গৌতম রায়

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাস ও কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে কয়টি খাত তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল, তার একটি হচ্ছে শিক্ষা। স্বাধীনতা-পূর্ব এই ভূখণ্ডে শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্রিটিশরা সময়ে সময়ে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি তৈরি করে, মূলত তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে একটি জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়াসে। সেখানে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত বিকাশের পথগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পায়। একই ধারা চালু থাকে পাকিস্তান আমলেও। ১৯৪৭-এর পর থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠন করলেও সেগুলোর বৈষম্যমূলক সুপারিশ বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, জনগণের চাহিদা ও রাষ্ট্রীয় নীতির এক যুগোপযোগী প্রতিফলন দেখা যায় সেই কমিশনের সুপারিশগুলোতে। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেসব সুপারিশকে অন্ধকারে পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে একাধিক জনবিরোধী সুপারিশ প্রণীত হয়।
স্বাধীনতার পরের এই প্রথম পর্যায়ের চার বছরে সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সে সময় বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকার জাতীয়করণ করে, যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পথ অনেকটাই সুগম হয়। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। ওই চার বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের বাংলাদেশ আরেকটু ভিন্ন অবস্থানে থাকত বলে অনুমান করা যায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নানা রুটিন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও সার্বিক অর্থে সেগুলো বড় আকারে প্রভাব ফেলতে পারেনি মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, অধিকাংশ সিদ্ধান্তই কোনো গবেষণা ছাড়া শীর্ষ মহল থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ ছিল একেবারেই কম। যেমন—ড. খুদা কমিশনে যেভাবে জনমতের সহায়তায় ও তৎকালীন সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় অগ্রগতির সুপারিশ করা হয়েছিল, সেসব প্রক্রিয়া পরবর্তী সময়ে থমকে যায় এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মজিদ খান শিক্ষা কমিশন এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নব্বইয়ে স্বৈরাচার পতনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি তৎকালীন সরকারগুলো। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই সময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে তৃতীয় পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিশেষত বৈশ্বিক নানা অঙ্গীকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার অগ্রগতিকে সমন্বিত করে দেখার প্রয়াস এই পর্বে লক্ষণীয়। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার যে আহ্বান জানানো হয়, বাংলাদেশে সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বিনা মূল্যে রূপান্তরিত করার সুফল পরবর্তী সময়ে দৃশ্যমান হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ে, আস্তে আস্তে কমতে থাকে ঝরে পড়ার হার। ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিকেও এই হার কাছাকাছি চলে আসে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হওয়া এবং জেন্ডার সমতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে, যা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। এই অগ্রগতির প্রভাব পরে মাধ্যমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়।
স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পর ড. খুদা কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশের তুলনায় সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ২০০০ সালে প্রথম শিক্ষানীতি গৃহীত হয়; যদিও সেটির সুপারিশ ও কৌশলসমূহ রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ড. খুদা কমিশনকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও এর সব কৌশল এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই চিহ্নিত করা যায়। এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির প্রভাব শুধু শিক্ষা খাতেই দৃশ্যমান হয় না, একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেগুলো রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তৃতীয় পর্যায়ের নানা সময়ে আমরা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি, সেগুলোর প্রভাবই এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে এটিও আলোচনার বিষয় যে শিক্ষার যেসব অগ্রগতি আজকে দৃশ্যমান, তার অধিকাংশই পরিমাণগত। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই মানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সমস্যা এখনো বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়, দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নানা ধরনের অস্থিরতা ও নৈতিকতার অভাব যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে সুশিক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফল রয়েছে। গুণগত শিক্ষা অর্জন করা যাচ্ছে কি না, তার একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে শিক্ষার্থী সেগুলো অর্জন করতে পারছে কি না তার ওপর। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই অর্জন থেকে অনেক দূরে। জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকার অর্থে শিখন কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নীতিগত কিছু বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে আমাদের; নীতি বাস্তবায়নেও রয়েছে সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ অতিমারিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অচলাবস্থা প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমাদের দুর্যোগকালীন শিক্ষা নিয়ে কোনো নীতি নেই। অন্যদিকে, বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা বা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসব ঘাটতি নানাভাবে শিক্ষার মান অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে গবেষণায়। বৈশ্বিক নানা সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন কোনো অবস্থান নেই। প্রশাসকদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধুঁকছে। বাণিজ্যিকীকরণও চলছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে। রমরমায় রয়েছে নোট ও গাইড বইয়ের বাজার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যেসব বিষয়ে আমাদের দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রয়োজন ছিল, সেখানে উদাসীনতা রয়েছে।
এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে সরকার যেসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ যেসব কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে অনেক বড় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দও বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার জন্য জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। এই বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সম্পদের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে, তেমনি শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ গুণগত মান বৃদ্ধির যেসব সূচক রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায়োগিক কৌশল ব্যবহার করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষাকে স্থানীয় রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অগ্রগতির এই ধারা কখনো ধীর, কখনো দ্রুত। একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। এত দিন যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাতে পরিমাণগত উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। এখন সময় এসেছে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রেই কেবল টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, সম্ভব হবে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করা।
গৌতম রায়
সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাস ও কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে কয়টি খাত তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল, তার একটি হচ্ছে শিক্ষা। স্বাধীনতা-পূর্ব এই ভূখণ্ডে শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্রিটিশরা সময়ে সময়ে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি তৈরি করে, মূলত তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে একটি জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়াসে। সেখানে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত বিকাশের পথগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পায়। একই ধারা চালু থাকে পাকিস্তান আমলেও। ১৯৪৭-এর পর থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠন করলেও সেগুলোর বৈষম্যমূলক সুপারিশ বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, জনগণের চাহিদা ও রাষ্ট্রীয় নীতির এক যুগোপযোগী প্রতিফলন দেখা যায় সেই কমিশনের সুপারিশগুলোতে। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেসব সুপারিশকে অন্ধকারে পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে একাধিক জনবিরোধী সুপারিশ প্রণীত হয়।
স্বাধীনতার পরের এই প্রথম পর্যায়ের চার বছরে সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সে সময় বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকার জাতীয়করণ করে, যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পথ অনেকটাই সুগম হয়। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। ওই চার বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের বাংলাদেশ আরেকটু ভিন্ন অবস্থানে থাকত বলে অনুমান করা যায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নানা রুটিন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও সার্বিক অর্থে সেগুলো বড় আকারে প্রভাব ফেলতে পারেনি মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, অধিকাংশ সিদ্ধান্তই কোনো গবেষণা ছাড়া শীর্ষ মহল থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ ছিল একেবারেই কম। যেমন—ড. খুদা কমিশনে যেভাবে জনমতের সহায়তায় ও তৎকালীন সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় অগ্রগতির সুপারিশ করা হয়েছিল, সেসব প্রক্রিয়া পরবর্তী সময়ে থমকে যায় এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মজিদ খান শিক্ষা কমিশন এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নব্বইয়ে স্বৈরাচার পতনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি তৎকালীন সরকারগুলো। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই সময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে তৃতীয় পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিশেষত বৈশ্বিক নানা অঙ্গীকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার অগ্রগতিকে সমন্বিত করে দেখার প্রয়াস এই পর্বে লক্ষণীয়। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার যে আহ্বান জানানো হয়, বাংলাদেশে সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বিনা মূল্যে রূপান্তরিত করার সুফল পরবর্তী সময়ে দৃশ্যমান হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ে, আস্তে আস্তে কমতে থাকে ঝরে পড়ার হার। ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিকেও এই হার কাছাকাছি চলে আসে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হওয়া এবং জেন্ডার সমতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে, যা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। এই অগ্রগতির প্রভাব পরে মাধ্যমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়।
স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পর ড. খুদা কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশের তুলনায় সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ২০০০ সালে প্রথম শিক্ষানীতি গৃহীত হয়; যদিও সেটির সুপারিশ ও কৌশলসমূহ রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ড. খুদা কমিশনকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও এর সব কৌশল এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই চিহ্নিত করা যায়। এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির প্রভাব শুধু শিক্ষা খাতেই দৃশ্যমান হয় না, একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেগুলো রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তৃতীয় পর্যায়ের নানা সময়ে আমরা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি, সেগুলোর প্রভাবই এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে এটিও আলোচনার বিষয় যে শিক্ষার যেসব অগ্রগতি আজকে দৃশ্যমান, তার অধিকাংশই পরিমাণগত। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই মানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সমস্যা এখনো বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়, দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নানা ধরনের অস্থিরতা ও নৈতিকতার অভাব যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে সুশিক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফল রয়েছে। গুণগত শিক্ষা অর্জন করা যাচ্ছে কি না, তার একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে শিক্ষার্থী সেগুলো অর্জন করতে পারছে কি না তার ওপর। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই অর্জন থেকে অনেক দূরে। জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকার অর্থে শিখন কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নীতিগত কিছু বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে আমাদের; নীতি বাস্তবায়নেও রয়েছে সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ অতিমারিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অচলাবস্থা প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমাদের দুর্যোগকালীন শিক্ষা নিয়ে কোনো নীতি নেই। অন্যদিকে, বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা বা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসব ঘাটতি নানাভাবে শিক্ষার মান অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে গবেষণায়। বৈশ্বিক নানা সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন কোনো অবস্থান নেই। প্রশাসকদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধুঁকছে। বাণিজ্যিকীকরণও চলছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে। রমরমায় রয়েছে নোট ও গাইড বইয়ের বাজার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যেসব বিষয়ে আমাদের দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রয়োজন ছিল, সেখানে উদাসীনতা রয়েছে।
এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে সরকার যেসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ যেসব কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে অনেক বড় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দও বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার জন্য জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। এই বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সম্পদের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে, তেমনি শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ গুণগত মান বৃদ্ধির যেসব সূচক রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায়োগিক কৌশল ব্যবহার করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষাকে স্থানীয় রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অগ্রগতির এই ধারা কখনো ধীর, কখনো দ্রুত। একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। এত দিন যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাতে পরিমাণগত উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। এখন সময় এসেছে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রেই কেবল টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, সম্ভব হবে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করা।
গৌতম রায়
সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
গৌতম রায়

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাস ও কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে কয়টি খাত তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল, তার একটি হচ্ছে শিক্ষা। স্বাধীনতা-পূর্ব এই ভূখণ্ডে শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্রিটিশরা সময়ে সময়ে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি তৈরি করে, মূলত তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে একটি জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়াসে। সেখানে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত বিকাশের পথগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পায়। একই ধারা চালু থাকে পাকিস্তান আমলেও। ১৯৪৭-এর পর থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠন করলেও সেগুলোর বৈষম্যমূলক সুপারিশ বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, জনগণের চাহিদা ও রাষ্ট্রীয় নীতির এক যুগোপযোগী প্রতিফলন দেখা যায় সেই কমিশনের সুপারিশগুলোতে। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেসব সুপারিশকে অন্ধকারে পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে একাধিক জনবিরোধী সুপারিশ প্রণীত হয়।
স্বাধীনতার পরের এই প্রথম পর্যায়ের চার বছরে সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সে সময় বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকার জাতীয়করণ করে, যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পথ অনেকটাই সুগম হয়। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। ওই চার বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের বাংলাদেশ আরেকটু ভিন্ন অবস্থানে থাকত বলে অনুমান করা যায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নানা রুটিন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও সার্বিক অর্থে সেগুলো বড় আকারে প্রভাব ফেলতে পারেনি মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, অধিকাংশ সিদ্ধান্তই কোনো গবেষণা ছাড়া শীর্ষ মহল থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ ছিল একেবারেই কম। যেমন—ড. খুদা কমিশনে যেভাবে জনমতের সহায়তায় ও তৎকালীন সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় অগ্রগতির সুপারিশ করা হয়েছিল, সেসব প্রক্রিয়া পরবর্তী সময়ে থমকে যায় এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মজিদ খান শিক্ষা কমিশন এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নব্বইয়ে স্বৈরাচার পতনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি তৎকালীন সরকারগুলো। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই সময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে তৃতীয় পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিশেষত বৈশ্বিক নানা অঙ্গীকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার অগ্রগতিকে সমন্বিত করে দেখার প্রয়াস এই পর্বে লক্ষণীয়। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার যে আহ্বান জানানো হয়, বাংলাদেশে সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বিনা মূল্যে রূপান্তরিত করার সুফল পরবর্তী সময়ে দৃশ্যমান হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ে, আস্তে আস্তে কমতে থাকে ঝরে পড়ার হার। ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিকেও এই হার কাছাকাছি চলে আসে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হওয়া এবং জেন্ডার সমতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে, যা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। এই অগ্রগতির প্রভাব পরে মাধ্যমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়।
স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পর ড. খুদা কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশের তুলনায় সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ২০০০ সালে প্রথম শিক্ষানীতি গৃহীত হয়; যদিও সেটির সুপারিশ ও কৌশলসমূহ রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ড. খুদা কমিশনকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও এর সব কৌশল এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই চিহ্নিত করা যায়। এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির প্রভাব শুধু শিক্ষা খাতেই দৃশ্যমান হয় না, একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেগুলো রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তৃতীয় পর্যায়ের নানা সময়ে আমরা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি, সেগুলোর প্রভাবই এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে এটিও আলোচনার বিষয় যে শিক্ষার যেসব অগ্রগতি আজকে দৃশ্যমান, তার অধিকাংশই পরিমাণগত। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই মানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সমস্যা এখনো বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়, দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নানা ধরনের অস্থিরতা ও নৈতিকতার অভাব যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে সুশিক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফল রয়েছে। গুণগত শিক্ষা অর্জন করা যাচ্ছে কি না, তার একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে শিক্ষার্থী সেগুলো অর্জন করতে পারছে কি না তার ওপর। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই অর্জন থেকে অনেক দূরে। জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকার অর্থে শিখন কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নীতিগত কিছু বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে আমাদের; নীতি বাস্তবায়নেও রয়েছে সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ অতিমারিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অচলাবস্থা প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমাদের দুর্যোগকালীন শিক্ষা নিয়ে কোনো নীতি নেই। অন্যদিকে, বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা বা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসব ঘাটতি নানাভাবে শিক্ষার মান অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে গবেষণায়। বৈশ্বিক নানা সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন কোনো অবস্থান নেই। প্রশাসকদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধুঁকছে। বাণিজ্যিকীকরণও চলছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে। রমরমায় রয়েছে নোট ও গাইড বইয়ের বাজার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যেসব বিষয়ে আমাদের দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রয়োজন ছিল, সেখানে উদাসীনতা রয়েছে।
এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে সরকার যেসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ যেসব কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে অনেক বড় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দও বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার জন্য জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। এই বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সম্পদের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে, তেমনি শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ গুণগত মান বৃদ্ধির যেসব সূচক রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায়োগিক কৌশল ব্যবহার করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষাকে স্থানীয় রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অগ্রগতির এই ধারা কখনো ধীর, কখনো দ্রুত। একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। এত দিন যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাতে পরিমাণগত উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। এখন সময় এসেছে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রেই কেবল টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, সম্ভব হবে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করা।
গৌতম রায়
সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাস ও কার্যক্রম তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যে কয়টি খাত তুলনামূলকভাবে গুরুত্ব পেয়েছিল, তার একটি হচ্ছে শিক্ষা। স্বাধীনতা-পূর্ব এই ভূখণ্ডে শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্রিটিশরা সময়ে সময়ে শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি তৈরি করে, মূলত তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে একটি জনশক্তি গড়ে তোলার প্রয়াসে। সেখানে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের অন্তর্নিহিত বিকাশের পথগুলো তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব পায়। একই ধারা চালু থাকে পাকিস্তান আমলেও। ১৯৪৭-এর পর থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী একাধিক শিক্ষা কমিশন গঠন করলেও সেগুলোর বৈষম্যমূলক সুপারিশ বাংলাদেশের মানুষের প্রতিবাদের কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরের বছর ১৯৭২ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদাকে প্রধান করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশন গঠন করেন এবং এই কমিশন ১৯৭৪ সালে তাদের প্রতিবেদন পেশ করে। তৎকালীন বিশ্বপরিস্থিতি, জনগণের চাহিদা ও রাষ্ট্রীয় নীতির এক যুগোপযোগী প্রতিফলন দেখা যায় সেই কমিশনের সুপারিশগুলোতে। কিন্তু সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেসব সুপারিশকে অন্ধকারে পাঠানোর পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে শিক্ষা বিষয়ে একাধিক জনবিরোধী সুপারিশ প্রণীত হয়।
স্বাধীনতার পরের এই প্রথম পর্যায়ের চার বছরে সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকলেও কিছু সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, সে সময় বাংলাদেশের প্রায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকার জাতীয়করণ করে, যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার পথ অনেকটাই সুগম হয়। অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল। ওই চার বছরে বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে যেসব সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা দেখা গেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের বাংলাদেশ আরেকটু ভিন্ন অবস্থানে থাকত বলে অনুমান করা যায়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে নানা রুটিন কার্যক্রম গ্রহণ করা হলেও সার্বিক অর্থে সেগুলো বড় আকারে প্রভাব ফেলতে পারেনি মূলত দুটো কারণে। প্রথমত, অধিকাংশ সিদ্ধান্তই কোনো গবেষণা ছাড়া শীর্ষ মহল থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার সঙ্গে বাস্তবতার সংযোগ ছিল একেবারেই কম। যেমন—ড. খুদা কমিশনে যেভাবে জনমতের সহায়তায় ও তৎকালীন সম্পদ ব্যবহারের সক্ষমতা বিবেচনায় অগ্রগতির সুপারিশ করা হয়েছিল, সেসব প্রক্রিয়া পরবর্তী সময়ে থমকে যায় এবং নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মজিদ খান শিক্ষা কমিশন এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নব্বইয়ে স্বৈরাচার পতনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি তৎকালীন সরকারগুলো। ফলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই সময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
নব্বইয়ের পর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে তৃতীয় পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিশেষত বৈশ্বিক নানা অঙ্গীকারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার অগ্রগতিকে সমন্বিত করে দেখার প্রয়াস এই পর্বে লক্ষণীয়। ১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডের জমতিয়েনে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার যে আহ্বান জানানো হয়, বাংলাদেশে সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বিনা মূল্যে রূপান্তরিত করার সুফল পরবর্তী সময়ে দৃশ্যমান হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ে, আস্তে আস্তে কমতে থাকে ঝরে পড়ার হার। ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকে জেন্ডার সমতা অর্জিত হয় এবং পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিকেও এই হার কাছাকাছি চলে আসে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে, প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হওয়া এবং জেন্ডার সমতা অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে, যা বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। এই অগ্রগতির প্রভাব পরে মাধ্যমিক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়।
স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পর ড. খুদা কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশের তুলনায় সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ২০০০ সালে প্রথম শিক্ষানীতি গৃহীত হয়; যদিও সেটির সুপারিশ ও কৌশলসমূহ রাজনৈতিক কারণে বাস্তবায়িত হতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালে ড. খুদা কমিশনকে ভিত্তি ধরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও বর্তমান শিক্ষানীতি প্রণীত হলেও এর সব কৌশল এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর কারণ হিসেবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবকেই চিহ্নিত করা যায়। এটি ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির প্রভাব শুধু শিক্ষা খাতেই দৃশ্যমান হয় না, একটি নির্দিষ্ট সময় পরে সেগুলো রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। তৃতীয় পর্যায়ের নানা সময়ে আমরা শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত যেসব উদ্যোগ দেখতে পেয়েছি, সেগুলোর প্রভাবই এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। সম্প্রতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান রয়েছে।
তবে এ ক্ষেত্রে এটিও আলোচনার বিষয় যে শিক্ষার যেসব অগ্রগতি আজকে দৃশ্যমান, তার অধিকাংশই পরিমাণগত। প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই মানের ক্ষেত্রে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সমস্যা এখনো বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবস্থাপনায়, দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে এবং সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে। বর্তমানে নানা ধরনের অস্থিরতা ও নৈতিকতার অভাব যেভাবে দেখা যাচ্ছে, তাতে এটিই প্রতীয়মান হয় যে সুশিক্ষা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যথাক্রমে প্রান্তিক যোগ্যতা ও শিখনফল রয়েছে। গুণগত শিক্ষা অর্জন করা যাচ্ছে কি না, তার একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে শিক্ষার্থী সেগুলো অর্জন করতে পারছে কি না তার ওপর। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই এই অর্জন থেকে অনেক দূরে। জেএসসি, এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও সত্যিকার অর্থে শিখন কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। নীতিগত কিছু বিষয়েও ঘাটতি রয়েছে আমাদের; নীতি বাস্তবায়নেও রয়েছে সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ অতিমারিতে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অচলাবস্থা প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমাদের দুর্যোগকালীন শিক্ষা নিয়ে কোনো নীতি নেই। অন্যদিকে, বর্তমান শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করা বা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মতো অগ্রাধিকার বিষয়গুলো এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে এসব ঘাটতি নানাভাবে শিক্ষার মান অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পিছিয়ে আছে গবেষণায়। বৈশ্বিক নানা সূচকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তেমন কোনো অবস্থান নেই। প্রশাসকদের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধুঁকছে। বাণিজ্যিকীকরণও চলছে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে। রমরমায় রয়েছে নোট ও গাইড বইয়ের বাজার। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও যেসব বিষয়ে আমাদের দৃঢ় অবস্থানে থাকার প্রয়োজন ছিল, সেখানে উদাসীনতা রয়েছে।
এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই নজর দিতে হবে সরকার যেসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেগুলো দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ যেসব কৌশল গ্রহণ করেছে সরকার, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে অনেক বড় সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এর জন্য বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দও বাড়াতে হবে। শুধু শিক্ষার জন্য জাতীয় আয়ের ৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখতে হবে। এই বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেমন সম্পদের অভাব কাটিয়ে উঠতে পারবে, তেমনি শিক্ষক প্রশিক্ষণসহ গুণগত মান বৃদ্ধির যেসব সূচক রয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রায়োগিক কৌশল ব্যবহার করে সমস্যার দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষাকে স্থানীয় রাজনৈতিক বলয় থেকে মুক্ত করার রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। অগ্রগতির এই ধারা কখনো ধীর, কখনো দ্রুত। একই কথা প্রযোজ্য বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও। এত দিন যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করা হয়েছে, তাতে পরিমাণগত উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। এখন সময় এসেছে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রেই কেবল টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, সম্ভব হবে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও জোরালো করা।
গৌতম রায়
সহকারী অধ্যাপক শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্
২৯ জুন ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতির নির্দেশক হলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষার পরিসর নির্ধারণ এবং শিক্ষাকে উন্নয়নের ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করার বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়াবলির সঙ্গে যুক্ত। পৃথিবীব্যাপী শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রসমূহ একই সঙ্গে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গেও যুক্
২৯ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫