Ajker Patrika

স্বাধীনতা: প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কি

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১০: ২৯
স্বাধীনতা: প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কি

১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বাঙালি জাতিকে দাবিয়ে রাখার মতলবে ২৫ মার্চ রাতে সেনা অভিযান চালিয়েছিলেন এবং এর জন্য বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে হয়েছিল। শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে তাঁকে কুমন্ত্রণা দিয়েছিলেন পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। নিজে ক্ষমতায় বসার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ভুট্টোকে কাণ্ডজ্ঞানহীন করে তুলেছিল। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কারণেই ভুট্টোর পক্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়া সম্ভব হয়েছিল।

সেই জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশ সফরে এলে তাঁকে দেখার জন্য একশ্রেণির মানুষের মধ্যে যে উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। যে ভুট্টো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে জাতিসংঘে গিয়ে প্রয়োজনে ঘাস খেয়েও হাজার বছর যুদ্ধ করার আস্ফালন করেছিলেন, সেই ভুট্টোকে দেখার জন্য বাঙালি অত উতলা হয়ে উঠেছিল কেন?

এটা ঠিক যে ৯ মাসে আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি, অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আমাদের বাহিনীর যে প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র, সামর্থ্য তৈরি হয়েছিল, তা কি সত্যি পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করার জন্য যথেষ্ট ছিল? ভাগ্যিস, ওই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন বিচক্ষণ, সাহসী মানুষ। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল আমেরিকার বিরুদ্ধে এক বর্ম হিসেবে। ভারত তার নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কোমর বেঁধে না নামলে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ৯ মাসে বাস্তবে রূপ পেত কি না, তা সত্যি এক বড় প্রশ্ন।

আমরা যে বলি, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে আর মুষ্টিমেয় মানুষ পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, এটা নিয়েও আমার কিছুটা সংশয় আছে। আমার সংশয়ের পক্ষে তথ্য, যুক্তি আছে। কিন্তু সেটা এখানে নিষ্প্রয়োজন। আদর্শভিত্তিক একটি মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির দরকার, তার ঘাটতি যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে ছিল, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছিল। আমার সঙ্গে অনেকে যদি দ্বিমত পোষণও করেন, তবু আমি এটাই বলব যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের একটি ছোট অংশই দৃঢ় আদর্শিক বিশ্বাসের অধিকারী ছিল। অনেকেই ঘটনাক্রমে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছেন। পাকিস্তান বাহিনীর নির্বিচার হামলার মুখে জান বাঁচানো ফরজ বিবেচনায় অনেকে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছেন। আরেকটি অংশ মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন সতর্ক হিসাব-নিকাশ করে। তাঁরা বেশি বুদ্ধিমান।

চেতনাগতভাবে একটি বড় গ্যাপ থাকার বিষয়টি জাতীয় নেতৃত্বের কেউ কেউ বুঝতেন বলেই আমার মনে হয়। সে জন্য এই গ্যাপ পূরণের কৌশল হিসেবে শর্টকাট পথ নেওয়া হয়েছিল রাষ্ট্রীয় চার নীতি ঘোষণার মাধ্যমে; বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র নীতি হিসেবে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে, এটা সম্ভবত কমিউনিস্ট পার্টিরও চিন্তার মধ্যে ছিল না। কিন্তু যখন এগুলো রাষ্ট্রীয় নীতি হলো, তখন কমিউনিস্ট পার্টি ও এই ধারার বামেরা কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়েছিলেন বলে এখন আমার মনে হয়।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর হাতে গোনা কয়েকজন বিশ্বস্ত সহযোগী ছাড়া আওয়ামী লীগ দল ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো মোটেও ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক নীতির প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে দলের মধ্যে প্রকাশ্যে কেউ এই নীতির বিরোধিতা করেননি, কিন্তু এই নীতি বাস্তবায়নের পথে যতভাবে অন্তরায় সৃষ্টি করা যায়, সেই চেষ্টা তাঁরা করেছেন।

রাষ্ট্রীয় নীতি যেহেতু সমাজতন্ত্র, সেহেতু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী দলগুলোর আলাদা আলাদা অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা খুব জরুরি ছিল না। ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ স্বাধীনতার পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব তুলেছিলেন। সেটা বঙ্গবন্ধু আমলে নেননি।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্র ইউনিয়নের ওই সম্মেলনে চার নেতার ছবি বেশ বড় করে টানানো হয়েছিল। প্রথমে বঙ্গবন্ধু, তারপর মওলানা ভাসানী, মণি সিংহ ও মোজাফফর আহমেদ। এই চারজনকে সম্মেলনে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল জাতীয় ঐক্যের একটি ভিত্তি তৈরির আশা থেকেই হয়তো। সম্মেলনে মওলানা ভাসানী অনুপস্থিত থেকে নিজেকে আলাদা রাখার ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন।

সম্মেলন উদ্বোধনের আগে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতিসহ আরও কিছু গঠনমূলক স্লোগান দিয়েছিলেন। শেষে বলেছিলেন—জয় সমাজতন্ত্র। পাশে দাঁড়ানো ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি সেলিম ভাইয়ের কানে কানে বলেছিলেন, একবার জয় বাংলাও বলো। এই স্লোগান না দিলে আমরা তো সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে বাঁচতে পারব না।

সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলা করার জন্য জয় বাংলা স্লোগানকে কার্যকর মনে করার যুক্তি হয়তো এটাই যে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই স্লোগান মুক্তিকামী বাঙালিকে উজ্জীবিত করেছিল। কিন্তু এখন? জয় বাংলা স্লোগান দিতে আইন করতে হয়!

ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওই সম্মেলনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগকে একীভূত করার প্রস্তাব দেওয়া হলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নূরে আলম সিদ্দিকী এর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, এই একীভূত হওয়ার কথাটি শুনতে ভালো, কিন্তু আসলে ভালো কিছু করার জন্য প্রতিযোগিতা থাকতে হয়। আসুন, আমরা পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করি।

এই প্রতিযোগিতার বিষয়ে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছিলেন, ঠিক আছে, আসুন, আমরা অশিক্ষার বিরুদ্ধে, নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে, অপুষ্টির বিরুদ্ধে, সর্বোপরি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার প্রতিযোগিতায় নামি।  

কিন্তু ছাত্রলীগ কোন প্রতিযোগিতায় নেমেছিল, সেটা দেখা গেছে মুহসীন হলে সেভেন মার্ডার ও জগন্নাথ হলে ছাত্র ইউনিয়নের ওপর হামলার ঘটনায়।
স্বাধীনতার এক বছর যেতে না যেতেই দেশের মধ্যে অস্থিরতার উপাদান বাড়ছিল। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতার আচরণ, কার্যকলাপে মানুষের মনে বিরূপতা বাড়ছিল। বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তাও কমছিল নানা প্রচার-অপপ্রচারের কারণে। বঙ্গবন্ধু নিজেও বিষয়টি টের পেয়েছিলেন কি না, বলা কঠিন।
এখানে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এটা আমি সাবেক ছাত্রনেতা ও কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কাছেই শুনেছি।

বঙ্গবন্ধু সেলিম ভাইকে খুবই পছন্দ করতেন, ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধু সেলিম ভাইকে স্নেহ করতেন, বঙ্গবন্ধুর অফিসে যেতে সেলিম ভাইয়ের কোনো পূর্বানুমতি লাগত না।

১৯৭৩ সালের কোনো একদিন বিশেষ কোনো কাজে সেলিম ভাই গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। সেলিম ভাই রুমে ঢুকতেই বঙ্গবন্ধু বলে ওঠেন, আরে সেলিম, আজ আমি সরকারি কর্মকর্তাদের একটি বিশেষ নির্দেশ দিলাম, আর আজই তুই আসলি!

সেলিম ভাই কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সারা জীবন কষ্ট করেছে, জেল-জুলুম সহ্য করেছে। তাই আমি আমার কিছু নেতা-কর্মীকে ব্যবসার জন্য লাইসেন্স পারমিট দিতে বলেছি। দলের জন্য, দলের নেতা-কর্মীদের জন্য বঙ্গবন্ধুর মনে দরদ থাকবে, ভালোবাসা থাকবে—এটাই স্বাভাবিক।

আমাদের দেশের রাজনীতির একটি বড় দুর্বলতা হলো ব্যক্তির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। অবশ্য শুধু আমাদের দেশে কেন, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই তো দেখা যায়, রাজনীতি চলে মূলত ব্যক্তির ইমেজকে কেন্দ্র করেই। যদিও বলা হয় যে ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে বড় দেশ। দল অবশ্য রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মার্ক্সবাদীরা অবশ্য বলেন যে ব্যক্তি দলের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। আবার দল পারে না শ্রেণির ঊর্ধ্বে উঠতে।

এ কথাগুলো বলার পেছনে কারণ আছে। স্বাধীনতার আগের প্রেক্ষাপট বাদ দিলেও বাংলাদেশ পর্ব শুরু হওয়ার পরের রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত নিয়ে আলোচনার সময় নেতা, নেতৃত্ব, দল, শ্রেণি ইত্যাদি বিষয় মাথায় না থাকলে কথা বললে তা সরলীকরণ দোষে দুষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতি-শিক্ষা-সংস্কৃতি কীভাবে, কোন লক্ষ্যে পরিচালিত হবে, তার কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা সম্ভবত নেতৃত্বের মাথায় ছিল না। স্বাধীনতার পরপরই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে অসংগতিগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল, তা ওই প্রস্তুতির অভাব বা ‘দায়িত্ব পেলে সব করে ফেলব’ মানসিকতার জন্যই হচ্ছিল। একটি নাটক সফল মঞ্চায়নের জন্যও রিহার্সাল বা মহড়া দিতে হয়।

এই মহড়ার ঘাটতির জন্যই কি স্বাধীনতার এত বছর পরও রাজনীতিতে সুস্থ ধারা গড়ে উঠল না?

বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এসব বিষয়ে প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক নাদিম নেওয়াজ।

নাদিম নেওয়াজ
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার

দেশে দিন দিন ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। এ বিষয়ে আপনার মত জানতে চাই।

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে, যা অর্থনীতির আধুনিকায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি অগ্রগতি। এটি শুধু সময় সাশ্রয় করে না, বরং নিরাপদ, স্বচ্ছ ও কার্যকর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাইম ব্যাংক সব সময় গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে উদ্ভাবনী ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। আমাদের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, কিউআর কোড পেমেন্ট ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবা গ্রাহকদের সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক গ্রাহকদের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে, যাতে তাঁরা নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত ও আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

কার্ড ব্যবহারে দেশের মানুষের আগ্রহ কেমন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: দেশে মানুষের কার্ড ব্যবহারের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কার্ড ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

প্রাইম ব্যাংকের কর্মীরা শুধু কার্ড সরবরাহে সীমাবদ্ধ নন, বরং সরকারের ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। দৈনন্দিন লেনদেনকে আরও সহজ ও সুরক্ষিত করতে আমরা ডিজিটাল চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাহকদের জন্য কী ধরনের অফার দিচ্ছেন?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: গ্রাহকদের উৎসবমুখর অভিজ্ঞতা আরও আনন্দদায়ক করতে আমরা বিভিন্ন খাতে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার করছি। ইফতার ও সেহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফার, বাই ওয়ান গেট ওয়ান/টু/থ্রি সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রোসারি ও রিটেইল দোকানগুলোতে বিশেষ ছাড় এবং ক্যাশব্যাক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কার্ডহোল্ডাররা যাতে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য জনপ্রিয় টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার রাখা হয়েছে। গ্রাহক অভিজ্ঞতা ও সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।

প্রাইম ব্যাংকের কার্ডের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন বছরে আমাদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার দ্বিগুণ হয়েছে, যা গ্রাহকদের আস্থা ও ডিজিটাল পেমেন্টের প্রতি তাঁদের আগ্রহকে প্রতিফলিত করে। সহজলভ্যতা, নিরাপত্তা ও আধুনিক সুবিধার কারণে গ্রাহকেরা আমাদের কার্ড ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।

এ ছাড়া আমাদের অনলাইন ব্যাংকিং অ্যাপ ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ড থেকে যেকোনো অ্যাকাউন্টে সহজে ফান্ড ট্রান্সফার করতে পারেন। সুদমুক্ত সময়সীমার সুবিধাসহ কোনো অতিরিক্ত চার্জ ছাড়া ওয়ালেট ট্রান্সফার ও টপ-আপ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্ডভেদে গ্রাহকেরা দেশে-বিদেশে ১ হাজার ৪০০-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কার্ডের ব্যবহার বাড়াতে আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার?

জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল: আমাদের নির্বাচিত অ্যাকাউন্টধারী ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য বান্ডেল ক্রেডিট কার্ডসহ বিশেষ সুবিধা প্রদান করছি। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন ধরনের ক্রেডিট কার্ড চালু করা হয়েছে, যা ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটাবে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করবে। সর্বোচ্চ আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে ডেবিট কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করতে করপোরেট প্রিপেইড কার্ড চালু করা হয়েছে, বিশেষত গার্মেন্টসের কর্মীদের জন্য, যাঁরা এখনো নগদে মজুরি পেয়ে থাকেন। গার্মেন্টস কারখানার সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে আমরা কর্মীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনছি। পাশাপাশি যেসব এলাকায় ব্যাংকিং সুবিধা সীমিত, সেখানে আমাদের এজেন্ট ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ডেবিট কার্ড ইস্যু ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা দেওয়া হচ্ছে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

নিরাপত্তা ও সেবায় মার্কেট শেয়ারে এগিয়ে সিটি ব্যাংক

দেশের ক্রেডিট কার্ড বাজারে সিটি ব্যাংক এক নির্ভরযোগ্য নাম, বিশেষ করে একমাত্র আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) ক্রেডিট কার্ড ইস্যু এবং অ্যাকুয়ারের ক্ষেত্রে। উদ্ভাবন এবং গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা দিয়ে নেতৃত্বের আসন মজবুত করেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ড বিভাগের প্রধান তৌহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান নূর।

আসাদুজ্জামান নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৮
তৌহিদুল আলম
তৌহিদুল আলম

সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের সাফল্যের মূল কারণ কী এবং গ্রাহকসংখ্যা ও লেনদেনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি কোন অবস্থায় রয়েছে?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ২০০৪ সালে প্রথম ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে এবং ২০০৯ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস (অ্যামেক্স) কার্ড ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর লাউঞ্জ-সুবিধা চালু করার মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড খাতে উদ্ভাবনী সেবা প্রদান করে, যা সিটি ব্যাংককে শীর্ষ স্থানে নিয়ে আসে। বর্তমানে, সিটি ব্যাংক প্রায় ৭ লাখ ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করেছে এবং দেশের ৪৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১৫-২০ শতাংশ লেনদেন পরিচালিত হয় আমাদের কার্ডের মাধ্যমে। এর পেছনে রয়েছে মানসম্মত সেবা, উদ্ভাবনী অফার এবং গ্রাহকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

এই ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড প্রোডাক্টগুলোর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং গ্রাহকেরা কেন এটি বেশি ব্যবহার করছেন?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স এবং ভিসা—দুটি পেমেন্ট স্কিমের ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করে। তবে বাংলাদেশে আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ক্রেডিট কার্ড ইস্যু কর্তা, যা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এর ট্রাভেল, ডাইনিং ও লাইফস্টাইল অফারের কারণে অ্যামেক্স কার্ডই আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বেশি ব্যবহৃত।

ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের জন্য বিশেষ অফার বা সুবিধা প্রদান করছে কি? কেন গ্রাহকেরা এই ব্যাংকের কার্ডে বেশি আগ্রহী?

তৌহিদুল আলম: অবশ্যই। সিটি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করছে, যেমন অ্যামেক্স কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ভিসা ইনফাইনাইট কার্ডে ক্যাশব্যাক এবং এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, মিট অ্যান্ড গ্রিট, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ডিসকাউন্ট অফার। আমরা একমাত্র অ্যামেক্স ইস্যুয়ার ও অ্যাকুয়ারার হওয়ায়, গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সুবিধা দিতে পারি, যা তাদের আরও আকৃষ্ট করছে।

মোবাইল অ্যাপে ক্রেডিট কার্ড সেবার বিশেষত্ব কী?

তৌহিদুল আলম: সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ডিজিটাল সুবিধার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন ফিচার যুক্ত করছে। আমাদের সিটিটাচ অ্যাপ্লিকেশনটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যাংকিং অ্যাপ। গ্রাহকেরা অ্যাপের মাধ্যমে বিল পেমেন্ট, কার্ড টু অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার, এমএফএস টু কার্ড ট্রান্সফার, কিউআর পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি ইউটিলিটি সার্ভিস পেমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সহজে সম্পন্ন করতে পারেন। এ ছাড়া মেম্বারশিপ রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে পারচেইজ, পারসোনাল ডিটেইল চেঞ্জ এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন ম্যানেজমেন্টও এই প্ল্যাটফর্মে উপলব্ধ। গ্রাহকদের সুবিধা ও চাহিদা অনুযায়ী আমরা নিয়মিত নতুন নতুন সেবা যোগ করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

১৫০০‍-এর বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে সুবিধা দেয় ঢাকা ব্যাংক

ক্রেডিট কার্ডের জগতে প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। সেখানে কীভাবে ঢাকা ব্যাংক তার অবস্থান ধরে রেখেছে, ভবিষ্যৎ কী পরিকল্পনা, জানিয়েছেন ঢাকা ব্যাংকের এমডি শেখ মোহাম্মদ মারুফ। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মাহফুজুল ইসলাম

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড সেবা ও বাজারে প্রতিযোগিতা সম্পর্কে কিছু বলুন?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আমরা কন্টাক্টলেস ও ডুয়াল কারেন্সি কার্ড, ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস এবং কম বা শূন্য বার্ষিক ফির সুবিধা প্রদান করি। দ্রুত কার্ড ইস্যু, ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার এবং মোবাইল অ্যাপে সহজ তথ্য অ্যাকসেসের সুবিধা রয়েছে। বিভিন্ন উৎসব অফার, কো-ব্র্যান্ড কার্ড এবং ১৫০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে প্রবেশের সুবিধা থাকায় আমাদের কার্ডের চাহিদা বাড়ছে।

অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কীভাবে আলাদা বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ঢাকা ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট কার্ডে ক্যাশব্যাক, ডিসকাউন্ট, রিওয়ার্ড পয়েন্টস, কম লেনদেন ও বার্ষিক ফি, কন্টাক্টলেস সুবিধা এবং উন্নত সুরক্ষা যেমন ওটিপি ও ফ্রড ডিটেকশন রয়েছে। ব্যবহারবান্ধব মোবাইল অ্যাপ এবং ২৪/৭ কাস্টমার কেয়ার সেবা গ্রাহকদের নিরাপদ অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।

দেশে ক্রেডিট কার্ডধারীদের মধ্যে কোন ধরনের লেনদেন প্রবণতা বেশি দেখা যায়?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ডধারীরা ফ্যাশন, ইলেকট্রনিকস, গৃহসজ্জা, দৈনন্দিন পণ্য, রেস্টুরেন্ট, ফুড ডেলিভারি, হোটেল ও ভ্রমণ বুকিং এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধে বেশি ব্যবহার করেন। ডিজিটালাইজেশন ও অনলাইন সেবার সহজলভ্যতা এই প্রবণতাগুলোকে ক্রমাগত বাড়াচ্ছে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সুদের হার ও ফি-সংক্রান্ত নীতি কীভাবে নির্ধারণ করা হচ্ছে, এটি কি গ্রাহকবান্ধব?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ব্যাংকগুলো সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা বা বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী রেট নির্ধারণ করে, তবে ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারে না। বেশির ভাগ কার্ডে ৪৫ দিন বিনা সুদে কেনাকাটার সুযোগ থাকে। বার্ষিক ফি, লেট পেমেন্ট ফি এবং ক্যাশ উত্তোলন ফি প্রযোজ্য হতে পারে এবং অনেক কার্ডে রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা ক্যাশব্যাক সুবিধা থাকে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার ও বিলম্বিত পেমেন্টে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে।

গ্রাহককে ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বিভাগে অভিযোগ জমা দিতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ট্র্যাকিং নম্বর দেয়, যা দিয়ে অভিযোগের অবস্থা ট্র্যাক করা যায়। সাধারণত ৭-১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এবং ৩০-৪৫ দিন পর সম্পূর্ণ সমাধান পাওয়া যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ক্রেডিট কার্ডসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং ব্যাংকগুলোকে ফি, সুদের হার এবং শর্তাবলি সম্পর্কে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে

ঢাকা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড কতটা নিরাপদ?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: আমাদের ব্যাংক লেনদেনের নিরাপত্তায় পিসিআই-ডিএসএস এবং আইএসও ২৭০০৩২ কমপ্লায়েন্ট। অনলাইন ট্রানজেকশনে ডেটা এনক্রিপশন ও দুই-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহৃত হয়। লেনদেন রিয়েল-টাইমে মনিটর করা হয় এবং গ্রাহকদের নিরাপত্তা টিপস দেওয়া হয়। সন্দেহজনক লেনদেন হলে ২৪/৭ সেবা হটলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যেসব গ্রাহক প্রথমবারের মতো ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, তাঁদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: প্রথমবার ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার আগে ক্রেডিট অবস্থা ও আয়প্রবাহ চেক করুন। সঠিক কার্ড নির্বাচন করে সুদ, ফি এবং অফার বুঝে ব্যবহার করুন। ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম না করার চেষ্টা করুন, সময়মতো পেমেন্ট করুন এবং অটো পেমেন্ট সেট আপ করুন।

ঢাকা ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবায় ভবিষ্যতে কী ধরনের নতুন উদ্ভাবন বা প্রযুক্তি সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে?

শেখ মোহাম্মদ মারুফ: ক্রেডিট কার্ড সুরক্ষা বাড়াতে বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন, এআই ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে। ঢাকা ব্যাংক তাদের মোবাইল অ্যাপে এআই-ভিত্তিক গ্রাহকসেবা এবং চ্যাটবট সংযুক্ত করতে পারে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বিশেষ আয়োজন

মাস্টারকার্ডেই সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বাংলাদেশে যাত্রা শুরুর পর মাস্টারকার্ড এখন কোন অবস্থানে রয়েছে, গ্রাহকের সেবার মান ও নিরাপত্তার ধরন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন খান

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৮: ৫০
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাস্টারকার্ডের যাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: আমরা বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করি, যখন বিশ্বে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছিল। ১৯৯৭ সালে এএনজেড গ্রিনলেজ (পরে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) ব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু করি, যা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও ই-কমার্স খাতকে লক্ষ্য রেখে প্রথম অফিস চালু করা হয়। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ই-কমার্সের বিকাশের সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্টের চাহিদা বেড়েছে, যেখানে মাস্টারকার্ড গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

গ্রাহকসেবার মান নিয়ে কিছু বলুন।

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় সর্বোচ্চ মানের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করে, যাতে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন সম্ভব হয়। আমাদের উদ্ভাবনী সলিউশন গ্রাহকদের দৈনন্দিন আর্থিক কার্যক্রম সহজ করে, বিশেষ করে কন্টাক্টলেস পেমেন্ট দ্রুত ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দেয়। কোভিড মহামারির সময় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মাস্টারকার্ড সরাসরি কার্ড ইস্যু না করে, বিশ্বব্যাপী ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।

গ্রাহকের আস্থা অর্জনে কতটা সফল?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে মাস্টারকার্ড আশাতীত সফল হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। কারণ, আমাদের টোকেনাইজেশন প্রযুক্তি কার্ড তথ্য সুরক্ষিত রাখে, আর নানা অফার ও সুবিধা গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে সম্পর্ক মজবুত করে। গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে আমরা নিরন্তর কাজ করছি।

দেশি ও বিদেশি গ্রাহকদের সেবায় কি কোনো পার্থক্য আছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী একই মানের সেবা নিশ্চিত করে। তবে অফারগুলো দেশের বাজার ও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশে আর্থিক নীতিমালা ও বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সেবাগুলো নির্ধারিত হয়।

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মাস্টারকার্ডের বিশেষত্ব কী?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তা প্রযুক্তির জন্য পরিচিত এবং বাংলাদেশেও গ্রাহকদের সুরক্ষিত লেনদেন নিশ্চিত করছে। আমাদের বিভিন্ন নিরাপত্তা প্রযুক্তি; যেমন চিপ ও পিন প্রযুক্তি, টোকেনাইজেশন, উন্নত এনক্রিপশন ও ‘সিকিউর কোড’ সিস্টেম অনলাইন ফ্রড ও তথ্য চুরির ঝুঁকি কমায়। মাস্টারকার্ড ইএমভি ও পিসিআই ডিএসএস প্রটোকল মেনে চলে, যা গ্লোবাল লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং গ্রাহকদের আস্থা বাড়ায়।

মাস্টারকার্ড ব্যবহারের জনপ্রিয়তা কেন বাড়ছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডের জনপ্রিয়তা বেড়েছে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রসার, উন্নত নিরাপত্তা, রিওয়ার্ড ও অফার এবং ই-কমার্সের বিকাশের কারণে। নগদ লেনদেনের বদলে ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা বাড়লেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি, যেখানে আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি গ্রাহকদের আস্থা বাড়িয়েছে এবং বিভিন্ন রিওয়ার্ড ও ডিসকাউন্ট তাঁদের নিয়মিত লেনদেনে সুবিধা দিচ্ছে। ই-কমার্সের প্রসারও মাস্টারকার্ড ব্যবহারের চাহিদা বাড়ার একটি বড় কারণ, যা অনলাইন কেনাকাটায় নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করে।

গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কী অফার রয়েছে?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সারা বছর গ্রাহকদের জন্য নানা অফার ও সুবিধা দেয়, যা কেনাকাটা ও লেনদেনকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে। ঈদ, পূজা, ক্রিসমাসসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ছাড় ও ক্যাশব্যাক অফার থাকে। এবার পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ৪০টি শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের ১৭৫টির বেশি আউটলেটে ২৫ শতাংশ ছাড়, ৫০টি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বোগো অফার, ট্রাভেল প্যাকেজে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় এবং ইলেকট্রনিকসে অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। দেশের ৯০০০+ মার্চেন্ট আউটলেটে বিশেষ পেমেন্ট সুবিধাও মিলছে, যা গ্রাহকদের কেনাকাটার আনন্দ বাড়াবে।

ভবিষ্যতে মাস্টারকার্ডের নতুন কোনো অভিনব সেবা আসছে কি?

সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সব সময় নতুন সেবা যোগ করে আসছে, যেমন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ম্যানেজমেন্ট। ভবিষ্যতে আরও উদ্ভাবনী ও গ্রাহককেন্দ্রিক সলিউশন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন এআই প্রযুক্তি দিয়ে লেনদেনের নিরাপত্তা বাড়ানো ও ফ্রড শনাক্তকরণ। ক্রস-বর্ডার পেমেন্ট ও রেমিট্যান্স সেবায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট সলিউশন বাড়ানো লক্ষ্য। এসব উদ্যোগ মাস্টারকার্ডকে বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতির অগ্রদূত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত