Ajker Patrika

গুলশানে লাইসেন্স করা পিস্তলে গুলি করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১০: ১৩
গুলশানে লাইসেন্স করা পিস্তলে গুলি করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা 

রাজধানীর গুলশানে আরিফ নামে এক যুবক বিকাশের দোকানে গিয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা বিভিন্ন নম্বরে পাঠান। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই যুবককে আটকে দেন বিকাশের দোকানি। পরে আরিফের কল পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসা আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টুসহ কয়েকজন তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গুলি ছোড়েন অহিদুল। এতে গুলিবিদ্ধ হন দুই পথচারী।

আজ রোববার বিকেল ৪টার দিকে গুলশানের গ্লোরিয়া জিনস কফিস বাংলাদেশ নামে একটি কফি শপের সামনে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করে গুলশান থানা-পুলিশ।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টুসহ (৪৬) পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

গুলিবিদ্ধরা হলেন, পথচারী প্রাইভেটকার চালক মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার আলিম সিকদারের ছেলে। আরেকজন ভ্যানচালক আব্দুর রহিম মিয়া (৫০)। তিনি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ছনের আকনের ছেলে। আমিনুল বর্তমানে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ও রহিম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আটককৃত পাঁচজন হলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু (৪৬), ওমান প্রবাসী ও কুমিল্লার লাকসামের বাসিন্দা মো. আরিফ হোসেন (২৪), আরিফের ভগ্নিপতি মনির আহমেদ (৩৫), বিকাশ দোকানি হাবিবুর রহমান আলিম (৩৫) ও দোকানির সহকারী খলিল খাঁন (১৮)। বিকাশ দোকানি ও তার সহকারীর গ্রামের বাড়ি সিলেটে। তারা গুলশানের গুদারাঘাট এলাকায় থাকেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ১৬ রাউন্ড গুলি, তিনটি গুলির খোসা, চারটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে। পিস্তলটি লাইসেন্স করা বলে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, গুলির ঘটনার সূত্রপাত একটি বিকাশের দোকান থেকে। বিকেল ৪টার দিকে আরিফ নামে এক যুবক গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের হাবিবের বিকাশের দোকানে যান। সেখানে গিয়ে আরিফ বেশ কয়েকটি নম্বরে মোট ৭৫ হাজার টাকা পাঠানোর কথা বলেন। আরিফের কথা অনুযায়ী হাবিব নির্দিষ্ট নম্বরগুলোতে ৭৫ হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর পর আরিফের কাছে ৭৫ হাজার টাকা হাবিব চাইলে টাকা না দিয়ে নানা টাল বাহানা করতে থাকেন।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার আব্দুল আহাদ বলেছেন, আরিফ টাকা না দেওয়ায় আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে হাবিব তাঁকে আটক করেন। আটক থাকা অবস্থায় সে তাঁর স্বজনদের বিষয়টি জানান। এরপর আরিফের ফোন পেয়ে টিপু, হুমায়ুন, স্বেচ্ছাসেবক নেতা আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু ও শরিফ ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর বিভিন্নভাবে আরিফকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে আরিফকে ছাড়তে চাননি হাবিব। এতে ঘটনাস্থলে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আরিফকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আব্দুল ওয়াহিদ মিন্টু গুলি করেন। এতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন।

প্রত্যক্ষদর্শী আবু সাঈদ নামের এক ব্যক্তি জানান, আজ বিকেলে ডিএনসিসি মার্কেটের চাঁদপুর বিরিয়ানী হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশে থাকা একটি বিকাশের দোকানে এক ব্যক্তি আসেন। এরপর তিনি দোকানির মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৭৫ হাজার টাকা পাঠান। শেষে দোকানি তার কাছে টাকা চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং বলতে থাকেন আমার লোক আসছে। এরপর সেই ব্যক্তির হয়ে সেখানে হাজির হন আরও কয়েকজন যুবক। তারা এ সময় দোকানির সঙ্গে টাকা নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। একজন গুলি ছোড়েন। এ অবস্থায় লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর মাঝেও ব্যবসায়ীরা জড়ো হন এবং ওই ব্যক্তিকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী আবু সাঈদ আরও জানান, ব্যবসায়ীরা তাঁকে ধরে সেখান থেকে গ্লোরিয়া জিনস কফি হাউসের সামনে নিয়ে গেলে আরেক দফা গুলি করেন সেই ব্যক্তি। এবার তাঁর গুলিতে একজন ভ্যানচালক ও গ্লোরিয়া জিনস থেকে বের হওয়া এক গ্রাহক আহত হন।

এদিকে যাচাই-বাছাই শেষে পিস্তলটি মিন্টুর লাইসেন্স করা বলে জানতে পেরেছে গুলশান থানা-পুলিশ। এর মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত ২

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় মালবাহী দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক ট্রাকের চালক ও হেলপার গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শুক্রবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা তালতলা এলাকায় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন আজকের পত্রিকাকে জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা গবাদিপশুর খাবার (ভুসি) বহনকারী একটি ট্রাকের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই আরেকটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে এবং অপরটি মহাসড়কের ওপর দাঁড়িয়ে যায়।

দুর্ঘটনার পর রেকার দিয়ে ট্রাক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আহত চালক ও হেলপারের পরিচয় এখনো জানা যায়নি বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুয়াডাঙ্গায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৫
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তঘেঁষা জেলা চুয়াডাঙ্গায় জেঁকে বসেছে শীত। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে জনপদ। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জেলায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েক দিন ধরে এই জেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে, যা আজ মৃদু শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।

ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে আসায় সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তীব্র শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক, দিনমজুর, ইটভাটার শ্রমিক এবং সবজি বিক্রেতারা জীবিকার তাগিদে ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

পেশাজীবীদের ভাষ্যমতে, হাড়কাঁপানো ঠান্ডার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্মে ভাটা পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক স্বপন ইসলাম বলেন, ‘বাপু, হাত-পা তো জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। হ্যান্ডেল ধরলে মনে হয় যেন রড কামড়ে ধরছে। এই হিমেল বাতাসে শরীর কাঁপতিছে। ভাড়া-ভুতো কম, সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।’

বড় বাজারের মুদিদোকানি সুমন আলী বলেন, ‘সকাল সকাল দোকান খুলে বসে থাকি, কিন্তু কাস্টমারের দেখা নেই। মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না। ঠান্ডার চোটে দোকানের ভেতর বসে থাকাই এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্ট পাড়ার গৃহিণী অনামিকা খাতুন বলেন, ‘ভোরবেলা ঠান্ডা পানিতে হাত দেওয়া যায় না। রান্নাবান্না আর ঘরের কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভয়ে আছি, কখন ঠান্ডা লেগে অসুখ-বিসুখ হয়।’

দিনমজুর সেতাব আলী বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কামলা দিয়ে খাই। কিন্তু এই ঠান্ডায় মাঠে বা বাইরে বেশিক্ষণ কাজ করা যাচ্ছে না। শরীর থরথর করে কাঁপে, কোদাল বা ঝুড়ি ধরা কষ্টের।’

টানা কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের ফলে বোরো ধানের বীজতলা এবং শীতকালীন শাকসবজি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্থানীয় কৃষকেরা। কৃষকদের আশঙ্কা, কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার কৃষকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ধানের বীজতলার কুয়াশা সকালে দড়ি টেনে ফেলে দিতে হবে। প্রয়োজনে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে। ছত্রাকনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের পাশাপাশি পরিমিত সেচ দিতে হবে।’

তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসাদুর রহমান মালিক খোকন জানান, প্রতিদিন গড়ে ২০০ থেকে ৩০০ বৃদ্ধ এবং ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসছে। নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রাদুর্ভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শীতার্ত মানুষের সহায়তায় জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কম্বল ও শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু করেছে। তিনি প্রকৃত সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গার বর্তমান তাপমাত্রা এই সীমার মধ্যে রয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় আজ থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তবে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, নিহত বেড়ে ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৫
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত
ঘন কুয়াশায় জাকির সম্রাট-৩ ও অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার কবলে পড়ে দুই যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চের হতাহত যাত্রীদের উদ্ধার করে ঢাকার সদরঘাটে নিয়ে আসা হলে সেখানে লাশের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়। সদরঘাট নৌ থানার ইনচার্জ সোহাগ রানা গণমাধ্যমকে জানান, দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। তিনি আরও জানান, নিহতদের পরিচয় শনাক্তকরণ এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাঁদপুরের ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল বৈদ্য জানান, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী ‘এমভি জাকির সম্রাট-৩’ লঞ্চটি রাত ২টার দিকে হাইমচর এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় নদীতে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকা-বরিশাল রুটের ‘এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯’ লঞ্চের সঙ্গে জাকির সম্রাট-৩-এর মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

বাবু লাল বৈদ্যের দেওয়া তথ্যমতে, সংঘর্ষের পরপরই ঘটনাস্থলে একজন যাত্রী নিহত হন। ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটির যাত্রীদের তাৎক্ষণিকভাবে ‘এমভি কর্ণফুলী-৯’ নামক আরেকটি লঞ্চের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে ঢাকা যাওয়ার পথেই আরও একজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে সদরঘাটে পৌঁছানোর পর নিহতের মোট সংখ্যা সাত জনে পৌঁছায়।

নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় চালকদের অবহেলা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কৃষকেরা ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখেন যে কারণে

নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা
তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন কৃষক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জনপদ নওগাঁর নিয়ামতপুরে কয়েক দিন ধরে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা ক্রমেই কমে যাওয়ার সঙ্গে হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় রাতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। কুয়াশার কারণে অনেক দিন দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে জনজীবনের পাশাপাশি কৃষিকাজেও প্রভাব পড়ছে।

কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা। সামনে উপজেলাজুড়ে বোরো ধান রোপণের মৌসুম শুরু হবে। তার আগে বীজতলা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁরা। তবে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখছেন তাঁরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে বোরো বীজতলা হলদে ও লাল হয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখলে বীজতলার ক্ষতির আশঙ্কা অনেকটা কমে।

সরেজমিনে উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বীজতলাই পলিথিনে ঢাকা। ভাবিচা গ্রামের কৃষক বিমল প্রামাণিক জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করবেন। সে জন্য আগেই বীজতলা তৈরি করেছেন। শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার জন্য বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল সরকার জানান, বীজ ফেলার আট দিন পর বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন। ২২ দিন পর পলিথিন তুলে ফেলবেন। এতে বীজতলায় রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম হয় এবং রোপণের জন্য ভালো চারা পাওয়া যায়। পাশাপাশি পলিথিন ব্যবহার করায় কীটনাশক দিতে হয় না। ফলে বাড়তি খরচও কমে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ দেখা দেয়। এতে বীজ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, অনেক সময় হলদে ও লাল হয়ে পচে যায়। পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখলে ভেতরের তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকে এবং চারাগাছ নষ্ট হয় না। এতে কৃষকেরা উপকৃত হন। বীজতলা রক্ষায় পলিথিন ব্যবহারের জন্য কৃষকদের আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত