Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্কের আঘাতে বিপর্যয়ের মুখে বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৬: ৪৩
ফ্যাশন শিল্পে নজর ট্রাম্পের। ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশন শিল্পে নজর ট্রাম্পের। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে একের পর এক শুল্ক আরোপ করে বিশ্ব অর্থনীতি অস্থির করে তুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার তাঁর ঘোষিত নতুন শুল্ক দেখে বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প হতভম্ব অবস্থায় পড়ে যায়। গত এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক আকৃতির শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। পোশাক উৎপাদনকারী দেশগুলোর ওপর এবার শুল্ক খড়্গ নামিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যার আঘাতে ইতিমধ্যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে নাইকি, এলভিএমএইচ, টেপেস্ট্রির মতো বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো।

গত বুধবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেন থেকে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, সব আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। প্রায় ২৪টি দেশে উচ্চ শুল্ক ধার্য করা হয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলো ফ্যাশন শিল্পের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র। এই শুল্ক ঘোষণার দিন মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে বলে জানান ট্রাম্প।

নতুন শুল্ক ঘোষণার সময়, ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্ক হার লেখা একটি বড় তালিকা দেখান। তিনি বলেন, এই শুল্ক হার ওই দেশগুলোর দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আরোপিত শুল্ক ও অশুল্ক বাধার প্রায় অর্ধেক।

অনেক বিশ্লেষক আশা করেছিল যে শুল্ক হার কিছুটা কম হবে, কিন্তু বাস্তবে এটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা বিদেশি বাজার উন্মুক্ত করব এবং বাণিজ্য বাধা দূর করব। এতে দেশে আরও উৎপাদন বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং ভোক্তাদের জন্য দাম কমবে। এটি হবে আমেরিকার সোনালি যুগ। আমেরিকা আবার ফিরবে, খুব শক্তিশালীভাবে ফিরে আসবে।’

ট্রাম্পের দেওয়া শুল্ক তালিকায় দেখা যায়, ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক বসতে যাচ্ছে। কম্বোডিয়ার জন্য শুল্ক হবে ৪৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জন্য ৩৭ শতাংশ। চীনের ওপর নতুন ৩৪ শতাংশ শুল্ক যোগ করা হয়েছে, যা আগের শুল্কসহ মোট ৫৪ শতাংশ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে।

এ শুল্ক আরোপ নিয়ে ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আমরা খুবই হতাশ। এই সিদ্ধান্ত মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে।’

তাদের এই বিবৃতির সত্যতা দেখা যায় শেয়ার বাজার সূচকে। নতুন শুল্ক ফ্যাশন কোম্পানির শেয়ার বাজারে বেশ বড় আকারের ধাক্কা দিয়েছে। লুলুলেমন ব্র্যান্ডের শেয়ার ১০ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছে। নাইকি ও রালফ লরেন-এর শেয়ার ৭ শতাংশ এবং টেপেস্ট্রি, ক্যাপ্রি ও পিভিএইচ কর্পোরেশনের শেয়ার প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার সূচকও প্রায় ৪ শতাংশ কমে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বড় পোশাক ও জুতা বাজার। এই দেশটি মার্কিন ও আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন শুল্কের ফলে খরচ বেড়ে যাবে এবং অনেক ফ্যাশন ব্যবসায়ীদের জন্য বিপর্যয় তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া প্রায় সব ফ্যাশন পণ্য নতুন শুল্কের আওতায় আসবে। কারণ, দেশটি ৯৮ শতাংশের বেশি পোশাক এবং প্রায় ৯৯ শতাংশ জুতা আমদানি করে।

ফ্যাশন শিল্পে নজর ট্রাম্পের। ছবি: সংগৃহীত
ফ্যাশন শিল্পে নজর ট্রাম্পের। ছবি: সংগৃহীত

এর আগে ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর, ওয়ালমার্টের মতো কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে সরবরাহকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরিকল্পনা করেছিল এবং তাদের খরচ কমানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। তবে, অনেক কারখানাই কম লাভের ওপর চলে, তাই দাম কমানোর চাপ তাদের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

তবে নতুন এই শুল্কের ধাক্কা পুরো ফ্যাশন সাপ্লাই চেইনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। টেক্সটাইল নির্মাতা ও কৃষকেরাও কম দামে বিক্রির উপায় খুঁজবে, যাতে খরচ বাঁচানো যায়।

অনেক ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তারা এই বাড়তি খরচ নিজেরা বহন করবে, নাকি তা ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দেবে? যেখানে অনেক ভোক্তা ইতিমধ্যেই মূল্যস্ফীতির কারণে সতর্কভাবে খরচ করছে, তাই দাম আরও বাড়লে তাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।

নতুন শুল্ক ঘোষণার আগেই, এই পরিকল্পনা কীভাবে কার্যকর হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। এই অনিশ্চয়তার কারণে মার্চ মাসে মার্কিন ভোক্তাদের আস্থা কমে গিয়ে মহামারির পর সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছিল।

ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের সরকারি সম্পর্ক বিষয়ক নির্বাহী সহ-সভাপতি ডেভিড ফ্রেঞ্চ বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্ক মানে আরও দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তা—মার্কিন ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য এটি কোনো ভালো খবর নয়।’

নতুন শুল্ক বিভিন্ন ফ্যাশন ব্যবসায় প্রভাব ফেলবে, তবে কিছু খাত বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যের বাজারের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ছিল সবচেয়ে স্থিতিশীল, বিশেষ করে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। কিন্তু বেশিরভাগ বিলাসবহুল ব্র্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে তাদের পণ্য তৈরি করে না। ফলে, তারা নতুন শুল্কের কারণে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে বাধ্য হবে।

গত কয়েক বছরে এই ব্র্যান্ডগুলো ইতিমধ্যেই দাম বাড়িয়েছে। এখন নতুন শুল্কের ফলে তাদের ব্যয় আরও বাড়বে। এলভিএমএইচ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের তৃতীয় কারখানা চালু করেছিল। আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের বিশ্লেষক পিরাল দধানিয়া এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, এই কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে এলভিএমএইচ-এর মোট উৎপাদনের প্রায় ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে।

ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার আগে, দধানিয়া অনুমান করেছিলেন, ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর নিট আয় কমিয়ে দেবে। তবে, সেই অনুমানে ৩১ শতাংশের মতো উচ্চ হারের শুল্ক আরোপে কী হতে পারে তা ভাবা হয়নি।

যদিও উচ্চ মূল্যের পণ্য এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ধনী ক্রেতাদের ব্যয় কমাতে বাধ্য নাও করতে পারে, তবে যারা মাঝেমধ্যে বিলাসবহুল পণ্য কেনে তাদের আরও সংযত হতে হবে। গত কয়েক বছরে দামের বৃদ্ধি এই গ্রাহকদের মধ্যে বিলাসবহুল পণ্যের চাহিদা কমিয়েছে, আর নতুন শুল্কের ফলে সেই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।

স্পোর্টস ব্র্যান্ডগুলোও এই শুল্কের প্রভাবের মুখে পড়বে। অনেক কোম্পানি চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিয়েছিল, কারণ ট্রাম্পের প্রথম দফার শুল্ক চীনের ওপর পড়েছিল। কিন্তু তারা ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো দেশে স্থানান্তর করেছিল, যেখানে এখন নতুন শুল্ক বসানো হয়েছে। ফলে, তাদের ব্যয় আবার বেড়ে যাবে।

উদাহরণ হিসেবে, নাইকি ২০২৪ সালে তাদের ৫০ শতাংশ জুতা ভিয়েতনামে তৈরি করেছিল, আর সুইস স্পোর্টস ব্র্যান্ড অন সেখানে ৯০ শতাংশ উৎপাদন করেছিল। এখন এই কোম্পানিগুলো নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তবে, সব ফ্যাশন ব্যবসাই কোনো না কোনোভাবে এই শুল্কের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত