Ajker Patrika

বাদুড়ের নিরাপদ আবাস থানা প্রাঙ্গণের গাছ

মেহেরপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৪, ১৪: ১০
বাদুড়ের নিরাপদ আবাস থানা প্রাঙ্গণের গাছ

সরকারি দপ্তরে মানুষ আসছেন প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে। চারপাশে কিচকিচ শব্দ। আশপাশে তাকালে চোখে পড়ছে গাছের ডালে উল্টো করে ঝুলে আছে অনেক বাদুড়। রাত হলেই এসব বাদুড় বেরিয়ে পড়ছে খাবারের সন্ধানে। মেহেরপুর সদর থানা প্রাঙ্গণে প্রতিদিনের এমন দৃশ্য আনন্দ দেয় অনেককে। 

থানা কর্তৃপক্ষ জানায়, সাধারণত ভবনের ফাটল, গাছের খোঁড়ল, দেয়াল, পাথরের ফোকর, গুহা-গহ্বর, পোড়ো-দালান, পুলের তল, সড়কের কালভার্ট, বড় বড় গাছ, পুরোনো কুয়ায় বাদুড়ের আস্তানা থাকে। কিন্তু সদর থানা চত্বরের ভৈরব নদীর পাড়ের বিভিন্ন গাছে দিনের বেলায় ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা মেলে অসংখ্য বাদুড়ের। প্রথম দেখায় কেউ এসব বাদুড় দেখে ভয় পেতে পারেন। কিন্তু থানার এসব গাছে বছরের পর বছর রয়ে গেছে তারা। 

বিকেল হলেই থানা প্রাঙ্গণে দেখা মেলে বাদুড়ের ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য। এর পাশাপাশি উপভোগ করা যায় কিচকিচ শব্দ, যা মন কাড়ে অনেক প্রকৃতিপ্রেমীর। থানার ভেতরে বেশ কিছু প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। এসব ফলই তাদের প্রধান খাবার বলে জানায় থানা কর্তৃপক্ষ। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অনেক বছর ধরে থানার একটি বড় বটগাছে বাসা বাঁধে অসংখ্য বাদুড়। কয়েক বছর আগে গাছটি ভেঙে পড়ে। এপর থেকেই আমগাছসহ বিভিন্ন গাছে আশ্রয় নেয় তারা। গাছ ভেঙে গেলেও স্থান বদলায়নি। তবে সেখানে বাদুড়ের সংখ্যা কমেছে। থানা চত্বর ছাড়াও মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গোপালপুর গ্রামের কয়েকটি গাছে বাদুড় দেখা যায়। 

থানার পাশেই খানপাড়ার ষাটোর্ধ্ব সেন্টু খলিফা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা দেখছি বাদুড় এখানে আছে। আগে একটি বটগাছে থাকত। এখন থানা ও নদীপাড়ের বিভিন্ন গাছে ঝুলে থাকে। বিকেলে অনেক মানুষ নদীপাড়ে হাঁটতে এসে বাদুড় দেখে আনন্দ উপভোগ করেন। বিশেষ করে বিকেলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। তখন আকাশের দিকে তাকালে দারুণ লাগে।’ 

স্থানীয় কলেজপড়ুয়া রোজি খাতুন বলেন, ‘প্রায় বিকেলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি। বাদুড়ের উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য ও কিচকিচ শব্দ যে কারও মন কাড়ে। এখানে এলেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।’ বাদুড়গুলো যাতে এখান থেকে চলে না যায়, সেই উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান তিনি। 

মেহেরপুর সদর থানা প্রাঙ্গণের একটি গাছে ঝুলছে বাদুড়। ছবি: আজকের পত্রিকাপরিবেশবিদ এনামূল আযিম বলেন, ‘বাদুড়ের খাদ্য হলো ফলমূল, পতঙ্গ, মাকড়সা, মাছ, ব্যাঙ, ছোট সরীসৃপ, পাখি প্রভৃতি। এরা আবাসিক প্রাণী। বাদুড়ের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। এর মধ্যে মেহেরপুরে কলাবাদুড়ের জাতটি এখন আর দেখা মেলে না। তবে বড় বাদুড় নামের এই জাত এখনো জেলার বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে। এরা দিনের বেলায় গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। সন্ধ্যার পরই খাবারের সন্ধানে বের হয়। সকালে আবার নীড়ে ফিরে আসে।’ 

বাদুড়ের গর্ভধারণকাল তিন থেকে পাঁচ মাস বলে জানান পরিবেশবিদ এনামূল আযিম। তিনি বলেন, ‘শীতের শেষ বা গ্রীষ্মের শুরুতে বাচ্চা দেয় বাদুড়। মা বাদুড়েরা একবারই বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা সাধারণত লোমবিহীন হয়ে জন্মায়। সাবালক না হওয়া পর্যন্ত বাচ্চারা প্রথম দুই থেকে তিন মাস মায়ের শরীরে লেগে থাকে। বাদুড়ের দৃষ্টিশক্তি বেশ ক্ষীণ। চলার সময় শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় বাদুড়ের।’ 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেখ কনি মিয়া বলেন, ‘বাদুড়ের প্রজনন ও খাবার সংগ্রহের জন্য থানা চত্বরের গাছগুলো কাটা হয়নি। সেখানে আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপেগাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে, যেগুলো বাদুড়ের খাবার হিসেবে রাখা হয়। গাছ থেকে কোনো ফল সংগ্রহ করা হয় না। এমনকি ছোট ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে বড়দের কেউ যাতে বাদুড়গুলোকে বিরক্ত না করে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়। থানার প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের চাওয়া বাদুড়ের আবাসস্থল নষ্ট না হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত