Ajker Patrika

সীমান্ত পাহাড়ের ‘র‍্যাটহোলে’ ঝুঁকি নিয়ে ঢুকছে মানুষ

  • ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচে র‍্যাটহোলে কাজ করেন কমপক্ষে ৮০০ বাংলাদেশি শ্রমিক।
  • সরকারি হিসাবেই গেল এক বছরে চারজন মারা গেছেন, আহত অসংখ্য শ্রমিক।
  • স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ঝুঁকি জেনেও র‍্যাটহোলে যান শ্রমিকেরা।

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১০: ৩২
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচের একটি ঝুঁকিপূর্ণ র‍্যাটহোল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচের একটি ঝুঁকিপূর্ণ র‍্যাটহোল। ছবি: সংগৃহীত

৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের র‍্যাটহোল (পরিত্যক্ত সুড়ঙ্গ)। কখনো হামাগুড়ি, কখনো নুয়ে হেঁটে র‍্যাটহোলে ঢুকে গাঁইতি, শাবল, বেলচা দিয়ে টুকরো টুকরো কয়লা তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে আসেন শ্রমিকেরা। ঝুঁকি নিয়ে এভাবে কয়লা সংগ্রহের সময় ঘটে দুর্ঘটনা। সীমান্তের ওপার থেকে কয়লা আনতে গিয়ে সরকারি হিসাবেই গত এক বছরে চারজন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অনেকে।

ভারতের অভ্যন্তরে কাজ করতে যাওয়া কয়েক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ভারতীয় এসব র‍্যাটহোলে সুনামগঞ্জ সীমান্ত এলাকার কমপক্ষে ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিজিবির টহল ও নজরদারি এড়িয়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে র‍্যাটহোলে কয়লা আনতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্ন-আয়ের মানুষ। মজুরি কম হওয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাজে লাগাচ্ছেন মুনাফালোভী ভারতীয় র‍্যাটহোল পরিচালনাকারীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় ঝুঁকি নিচ্ছেন অভাবী মানুষেরা। সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী কয়েকটি এলাকায় এর প্রবণতা বেশি। উপজেলার উত্তর বড়দল ও শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাট, লালঘাট, লাকমা, বাগলী, রজনীলাইন, চাঁনপুরসহ প্রায় ২০ গ্রামের নিম্ন-আয়ের মানুষ এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হচ্ছেন। উঁচু-নিচু সরু গর্তের অন্ধকারাচ্ছন্ন টানেলে প্রবেশের পর দেয়াল ধস, শ্বাসকষ্ট, দিক বিভ্রান্তি ও প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিজিবি বলছে, অনুপ্রবেশ বন্ধ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুরোধে বিজিবি টহল কৌশলে পরিবর্তন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ভারতের মেঘালয়ের পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে এসব বিপজ্জনক র‍্যাটহোলের সংখ্যা বেশি। সঞ্চিত কয়লা সংগ্রহের পর খনি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত খনিতে তৈরি হয় র‍্যাটহোল বা ইঁদুরের গর্ত। এসব র‍্যাটহোল থেকে একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ দুই বস্তা কয়লা সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতি বস্তা কয়লা বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। মেঘালয় ছাড়াও নোকলা, কুলাংসহ বিভিন্ন পরিত্যক্ত র‍্যাটহোলে বাংলাদেশিরা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শ্রমিকেরা এসব এলাকায় যান।

তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লাকমা গ্রামের বাসিন্দা নুর মিয়া। মা, স্ত্রী-সন্তানসহ সাতজনের সংসার তাঁর। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় চলতি বছরের ১ মে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মেঘালয়ের র‍্যাটহোল থেকে কয়লা আনতে যান তিনি। দুদিন পর স্বজনেরা জানতে পারেন, নুর মিয়া মাটিচাপায় মারা গেছেন। পরে ৩ মে নুর মিয়ার লাশ পান স্বজনেরা।

কথা হলে নুর মিয়ার মা কমলা বেগম বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে নুর মিয়া। তাঁর আয় দিয়ে সংসার চলত। পাহাড়ে কাজে গিয়ে মারা গেছে। এখন খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম দিন পার করছি।’

নুর মিয়ার স্ত্রী মাফিয়া বেগম বললেন, ‘এলাকায় কোনো কাজ নেই। কাজের উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যাওয়া। সেখানে মাটিচাপা পড়ে মারা গেছেন। এরপর থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে।’ একই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেকের ছেলে নুরুল হক প্রায় দুই বছর আগে র‍্যাটহোল থেকে কয়লা আনতে গিয়ে মাটিচাপায় মারা যান।

নুরুলের বড় ভাই আতাউল্লাহ বলেন, ‘এলাকায় কোনো কাজ নেই। অভাবের কারণে পাহাড়ে যেতে হয়। সংসার চালাতেই নুরুল পাহাড়ে গিয়েছিল। সুড়ঙ্গের ভেতর ঢোকার পর মাটিচাপায় মারা যায়।’

লাকমা গ্রামের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, ‘সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কয়লা আনতে কেউ ইচ্ছে করে যায় না। এলাকায় কোনো কাজের ব্যবস্থা নেই। মানুষ চলবে কী করে। অনেকেই শহরমুখী হচ্ছেন। যাঁরা শহরে যাচ্ছেন না, তাঁরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত হচ্ছেন।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় জীবনের ঝুঁকি জেনেও স্থানীয়রা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কয়লা আনার চেষ্টা করে। এতে অনেকে বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। এটি রোধ করতে কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় টহল বাড়ানোসহ সীমান্তবর্তী এলাকাবাসীর বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লঞ্চ দুর্ঘটনা: তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা থেকে ফিরছিলেন যাত্রীরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মধ্যরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঝালকাঠিতে একটি লঞ্চ জব্দ করা হয়েছে। সেই লঞ্চের চারজনকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতা। ঢাকায় তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগা দিতে এসেছিলেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তাঁর ফিরছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে ঝালকাঠি–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ইসরাত সুলতানার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা লঞ্চটিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিজাম শিপিং লাইনস সূত্রে জানা গেছে, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ঝালকাঠি জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই সুস্থ রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুর্ঘটনা: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চ জব্দ, আটক ৪

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মাঝরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনার পর ঝালকাঠিতে ‘অ্যাডভেঞ্চার–৯’ নামে একটি লঞ্চ জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করলে বরিশাল নৌ-পুলিশ ও ঝালকাঠি থানা-পুলিশের সদস্যরা লঞ্চটি জব্দ করেন।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক জানান, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে লঞ্চটি ঝালকাঠিতে পৌঁছালে সেটি জব্দ করা হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, লঞ্চটি ঝালকাঠিতে নোঙর করার পর সারেং, সুকানি, সুপারভাইজার ও ইঞ্জিন চালক পালিয়ে যান। পরে চারজন কেবিন বয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন যাত্রী।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু শামীম (১০) মারা গেছে। উদ্ধারের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মামা সাব্বির হোসেন ও সখীপুর থানা-পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শামীম উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ও স্থানীয় কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির আশপাশের বনাঞ্চলে অনুসন্ধান চালান। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি বন থেকে শামীমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

নিহত শামীমের মামা সাব্বির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম শিয়ালের আক্রমণে এমন হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি শেয়াল-কুকুরের আক্রমণের চিহ্ন নয়, শিশুটির মাথা ও শরীরের আঘাত করা হয়েছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহত শামীমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে অটো-টমটম সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে অটোরিকশা ও সিমেন্টবাহী টমটমের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লেবুখালী-বাউফল মহাসড়কের রাজাখালী (স্থানীয় নাম পিছাখালী ব্রিজ) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগা থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বছরের রবিউল নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুমন সরদার (২৫) ও আব্দুল কাদেরকে (৫০) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত আব্দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমনের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের বাড়ি বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা ও টমটমটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত