয়া-পদ্মা-বাঙ্গালীবিধৌত বগুড়া অঞ্চলের কৃষি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, কম বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা ও নদীভাঙন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে আবাদি জমি কমছে। অপর দিকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। সার্বিক বাস্তবতা বিবেচনায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট নথিপত্রে দাবি করা হয়েছে, আধুনিক ফসল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদন ৫ শতাংশ বাড়ানোর পাশাপাশি শস্য নিবিড়তা ২৩৬ শতাংশ থেকে ২৪১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। এক হাজার নতুন দক্ষ কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি এবং ৩৫ হাজার কৃষি মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোও প্রকল্পের লক্ষ্য।

এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বগুড়ায় উপপরিচালকের কার্যালয় ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, ২০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার, তিনটি আধুনিক ফল-সবজি ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার স্থাপন এবং ৩ হাজার ১৮৫টি কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ। কৃষকদের জন্য মোট ৪ হাজার ৮৪০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ আয়োজনের পাশাপাশি ৪১ হাজারের বেশি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রদর্শনী এবং ৭০০টি মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাসচিব এস এম শাকিল আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়নের স্বার্থে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয় কি না, সেটাই প্রকল্পের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

একই বিষয়ে কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান আজকের পত্রিকাকে জানান, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার আবাদি জমির সঠিক ফসল ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষকের ক্ষতি কমবে এবং আয়ের সুযোগ বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত