Ajker Patrika

পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা: শর্তের জালে মার্কিন চাপ

  • ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য চাপ তৈরির অস্ত্র পাল্টা শুল্ক।
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী দেশগুলোর সম্পর্কে প্রভাব পড়ার ঝুঁকি।
  • দর-কষাকষিতে লুকোচুরির অভিযোগ।
সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা 
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৪২
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের মধ্যে দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

রপ্তানি পণ্যে আরোপ করা পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে বাংলাদেশের। এই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের দিকগুলো বড় আকারে সামনে এলেও বিষয়টিকে দেশটি ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য চাপ তৈরির একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে পর্যবেক্ষণ সরকারি ও বেসরকারি বিশ্লেষকদের।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য মেনে নেওয়া প্রায় অসম্ভব, এটা বুঝেই যুক্তরাষ্ট্র রপ্তানির ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্কের নামে ৩৭ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন শুল্ক আরোপের কথা জানায়। এই প্রস্তাবকে বড় মনস্তাত্ত্বিক চাপ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া চিঠিতে পাল্টা শুল্কের বিষয়টি জানান। একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, একটি দেশের সরকারপ্রধানকে প্রেসিডেন্টের লেখা চিঠি হোয়াইট হাউস সামাজিক মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছে। এতে ট্রাম্প মার্কিন সমাজে প্রশংসিত হলেও যে দেশের জন্য শুল্কের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে।

পাল্টা শুল্ক নিয়ে দর-কষাকষির ভিত্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) ২১ মের চিঠির ছত্রে ছত্রে যেসব শর্ত রাখা হয়েছে, তাতেও নানামুখী চাপ তৈরির উপকরণ দেখছেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের শর্তে বাণিজ্য, জাতীয় নিরাপত্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, বিভিন্ন পণ্য এবং সেবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের মান ও সনদ বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে আমদানির অনুমতি চাওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি, মার্কিন ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো অনাপত্তিপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করাসহ এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলো অনেক দেশের জন্যই মেনে নেওয়া কঠিন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সামরিক যন্ত্রপাতি, উড়োজাহাজ, জ্বালানি ও ভোজ্যতেল, গম বিক্রি ব্যাপকভাবে বাড়াতে চায়। এটা তারা চাইতেই পারে। কিন্তু একই সঙ্গে চীনসহ অন্য দেশ থেকে একই পণ্য আমদানি কমানোর দাবি; যুক্তরাষ্ট্রকে যে পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়া হবে, একই পণ্যে অন্য দেশকে শুল্কছাড় না দেওয়ার শর্ত; যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশের বন্দর, জেটি ও জাহাজে চীনের তৈরি বিশেষ ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; বিভিন্ন ব্যবসা ও পেশার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রস্তাব; অনেক ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানির তথ্য মার্কিন কর্তৃপক্ষকে দেওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি সই করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে (ডব্লিউটিও) জানানোসহ বহু শর্ত দিয়েছে দেশটি।

শুল্ক নিয়ে আলোচনার মাঝপথে প্রধান উপদেষ্টাকে ফোন করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি শুল্কের আলোচনায় গতি আনা এবং বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত গণতন্ত্রে ফেরার তাগিদ দেন। এসবের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সংলাপসহ বিভিন্ন পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় মিয়ানমারের রাখাইনের সঙ্গে স্থল অথবা জলপথে ‘মানবিক চ্যানেল’ চালু করাসহ কৌশলগত স্বার্থের নানা দিকও টেনে আনছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ‘চাপ’ তৈরির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের মুখপাত্র আজকের পত্রিকাকে বুধবার বলেন, ‘চলমান দ্বিপক্ষীয় দর-কষাকষির বিষয়ে দূতাবাস কোনো মন্তব্য করে না।’

কী চায় যুক্তরাষ্ট্র

সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র শুল্কের বিষয়টি সামনে রেখে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের নামে একটি ব্যাপকভিত্তিক কাঠামোগত চুক্তি চায়। এর মাধ্যমে নিজের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি এমন একটি ব্যবস্থা চালু করতে চায়, যার মাধ্যমে দেশটি অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও আমদানি-রপ্তানি প্রবাহ এবং কৌশলগত কেনাকাটার ওপর নজরদারি করার সুযোগ পেতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সার্বভৌম এখতিয়ার লঙ্ঘনের ঝুঁকি দেখছেন স্থানীয় বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, কাঠামোগত চুক্তিতে এমন ধারা যুক্ত হলে দেশটি ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী মনোভাব আছে, এমন দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ওপর দেশটি ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সুযোগ নিতে পারে। এতে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।

আলোচনায় লুকোচুরির অভিযোগ

অংশীজন, বিশ্লেষক এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন একটি বহুমুখী, গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কূটনৈতিক বিষয়কে শুরুতে আর দশটি সাধারণ আন্তর্জাতিক বিষয়ের মতো সামাল দিতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের জটিল বাণিজ্যিক বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় দর-কষাকষির মূল দায়িত্ব থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের ওপর; আর রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক দেখে থাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় শুরুতে এ দুটি মন্ত্রণালয়কেই ‘পাল্টা শুল্কের’ আলোচনা থেকে দূরে রাখে। সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছাড়াই এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে যান প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী। তাঁর নেতৃত্বে মার্কিনদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিনসহ অন্যরা। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার গোপনীয়তা বজায় রাখতে ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ (এনডিএ) সইয়ের জন্য চাপ দেয়। এনডিএ সই হয় ১২ জুন। কিন্তু পাল্টা শুল্কের আলোচনা কিছুতেই না এগোনোয় অবস্থা বেগতিক দেখে এই প্রক্রিয়ায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করা হয় ট্রাম্পের চিঠি আসার আড়াই মাস পর। ইউএসটিআর প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনলাইনে সভা করে ১৭ জুন। কিন্তু ২৬ জুন ওয়াশিংটনে মুখোমুখি আলোচনার বিষয়টি সামনে এলে পাঠানো হয় প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানকে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত ৩০ জুন মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে বাণিজ্যের আলোচনায় গতি আনার তাগিদ দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফেরার ওপরও তিনি জোর দেন। বর্তমান স্থানীয় রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার সঙ্গে দ্রুত নির্বাচনের তাগিদ যুক্ত করাকে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিকেরা।

রুবিওর তাগিদের পর ৩ জুলাই খলিলুর রহমানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বৈঠকে যোগ দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। খলিলুর রহমান আলোচনা ‘ভালোভাবে’ এগোনোর দাবি করলেও বিষয়টি যে আসলে তেমন ছিল না, তা স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি ওয়াশিংটনে থাকা অবস্থায়ই মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া ট্রাম্পের দ্বিতীয় চিঠিতে। ৮ জুলাইয়ের এই চিঠিতে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমানে কার্যকর (১৫ শতাংশ) শুল্কের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আগামী ১ আগস্ট থেকে আরোপ করার কথা জানান ট্রাম্প।

এরপর ৯ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে বহুমুখী এই দর-কষাকষির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য, বিভিন্ন সরকারি কর্তৃপক্ষের মতামত নেওয়া এবং অংশীজনদের সঙ্গে বোঝাপড়ার মারাত্মক ঘাটতির মুখে বাণিজ্য উপদেষ্টাকে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে পরামর্শের জন্য ঢাকায় ফিরে আসতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তোলা বিভিন্ন বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনার পর দেশের একটি ‘অবস্থানপত্র’ আগামী সপ্তাহের শুরুতে তৈরি করার কথা বলছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তৃতীয় দফা বৈঠকের সম্মতি মিললে তাঁর আগামী সপ্তাহেই সেখানে যাওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ চায় চলতি জুলাইয়ের মধ্যে বিষয়টির ফয়সালা করতে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত মঙ্গলবারের পরামর্শমূলক সভায় যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, এনডিএর অজুহাত দেখিয়ে অংশীজনসহ কারও সঙ্গে কথা না বলে সরকার দুই দফা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এখন তৃতীয় দফা বৈঠকের আগে পরামর্শের জন্য সভা ডাকা হলেও খোলাখুলি বলছে না, তাদের কোন বিষয়ে কী ধরনের পরামর্শ দরকার। এমন অবস্থায় বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের ধারণা করে কথা বলতে হচ্ছে।

আলোচনায় বাংলাদেশের মৌলিক নীতিগত অবস্থান কী, এমন প্রশ্নে এক সরকারি কর্মকর্তা বাণিজ্য উপদেষ্টার একটি মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন। উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি নত হতে রাজি। কিন্তু কতটা নত হলে ভেঙে পড়ব না, সেটা তো বুঝতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা পণ্যে বাংলাদেশ বর্তমানে গড়ে ৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই শুল্ক প্রায় পুরোপুরি তুলে দেওয়া হতে পারে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্কছাড় দেওয়া হলে রাজস্ব যে পরিমাণ কমবে, তার চেয়ে ‘পাল্টা শুল্ক’ অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে এনে দেশটিতে বাজার ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সরকারিভাবে গম, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), উড়োজাহাজ ও এর যন্ত্রাংশ, ভোজ্যতেল এবং তুলা আমদানি বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছে সরকার।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় উভয় পক্ষ একমত হলেও সেটাই চূড়ান্ত ধরে নেওয়ার সুযোগ সম্ভবত নেই। বিষয়টি হোয়াইট হাউসে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঠিক করবেন, বাংলাদেশের জন্য ‘চূড়ান্ত পাল্টা শুল্ক’ ঠিক কত হবে।

টার্গেট চীন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কী উদ্দেশ্যে এত দেশের সঙ্গে শুল্ক-যুদ্ধ শুরু করেছে, এর কৌশলগত দিকগুলো কী, সম্ভবত অন্তর্বর্তী সরকার তা শুরুতে ধরতে পারেনি। ট্রাম্প শুল্ক বাড়িয়ে নিজ দেশের আয় বাড়ানোর কথা বললেও আসলে তারা আরও দুটি উদ্দেশ্য আছে—প্রথমত, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) ভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেওয়া। এতে ট্রাম্প নিজের শর্তে বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে নাজুক অবস্থানে থাকা দেশগুলোসহ পুরো বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেখছেন।

চলমান আলোচনায় লিখিতভাবে দেওয়া যেসব প্রস্তাব নিয়ে কথা হচ্ছে, সেগুলোর বাইরেও ডালপালা ছড়াতে পারে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির বলেন, রুলস অব অরিজিনে যুক্তরাষ্ট্রমুখী পণ্যে বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা চীনকে আটকানোর একটি উপায়। একই উপায়ে অনেকগুলো দেশে চীনের রপ্তানিতে লাগাম টেনে দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করা গেলে যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে কৌশলগত দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম সুবিধা পেতে পারে।

সাবেক এই কূটনীতিক আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবারকার আলোচনায় যেসব বিষয় তুলছে, সেগুলোতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার, শ্রমমান, মৌলিক অধিকার রক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা দরকার হতে পারে। এমন ব্যাপক সংস্কারের প্রস্তুতি ও শক্তি—কোনোটাই দেশের নেই। তিনি বলেন, ‘অন্তত আগামী ২০ বছরের মধ্যে পরিবর্তন আনার একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা এবং পথরেখা দেওয়া গেলে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা সুযোগ দেবে। কিন্তু সরকারের মেয়াদ আছে আর মাত্র কয়েক মাস। এই নিশ্চয়তা কে দেবে?’

আলোচনার শুরুতে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দূরে রাখা প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির সরকারের কাজকর্মে কৌশলগত স্বচ্ছতার অভাবের কথা বলেন। দুই মন্ত্রণালয়কে দূরে রাখা ‘মারাত্মক ভুল’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলো থেকে আসার কথা। কিন্তু সরকার তাদের সঙ্গেও পরামর্শ করা দরকার মনে করছে না। এতে বড় ধরনের তালগোল পাকিয়ে ফেলার ঝুঁকি আছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিতে সুবিধা পাওয়ার মতো বড় কোনো উপায় (লিভারেজ) হাতে না থাকায় আলোচনায় শেষ পর্যন্ত কী মিলবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন বিশ্লেষকেরা। প্রস্তুতির ঘাটতি থাকায় এ ক্ষেত্রে কিছুটা ‘ভাগ্যের’ ওপর নির্ভর করতে হতে পারে, এমনটা মনে করছেন তাঁরা।

দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা

স্থানীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘পাল্টা শুল্কের’ বিষয়ে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিকসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বড় রকম প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া (১৯ শতাংশ) এবং ভারতের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বেশি হলে এখানে রপ্তানি আয় বেশ কমতে পারে।

বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান ও স্থানীয় বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনায় ভালো ফল না এলে দেশের পুরো অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে। অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে বহু শ্রমিকের বেকার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এর পরিণতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ নানা রকম সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ভারতের সঙ্গে একই বিষয়ে ভূরাজনৈতিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা চলছে। চীনের সঙ্গে দুই দেশেরই বৈরিতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের জন্য পাল্টা শুল্কের যে হার ঠিক করবে, বাংলাদেশের হার তার চেয়ে বেশি হলে স্থানীয় শিল্প ও রপ্তানি বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত বুধবার বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দেশটির দূতাবাসের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী তাঁদের আলোচনার প্রসঙ্গ ছিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও আনুষঙ্গিক বিষয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ প্রায় ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। রপ্তানি করেছে ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

খালেদা জিয়ার জানাজা কাল, দাফন জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত