Ajker Patrika

টাঙ্গাইলের এমপির ভাই বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ‘ফেসবুক বন্ধু’ তরুণীকে ধর্ষণের মামলা

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৭: ২৫
টাঙ্গাইলের এমপির ভাই বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ‘ফেসবুক বন্ধু’ তরুণীকে ধর্ষণের মামলা

টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার রাতের এ ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। ভিকটিম ও তাঁর বাবা অভিযোগ করেছেন, বড় মনির এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’ 

উত্তরার প্রিয়াংকা সিটির ৬ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগী ওই তরুণী আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেন। তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ মিয়া, এসআই (উপপরিদর্শক) হাসিব, এসআই রমজান, এএসআই হাবিবসহ থানা-পুলিশের একাধিক সদস্য সেখানে ছিলেন।

উত্তরার প্রিয়াংকা সিটির ৬ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। ওই তরুণী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় মনিরের সঙ্গে আমার ফেসবুকে পরিচয়। পরে তাঁর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়। তারপর (গতকাল শুক্রবার) তাঁর সঙ্গে দেখা করতে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের অ্যাপেক্স শোরুমের পাশে যাই। ওই সময় সে (বড় মনির) একটি গাড়ি নিয়ে আসে। পরে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রিকশায় করে ঘটনাস্থলে এনে ধর্ষণ করে।’

ওই তরুণী আরও জানান, পরে বড় মনির তাকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে একসঙ্গে রিকশায় ওঠেন। এক পর্যায়ে তাঁর স্বামী ভিডিও কল দিলে বড় মনির রিকশা থেকে নেমে পালিয়ে যান। 

পরে রাত আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগী তরুণীকে তুরাগ থানার পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বাড়ির গার্ড বকুলকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেয় পুলিশ। 

ভুক্তভোগীর বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে ফোন করে আমাকে বলে, বড় মনির আমাকে ধর্ষণ করেছে। খবর পেয়ে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে আসি।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে টাঙ্গাইল শহরের এক কিশোরী বাদী হয়ে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করে। টাঙ্গাইল মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, জমি নিয়ে বিরোধ সমাধানের জন্য বড় মনিরের শরণাপন্ন হয় ওই কিশোরী। বড় মনির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। 

পরে ২০২২ সালের ১৭ ডিসেম্বর ওই কিশোরীকে শহরের আদালতপাড়ায় বড় মনির তাঁর বাড়ির পাশে একটি ফ্ল্যাটে যেতে বলেন। সেখানে গেলে কিশোরীকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বড় মনির কক্ষে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন এবং সেই ছবি তুলে রাখেন। 

ধর্ষণ শেষে কাউকে এ কথা জানাতে নিষেধ করেন বড় মনির। কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তিনি। এরপর ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে প্রায়ই মেয়েটিকে বড় মনির ধর্ষণ করতেন বলেও উল্লেখ করা হয় মামলার অভিযোগে। 

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের কারণে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বড় মনির তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হওয়ায় গত বছরের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনির মেয়েটিকে আদালতপাড়ায় তাঁর শ্বশুরবাড়িতে তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেন তিনি। এতেও রাজি না হওয়ায় ওই বাসার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় মেয়েটিকে। 

সেখানে আবারও ধর্ষণ করেন বড় মনির। ধর্ষণের পর ভুক্তভোগী কিশোরীকে বড় মনিরের স্ত্রী মারধর করলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় তাকে। এরপর থেকে ওই কিশোরীকে নানা হুমকি দেওয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করে বাদী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকসু ভিপির দিকে তেড়ে গেলেন ছাত্রদল সভাপতি

চবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৮
বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় হট্টগোল বাধে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় হট্টগোল বাধে। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর দিকে তেড়ে যান শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন ও সংগঠনটির কয়েকজন নেতা-কর্মী। বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায় প্রশাসনের আয়োজিত আলোচনা সভায় এই ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাকসু ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, ‘যাদের ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ে আসার সংস্কৃতি আছে, তারা হট্টগোল করবেই। তবে আমরা সকল ছাত্রসংগঠনের নেতাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিনকে একাধিকবার ফোন করলেও সাড়া মেলেনি।

এর আগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের বক্তব্য ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে গতকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এতে আটকা পড়েন উপাচার্য (ভিসি), উপ-উপাচার্যসহ (প্রোভিসি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। এ সময় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি স্লোগান দিতে দেখা যায়। দীর্ঘ প্রায় ৮ ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় চবির উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যে ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর’ বলে মন্তব্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বলতে গিয়ে অধ্যাপক শামীম খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল। সে সময় তারা জীবিত থাকবে না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিজয় দিবস পালন করতে হচ্ছে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের অঙ্গীকার করে: প্রিন্স

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘আমি ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি, পঁচিশের বিজয় দিবসের আগেই আমাদের একাত্তরের ঘাতক চক্র, তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম, তাদের অপতৎপরতা সূচনা করেছে। সেই কারণে আমাদের এবারের বিজয় উৎসব পালন করতে হচ্ছে এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের অবিরাম সংগ্রামের অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে।’

আজ মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবি নেতা এসব কথা বলেন।

এ সময় রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘গত ৫৪ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এই দেশটাকে গড়তে পারে নাই বলেই আজকে একাত্তরের ঘাতকসহ অন্যরা এখন সুযোগ পাচ্ছে। আমরা তাই মনে করি, এই ঘাতকদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম অবিরাম চলবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই ধরনের জাতীয় দিবসে এসে আমরা সাধারণভাবে বলি, আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হলেই সব কাজ করা যাবে। আমার বিবেচনায় এই কথাটা যথাযথ না। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের শ্রেণিবিভক্ত সমাজে আমরা যখন একসাথে হই, আমাদের যার যার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে। প্রকৃতপক্ষে জনস্বার্থের উদ্দেশ্য যাদের আছে তারা এক না হয়ে, যারা জনবিরোধী শক্তি আছে তারাই ঐক্যবদ্ধ হয়। তখন কিন্তু জনস্বার্থবিরোধী অবস্থানই তারা ঘোষণা করতে পারে। সুতরাং আজকে সময় এসেছে জনস্বার্থের পক্ষের রাজনৈতিক দল, ব্যক্তিবর্গকে এক হওয়া। সেই কাজটি আমরা বামপন্থীরা প্রচেষ্টা নিয়ে চলেছি। সেই লক্ষ্য নিয়েই এবারে আমরা বিজয় দিবস পালন করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কা, হেলপার নিহত

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

পদ্মা সেতুতে এক বাসের পেছনে আরেক বাসের ধাক্কায় তোফায়েল মিয়া (২৭) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েক যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অধীন পদ্মা সেতুর ২৯ নম্বর পিলারের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তোফায়েল বসুমতি পরিবহন বাসের চালকের সহকারী (হেলপার)।

পুলিশ জানায়, রাত আনুমানিক পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী বসুমতি পরিবহনের একটি বাস দ্রুতগতিতে এসে পেছন দিক থেকে ঢাকা থেকে কুয়াকাটাগামী পদ্মা স্পেশাল পরিবহনের একটি বাসকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই বসুমতি পরিবহনের সহকারী তোফায়েল নিহত হন।

দুর্ঘটনার পর কিছু সময়ের জন্য সেতুতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাস দুটি জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পদ্মা সেতু এলাকায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চবির বিবৃতিতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৫
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক বিবৃতিতে এবার মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হিসেবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য সেই সঙ্গে নেতৃত্বদানকারী হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে।

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সেই বক্তব্যের ব্যাখ্যাসহ বিবৃতিতে এসব বলা হয়েছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে শুধু পাকিস্তানি বাহিনীর কাজ নয়, বরং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেছেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানাতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।

গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর ২০২৫) বেলা ১১টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চবি উপাচার্য ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। সভাপতিত্ব করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চবি জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘যে সময় আমি (পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী) দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছি, আমি জীবিত থাকব না মৃত থাকব, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি; সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’ এ ছাড়া তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খানের এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরই সমালোচনা হতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলসহ ছয়টি সংগঠন তাঁর পদত্যাগের দাবি করে। এ দাবিতে তাঁরা গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে রাখেন। ফলে রাত প্রায় পৌনে ৯টা পর্যন্ত ভবনটিতে আটকা ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দেওয়া বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২৪-এর জুলাই আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম এ জি ওসমানীসহ সকল শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

ড. শামীম উদ্দিন খান একাডেমিক আলোচনার অংশ হিসেবে তাঁর বক্তব্যের সপক্ষে বেশ কয়েকটি রেফারেন্স টেনে আনেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল কাদিরের লেখা ‘দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীন’ বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘৬ ডিসেম্বর থেকে দৌড়ের উপর থাকা পাকিস্তানি বাহিনী ১৪ তারিখ এতগুলো লোকের বাসায় গিয়ে গিয়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ এ ছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীরের দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা আমার বাবাকে হত্যা করেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে, বক্তব্য পেশ করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে উপ-উপাচার্য ‘পাকিস্তানি বাহিনী’র পরিবর্তে ‘পাকিস্তানি যোদ্ধা’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলতে গিয়ে ‘অবান্তর’ শব্দ ব্যবহার করেন, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। এটি ছিল অনিচ্ছাকৃত এবং তাৎক্ষণিক আলোচনার অংশ।

উল্লেখ্য, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্রের মানসপুত্র খ্যাত উপমহাদেশের বরেণ্য রাজনৈতিক নেতা। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর লেবাননের বৈরুতের এক হোটেলকক্ষে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান তিনি। অন্যদিকে জাতীয় নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক প্রথিতযশা বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে শেরেবাংলা (বাংলার বাঘ) এবং ‘হক সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মহান এ দুই নেতার একজনের মৃত্যুর ৯ বছর ও অন্যজনের আট বছর পর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ফলে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেন, এ প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনা করছেন। তাঁরা বলছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিহাস বিকৃতি করছে। এক বিকৃতির ব্যাখ্যায় আরেক বিকৃতি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত