Ajker Patrika

‘নিউজে দেখলাম যান চলাচল স্বাভাবিক, রাস্তায় এসে আশার গুড়ে বালি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ৩৪
‘নিউজে দেখলাম যান চলাচল স্বাভাবিক, রাস্তায় এসে আশার গুড়ে বালি’

‘সকালে নিউজ দেখলাম যান চলাচল স্বাভাবিক, কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি বাসের টিকিটাও নেই। আশার গুড়ে বালি’—অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানী রাস্তায় নেমে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন এক অফিসগামী যাত্রী।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল ও আশপাশের অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় গণপরিবহন চলাচল রয়েছে সীমিত। একই সঙ্গে দূরপাল্লার বাস ও আন্তজেলার বাস চলাচল একবারেই কম রয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী যাত্রীরা। 

অভিব্যক্তি প্রকাশ করা যাত্রীর নাম সারোয়ার বাধন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। খিলগাঁও থেকে যাবেন মহাখালী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে নিউজ দেখলাম যান চলাচল স্বাভাবিক। সব চলছে নিয়মমাফিক ভাবেই। সব ঠিকঠাক ভেবে খিলগাঁও থেকে মগবাজারের জন্য রিক্সা ঠিক করলাম। মগবাজার গিয়ে বাসে করে মহাখালী অফিসে যাবো। মগবাজার এসে দেখি বাসের টিকিটাও নাই রাস্তায়। মগবাজার এসেই আশার গুড়েবালি!’

বাধন বলেন,‘খিলগাঁও থেকে ঠিক করা সেই রিক্সাটায়ই মহাখালী এসে পৌঁছাইলাম। ভাগ্যিস মামা রাজি হয়েছিল। রাস্তায় অনেক মানুষ গণপরিবহনের অপেক্ষায়! মগবাজার থেকে মহাখালী আসার এই পথ টায় শুধু একটা গাজীপুর পরিবহনের লোকাল বাস আমাদের রিক্সা অতিক্রম করসে তাও ঠাসা মানুষ পুরো বাসে।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিশাত বিজয় বলেন, সায়েন্স ল্যাব থেকে বনানী এসেছি ২০ মিনিটে। তবে হরতালের দিন থেকে আজ একটু বেশি গাড়ি। জ্যাম পায়নি। 

গত শনিবার রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালীন দলটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির অভিযোগ, পুলিশের হামলায় তাদের সমাবেশ পণ্ড হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। হরতাল শেষে টানা তিন দিন (মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার) সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের কর্মসূচি দেয় তারা। গতকাল সোমবার জামায়াতও অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। 

অবরোধ চললেও পরিবহন মালিক সমিতি গতকাল সব ধরনের যাত্রীবাহী গাড়ি বা পণ্যবাহী যান চালানোর ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ট্রেন, লঞ্চ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস চলাচল করার কথাও বলে কর্তৃপক্ষ। 

তবে সকাল থেকে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন চলাচল পরিমাণ কম পেয়েছেন। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও আন্তজেলার বাস চলাচল খুবই সীমিত রয়েছে। অন্যদিকে যাত্রীর সংখ্যা বুঝে লঞ্চ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ মালিক সমিতি। 

গাবতলীতে সরেজমিনে দেখা য়ায়, গাবতলী দিয়ে গাড়ি চলাচল খুবই কম রয়েছে। দূরপাল্লার গাড়ি তেমন দেখা যাচ্ছে না। আন্তজেলার বাস চলছে না। সিটি বাসও অনেক কম। সেই সঙ্গে যাত্রীও কম। 

দারুসসালামে জামায়াতের পাঁচ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা গাবতলীতে মহড়া দিচ্ছে। 

সায়েদাবাদেও রাস্তায় গাড়ি খুবই কম রয়েছে। মানুষও অনেক কম। 

দূরপাল্লার বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যদিও খুব বেশি যাত্রী দেখা যায়নি ৷ যে গুটিকয়েক যাত্রী ছিলেন তাদের একজন আলী হোসেন। বরিশালগামী এই যাত্রী বলেন, ‘জানতাম বাস চলাচল করবে না৷ জরুরি দরকার হওয়ায় সকালে বাধ্য হয়ে বের হয়েছি। এসে দেখছি কোনো বাস যাচ্ছে না। এখন সদরঘাট যাব। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি লঞ্চ চলছে কী না।’ 

মাগুড়া যাবেন মেহেদী হাসান কিন্তু বাস না চলায় জানালেন ভোগান্তির কথা। তিনি বলেন, ‘শুনেছি মাতুয়াইলের ওদিকে ঝামেলা হচ্ছে। বাস চলছে না৷ কীভাবে যাব সেটাই ভাবছি।’ 

তবে বেলা যত বাড়ছে, গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। সড়কে যানবাহন কম থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দূরপাল্লার বাস কম ছাড়লেও শহরে কিছুক্ষণ পর পর সিটি বাস চলাচল করছে। 

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক গোলাম সামদানী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নিজে ফুলবাড়ি বসে আছি। বাস চলছে। তবে যাত্রী নেই। অফিস সময়ে কিছু যাত্রী ছিল। ব্যক্তিগত গাড়িও অনেক কম। হরতালের দিন থেকে গাড়ি বেশি।’

তবে অনেক চালক অভিযোগ করেছেন বাস পোড়ানো বা ভাঙচুরের পর ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে সংশয়ে আছেন তারা। এর উত্তরে গোলাম সামদানী বলেন, ‘এটা উপর মহলের যারা আছেন তারা সরকারের সাথে আলাপ আলোচনা করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...