Ajker Patrika

‘নিজের বেতন বাড়ানোর সময় দেখান লাভ, পানির দাম বাড়ানোর সময় ভিক্ষার বুলি’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ১১
‘নিজের বেতন বাড়ানোর সময় দেখান লাভ, পানির দাম বাড়ানোর সময় ভিক্ষার বুলি’

নিজের বেতন-বোনাস বৃদ্ধির সময় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান হিসাব দেন, লাভের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। গত বছরও তাঁরা ৪০ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়ে ইনসেনটিভ বোনাস নিয়েছেন। কিন্তু পানির দাম বাড়ানোর সময় ভর্তুকির অজুহাতে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।’ অথচ সংস্থাটির অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করেই ঘাটতির টাকা সমন্বয় করা সম্ভব। এর জন্য মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক কি নোটে এই দাবি করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

ক্যাব সদস্য ও ভোক্তাকণ্ঠ সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নানের উপস্থাপন করা কি নোটে বলা হয়, করোনা মহামারির সময়েও ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানো হয় ২০২০ সালের এপ্রিলে। এরপর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আরেক দফা বাড়ে দাম। এ ২ দফায় আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ) এবং বাণিজ্যিকে বেড়েছিল ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।

জনগণকে একটি অতিপ্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা আবারও ২০ শতাংশ পানির দাম বাড়াতে চায় ঘাটতির টাকা তুলতে ৷ অথচ সংস্থাটির অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন করেই ঘাটতির টাকা সমন্বয় করা সম্ভব। এর জন্য মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না। 

কেন ঘাটতি
তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে কারণ দেখিয়ে ঢাকা ওয়াসা প্রতি হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ ২৫ টাকা দেখিয়ে বলেছে, তারা ১০ টাকা কমে ১৫ টাকায় বিক্রি করছে। সরকার এই টাকা ভর্তুকি দেয়, যা আর দিতে চায় না।

এ অবস্থায় এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান সংস্থাটির অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে ভর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্থা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।’

 
কিন্তু ঢাকা ওয়াসা হচ্ছে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান, লাভ বা বাণিজ্য এর উদ্দেশ্য নয়। অথচ সেবার চেয়ে বাণিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশি। দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে আরও ছয়টি ওয়াসা আছে। তাদের পানির দাম ঢাকা ওয়াসার চেয়ে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। হাজার লিটারের ইউনিট-প্রতি খরচ এত বেশি না বলেই তারা পারছে।

অন্যদিকে সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোথাও পৌর কর্তৃপক্ষ, কোথাও পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং পানি সরবরাহ করে। সেগুলোর বেশির ভাগই প্রকল্প হিসেবে সরকারি টাকায় পরিচালিত হয়। সেগুলোতে যে বিপুল ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাও কি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে? যদি তা না হয়, তবে ঢাকায় ভর্তুকি বন্ধ করে সরকার কি এক দেশে পানি সরবরাহ বাবদ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে? 

বিষয়টি কি সত্যি এমন? 
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। ওয়াসার বোর্ড মিটিংয়ে প্রস্তাব ছিল আবাসিকে এই দর ২১ টাকা ২৫ পয়সা করা। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানের ৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮ দশমিক ৮ টাকা করা। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন দর কার্যকর করতে অনুমোদন চায় ওয়াসা। কিন্তু এই মূল্যবৃদ্ধির কথা প্রকাশিত হলে চারদিকের সমালোচনার মুখে এমডি ৩৮ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠাবেন বলে জানান।

সামগ্রিক বিষয়টি খতিয়ে দেখলে দেখা যায়, পানির দাম ২০ শতাংশ বাড়লে ভোক্তা পর্যায়ে কার্যত বৃদ্ধি পাবে ৪৬ শতাংশ। প্রতিটি পানির বিলে সমপরিমাণ সুয়ারেজ বিল দিতে হয়। আর মোট বিলের ওপর ১৫ শতাংশ দিতে হয় ভ্যাট। ফলে ১০০ টাকার পানির বিলে বর্ধিত ২০ টাকা, সুয়ারেজ বিল বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ২৪০ টাকা। বর্ধিত ৪০ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাটে আরও ৬ টাকা মিলিয়ে মোট বিলে ২০ শতাংশের ভর দাঁড়াবে ৪৬ টাকা, যার অর্থ হচ্ছে পানির ১০০ টাকা বিলে ভোক্তাকে গুনতে হবে ২৪৬ টাকা। 

এই বাড়তি খরচ কার বাবদে করতে হবে? 
যে ওয়াসা নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার পানি কিনে ফুটিয়ে পান করতে হয়। অন্যথায় যার পানি খেতে হলে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে ফিল্টার কিনে রাখতে হয়। যে পানি পাশে রেখে ১৫ টাকা দিয়ে এক গ্লাস পানির সমান বোতলজাত পানি কিনে খেতে হয়, সেই ওয়াসায় এমডি হিসেবে ২০০৯ সালের অক্টোবরে তাকসিম এ খান নিয়োগ পেয়ে এ পর্যন্ত পানির দাম বাড়িয়েছেন ১৪ বার। আর নিজের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিয়েছেন ৪২১ শতাংশ।

ভিক্ষা করে চলা এই সংস্থার প্রধান নির্বাহী এখন মাসিক বেতন নেন সোয়া ৬ লাখ টাকা। এমডি হিসেবে তিন বছরের জন্য চুক্তিতে তিনি যখন নিয়োগ পান, তখন তার সর্বমোট মাসিক বেতন ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
 
প্রতিবার পানির দাম বাড়ানোর সময় প্রচার করা হয় ভর্তুকির কথা। ভর্তুকির কারণ দেখানো হয় তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে। সঙ্গে থাকে পানির স্তর নেমে যাওয়া। তথা খরচ বৃদ্ধিটা মূলত গভীর নলকূপের খরচ। ঢাকা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ করে ৬৫ শতাংশ, যার উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিকে অজুহাত হিসেবে সামনে আনা হয়। বাকি ৩৫ শতাংশ নদীর পানি পরিশোধন ও সরবরাহ ব্যয় প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখা হয়। ননরেভিনিউ ওয়াটার বা সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো চুরি বন্ধের কোনো উদ্যোগ সম্পর্কে থাকে না কোনো তথ্য। 

অন্যদিকে বেতন-বোনাস বাড়ানোর সময় এমডি হিসাব দেন, ঢাকা ওয়াসা লাভের দিকে যাচ্ছে। মাত্র এক বছর আগে তিনি বলেছিলেন, একসময় যেখানে ৭০০ কোটি টাকা রেভিনিউ পাওয়া যেত, এখন সেখানে ৭ হাজার কোটি টাকা আসছে। গত বছরও তাঁরা ৪০ কোটি টাকা মুনাফা দেখিয়ে ইনসেনটিভ বোনাস নিয়েছেন। 

প্রশ্ন হচ্ছে, যে সংস্থা ভিক্ষা করে চলে, সেই সংস্থার প্রধান নির্বাহীর বেতন কি সোয়া ছয় লাখ হওয়া উচিত? কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই ঈদে দুই বোনাস ছাড়াও চারটি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত? 

রয়েছে অদৃশ্য আয়ের হরেক খাত
দেখা গেছে, পানির দাম বাড়ানোর মাধ্যমে অনেক বড় অদৃশ্য আয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ প্রাপ্ত এলাকার ৭০ শতাংশ এলাকাই সুয়ারেজ সেবাবহির্ভূত। অথচ তাদের কাছ থেকেও অন্যায়ভাবে পানির বিলের সঙ্গে জুলুম করে সুয়ারেজ বিল আদায় করা হয়।
 
প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি এবং তার মূল্য শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই বহন করতে হয়। ঢাকা ওয়াসার ১১টি দুদক চিহ্নিত দুর্নীতি এবং সরকারি অর্থের অপচয় নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো মাথাব্যথা দেখায়নি ওয়াসা। 
নতুন আরেক খাত বের করা হচ্ছে, বিত্তবান আর সাধারণ মানুষের বসতি এলাকার শ্রেণিভেদ করে পানির দাম নির্ধারণের মাধ্যমে। যেন উচ্চবিত্তের পশ এলাকায় সাধারণের এবং সাধারণের আবাসিক এলাকায় বিত্তশালীদের থাকতে নেই। নাকি নতুন লেনদেনে ভোক্তার শ্ৰেণিভেদ পরিবর্তনের করে বিলে হেরফের করার ক্ষমতা অর্জন করাই এর লক্ষ্য—এখনো বোঝার সময় হয়নি।
 
এক কথায় ওয়াসার অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি-অপচয়ের দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই ওয়াসায় চলে এই মূল্যবৃদ্ধির খেলা। অথচ ভোক্তাদের তা বাধ্য হয়েই সহ্য করতে হয়। একটা পক্ষ হওয়া সত্ত্বেও একতরফা চাপিয়ে দেওয়ার সময় ভোক্তাদের এ নিয়ে কথা বলার কোনো জায়গা নেই ৷ 

এখন কেন? 
গত ১০ বছরে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে তিন গুণ। এর মধ্যেই বিদ্যুতের দাম ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর গ্যাসের অভাবে জ্বালানি তেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। জ্বালানির সংকটে এলএনজি এনে তার দাম সমন্বয় করায় বিদ্যুতে খরচ আরও বাড়বে, যা বিবেচনায় রেখে ৬৭ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 

আবার দেশীয় কোম্পানির গ্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড এ সময় ৫০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এদের প্রত্যেকেই লাভজনক প্রতিষ্ঠান, তার পরও তারা দাম বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে গ্যাস খাতে ভর্তুকি অনেক কমে যাওয়ায় পেট্রোবাংলা এখন অনেক লাভজনক অবস্থায় আছে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করে সিএনজির সঙ্গে সমন্বয় করে তারা লাভবান হয়েও ১১৭ শতাংশ মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এদিকে সঞ্চালন-বিতরণ কোম্পানিগুলোর সবাই লাভে থাকার পরও মূল্য বাড়াচ্ছে। 

একদিকে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের সব ক্ষেত্রেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। তার ওপরে আবার সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব দ্রব্যমূল্যে আরও এক দফা উল্লম্ফন ঘটতে শুরু করেছে। অনিয়ন্ত্রিত মূল্য বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালানো যখন অসম্ভব, তখন পরিবারপ্রধানেরা পরিবার পরিচালনার জন্য, অধিক আয়ের জন্য দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। করোনার প্রত্যক্ষ প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতের বিরাট এক অংশ। 

সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ের চাকরিজীবীরা পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। মহাবিপদে আজ দেশের সাধারণ জনগণ! ঢাকা ওয়াসা বোধ করি ভেবেছে, এই তো সময়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লঞ্চ দুর্ঘটনা: তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা থেকে ফিরছিলেন যাত্রীরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে গেছে লঞ্চ। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে মধ্যরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু এবং অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ঝালকাঠিতে একটি লঞ্চ জব্দ করা হয়েছে। সেই লঞ্চের চারজনকের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

এদিকে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন বিএনপির স্থানীয় নেতা। ঢাকায় তারেক রহমানের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগা দিতে এসেছিলেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তাঁর ফিরছিলেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে ঝালকাঠি–২ আসনের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ইসরাত সুলতানার নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা লঞ্চটিত করে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে ফেরার পথে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

নিজাম শিপিং লাইনস সূত্রে জানা গেছে, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ভাড়া করেছিলেন।

ঝালকাঠি জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম তালুকদার জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই সুস্থ রয়েছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুর্ঘটনা: ঝালকাঠিতে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চ জব্দ, আটক ৪

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করা অ্যাডভেঞ্চার–৯। ছবি: আজকের পত্রিকা

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে মাঝরাতে দুই লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনার পর ঝালকাঠিতে ‘অ্যাডভেঞ্চার–৯’ নামে একটি লঞ্চ জব্দ করেছে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটি ঝালকাঠি লঞ্চ টার্মিনালে নোঙর করলে বরিশাল নৌ-পুলিশ ও ঝালকাঠি থানা-পুলিশের সদস্যরা লঞ্চটি জব্দ করেন।

বরিশাল নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক জানান, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সংঘটিত ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে লঞ্চটি ঝালকাঠিতে পৌঁছালে সেটি জব্দ করা হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের চারজন আটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জানান, লঞ্চটি ঝালকাঠিতে নোঙর করার পর সারেং, সুকানি, সুপারভাইজার ও ইঞ্জিন চালক পালিয়ে যান। পরে চারজন কেবিন বয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার মধ্যে ভোলা থেকে ঢাকাগামী জাকির সম্রাট–৩ লঞ্চের সঙ্গে ঢাকা–বরিশাল রুটের অ্যাডভেঞ্চার–৯ লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন যাত্রী।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা জানান, হতাহতদের উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পর নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ায়। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।

বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, দুর্ঘটনার সময় নদীতে ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে আসে। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে উদ্ধার শিশুটি মারা গেছে

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু শামীম। ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের সখীপুরে নিখোঁজের ৭ ঘণ্টা পর বন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া শিশু শামীম (১০) মারা গেছে। উদ্ধারের তিন দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। আজ শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির মামা সাব্বির হোসেন ও সখীপুর থানা-পুলিশ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নিহত শামীম উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের শাহিন আলমের ছেলে ও স্থানীয় কীর্তনখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

নিহত শিশুর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শামীম বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্যরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ির আশপাশের বনাঞ্চলে অনুসন্ধান চালান। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি বন থেকে শামীমকে রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টার দিকে তাকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

নিহত শামীমের মামা সাব্বির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছিলাম শিয়ালের আক্রমণে এমন হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা জানান, এটি শেয়াল-কুকুরের আক্রমণের চিহ্ন নয়, শিশুটির মাথা ও শরীরের আঘাত করা হয়েছে।’

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, নিহত শামীমের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুমকীতে অটো-টমটম সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ২

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর দুমকীতে অটোরিকশা ও সিমেন্টবাহী টমটমের সংঘর্ষে দুজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লেবুখালী-বাউফল মহাসড়কের রাজাখালী (স্থানীয় নাম পিছাখালী ব্রিজ) এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগা থেকে আসা যাত্রীবাহী অটোরিকশা বিপরীত দিক থেকে আসা সিমেন্টবাহী টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে ছয় বছরের রবিউল নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম খানকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত সুমন সরদার (২৫) ও আব্দুল কাদেরকে (৫০) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আহত আব্দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সুমনের একটি হাত সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিদের বাড়ি বাউফল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দীন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা ও টমটমটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত