নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগস্ট এক সুধী সমাবেশে জাতির পিতার পক্ষে এ এলাকার জন্য একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তাপ্রসূত একটি প্রতিষ্ঠান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চার দশকের অধিক সময় পার্বত্য অঞ্চলের জনকল্যাণে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেচ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, পর্যটন স্পট উন্নয়ন, শিশুশিক্ষা ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবিকার্জনের লক্ষ্যে গাভি পালন প্রকল্প এবং উন্নত জাতের বাঁশ চাষ প্রকল্প, আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ সৃষ্টি, প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা মূল্যে সোলার প্যানেল বিতরণ, মিশ্র ফল ও মসলা চাষ প্রকল্প ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন পার্বত্য জেলায় বিগত ১০ বছরে ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ৩ হাজার ৯৮টি স্কিম ও ২৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে। গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন জাতি–গোষ্ঠীর মেধাবী, গরিব ও অসচ্ছল প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল ও প্রান্তিক পরিবারের উন্নয়নে গাভি পালন প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার ১৩টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জন দুস্থ নারীকে গাভি বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাভিগুলো থেকে ৫০০টির অধিক বাছুরের জন্ম হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত নারীরা গাভি পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন প্রকল্পের ১৩ হাজার উপকারভোগী নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক প্রত্যেককে ২৩৫টি করে বাঁশের চারা প্রদান করা হয়েছে। বাঁশভিত্তিক রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য ২৬০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পর প্রত্যেককে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। উর্বর জমিতে সৃজিত বাঁশগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। উৎপাদিত বাঁশগুলো বিক্রি করে উপকারভোগী নারীদের জীবনমানের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না, ১০ হাজার ৮৯০টি সোলার হোম সিস্টেম, ৫ হাজার ৮৯০টি মোবাইল চার্জার এবং ২ হাজার ৮১৫টি সোলার কমিউনিটি সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রসমূহ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে পাড়াকেন্দ্রে সোলার কমিউনিটি সিস্টেম ও সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের ফলে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীরা রাতে লেখাপড়া করতে পারছে আর পুরুষ ও নারীরা আয়বর্ধনমূলক হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত হতে পেরেছে।
মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ৫ হাজারটি মিশ্র ফলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানগুলোতে ফলন আসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চমূল্যের মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন করা হয়েছে এবং আরও ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচিত ২ হাজার ৬০০ কৃষককে মসলাগাছ রোপণপদ্ধতি ও পরিচর্যাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ উপকারভোগীর মাঝে মসলার চারা-কলম, ট্যাবলেট সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় শিশুদের স্কুলমুখীকরণের লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০০টি পাড়াকেন্দ্রে স্থানীয় ভাষায় প্রাক্–শিক্ষা ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রে ৩-৬ বছর বয়সী ৫৪ হাজার ৪৪২ জন শিশু প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ৪টি স্কুলে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনা খরচে থাকা–খাওয়াসহ যাবতীয় শিক্ষাসুবিধা পাচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতামূলক বিশেষ উঠান বৈঠকের আয়োজন ও বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ‘আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শেখে’ নামের বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও শিখনপদ্ধতির ওপর গাইডলাইন বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী কাঠামোতে মডেল পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
আইসিটি প্রকল্পের আওতায় দুই মেয়াদে ৬০০ জন স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীকে কম্পিউটার বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ২০০ জনকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং ১৫০ জনকে আউটসোর্সিং বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০ পরিবারকে কমলা, বিভিন্ন মিশ্র ফলের চারা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পসমূহের মধ্যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নয়নপুর মসজিদ থেকে বটতলী পর্যন্ত মাস্টার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ গ্রামে একযোগে মাত্র এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন জাতের ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। ১১-১৫ জানুয়ারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২০’-এর আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দেশ–বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এ উৎসবে দেশ-বিদেশের ১০০ জন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। এ বছরও ১১-১৫ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২১’–এ পাহাড় ও সমতলের ১০০ জন তরুণ-তরুণী বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সফর নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ ‘চরণরেখা তবঃ বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফর সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এ ছাড়া রাঙামাটির বেতবুনিয়ার বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূকেন্দ্র বেতবুনিয়া স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৭১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ–উপগ্রহ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে ও জনগণকে সচেতন করার জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মোট ২০টি স্প্রে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার সদর হাসপাতালে ৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রাঙামাটি পুলিশ হাসপাতালে ২টিসহ মোট ৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্লোমিটা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬ হাজার পরিবারকে সবজি বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে দুই দশক ধরে চলমান সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। এরপর এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিগত চার দশকের নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ICIMOD Mountain Prize-2019’ অর্জন করেছে। পার্বত্য এলাকার কোনো সংস্থার এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগস্ট এক সুধী সমাবেশে জাতির পিতার পক্ষে এ এলাকার জন্য একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তাপ্রসূত একটি প্রতিষ্ঠান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চার দশকের অধিক সময় পার্বত্য অঞ্চলের জনকল্যাণে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেচ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, পর্যটন স্পট উন্নয়ন, শিশুশিক্ষা ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবিকার্জনের লক্ষ্যে গাভি পালন প্রকল্প এবং উন্নত জাতের বাঁশ চাষ প্রকল্প, আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ সৃষ্টি, প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা মূল্যে সোলার প্যানেল বিতরণ, মিশ্র ফল ও মসলা চাষ প্রকল্প ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন পার্বত্য জেলায় বিগত ১০ বছরে ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ৩ হাজার ৯৮টি স্কিম ও ২৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে। গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন জাতি–গোষ্ঠীর মেধাবী, গরিব ও অসচ্ছল প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল ও প্রান্তিক পরিবারের উন্নয়নে গাভি পালন প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার ১৩টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জন দুস্থ নারীকে গাভি বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাভিগুলো থেকে ৫০০টির অধিক বাছুরের জন্ম হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত নারীরা গাভি পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন প্রকল্পের ১৩ হাজার উপকারভোগী নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক প্রত্যেককে ২৩৫টি করে বাঁশের চারা প্রদান করা হয়েছে। বাঁশভিত্তিক রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য ২৬০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পর প্রত্যেককে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। উর্বর জমিতে সৃজিত বাঁশগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। উৎপাদিত বাঁশগুলো বিক্রি করে উপকারভোগী নারীদের জীবনমানের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না, ১০ হাজার ৮৯০টি সোলার হোম সিস্টেম, ৫ হাজার ৮৯০টি মোবাইল চার্জার এবং ২ হাজার ৮১৫টি সোলার কমিউনিটি সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রসমূহ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে পাড়াকেন্দ্রে সোলার কমিউনিটি সিস্টেম ও সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের ফলে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীরা রাতে লেখাপড়া করতে পারছে আর পুরুষ ও নারীরা আয়বর্ধনমূলক হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত হতে পেরেছে।
মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ৫ হাজারটি মিশ্র ফলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানগুলোতে ফলন আসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চমূল্যের মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন করা হয়েছে এবং আরও ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচিত ২ হাজার ৬০০ কৃষককে মসলাগাছ রোপণপদ্ধতি ও পরিচর্যাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ উপকারভোগীর মাঝে মসলার চারা-কলম, ট্যাবলেট সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় শিশুদের স্কুলমুখীকরণের লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০০টি পাড়াকেন্দ্রে স্থানীয় ভাষায় প্রাক্–শিক্ষা ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রে ৩-৬ বছর বয়সী ৫৪ হাজার ৪৪২ জন শিশু প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ৪টি স্কুলে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনা খরচে থাকা–খাওয়াসহ যাবতীয় শিক্ষাসুবিধা পাচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতামূলক বিশেষ উঠান বৈঠকের আয়োজন ও বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ‘আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শেখে’ নামের বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও শিখনপদ্ধতির ওপর গাইডলাইন বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী কাঠামোতে মডেল পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
আইসিটি প্রকল্পের আওতায় দুই মেয়াদে ৬০০ জন স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীকে কম্পিউটার বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ২০০ জনকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং ১৫০ জনকে আউটসোর্সিং বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০ পরিবারকে কমলা, বিভিন্ন মিশ্র ফলের চারা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পসমূহের মধ্যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নয়নপুর মসজিদ থেকে বটতলী পর্যন্ত মাস্টার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ গ্রামে একযোগে মাত্র এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন জাতের ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। ১১-১৫ জানুয়ারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২০’-এর আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দেশ–বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এ উৎসবে দেশ-বিদেশের ১০০ জন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। এ বছরও ১১-১৫ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২১’–এ পাহাড় ও সমতলের ১০০ জন তরুণ-তরুণী বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সফর নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ ‘চরণরেখা তবঃ বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফর সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এ ছাড়া রাঙামাটির বেতবুনিয়ার বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূকেন্দ্র বেতবুনিয়া স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৭১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ–উপগ্রহ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে ও জনগণকে সচেতন করার জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মোট ২০টি স্প্রে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার সদর হাসপাতালে ৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রাঙামাটি পুলিশ হাসপাতালে ২টিসহ মোট ৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্লোমিটা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬ হাজার পরিবারকে সবজি বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে দুই দশক ধরে চলমান সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। এরপর এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিগত চার দশকের নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ICIMOD Mountain Prize-2019’ অর্জন করেছে। পার্বত্য এলাকার কোনো সংস্থার এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগস্ট এক সুধী সমাবেশে জাতির পিতার পক্ষে এ এলাকার জন্য একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তাপ্রসূত একটি প্রতিষ্ঠান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চার দশকের অধিক সময় পার্বত্য অঞ্চলের জনকল্যাণে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেচ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, পর্যটন স্পট উন্নয়ন, শিশুশিক্ষা ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবিকার্জনের লক্ষ্যে গাভি পালন প্রকল্প এবং উন্নত জাতের বাঁশ চাষ প্রকল্প, আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ সৃষ্টি, প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা মূল্যে সোলার প্যানেল বিতরণ, মিশ্র ফল ও মসলা চাষ প্রকল্প ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন পার্বত্য জেলায় বিগত ১০ বছরে ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ৩ হাজার ৯৮টি স্কিম ও ২৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে। গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন জাতি–গোষ্ঠীর মেধাবী, গরিব ও অসচ্ছল প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল ও প্রান্তিক পরিবারের উন্নয়নে গাভি পালন প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার ১৩টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জন দুস্থ নারীকে গাভি বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাভিগুলো থেকে ৫০০টির অধিক বাছুরের জন্ম হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত নারীরা গাভি পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন প্রকল্পের ১৩ হাজার উপকারভোগী নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক প্রত্যেককে ২৩৫টি করে বাঁশের চারা প্রদান করা হয়েছে। বাঁশভিত্তিক রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য ২৬০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পর প্রত্যেককে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। উর্বর জমিতে সৃজিত বাঁশগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। উৎপাদিত বাঁশগুলো বিক্রি করে উপকারভোগী নারীদের জীবনমানের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না, ১০ হাজার ৮৯০টি সোলার হোম সিস্টেম, ৫ হাজার ৮৯০টি মোবাইল চার্জার এবং ২ হাজার ৮১৫টি সোলার কমিউনিটি সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রসমূহ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে পাড়াকেন্দ্রে সোলার কমিউনিটি সিস্টেম ও সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের ফলে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীরা রাতে লেখাপড়া করতে পারছে আর পুরুষ ও নারীরা আয়বর্ধনমূলক হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত হতে পেরেছে।
মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ৫ হাজারটি মিশ্র ফলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানগুলোতে ফলন আসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চমূল্যের মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন করা হয়েছে এবং আরও ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচিত ২ হাজার ৬০০ কৃষককে মসলাগাছ রোপণপদ্ধতি ও পরিচর্যাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ উপকারভোগীর মাঝে মসলার চারা-কলম, ট্যাবলেট সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় শিশুদের স্কুলমুখীকরণের লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০০টি পাড়াকেন্দ্রে স্থানীয় ভাষায় প্রাক্–শিক্ষা ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রে ৩-৬ বছর বয়সী ৫৪ হাজার ৪৪২ জন শিশু প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ৪টি স্কুলে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনা খরচে থাকা–খাওয়াসহ যাবতীয় শিক্ষাসুবিধা পাচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতামূলক বিশেষ উঠান বৈঠকের আয়োজন ও বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ‘আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শেখে’ নামের বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও শিখনপদ্ধতির ওপর গাইডলাইন বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী কাঠামোতে মডেল পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
আইসিটি প্রকল্পের আওতায় দুই মেয়াদে ৬০০ জন স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীকে কম্পিউটার বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ২০০ জনকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং ১৫০ জনকে আউটসোর্সিং বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০ পরিবারকে কমলা, বিভিন্ন মিশ্র ফলের চারা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পসমূহের মধ্যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নয়নপুর মসজিদ থেকে বটতলী পর্যন্ত মাস্টার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ গ্রামে একযোগে মাত্র এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন জাতের ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। ১১-১৫ জানুয়ারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২০’-এর আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দেশ–বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এ উৎসবে দেশ-বিদেশের ১০০ জন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। এ বছরও ১১-১৫ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২১’–এ পাহাড় ও সমতলের ১০০ জন তরুণ-তরুণী বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সফর নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ ‘চরণরেখা তবঃ বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফর সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এ ছাড়া রাঙামাটির বেতবুনিয়ার বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূকেন্দ্র বেতবুনিয়া স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৭১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ–উপগ্রহ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে ও জনগণকে সচেতন করার জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মোট ২০টি স্প্রে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার সদর হাসপাতালে ৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রাঙামাটি পুলিশ হাসপাতালে ২টিসহ মোট ৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্লোমিটা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬ হাজার পরিবারকে সবজি বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে দুই দশক ধরে চলমান সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। এরপর এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিগত চার দশকের নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ICIMOD Mountain Prize-2019’ অর্জন করেছে। পার্বত্য এলাকার কোনো সংস্থার এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগস্ট এক সুধী সমাবেশে জাতির পিতার পক্ষে এ এলাকার জন্য একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ঘোষণা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত চিন্তাপ্রসূত একটি প্রতিষ্ঠান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চার দশকের অধিক সময় পার্বত্য অঞ্চলের জনকল্যাণে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেচ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ, পর্যটন স্পট উন্নয়ন, শিশুশিক্ষা ও মাতৃস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও জীবিকার্জনের লক্ষ্যে গাভি পালন প্রকল্প এবং উন্নত জাতের বাঁশ চাষ প্রকল্প, আইসিটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদ সৃষ্টি, প্রত্যন্ত এলাকায় বিনা মূল্যে সোলার প্যানেল বিতরণ, মিশ্র ফল ও মসলা চাষ প্রকল্প ইত্যাদি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
ভৌত অবকাঠামো নির্মাণকাজে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তিন পার্বত্য জেলায় বিগত ১০ বছরে ১ হাজার ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ৩ হাজার ৯৮টি স্কিম ও ২৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প সমাপ্ত করেছে। গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং দেশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন জাতি–গোষ্ঠীর মেধাবী, গরিব ও অসচ্ছল প্রায় ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর ২ কোটি টাকার শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল ও প্রান্তিক পরিবারের উন্নয়নে গাভি পালন প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার ১৩টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ জন দুস্থ নারীকে গাভি বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গাভিগুলো থেকে ৫০০টির অধিক বাছুরের জন্ম হয়েছে। প্রকল্পের আওতাভুক্ত নারীরা গাভি পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে উন্নত জাতের বাঁশ উৎপাদন প্রকল্পের ১৩ হাজার উপকারভোগী নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানপূর্বক প্রত্যেককে ২৩৫টি করে বাঁশের চারা প্রদান করা হয়েছে। বাঁশভিত্তিক রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের জন্য ২৬০ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদানের পর প্রত্যেককে ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। উর্বর জমিতে সৃজিত বাঁশগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। উৎপাদিত বাঁশগুলো বিক্রি করে উপকারভোগী নারীদের জীবনমানের উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের লক্ষ্য অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে না, ১০ হাজার ৮৯০টি সোলার হোম সিস্টেম, ৫ হাজার ৮৯০টি মোবাইল চার্জার এবং ২ হাজার ৮১৫টি সোলার কমিউনিটি সিস্টেম বিতরণ করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রসমূহ ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে পাড়াকেন্দ্রে সোলার কমিউনিটি সিস্টেম ও সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের ফলে দুর্গম এলাকার ছাত্রছাত্রীরা রাতে লেখাপড়া করতে পারছে আর পুরুষ ও নারীরা আয়বর্ধনমূলক হস্তশিল্পের কাজে নিয়োজিত হতে পেরেছে।
মিশ্র ফল চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় ৫ হাজারটি মিশ্র ফলের বাগান সৃজন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানগুলোতে ফলন আসা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চমূল্যের মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১ হাজার ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন করা হয়েছে এবং আরও ৮০০টি মসলাবাগান সৃজন প্রক্রিয়াধীন। নির্বাচিত ২ হাজার ৬০০ কৃষককে মসলাগাছ রোপণপদ্ধতি ও পরিচর্যাকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ১ হাজার ৮০০ উপকারভোগীর মাঝে মসলার চারা-কলম, ট্যাবলেট সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন প্রজাতির সবজি বীজ প্রদান করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও ইউনিসেফের যৌথ অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের আওতায় শিশুদের স্কুলমুখীকরণের লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫০০টি পাড়াকেন্দ্রে স্থানীয় ভাষায় প্রাক্–শিক্ষা ও প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পাড়াকেন্দ্রে ৩-৬ বছর বয়সী ৫৪ হাজার ৪৪২ জন শিশু প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় দুর্গম অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য ৪টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ৪টি স্কুলে প্রতিবছর ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ বিনা খরচে থাকা–খাওয়াসহ যাবতীয় শিক্ষাসুবিধা পাচ্ছে। ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রে করোনা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতামূলক বিশেষ উঠান বৈঠকের আয়োজন ও বাড়ি পরিদর্শনের মাধ্যমে পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ‘আমার শিশু ঘরে থাকে ঘরে শেখে’ নামের বিশেষ শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও শিখনপদ্ধতির ওপর গাইডলাইন বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্থায়ী কাঠামোতে মডেল পাড়াকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
আইসিটি প্রকল্পের আওতায় দুই মেয়াদে ৬০০ জন স্থানীয় বেকার যুবক-যুবতীকে কম্পিউটার বিষয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ এবং ২০০ জনকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ এবং ১৫০ জনকে আউটসোর্সিং বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৪ জন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৬০ পরিবারকে কমলা, বিভিন্ন মিশ্র ফলের চারা ও প্রশিক্ষণ প্রদান ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পসমূহের মধ্যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি জেলার উপজেলা সদর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার সদর উপজেলার জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নয়নপুর মসজিদ থেকে বটতলী পর্যন্ত মাস্টার ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তিন পার্বত্য জেলায় ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে ৪ হাজার ৩০০ গ্রামে একযোগে মাত্র এক ঘণ্টায় ১ লাখ ৪০ হাজার পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন জাতের ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। ১১-১৫ জানুয়ারি ২০২০ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২০’-এর আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দেশ–বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এ উৎসবে দেশ-বিদেশের ১০০ জন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী তরুণ-তরুণী বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছে। এ বছরও ১১-১৫ জানুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ২০২১’–এ পাহাড় ও সমতলের ১০০ জন তরুণ-তরুণী বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে। পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সফর নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্থ ‘চরণরেখা তবঃ বঙ্গবন্ধু ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সফর সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এ ছাড়া রাঙামাটির বেতবুনিয়ার বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ভূকেন্দ্র বেতবুনিয়া স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশনে নির্মিত ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৭১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়ায় ভূ–উপগ্রহ কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেছিলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে ও জনগণকে সচেতন করার জন্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে মোট ২০টি স্প্রে মেশিন হস্তান্তর করা হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলার সদর হাসপাতালে ৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং রাঙামাটি পুলিশ হাসপাতালে ২টিসহ মোট ৪৭টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্লোমিটা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬ হাজার পরিবারকে সবজি বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হয়েছে।
সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে দুই দশক ধরে চলমান সংঘাতের পর ১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসায় পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতোধারার সঙ্গে সংযুক্ত হতে পেরেছে। এরপর এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে, যা ইতিমধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিগত চার দশকের নিরলস প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘ICIMOD Mountain Prize-2019’ অর্জন করেছে। পার্বত্য এলাকার কোনো সংস্থার এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।
নাদিম নেওয়াজ

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।
প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?
জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগ
২৮ জুন ২০২১
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।
ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?
তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।
মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?
তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আরও খবর পড়ুন:

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগ
২৮ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম।
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।
অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।
গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।
ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?
শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।
আরও খবর পড়ুন:

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগ
২৮ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন
২০ মার্চ ২০২৫ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান।
জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।
দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।
নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।
মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।
গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।
ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।
আরও খবর পড়ুন:

পার্বত্য এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ‘অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রাম সফরকালে একটি পৃথক বোর্ড গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এর ছয় মাস পর ভূমি প্রশাসন ও ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত রাঙামাটি সার্কিট হাউসে ১৯৭৩ সালের ৯ আগ
২৮ জুন ২০২১
উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০ মার্চ ২০২৫
সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তম
২০ মার্চ ২০২৫
ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার...
২০ মার্চ ২০২৫